###জীবন যখন যেমন(৯ম পর্ব)
###লাকি রশীদ

শেষ মুহূর্তের পড়া চলছে তিন ভাই বোনের। এখন আমাদের বাসা একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। মার
রান্নাঘরে যাওয়া একেবারেই নিষেধ। কেউ দেখছে না ভেবে গতকাল মাত্র ঢুকতে গেছে, সাথে সাথে মালাবুর চিৎকার, দোলা আফা দেইখ্যা যান আম্মা পাক কোঠায় আইছে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মা বলছে,এই এখানে চিৎকার করার কি আছে রে?
ফাজিল কোথাকার, আমার বাচ্চারা পড়ছে তুই দেখতে পাস্ না? আমাদের ৩ জনকে দেখে মা বলছে, এই দেখো !!! তোরা আবার পড়া থেকে উঠে এলি কেন? দোলা মাকে কিছু না বলে বুয়া
কে বললো, কি হয়েছে? মা রান্নাঘরে ঢুকেছে? সে
মাথা নাড়তেই দোলা রাণী বলছেন, তোমাকে মানা
করা সত্ত্বেও কেন গেলে? আমরা থাকা অবস্থায় এরকম হলে, না থাকা অবস্থায় তোমাকে তো এক
আল্লাহ ছাড়া কেউ আটকাতে পারবেনা। তুমি কি বাচ্চা নাকি? বুঝো না,শরীরে গরম লাগলে সমস্যা
হতে পারে? প্রেসার বাড়তে পারে,জানো না?

মা এবার অবাক হয়ে বলছে,আশ্চর্য্য বেয়াদবের মতো এভাবে কথা বলছিস কেন? দোলা চিবিয়ে চিবিয়ে বলছে,তা তোমাকে কিভাবে বললে তুমি বুঝবে? মা বলছে, এই সাদি তুই দেখছিস না এই মেয়েটা বেশি কথা বলছে? তোরা দুজনেই বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? মেঘলা বলছে,ডাক্তার
তোমাকে যেভাবে চলতে বলেছে, তোমার সেভাবে
চলা উচিত মা। এবার মায়ের গলা চড়েছে, আরে মাছ আমি আরো কতোবার ধুই। চালের পানি এক
দম পরিস্কার না বেরোনো পর্যন্ত ধুইতেই থাকি। বেগুন ভাজার আগে যদি ১০ মিনিট হলুদ, মরিচ ও লবণ দিয়ে মাখানো হয়, তবে তেলটা একদম কম লাগে। ১৩০ টাকা এক লিটার তেলের দাম। এগুলো কি নদীতে ভেসে আসে না কি?

তাই, আমি দেখাতে যাচ্ছিলাম। বেয়াদবটা তখন ঐ চিৎকার দিয়েছে। দোলা বুয়াকে বললো,মাছ ও চাল ধুয়ে তুমি একবার মাকে দেখিয়ে নিও। এবার বিন্দাস মালা বুয়া বলছে,কুনু অসুবিধা নাই। যান আফনারা, আমি আম্মারে দেখামুনে। আমি মাকে বলি, বেশি না মা একটা মাস এভাবে মেনে মেনে থাকো প্লিজ। তারপর তো তুমি গিয়ে দেখিয়ে দিতে পারবে। দোলা বলছে, কথা না শুনলে আমি শিকল পরিয়ে দিবো একেবারে। তুমি ভালো মতো জানো, আমি তোমার এই বাধ্য ছেলে মেয়ের মতো ভালো না। ডাইনিং চেয়ারে বসে যেভাবে তসবীহ পড়ছিলে, সেভাবে পড়তে থাকো। মনে রেখো ঝামেলা করলে, আমিও ঝামেলা করবো।
মা দেখি সত্যিই তসবীহ নিয়ে বাধ্য মেয়ের মতো বসে রয়েছে।

দোলা থাকায় মাকে সামলানো যাচ্ছে। মেঘলা ও
আমি দুজনের কেউই এভাবে মায়ের সাথে কথা বলতে পারতাম না। আগামী কাল থেকে আমার পরীক্ষা শুরু। সেদিন দোলা মাসকাবারি সব খরচ
লিখে আনবার জন্য দিয়েছিল। রাকিব কে বিদায় দিয়ে মাগরিবের নামাজ পড়ে রওনা হবো, দোলার
বুঝানো থামছেই না। উল্টৌপাল্টা জিনিস যেন না
আনি, সেজন্য পাশে ব্র্যাকেটে নোট করে আবার লিখা আছে। পা বাড়ানোর আগেই দেখি অভি তার ড্রাইভার ও মেজচাচার দারোয়ান কে দিয়ে বড় বড় দুইটা বস্তা নিয়ে এসেছে। সাথে ওর হাতে মাঝারি একটা কার্টুন। দোলা বলে, এগুলো কি অভি ভাই? অভি বললো, দোকানে গিয়েছিলাম
আমাদের বাসার জন্য খরচ আনতে। আস্ত গবেট
পিচ্চি সেলসম্যানটা, লিষ্ট এর ডাবল জিনিস দিয়ে
দিয়েছে। মানে সব জিনিস ভাবল করে দেয়া। তাই,ভাবলাম একটা পার্ট তোদের দিয়ে যাই,আর একটা আমাদের বাসায় নিবো।

দোলা বলে,স্যরি দুটো পার্ট ই তোমাদের বাসায় নিয়ে যাও। আমাদের খরচ আনতে ছোটভাই এই মাত্র যাবে। অভি বলছে, ডাবল খরচ নিয়ে গিয়ে বাসায় সব নষ্ট হবে। এগুলো থাকুক, সাদি ভাই না
গিয়ে, আমার লিষ্ট দেখে টাকা দিয়ে দিলেই হবে।
দোলা হাত বাড়িয়ে বললো,লিষ্ট দাও আমাকে। এবার সে দুই পকেট খানিকক্ষণ হাতড়ে বললো,
কি করেছি খুঁজে পাচ্ছি না তো। মনে হয় গাড়ি তে
ফেলে এসেছি। দিবো তোকে পরে। এই মেঘলা একগ্লাস পানি খাওয়া না। গরমে বাইরে থেকে কেউ এলে, ঝটপট এক গ্লাস পানি দিতে হয়। এ
কথা শুনে মেঘলা দৌড় দিয়েছে ও দোলা অভির
দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলছে, কথায় কথায় মিথ্যে বলার জন্য তোমার দোজখ বাস যে কতো
বাড়ছে তা জানো?

অভি এবার জোরে হেসে বলছে, তুই এতো এতো
জেরা করিস কেন পুলিশের মতো,যে আমাকে মিথ্যে বলতে হয়? এই পরিবারে সবচেয়ে হারামী হচ্ছিস তুই। ছোটভাই কে বাজারে পাঠানো যাবে কিন্তু অভি ভাইয়ের বাজার নেয়া যাবে না। আমি তো তোর মতো এরকম ভাবতে পারি না। আমি কিন্তু তোকে আর মেঘলা কে বোনই ভাবি। আমি জানি সবাই আমার ব্যাপারেও তাই ভাবে। শুধু তুই দেখাতে চাস, আমি ও আমার পরিবার খুব আত্মসম্মান ওয়ালা মানুষ। অভিভাই কেন আমাদের পরিবারে নাক গলাতে আসবে? বেশি
আত্মসম্মান বলে বলে চেঁচাস না। শেষে দেখবি
খুব খারাপ,দুষ্ট চরিত্রের এক হাজব্যান্ড পেয়েছিস
শুধুমাত্র অভিভাইকে কষ্ট দেয়ার জন্য।

অভির কেরামতি দেখে দোলা পর্যন্ত হা হয়ে গিয়েছিল। এবার নিজেকে নিজের মধ্যে ফিরে পেয়ে বললো, তুমি এতো চালাক বলার মতো না। দেখবে তোমার বৌ হাবা টাইপের হবে। সব জিনিস দুই বার করে না বললে বুঝতে পারবে না। অভি এবার চেঁচাচ্ছে,বড়মামী ভালো হোক, তারপর আমি বলবো তুই আমাকে কি অভিশাপ দিয়েছিস। শুধু শুধু বকিয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেল। যা আমার জন্য মজা করে চা নিয়ে আয় তো। দোলা রাণী চোখ বাঁকা করে চলে যেতেই অভি বলছে, কি সাদি ভাই এবারের মতো বাঁচলাম বলো।

আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। কয়েকটি দিতেই
দোলা ও মেঘলার এডমিশন টেষ্ট হয়ে গেল। ওরা দুজনে ই পড়াতে খুব ভালো, ভীষণ খেটেছে…….
কিন্তু সমস্যা হলো মেঘলা সবসময়, একদম ছোট বেলা থেকেই এতো বেশি কনফিউজড থাকে যা বলার মতো না। এসেই ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছে, আল্লাহ ই জানে কি হবে? আমার তো মনে হয়, আমার হবে না ছোটভাই মেডিকেলে। কোচিং এ
শুধু শুধু এতো টাকা ঢাললাম। আমরা সবাই এই রকম দেখতে অভ্যস্ত। তাই কেউ পাত্তা দিচ্ছি না।

খেতে বসে মা বললো,যতটুকু পড়ে যা পরীক্ষা ২ জন দিয়েছো আলহামদুলিল্লাহ। তোমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। কিন্তু মনে রেখো, আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। যদি ভাগ্যে থাকে তাহলে ডাক্তার হবে,না থাকলে অন্য কিছু হবে। আল্লাহ তাআলা এক দরজা বন্ধ করলে আরো পাঁচটা খুলে দেন। তাই চিন্তার কিছু নেই। গতকাল তোদের বড়ফুপু ফোন করে বলেছেন, তোদের যেন রাতে থাকার জন্য পাঠাই। যাবি না কি? গেলে দেখবি ভালো লাগবে।
কতো দিন ধরে কলেজ,বাসা, টিউশনি……..একই
বৃত্তে যেন ঘুরছে তোদের জীবন। একঘেয়েমি তে
ভরা একেবারে।

দোলা বলছে, এখন কোথাও যাওয়ার কথা বলো
না তো মা। এমনিতেই কতো চিন্তায় আছি, টেষ্টে টিকবো কিনা,টিকলে কোথায় যাবো……… এসব নিয়ে। আর বড়ফুপু বললেই বা আমরা যাবো কেন বলো? তুমি এতো অসুস্থ থেকে ভালো হলে,
কই একবারও তো দেখলাম না দেখতে আসতে।
মা বলছে, উনার নিজের ই কতো অসুখ, উনি কি
ভাবে আসবে? দোলা এবারো তীর্যক মন্তব্যই করছে,আসতো আসতো যদি খাজুর বেগম অসুস্থ
হতো………. তবে ঠিকই আসতো। এবার মা তার
পুরনো ফর্মে চলে গেছে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ !!! চাচীর নাম ধরে কেউ এভাবে বলে? দিন দিন কি অসভ্য
টাই না তুই হচ্ছিস। শুধু লেখাপড়া করলেই হয় না, আদব কায়দার বালাই নেই…… এতো বেয়াদব
মেয়ে দিয়ে আমি কি করবো? আমি এবার দোলা কে ইশারা দিয়ে বলি, সত্যি ই তো দোলা এতো কথা বলিস্ কেন? মা আমার দিকে এবার তাকিয়ে দেখছে, ঠাট্টা করছি কিনা। যখন দেখছে আমি গম্ভীর মুখে বলছি, তখন ভাগ্যিস চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

আজকে আরিয়ানের বাসায় পড়াতে এসেছি। পড়ানোর মধ্যেই মিসেস আইরীন এর আবির্ভাব।
কি ব্যাপার সাদি, আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
একান্ত বাধ্য না হলে আমি কাউকে পারিবারিক ঝামেলার কথা বলতে চাই না। মা অসুস্থ অবস্থায়
থাকার পর, পড়াতে অনেক বার এসেছি। এতদিন
পরে হঠাৎ আমাকে আবার কেমন দেখাবে?বলি, আমি ঠিক আছি আপু। তড়বড় করে বলছেন, কিসের ঠিক আছেন? শুকিয়ে চিমসে বনে গেছেন
একেবারে। দাঁড়ান আমি আসছি। যেভাবে হঠাৎ করে উনি উদয় হয়েছিলেন সেভাবেই হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলেন। আরিয়ান আমার দিকে মুচকি হেসে বললো, এবার মা আপনাকে জোর করে খাওয়াবে। মা আমাকেও এমন করে। আমি বলি, সর্বনাশ আমি খেয়ে এসেছি। বড়জোর চা খেতে পারি শুধু। ও লিখতে লিখতে বললো, বাবা এখানে থাকলে আপনাকে বাচিয়ে দিতো। শুধু বাবার কথাই মা শুনে।

এরমধ্যেই উনার সহকর্মী এসে বলছে, আপনাকে ভেতরে ডাকছে। আমার এবার বিরক্ত লাগছে, কি যে যন্ত্রণা এসব? কি আর করা, আরিয়ানকে নিয়ে
টেবিলে গিয়ে দেখি এলাহি কারবার। ব্রেড,বাটার
এর সাথে পাস্তা দুই রকমের,ফ্রেঞ্চ টোস্ট কয়েক পিস‌। আইরিন আপু একটা পাস্তার চৌকোণা বাটি দেখিয়ে বললেন, এটা হচ্ছে হোয়াইট সস পাস্তা। আরেকটা হচ্ছে পেনি ক্রিম পাস্তা। খেয়ে দেখেন,
খুব ভালো লাগবে আপনার। আমি আরিয়ান কে আগে একটা বাটিতে তুলে দেই। ভাগ্যিস আইরিন আপু চলে গেছেন। দাঁড়িয়ে খাওয়ানোর বায়না ধরলে অনেক সমস্যা হতো। হোয়াইট সস পাস্তা রাকিবের খুব প্রিয় খাবার। ওদের বাসায় আমি এটা অনেক খেয়েছি। তাই,পেনি ক্রিম পাস্তা টাই নিলাম। সত্যি খুব মজার, অনেক দিন মুখে লেগে থাকবে।

আমার জন্য কফি দিয়ে গেছে। আইরিন আপু এবার কোথা থেকে এসে বললেন,আপনি ব্রেড টোষ্ট নিলেন না যে? আমি বলি,আপু আর খেতে পারবো না। এবার তিনি এক পিস হাফপ্লেটে দিয়ে বললেন, খেয়ে দেখেন। নরমাল টোষ্টের মতো না। আমি দেখি টোষ্টের একদিক ফুলে আছে। আর অন্যদিক আমাদের বাসায় করা টোষ্টের মতো স্বাভাবিক ফ্ল্যাট। বুদ্ধিমান আরিয়ান এবার হেসে বলছে,স্যার বুঝেননি এতে তো মা চিজ দিয়েছে।
বাবা গতবার বলেছে, সবকিছুতেই তুমি চিজ দাও কেন? মা বলছে, আমার মজা লাগে তাই দেই।

এবার ওদের সহকর্মী এসে আরিয়ান কে বলছে, ভাইয়া দুধ দিয়ে দেই? বিরক্তির স্বর ভেসে এলো, রাতে খাবো। আমার দিকে তাকিয়ে বলল,স্যার ছোট বেলায় প্রতিদিন দুধ খেতে আপনারও নিশ্চয় ভালো লাগতো না। আমি যে কবে বড় হবো? আমি ওর মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে বলি, শোনো ছোটবেলা খুব কমই আমি দুধ খেয়েছি। কারণ,দুধ কেনার টাকা ছিল না। এবার সে বলছে,আহা !!! সেসময় আপনাকে যদি আমি চিনতাম !!! জানেন আমার বাবার অফিস রুমের ড্রয়ারে অনেক টাকা থাকে। এতো সুন্দর একটা ছেলে,কথা বলে এমন মিষ্টি মিষ্টি…..না চাইলেও আদর করতে ভালো লাগে। বললাম, আরিয়ান
তোমার আমার এসব কথা, কারো সাথে শেয়ার করো না । মনে মনে ভাবছি,যদি আরিয়ান তার মাকে বলে দেয়, তবে প্রতিদিন হয়তো এবার একগ্লাস দুধ খাওয়া লাগতে পারে।

বাস থেকে নেমে পায়ে পায়ে ঘরে ফিরছি। বৃষ্টি আসবে মনে হয়, কিরকম ঠান্ডা ঠান্ডা ভেজা ভেজা একটা হাওয়া গা ছুয়ে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে যা খুব কমই পাওয়া যায়। ভাবছি আইরিন আপুর
কথা। উনাকে দেখলে আমার মনে হয়, উনি যেন সবসময় এক ফ্যান্টাসির জগতে বিচরণ করেন। অন্যমনস্ক ছিলাম বলেই হয়তো প্রথমবার শুনিনি।
ভাইয়া পাড়ার মোড়ের দোকানে বসেই সাদি সাদি বলে ডাকছে। ভাইয়া এ ক’দিনেই অনেক টা মোটা
হয়ে গেছে। বললাম, তোমাকে তো সুন্দর লাগছে ভাইয়া। সে হেসে বলল, মায়ের এতো বড় বিপদ গেল একটা খবর তো দিলি না। আমার এখন মনে হচ্ছে,সত্যিই তো এটা অনেক বড় ভুল হয়েছে। মা যা বলার বলেছে, তাই বলে মা ছেলের সম্পর্ক টা তো আজীবন থাকবে।

সবকিছু খুলে বলি,সেই অসহ্য রাতের কথা। ভাইয়া এবার বলছে, আমাদের দোলা কতো বেশি বুদ্ধিমতী দেখ। এবার আমার হাত ধরে বললো, সেদিন শোনার পর থেকেই মাকে ছুঁয়ে দেখতে
খুব মন চাচ্ছে। কিন্তু মায়ের ভয়ে আসিনি রে। আমার মনে পড়ছে রাকিবের সেই কথা,খালাম্মা
আসলে কচি নারকেলের মতো। বাইরে শক্ত কিন্তু ভেতরটা একদম নরম। বললাম, তুমি দোকানে বসো। আমি মাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করে, পরিস্থিতি বুঝে তারপর তোমাকে ডাকবো।

বাসায় ঢুকতেই মা বলছে, টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে সাদি। মাথাটা ভালো করে মোছে নে। আমি অনেক কষ্টে সাহস সঞ্চয় করে সামনে গিয়ে বলি, তোমার যে ছেলের মাথায় সামান্য বৃষ্টি পড়লেই ব্যথা করে………সেই ছেলে তোমাকে এক বার শুধু একবার দেখবে বলে বৃষ্টিতে ভিজছে।
তাকে আসতে বলি মা? মায়ের গলার আওয়াজ খুব কঠোর শোনালো, না ও আমার ছেলে নয়‌। আমি হেসে বলি, তুমি ছোট চাচাকে মাফ করে দিতে পারো তাহলে ভাইয়া কে মাফ করতে সমস্যা
কোথায়? মা বলছে, তোর ছোট চাচা আর আমার পেটের বাচ্চা এক হলো? মনে ভয় আমার,আজ আবার মা রাগ করলে কি হয়? কিন্তু ওদিকে এক
সন্তানও মায়ের কোলে ফিরবে বলে দোকানে অপেক্ষা করছে। সুতরাং, আল্লাহ ভরসা।

হাঁটু গেড়ে বসে মায়ের পা কোলে তুলে নিয়ে বলি,
একটা কথা আছে মা “দারিদ্র্য গুণনাশিনি”‘ মানে
অভাব মানুষের গুণ সব কেড়ে নেয়। ভালো থাকা
যাবে ভেবে ভাইয়া চলে গেছে। মা বলছে, ভালো থাকুক সবসময় বাবা। কিন্তু মাকে দেখার এই ঢং কেন? আমি পায়ের তালুতে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছি, অস্থির হয়ে আছে সে। ঢং না মা,আসতে বলি তাকে? এবার মা বলছে,দেখেই যেন চলে যায়, আমি কোনো কথা বলতে পারবো না। আমি খুশি হয়ে ফোন দেই, ভাইয়াও খুব খুশি, মনে হচ্ছে ভাইয়া এখন উড়ে উড়ে চলে আসছে। আমি এবার উঠে পড়ি, এই জায়গায় এখন ভাইয়া বসে তার নড়বড়ে অবস্থান ঠিক করুক। ভাগ্য ভালো
যে, দোলা ও মেঘলা টিউশনিতে গেছে। না হয় দোলা চটাং চটাং কথা বলে আবার কি ঝামেলা বাধাতো কে জানে? দুই দিনের পৃথিবীতে এতো ঝগড়াঝাঁটি করে কি হবে?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here