###জীবন যখন যেমন (৭ম পর্ব)
###লাকি রশীদ

সকাল আটটায় ডাক্তার বলেছে, মাকে ১১টার পর কেবিনে দিয়ে দিবে। অভি ফোন করে জানিয়েছে,সে ক্লাশ শেষ করে বারোটার দিকে আসবে। ডাক্তার আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, আপনার মা এখন মোটামুটি ঠিক আছেন। জাউভাত ও লিকুইড শুধু খেতে দিন। উনার প্রেসারটা নরমাল হলেই আমরা উনাকে ছেড়ে দিবো। খেয়াল রাখবেন, উনি যেন কোনো ব্যাপারে উত্তেজিত না হন। উনার সব কথায় সবাই এখন
যেন হ্যা বলে। আমি বলি,কেবিনে কতোদিন থাকা
লাগতে পারে? উত্তর দিলেন,সেটা প্রেসার নরমাল হওয়ার উপরে নির্ভর করছে। আর ভিজিটর বেশি এলাও করবেন না। মাথা নেড়ে বলি, ঠিক আছে।

দোলাকে ফোন দিয়ে জাউভাত আনতে বলি। ও
এলে আরিয়ানের বাসায় গিয়ে টাকা আনতে হবে।বিল এখন পর্যন্ত কতো হয়েছে কে জানে? জেনে যেতে হবে। পর মুহূর্তে হাত তুলে আল্লাহকে বলি,
আমি তোমার এক অকৃতজ্ঞ বান্দা মাবুদ। নইলে তুমি আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে দামী জিনিস ফিরিয়ে দিয়েছো আর আমি এই মুহূর্তে কিনা টাকার কথা ভাবছি। কিন্তু কি করবো মাওলা, এটাই কঠিন বাস্তবের খেলা। অনেক সিনেমাতে যেমন দেখেছি তেমনি বাস্তবে কতবার নিউজপেপার এ পড়েছি,টাকার জন্য কিভাবে রোগীকে আটকে রাখে। তাই মাথার মধ্যে হয়তো এটাই ঘুরছিলো।

গতরাতে ডাঃ খালেদা হক এসে দেখে গেছেন। তখন দোলা বাসায় চলে গেছে। মধ্যবয়সী মহিলা, আমাকে দেখে বকা দিচ্ছেন, আপনাকে এরকম বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে কেন? আরে ভাই, পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে আছেন কতো ঝড় ঝাপটা আসবে। দাঁড়িয়ে সেটার মুখোমুখি হতে হবে। আপনি এতো ভয় পেলে চলে? আমি লালচে চোখ দুটো তুলে শুধু কোনো রকমে বলি, আমার মাকে এখন পর্যন্ত একটুও সুখ দিতে পারিনি আপু। যদি মা চলে যায় তবে আজ আমার খুব খারাপ দিন। আমার বাবা ভাই সবাই চলে গিয়ে আমাকে কঠিন ও কঠোর অবস্থায় ফেলে গেছে। আমি এক ব্যর্থ সন্তান আপু। আমি শুধু ছটফট করি, কারো জন্য কোনো উপকারী হতে পারলাম না আপু।

অনেক আগে প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় অনেক স্যারদের চোখ আমার কাছে গোয়েন্দাদের চোখ
মনে হতো। কেমন যেন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা এক দম হৃদয়ের ভেতরটা পর্যন্ত সার্চ করে নিচ্ছে। কারা কারা আজ পড়া শিখে আসোনি দাঁড়াও, এটা শোনেও পড়া না শিখে আসা আমি দাঁড়াইনি।
এক মুহুর্তও যায়নি, পরক্ষণেই সবার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে স্যার আমাকেই বললেন,সাদি পড়াটা বলতো বাবা। সবসময় পড়া শিখে আসা ভালো ছাত্র আমি তখন মাথা নিচু করে দাঁড়াতে ই
বিজন স্যার হেসে বললেন,স্যারের সাথে তুই মিথ্যে বলিস? এতো বছরের অভিজ্ঞতা আর কে মিথ্যে বলে………. আমি বুঝতে পারবোনা ভাবিস?

এই ডাঃ খালেদা হকের চোখ ঠিক সেই ভাবে যেন
আমার ভেতরটা দেখছে। সেকেন্ড পাঁচেক দেখে
হাসিমুখে বললেন, আপনি দেখবেন অনেক কিছু আপনার মা ও ফ্যামিলির জন্য করতে পারবেন।
কারণ কি জানেন,কারণ আপনার নিয়্যত ভালো।
একটা কথা আছে,নিয়্যতে বরকত। আপনি যখন ভালো কাজ করার নিয়্যত করেন, তখন সৃষ্টিকর্তা
ই আপনার সাহায্য কারী হয়ে যান। সাধারণত দেখা যায়,আমরা ধনীর ছেলে মেয়েদের চেয়ে কষ্ট
পেয়ে বড় হওয়া বিশেষ করে আর্থিক কষ্ট পেয়ে বড় হওয়া পরিবারের বাচ্চারা অনেক ভালো থাকে। একটাই কারণ,চক্র তো ইনশাআল্লাহ একবার না একবার ঘুরবে রে ভাই। সুদিন আসবে,
শুধু একটু ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করেন। আর জানেন তো, সবরের ফল কিন্তু সবসময় মিষ্টি হয়।

চা খেয়ে আসলাম, সকাল সাড়ে আটটা বাজে।
বাইরে তাকিয়ে আছি,কি দেখছি আল্লাহই জানেন
কারণ কাছে এসে দোলা ধাক্কা মারার পর ওদের দুজনকে আমি দেখেছি। সে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললো,কি রে কি দেখছিস বলতো? কোন দিকে তাকিয়ে রয়েছিস্? তুই এখন বাসায় যা, গোসল করে একটা ঘুম দিয়ে তারপর আসবি। ঠিক আছে ছোটভাই? আমি বলি,না প্রথমে একটু
আরিয়ানের বাসায় যাচ্ছি। ওকে আজকের পড়া পড়িয়ে তারপর এই মাসের বেতনসহ কিছু টাকা আনতে হবে। হাসপাতালের বিলটা যাবার সময় জেনে যাবো।

এবার দোলা চেঁচিয়ে উঠলো, তোর একটা দোষ কি জানিস ছোটভাই, তুই সব চিন্তা তোর ঘাড়ে নিতে ভালবাসিস।কারো কাছে তোর টাকা খুঁজতে যেতে হবে না। মায়ের আলমারিতে, বিপদ আপদে
লাগে যদি সেটা ভেবে মা বেশ কিছু টাকা আলাদা
করে রাখে। আমি জানি সেটা,সাথে নিয়ে এসেছি।
একা বাসা,কি না কি হয় !!! আমি হেসে বলি, সেটা আর কত হবে? বিল কতো আসবে, তোর কি তা ধারণা আছে নাকি? এবার দোলা রাণী ক্ষেপেছেন,
আশ্চর্য্য সবকিছু না জানলে শান্তি নেই? খালেদা ম্যাডাম এখান থেকে গিয়েই ফোন দিয়েছিলেন।
উনি আইসিইউতে গিয়ে দেখেছেন,বিল খুব বেশি আসবে না। আশা করি এই টাকায় ভালোভাবে হয়ে যাবে। না হলে তখন দেখা যাবে।এখন তোকে
যা বললাম,তা কর্ প্লিজ। তাহলে বাসায় ই যাই ভেবে রওয়ানা হলাম।

গোসল করে এলার্ম দিয়ে শুয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি একটা বাজে। পড়িমরি করে বের হই।
দোলার যা স্বভাব, সে হয়তো ভাববে ছোটভাই যখন ঘুমোচ্ছে একটু ঘুমাক। কি যে করছে ওরা,
ফোন দিতেও ভয় হচ্ছে। কি শুনতে কি শুনবো,
তার চেয়ে জায়গায় যাওয়াই ভালো। গিয়ে দেখি,
মাত্র কিছুক্ষণ আগে মা কেবিনে এসেছে। দোলা, মেঘলা ও অভি মাকে ঘিরে আছে। অভি মায়ের হাত তার হাতে তুলে বলছে, মুখেই শুধু বলো অভি আমার ছেলে। সত্যি যদি তাই ভাবতে তুমি, তাহলে এতো রাগ উঠতো না। ভাবতে এক ছেলে গেছে তো কি হয়েছে? পাজীর পা ঝাড়া অভি তো আছে। শোনো তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে উঠো, আমি তোমাকে পার্লারে নিয়ে ম্যানিকিউর,পেডিকিওর
করাবো। হাতের নখগুলো কি রকম হলদেটে হয়ে গেছে। সবার সাথে সাথে মাও হাসছে। আমাকে দেখে বলল,নাও তোমার ছোট খোকা এবার চলে এসেছে। আমি পাশে যেতেই মা বলছে,এক রাতে
তোকে এমন লাগছে কেন রে? আমি মায়ের হাতে চুমু দিয়ে, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি।

ঘুমের ইনজেকশন এর প্রভাবে মা অসাড় হয়ে ঘুমোচ্ছে। দোলা এবার আস্তে আস্তে বলছে,সব মন্দের একটা ভালো দিক থাকে। মাকে শিকল দিয়ে বেঁধেও এভাবে দুই দিন রাখা যেতো না। অভি বলছে আমরা চারজনের মধ্যে একজন এখানে থাকি। বাকি তিন জন পাশের হোটেলে গিয়ে লাঞ্চ করে আসি। তারপর,অন্যজনও গিয়ে খেয়ে আসবে। আমি বলি, আমি আছি। তোরা যা
প্রথমে। মেঘলা বলছে, সেটা তো জানি আমরা তুমি যে প্রথমে যাবে না। অভি বলছে, চল্ তাহলে আমরা যাই। আসলেই ভীষণ খিদে পেয়েছে। ওরা চলে গেলে, কেবিনের দরজা বন্ধ করতেও ইচ্ছে হয় না। থাকুক দরজা খোলা। দোলার পার্সে টাকা, ওটা ওর সাথেই আছে। কেবিনে আছেই বা কি,আর নিবেই বা কি। ঘুমন্ত মায়ের শীর্ণ হাতের
আঙ্গুলগুলো ছুঁয়ে ভাবছি, আগে অভি সব কথার সাথে একটা কথা বলেনি। হয়তো বা শুনলে মার কষ্ট হবে ভেবে।

মায়ের আঙ্গুলগুলো খুব সুন্দর। সরু সরু আঙ্গুল দেখেই হয়তো বাবা বলতো, আঙ্গুল তো নয় যেন চম্পককলি। আমাদের বাসা থেকে অনেক দূরে বাবার কলিগ বাতেন চাচার বাসায়,বাবা মাসে একবার যেত শুধু মায়ের জন্য মেহেদী আনতে।
বড়ফুপু প্রায়ই বলেন, বড়ভাই ভাবীকে বড্ড বেশি
ভালবাসতেন। না হলে কয়েকটি মেহেদী পাতার জন্য কেউ এতো কষ্ট করে? সেই চম্পককলি আঙ্গুল ই বা কই গেল আর মেহেদী মাখা সেই নখ
গুলো ই বা কই গেল? আমি দেখছি,আর মায়ের
হাতে টপটপ করে আমার চোখের পানি পড়ছে।
কতক্ষন কেটেছে জানি না, হঠাৎ পিঠে স্পর্শ পেয়ে দেখি শাওন বলছে, কাঁদছ কেন? বড়চাচী তো ভালো আছেন শোনলাম।

স্বাভাবিক অবস্থায় হয়তো বা তাকে ধমকে উঠতাম। এখন কিছু না বলে, চুপচাপ বসে থাকি। কিন্তু সে চুপ করে থাকলে তো, কি হলো কথা বলছো না যে? এবার আমি খ্যাক করে বলি, তুই এখানে কেন এসেছিস? ঝামেলা না করলে তোর আর শান্তি নেই না? সে দেখি পাশে বসে মৃদু স্বরে বলছে, তুমি সবার সাথে ভালো ব্যবহার করো। শুধু আমাকে দেখলেই তুমি ক্ষেপে যাও কেন বলোতো? আমার তো মনে হয়, তুমি আস্তে আস্তে
আমাকে ভালবাসতে শুরু করেছ। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি, তোদের মাথায় ভালবাসা ছাড়া আর কিছু ঘুরে না, তাইনা? রোগী দেখতে এসে সেই এক বুলি কপচানো !!! এবার সে আমার গালে হাত বুলিয়ে বলছে, দুইদিন শেভ না করায়
তোমাকে বেশ দেবদাস দেবদাস লাগছে। আমি পুরোপুরি স্তম্ভিত, কিছু না বলে আমার গালে হাত দিয়ে কথা বলছে……………. এতো আমার কাছে রীতিমতো অবিশ্বাস্য কান্ড।

চেয়ার থেকে চট করে দাঁড়িয়ে বলি,যদি চড় না খেতে চাস চলে যা এক্ষুনি। আমার মন এমনিতেই ভালো নেই। পরে সত্যিই কি থেকে কি করবো !!!
এবার সেও দাঁড়িয়ে আমার মুখের সামনে তার মুখ এনে বলছে, সেটা ভেবেই তো আসা‌। মর্জিনা মাকে গিয়ে বলেছে,একটার সময় তোমাকে না কি
দৌড়াতে দৌড়াতে গেট থেকে বের হতে দেখেছে।সে মাকে বলছে,সাদি ভাই তার মা রে খুব আদর করে। দুই দিনেই পাগলের মতো হয়ে গেছে। এটা শুনে শুধূ তোমাকে দেখার জন্য আমি ছুটে এসেছি। আর তুমি চড় দিতে চাচ্ছ?গাড়ি আনিনি,
মাকে বলেছি তিতলির বাসায় যাচ্ছি। আমি এতো কিছু করার পর, শুধুমাত্র তুমি কষ্টে আছো কিনা
দেখতে এসে, এতো বকা খাওয়া কি ঠিক হচ্ছে?
তুমিই বলো।

এবার মুহূর্তেই একচোখ ভরা জল নিয়ে বলছে, একটু ভাবো কেউ এতো অপমানের পরও কি ৩
বছর ধরে আশায় আশায় থাকে? এতো কিছু বুঝো আর এটা বুঝো না। আমি যেন সম্মোহিত হয়ে শুনছি, কিচ্ছু লাগবে না। শুধু একটু সাহস করো। আমি চাকরি পেলেই আমরা বিয়ে করবো।
ততোদিনে তোমারো চাকরি হবে ইনশাআল্লাহ।
আমার জীবনে আমি কখনো কারো সাথে ছ্যাচড়া
হয়ে পড়ে থাকিনি। একমাত্র তোমার জন্য এসব করেছি। প্লিজ একবার ” ওকে” বলো, তোমাকে আর জ্বালাবো না কথা দিচ্ছি। কিছু বলো, বোবা হয়ে গেলে কেন? কি হলো, কথা বলছো না যে?

আমি ভাবি,খাদের খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছি। এখন নিজেকে না সরালে আর উদ্ধার পাওয়ার আশা নেই। বললাম,এসব অবাস্তব চিন্তা মাথা থেকে দূর কর্। বাসায় যা, তুই যেরকম করে ভাবছিস সেটা আদৌও সম্ভব নয়। আর কখনো এসব বলবি না আমাকে। এখন প্লিজ তুই যা। এবার শার্টের হাতায় টান দিয়ে বলে, শুধু ছয় ফুট এর শরীর দিয়ে কি করবে, তোমার হার্ট ছয় সেন্টি মিটারেরও না। কাওয়ার্ড আস্ত এক টা কাওয়ার্ড তুমি। ঠিক সেই সময় খোলা দরজা দিয়ে অভিরা ঢুকলো। অভি বলছে,ডাক্তাররা এখন রাউন্ড এ আসছে। দোলা দেখি শাওনকে জিজ্ঞেস করছে কখন এলে শাওন আপূ? শাওন উত্তর দিলো, এইতো কিছুক্ষণ আগে রে।

কেবিনে ঢুকলো মায়ের মূল চিকিৎসকের সাথে একদল শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের দল। বর্ষীয়ান
চিকিৎসক মাকে বলছেন, বাহ্ আপনাকে তো বেশ ফ্রেশ দেখাচ্ছে। আজকের রাতটা থাকুন, যদি প্রেসার আজকের মতো থাকে তবে কালকে ছেড়ে দেবো ইনশাআল্লাহ। আর আপনাকে দেখে তো মোটেও রাগী লাগে না। হঠাৎ হঠাৎ এতো রেগে যাবেন না,এতে নিজের ই ক্ষতি। মা মৃদু হেসে স্পষ্টস্বরে বললো,রাগ কি ইচ্ছে করে করি বলেন? দিন শেষে প্রিয়জন হারামী হলে কি খুশি থাকা যায়? এবার ডাক্তার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার মা? চিন্তা করবেন না। উনি ভালো আছেন এখন। শর্ত শুধু একটাই, উনাকে রাগাবেন না কেউ।

ওরা দলবেঁধে বেরিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ পেছন থেকে এপ্রোন পরা একটা মেয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো, এই তুমি সাদি না? আমি মাথা নাড়তেই বললো, আমাকে চিনতে পারছো? আমি না বলে
দেয়ায় আশ্চর্য্য হয়ে বলছে, আমি নাফিসা সাদি। মনে আছে কলেজে একসাথে পড়তাম? আমার এবার মনে পড়েছে, বললাম হ্যা হ্যা, এবার চিনতে পেরেছি। এবার বেহায়া মেয়ে নাফিসা সাথের মেয়ে টিকে আমাকে দেখিয়ে বলছে,কলেজ জীবনে এর জন্য আমরা পাগল ছিলাম। আমি তো তাকে এতো জ্বালিয়েছি,পরে সে আমাকে দেখলেই ওই জায়গা থেকে সরে যেতো। ফাজিল অভি এবার বলছে, সেই স্থান এখনো শুন্যই আছে আপু। আপনি কি আবার চেষ্টা করতে চান? হেসে
নাফিসা বলছে, সাদি রাজি থাকলে আমি সবকিছু
ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে রাজি আছি।

আমি অভিকে বলি,কিসব আজেবাজে কথা বলিস? তোমার সাথে দেখা হওয়ায় খুশি হলাম নাফিসা। বাই। সে এবার অভির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, আপনার কথায় ভবি ভুলার নয়। আচ্ছা সাদি আমার ফোন নম্বরটা অন্তত নাও। মাঝে মধ্যে ফোন দিলে কথা বলো। আমি সেইভ করে ওদের বিদায় দিয়ে দেখি, শাওন কটমট দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ভাবছি,আচ্ছা মুস্কিল তো,এ আবার কোন যন্ত্রণা হলো? তারচেয়ে, খাবার খেতে হোটেলে যাওয়াই ভালো। সত্যি খিদে পেয়েছে ভীষণ।

পা বাড়াতে যাবো, দোলা বলছে শাওন আপুকে তুমি একটা ফোরষ্ট্রোকে তুলে দিও। উনি বাসায় যাবে। আমার মেজাজ এবার তুঙ্গে ওঠে, তাকে তুলে দিতে হবে কেন? একা একা দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছে। বাসায় যেতে পারবে না কেন শুনি? মেঘলা বললো, ছোট ভাইয়ের কি মাথায় দোষ ধরেছে? তুমি হোটেলে ঢূকার সময় তুলে দিয়ে দিও। অগত্যা কি আর করা? দুজনে হাঁটতে শুরু করলাম। বেরিয়ে এসে বললো, আজ না আমার লাঞ্চ করা হয়নি। একসাথে খাবো চলো। আমি একটা ফোরষ্ট্রোক থামিয়ে বলি,উঠ জলদি। বাসায় গিয়ে খাস। এবার আমার হাত ধরে বলছে,
দেখবে একদিন তুমি আমার জন্য খুব বেশি কষ্টে থাকবে কিন্তু আমার নাগাল হয়তো পাবে না। ভীষণ ভীষণ কাঁদবে আমার জন্য। পাগলের মতো কাঁদবে। দিশেহারা হয়ে ভাববে,কি ভুল করলাম !!!
আমি বলি, সেটা যদি কখনো হয়, তখন ভেবে দেখা যাবে। এবার দয়া করে যা তুই। হিসহিসিয়ে
বলছে, আমাকে বিদায় করার এতো তাড়া কেন?
নাফিসার সাথে কথা বলতে চাও? কত্তো যে ঢং !!!

বেশ ভালো করে বুঝতে পারছি, আমি না সরলে
এই নাটক চলতেই থাকবে। তাই ড্রাইভারকে বলি,
টান দেন না কেন? শাওন এবার একদম চুপ হয়ে
গেছে। ফোরষ্ট্রোক চোখের আড়াল হওয়া পর্যন্ত, সে একদৃষ্টিতে রাগ, ঘৃণা ও ক্ষোভ নিয়ে তাকিয়ে আছে আছে আমার দিকে। চলে যেতেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি,কি বলে গেল এসব? পরমুহূর্তেই আবার পেটের খিদে জানান দেয়ায় হোটেলে ঢুকে পড়ি।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here