আমি প্রথম প্রেগনেন্ট হই বিয়ের আগে,, বৈধ বাচ্চা যেমন পেটে আসলে প্রতিটা মায়ের জন্য সুখ নিয়ে আসে। ঠিক তেমনি অবৈধ ভাবে বাচ্চা পেটে আসলে যন্ত্রণা,, লজ্জা আর ভয় নিয়ে আসে। সেই সময়টা আমার মাথা কাজ করছিলো না,, কিভাবে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না,,
যখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হই তখনই প্রেমটা হয়েছিলো,, সবে মাত্র ১৬ তে পা দিয়েছিলাম,, চোখে ছিলো হাজারো স্বপ্ন,, হাজারো অনুভূতি,, বুক ভর্তি আবেগ,, ভুল সঠিক এসব কিছুই বুঝতাম না,, মনের গভীর প্রেম বাসা বেধেছিল,, যা অবুঝ মন থেকে কারো সরানোর ক্ষমতা ছিলো না,,
প্রথম দেখাতেই আমি তার ওপরে ক্রাশ খেয়েছিলাম,, সেদিন কলেজ জীবনের প্রথম ক্লাস ছিলো তাই বড় আপু আমাকে দিয়ে এসেছিল,,
মুহুর্তটা এমন ছিলো,,
আমি আর বড় আপু রিক্সায় ছিলাম,, সে তখন বাড়ির গেইটে দাঁড়িয়ে একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলো,, সেদিনই তার সাথে চোখাচোখি হয়,,আর তার চোখ গুলো দেখেই আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম একপ্রকার,, একটা ছেলের চোখের চাহনি এত মায়াবী হতে পারে সেটা তাকে না দেখলে বুঝতামই না,, এক পলক দেখেই লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলাম,, এরপর থেকে প্রতিদিনই তার সাথে দেখা হত,, সকালে একবার কলেজ যাওয়ার সময়, আর বিকেলে একবার,,
কলেজের পাশেই ছিলো তার বাসা,, এবং তার ব্যাবসা ও সেদিকেই ছিলো,,
ছুটির পরে বিকেলে তাকে দেখতাম,, চায়ের দোকানে বসে সে আড্ডা দিতো,, সে ও যে আমাকে দেখতো সেটা আমাদের বন্ধু-বান্ধবীরাও বুঝতে পারতো,, এভাবে একমাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরে সে নিজে থেকেই আমার সাথে এসে পরিচিত হয়,, এর ঠিক ২১ দিনের মাথায় প্রেমের প্রস্তাবটা সেই দিয়েছিলো,, আমিও মানা করতে পারিনি,, তাকে যত দেখতাম আর মুগ্ধ হতাম,, আমার প্রতি তার আচরণ খুব আহামরি কিছু ছিলোনা,, আর দশ জন প্রেমিক যেমন হয় তার ঠিক তেমনি ছিল কিন্তু তাই আমার ভালো লাগতো,, একটু বেশিই,, কারণ হয়তো অসম্ভব আবেগ,,
আস্তে আস্তে আমাদের দেখা সাক্ষাৎ বাড়লো,, কলেজ গেইট পর্যন্ত যা সীমাবদ্ধ ছিলো,, তা আস্তে আস্তে ক্লাস পালিয়ে পার্ক পর্যন্ত গড়ালো,, বাসায় প্রায় কথায় কথায় মিথ্যা বলা শুরু করে দিলাম,, লুকিয়ে ফোনে কথা বলা বান্ধুবীদের নাম ব্যবহার করে,, এক্সট্রা ক্লাস আছে বলে,, আসল সময়টুকুতেও কোচিং ক্লাস করা বাদ দিয়ে প্রেম করতে ব্যাস্ত হয়ে পরলাম,, দিন যত গরাতে লাগলো তাকে কাছে পাওয়ার একটা আকাঙ্ক্ষা বাড়তে লাগলো,, তার দিক থেকেও একই রকম সাড়া পেলাম,, কিন্তু তার চাহিদা যে অন্য কিছু,,তা বুঝতে সময় লেগে গেলো একটু,, প্রেমের এক বছর পুর্তিতে তার আবদার হলো তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে,, নানা অজুহাত দিয়ে আরও তিন মাস পার করলাম,, নিজের বিবেক আর মন দুটো মিলে একে অপরের সাথে যুদ্ধ করতে শুরু করলো ,,
এই তিনটা মাসে একটা রাত ও ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারিনি,, প্রতিদিন একই কথা,, রাগ করতো আমার সাথে কথায় কথায়,, কেমন যেন চিরচিরা স্বভাবের হয়ে গিয়েছিলো,, তার থেকে কষ্ট আমি নিতে পারছিলাম না,, কারণ আমি তার থেকে ভালোবাসা পাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম,, তার অবহেলা,, রাগ,, আমি নিতেই পারছিলাম না,, আমার ভালোবাসাটাও তার কাছে মিথ্যে হতে শুরু করে দিলো,, কত শত চেষ্টা করতাম তাকে বুঝানোর কিন্তু সে বুঝতেই চাইতো না,, যদি তার সাথে সেসব করি তাহলে সে হয়তো থাকবে না করলে আমাকে রেখে চলে যাবে বুঝতে পারছিলাম,,
আর বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক করা কতটা খারাপ তাও জানতাম,, এখন যে কোনো একটা পথ বেছে নেওয়া লাগবে আমার,,
সেদিন রাতে সে যখন বললো,, আজ শেষবার এর মত সে বলছে,, তখন তার এভাবে আবদার করাতে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি,,
মনের মধ্যে অনেক জড়তা,, ভয়-ভীতি, তাকে নিজের সাথে রাখার অদম্য ইচ্ছা সব নিয়ে তার কাছে ছুটে গেলাম,,
সে প্ল্যান করলো
আমার কলেজের কাছের বান্ধবী একটা হোস্টেলে থাকতো তাকে আমার বাবা মা ও চিনতো,,সেই মেয়ের গ্রামে যাওয়ার কথা বলে যেন ২দিনের জন্য বাসা থেকে বেড় হই তার সাথে,,
রিলেশনের পর থেকে ছোটো খাটো অনেক মিথ্যাই বাসায় বলতাম,, কিন্তু এই মিথ্যাটা বলতে কেন যেন বিবেকে অনেক বাধা দিচ্ছিল,, আমাকে আমার পরিবারের সবাই খুব বিশ্বাস করতেন,, বাবা একটু অমত করলেও ঠিকি রাজি হয়ে গেলেন প্রানপ্রিয় বান্ধবীর সাথে তার গ্রামে যেতে দিতে,, এদিকে বান্ধবীকে আগেই সব জানিয়ে রেখেছিলাম,, সেও সাহায্য করতে রাজি হয়ে গেলো,, আমরা চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এর বাসিন্দা,, সে আমাকে নিয়ে ঢাকা আসলো,, এই প্রথম বাবা মা থেকে এত দূরে কোথাও এসেছি,, পাশে সে আছে একটা ভরসা আছে তারপরেও একটা ভীতি কাজ করছে,, কারণ আমি যেই কাজের জন্য এখানে এসেছি তা নেহাৎ খারাপ কাজ,, তবুও তার মুখের হাসিটা দেখলে সব ভুলে যাই,, শুধু মাত্র একটা কবুল বলা ছাড়া আর তো কিছু বাদ পরে নি আমাদের সম্পর্কে। ভালো সে যে আমাকে অনেক বাসে তাও বুঝতে পারি আমার প্রতি তার যত্নে। পুরো একটা বছর ধরে আমাকে যেভাবে আগলে রেখেছে এই ছেলেটা তাতে তার ভালোবাসা আলাদা করে প্রমাণ করার লাগবেনা আমার চোখে অন্তত পক্ষে।
সেদিন আমরা ঢাকা এসে ওর এক বন্ধুর বাসায় উঠলাম বাসায় কেউই ছিলোনা যদিও,,
আমরা সারাদিন ঘুরাঘুরি করলাম,, তার হাতেহাত রেখে হাটতে একটা শান্তি লাগছিলো,, বুঝতে বাকি রইলো না এই হাত আমি ছেড়ে দিয়ে থাকতে পারবোনা,,
রাতে বাইরে থেকেই খেয়ে আসলাম আমরা,,
এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম,,
আমি আর ও পাশাপাশি বসে আছি,,
কেমন যেন একটা লজ্জা কাজ করছে,,
আর ভাবছি,,
আজ প্রথম ও আর আমি একসাথে থাকবো, মনে হচ্ছিলো এখন আমরা বিয়ে করে নিলেই তো পারতাম,, ওর হাত ধরে বললাম,,
– চলো না আমরা বিয়ে করে নিই?
– করবো,, আর কিছু দিন পরে। তুমি ইন্টারটা শেষ করো,, আমার ব্যাবসা টা একটু ভালো হলেই তোমার বাসায় প্রস্তাব পাঠাবো,, তোমার বড় আপু এখনো পড়াশোনা করছে,, আমার মনে হয়না তোমাকে তার আগে বিয়ে দিবে। নাহলে আমি এখনই তাই করতাম।
ওর কথার যুক্তি বুঝতে পেরেছিলাম,, সত্যিই তো বিয়ে দিবেনা আমাকে এত আগে,, মা বাবা কে বলতে গেলে হয়তো তার থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দিবে।
রাতের গভীরতা বাড়ছিলো সেই সাথে তার আদরে ডুবে যাচ্ছিলাম,, বিবাহ ছাড়া বাসর হচ্ছিলো আমাদের। বৈধতা ছিলো না,, তবুও তার প্রতিটি স্পর্শ আমাকে মাতাল করে দিচ্ছিলো সে রাতে। হয়তো ভালোবাসা এত ছিলো বলেই নিজেকে বিলিয়ে দিতে গিয়ে আর দ্বিতীয় বার ভাবতে হয়নি আমার।
পরদিন সকালে যখন চোখ খুলে তখন আমি তার বুকে মুখ গুজে শুয়ে ছিলাম,, এত শান্তি লাগছিলো এই বুকে,, তাকিয়ে দেখি সে আমার আগেই উঠে গেছে,, আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
– ঠিক মত ঘুম হয়েছে ম্যাডামের?
-হুম,,
আমি লজ্জায় তার দিকে তাকাতেই পারছিলাম না।
সকালে আমার প্রতি যেন তার ভালোবাসা আরও কয়েক গুন বেড়ে গেছে,,
সে আমাকে একটা মেডিসিন দিলো খেতে আমিও খেয়ে নিলাম,,
কিছুক্ষণ পরে আমার কপালে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে বলেছিলো,, আজ আমাদের ভালোবাসা পূর্ণ হয়ে গেছে,, অনেক ভালোবাসি তোমাকে,, আজীবন পাশে থাকবে??
-হুম থাকবো সবসময়।
সেদিন আমরা সারাদিন ঘুরে ফিরে বাড়ি চলে আসলাম,,
তারপর থেকে আবার প্রতিদিনের জীবন শুরু হয়ে গেলো,, কিন্তু কিছুদিন ধরে দেখি সে আগের মত আমার জন্য সকাল বিকেলে দেখা করতে ছুটে আসেনা,, কথা বলাও কমিয়ে দিয়েছে,,
আগের মত খোঁজ নেয় না,,
জিজ্ঞেস করলেই বলে
“আমাদের ভবিষ্যত ভালো করার জন্য এখন দিন রাত খাটতে হয় আমার। ভালো ভাবে টাকা উপার্জন করতে না পারলে তোমাকে খাওয়াবো কি বিয়ের পরে??”
তার এরূপ ব্যাবহার আমাকে অনেক কষ্ট দিতে শুরু করে,,
কিছুই বলতাম না,,
এভাবে ২ মাস কেটে যায় ,,
আজ ১৭ দিন সে আমার সাথে না দেখা করেছে না ফোন করেছে,,
আমার শরীর একটু একটু খারাপ লাগতে শুরু করে,, আর মন আরো খারাপ
মাঝে দিয়ে পিরিয়ড ও হলো না,, আমার রক্তশূন্যতার সমস্যা আছে বলে মাঝে মাঝে পিরিয়ড ডেট মিস হতো কিন্তু এবার যখন দুই মাসে একবার ও হলো না তখন আমি ভয় পেয়ে গেলাম,,
কলেজের সেই বান্ধুবীর সাথে শেয়ার করার পরে ও আমাকে বললো, কিট দিয়ে টেস্ট করে দেখতে,,
করে দেখলাম পজিটিভ এসেছে,, ভয়ে আমি পুরো শেষ,, ভাবলাম এটা ভুল ও হতে পারে তাই আবার করি।
পরপর ৩বার করলাম রেজাল্ট পজিটিভ আসলো,,
এবার আমার বয়ফ্রেন্ড কে কল দিলাম,,
টানা ২১টা ফোন করার পরেও সে রিসিভ করলো না,,
তাই বাধ্য হয়ে তাকে মেসেজ পাঠালাম,,
– আমি প্রেগন্যান্ট। তুমি কি ফোন টাও রিসিভ করবেনা?
১০ মিনিট পরে আবার কল দিলাম দেখি এবার তার মোবাইল বন্ধ।
মনে হতে শুরু করলো সে কি আমাকে আর চায় না?
সেও কি অন্য ছেলেদের মত?
আমি কি তার শুধু শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য একটা পুতুল ছিলাম?
আমার প্রতি কি তার কোনো মায়া কাজ করেনা?
সে কি আমাকে আর ভালোবাসে না?
নাকি ভালোবাসা কোনো দিনই ছিলো না?
আমার যে অনেক ভয় লাগছে আর কষ্ট হচ্ছে,,
আমার সামনে কি কোনো পথ আছে??
যা ধরে আমি এই ঝামেলা থেকে রক্ষা পেতে পারি?
নাকি নেই?
আমার কি উচিত হবে আত্নহত্যা করা?
আমার জন্য এইটাই উচিত হবে নাহলে যে মা বাবা আপু আমার জন্য কেউ মুখ দেখাতে পারবেনা সমাজে৷
আমি এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি।
হঠাৎ মনে পরবো আমার এই ব্যাপারটা জানাজানি হবে কিছুদিন পরেই তখন মা বাবাকে কিভাবে মুখ দেখাবো? আমার কারণে তারা সমাজে কিভাবে টিকে থাকবে? আপুর কি হবে? এলাকার লোক জন আমাদের কি বলবে? এই বাচ্চাটা এখন কেন পেটে আসলো?
তাকে তো আমি চাইনা,, এ যেন একটা গলার কাটা হয়ে গেছে,, তার প্রতি আমার কোনো অনুভুতি কাজ করছেনা একদম,, মা হলে নাকি মায়া লাগে,, আমার যে অসহ্য লাগছে,, পারছিনা একে আমি মেনে নিতে,,
এসব ভাবতে ভাবতেই আমি মাথা ঘুরে পরে যাই,, অনেক কষ্টে বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে ঘুমিয়ে পরি কান্না করতে করতে।
রাতে ১১টার দিকে সে আমাকে ফোনে একটা মেসেজ পাঠায়,,
-কাল সকালে কলেজের সামনে এসে দেখা করবে,,
মনের এত বড় বোঝা আর বইতে পারছিনা,, তার মেসেজ পেয়ে অনেক ভালো লাগলো,
সাথে সাথে তাকে কল ব্যাক করলাম,,
সে ফোনটা বন্ধ করে দিলো,,
ফোনটা বুকে জড়িয়ে ধরে আকাশ পানে তাকিয়ে ভাবছি আমি কি ভুল মানুষকে ভালোবাসলাম?
সে কি আমার জীবনটা শেষ করে দিবে??
আমার ভুলের জন্য কি আমার জীবন দিয়ে দিতেই হবে?
এই সমস্যা থেকে কি আমি মুক্তি পাবো না?
আমার এই ভুলের খেশারত কি আমার মরেই দিতে হবে? নাকি অন্যভাবে?? কি করবো আমি??
সারা রাত কোনো মতে পার হলো,,
সকাল সকাল কলেজ টাইম না হতেই আমি চলে গেলাম,, গিয়ে দেখি সে আসেনি,, এভাবে ১ ঘন্টা,, ২ঘন্টা ৩ঘন্টা পার হয়ে গেলো,,
কলের ওপরে কল দিচ্ছি তাকে কিন্তু সে ধরছেনা,,
প্রায় সকাল শেষ হয়ে আসতে চললো,, কিন্তু তার আসার নাম নেই,,
এবার আমি রাস্তায় ধারে বড় বট গাছটার সাথে দাঁড়িয়েই শব্দবিহীন কান্না করতে শুরু করলাম,,
মাথাটা খুব বেশি পরিমাণে ঘুরাতে শুরু করেছে,,
পেছন থেকে কে যেন এসে আমার কাধে হাত রেখেছে কিন্তু ঘুরে দেখার আগেই আমি অচেতন হয়ে পরি,,
যখন জ্ঞ্যান ফিরে তখন নিজেকে হাসপাতালের বিছায়ার আবিষ্কার করি,,
(চলবে..)
#খেসারত
#Yasira_Abisha (#Fatha)