#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_১২
#Saji_Afroz
আজ নিখিলের এক বন্ধুর জন্মদিন। রাতে সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। কিন্তু আফসোস! যেই শার্ট-টি পরে যাবে ভেবেছিল তা আয়রন করা নেই। আয়রন করতে দেওয়ার সময় এটা দিতেই তার মনে ছিল না।
বাধ্য হয়ে নিখিল তার ওয়ারড্রব ও আলমারি থেকে কাপড় নামাতে থাকে। কিন্তু মন চায়ছে সেই শার্ট-টি পরতে। সে চেঁচিয়ে তার মা কে ডাকলো। মায়া খালা এসে বললেন, ম্যাডাম বাসায় নেই। শপিং এ গেছে।
-ওহ! আমার শার্ট টা আয়রন করে দাও তো দ্রুত।
.
এই বলে নিখিল ওয়াশরুমে চলে যায়। মায়া কী বলতে চেয়েছে সেটাও সে শোনেনি। মূলত মায়া রান্নার কাজে ব্যস্ত আছে। সে তরকারি চুলোতে দিয়ে এসেছে। আর মাংস কাটতে বসেছিল। হাতও নোংরা তার।
নিখিলকে বলতে চেয়েছিল তাকে একটু সময় দিতে। কিন্তু সে কোনো কথাই শুনলো না।
-কোনো সমস্যা?
.
পেছনে ফিরে বুশরা কে দেখে এসব বলল মায়া। বুশরা বলল, অন্য কাউকে পাঠান?
-ম্যাডাম অন্য কেউ স্যারের কাজ করুক তা পছন্দ করেন না। যা দরকার আমাকেই করতে বলেছে। এছাড়া রাতে তো আমি আর মনোয়ারা বেগমের জন্য দিপ্তীসহ থাকি এই বাড়িতে। স্থায়ী কেউ নেই আর।
-আচ্ছা আমি করে দিই। একটা শার্ট আয়রন করতে বেশি সময় এর প্রয়োজন নেই।
-সত্যি পারবেন?
-নিশ্চয়।
.
বুশরা ভেতরে এসে আয়রন করতে শুরু করে। নিখিল ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
সে বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বলল, আপনি এখানে কেনো?
.
বুশরা কিছু না বলে তার কাজ শেষ করে। এরপর নিখিল কে বলল, কাউকে কোনো কাজ সঁপে দেওয়ার আগে অন্তত জিজ্ঞাসা করবেন সে ফ্রি আছে কি না। অর্ডার দেওয়ার স্বভাবটা বদলান। এই বাড়িতে কাজ করলেও তারাও মানুষ।
.
নিখিল কিছু বলল না। কারণ তার তাড়া রয়েছে। বুশরা চলে গেলে সে তৈরী হয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। এদিকে বুশরা আবারও নিখিলের রুমে আসে। কী অগোছালো করে রেখেছে রুমটা! সব কাপড় সারারুমে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছে। বুশরা কাজ দেখলে বসে থাকতে পারে না। কাজ করতে তার খারাপ লাগে না। বরং ভালোই লাগে। ঘর গোছানো তার প্রিয় কাজ। সে নিখিলের সব কাপড় গুছিয়ে আলমারি ও ওয়ারড্রবে রেখে দেয়। তার রুমটাও গুছিয়ে দেয়। এরপর সোজা চলে যায় রান্নাঘরে। মায়া খালার কাজে কোনো সাহায্য করা যায় কি না দেখা যাক।
.
.
আজ নিহিরের সাথে ডিনার করতে বেশ নামি-দামি এক রেস্টুরেন্টে এসেছে তায়শা। মাত্র কিছুদিনের পরিচয়ে তারা সহজেই একে অপরের সাথে মিশতে শুরু করেছে। যদিও এটা শুরু থেকে ভালো লাগা ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু তায়শার ক্ষেত্রে এটা ভিন্ন। তায়শা তার অগোছালো জীবনটা গোছাতে চায়। যারা ভাবছে তার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে, তাদের আঙুল দিয়ে দেখাতে চায় তায়শা চাইলেই ধনীর ছেলেদের নিমিষেই বশে আনতে সক্ষম হয়।
নিহির সম্পর্কে সে যা জেনেছে তাতেই তাকে বশে আনার সিদ্ধান্ত নেয় সে। বড়ো ব্যবসা সামলায়। ব্যবসাটাও নিজের। বাড়িতে মা, চাচী ও ছোট একটা চাচাতো ভাই আছে বলেছে। তাছাড়া নিহির দেখতেও বেশ! হ্যান্ডসাম একটা ছেলে। তায়শার পাশে এমনি কাউকে মানায়।
তায়শা দেরী করতে চায়না। দ্রুত নিহিরের হয়ে যেতে চায় সে। তাই সে আজ প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে।
কিছুটা মন খারাপের ভান করে বসে আছে তায়শা। নিহির বলল, কোনো সমস্যা?
-নাহ তেমন কিছু না।
-তার মানে কোনো কিছু তো অবশ্যই।
আমাকে শেয়ার করুন। দেখি আমি কোনো সমাধান পাই কি না।
-আসলে বাসায় বিয়ের জন্য প্রেসার দিচ্ছে।
-হঠাৎ? না কি আরও আগে থেকে?
-আগে থেকে ছিল কিন্তু ইদানীং তা বেড়ে গেছে।
-কেনো?
-লজ্জার কথা কী বলব! এক জনের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হয়েছিল কিন্তু…
-কিন্তু?
-আমার বড়ো বোন তার সাথে পালিয়েছে। আসলে সে অনেক বড়ো লোক ছিল কি না, আপু লোভে পড়েছিল৷ আর তাকে পটিয়ে এই কাজটা করেছে। আপু আমার চেয়েও সুন্দর ও বুদ্ধিমতি। তবুও সে প্রস্তাবটা আমার জন্য এসেছিল। এটাও সে মানতে না পেরে একপ্রকার জেদের বশেও এটা করেছে।
.
এই কথাটি ইচ্ছে করে নিহিরকে বলেছে তায়শা। যাতে করে নিহির কারো থেকে তার ব্যাপারে কিছু শুনলেও বিশ্বাস না করে।
নিহির বলল, নিজের বোন এমন কাজও করতে পারে!
.
বুশরা যে তার আপন বোন নয় একথা আর নিহিরকে জানালো না তায়শা। এতে করে আরও বেশি সহানুভূতি নেওয়া যাবে নিহিরের কাছ থেকে।
নিহিরেরও মন খারাপ হয়। নিজের বোনের সাথেও এমনটা করতে পারলো মেয়েটি! সে তায়শা কে শান্তনা দেয়। আর বলল, বিয়ে করে নিলেই পারেন।
-তা পারি। কিন্তু মনের মতো পাত্র পাচ্ছি না। এই আরকি। একবার বিয়ে ভেঙেছে বলে কথা। তাছাড়া আপুও পালিয়েছে। একটা বদনাম হয়ে গেল না?
-আমি খুঁজতে হেল্প করব?
-মজা করছেন?
-মোটেও না।
-আপনার পছন্দ নিশ্চয় ভালো হবে। দেখতে পারেন।
.
এত তাড়াতাড়ি নিহির তাকে প্রস্তাব দেবে না সেটা তায়শাও জানতো। তবে গাছে যে সে ঢিল মেরে দিয়েছে এটা সে ভালোই বুঝতে পারছে।
.
.
বাসায় আসার পর নওয়াজের মা ফোন করে আত্নীয়দের জানিয়ে দিয়েছেন সে দেশে এসেছে। সেই থেকে নওয়াজ ঘর থেকে বেরুতেই পারেনি। বিশেষ করে নওয়াজের খালা ও খালাতো বোন আসাতে বের হওয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ তার মা তাদের অনেক বেশি গুরুত্ব দেন। কথার এক ফাঁকে নওয়াজের খালা নাসিমা তার বোনকে বললেন, নওয়াজের সাথে দ্রুত বিয়ের ব্যাপারে কথা বলে নিবি। এইবার যখন এসেছে জাকিয়াকে বিয়েটা করেই যাক। কি বলিস?
-আমারও তো এমনটায় আশা। ছেলে এসেছে একটু সময় দিই। আমি কথা বলব ওর সাথে।
.
রাতের খাওয়া শেষে তারা চলে যায়। আজ আর জাকিয়ার বিষয়ে তিনি কথা তুললেন না। নওয়াজও ভাবলো, আজ পরিবারকে সময় দেওয়া যাক। কাল সকালে আলিয়া খাতুনের বাসায় যাবে সে।
.
.
এদিকে নিখিল বাসায় ফিরে তার প্রয়োজনীয় কাপড় খুঁজে না পেয়ে মায়াকে চেঁচিয়ে ডাকে। মায়া আসলে সে বলল, আমার ব্যবহারের জামা গুলো কোথায় রেখেছ?
-আমি তো আপনার কাপড় গুছাইনি।
-তবে?
– মনেহয় বুশরা ম্যাডাম করেছে।
-সে আবার ম্যাডাম হলো কীভাবে?
-আপনারাই বলেছিলেন, অতিথিদেরও স্যার ম্যাডাম বলতে।
-সে অতিথি নয়। তোমাদের মতো একজন। তাকে পাঠাও।
.
বুশরা আসলে নিখিল রাগান্বিত কণ্ঠে বলল, যেটা জানেন না সেটা করতে যান কেনো?
-গোছানো ভালো হয়নি? আমি তো এটা ভালো করেই জানি।
-আমার ব্যবহৃত কাপড় গুলো আমি রাখি আলমারিতে। এখন সেসব পাচ্ছি না।
-হয়তো আমি ওয়ারড্রবে রেখে দিয়েছি।
-কাজ বাড়িয়েছেন আমার।
-আমি তো আর জানিনা কোনটা…
.
তাকে থামিয়ে নিখিল বলল, জানেন না যখন করতে কে বলেছে? নেক্সট টাইম আমার রুমেও আসবেন না আপনি।
আপনাকে যে কাজটির জন্য রাখা হয়েছে আপনি সেটিই করুন। সবকিছুতে নাক গলাবেন না।
.
বুশরা কিছু না বলে রুমে চলে আসে। নিখিলের কথাই সে কষ্ট পায়নি। আলিয়া খাতুনের ব্যবহারের জন্যই হয়তো সে এতটা শক্ত হয়ে গেছে। অন্যকেউ হলে কী অপমানে এই বাড়ি ছেড়েও চলে যেত?
.
চলবে