###দাম্পত্য সুখ (৭ম পর্ব)
###লাকি রশীদ

আমার শাশুড়ি ও শাহীন হতবাক হয়ে বসে আছেন। রাহি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানে ই আছে। রাহি কে প্রটেক্ট করার জন্য, রাফি কয়েক পা এগিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার ভয় লাগছে, শাহীন ভীষণ মাতৃভক্ত। হঠাৎ করে রাহি কে চড় টড় না মেরে দেয়। আমি হাত ধরে টেনে
ওর জায়গা থেকে সরিয়ে বলি,”যা তো রাহি, রুমে যা। এই রাফি হা করে দেখছিস কি? ওকে রুমে নিয়ে যা”।

রাহি এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে, রুমে চলে গেল। বন্যা ও রাফি রুমে চলে গেছে। আমাদের এই তান্ডবে,অবাক ছুটা বুয়া কিচেনের
দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে তাড়া দেই,
“কি ব্যাপার,চা খেয়েছো? হা করে দাঁড়িয়ে না থেকে, ঝটপট কাজ শেষ করে চলে যাও”। আমি
শাহীন কে বলি,”ভাত খাবে না কি? রাধবো”? সে বলে,”আর কিভাবে ভাত খাওয়া সম্ভব, এতো কিছু খেয়ে? বাচ্চারা খেলে রাধো, আমি খাবো না”।

মার কারবার, টিফিন ক্যারিয়ার এর এতো বড় বড় ৩ বাটি ভর্তি মাটন কষা দিয়েছেন। এতো জন খেয়েও মাত্র দেড় বাটি শেষ হয়েছে। বাকি দেড় বাটি টেবিলে ষ্ট্যান্ড দিয়ে,ফ্যানের ঠিক নিচে রাখি। কিচেনে গিয়ে দেখি,বুয়া ওর চা গরম করছে। রুটি
মাটন কষা জায়গায় ই আছে। আমি বললাম,”কি ব্যাপার? রুটি খাওনি? হেসে বলল,”বাইচ্ছার বাফের জন্য লইয়া যাইমু ভাবী। আমার ক্ষুধা নাই”।

নিঃস্ব নদীর বুকের রক্তক্ষরণ আবার শুরু হয়েছে। রেগে বলি,”তুমি বেশি বেশি করো। খাও তো
এটা, তোমার বাইচ্ছার বাপকে আমি দিবো না হয়, তুমি যাবার সময়”। এবার সে নিচু স্বরে বলে,”ভাবী
এইডা আর কইরেন না। আপনের শাশুড়ি শেষে আপনেরে গাইল পাড়বো”। আমি বলি,”এগুলো আমার মায়ের দেয়া খাবার। কাকে কি দিবো, সেটা আমি জানি। তোমার দোষ হলো, তুমি বেশি বোঝো আর বেশি কথা বলো। আগে সবকিছু খাও, খেয়ে কাজে লেগে পড়ো। প্রথমেই এক পট
ভাত বসাও, খেয়াল রেখো।নষ্ট হয় না যেন। আমি গোসল করে আসছি”।

বের হতেই দেখি,ডাইনিং টেবিলে বসে মা ছেলে
ফিসফিস করছেন। কেন জানি আমার বুকটা ধক্
করে উঠে। কি যে কুমন্ত্রণা গূণভক্ত ছেলেকে দিচ্ছেন আল্লাহ মালুম। আমাকে দেখে ই দুজন চুপচাপ। শাহীনের দিকে তীব্র দৃষ্টি দিয়ে একবার তাকিয়ে, রাফি রাহির রুমে এলাম। দুজনে ই টেবিলে বসে পড়ছে, কিন্তু রাহির লাল ফোলা চোখ দেখে, আমার ভেতর টা কে যেন দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে দিয়ে যাচ্ছে। বিছানায় বসে হাত দিয়ে টান দিয়ে, নিয়ে এসে ওকেও পাশে বসাই।

শান্ত স্বরে বলি,”পৃথিবীতে আল্লাহতাআলা অনেক রকম মানুষ সৃষ্টি করেছেন। একবার আমাদের
মহানবী (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,”এক
জন নারী যে খুব আল্লাহ কে ডাকে কিন্তু সে প্রতিবেশীদের মুখ দিয়ে কষ্ট দেয়। অন্যজন স্বাভাবিকভাবে ইসলাম পালন করে কিন্তু ব্যবহার,
আমল, আখলাক খুব ভালো, দুজনের মধ্যে কে বেহেস্তে যাবে? তিনি পরের জনের কথা বলেছেন।

পৃথিবীতে বাঁচতে হলে কতো ধরনের যুদ্ধ করতে হয়। কারো কটুকথা শুনেই, আমরা কাঁদতে শুরু করবো কেন? মামস কে কখনো তোরা কাঁদতে দেখেছিস? আমি কাঁদবো কেনো? যে বলেছে সে
তার ছোট মনের পরিচয় দিয়েছে। ঠিক কি না বল”? রাহি মাথা নাড়ছে আর রাফি বলছে,”আমি
তো ওকে এতোক্ষণ ধরে,এটাই বুঝাচ্ছি মা। কেঁদে
কি হয়, শুধু মাথাব্যথা ছাড়া”? আমি মনে মনে বলি,”তুমি আমার শক্তপোক্ত ছেলে, কিন্তু রাহি টা
তো একেবারেই নরম মনের মানুষ”। এ ছেলেটা কে নিয়ে ই আমার যতো ভয়, উৎকণ্ঠা।

রাহি কে চুলে আদর করে বলি,”তোদের দুজনের
জন্য এই ১২ টা বছর আমার কতো কতো কষ্টে গেছে। সেই এক যুগের কষ্টের স্বীকৃতি আমার, এই পরীক্ষার রেজাল্টের পর হয়তো মিলবে। কিন্তু, পরীক্ষার তিন দিন আগে কান্নাকাটি করে,
মনখারাপ করে, ঠিক মতো পরীক্ষা না দিলে, এত
কষ্ট আমার জলে গেল না”? রাহি এবার একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,” মামস, দেখো আমি আর মোটেও মনখারাপ করবো না। ইনশাআল্লাহ খুব ভালো পরীক্ষা দিবো আমরা”।”ঠিক আছে, তোরা
পড়”, বলে চলে আসছি,হঠাৎ মামস শুনে ফিরতে ই দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলছে,”আই লাভ ইউ
মামস,আই লাভ ইউ ভেরি মাচ”।

ওদের রুম থেকে বের হয়েও দেখি, টেবিলে বসে
মা ছেলের গোলবৈঠক চলছেই। পাত্তা না দিয়ে, রুমে ঢুকি। খুব টায়ার্ড লাগছে, যাই বলি না কেন মনের উপর চাপ পড়লে ইদানিং কষ্ট ই হয়। খুব ভালো করে শাওয়ার নিতে হবে। তারপর, নামাজ
আদায় করে বুয়াকে ছুটি দিতে হবে।অনেক কাজ,
ওয়াশরুমে ঢুকাই ভালো। শাওয়ারের নিচে আমি দাঁড়িয়ে দেখছি পানির ধারাতে শরীর ঠান্ডা হচ্ছে,
কিন্তু অপ্রাপ্তির ব্যথায় ক্ষতবিক্ষত নদীর মনটা কি
ভাবে ঠান্ডা করা যায়…সেটাই ক্ষণে ক্ষণে ভাবছি।
পৃথিবীটা এতো জটিল কেন? আমরা মানুষেরা
এতো খারাপ কেন? একটু সহজ,সরল পথে যদি
চলা যায়, তবে কি এমন ক্ষতি হবে?

শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখি, শাহীন বিছানায় বসে আছে। আমি কোনো কথা না বলে, নামাজ আদায় করলাম। তারপর, কিচেনে গিয়ে দেখি বুয়ার কাজ শেষ পর্যায়ে। ফ্লোর মুছছে, ও আমার জন্য অপেক্ষা করছে জিজ্ঞেস করবে বলে,”ময়লা
কি রাতে ই ডাষ্টবিনে ফেলে দিয়ে আসবে না কি”?
বললাম,”না ফেললে গন্ধ করবে তো। মুছে বালতি
জায়গা তে রেখে ময়লা ফেলে এসো”। আমি খালি দুটি আইসক্রিমের বক্স বের করলাম। একটা তে রাহির বাবার দেয়া রোষ্ট থেকে ৪ পিস রোষ্ট নিলাম। অন্যটাতে ৪ জন খাবার মতো করে,
বীফ কারি দিলাম। আর ৬ টা টিক্কা নিয়ে, চালের রুটি আর মাটন কষার সাথে দিলাম। হঠাৎ মনে হলো, এমনিতেই আজ আমার শাশুড়ি তক্কে তক্কে
থাকবেন, কিভাবে আমাকে নাজেহাল করা যায় সেজন্য। তাড়াতাড়ি একটা পলিথিন ব্যাগে, সব
গুলো বক্স ভরে, বুয়া কে বলি ময়লা ফেলার সময় এটা বাইরে রেখে এসো। যাবার সময় নিয়ে যাবে। তোমাদের ৪জনের জন্য খাবার দিয়েছি।

আমার বাবা সবসময় বলেন,”তোমার নিয়্যত বা
ইন্টেনশন ভালো হলে, আল্লাহ ই তোমাকে সাহায্য
করবেন”। বুয়া ময়লা নিয়ে যাবার একটু পরেই আমার শাশুড়ি কিচেনে উপস্থিত। আমি মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। উনার সামনে খাবার দিলেই আবার একটা ঝগড়া শুরু করে দিতেন,আর না দিলে বুয়াকে খাবার দেইনি বলে
মনটা খচখচ করতো। শাহীন কে বলে টাকা এনে দিলাম। ও বের হয়ে যাবার সময় আমার শাশুড়ি আবার ওকে বলছেন,” তোর তো ভালো ই আয়
বেড়েছে রে,যখন তখন এক্সট্রা পয়সা পাচ্ছিস”। বুয়া আরেক ফাজিল হেসে বলছে,”হ্যা আফনের দোয়ায় আল্লাহ বরকত দিছে”।

আমার শাশুড়ি আর বন্যা শুধু ভাত খাবে। ভাত বেড়ে, তরকারি গরম করে টেবিলে রেখে ওদের ২
জনকে ডাকি। ওরা বসতেই বন্যাকে বলি,”আমার ভীষণ মাথা ধরেছে। ঘুমের ঔষধ খেয়ে এখন ঘুম
দিবো। কিছুর প্রয়োজন পড়লে তোমার বাবা কে ডাকবে আমাকে ডাকবে না মোটেই। আর, খেয়ে উঠে তরকারি ফ্রীজে ঢুকিয়ে টেবিল মুছে একদম পরিষ্কার করে যাবে। সকালে টেবিলে আমি যেন কোনো পিঁপড়া না দেখি। ঠিক আছে মা”?

অনেক দিন পর, প্রিয়জন না বলে বাইরে থেকে হঠাৎ এসে সারপ্রাইজ দিলে যেমন মানুষ অবাক হয়, তেমনি আমাকে অবাক করে বন্যা বলছে, “তুমি যা বলেছো সব আমি করবো মা। শুধু তুমি একটু ভাত খেয়ে যাও। আমরা সবাই এতো কিছু খেলাম, শুধু তুমি ই কিছু খাওনি”। আমি দুহাত দিয়ে মেয়েটা কে ধরে আদর দিয়ে বললাম,”এখন খেলে বমি হয়ে যাবে মা, কালকে সকালে খাবো ইনশাআল্লাহ”। আমার শাশুড়ি আড়চোখে সবকিছু চুপচাপ দেখছেন। আমি তক্ষুনি সুপ্রীম পাওয়ারের শুকরিয়া আদায় করে মনে মনে বলছি,”আমার মেয়ের মনে এই ফিলিংস্ টুকু ঢুকানোর জন্য আবারো তোমার কাছে আমি দীনহীন বারবার নত হচ্ছি”।

রাহি ও রাফি কে আদর করে সোজাসুজি আমি
বিছানায় এসে শুয়ে পড়ি। শাহীন কে বললাম
“কাজ থাকলে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে করো। আমি এখন ঘুমাবো”। সে বলল,”সব দিন তো একই কথা বলো। “আমি টায়ার্ড, আমি এখন ঘুমাবো”…
গৎবাঁধা এক বুলি তোমার আছে ই”। আমি মৃদু হেসে বলি,”তোমার কি মনে হয়, আমি মিথ্যা কথা বলছি? আর তুমি কি এখন আমার সাথে গল্প করতে চাও”? শাহীন এবার হেসে উঠলো,”হ্যা তাই
তো। কিন্তু, তোমার এই মুডে তো গল্প করতে ই ভালো লাগবে না”। আমি বসে বলি,”করো গল্প। আমি শুনছি”।

এবার সে আমার ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,”শোনো নদী, আমার মা আমার মা ই। পৃথিবীতে সবাইকে ছাড়লেও আমি আমার মা
কে ছাড়তে পারবোনা। ইদানিং তুমি ও আমার মা
একদম জাঁদরেল প্রতিপক্ষ হয়ে গেছো। প্রতিদিন
তোমাদের একটা না একটা নিয়ে ঝগড়া করা আছেই। উনি তো বয়স্ক মানুষ, কতো উল্টোপাল্টা কথা বলবেন, কিন্তু তুমি তো একটু বুঝেশুনে চলতে পারো”।

আমি এবার বলি,”সবসময় এক চোখামি করতে তোমার খারাপ লাগে না শাহীন? আজকে আমার কি দোষ ছিলো বলো তো? তুমি তো সামনেই ছিলে। তবে, তোমারো যদি ইচ্ছে থাকে, আগের মতো ঘরের সব কাজ আমাকে দিয়ে করাবে……..
তাহলে ভুল করছো। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আমি আর এসব পারবো না। পৃথিবীতে সবাই কে ছাড়লেও, মাকে ছাড়তে পারবে না বলে
আমাকে থ্রেট দিও না। এসব বলে আমাকে লাভ হবে না। দেখি হাত সরাও, আমাকে এখন ঘুমাতে দাও”।

শাহীন কে চুপ করে থাকতে দেখে বললাম,”আজ
রাহি মায়ের এতো কড়া কড়া কথা শুনেছে,কারণ
ও আমার পক্ষ নিয়ে কথা বলেছিল। খাবারের জন্য প্রতিদিন এ বাড়িতে কতো টাকা খরচ হয়। বুয়া কে হঠাৎ হঠাৎ ১০০/২০০ টাকা দিয়ে এক্সট্রা
কাজ করানো…. সেই তুলনায় কিছুই না। সমস্যা টাকা নিয়ে না, সমস্যা হলো আমার আরাম হবে, আমাকে কষ্ট দেয়া যাবে না। শোনো শাহীন,একটূ
ব্রেন খাটিয়ে ভেবে দেখো, আমি যদি খারাপ হতাম তবে,১৮ বছর ধরে এভাবে মানিয়ে থাকতে
পারতাম না। তোমার মায়ের যত্নআত্তি করতাম না। ১৮ বছরে কত দিন,কত ঘন্টা…….. তুমি তা ক্যালকুলেটার দিয়ে বের করে দেখো। সারাক্ষণ শুধু শুধু প্রতিপক্ষ হয়ে থাকা একজন মানুষ কে নিয়ে বাস করা যে কতোটা কঠিন….. তা শুধু আল্লাহ ও ভুক্তভোগী ই জানে। ছেলে বৌ যখন এতো ই দুশমন, তবে তো ছেলে কে বিয়ে না করিয়ে, কোলে কোলে রাখাই উচিত ছিল”।

মাথা ফেটে যাচ্ছে মনে হলো, উঠে পেইনকিলার একটা ও ঘুমের ঔষধ একটা খেয়ে শুবো, তখন শাহীন বলে শুনি,”মাথা ব্যথা হলেই মুড়ি মুড়কির মতো পেইনকিলার খাওয়া মোটেই উচিত নয়”। আমি হেসে বলি,”আর হাসাইও না তো শাহীন,যে
তুমি আমাকে থ্রেট দাও, পৃথিবীতে সবাই কে ছাড়লেও মাকে ছাড়তে পারবে না, সবাই মানে কে?, “”আমি নদী” ই তো। সে আবার আমার শরীর নিয়ে এতো চিন্তিত, ভাবতেই হাস্যকর লাগে।

১৮ বছরের মধ্যে একদিন বলেছো,”তুমি যে
আমার মায়ের সাথে বেয়াদবি না করে আছো, আমি খুশি হয়েছি”। বলেছো? তুমি ই আমাকে সম্মান দাও না, তোমার মা কেন দিবেন? তুমি ঠিক থাকলে, সব ঠিক থাকতো। তোমার আসলে আমার মতো গৃহী টাইপের না,লারা আপু টাইপের
মেয়ের দরকার ছিল। তুমি তাহলে লাস্যময়ী মেয়ে চাটতে আর এদিকে তোমার মাকে উনি একদম সোজা করে ফেলতেন। আমার ই ভাগ্য খারাপ,নইলে এমন হয়? শাহীন এবার রেগে গেছে,”কি বললে? লারা আপু এখানে আসলো কোথা থেকে? সবকিছু তে
উনার নাম টানো কেন”? আমি কিছু না বলে, শুয়ে পড়ি আর মনে মনে বলি,”হারামী পুরুষ মানুষ”।

সকালে নিত্যদিনের রুটিন, রাফি রাহি ও শাহীন ঘুমে। বন্যাকে স্কুলে দিয়ে আসতে না আসতেই,
বৃষ্টি শুরু হলো। পড়ছে তো পড়ছেই,আজ আর
কখন থামবে আল্লাহ মালুম। শাহীন মনে হয় এখনো উঠে নি,আর দেরি করলে আজ অফিসে পৌঁছুতেই দেরি হয়ে যাবে। ওকে ডেকে ঝটপট
পরোটা বানাতে হবে। যা ভাবছিলাম তাই, সাহেব গভীর ঘুমে। এতো্ক্ষণ ধরে নাড়া দিচ্ছি উঠে না,
এখন বিরক্ত হয়ে পাশে বসে জোরে ধাক্কা দিতেই, চোখ মেলে বলছে,”কয়টা বাজে”? বললাম,”যত
টা বাজুক, দয়া করে উঠে রেডি হও। কপাল করে
পৃথিবীতে এসেছিলে বটে”।

পরোটা বানানো শেষ, সেঁকে নিচ্ছি আর ওদিকে
লাঞ্চবক্স রেডি করছি। আজ কি কি রাঁধবো সেটা
ঠিক করছি। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাকে যদি কেউ,৪/৫ ঘন্টার কাজ করিয়ে বলতো,দুই বেলার খাবার নিশ্চিন্তে বসে খেয়ে যেও…. আমার জন্য খুব ভালো হতো। বুয়া টাও যে কখন আসবে, না
আদৌও এই বৃষ্টির মাঝে আসবে না…. কে জানে।

কলিং বেল বাজল। আমার শাশুড়ি ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই খুলে দিয়ে বৌকে সাহায্য করা যাবেনা। হাত ধুয়ে দরজা খুলতেই আমার ছোট ননদ,”কেমন আছো
ভাবী” বলে আদর দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। আমার শাশুড়ি বলছেন,”জামাই বাবাজি আসে নি”? মেয়ে মাকে বলছে,”জামাই জামাই করো কেন, আমাকে দেখে খুশি হওনি”? আমার শাশুড়ি এবার বললেন,”তুই একা একা এই বৃষ্টির মাঝে এসেছিস যে !!! স্বামী, সন্তান সব কই? এসব আবার কি? আমি কিন্তু এসব মোটেও পছন্দ করছি না”। আমার ননদ এমনিতেই রাগী ও ঠোঁটকাটা। এবার সে চিৎকার করে উঠলো,”মা তুমি দয়া করে একটু চুপ করে থাকলে ভালো হয়।
ভাবী যে তোমাকে ২৪ ঘন্টা কিভাবে সহ্য করে,তা
ই ভাবছি।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here