তবু মনে রেখো
১১দশ পর্ব
– আমার বকুলকে ইচ্ছে করে কেন মেরে ফেলেছো তুমি।
কথাটা শুনেই শিমুল যেন আকাশ থেকে পড়লো, এসব কি বলছে ইফতি। না জানি কি চলছে তার মনে, ইফতির কঠোর চেহারা শিমুলকে বিষ্ময়ের সর্বোচ্চ শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। ইফতির কথার আগা মাথা কিছুই বুঝছে না শিমুল, শুধু অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
– কি হলো কথা কানে যায় নি?
– কি বলছেন? বকুলকে ইচ্ছে করে.. একটু খোলসা করে বলবেন কি?
– আচ্ছা, তবে খোলসা করেই বলি। তুমি জানতে বকুলের শরীর এতো কম সময়ে এতো ক্যামোর ধকল নিতে পারবে না। জানতে না? তাও জোর করে তুমি তাকে ক্যামো দিয়েছিলে। তুমি তো জানতে বকুলকে ক্যামো দিলেও লাভ হবে না, তাহলে কেনো তাকে এতোগুলো ক্যামো এই কম সময়ে দিয়েছিলে!! না হয় আমার বকুল আরো একটু বেশি বাঁচতো। কেনো করেছিলে? আমরা দুজন তো তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম।
– আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলছি।
– কি বুঝাবে তুমি?? হ্যা? কি বুঝাবে? এই, এই রিপোর্ট ( কিছু বকুলের রিপোর্ট দেখিয়ে), এগুলো কি ভুল? বেশ তুমি বলো, তুমি কি জানতে না যে বকুলের পজিশন কি নাকি এই ক্যামো দিবার ডিসিশন তোমার ছিলো না, কোনটা?
ইফতির চিৎকারে শিমুল কেঁপে উঠছে, ইফতিকে শান্ত না করলে কখনোই তাকে বুঝানো সম্ভব নয় যে সেই সময় সে সিদ্ধান্ত গুলো কেনো নিয়েছিলো।
– ইফতি আপনি একটু শান্ত হন। আমি আপনাকে বলছি, সব খুলে বলছি।
– কি বলবি তুই? হ্যা কি বলবি?
– আপনি তুই তুকারি কেনো করছেন? আপনি একটু বুঝার চেষ্টা করেন!
– কি বুঝাবি তুই? হ্যা তুই তুকারি করছি; তোর মতো স্বার্থপর মহিলাকে এর থেকে ভালো সম্বোধন করতে আমি পারবো না। আরে বোন ছিলো তোর। সব জানা স্বত্তেও কিভাবে ওকে মৃত্যুত পথে ঠেলে দিলি? অন্ততঃ আমার মেয়েটার কথা ভাবতি? এখন বুঝছি তুই এগুলো কেনো করেছিলি!! আসলে কি বলতো, তুই তো কোনোদিন মা হতে পারবি না তাই বকুলকে সরিয়ে নিজের জায়গা করে নিতে চেয়েছিলি, তাই তো বলি দুই মাস হয় নি বোন মারা গেছে এতো তাড়াতাড়ি আমাকে বিয়ে করতে রাজি কেনো হয়েছিস।
– ইফতিইই
– চুপ চিল্লাবি না, তোর মতো স্বার্থপর, ছলনাময়ীর চিৎকার শোভা পায় না। আমি বলদ তোকে বকুলের জায়গা দিতে চেয়েছিলাম।
ইফতির কথাগুলো শিমুলকে জীবিত থাকাকালীন মেরে ফেলতে সক্ষম। শিমুলের মনে হচ্ছিলো কেউ ভোতা চাকু দিয়ে তার কলিজায় বারবার আঘাত করছে। এই রক্তক্ষরণ যে কাউকে দেখানো সম্ভব নয়। খুব শান্ত হয়ে বললো,
– যা বলছেন, ভেবে বলছেন?
– কাপড় চোপড় গুছানোই আছে, আমি চাই না আমার মেয়ের উপর এমন কালনাগিনীর ছায়াও থাকে।
বলেই শিমুলের ডান হাতের বাহু ধরে হিরহির করে টানতে টানতে রুমের বাইরে নিয়ে গেলো। ব্যাগ আর শিমুলকে খানিকটা ছুড়ে মেরে দরজা ধরাম করে বন্ধ করে দিলো সে। আজ সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে তার৷ সব কিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে মন চাচ্ছে। আর শিমুল তার চোখ থেকে অবিরাম পানি পড়ছে। এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না। ইফতি তাকে একবার নিজের কথা রাখার সুযোগটাও দিলো না। মনে মনে বললো,
– বেশ তবে তাই হোক। তবে এই ঘরের প্রতি দেয়াল সাক্ষী, আজ আমি নিঃস্ব, আমার অন্তআত্না আজ মৃত। হ্যা ভুল তো করেছি, আমার সবটুকু দিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছি। হ্যা, নিঃস্ব হয়ে চলে যাচ্ছি। তবু মনে রেখো এই আমি, কোনোদিন তোমার কাছে ফিরে আসবে না; চাইবে না অধিকার আর না করবে নিজেকে প্রমাণ।
চোখ দুইটো মুছে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো শিমুল। আফসানা বেগম অনেকবার আটকাতে চাইছিলেন কিন্তু শিমুল আজ থামবে না। নিজের আত্নসম্মানের থেকে বড় কিছুই না।
– শিমুল, ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে, রাগ পড়লে দেখবে ঠিক শুনবে কথা।
– না মা, যে বুঝবে না তাকে বুঝিয়ে লাভ নেই। ভালো থাকবেন মা আর পুচকুকে দেখে রাখবেন।
অথৈ শাড়ির আচল টেনে ধরতেই শিমুলের বুকটা যেনো ফেটে যাচ্ছিলো। তবুও সে থামবে না, আজ তার গায়ে যে কলঙ্ক লাগিয়েছে ইফতি সেই কলঙ্ক তার অন্তআত্নাকে মেরে ফেলতে যথেষ্ট। অথৈকে খুব আদর করে ওই মূহুর্তে বাসি ছাড়লো শিমুল। তার চোখ বারবার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এতো বিষকথা কিভাবে বললো ইফতি। এখন তার শেষ আশ্রয় বাবার বাসা, বাবাও কি তাকে বের করে দিবে!
রাত ৯টা, হারুণ সাহেব খুব দ্রুত রাতের খাবার খান। খাওয়া শেষে গা বিছানায় এলিয়ে দিতেই কলিংবেলের আওয়াজ,লোকমান ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা তাই তিনি নিজে উঠলেন দরজা খুলতে। দরজা খুলেই যেনো মাথায় বাজ পড়লো,
– মা, এতো রাতে তুই?
– বাবা, আমার সব শেষ; আমি নিঃস্ব বাবা।
– তোকে এমন লাগছে কেনো? কি হয়েছে? আয় আগে ভেতরে আয়।
সোফায় বসিয়ে পানি নিয়ে এলেন তিনি। মেয়ের অবস্থা দেখে নিজেকে সামলে রাখতে পারছেন না। চুল উসখো খুসখো, চোখ মুখে ফুলে গেছে। খুব ক্লান্ত লাগছে তার মেয়েকে।
– কি হয়েছে মা, একটু বল।
– বাবা, খুব ঘুম পেয়েছে। কিন্তু ঘুমাতে চাই, কাল বলি?
– আচ্ছা মা। যা তোর রুমে যা।
মেয়ের মুখের অবস্থা দেখেই বুঝলেন, গুরুতর কিছু হয়েছে। নয়তো তার এতো স্ট্রং মেয়ে এভাবে ভেঙ্গে পড়তো না। রুমে যেয়েই মেঝেতে বসে পড়ে শিমুল, খুব জোরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আজ সে কাঁদবে, তার মনে কষ্ট পানি রুপে ঝড়িয়ে দিবে। অপরদিকে ইফতি কাঁদছে, বকুলের জন্য নয়। সে কাঁদছে কেনো সে শিমুলকে ভালোবাসতে গেলো, সে তো ভেবেছিলো শিমুল এমন নারী যার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে সুখের মুখ দেখবে; তবে কেনো শিমুল এমনটা করলো?
এক মাস পর,
আজ নিহাল এসেছে, এই এক মাস শিমুল নিজেকে তার রুমেই বন্ধ রেখেছে। তাই আজ সে শিমুলকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। এতে করে যদি স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আনতে পারে তাকে। হারুণ সাহেবের ছেলেটাকে খুব মনে ধরেছে, কিন্তু ইফতির সাথে ডিভোর্স হয় মি শিমুলের। ছয়মাসের আগে ডিভোর্স হওয়া পসিবল না। আর শিমুল তেমন মেয়েও নয় যে নতুন করে বিয়েতে রাজি হবে। নিহাল রুমে প্রবেশ করলো, শিমুলের মুখের জেল্লাটা ফিকে হয়ে গেছে। চোখের নিচের কালি রাত জাগার সাক্ষী দিচ্ছে। বেশ শুকিয়ে গেছে মেয়েটা। যে নারীকে দেখলে নিহালের মন শান্ত হতো, আজ তাকে দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
– কি হলো, রেডি হস নি যে
– আমি যাবো না, ভালো লাগছে না।
– শোনো শিমুল, আজ যদি তুমি আমার সাথে না যাও আমার সাথে তোমার বন্ধুত্ব শেষ। এবার তোমার যা ভালো মনে হয় করো।
– বেশ অপেক্ষা করো, আমি রেডি হয়ে আসতেছি।
নিহালকে মানা করার সাহস শিমুলের নেই। ও যেভাবে বলেছে ও বন্ধুত্ব ভেঙ্গে দিবে শিমুলের মিনে হচ্ছে না সে মজা করছে। নিহাল শিমুলকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে। এটা তাদের পছন্দের রেস্টুরেন্ট, এখানের কাবাব শিমুলের খুব পছন্দ। রেস্টুরেন্টটা রুফটপে, তাই খাওয়া দাওয়ার পর এক কোণায় শিমুল দাঁড়িয়ে ছিলো। আজ এখানে ভিড় কম, কেউ নেই বললেই চলে। হঠাৎ পেছনে একটা রোমান্টিক সং প্লে হতে আরম্ভ করলে শিমুল ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়। পেছনে ফিরে যেন অবাক হবার সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায় যে, নিহাল এক হাটু ভাজ করে রিং হাতে বসে আছে। শিমুলের চেহারায় কৌতুহল স্পষ্ট, তাই নিহাল বলে উঠে,
– বলেছিলাম, যেদিন ইফতি তোকে ছেড়ে দিবে সেদিন আমাকে তোর মেনে নিতে হবে। কোনো ছাড় পাবি না। এবার ডিসিশন তোর নেওয়ার পালা।
শিমুলের মুখে কোনো কথা নেই। ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে আছে নিহালের দিকে। অন্যদিকে এই দৃশ্যটি যেন একজনের হৃদয় চুরমার করে দিচ্ছে। এক মূহুর্ত দেরি না করে বাসার দিকে রওনা দিলো ইফতি। রেস্টুরেন্টে একটা মিটিং এ এসেছিলো। মিটিং শেষে খুবই অস্বস্তি লাগছিলো ইফতির, তাই ছাদে খোলা আকাশে মন খুলে নিঃশ্বাস নিতে গিয়েছিলো সে। তখন তার সামনে এই দৃশ্যটি ঘটে যায়। শিমুলের উত্তরের অপেক্ষা করতে পারছিলো না ইফতি, তাই বাসায় চলে আসে সে। বাসায় এসে সবার সাথে রাগারাগি করতে থাকে ইফতি। তারপর নিজেকে তার রুমে আটকে ফেলে। এই এক মাস ইফতি যেনো কারো সাথে সোজা মুখে কথা বলতে চায় না। সারাক্ষন রাগারাগি করতে থাকে, মেয়েটা ভয়ে তার কাছে যায় না। অথৈকে সামলাতে খিল হারিয়ে ফেলছেন আফসানা বেগম। না খেতে চায়, না কোনো কথা শুনে শুধু “মাউনি নাই কেন?”, “মাউনি আছবে না” বলতে থাকে। ইফতির খিটখিটে মেজাজের জন্য ইফতির ধারে কাছে আছে না অথৈ। দরজা বন্ধ করে ইচ্ছে মতো চিৎকার করতে লাগলো ইফতি। সব লন্ড ফন্ড করে ফেলেছে ঘরের। আফসানা বেগম দরজায় কড়া নাড়লেও কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। তারপর আশাহত হয়ে নিজের রুমে চলে যান তিনি।
সন্ধ্যা ৭টা, ইফতি নিজ ঘরে অন্ধকারের মধ্যে বসে আছে। মেঝে থেকে উঠে লাইট লাগাতে যাবে তখন কিছু একটা পায়ের নিচে বাধলো। বই এর মতো জিনিসটা হাতে নিয়ে লাইট অন করলো। বইটা আর কিছুই না বকুলের ডাইরি, এটা বকুলের শেষ ডাইরি ছিলো। মৃত্যুর আগ মূহুর্তে ও কিছু না কিছু লিখেছে সে। ইফতি জিজ্ঞেস করলে শুধু বলতো,
– এটা আমার গুপ্তধন। মনের সব নকশা এতে লেখা। যদি কোনোদিন না থাকি তখন পরিও।
এর আগে কোনোদিন ডাইরিটা পড়ার সাহস হয় নি ইফতির। আজ কেনো জানে খুব পড়তে ইচ্ছে করছে। ডাইরিটার পাতা উল্টাতে লাগলো সে।
২৩-০২-১৮
আজ আমি খুব খুশি, আমার মনে হয় আবার মা হতে চলেছি আমি। ইফতির মুখে আবার সেই হাসিটা দেখতে পাবো। আমার কন্ডিশন শুনে মা বলছিলেন এবার বোধ হয় আবার আমাদের ঘরে একটা ফেরেস্তা আসছে।
২৮-০২-১৮
ইফতিকে আগে কোনোদিন এতোটা কষ্ট পেতে দেখি নি। ওর চোখে মুখে কষ্ট স্পষ্ট কিন্তু ও কাঁদছে না। আমার জরায়ুতে টিউমার ধরা পড়েছে। ক্রিটিকাল অবস্থা, অপারেট করলেও সিক্সটি ফোরটি চান্স। ইফতি আর বুবু আমাকে বাঁচানোর কোনো উপায় বাদ রাখবে না। কিন্তু কেনো জানি না মনে হচ্ছে আমার সময় খুব কম
১৫-০৩-১৮
আজ আমার অপারেশন হবে, এই কয়দিনে শরীরটা খুব দূর্বল হয়ে গেছে। বুবুকে ওর সিনিয়র ডা. ইশরাত আমার শরীরের পজিশন জানিয়ে দিয়েছে। উনি অপারেট করতেন কিন্তু উনাকে দেশের বাইরে যেতে হবে। বুবু খুব কাঁদছিলো। আমি বোধ হয় আমার পাপের শাস্তি পাচ্ছি। আচ্ছা যাকে ভালোবাসি তাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পাওয়া কি খুব দোষের। হ্যা, আমি দোষী। আমি বুবুর দোষী। বুবু জেনে শুনেও আমায় ক্ষমা করে দিয়েছে। বুবুকে যেদিন বলেছিলাম আমি ইফতিকে ভালোবাসি, ওকে বিয়ে করতে চাই। বুবু তখন একটা প্রশ্নই করেছিলো, বুবুর সাথে ইফতির যখন বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তখন আমি ওকে চিনতাম কি না। আমি মিথ্যে বলেছিলাম। বুবু যে আমার মিথ্যে ধরে ফেলেছে আমি জানতাম। তাও চুপ করে ছিলাম। সেদিন ওদের বিয়েটা আমি ভেঙ্গে দিয়েছিলাম, বুবু কোনোদিন মা হতে পারবে না আমি সেটা জানিয়েছি বাবা-মাকে। যদি এই কাজটা না করে বুবুকে সরাসরি বলে দিতাম বুবু তোমার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে আমি ভালোবাসি, সে ও এই বিয়েতে রাজি নয়। বুবু হাসতে হাসতে বিয়ে ভেঙ্গে দিতো। আচ্ছা ইফতি যদি এই কথা গুলো জানে ও কি আমাকে ঘৃণা করবে?
২৫-০৩-১৮
আমার অপারেশন সাক্সেসফুল হলেও সেটা ক্যান্সারের রুপ নিয়েছে। ইফতি ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পড়েছে। ওর দিন দুনিয়ার যে কিছুই খেয়াল নেই তা খুব ভালো করে জানা আছে। আমি বাঁচতে চাই, আমি বাঁচতে চাই।
৬-০৪-১৮
আজ প্রথম ক্যামো দেয়া হয়েছে আমাকে। বুবু বলছিলো আমার শরীর দূর্বল। আমি ও জানি, খুব কষ্ট হচ্ছে আমার, আমার চুল পড়ে যাচ্ছে, নিজের কুৎসিত চেহারা বেরিয়েছে। বুবু বলছিলো আমি যাতে আর ক্যামো না নেই। ধীরে ধীরে চিকিৎসা করলে আমি সুস্থ হয়ে যাবো। কিন্তু আমি জানি আমার কাছে সময় খুব কম। আমি বাঁচতে চাই।
১৭-০৪-১৮
আজ তৃতীয় বার ক্যামো নিচ্ছি আমি। বুবুর সাথে আমার কথা কাটাকাটি লেগেই আছে। ও আমার ডিসিশনে হ্যাপি না। ডাক্তারকে সে বলে দিয়েছে আমাকে আর এই মাসে ক্যামো দিতে দিবে না। শরীরটা বড্ড দূর্বল হয়ে গেছে। আর ক্যামোর ধকল হয়তো আমি নিতে পারবো না। ওর সিনিয়র ও জানিয়ে দিয়েছে যাতে আর ক্যামো না দেওয়া হয় আমাকে। কিন্তু আমি বাঁচতে চাই। আমি জানি বুবু আমার খারাপ চায় না। কিন্তু তবু কেনো ও বাঁচাতে চাচ্ছে না।
২৮-০৪-১৮
বুবুর সাথে কথা বলছি না। ওকে কসম দিয়েছি, আমার কোনো কথাই ও শুনতে চাইছে না। ও ক্যামো দিতে মানা করছে আমায়। আজ চতুর্থ বার ক্যামো নিচ্ছি আমি। ওকে বলেছি আমার যে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে হবে ও কেনো বুঝছে না। ও আমার জিদের কাছে হার মেনেছে। ইফতিকে কিছু বলতে পারছে না, কারণ ইফতি আমায় সুস্থ দেখতে চায়। ইফতি আমার হ্যা তে হ্যা বলছে। শরীরটা বোধহয় ভালোর দিকে যাচ্ছে। যদিও আমার চুলগুলি পড়ে গেছে, লোম নেই শরীরে। হাড়ের সাথে চামড়া লেগে গেছে কিন্তু আমার ক্যান্সারের জীবানু শেষের পর্যায়ে। আমি বাঁচবো ইনশাআল্লাহ।
৯-০৫-১৮
শরীরটা ভালো নেই, ডাক এসে গেছে। বুবু খুব কাঁদছিলো। আমার শরীরে ক্যান্সারের জীবানুটা আর নেই,তবে শরীরটা ছেড়ে দিয়েছে। নড়তে চড়তে পারছি না। খুব দূর্বল হয়ে গেছি। একটা জীবন্ত কংকাল লাগছে। বুবু নিজের ঘাড়ে দোষ নিচ্ছে। কিন্তু আমি তো জানি, ক্যামো নেওয়ার ডিসিশন আমার। আমার জন্য বুবু ডা.ইশরাতের সাথেও জিদ করছে। আচ্ছা আমার ডিসিশনটা ভুল ছিলো। আমি কি আমার পাপের শাস্তি পাচ্ছি। আল্লাহ যদি আমাকে নিয়েও যাও না ইফতিকে কষ্ট দিও না। লোকটার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। ও আমাকে ছাড়া অচল। আমার জীবনে তিন জন মানুষ খুব কাছের, বুবু,ইফতি আর অথৈ। এই তিনটা মানুষকে দেখে রেখো।
এটা ডাইরির শেষ পাতা ছিলো। ইফতি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। চোখ থেকে পানি থামছে না। এতো বড় ভুল কিভাবে করলো সে। বকুলকে চার মাস আগেই হারিয়েছে। এখন শিমুলকেও হারাতে বসেছে নিজের দোষে। তাকে এখনি যেতে হবে, যেতে হবে শিমুলের কাছে
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি