#শাপলার_মৃত্যু (১০) [১৮+ সতর্কতা ]
#থ্রিলার
(বর্তমান সময়)
বেলা ১০ টা বাজে। নিরূপমা বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল। আজকের দিনটা সে ছুটি কাটাবে। শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।
ইন্দ্রজিৎ এর হাতের স্পর্শে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে নিরূপমার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
এই যে আমার গোয়েন্দা বউ। না খেয়ে পড়ে পড়ে শুধু ঘুমালে চলবে?

নিরূপমা ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
আমার খেতে ইচ্ছে করছে না, ইন্দ্র। আরেকটু ঘুমাবো।

ইন্দ্রজিৎ দুদিকে মাথা নেড়ে বলল,
ঘুমাবে। অবশ্যই ঘুমাবে। কিন্তু না খেয়ে নয়। উঠো, উঠো। ব্রেকফাস্ট করে নাও জলদি।

ইন্দ্রজিৎ নিরূপমাকে টেনে শোয়া থেকে উঠে বসালো। ব্রেকফাস্টের আইটেমগুলো হল কফি, দু পিস ব্রেড, ডিম অমলেট সাথে ফল।
নিরূপমা খেতে খেতে বলল,
চেম্বারে যাচ্ছো?

হুঁ।

তোমার রানিং কেসটা নিয়ে কথা বলা হল না এখনো। ফ্যাক্ট কি?

ফ্যাক্ট টা খুব ইন্টারেস্টিং। স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া চলছিল। এক পর্যায়ে স্বামী তার রাগ ধরে না রাখতে পেরে হাতের কাছে থাকা কাচের গ্লাস দিয়ে স্ত্রীর মাথায় আঘাত করে। এন্ড গেস হোয়াট!

স্ত্রী সাথে সাথে মারা গিয়েছে।

রাইট।

তার মানে মার্ডার কেস?

নট রিয়েলি। আমার মন বলছে কাল্পাবল হোমিসাইড। মার্ডার নয়।

কাল্পাবল হোমিসাইড কি?

দেখো, একটি মার্ডার বা খুন করার ক্ষেত্রে ইন্টেনশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিটি পদক্ষেপ তোমার পূর্বপরিকল্পিত হতে হবে। মানুষটিকে মারার ইচ্ছে থাকতে হবে। সেই ইচ্ছের সহিত মানুষটিকে গুরুতরভাবে আঘাত করতে হবে। এরপর মারা গেলে সেটাকে আমরা মার্ডার বলি।
কিন্তু কাল্পাবল হোমিসাইডে কাউকে মেরে ফেলার বিষয়টি একদমই ইন্টেনশনাল হয় না। গ্রেইভ এন্ড সাডেন প্রোভকেশন থাকে। অর্থাৎ ভিক্টিম অবশ্যই যে কোনো ভাবে অফেন্ডারকে প্রোভোক করবে। এবং অফেন্ডার এমন কোনো একশন গ্রহণ করবে যার ফলে ভিক্টিম মারা যাবে।

নিরূপমা বলল,
আসলেই ইন্টারেস্টিং!

তোমার কেসটা নিয়ে অনেক ঝামেলার মাঝে আছো মনে হচ্ছে।

নিরূপমা চিন্তিত স্বরে বলল,
আমি পাজেলড ইন্দ্র। দুটো খুন হল। প্রথম খুনের ইনভেস্টিগেশন চলাকালীন দ্বিতীয় খুন হল। ধর্ষণের আলামতও পাওয়া গেল যেটা শাপলার ক্ষেত্রে ছিল না।

ইন্দ্রজিৎ ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
অদ্ভুত বিষয় কি জানো?

কি?

শাপলার পোস্টমর্টেম এ ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। সিরিয়াল কিলিং এর ক্ষেত্রে সাধারণত ক্রিমিনাল এর কর্মকাণ্ডের মাঝে স্বতন্ত্র কিছু থাকে না। প্রথম খুন যেভাবে করে, পরের খুনও একই ভাবে করে থাকে বা করার চেষ্টা করে। খুন করে ধর্ষণ করার বিষয়টিতে খুনির মোটিভেই বিশাল পার্থক্য।

নিরূপমা জিজ্ঞেস করল,

তুমি ঠিক কি বলতে চাইছ ইন্দ্র?

আমি বলতে চাইছি, এখানে একাধিক মানুষের আধিপত্য আছে কিনা বিষয়টি যাচাই করে দেখ। হয়তো খুনি একজনই কিন্তু ধর্ষক অন্য কেউ।

তার মানে তুমি বলতে চাইছো গ্রামের কেউ নেক্রোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত?

শিওর হয়ে বলতে পারছি না। তবে অস্বাভাবিক কিছু নয়। দেখো নিরূ, নেক্রোফিলিয়ার মাঝেও তো ধরণ আছে। যদি নেকরোফিলিয়া হোমিসাইড এ আক্রান্ত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অফেন্ডার ভিক্টিমের মৃত দেহের সাথে সেক্সুয়াল এক্টিভিটিতে জড়ানোর জন্য খুন করবে। আবার রেগুলার নেকরোফিলিয়ায় আক্রান্তরা শুধুমাত্র মৃতদেহকে নিজের শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যবহার করে থাকে। যদি অফেন্ডার নেকরোফিলিয়া হোমিসাইডে আক্রান্ত হত সেক্ষেত্রে…

ইন্দ্রজিৎ এর কথা শেষ হবার আগেই মুখের কথা ছিনিয়ে নিরূপমা বলল,
শাপলাকেও খুন করার পর ধর্ষণ করত।

এক্স্যাক্টলি।

ইন্দ্র, এই কেসটা কতটা ডার্ক ভেবে দেখেছো? একদম অন্ধকারে আচ্ছন্ন।

আঁধারের ফাঁকে আলোর দেখা মিলে। তাই হাল ছেড়ো না।

নিরূপমা হেসে মাথা নাড়ল।

ইন্দ্রজিৎ বলল,
আচ্ছা আমি চেম্বারে যাবো। তুমি টেনশন করো না। দরজা লাগিয়ে দিয়ে যাও। এরপর খাওয়া শেষ করে আরেকটু ঘুমাও।

সদর দরজা খুলে ইন্দ্রজিৎ থমকে দাঁড়াল। দরজার সামনে ছোট্ট একটি বাদামি প্যাকেট পড়ে আছে। উপরে লিখা ‘মিসেস নিরূপমা’। হাতের লেখা অপরিপক্ক। নিরূপমা মাত্রই ইন্দ্রজিৎ এর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। বাদামী প্যাকেটটি তার দৃষ্টিগোচর হতেই সেটি হাতে নিল সে। কৌতূহল মেটাতে প্যাকেটটি ছিঁড়ে ফেলল নিরূপমা। সাথে সাথে একটি কালো রঙের আন্ডারগার্মেন্টস সেট এবং চিরকুট বেরিয়ে এল।
চিরকুটে লিখা, ‘গ্রামে গোয়েন্দার কামে আসলে শুধু এই ব্রা প্যান্টি পইরা আইসেন। খাসা মাল লাগবো একদম’।

ঘেন্নায় নিরূপমা হাত থেকে আন্ডারগার্মেন্টস ফেলে দিল। ইন্দ্রজিৎকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে লাগল। স্ত্রীর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ইন্দ্রজিৎ এর মন খারাপ হয়ে গেল। দাঁতের ফাঁক দিয়ে অস্পষ্ট ভাষায় গালি দিল।
ব্লাডি পার্ভাট!
একটাকেও ছেড়ো না নিরূ। একটাকেও ছাড় দিও না।

নিরূপমা স্টাডি রুমে ঢুকল। পুরো হোয়াইট বোর্ড মুছে। নতুন করে সাসপেক্টদের নাম লিখা শুরু করল। নিরূপমা অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, সে বার বার একটি ক্লু এড়িয়ে গেছে। সে দ্রুত জাফরকে ফোন করল। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ইনফরমেশন কালেক্ট করতে হবে।

গভীর রাত। ঘড়ির তিনটে কাটার অবস্থান জানা নেই। তবে আকাশের শুকতারা বলে দিচ্ছে আঁধার কেটে যাবে শিঘ্রই।
সাদা শাড়ি পরা অবয়বটি সবজি বিক্রেতা সামাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে দাঁড়িয়েই অবয়বটি তার তৃতীয় খুনের পরিকল্পনা করছে।
সামাদের দশ বছরের একটি মেয়ে আছে। সাদা শাড়ি পরা অবয়বটির পরবর্তী ভিক্টিম সামাদের দশ বছরের মেয়ে পারুল।

(চলবে…)

লেখনীতে, #আতিয়া_আদিবা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here