#শাপলার_মৃত্যু (১৮+) – পর্ব ৬

মোমেনের বাড়িতে আরো বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ চলল। নিরূপমা যখন উঠে দাঁড়াল তখন জাফর ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,

ম্যাডাম, এখন আপনি অবশ্যই হোসেন সাহেবের বাড়ি যাবেন?

নিরূপমা হেসে উত্তর দিল,
না। মকবুলের বাড়িতে।

বিষয়টা জাফরের ভালো না লাগলেও সে মুখে কিছু বলল না। ইনভেস্টিগেশন শুরু করা উচিত ভিক্টিমের বাড়ি থেকে। সেখানে নিরূপমা ভিক্টিমের বাড়ি বাদ দিয়ে দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছে! কি অদ্ভুত কাজ কারবার।

মকবুলের বাড়িতে তাকে পাওয়া গেলো না। সে এখনো বাজারে। জাফর জিজ্ঞেস করল,
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবেন ম্যাডাম?

না জাফর। অপেক্ষা করে কাজ নেই। চল আমরা বাজারের দিকে এগোই।

জাফর নিরূপমাকে নিয়ে বাজারে গেলো মকবুলের খোঁজে। দুপুর গড়িয়েছে। বাজার কোলাহলমুক্ত। মকবুলের দোকানের কাঠের দরজা সামান্য খোলা। জাফর নিঃশব্দে দোকানের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিল। মকবুলের দেখা মিলল অল্পবয়সী একজন মেয়ের সাথে। কাপড়ের বেঠিক অবস্থা। নিরূপমা এবং জাফর দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে গেল। মকবুলের বুকেও দিরিম দিরিম শব্দ হচ্ছে। অল্পবয়সী মেয়েটাকে খুব একটা বিচলিত হতে দেখা গেলো না। সে শান্ত ভঙ্গিতে তার গায়ের কাপড় ঠিক করে দোকান থেকে বেরিয়ে গেল। মনে হয় এরকম পরিস্থিতির মোকাবেলা মেয়েটাকে নতুন করতে হয়নি। মকবুল লুঙ্গি ঠিক করতে করতে বলল,

কে আপনি? কারে চান? এতবড় সাহস! না বইলা দরজা খুইলা ঢুইকা গ্যাছেন।

জাফর মকবুলের নোংরা গেঞ্জি গলার কাছ থেকে ধরে টান দিল। ধমকের সুরে বলল,
মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করা হচ্ছে?
এটুকু বলেই সে ক্ষান্ত হল না। মকবুলের গালে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে চড় বসিয়ে দিল। একই সাথে নিজের পরিচয়ও দিল।
মকবুল গালে হাত দিয়ে বসে পড়ল।

নিরূপমা বলল,
বাড়িতে বউ নেই?

মকবুল নাকি সুরে বলল,
আছে ম্যাডাম।

বউ বাদ দিয়ে অন্য মেয়েকে নিয়ে ফূর্তি করতে খুব ভালো লাগে তাই না?

মকবুল মাথা নিচু করে বসে রইল।

জাফর করল,
এরকম নোংরামি তুই শাপলার সাথেও করেছিস। অতটুকুন বাচ্চাটাকেও ছাড় দেস নি। তোদের মতো মানুষের বেঁচে থাকাটাই অন্যায়।

নিরূপমা জিজ্ঞেস করল,
সেদিন কি হয়েছিল?

কোনদিন ম্যাডাম?

জাফর পুনরায় ধমক দিয়ে বলল,
একদম নাটক করবি না। আমরা কিন্তু সব জানি! মিথ্যা কথা বলে বা কথা লুকিয়ে নিজের বিপদ আর বাড়াস না ভ্যাড়া!

মকবুল বলল,
স্যার বিশ্বাস করেন আমি কিছু করি নাই।

নিরূপমা হেসে জিজ্ঞেস করল,
করেন নি নাকি করতে পারেন নি?

ম্যাডাম আমি স্বীকার করি। আমার নিয়ত খারাপ ছিল। কিন্তু হেইদিনের পর থিকা আমি শাপলার দিকে খারাপ নজরে তাকাই নাই।

নিরূপমা বলল,
খারাপ নজরে তাকান নি ঠিক আছে। কিন্তু বাজারে এতগুলো মানুষের সামনে অপমানিত হতে দেখে ক্রোধের সৃষ্টি অবশ্যই হয়েছিল? আর সেই ক্রোধ থেকে মেয়েটাকেই মেরে ফেলেছেন।

মকবুল অবাক হয়ে বলল,
কি কইতাছেন এসব ম্যাডাম? শাপলারে ক্যান মারুম!

জাফর বলল,
কেন আবার? প্রতিশোধ নিতে। হোসেনকে তুই মেরে ফেলার হুমকি দেস নি? হোসেনকে মারিস নি কিন্তু ওর মেয়েকে মেরেছিস।

মকবুল করজোড় করে বলতে লাগল,
জীবনে ম্যালা পাপ করছি ম্যাডাম। কিন্তু খুন করার মত মহাপাপ কোনোদিন করি নাই! কোনোদিনও না।

নিরূপমা বলল,
পূর্ব দিকের নদীর ধারে সেদিন আপনি বাদে কেউ ছিল না। আপনিই প্রথম লাশের কাছে গিয়েছিলেন।

ম্যাডাম, আমি সত্যিই সদাই আনতে শহরে গেছিলাম। ফেরনের পথে শাপলারে মরা অবস্থায় পইড়া থাকবার দেখছি। এইডা কওয়া কি আমার দোষ হইয়া গেছে?

একথা বলে মকবুল ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। সে আরোও বলল,

হোসেনের কিন্তু ওর মাইয়ার প্রতি কোনো মায়া নাই, ম্যাডাম। গেরামের যারেই জিগাইবেন, হেই কবো। নেশা কইরা বউ পোলাপাইনরে মারত। একবার মাইয়ারে কোপ দিবারও গেছিল। হের বউরে জিগায়া দেইখেন। আপনারা আমারে সন্দেহ করতাছেন।

জাফর নিরূপমার দিকে তাঁকালো। দেখল, তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেনো মকবুলের অঙ্গভঙ্গি, কথা বলার ধরণ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে চলছে।

***

মনোয়ারা স্বামীকে নিয়ে খেতে বসেছে। মনোয়ারা আজ পোলাও- মাংস রান্না করেছে। তারা গল্প করছে। সাথে দুপুরের খাবারের পর্ব মিটিয়ে নিচ্ছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে না বাড়ির ওপর দিয়ে এতবড় ঝড় বয়ে গেছে। বাড়িতে মৃত্যুগন্ধের পরিবর্তে রান্নার গন্ধ ম ম করছে।
নিরূপমা উঠোনে ঢুকল। তার পিছে পিছে জাফরও ঢুকল। হোসেন এবং মনোয়ারা দুজনেই তাদের উঠোনে ঢুকতে দেখল। কিন্তু দুজনেই মুখে ভ্রুক্ষেপহীন ভাব ফুটিয়ে রইল। শুধুমাত্র মনোয়ারা তার স্বভাবসুলভ শাড়ির আঁচল ঠিক করল।

জাফর জিজ্ঞেস করল,
ভালো আছেন হোসেন সাহেব?

জি। ভালো।

এখনো তো চল্লিশ দিন হলো না মেয়ে মারা গেছে! বাড়িতে দেখি পোলাও মাংসের গন্ধ ম ম করছে।

হোসেন কোনো কথা বলল না। চুপ করে খেতে লাগল।

জাফর বলল,
খান খান! কবজি ডুবিয়ে খান হোসেন সাহেব।

মনোয়ারা খাবারের তার প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে গেল। হোসেন উঠান থেকে চিৎকার করে বলল,
উঠানে স্যার আর ম্যাডামের বসবার ব্যবস্থা কর।

মনোয়ারা উঠোনে দুটো চেয়ার এনে দিল। এরপর পুনরায় ফিরে গেল।

নিরূপমা একটা জিনিস লক্ষ করল। মনোয়ারা সব কাজ বা হাত দিয়ে করে। নিরূপমার মাও সব কাজ বা হাত দিয়ে করত।

চলবে…

গল্পঃ শাপলার মৃত্যু
ধরনঃ থ্রিলার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here