#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব৮+৯(রহস্য সমাধান 2)
মুখোমুখি চেয়ারে বসে আছে অয়ন আর শুভ্র। দুজনেই মুখেই কোনো কথা নেই কারন দুজনেই দুজনকে দেখে ইমোশনাল। যতই হোক আপন ফুফাতো আর মামাতো ভাই দুজন আবার বেষ্ট ফ্রেন্ড বলে কথা।শুভ্র বলা শুরু করল।
অয়ন তুই কি বলবি আমি জানি।আগে আমি বলি তারপর তুই বল।আমরা আপন ভাইয়ের চেয়েও বেশি ক্লোজ ছিলাম।আমাদের একবেলা দেখা না হলে,একবেলা কথা না বললে ভালো লাগতো না।সেখানে তুই আমার ওয়াইফকে কিডনাপ করলি!
শুভ্র তুই ভুলে যাচ্ছিস অতীত!অয়ন বলল।
শুভ্র গলা ঝেড়ে বলা শুরু করল। তোর বাবাকে বিয়ে করে একদম হ্যাপি ছিল না আমার একমাত্র ফুপ্পি।সেটাতো তুই,আমি সবাই জানি।কিন্তু ফুপ্পির কারনে আংকেল মানে তোর বাবাকে আমাদের কোম্পানিতে চাকরি দিয়েছিল।এতটুকু পর্যন্ত তুই জানিস।কিন্তু এরপরে কাহিনি আমার থেকে শোন তাহলে।প্রথমত ওনি ঠিকমত অফিসে আসত না।এমন ও হতো ওনি মাসে ৩০ দিনের মধ্যে ১০ দিন আসত।কিন্তু কেউ কিছু বলত না।কারন বললেই ওনি ফুপ্পির সাথে মিসবিহেভ করবে।আবার তোর বাবা অন্য একটি কোম্পানির সাথে ডিল করে যে তিনি আমাদের একটি ফাইল ওই কোম্পানিকে দিবে।ফাইলটি ওই কোম্পানিকে দিয়ে ও দেয়এবং ওনি ওই ফাইলটি অন্য কোম্পানিকে দিয়ে দেয়ার কারনে দেড় কোটি টাকা ক্ষতি হয় আমাদের কোম্পানিতে।ওই টাকা কি তোরা কেউ পরে আামাদের কে দিয়ে ক্ষতি পূরন করে দিয়েছিলি!দেস নি আর আমরা ওই টাকা চাই ও নাই।এখানেই কিন্তু শেষ না।তারপর ওনি আরেকটি ফাইল রেডি করে ওই কোম্পানিকে দেয়ার জন্য এবং আমি হাতেনাতেই প্রমানসহ ওনাকে ধরে ফেলি। তারপর ওনাকে অপমান করে আর সাথে সাথে চাকরি থেকেও বের করে দেয়া হয় ওনাকে।
চাকরি থেকে বের করে দিয়েছিস জানি।কিন্তু পুলিশ ওটা কে বলবে?অয়ন বলল।
শুভ্র বলল,ওনার আরেক কলিগের সাথে আ্যফেয়ার চলছিল ওওই মহিলার গর্ভে ওনার বেবিও ছিল।কিন্তু ওনি বিয়ে করতে রাজি হোননি তাই ওই মহিলা মামলা করে আর ওনি জেলে যায়।কিন্তু সবাইকে বলে আমরা নাকি মামলা দিয়েছি।আর এজন্য তুই কি করলি!
কি বলছিস তুই শুভ্! আমি তো এগুলো কিছুই জানি না।এগুলো সত্য!অয়ন বলল
হুম,আর তুই! নিরার সাথে মিথ্যে ভালোবাসার নাটক করলি আর এক পার্টিতে ইনভাইট করে আমার পিচ্চিকে জুসের সাথে ড্রিংকস মিশিয়ে নেশাগ্রস্থ করে সতিত্ব হরনের চেষ্টা করলি!কারন তুই প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলি।কি দোষ ছিল আমার পিচ্চির বল?তুই কি করে পারলি?যতই হোক তোর বোন ছিল ও।নিজের বোন হলে এরকম করতে পারতি?তুই এতোটা নিচে নামতে পারলি!আমি যদি সময়মতো না পৌছাতাম কি হতো বলতো?
অয়ন তো পুরো অবাক।হুয়াট!ড্যাড আমাদেরকে মিথ্যে বলেছে!
শুভ্র পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিল আর বলল,ওয়েট শেষ হয়নি তো!তুই নিরাপাখির সাথে প্রতারনা করার পর নিরাপাখি মেন্টালি অনেক দুর্বল হয়ে পরে।ডিপ্রেশনে চলে যায়।দুইবাব সুইসাইড ও করার চেষ্টা ও করে। তখন আমি ওকে এই ৫ বছরে সাধারন লাইফে নিয়ে আসি।নতুন করে জীবন দেই।আর তুই কি করলি,দেশের বাহিরে চলেগেলি।সবাইকে ভুলে গেলি!আমাদের বন্ধুত্বের কথা ভুলে গেলি।
নিরাপাখিরকে কিডনাপ করার জন্য জানিস চাইলে আমি তোকে মারতে পারতাম।তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষনে মাটিতে পুঁতে দিতাম।কারন কারন নিরাপাখির কষ্ট সহ্য করতে পারিনা।আর যে নিরাপাখিকে কষ্ট দিবে তাকে আমি শেষ করে দিব।জ্যান্ত মাটিতে পুতে দিব। কিন্তু তোর ক্ষেত্রে আমি তা করিনি।কারন তুই বন্ধুত্বর মর্যাদা না দিলেও তোর কাছে মুল্যহীন হলেও আমি নিজের বন্ধুর ওপর আঘাত করতে শিখেনি।তুই আমাদের প্রতিজ্ঞা ভুলে গেলেও আমি ভুলিনি।আমরা একে অপরের বিপক্ষে কখনো যাবনা,কখনো একে অপরকে অবিশ্বাস করবো না আর কখনো আঘাত করব না আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল।কিন্তু তুই সেটা ভুলে গেলি।
কিন্তু শুভ্র আমি এতকিছু জানতাম না।আর তোদের সাথে এরকম করার কোনো ইচ্ছে ও আমার ছিল না।কিন্তু ড্যাড আমাকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করেছে,আমাকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিল যেন এভাবে তোদের থেকে প্রতিশোধ বিশ্বাস কর ভাই বলে অয়ন শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে।আমাকে ক্ষমা কর দে শুভ। আমাকে বাধ্য হয়ে এমন করতে হয়েছে।আমি প্রয়োজনে বাড়ির সবার পায়ে ধরে ক্ষমা চাবো।আর এখন তো ড্যাড ও বেঁচে নেই।আমি আর মা ই আছি।আমাদের তোদের ছাড়া আর কে আছে বল।জানিস আমার তোর উপর ড্যাডের সাথে এমন করার কারনে রাগ হতো।কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বের কথা মনে হলে কষ্ট হতো।ভাবতাম তুই আমার সাথে বন্ধুত্বের নামে প্রতারনা করেছিস। প্লিপ্লিজ ভাই আমাকে মাফ করে দে।আমরা অতীত ভুলে নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করতে পারি না!
যতই হোক প্রানের বন্ধু বলে কথা।তাই এতবছরের মান অভিমান গুটিয়ে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে।মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় ৫ বছরের জমা সব অভিমান।হাজার বছর বেঁচে থাকুক এমন বন্ধুত্ব।
_________________ ___________________
কেটে গেল বেশ কয়েকদিন।শুভ্র সবাইকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেছে।অয়ন এসে সবার কাছে ক্ষমাও চেয়েছে বিশেষ করে নিরার কাছে।প্রথম সবাই মেনে না নিলেও এখন মেনে নিয়েছে।আজকে অয়ন আর ও ওর মা এবাড়িতে আসবে দীর্ঘ ৫ বছর পর।নিরা আর শুভ্রের ও পরীক্ষা শেষ।শুভ্র কিছুদিন পর সিইও হিসেবে কোম্পানিতে জয়েন্ট করবে।আর সামনে অরিনের ও বিয়ে।আর শুভ্র আর নিরার সম্পর্ক ও বেশ ভালো হয়েছে এ কয়দিনে।
আমি আজ বেশ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছি।অয়ন আর ফুপ্পি আসবে।এ কয়েকদিনে অয়ন আর আমার সম্পর্ক ও বেশ স্বাভাবিক হয়েছে। ওর জন্য এখন আর আমার মনে কোনো ফিলিংস নেই।হয়তো ওটা সাময়িক মোহ ছিল।তবে একমুহূর্ত ও এখন আমি শুভ্রকে ছাড়া থাকতে পারিনা।হয়তো এটাই ভালোবাসা। আর এখন শুভ্রকে ভাইয়াও ডাকিনা।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখি আম্মু আর চাচিমা রান্না করছে।আমাকে দেখে আম্মু বলল এই নে কফি।একটা তোর আরেকটা শুভ্রকে দিয়ে আয়।আর শুভ্র আর অরিনকে নিচে আসতে বল।তোর বাবা কিছু কথা বলবে।
কফি নিয়ে রুমে গেলাম।শুভ্র গভীর ঘুমে আছে।কিন্তু আমার মনে হঠাৎ ইচ্ছে জাগল ওনাকে কিস করার।তাই কোনো কিছু না ভেবে টুপ করে ওনার গালে একটা কিস করে বসলাম।শুভ্র চোখ খোলে পুরো অবাক।
কি ব্যাপার নিরাপাখি এটা কি হলো!আমাকে ঘুম থেকে তুলে তারপর নাহয় দিতি।তাহলে আমি ফিল নিতে পারতাম।বাই দা ওয়ে আমি কারো পাওনা বাকি রাখি না।সো
থাক, থাক আর কিছু বলতে হবে না।তুমি দিনদিন বেহায়া হয়ে যাচ্ছো তুমি।পৃথিবীর সেরা বেহায়ার জন্য তুমি এওয়ার্ড পাবে।গিনিস বুকে নাম উঠবে যে,পৃথিবীর সেরা বেহায়ার এওয়ার্ড পাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে শুভ্র নীল আহমেদ।পরে আমরা সবাই হাত তালি দিব তোমার জন্য।বাই দা ওয়ে যেজন্য আমি এসেছি সেটা আগে বলি।বাবা সবাইকে তাড়াতাড়ি নিচে যেতে বলেছে।কি জরুরী কথা নাকি আছে।
আমরা সবাই টেবিলে বসে আছি।আর ব্রেকফাস্ট করছি।তো বাবা বলল,আমার কিছু কথা বলার আছে।আমরা সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।বাবা বলল, আমি……….
চলবে…