#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৪
একটা রুমে একজন নারী এবং একজন পুরুষ যদিা পাশাপাশি দুজন শুয়ে থাকে,বা আর খেদিয়ে বললে তারা স্বামী-স্ত্রী,সেখানে অবশ্যই একজন অপরজনকে একটু হলেও ছুঁয়ে দেখবে।রাতটা ভালোবাসা,প্রেমাস্পর্শে ভরে উঠবে।কিন্তু অবাকের বিষয় হলো রিহান নিতুকে একটুখানি ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখে নি।অন্তরে-অন্দরে,চোখে দুজনে দুজনার প্রতি ভালোবাসাটা শুধু অনুভব করে নিয়েছে।তবে আরেকটা মজার বিষয় ঘটে গেলো কালরাতে নিতু বারকয়েক রিহানের মনোযোগ নেওয়ার জন্যে বহুৎ তামাশা করেছে।পেঁট থেকে কাপড়টা একটু উপরে সরিয়েছে।বুক থেকেও তার ব্যতিক্রম ঘটে নি।কিন্তু রিহান বাঁধা প্রদান করে।নিতুর ডান হাতটা শক্ত করে ধরে দুইপাশে মাথা নাড়ে।নিতু কেনজানি কিছুটা রাগ করমর হয়ে যায়।তা দেখে রিহান হেসে দোয়।পরক্ষণে রিহানের মুখের দিকপ তাকিয়ে থাকতে না পেরেও নিতুও তালে হেসে দিয়েছিল।মেয়ে মানুষ ত।একটু পাগলাটে মন।হুটহাট কি মনে আসে যা তারা নিজেরাও জানে না।নিতু এখন কালকের রাতের ঘটনাগুলো ঘটা ঘট করে ভাবছে।আর মুচকি হাসছে।আবার বাঁকা চোখে রিহানের দিকে তাকাচ্ছে।রিহান দৃষ্টি সামনে রেখে গাড়ি চালাচ্ছে। নিতুর দিকে তার এখন খেয়াল নেই।খেয়াল নিতুকে কখন ওর বাসায় পৌঁছে দেবে।
—————————-
নিতু ভাবলো রিহান নিতুকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত নামিয়ে দেয় রিহান।না,বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে কৈলাশগঞ্জ ছুটছে।মানে নিতুদের গ্রামে।নিতু ভাবলো হয়তো কৈলাশগন্জের কিছুটা কাছাকাছি নামিয়ে দিবে।কিন্তু রিহান নিতুকে আরেকদফা অবাক করিয়ে দিয়ে কৈলাশগন্জের ভেতরে গাড়ি নিয়ে ঢোকে!
——————————–
উঠোনের মাঝঝানে একটা চেয়ারের উপর বসে আছে লুৎফর।তার পাশে মুখে কাপড়ের আঁচল গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে নিতুর মা।তারপাশে নিতুর ভাবী।ভাবীর কোলে বোনঝি,আর ভাবীর পর নিতুর ছোট্ট বোনটি।তাদের সামনে একটা কাঠের শক্ত চেয়ারে বসে আছে রিহান।নিতু সবার থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে। মাথা সামান্য কিছুটা নিচের দিকে নুয়ানো।নিতুর ভাই অবশ্যি এই গোল্লায় আপাতত উপস্থিত নেই।তাকে লুৎফর কল করে আগে।কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে যোগ দেবে।লুৎফর এতক্ষণের তীক্ষ্ণ চোখজোড়া আরো তীক্ষ্ণ করে রিহানের দিকে তাকালো।কপালের ভাঁজটা কিছুটা মসৃণ করে এনে সুদৃঢ় কন্ঠে বললো,
“আমার মেয়েকে বিয়ে করেছো তার প্রমাণ কি?”
“নিকাহনামা আছে।আর সাক্ষী কাজী সাহেব,এবং আরো কয়েকজন।”
নিতুর মা পাশ থেকে বলেন,
“এইসব নিকাহানামাা,সাক্ষী নকল বানান যায়।”
রিহান বললো,
“আর সবথেকে বড় সাক্ষী নিতু সে নিজেই।আপনি নিতুকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।”
লুৎফর এবার উনার মেয়ের দিকে তাকান।মেয়ে মাথা নুইয়ে আছে।নুয়ানোর ভঙ্গিমাটা খুবই লুকোচুরির মতন।এই ছেলেটি যা বলছে নিতুর হাবভাবে তা সত্যই মনে হচ্ছে।লুৎফর মেয়ের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আবার রিহানের দিকে তাকান।বলেন,
“কবে বিয়ে করেছিলে তোমরা?”
“যেবার নিতু ঢাকা গিয়েছিল।”
“এবার?”
“নাহ।এর আগের বার।”
কথাটা রিহানের মুখ থেকে বেরুতেই নিতুর ঝংকার আওয়াজটা করে তোলেন।ক্যাঁচক্যাঁচ গলায় বলে উঠেন,
“দেখছো?দেখছো তুমি?তুমি বিশ্বাস করতে পারো নি!এখন হলো ত সত্যি!ওইদিন ও এই পোলারেই বিয়ে করার জন্য পালিয়ে গিয়েছিল।আর গ্রামের মানুষ যা কয়,সব মিথ্যা কয়!মিথ্যা!এখন শুনলে তো এই ছেলের মুখের কথা!আর এই ছেলের তো সাহস কম না।আমাদের সম্মতি না নিয়ে আমাদের মেয়েকে করেছে? এই ছেলেকে আমরা ভালো করো চিনি,নাকি জানি,হ্যাঁ!”
“আন্টি,দয়া করে গরম হবেন না।আমি আগে সবকথা শেষ করি!”
“তোমার কোনো কথাই শুনুম না!তুই যাও এইখাম থেকে।ওরেও সাথে করে নিয়ে যাও।আর কিছুক্ষণ তোমরা যদি থাকো গ্রামের মানুষ আামাদেরও বের করে দিব!”
রিহান আবার কথা বলতে চেষ্টা করলো।কিন্তু লাভ বিশেষ হলো না।নিতুর মা উল্টো আরো রেগে উঠলো।রিহান নিতুর মার থেকে মুখ সরিয়ে এবার লুৎফরের দিকে তাকালেন।বললো,
“আঙ্কেল!”
লুৎফরও কেনজানি রিহানের কথা শুনতে চাইলো না।উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের দিকে হেঁটে চলে গেলো।হেঁটে চলে যাওয়ার ভাবভঙ্গিট ঠিক বুঝলো না বাবার নিতুর।নিতুর মাও চলে যেতে আবার থেমে গেলো।রিহানের দিকে তাকিয়ে,
“যদি গ্রামের মানুষ শুনে তুমি সেই ছেলে!তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে।সময় থাকতে চলে যাও।আমরা চাই না গ্রামের মানুষের দ্বার আবার হেনস্তা হতে।”
“কিন্তু আন্টি আপনারা আমার সবকথা না শোনা পর্যন্ত এভাবে চলে যেতে পারেন না!আচ্ছা,আপনারা কথা নাই বললেন, আমি তাহলে নিতুর ভাইয়ের সাথে কথা বলবো।”
নিতুর মা আর কোনো কথা বললেন না!তরতর পায়ে হেঁটে ঘরের দিকে ছুটে গেলেন।তার পরপর সবাই!এখন ঘোর সন্ধে পুরো উঠানময় জুড়ে দুটিই মানব,রিহান এবং নিতু।রিহান নিতুর দিকে এগিয়ে এলো।জোরে হাত চাপড়ে ধরলো।নিতুর চোখের পানি বেয়ে পড়লো।রিহান বললো,
“চিন্তা করো না নিতু।তোমার ভাইয়া আসুক।একটা ফয়সালা হবেই।”
চলবে…..
া