#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৫
“এই মেয়ে?সাহস তো কম না!আবার নাটক শুরু করেছো!সারা ক্যাম্পাসে আমার মান-ইজ্জত রাখলে তুমি?রাখলে?এসব কি বলতেছে সবাই?কি বলতেছে?তোমাকে আমি ভালোবাসি?তোমার সাথে আমার রিলেশন চলে?কত মেয়েই তো এই পর্যন্ত আমাকে প্রপোজাল দিলো।রিজেক্ট করলাম।কই তাদের ক্ষেত্রে তো পুরো ক্যাম্পাস এভাবে বাজে নি।আর তোমার মতন একটা মেয়ে আমাকে জাস্ট প্রপোজাল দিয়েছে এটা সারা ক্যাম্পাস….!ভাবতেও অবাক লাগে!ভীষণ অবাক লাগে!”
“কিন্তু…ভাইয়া আমি এসব কিছুই করি নি!আর আমিতো অনেকদিন ভার্সিটিতেই আসি নি!
আপনি কাউকে…!”
রিহান নিতুকে হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো।বললো,
“বলতে হবে না আর কিছু।আমি জাস্ট তোমাকে মনে করিয়ে দিলাম।নেক্সটবার এসব আমার আর কানে যেনো না আসে।জুনিয়র আছো যতটুকু লিমিট ততটুকুর মধ্যেই থেকো!”
বলে রিহান ধপ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো!আর সটান পেছন ঘুরে নিতুর সামনে থেকে চলে গেলো!নিতু রিহানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকার মাঝে আবারো গড়গড়িয়ে পানি বেয়ে পড়তে থাকলো তার চোখ থেকে!
৯.
এক্সাম শেষ নিতুর।মার্কস শিটে তাকিয়ে দেখে ক্লাসের সবার থেকে এবার সে সবথেকে খারাপ করেছে!শুধু খারাপ না!একদমই অতিরিক্ত খারাপ!চারটা সাবজেক্টে ফেইল এসেছে!ক্লাসে গিয়ে কর্ণারে একটা বেঞ্চে চুপচাপ বসে থাকে।রাতুল আলাউদ্দিন স্যার ক্লাসে আসেন।এসেই স্টুডেন্টদের বসতে বলে তারপর নিতুর দিকে তাকান।বলেন,
“নিতু,তুমি স্ট্যান্ড আপ!”
নিতু চারদিকে হালকা চোখে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালো।রাতুল আলাউদ্দিন স্যার বলেন,
“পড়ালেখায় আরো মনোযোগী হতে হবে!পরিসংখ্যানের অনেক ব্যাচ আমার হাতের উপর গেলো!কিন্তু সবথেকে খারাপ রেজাল্ট এই ব্যাচেই এবার হলো!আর সেটা তুমি!তুমিতো ভালো পজিশন নিয়ে এখানে চান্স পেয়েছে!তারপরও এরকম রেজাল্ট!বাট হুয়ান?!”
নিতু মাথা নত করে চুপ করে রইলো!রাতুল স্যার আবার বলেন,
“এরকম রেজাল্ট নিয়ে এখানে থাকাটা নিতান্তই বোকামী!নেক্সট বার এরকম হলে তোমাকে আমরা আর এলো করবো না!মনে থাকে যেনো!বসো!”
নিতু বসলো।তারপর মাথা আবার নিচু করে ফেললো!ক্লাস শেষে রাতুল আলাউদ্দিন স্যার বেরিয়ে যান।যাওয়া মাত্রই পশ্চিমের কর্ণার থেকে একটা মেয়ে বলে উঠে,
“সখী যে প্রেম করতে করতে পড়ালেখাই খেয়ে ফেললো তা রাতুল স্যারকে বলা উচিত ছিলো!কি সিনথিয়া বলা উচিত ছিল না?হাহাহাহা হাহাহাহা…”
“হিহিহিহিহিহিহিহিহিহিহিহিহিহিহি…!”
১০.
ভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্লোরের উপর অনেকক্ষণ ঝিম ধরে বসে রইলো নিতু!কোনোকিছুই ভালো লাগছে না তার!সবকিছু যেনো এলোমেলো, আর ফাঁকা ফাঁকা লাগছে!ভার্সিটি,ক্যাম্পাস,হল কোনোকিছুই তার ভালো লাগছে না!জীবনটাকে খুব নিজের কাছে অসহ্যকর লাগছে!রেজাল্টটা এত খারাপ হয়েছে তার!আর সে তার নিজের কারণেই!সেদিন ওই রিহান প্রপোজাল না দিতো তাহলে বান্ধবীদের ওরকম হাসিতামাশা,কানাকানি,কুশাকুশির মুখোমুখি হতো না।রিহান ভাইয়ারও সেদিনের বলা কর্কশা গলায় কথাগুলো শুনতে হতো না!কেনো ভালো বাসতে গেলো তাকে?কেনো?ছন্নছাড়া মনটাকে কি দমিয়ে রাখতে কষ্ট হয়েছে?এতটা আবেগ কেনো উঠেছে সেদিন!কেনো!
১১.
লুৎফর আলী আজ খুব তাড়াতাড়িই দোকানটা বন্ধ করে ফেললেন।সচরাচর তিনি রাত ৯ টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখেন।কিন্তু আজ সন্ধে হওয়া মাত্রই বন্ধ করে ফেললেন।কয়েকজন চা-খোর লোক এসে দাঁড়িয়ে আছে উনার দোকানের সামনে!তারা চাই খেতে এসেছে!কিন্তু লুৎফর রহমান জানালেন,
“আজ আমার মেয়ের রেজাল্ট দিয়েছে ভার্সিটির!আমাকে তাড়াতাড়ি ঘরে যেতে হবে!গিয়ে মেয়েকে কল করতে হবে!সেই সকালে রেজাল্ট দিয়েছে মেয়েটার।আজ দোকানের ভীড় ঠেলে একবারও বাড়িতে যেয়ে মেয়েকে কল করে ওর রেজাল্টের কথা জিজ্ঞেস করতে পারিনি।এখন আর দোকান খুলবো না।আপনারা বাজারের দোকানে কষ্ট করে হেঁটে গিয়ে চা খেয়ে আসুন.আজ আমি পারবো না,ভাইসব।বুঝতেই পারছেন আমার কেমন অবস্থা ।মাফ করবেন।”
লোকগুলো লুৎফর আলীর দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে থাকলো।লুৎফর তাদের জবাবের অপেক্ষা করেনি আর।পাশ কেঁটে চলে গেলো।পাশ থেকে কিছুটা দূরে যেতে এদের মাঝ থেকে হ্যাংলাপাতলা মতন একজন বলে উঠলো,
“মেয়েকে নিয়ে খুব স্বপ্ন দেখে লুৎফর!”
আরেকজন বলেন,
“অনেক টাকা খরচ করে মেয়ের পিছনে!দোকানে যা আয় হয়,সব মেয়েকে দিয়া দেয়!আর ছেলে সংসারটা চালায়।এত টাকা খরচ করে মেয়েরে পড়াইয়া কী লাভ টা?শেষে তো মেয়ের সব টাকা ওই জামাই ই খাইবো!”
আরেকজন,
“ঠিক কইছেন,ভাই!লুৎফর তা বুঝে না!খামোখা মেয়ের পেছনে টাকা ঢালে!পরে বুঝবো এর মজা।”
“থাক ভাই!যার মাথা তার ব্যথা।পরে আমরা ভালোর জন্যে বলতে গেলেও দোষ হবে আমাদের আবার!”
“হু!চলেন। বাজারের দোকান থেকে চা খেয়ে আসি।”
“হু।”
লুৎফর আলী বাসায় ফিরেই ছেলের বউকে ডাকতে থাকেন।
“রাবেয়া?রাবেয়া?রাবেয়া? ”
রাবেয়া ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।বলে,
“জ্বী বাবা, বলেন?”
“নিতু কল দিয়েছে রে?”
“নাহ,বাবা কল দেয়নি।”
“আজ একবারও কল দেয়নি!?”
“নাহ দেয়নি তো!”
“সে কি মেয়ের তো আজ রেজাল্ট দেবে শুনলাম।আচ্ছা,তুমি একটু কল দাওতো নিতুকে?”
“দিচ্ছি,দাঁড়ান আপনি..!”
১২.
কলের শব্দে নিতুর ভেতরটা তরতর করে কেঁপে উঠলো।সে বুঝেছে তার বাবা কল করেছে রেজাল্ট জানতে।নিতু বারান্দা থেকে এক পা এক পা করে রুমে এগিয়ে এলো।বিছানার কাছে গিয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিলো।উপরের দিকে তাকালো।একটা ছোট্ট শ্বাস ছেড়ে বললো,
“হে আল্লাহ,বাবাকে এবার কি জবাব দেবো?!”
বলে নিতু মনে মনে আবার ভেঙ্গে পড়লো!পরক্ষণে কল রিসিভ না করলে বাবা টেনশনে পড়ে যাবে ভেবে
মনকে শক্ত করে ফোনটা রিসিভ করে নিতু,
“হ্যালো.!”
“নিতু? মা?আজ যে বাবাকে কল দিলি না?রেজাল্ট দিয়েছে তোর?”
নিতু একদণ্ড এবার চুপ হয়ে থাকলো।লুৎফর আবার বলেন,
“পরিক্ষায় পাস করেছিস, মা?”
“বাবা আমি বাড়িতে যাবো!”
“হঠাৎ বাড়িতে?তোর না এখন ক্লাস চলে?”
“চলে।কিন্তু কেনজানি আমার বাড়িতে যেতে খুব ইচ্ছে করছে বাবা।”
“যদি আসতে মন চায়।আস।সমস্যা নেই।তা কবে আসছিস?”
“আগামী কাল?”
“আয়।”
ফোনটা রাখার পর নিতু হঠাৎ আবার বাড়িতে যেতে এতটা উতলা হলো কেনো সে এর মানে বুঝলো না।পরিক্ষা শেষেই তো বাড়ি থেকে ১০ দিনের মতন বেড়িয়ে আসলো।এখন আবার ক্লাস চলাকালীনে যেতে চাচ্ছে? কিন্তু কি করবে সে?তার যে কিছুই ভালো লাগছে না!মনটা খুব অশান্ত।হৃদয়টা জ্বলেপুড়ে দগ্ধ হয়ে গেছে! তবে মা-বাবা,ভাই-বোন প্রিয় মানুষগুলোর মুখ গুলোকে একসাথে দেখলে এই ক্ষতটা কি সেরে যাবে!
চলবে…
(আসসালামু আলাইকুম,এখন থেকে রেগুলার গল্প পাবেন।ইনশাআল্লাহ.!আমি এখন কিছুটা ফ্রী..পরিক্ষা থেকে মুক্ত হলাম।)