#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৩

নিতু ওমনি সামনে ফিরে তাকালো।দেখলো তাদের সেই সিনিয়র রিহান ভাইয়া!সব ছাত্র-ছাত্রী এক তালে বলে উঠলো,
“আমরা ভালো আছি,ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ।তা আমি তোমাদের ক্লাসে কেনো এসেছি তোমরা বোধহয় জানো না,রাইট?”

সবাই সরু চোখে তাকিয়ে রইলো রিহানের দিকে।মানে- তারা বুঝলো না কেনো এসেছে তাদের রিহান ভাইয়া।সচরাচর কখনো তো তিনি জুনিয়রদের ক্লাসে আসেন না।রিহান বললো,
“তোমাদের আজকে বোধহয় মুহিব রহমান স্যারের পরিসংখ্যান বিষয়ের সাজেশন দেওয়ার কথা ছিল। হুট করে স্যারের বাসা থেকে একটা কল এসেছে। স্যারের মা ব্রেক স্ট্রোক করেছেন।উনি হাসপাতালে।
যার কারণে ইমার্জেন্সি স্যারকে সেখানে যেতে হয়েছে।আর যাওয়ার আগে স্যার তোমাদের সাজেশন ডিস্ট্রিবিউশন করার বিষয়টি আমাকে জ্ঞাপিত করে গিয়েছেন। সেই সাজেশনগুলো দিতেই আমি এসেছি।নাউ,ক্লিয়ার?”
“ইয়েস,ভাইয়া! ”

তারপর রিহান সামনের বেঞ্চ থেকে দুজন বয়কে ডাকলো।বয় দুজন রোহানের দিকে এগিয়ে যেতেই রোহান সাজেশনের বইগুলো ওদের হাতে তুলে দিয়ে বললো,
“এই সাজেশনগুলো এক এক সবাইকে ডিস্ট্রিবিউট করে দাও।”
“জ্বী,ভাইয়া।”

বয় দুজন সব ছাত্র-ছাত্রীকে সাজেশন গুলো ডিস্ট্রিবিউট করে দিলো।তারপর রোহান বললো,
“জুনিয়র?তোমাদের এক্সামের খুব বেশি কিন্তু আর দেরী নেই।মন দিয়ে ভালো মতন পড়বে যাতে সিজিপিএ ভালো তুলতে পারো।”

এমন সময় একদম পশ্চিম কর্ণারের কালো ফ্রেমের চশমা মা পড়া একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
“ভাইয়া?আমি কি আপনাকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি?”
“সিউর…!”
“ভাইয়া,আপনি কীভাবে পড়াশুনা করেন বলবেন একটু?আপনার সব রেজাল্ট আউট অফ ফোর!আসলে,ভাইয়া আপনাকে দেখলে কেনজানি হিংসে হয় খুব!আপনার মতন কেন যে পারি না!”

তার কথা শুনে সব স্টুডেন্টস খিলখিল করে হেসে উঠে।তবে নিতু হাসে নি।সে নৈঃশব্দ্যে স্থির ভঙ্গিতে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।তার মনের ভেতর চলছে পাহাড় সমান উত্তেজনার চাপ!লজ্জা লাগছে কেনজানি তার খুব!আর সাথে ভয়ও!সেদিন প্রপোজ করেছে ইনাকে।সেই প্রপোজালের বিষয়টা টেনে ইনি তাকে যদি এখন সবার সামনে দাঁড় করিয়ে অপমান করে বসে!?নিতু নিজেকে আরো আড়াল করতে মাথার ওড়নাটা আরো লম্বা করে টেনে নেয়, যাতে রোহানের চোখ তার দিকে না পড়ে।বা পড়লেও তাকে যেনো চিনতে না পারে!রিহান জুনিয়রদের সাথে হাসছে।হাসি থামিয়ে বললো,

“সাইলেন্ট প্লিজ,জুনিয়র…?”

সবাই হাসি থামালো।তারপর রেিহান চশমা পড়া জুনিয়র মেয়েটির দিকে তাকিয়ে,
“প্লিজ, সিট ডাউন।”

মেয়েটি তার সিটে বসে গেলো।রিহান বললো এবার,
“আসলে পড়াশুনার বিষয়টা মূলত তোমাকে প্রচুর পড়তে হবে।খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।পড়াতে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করতে হবে।আর তুমি যদি সারা মাস না পড়ে, শুধু সেমিস্টারের আগের রাতে বই ঘাটাঘাটি করতে বসো।তাহলে ভালো রেজাল্ট আসবে কোথেকে?মেইন কথা হলো পড়তে হবে খুব!তুমি যদি পড়াশুনা রেগুলার করো তোমার রেজাল্ট অবশ্যই ভালো আসবে।রেজাল্ট খারাপ আসার উপায় নেই।আর হ্যাঁ,আমার বিষয়টি যদি বলি,আমি কিন্তু বাসায় তেমন পড়াশুনা করি না।রেগুলারই পড়ি।তবে,পড়াতে সময় কম দিই।আমি যা পড়ি খেয়াল করে পড়ি।থিউরি গুলা মনে রাখি।থিউরির হিংস গুলো বারবার দেখি!সোজা কথা..শুধু ঘন্টার পর ঘন্টা বই নিয়ে পড়ে থাকলেও চলবে না।যা পড়বে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।বুঝাতে পেরেছি,জুনিয়র’স?”

“ইয়াহ,ভাইয়া।”

“গুড!যাইহোক তোমাদের কারো কিন্তু আমি নাম জানি না।আজ তোমাদের ক্লাসে যেহেতু এসেছি তোমাদের সাথে পরিচিত হবো।”
“জ্বী ভাইয়া,অবশ্যই,অবশ্যই।আমরাও চাই আপনি আমাদের নাম জানুন!আমাদের চিনুন!”

মধ্য সারির মাঝখানে বসা একটা মেয়ে গলা ফাটিয়ে কথাটা বলে উঠে।তার কথায় কিছুটা রিহান হাসি টানার ভঙ্গিমা করে তারপর দক্ষিণ দিক থেকে জুনিয়রদের পরিচয় জানতে শুরু করে!আর সেখানেরই থার্ড বেঞ্চে বসা নিতুর বুকটা আরেক দফা কেঁপো উঠে!দুইটা বেঞ্চ শেষ হলেই তারপর তার পরিচয় জানবে রিহান।আর তখন তাকে দেখে ফেলবে রিহান!কিন্তু সে যে রিহানের সামনে নিজেকে ধরা দিতে চাচ্ছে না!কিছুতেই না!নিতুর অবস্থা যেনো এবার খুবই আতংকের মতন হয়ে গেলো!মন যেহেতু চায়নি আজ ভার্সিটিতে আসা একদমই উচিত হয়নি!
ভাবনার মাঝে,

“নীল ড্রেস…..?”

নিতুর কাছে রিহান আসে এবার।নিতু আজ নীল কালারের একটা থ্রি-পিস পড়ে এসেছে।নিতু উপরওয়ালার কাছে সব ছেড়ে দেয়।কপালে যা আছে, তাই ই হবে! বেঞ্চের কাঠ খুব শক্ত করে ধরে ধীর গতিতে উঠে দাঁড়ায়।ঘোমটাটা হালকা টেনে উপরে তুলে দৃষ্টি রিহানের নিবদ্ধ করে। পরক্ষণে আবার দৃষ্টিটা নিচে নামিয়ে গলার স্বর ছোট্ট করে বলে,
“নিতু।যশোর থেকে এসেছি।”

রিহান নিতুকে দেখার পর তার মাঝে তেমন ভাবান্তর দেখা হলো না!সে শুধু “ওকে” বলে নিতুর পরের মেয়েটিকে পরিচয় জিজ্ঞেস করে।নিতু আলতো তার জায়গায় বসে।তারপর অন্যদের সবার পরিচয় জিজ্ঞেস করতে শুরু করা শেষ হলে রিহান ক্লাস থেকে বিদেয় নেয়!রিহান ক্লাস থেকে চলে যাওয়া মাত্রই পশ্চিমের সারির বেঞ্চ থেকে একটা মেয়ে বাঁজখাই গলায় নিতুকে বলে উঠে,
“নিতু আপা?তো এতক্ষণ খুব লজ্জা লাগছিলো না?”

মেয়েটির কথা শুনে পাশে থাকা অন্য মেয়েগুলো ভ্রু কুঁচকে তাকালো তার দিকে।মানে- নিতু নামের মেয়েটিকে হঠাৎ এরকম কথা কেন?মেয়েটি শব্দ করে হেসে উঠলো।হাসি থামিয়ে সবাইকে বললো,
“মানে জানতে চাস,তোরা?”
“হ্যাঁ…কী বল….!”

সবাই বেশ উৎসুখ হয়ে গেলো!মেয়েটি তীক্ষ্ণ চোখে একদন্ড নিতুর দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর আবার অন্যদের দিকে তাকায়। বলে,
“আমার কাছে এসে বস সবাই।সব বলছি….!!!”

সবাই জড়োসড়ো মেয়েটিকে ঘিরে বসে গেলো।কিছু মেয়ে আবার অন্য সারি থেকে দৌড়ে এসে এদের দলে যোগ দিলো।মেয়েটি এবার বলতে থাকলো,
“জানিস?নিতু নামের এই মেয়েটি গতকাল রিহান ভাইয়াকে পত্র লিখে প্রপোজাল করেছে সরাসরি!!!”
“হোয়াট?!”
“শুধু তাই না..পত্রকে মায়া,আবেগ,ভালোবাসা যত যা আছে সব লিখেছে রিহান ভাইকে নিয়ে!!”
“কি বলিস এসব তুই!!”
“হ্যাঁ।”
“কখন করেছে?আর কোথায় করেছে?”
“অর্থনীতি বিভাগের সামনে।মানে উনার ডিপার্টমেন্টের সামনে!”
“সরাসরি…?”
“আরেহ হ্যাঁ।”
“বিলিভ হচ্ছে না!”
“বিলিভ তে আমারও হচ্ছিলো না ।আর বিলিভ করতামও না কখনো যদি না মিহিতা আপুর মুখ থেকে কথাটা না শুনতাম।মিহিতা আপু রিহান ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড!আর মিহিতা আপু আমার কাজিন।”
“ওরেহহহ….!আচ্ছা, রিহান ভাইয়া কি ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করেছে?”
“আরেহ গাধী নাকি?এর প্রপোজাল একসেপ্ট করবে….??”
“সেটাই তো!কত ম্যাচিউরিটি,গুড লুকিন গার্ল,আভিজাত্য ফ্যামিলির মেয়েটি রুহান ভাই ডিজার্ভ করেনি আর সেখানে একে?ভাবা যায় এগুলা রে,ভাই?আমি তো সেই ভার্সিটি পা রাখা মাত্রই রুহান ভাইয়ার ক্রাশ খেয়ে এখনো ফিদা হয়ে আছি,অথচ সাহস করে বলতে পারি নি ভালোবাসি।আর সেখানে এর মতন মেয়ে!”

আরেকটা মেয়ে,
“এইজন্যেই ত ভাবতেছি রিহান ভাইয়া ক্লাসে আসার পর এর ঘাড়ের ওড়না মাথায় উঠলো কেনো…!?”
“ভয় পাইছে রিহান ভাইকে দেখে…!হাহাহাহা…!!”

সবাই একই তালে হেসে উঠলো।এদের প্রতিটি কথার ফলা নিতু পুঙ্খানুপুঙ্খ শুনতে পেলো।আর ওই মেয়েটি কথাগুলো আস্তে বলে নি।বরঞ্চ নিতুকে শুনিয়েই বলেছিলো।নিতু যেনো এবার কেঁদে দেওয়ার মতন হয়ে গেলো।ওড়নার কোণা খুব শক্ত করে আঁটকে ধরে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলো।সবগুলো মেয়ে এতক্ষণে নিতুর দিকে ফিরলো।সরু চোখে তাকালো সবাই।তাদের থেকে চিকনা-পাতলার মতন একটা মেয়ে বলে উঠলো,
“ওয়েটিং লিস্টে থাকো…পেলেও পেতে পারো!ভাগ্য বলেও একটা ব্যাপার-স্যাপার আছে,বুঝছো?”

বলে আবারো সবাই হেসে উঠলো।নিতুর এবার চোখের পানি আর আঁটকে থাকতে পারলো না।দুই ফোঁটা অশ্রু গড়গড় করে বেয়ে পড়লো!নিতু বসলো না আর।ব্যাগটা হাতে নিয়ে কাঁদো মুখশ্রীতে সবার সামনে থেকে চলে এলো!

চলবে…..
#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৩

নিতু ওমনি সামনে ফিরে তাকালো।দেখলো তাদের সেই সিনিয়র রিহান ভাইয়া!সব ছাত্র-ছাত্রী এক তালে বলে উঠলো,
“আমরা ভালো আছি,ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ।তা আমি তোমাদের ক্লাসে কেনো এসেছি তোমরা বোধহয় জানো না,রাইট?”

সবাই সরু চোখে তাকিয়ে রইলো রিহানের দিকে।মানে- তারা বুঝলো না কেনো এসেছে তাদের রিহান ভাইয়া।সচরাচর কখনো তো তিনি জুনিয়রদের ক্লাসে আসেন না।রিহান বললো,
“তোমাদের আজকে বোধহয় মুহিব রহমান স্যারের পরিসংখ্যান বিষয়ের সাজেশন দেওয়ার কথা ছিল। হুট করে স্যারের বাসা থেকে একটা কল এসেছে। স্যারের মা ব্রেক স্ট্রোক করেছেন।উনি হাসপাতালে।
যার কারণে ইমার্জেন্সি স্যারকে সেখানে যেতে হয়েছে।আর যাওয়ার আগে স্যার তোমাদের সাজেশন ডিস্ট্রিবিউশন করার বিষয়টি আমাকে জ্ঞাপিত করে গিয়েছেন। সেই সাজেশনগুলো দিতেই আমি এসেছি।নাউ,ক্লিয়ার?”
“ইয়েস,ভাইয়া! ”

তারপর রিহান সামনের বেঞ্চ থেকে দুজন বয়কে ডাকলো।বয় দুজন রোহানের দিকে এগিয়ে যেতেই রোহান সাজেশনের বইগুলো ওদের হাতে তুলে দিয়ে বললো,
“এই সাজেশনগুলো এক এক সবাইকে ডিস্ট্রিবিউট করে দাও।”
“জ্বী,ভাইয়া।”

বয় দুজন সব ছাত্র-ছাত্রীকে সাজেশন গুলো ডিস্ট্রিবিউট করে দিলো।তারপর রোহান বললো,
“জুনিয়র?তোমাদের এক্সামের খুব বেশি কিন্তু আর দেরী নেই।মন দিয়ে ভালো মতন পড়বে যাতে সিজিপিএ ভালো তুলতে পারো।”

এমন সময় একদম পশ্চিম কর্ণারের কালো ফ্রেমের চশমা মা পড়া একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,
“ভাইয়া?আমি কি আপনাকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি?”
“সিউর…!”
“ভাইয়া,আপনি কীভাবে পড়াশুনা করেন বলবেন একটু?আপনার সব রেজাল্ট আউট অফ ফোর!আসলে,ভাইয়া আপনাকে দেখলে কেনজানি হিংসে হয় খুব!আপনার মতন কেন যে পারি না!”

তার কথা শুনে সব স্টুডেন্টস খিলখিল করে হেসে উঠে।তবে নিতু হাসে নি।সে নৈঃশব্দ্যে স্থির ভঙ্গিতে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।তার মনের ভেতর চলছে পাহাড় সমান উত্তেজনার চাপ!লজ্জা লাগছে কেনজানি তার খুব!আর সাথে ভয়ও!সেদিন প্রপোজ করেছে ইনাকে।সেই প্রপোজালের বিষয়টা টেনে ইনি তাকে যদি এখন সবার সামনে দাঁড় করিয়ে অপমান করে বসে!?নিতু নিজেকে আরো আড়াল করতে মাথার ওড়নাটা আরো লম্বা করে টেনে নেয়, যাতে রোহানের চোখ তার দিকে না পড়ে।বা পড়লেও তাকে যেনো চিনতে না পারে!রিহান জুনিয়রদের সাথে হাসছে।হাসি থামিয়ে বললো,

“সাইলেন্ট প্লিজ,জুনিয়র…?”

সবাই হাসি থামালো।তারপর রেিহান চশমা পড়া জুনিয়র মেয়েটির দিকে তাকিয়ে,
“প্লিজ, সিট ডাউন।”

মেয়েটি তার সিটে বসে গেলো।রিহান বললো এবার,
“আসলে পড়াশুনার বিষয়টা মূলত তোমাকে প্রচুর পড়তে হবে।খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।পড়াতে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করতে হবে।আর তুমি যদি সারা মাস না পড়ে, শুধু সেমিস্টারের আগের রাতে বই ঘাটাঘাটি করতে বসো।তাহলে ভালো রেজাল্ট আসবে কোথেকে?মেইন কথা হলো পড়তে হবে খুব!তুমি যদি পড়াশুনা রেগুলার করো তোমার রেজাল্ট অবশ্যই ভালো আসবে।রেজাল্ট খারাপ আসার উপায় নেই।আর হ্যাঁ,আমার বিষয়টি যদি বলি,আমি কিন্তু বাসায় তেমন পড়াশুনা করি না।রেগুলারই পড়ি।তবে,পড়াতে সময় কম দিই।আমি যা পড়ি খেয়াল করে পড়ি।থিউরি গুলা মনে রাখি।থিউরির হিংস গুলো বারবার দেখি!সোজা কথা..শুধু ঘন্টার পর ঘন্টা বই নিয়ে পড়ে থাকলেও চলবে না।যা পড়বে মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।বুঝাতে পেরেছি,জুনিয়র’স?”

“ইয়াহ,ভাইয়া।”

“গুড!যাইহোক তোমাদের কারো কিন্তু আমি নাম জানি না।আজ তোমাদের ক্লাসে যেহেতু এসেছি তোমাদের সাথে পরিচিত হবো।”
“জ্বী ভাইয়া,অবশ্যই,অবশ্যই।আমরাও চাই আপনি আমাদের নাম জানুন!আমাদের চিনুন!”

মধ্য সারির মাঝখানে বসা একটা মেয়ে গলা ফাটিয়ে কথাটা বলে উঠে।তার কথায় কিছুটা রিহান হাসি টানার ভঙ্গিমা করে তারপর দক্ষিণ দিক থেকে জুনিয়রদের পরিচয় জানতে শুরু করে!আর সেখানেরই থার্ড বেঞ্চে বসা নিতুর বুকটা আরেক দফা কেঁপো উঠে!দুইটা বেঞ্চ শেষ হলেই তারপর তার পরিচয় জানবে রিহান।আর তখন তাকে দেখে ফেলবে রিহান!কিন্তু সে যে রিহানের সামনে নিজেকে ধরা দিতে চাচ্ছে না!কিছুতেই না!নিতুর অবস্থা যেনো এবার খুবই আতংকের মতন হয়ে গেলো!মন যেহেতু চায়নি আজ ভার্সিটিতে আসা একদমই উচিত হয়নি!
ভাবনার মাঝে,

“নীল ড্রেস…..?”

নিতুর কাছে রিহান আসে এবার।নিতু আজ নীল কালারের একটা থ্রি-পিস পড়ে এসেছে।নিতু উপরওয়ালার কাছে সব ছেড়ে দেয়।কপালে যা আছে, তাই ই হবে! বেঞ্চের কাঠ খুব শক্ত করে ধরে ধীর গতিতে উঠে দাঁড়ায়।ঘোমটাটা হালকা টেনে উপরে তুলে দৃষ্টি রিহানের নিবদ্ধ করে। পরক্ষণে আবার দৃষ্টিটা নিচে নামিয়ে গলার স্বর ছোট্ট করে বলে,
“নিতু।যশোর থেকে এসেছি।”

রিহান নিতুকে দেখার পর তার মাঝে তেমন ভাবান্তর দেখা হলো না!সে শুধু “ওকে” বলে নিতুর পরের মেয়েটিকে পরিচয় জিজ্ঞেস করে।নিতু আলতো তার জায়গায় বসে।তারপর অন্যদের সবার পরিচয় জিজ্ঞেস করতে শুরু করা শেষ হলে রিহান ক্লাস থেকে বিদেয় নেয়!রিহান ক্লাস থেকে চলে যাওয়া মাত্রই পশ্চিমের সারির বেঞ্চ থেকে একটা মেয়ে বাঁজখাই গলায় নিতুকে বলে উঠে,
“নিতু আপা?তো এতক্ষণ খুব লজ্জা লাগছিলো না?”

মেয়েটির কথা শুনে পাশে থাকা অন্য মেয়েগুলো ভ্রু কুঁচকে তাকালো তার দিকে।মানে- নিতু নামের মেয়েটিকে হঠাৎ এরকম কথা কেনো বললি?মেয়েটি শব্দ করে হাসলো।হাসি থামিয়ে বললো,
“মানে জানতে চাস?”
“হ্যাঁ…কী বল….!”

সবাই বেশ উৎসুখ হয়ে গেলো!মেয়েটি তীক্ষ্ণ চোখে একদন্ড নিতুর দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর আবার অন্যদের দিকে তাকায়। বলে,
“আমার কাছে এসে বস সবাই।সব বলছি….!!!”

সবাই জড়োসড়ো মেয়েটিকে ঘিরে বসে গেলো।কিছু মেয়ে আবার অন্য সারি থেকে দৌড়ে এসে এদের দলে যোগ দিলো।মেয়েটি এবার বলতে থাকলো,
“জানিস?নিতু নামের এই মেয়েটি গতকাল রিহান ভাইয়াকে পত্র লিখে প্রপোজাল করেছে সরাসরি!!!”
“হোয়াট?!”
“শুধু তাই না..পত্রকে মায়া,আবেগ,ভালোবাসা যত যা আছে সব লিখেছে রিহান ভাইকে নিয়ে!!”
“কি বলিস এসব তুই!!”
“হ্যাঁ।”
“কখন করেছে?আর কোথায় করেছে?”
“অর্থনীতি বিভাগের সামনে।মানে উনার ডিপার্টমেন্টের সামনে!”
“সরাসরি…?”
“আরেহ হ্যাঁ।”
“বিলিভ হচ্ছে না!”
“বিলিভ তে আমারও হচ্ছিলো না ।আর বিলিভ করতামও না কখনো যদি না মিহিতা আপুর মুখ থেকে কথাটা না শুনতাম।মিহিতা আপু রিহান ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড!আর মিহিতা আপু আমার কাজিন।”
“ওরেহহহ….!আচ্ছা, রিহান ভাইয়া কি ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করেছে?”
“আরেহ গাধী নাকি?এর প্রপোজাল একসেপ্ট করবে….??”
“সেটাই তো!কত ম্যাচিউরিটি,গুড লুকিন গার্ল,আভিজাত্য ফ্যামিলির মেয়েটি রুহান ভাই ডিজার্ভ করেনি আর সেখানে একে?ভাবা যায় এগুলা রে,ভাই?আমি তো সেই ভার্সিটি পা রাখা মাত্রই রুহান ভাইয়ার ক্রাশ খেয়ে এখনো ফিদা হয়ে আছি,অথচ সাহস করে বলতে পারি নি ভালোবাসি।আর সেখানে এর মতন মেয়ে!”

আরেকটা মেয়ে,
“এইজন্যেই ত ভাবতেছি রিহান ভাইয়া ক্লাসে আসার পর এর ঘাড়ের ওড়না মাথায় উঠলো কেনো…!?”
“ভয় পাইছে রিহান ভাইকে দেখে…!হাহাহাহা…!!”

সবাই একই তালে হেসে উঠলো।এদের প্রতিটি কথার ফলা নিতু পুঙ্খানুপুঙ্খ শুনতে পেলো।আর ওই মেয়েটি কথাগুলো আস্তে বলে নি।বরঞ্চ নিতুকে শুনিয়েই বলেছিলো।নিতু যেনো এবার কেঁদে দেওয়ার মতন হয়ে গেলো।ওড়নার কোণা খুব শক্ত করে আঁটকে ধরে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলো।সবগুলো মেয়ে এতক্ষণে নিতুর দিকে ফিরলো।সরু চোখে তাকালো সবাই।তাদের থেকে চিকনা-পাতলার মতন একটা মেয়ে বলে উঠলো,
“ওয়েটিং লিস্টে থাকো…পেলেও পেতে পারো!ভাগ্য বলেও একটা ব্যাপার-স্যাপার আছে,বুঝছো?”

বলে আবারো সবাই হেসে উঠলো।নিতুর এবার চোখের পানি আর আঁটকে থাকতে পারলো না।দুই ফোঁটা অশ্রু গড়গড় করে বেয়ে পড়লো!নিতু বসলো না আর।ব্যাগটা হাতে নিয়ে কাঁদো মুখশ্রীতে সবার সামনে থেকে চলে এলো!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here