#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব_০২

“শুনলাম, তুমি নাকি আজ রিহান ভাইয়াকে প্রপোজ করেছো?!”

প্রিয়ার কথায় নিতুর মাথাটা খানিকটা নুইয়ে এলো।শক্ত করে চোখ বুঁজে নিজেকে ধাতস্থ করলো।তারপর আবার মাথা তুললো।অপ্রস্তুত দ্বার কন্ঠে বললো,
“না-হ!”
“মিথ্যে বলতেছো কেনো তুমি?সবেই তো ক্যাম্পাসের সবাইকে দেখলাম তোমার কথা সবাই মুখে মুখে বলাবলি করতেছে!প্রপোজ না করলে বলতো?!”

চুপ করে রইলো নিতু।আর কোনো উত্তর দিতে পারলো না।প্রিয়া বুকের সামনে থেকে বইটা নিচে নামিয়ে চাঞ্চল্যকর ভঙ্গিতে বলো উঠলো এবার,
“হোল ভার্সিটির মেয়ে রিহান ভাইয়ার উপর টাসকি খেয়ে আছে আর সেখানে তুমি!আর তোমার সাহসও তো অনেক দেখছি,বাব্বাহ!কীভাবে পারলে প্রপোজ করতে!”

নিতুর নিরবতার ভঙ্গিটা টলটলিয়ে উঠলো যেন এবার।বললো,
“কাউকে ভালোবাসা কি অন্যায়?!”

প্রিয়া এবার কিছুটা হাসির মতন ভঙ্গি করলো।টেবিলের দিকে এগিয়ে যেয়ে হাতের বইটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বললো নিতুকে,
“ভালোবাসলে যে তাকে চোখ বন্ধ করে পাওয়া যাবে এমন না।তার স্ট্যাটাসের সাথে,চলাফেরার সাথে,ভাবভঙ্গির সাথে নিজেকে মানাবে কি না ভাবতে হবে!বায় দ্য ওয়ে,তোমাকে আবার ইন্ডিকেট করে বলছি না।পৃথিবীতে তো কতরকমের মানুষ আছে!সবার সব তো সবার সাথে মিলে না,তাই না?”

বলে প্রিয়া বাথরুমে ঢুকে গেলো!নিতু বুঝলো প্রিয়া যে তাকে এখন অপমান করলো!এরকম প্রায়ই করে প্রিয়া।নিতু জামা পড়লে বলে,
“আরেহ,এই থ্রি-পিস গুলো সেই নব্বই দশকের মেয়েরা পড়তো, সেগুলো না?”

খেতে বসলে,
“তুমি ভর্তা খেতে পারো?ভর্তা,ডাল পছন্দের খাবার কীভাবে হয়,বুঝি না!”

সাজতে গেলে প্রিয়া ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
“তোমাকে কটকটা দেখাচ্ছে!অবশ্যি তোমাকে না,তোমার সাজকে!”

এসব ইনসাল্ট নিতুকে।নিতু বুঝে। কিছু বলে না।আর বলবেই বা কী?সে ত একটা মফস্বল থেকে আসা মেয়ে!শহরে এসেছে আজ আটমাস!এখনো নিজেকে শহরের সাথে মানিয়ে নিতে পারেনি।কথায় কিছুটা গ্রাম্য টান থাকে।চলাফেরায় গ্রাম্য গ্রাম্য ভাব আসে।তার সাথে ভার্সিটির তেমন কেউ চলাফেরাও করেনা।চলাফেরা করলে, মিশলে তখন নাহয় নিজেকে কিছুটা পরিবর্তন করার সুযোগ পেত।সেই সুযোগটাও নাই।নিতু এই ইঁটপাথরের শহরে বড্ড একা।এখানের মানুষগুলো মনও ইটঁপাথররের শুনে শক্ত করে বাঁধা!তবে,এটা নিয়ে নিতুর ওতটা দুঃখ নেই।কে কি ভাবে,কি বলে তাতে নিতু মাথা ঘামায় না একদম।মানুষ হয়তো বলবে সে মানুষদের কটাক্ষ কথা শুনতে শুনতে এরকম হয়ে গেছে।নাহ!ছোট্ট কাল থেকেই সে এরকম।বলা যায় এটা তার একটা অভ্যেস।তার এই অভ্যেসের জন্যে তার বাবা তাকে নিয়ে মাঝে মাঝে খুব গর্ববোধও করেন।

৩.
হঠাৎ গভীর ঘুম থেকে জেগে গেলো নিতু।পাশ ফিরে তাকায় প্রিয়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।একই রুমে দুটা সিঙ্গেল বেড।একটাতে নিতু ঘুমায়।অন্যটাতে প্রিয়া। নিতু হঠাৎ কেনো জেগে উঠলো তা সে নিজেই ঠিক বুঝলো না। তবে বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে।উঠে আসলো বিছানা থেকে।আলতো দরজা ঠেলে বেলকনিতে আসলো।বাইরে গুড়গুড়ে অন্ধকার!অন্ধকারের আকাশের বুকে কয়েকটা তারা মিটমিট মিটমিট করে জ্বলছে আর নিভছে।নিতু সেই তারাগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলো দীর্ঘক্ষণ।তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো একটা।কেনজানি খুব এখন রিহান ভাইয়ার কথা খুব করে মনে পড়তেছে!মনে আছে,সেইদিন ভার্সিটিতে নিতএর প্রথম দিন ছিল।অরিয়েন্টশন ক্লাস ছিলো তার।হল থেকে বেরিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে সে তার ডিপার্টমেন্ট চিনতে পারলো না। আশপাশে তাকাতে থাকলো।আশেপাশেও তেমন কাউকে দেখলো না তখন যে জিজ্ঞেস করবে তার ডিপার্টমেন্টটা কোথায়!উপায়ন্তর না পেয়ে সামনের দিকে হাঁটতে থাকলো নিতু।কিছুটা পথে যেতে পেছন থেকে সাদা শার্ট পড়া একটা ছেলেকে দেখলো।দৌড়ে গেলো তার দিকে।হাঁপানো স্বরে বললো,

“আচ্ছা,ম্যাথমেথিকস ডিপার্টমেন্টটা কোনদিকে বলতে পারবেন একটু?”

ওমনি পেছনে তাকালো ছেলেটি।মুখে চওড়া একটা হাসি টেনে বললো,
“জুনিয়র?”
“জ্বী!”
“ওয়েলকাম ওয়েলকাম ওয়েলকাম টু আওয়ার ভার্সিটি!ডান দিক যেয়ে সোজা বাম দিকে পদার্থবিজ্ঞান বারবার সামনের ডিপার্টমেন্টাই ম্যাথমেথিকস ডিপার্টমেন্ট! ”
“ধন্যবাদ,ভাইয়া!

তারপর কিছুদিন পর এলো নবীনবরণ অনুষ্ঠান।নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রথম দিনের দেখা সেই সিনিয়র ভাইয়াকে আবার মঞ্চে দেখলো নিতু।ধবধবে ফর্সা শরীরে লাল পাঞ্জাবী এবং লাল পাজামা পড়ে
মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্টুডেন্টদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ভার্সিটিতে আসার উদ্দীপনা,অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়েছে।আরো কিছু উপদেশমূলক বাণীও দিয়েছে।ভার্সিটির স্যাররাও ওর প্রতিটি কথার ফলায় ফলায় সম্মতি জ্ঞাপন করেছে।উনার প্রতি স্যারদের এতটা কৌতূহলতা দেখে ভারী অবাক হলো নিতু।সচরাচর ভার্সিটির টিচাররা স্টুডেন্টদের প্রতি রাশভারী হয়।কথা বলে না তেমন।কিন্তু এই সিনিয়র ভাইয়াটির বেলায় তা করলো না!উনার প্রতিটি শব্দ আরো যেন সাদরে আমন্ত্রণ জানাল।এর পেছনে কি এমন রহস্য?ঠিক তার দুইদিন পরই এর কারণ উদঘাটন করে ফেললো নিতু।সেদিন ভার্সিটি পা রাখা মাত্রই দেখলো নতুন ব্যাচের কিছু স্টুডেন্টস উনার(সিনিয়র ভাইয়াটি) পেছনে পেছনে ছুটছে বই,খাতা, কলম নিয়ে।প্রথমে বিষয়টি বুঝলো না সে সবাই কেনো উনার পেছনে এভাবে ছুটছে!পাশ থেকে তখন একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে বললো,

“এই ভাইয়াটা এই ভার্সিটির মধ্যে ফার্স্ট বয়।খুবই ট্যালেন্টেডও নাকি শুনলাম!তর্ক-বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কুইজ,খেলাধুলায়,পড়াশুনায় সবকিছুতে বিপক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোকে টপকে দিয়ে খেতাব জিতে নিচ্ছে। আর তাই দ্যাখ,যারা তাদের পড়া বুঝছে না।উনার থেকে সল্যুশন নিতে উনার কাছে যাচ্ছে!”

তখন অন্য মেয়েটা বলে উঠে,
“আল্লাহ, এত কিউট তারপর আবার এত ট্যালেন্টেডও!ভাবা যায়?!মিথিরে, অথচ আগে জানতাম সুন্দর ছেলেরা বাউণ্ডুলে টাইপের হয়।পড়াশুনায় একদম আনাড়ি! আর ইনি?ক্রাশ খেলাম রে ক্রাশ!পুরাই ক্রাশ!”

ভালো স্টুডেন্ট বলে তাইতো স্যারদের এতটা আগ্রহ উনার প্রতি!এই ভাবনাটার মাঝে নিতুর মনের কোণে আরেকটা নতুন ভাবনার দ্বার জাগ্রত হলো!তা হলো সেই সিনিয়র ভাইয়াটির প্রতি তার ভালোলাগা।শুরু হলো আড়ালে আবডালে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে দেখার।ছবি তোলার।পুরো ছবি তুলতে পারতো না।কোনোদিন মুখের একপাশ উঠতো।আবার কোনোদিন বা শুধু মাথার চুলগুলো!হলে ফিরলে রাতে ফোনটা টেবিলের উপর এনে লুকিয়ে তোলা সেই ছবিগুলো ডিসপ্লে তে শো করে খানিক্ষন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতো।তাকিয়ে থাকার মাঝে নাকে প্রেম প্রেম গন্ধ আসতো।মাদকতা মনে অনুভূতিগুলো নাড়া দিত।ডায়েরিতে সেই মাদকতা অনুভূতিগুলোর একটি একটি করে অক্ষর সাজাতো।কত ছন্দ লিখেছে তাকে নিয়ে।কত কবিতা লিখেছে।কত ছোট্ট গল্পও লিখেছে!সবগুলো লেখা ভালোবাসার,আবেগের এবং মায়ার!এসবের আঁশ প্রিয়াও একটু আধটু দেখেছিল। আর মনে মনে ভীষণ তাচ্ছিল্যকর হেসেছিল!এভাবে চলতে চলতো আঁটটি মাস পার হয় নিতুর।এরমাঝে একটিবারও সিনিয়র ভাইয়াকে তার ভালোবাসার কথা মুখ খুলে বলতে পারলো না।বলতে পারলো না বলতে সাহস হলো না।তবে না বলে কেন জানি থাকতেও বড্ড বেপরোয়া লাগছিলো!সাহস আনলো বুকে।সপে দিলো ভাগ্যতে!প্রপোজ করে দেখা যাক কি হয়!ডায়েরির খামের লেখা একটা ছন্দের কাগজ ছিঁড়ে সেই কাগজের টুকরোটা সেই সিনিয়র ভাইয়ার(রিহান)হাতে ধরিয়ে দিলো!আর ফলাফলে শূন্য এলো!কেঁদে উঠলো নিতু!ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো খুব!বেলকনির রেলিং খুব শক্ত করে ধরে নিজেকে আবার ধাতস্থতা করার চেষ্টা করলো!

৪.
ক্লাসে এখনো স্যার আসছেন না।পরিসংখ্যান সাবজেক্টের ১০ মিনিট ওভার হয়ে গেছে!ছেলে-মেয়েরা বেঞ্চে খুপরি মেরে গল্প করতেছে!কেউ কেউ আয়নাতে নিজেদের মেক-আপ বারবার দেখতেছে।কেউবা আবার বই-কলম নিয়ে ঘাটাঘাটি করতেছে!স্যার যে এখনো ক্লাস করতে আসছেন না তা নিয়ে তাদের কোনো খেয়াল নেই যেন।কিছু কিছু মেয়েতো আবার স্যার আসছে না বিধায় সেই খুশি!নিতু একদম দক্ষিণের দিকের বেঞ্চের কোণায় বসে আছে একা নিরিবিলি!মনের অবস্থা তার আর কি বলবো সবাই ত জানেন ই!আজ ভেবেছিলো ভার্সিটিতে আসবে না।কিন্তু মিড টার্ম এক্সামের পরিসংখ্যান বিষয়ের কি নাকি সাজেশন দেবে সেই কারণে আসতে হয়েছে।এখন এসে দেখে সেই বিষয়ের টিচারই এখন ক্লাসে আসছেন না।মনটা আরো দ্বিগুণ বিরক্ত হয়ে গেলো তার।ভাবছে সকাল থেকে যে দুটো ক্লাস করেছে তাতেই হয়েছে।আর কোনো সাজেশন টাজেশন লাগবে না।চলে যাবে।এমন সময় কেউ একজন ক্লাসে ঢুকে।

“হায়,জুনিয়র?হোয়াট’স আপ?”

নিতু ওমনি সামনে ফিরে তাকালো।দেখলো তাদের সেই সিনিয়র রিহান ভাইয়া!”

চলবে…
(দিতে পারিনি দুঃখিত!এক্সাম সামনে।আর এক্সাম পনেরো তারিখ হওয়ার কথা ছিল।কিন্তু তা সাডেন আজ কেন্সেল করে দিয়েছে।তাই আজ সেই খুশিতে লিখে ফেললাম।লেখা রেগুলার দেবার চেষ্টা করবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here