মনের কোণে🥀
#পর্ব_২
আফনান লারা
.
নাবিল বুঝতে পারলো এই মেয়েটা ঝামেলা তৈরি করে বিরাট জোট পাকিয়ে ফেলতে পারে।তাই হাতটা ছেড়ে দিলো।
মেয়েটা জুতো জোড়া জড়িয়ে পিছোতে পিছোতে বললো,’যান এখান থেকে!দিনদুপুরে জুতা নিয়ে কাড়াকাড়ি করে,জুতার জন্য কি মরে যাবেন নাকি?’
‘কত টাকা চাই তোমার?আমায় জুতোটা দিয়ে দাও।আমি এর টাকা তোমায় দিয়ে দেবো’
‘টাকা লাগবেনা,আমার জুতোটা লাগবো।এত বড় মহান ব্যাক্তিত্ব দেখাতে হবে না আপনাকে।বাই’
নাবিল এবার খপ করে জুতাটা আবারও ধরে ফেললো।
‘আজব তো আপনি!আমি কিন্তু এই জুতা ছেড়ে যাবনা।আমার সাথে হাতাহাতিতে পারবেন ও না,আমার কিন্তু অভ্যাস আছে এসবের’
নাবিল ফোন বের করে ছবি তুলতে তুলতে বললো,’নাম বলো তোমার,পরিচয় দাও।ক বেলা ভাত না পেয়ে চুরিতে ঢুকছো ওসব বলো।ভিউ অনেক আসবে’
‘খুব খারাপ লোক তো আপনি!জুতার জন্য মানুষ এমন পাবলিসিটি করে??আশ্চর্য! ‘
‘পাবলিসিটি??? আরে বাহ! এ দেখি শিক্ষিত চোর!তারপর বলো শিক্ষিত হবার পরেই কি পথে বসেছো?’
মেয়েটা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে নাবিলের দিকে।হাত থেকে জুতাটা নিচে ছেড়ে দিলো এর কিছুক্ষণ পর।নাবিল নিচু হয়ে জুতাটা পরে নিলো পায়ে।মাথা তুলে সামনে চেয়ে দেখলো মেয়েটা নেই কোথাও।হাসি দিয়ে নাবিল তার ফোনের দিকে তাকাতে গিয়ে খেয়াল করলো ফোনটাই গায়েব।
কত বড় লস করে গেলো মেয়েটা।এবার মনে হচ্ছে জুতা দিলেই ভাল হতো।এখন আবার সিম তোলার ভেজাল করতে হবে।’
—–
‘এই নাও!আজকের জিনিস দেখলে তোমার অন্যদের জিনিসের আশায় বসে থাকতে ইচ্ছে করবেনা’
‘ফোনটার দাম পনেরো আঠারো হাজারের উপরে হবে তবে আমি বারো তেরো হাজারে বেচতে পারবো।নে পানি খা।এটাতে কিন্তু ৩ হাজার দিব ‘
‘নিজেও বেচতে পারতাম।তোমার হাতে দিছি।তিনে হবেনা।বাড়াও’
‘আচ্ছা চার দিব?রাজি?’
মেয়েটা চেয়ারে বসে পানির বোতল নিয়ে পানি খেয়ে জামিলা বেগমের দিকে চেয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।জামিলা মুখে পান পুরে ফোনটাকে উল্টেপাল্টে দেখছে’
—
ছাত্রাবাসের কাছাকাছি আসতেই নাবিলের আবার দেখা হয়ে গেলো জুনায়েদ আর রামিশের সাথে।ছাত্রাবাসের সামনে একটা চায়ের দোকান ছিল মসজিদের কাছে ঘেঁষেই।নাবিলকে দেখে হাত দিয়ে ইশারা করে ডাক দিয়েছে তারা।
ভর দুপুরে তাদের দুজনের হাতে রঙ চা।নাবিল ওদের সাথে বসতেই দোকানদার এক কাপ চা ওর হাতেও ধরিয়ে দিয়েছে।তার নাম মতিন।এই দোকান চালান দীর্ঘ সাতাশ বছর ধরে।বাপ দাদার সম্পত্তি।এই ছাত্রাবাসের সকলকে তার চেনা,আজ নাবিলকেও চিনে নিলেন।
‘বাবা তুমি নতুন নাকি এখানে?’
‘হুম’
‘তাহলে তো তোমায় দিনে পাঁচবার আমার হাতের চা খাইতেই হবে নাহলে কিন্তু আমি রাতের বেলা সুযোগ সুবিধা পাইতে দিমুনা’
নাবিল চায়ে চুমুক দিচ্ছিলো।মতিন ভাইয়ের কথা শুনে কপাল কুঁচকে তাকালো।
জুনায়েদ হেসে বললো,’রাতের সুযোগ সুবিধা কি তোমাকে আজই বুঝিয়ে দেবো।তুমিও তো এখানে থাকবে তাইনা?’
‘হ্যাঁ’
‘কত লোক আসিলো,গেলো
পেলো তাদের জুতাখানা
পাইলাম না কেবল আমি
হে চোর,তুমি মোরে করিয়াছো অতিষ্ঠ ‘
জুনায়েদ রামিশের কাঁধে হাত রেখে চায়ের শেষ চুমুকটা নিয়ে কাপ রেখে বললো,’পকেটমানি পেলে তোকে জুতা কিনে দেবো।ভাবিস না।এখন ওয়াশরুমের জুতা পরে কাটা।
তা ভাই তোমার জুতা পাবার অসাধ্য সাধন করলে কি করে?’
নাবিল ছেঁড়া ব্যাগের দিকে চেয়ে থেকে বললো,’তোমরা যে বলেছিলে যেটা ছিল ওটাও হারাবো।কথা মিলে গেছে,
ফোন হারিয়ে ফেলেছি।তবে জুতা পেলাম এটাতেই খুশি হলাম’
‘ফোন হারিয়ে তুমি এত স্বাভাবিক?আমি তোমার জায়গায় হলে কাঁদিয়ে ভাসিয়ে ফেলতাম।একেবারে ছাত্রাবাস থেকে চন্দ্রাঘাট পর্যন্ত।’
—-
অনাবিল মেনশনের মালিক জনাব অনাবিল ওসমান দুপুর তিনটা দশ মিনিটে তার বাসায় ঢুকেছেন।সারা বাসায় নিস্তব্ধতা বিদ্যমান।সবার মুখের ভাষার আজ কোনো শব্দ নেই।
ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রয়িং রুমে বসেছেন অনাবিল।একটা খাম ছিঁড়ে ভেতরের কাগজটা দেখে সেটাকে সেন্টার টেবিলে রেখে বললেন,’সামিয়া নাবিলকে ডাকো।ওর পাসপোর্ট এসে গেছে।পরের সপ্তাহে ফ্লাইট।বলো ভিমরোতি ছেড়ে কাজে মনযোগ দিতে।’
সামিয়া নাবিলের মা।অনাবিলের কথা শুনে হাতে পানির গ্লাস নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডাইনিং টেবিল ঘেঁষে।
‘কি হলো সামিয়া?কথা কি শুনোনি?’
নাহিদ ফুটবল হাতে লুকিয়ে লুকিয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছিল তখন। দুপুরে বাবা খেলতে দেয়না বলে লুকিয়ে যাচ্ছিলো সে।
‘নাহি দাঁড়াও’
নাহিদ থমকে জিভে কামড় দিয়ে চুপ করে আছে।জনাব অনাবিল এগিয়ে এসে ওর দিকে লক্ষ করে বললেন,’নাবিল কোথায়?’
‘জানিনা! কিছু জানিনা’
‘নাবিলের ব্যাপারে যদি কেউ এক বিন্দু ও কিছু জেনে থাকে তবে সেটা তুমি।বলবে নাকি মারতাম?’
নাহিদ ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে।সামিয়া এগিয়ে এসে বললো,’বাদ দিন না,ও হয়ত জানেনা’
‘তুমি কিছু বলবেনা।তোমার আদরে দুটো বিগড়ে গেছে।কিরকম বিগড়ে গেছে তা ও আজ বাসায় আসলে বুঝতে পারবো’
‘ভাইয়া আর আসবেনা।চলে গেছে অনেকদূর’
‘কোথায় গেছে?’
‘সানফ্লাওয়ার বাসে উঠতে দেখেছি, আর কিছু দেখিনি’
জনাব অনাবিল হনহনিয়ে গিয়ে সোফায় বসলেন আবার।ফোন নিয়ে গার্ডকে কল করেছেন।গার্ড ছুটে আসার পর ওকে বললেন বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চেক করতে।স্টেশন দেখা যায় কিনা’
—-
একটা রুমে চারটা বেড।বাম পাশে একটা তার উপরে আরেকটা।ডান পাশেও একই।মাঝখানে দুটো জানালা।জানালার সামনে লম্বা টেবিল।হাঁটার জন্য চিকন জায়গা আছে অবশ্য।
মানে পরবো আর ঘুমাবো।আর কোনো কিছুর জায়গা নাই।
নাবিল ব্যাগ রপখে জানালাটা দেখতে চাইলো।তাই টেবিলে উঠে বসে জানালায় হাত রেখে বাহিরে চেয়ে দক্ষিন পশ্চিমে চোখ বুলিয়ে বললো,’দূরে ওটা কি স্কুল?’
জুনায়েদ গেঞ্জি পাল্টাতে পাল্টাতে বললো,’নাহ।গার্লস হোস্টেল।আমাদের ছাত্রাবাসের মেইন মালিক বুদ্ধি করে গার্লস হোস্টেলের কাছাকাছি ছাত্রাবাস তৈরি করেছে যাতে করে ছেলেরা সকাল -বিকাল মেয়ে দেখে পড়াশুনায় মন দিতে পারে।একটা মোটিভেশন আর কি’
নাবিল মাথা বাঁকিয়ে বললো,’কেমন মোটিভেশন? ‘
‘ঐ যে বিসিএস ক্যাডার হলে সুন্দরী বউ পাওয়া যায়,এইরকম গার্লস হোস্টেলের সুন্দর একটি মেয়ের জামাই হওয়া যায়, সেটা হলো মোটিভেশন।’
নাবিল তাচ্ছিল্য করে হেসে টেবিল থেকে নেমে বসলো বিছানায়।বিকালে বের হয়ে একটা ফোন কিনতে হবে।আম্মুকে বলেছিল বিশ হাজার টাকায় এক মাস চলবে।এখন এই টাকায় ফোন কিনে কল করে বলতে হবে বিশ হাজার আবার পাঠাতে।শুরতেই চোরের খপ্পরে পড়তে হলো।
‘ঐ মেয়েকে আর একবার হাতের নাগাড়ে পাই আমি।আমার ফোন নিছেনা??আমি ওর হাতে যা থাকবে তা নিয়ে চলে আসবো।’
জুনায়েদ গামছা কাঁধে ঝুলিয়ে বললো,’শোনো আজকে রবিবার,আজকের মেনু হলো বোয়াল মাছের ঝোল,আর দুই বালতি পানি মেশানো মসুর ডাল সাথে বিলাতি ধনেপাতার ভর্তা।খেতে এসো নাহলে এগুলো ও জুটবেনা।শেষের খাবারে কণা,বালু থাকে।আগের গুলা খাওয়ার চেষ্টা করবে’
নাবিলকে সব বুঝিয়ে জুনায়েদ চলে গেছে।রামিশ তার সিটে বসে কবিতা লিখছে আর গুনগুন করে।ফোন ছাড়া মন টিকেনা কোথাও নাবিলের।ইচ্ছে করে এখনই গিয়ে একটা ফোন কিনে আনতে।সিম কিনে আনতে।সিম তুলতে গেলে কাগজপত্র লাগবে, সব তো বাসায়।
তার চেয়ে বরং নতুন সিম নিতে হবে।একদিনে দুটো সিম গেলো।
‘ফোনের দোকান খুলবে বিকেলে।ততক্ষণে সময় কি করে কাটাই!!’
রামিশ কবিতার নোটবুকটা রেখে চশমা খুলে চোখ কচলাতে কচলাতে বললো,’ওহে বালক!সময় না কাটলে ছাদে যাও।লাল পরী, নীল পরী,সবুজ পরী, হলুদ পরী,ডানাকাটা পরী সব কিছুর দেখা পাবে।জলদি যাও।এখনই তো সসময়।দুপুর বেলা,রোদে খাঁ খাঁ!!রমনীরা ভেজা চুল শুকাতে ছাদে এসে কিচিরমিচির করবে’
‘এই ছাদে?’
রামিশ ড্রয়ার খুলে দূরবীন বের করে নাবিলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,’চলো যাই।আমিও রমনী দেখবো আর কবিতা লিখবো।কবিতার নাম হবে’রমনী ধরণী কল্যানী’
কিন্তু রমনীরা এই ছাদে না,ঐ ছাদে।দূরবীন দিয়ে সামনে মনে হয়।
ইশ!! মাঝে মাঝে মনে হয় ভেজা চুলের গন্ধ আমার চোখের সামনে।হাত দিয়ে ছোঁয়া যাবে!!’
—-
‘লিখি??এই লিখি?’
‘কিই??কান আছে,শুনতেছি।বলে ফেল’
‘বিকালে যে রচনা জমা দিতে যেতে হবে ভার্সিটিতে, মনে নেই?দুপুরে না খেয়ে ঘুমাচ্ছিস কেন?’
‘তো কি করবো?বাসার প্যারা থেকে বেরিয়ে হোস্টেলে এসেও শান্তি নাই দেখছি।তোর মতন একটা বেস্টু আম্মুর মতন সারাদিন কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করবেই’
‘রচনা প্রতিযোগিতায় জিততে হবেনা?তুই তো লিখছিলি দেখলাম।’
‘সময় হলে দেবো।আগে ভাগে ভার্সিটি গিয়ে টইটই করে ঘোরার শখ নাই আমার।তোর মন চাইলে যা।আমায় একটু রেস্ট নিতে দে।এমনিতেও দেড় ঘন্টা…
‘দেড় ঘন্টা?’
‘না কিছুনা,যা তুই।আমি একটু ঘুমাবো।বিকাল চারটার দিকে তুলে দিস’
চলবে♥