#এক_চিলতে_রোদ।
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০৮
আগুন চলন্ত অবস্থায় লক্ষ্য করল মেয়েটা আগুনের দিকে তাকিয়ে আছে।আগুনের ইচ্ছে করল মেয়েটার সাথে কথা বলবে।কিন্তু গার্ড গুলো তো কথা বলতে দেবে না।তাই আগুন চলে গেল বাসায়।
পরের দিন সকালে ভার্সিটিতে গেল।সাথে তিনজন গার্ড তো আছেই।আগুনের এসব আর ভালো লাগছে না।ভার্সিটি আর বাসা ছাড়া কোথাও যেতে পারেনা।কারো সাথে কথা বলতে পারে না।যেন কোনো কাচায় বন্ধী সে।প্রথম একটা মাস এভাবে কেটে গেল।আর নিতে পারছে না এই বন্ধী জীবন।
রাতে খেয়ে বাবাকে বলল…..
আগুনঃবাবা একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
–হুম বল কি কথা?
আগুনঃআমার বন্ধী জীবন আর ভালো লাগে না।সারাদিন বাইরের কারো সাথে কথা বলতে পারি না। বাইরে একা ঘুরতে পারি না।আমার বন্ধী জীবন চাই না।আমি পুরোপুরি সুস্থ এখন। তাই আমি চাই ভার্সিটিতে সপ্তাহে দুই দিন যাব আর তিন দিন অফিস করব।আর দুই দিন বাইরে গাড়ি নিয়ে ঘুরব।চাইলে সাথে ড্রাইভার থাকবে।
–না এটা পসিবল না।তোর সিকিউরিটি ছাড়া বের হতে দিতে পারি না।
আগুনঃবাবা কেন বুঝতেছ না আমি বন্ধী জীবনে কিছু করতে পারছি না।দেখতে পারছি না।ঘুমটাও ঠিক ভাবে হয় না।
আগুন বাবার সাথে প্রায় এক ঘন্টা তর্ক করল।শেষে আগুনের বাবা আগুনের কথায় রাজি হল তাতেও শর্ত দিল।যা ইচ্ছে করবে যেখানে খুশি যাবে তবে গার্ড তিন জন সাথে থাকবে।
আগুন তার বাবার সাথে আর তর্ক না করে রাজি হয়ে গেল।আর কতই বা তর্ক করা যায়। কাল থেকে আগুন ভার্সিটিতে যাবে তবে গার্ড আছে।পরদিন আগুন ভার্সিটিতে গেল।দুইটা কালো গাড়ি প্রথমটাতে আগুন তার ড্রাইভার আর একজন বড়িগার্ড।পরপর গাড়িতে দুইজন গার্ড। আগুন ভার্সিটিতে যেতেই সে মেয়েটাকে দেখল।যার সাথে আগুন কথা বলতে চেয়েছিল।মেয়েটা আগুনের দিকে আসতে চাইলে গার্ড বাঁধা দিল।আগুন হাতের ইশারায় মেয়েটাকে আসতে দিতে বলল।
আগুনঃকিছু বলতে চান মনে হচ্ছে?
–রবি আমি রিহি….
আগুনঃরবি!কে রবি?
–রবি তুমি আমাকে চিনছ না আর তোমার নামই তো রবি।
আগুনঃদেখেন মিস, আমি কোনো রবি নয় আমি আগুন চৌধুরী। হয়তো আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
–না আমার ভুল হচ্ছে না।তুমি আগুন নয় তুমি রবি।
আগুনঃআপনি এখন আসুন।
আগুন রিহিকে তাড়িয়ে দিল।রিহি আগুনের সাথে আরেকটু কথা বলতে চাইলো কিন্তু আগুন তা করতে দেয় নি।চলে গেল ক্লাসে রিহিও সে ক্লাসে আছে।অনেক চেষ্টা করছে রিহি আগুনের সাথে কথা বলতে কিন্তু পারছে না।রহি ভালো করে জানে আগুন-ই রবি কিন্তু আগুন তো জানে না তার নাম রবি। মেমোরি যে পুরো লস হয়ে গেছে সেটা তো আর রিহি জানে না।
ক্লাস শেষ করে আগুন বাসায় চলে এলো।রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে গেল।রাতে খেয়ে বাবাকে অফিসে যাবে বলল।বাবাও রাজি হয়ে গেল।আগুন পরদিন নিজের গাড়ি নিয়ে চলে গেল।অফিসের সব কাজ বুঝিয়ে দিছে তার বাবা।আগুন ভাবলো পাকাপোক্ত ভাবে কাজ করলে কেমন হয়?
পরের দিন আগুনের সাথে অফিসের একটা মিটিং আছে।আগুন রেডি হয়ে নিলো।মিটিং রুমে সবাই বসে আছে কখন আগুন চৌধুরী আসবে সে অপেক্ষায়। মিটিংয়ে বাইরের দুই জন মানুষ আছে।ছোট একটা কোম্পানি তারা চালায়।আগুন সবাইকে একসাথে নিয়ে মিটিং করবে তাই সবাই একসাথে বসে রইল।আগুন চৌধুরীকে সবসই দেখে নি তবে কয়েক জন দেখেছে।আগুন একটু ইচ্ছে করে দেরি করে আসলো। প্রায় ৫ মিনিট পর আসলো।সবাই দাঁড়িয়ে গেল।তবে আগুনের চেহারাটা সবাই ভালো করে দেখতে পাই নি।যখন আগুন নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল সাথে সাথে দুইজন মেয়ে দাড়িয়ে গেল।আগুন তাদের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক।আগুন হয়তো ভাবছে তারা বস হিসেবে আগুনকে মানতে পারছে না।আগুন তাদের দুই জনকে বলল..
আগুনঃকি হলো আপনার দাঁড়িয়ে গেলেন কেন?
–রবি…
আগুনঃরবি!কে রবি?
–রবি তুমি আমাদের চিনতে পরছ না?আমি ইশিত।
আগুনঃআমি রবি নয় আমি আগুন চৌধুরী।
–না তোমার ভুল হচ্ছে তুমি রবি।
~~না ওর ভুল হচ্ছে না তুমি রবি।
আগুনঃদেখেন আপনার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে আমি কোনো রবি নয় আর আমার ভুল হচ্ছে না।এমনও হতে পারে হয়তো আমার মতো কেউ আছে যার নাম রবি আপনারা হয়তো আমাকে তাই রবি ভাবছেন।
আগুনের কথা শুনে ইশিতা আর তার ফ্রেন্ড বসে পড়ল। হতেও পারে। ইশিতা তাও কেন যেন বিশ্বাস করতে পারছে না।
মিটিং শেষ করে আগুন নিজের বাসায় চলে গেলো।তার বাবা খুব খুশি হয়েছে তার মিটিং করা দেখে। খুব বিচক্ষণতার সাথে আগুনের ছুটে চলা দেখে আগুনের বাবা অবাক।
ইশিতা আগুনকে দেখার পর থেকে অস্থিরতা অনুভব করছে।ইশিতা রবির বাসায় গিয়ে দরজায় নক করতে অহনা এসে দরজা খুলে দিল।অহনা ইশিতাকে ভেতরে নিয়ে গেল।আপু নিজের রুম থেকে বের হয়ে এলো। রবি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে রবির মা ও একসাথে থাকে।
ইশিতা সবাইকে আসতে বলল।মা সহ সবাই আসলো একসাথে বসল।ইশিতা কিছু বলতে চাই তা আপু খুব ভালো করে বুঝতে পারছে।আপু ইশিতাকে জিজ্ঞেস করল কি বলবে…
ইশিতাঃআমি জানি এখন যে কথাটা বলব তা শুনলে আপনারা সবাই অনেক শক হতে পারেন।কিন্তু না বললে আমার খুব অস্তির লাগছে।
আপুঃঠিক আছে বল।
ইশিতাঃরবি বেঁচে আছে।
ইশিতার কথা শুনে সবাই ইশিতার দিকে তাকালো।সবাই যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।আপু ইশিতাকে বলল….
আপুঃকি বলছ রবিকে দেখেছ তুমি?
ইশিতাঃহ্যাঁ তবে এখন রবি নয় অন্য নামে আছে।
অহনাঃকোথায় দেখছ বল আমি যাব রবির কাছে।(অশ্রু ভরা চোখে)
ইশিতাঃএখন রবি নেউ আগুন চৌধুরী সে।পাশের শহরের সব থেকে বড় বিজনেস ম্যানের ছেলে।রফিক সাহেব ছেলে হয়ে আছে।
অহনাঃকি বলছিস এসব?আমি তার সাথে দেখা করব।
ইশিতাঃকখনো সম্ভব না।আর দেখা করতে পারলেও লাভ নেই। আমার যতটুকু মনে হয় রবি নিজের সব অতীত ভুলে গেছে।এখন নতুন ভাবে চিনতেছে নিজেকে।
সবাই রবির সাথে দেখা করার জন্য পাগল প্রায়।শেষে সিন্ধান্ত নিলো দেখা করবে রবির সাথে।তিনদিন পর আরে একবার দেখা করার সুযোগ আছে।আগুন চৌধুরী তিন দিন পর অফিসে আসবে।তখন দেখা করা যাবে।আর তখন প্রমাণ হয়ে যাবে কে রবি আর কে আগুন চৌধুরী। ইশিতা তারপর চলে গেল নিজের বাসায়।এই দিকে অহনা ভাবছে রবি যদি বেঁচে থাকে তাহলে তার সাথে যোগাযোগ করে নাই কেন?হঠাৎ ছোট্ট একটা বাচ্চার আওয়াজ শুনে অহনা দৌড়ে নিজের রুমে যায়।বাচ্চাটা আর কারো নয় রবি আর অহনার বাচ্চা। দেড়টা বছর পার হতে বলল রবি ছাড়া সবার।বাচ্চার বয়স প্রায় ছয় মাস।নাম রেখেছে অহশি।সে কান্না করতে অহনাকে তাঁকে কোলে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
আগুন রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে গেল। সকালে ভার্সিটিতে যেতে হবে তাই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে নাস্তা করে নিলো।নিজের গাড়ি নিয়ে ভর্সিটিতে চলে গেল।অনেক দিন ভার্সিটির ক্লাস করছে সে।কিন্তু একটা ভালো ফ্রেন্ড নেই তা কেমন এক অদ্ভুত ব্যাপার।তাই ভাবলো একটা ফ্রেন্ড করা দরকার। একটা ছেলেকে আগুন ভালোই লাগে।ছেলেটার আচার-আচরণ অনেক ভালো।আগুন ছেলেটার পাশে গিয়ে বসল।
ছেলেটাকে দেখে তত বড়লোক মনে হয় না।আগুন তার পাশে বসতে সে একটু নড়ে বসল।আগুন বলল…
আগুনঃকেমন আছ আমি আগুন।
–জ্বি ভালো আপনি কেমন আছেন?
আগুনঃআপনি কে?আরে ভাই আমি তো তোমার ফ্রেন্ড আপনি করে বলার কি আছে?
—ভাই আপনি যে বড় লোক তাতে আমার পাশে এসে বসছেন তাতে অনেক বেশি।কিভাবে তুমি করে বলল…
আগুনঃতাহলে তুই করে বলবে।
–মানে?
আগুনঃতাহলে শোন।আমার ভার্সিটিতে ভালো কোনো ফ্রেন্ড নেই।আমি চাই তুমি আমার ফ্রেন্ড হও সবার থেকে আলাদা।অন্য দশ জন থেকেও আলাদা।
–ভাই কি বলেন এসব আপনি কোথায় আর আমি কোথায়?
আগুনঃআরে ভাই ফ্রেন্ডশিপে ধনী গরীব কি আসে যায় বল?
–তাও বেমানান।
আগুনঃমানিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব আমার।তাহলে এখন থেকে আমরা ফ্রেন্ড…(হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
ছেলেটা আগুনের সাথে হাত মিলাতে চাচ্ছে কিন্তু তার হাত কাঁপছে। আগুন নিজে থেকে তার হাত ধরে ফেললো।হয়ে গেল বন্ধুত্ব….
আগুনঃতোমার নামটা যেন কি?
–আকাশ।
আগুনঃতাহলে আকাশ আমরা এখন থেকে ফ্রেন্ড।
—হুম।
আকাশের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে আগুনের কিছু টা ভালো লাগছে। অনেক দিন পর একটা বাইরের মানুষের সাথে কথা হবে।ক্লাস শেষ করে আগুন নিজের বাসায় চলে গেল।
আজ অফিসে যাওয়ার কথা কিন্তু একটু দেরি হয়ে গেল।এক ঘন্টা পর অফিসে গেল।আগুন অফি অফিসে গিয়ে নিজের রুমে গিয়ে বসল।পিয়নকে চা দিতে বলল সে চা দিল।আগুন চা খেয়ে এক ঘন্টা পর মিটিং আয়োজন করার কথা বললো।
এক ঘন্টা পর নির্দিষ্ট সময়ে আগুন মিটিং রুমে গেল।সুস্থমতে মিটিং শেষ করে বাইরে এসে দেখল একটা মেয়ে তার জন্য অপেক্ষা করতেছে। আগুন নিজের রুমে চলে গেল আর মেয়েটাকে ভেতরে আসতে বললো। একটু পর মেয়েটা এসে আগুন কে দেখে জড়িয়ে ধরল। হঠাৎ এমন কাজে আগুন অবাক হয়ে গেল।আগুন মেয়েটা থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু মেয়েটা খুব শক্ত করে আগুনকে জড়িয়ে ধরল।শেষে আগুন মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। সরাসরি সাথে সাথে মেয়েটা বলে উঠলো…
—রবি আমাকে চিনতে পারোনি আমি অহনা তোমার বউ।
আগুনঃ কি যা তা বলছেন আমার বউ আমি তো বিয়ে করে নি?
— না তুমি মিথ্যা বলো না তুমি বিয়ে করছ এবং আমাকে করছো।
আগুনঃ দেখুন আপনার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে হয়তো আপনি অন্য কারো সাথে আমাকে মিলিয়ে ফেলছেন।
— না আমি একদম ঠিকই বলছি তুমি রবি মিথ্যা বলো না।
আগুনঃ আমি জানিনা সবাই আমাকে এই নামে কেন ডাকছে? আমার নাম হচ্ছে আগুন।
— তুমি আগুন নয় তুমি রবি হয়তো তুমি সবকিছু ভুলে গেছো।
আগুনঃ ঠিক আছে আপনি তাহলে প্রমাণ করুন যে আমি রবি।
— আমি প্রমাণ করতে পারব কারণ তোমার প্রতিটি শিরা-উপশিরায় তোমার প্রতিটা শরীরে কোথায় কি আছে সবকিছু আমি জানি।
আগুনঃ কি বলছেন পুরো শরীরে কি আছে আপনি জানেন মানে?
— কারণ আমি তো বউ রবি।
আগুন এখন নিজেই কনফিউজড হয়ে গেল।কারণ নতুন কারো সাথে দেখ হলে সে রবি বলছে আর তার বাবা বলছে আগুন চৌধুরী। আসলে সে কে আগুন না রবি?
আগুনঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি মানলাম আমি রবি। সেটা আমি বুঝিয়ে দেব কালকে।আপনি কালকে অফিসে আসবেন আমি বাবাকে নিয়ে আসব তখন প্রমাণ হয়ে যাবে আমি আসলে কে আগুন না রবি।
— রবি তুমি আমাকে এখনো চিনতে পারো নি?
আগুনঃরবি হলে চিনতো কিন্তু আগুন হলে নয়।আসুন এখন কালকে সকালে চলে আসবেন আমার বাবাও আসবে কাল।তখন প্রমাণ করে দেব আমি আগুন চৌধুরী।
অহনা কাঁদতে কাঁদতে অফিস থেকে চলে গেল।বাসায় গিয়ে রবির মা কে বলল….
অহনাঃরবি বেঁচে আছে আর ভালো আছে কিন্তু আমাদের চিনতে পারছে না।
মাঃ ইশিতাও তো বলল কাউকে চেনে না।
অহনাঃকালকে যেতে বলেছে আমি প্রমাণ করে দেব সে আগুন নয়।
মাঃকাল যেতে বলছে?
অহনাঃহ্যা মা।আপনি আর আপুও যাবেন আমার সাথে।
মাঃঅবশ্যই যাব আমার ছেলেকে দেখতে।
আগুন বাসায় গিয়ে বাবাকে কালকে অফিসে যেতে বলল। কাল গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বলে বাবাকে রাজি করালো।পরদিন…..
#To_be_continue…….
#RK9023DXWC
#অনুমতি_ছাড়া_কপি_করা_নিষেধ।
#গল্পটা_কেমন_হল_জানাবেন।
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।