#এক_চিলতে_রোদ।
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০৬

মেয়েটা রবির সামনে আসতে রবি বুঝতে পারল এটা আর কেউ নয় স্বয়ং রিহি।রিহিকে দেখে রবি একটু ভয় পেলো কারণ এতদিন মেয়েটা যা করেছে সব খুব ভয়ঙ্কর ভাবে করেছে।যদি রবির সাথে কিছু করে তাহলে সে কিছু করতে পারবে না।

রবি রিহির দিকে তাকিয়ে আছে। রিহি সামনে এসে একটা চেয়ার নিয়ে রবির সামনে বসে পড়ল।রিহিকে দেখে রবির পানির তৃষ্ণা চলে গেল।হাতে পানির বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল রিহির সামনে।রিহি রবিকে বলল…
রিহিঃআমার লোক গুলো বলেছিল এই শহর ছেড়ে যেতে তাও গেলি না।
রবিঃরিহি তুমি এসবের পেছনে?
রিহিঃহ্যাঁ আমি। তোকে কখনো কোথাও সুখে থাকতে দেব না।
রবিঃকেন আমার পথের বাঁধা হচ্ছ?
রিহিঃতোর বন্ধুকে দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছিলি তাই।
রবিঃতোমার অপরাধের শাস্তি তুমি পেলে সেখানে আমি কি করব?আর আমি তো বলি নি রাশেদকে তোমার উপর প্রতিশোধ নিতে।
রিহিঃসেটা তুই আর তোর বন্ধু জানিস।আজ থেকে তোর ঘুম আমি নষ্ট করে দেব।যেখানে যাবি শুধু আমাকে দেখবি।চাইলে তোকে এখানে মেরে দিতে পারতাম কিন্তু আমি তোকে তিলে তিলে মারব।তোর ভালোবাসার মানুষ কে তোর কাছ থেকে কেড়ে নেব।একটু একটু করে শেষ হয়ে যাবি তুই।

রবি রিহির কথা গুলো শুনছে তবে কিছু বলছে না।হঠাৎ রিহি বলে ওঠল তুই এখন চলে যা।তোকে অর্ধ মৃত বানিয়ে রাখবো আমি।রিহির কথার কোনো জবাব দিল না রবি।কারণ সে জানে কিছু বললে বিপদ আরো বেড়ে যাবে।পানির বোতল থেকে একটু পানি খেল।রিহি যেদিক থেকে আসছে সে পথ দিয়ে রিহি বের হয়ে গেল।পেছন পেছন রবিও বের হয়ে গেলো।

পকেট থেকে ফোনটা বের করে রাশেদকে ফোন দিয়ে রিহির কথা গুলো বলে।রাশেদ অবাক হয়ে যায় কথা গুলো শুনে।হঠাৎ রাশেদ ফোনের ওপাশে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পেলো।রবিকে ডেকে যাচ্ছে কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছে না।

রবি কথা বলছিল রাশেদের সাথে হঠাৎ একটা ট্রাক এসে রবিকে ধাক্কা দেয়।ধাক্কা খেয়ে রবি রাস্তায় পড়ে যায়।মাথা দিয়ে অনেক রক্ত বের হচ্ছে কিন্তু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না।কারণ পুলিশ মামলা হতে পারে কেউ তো আর ইচ্ছে করে পুলিশের সাথে নিজেকে জড়াবে না।

পড়ে রইলো রবির দেহ।সবাই খুব দ্রুত সেই স্থান ছেড়ে চলে গেল।ট্রাক ড্রাইভারের চেহারা রবি একটু করে দেখছিল চেনা একটা চেহারা দেখতে পেলো।একটা মিষ্টি রহস্যময়ী হাসি দিয়ে ট্রাক নিয়ে চলে গেল।

রাত এগারোটা চট্টগ্রাম শহরের সব থেকে বড় বিজনেস ম্যান রফিক সাহেব নিজের গাড়িতে করে বাসায় যাচ্ছে।হঠাৎ তার গাড়িটা থেমে যায়।রফিক সাহেব ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করে থেমে যাওয়ার কারণ।ড্রাইভার বলে সামনে একটা লোক আহত অবস্থায় পড়ে আছে।

রফিক সাহেব আর ড্রাইভার নেমে দেখে ছেলেটার মাথা আর পুরো শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হচ্ছে। তবে ছেলেটা এখনো বেঁচে আছে।

রফিক সাহেব নিজের গাড়িতে তুলে রবিকে হসপিটালে নিয়ে গেল।রক্ত বেশি বের হয়ে যাওয়ায় রবির অপারেশন করাতে হবে অনেক টাকা আর রক্তের প্রয়োজন।ডাক্তার রফিক সাহেবের কাছে এসে বললো….
ডাক্তারঃছেলেটার অপারেশন করাতে হবে।অনেক রক্ত বের হয়েছে।আর এখন অপারেশন না করালে বাঁচানো অসম্ভব।
–আপনি টাকা নিয়ে চিন্তা করবেন না যত তাড়াতাড়ি পারেন অপারেশনের ব্যবস্থা করেন।
ডাক্তারঃওকে আমরা অপারেশনের ব্যবস্থা করছি।কিন্তু যে পরিমাণ রক্ত দরকার তা আমাদের কাছে নেই।পাশের দুইটা হসপিটাল থেকে কিছু রক্ত পাওয়া যাবে।কিন্তু তার পরেও এক ব্যাগ রক্ত দরকার। রক্তের ব্যবস্থা করুন তাড়াতাড়ি।
–রক্তের গ্রুপ কি?
ডাক্তারঃO+ তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করুন।আর হ্যাঁ অপারেশনের অর্ধেক টাকা ব্যাংকে জমা করে দিন।

রফিক সাহেবের কোনো ছেলে নেই।তাই রবিকে দেখে উনার মায়া হলো তাই তো এত কিছু করছে তার জন্য। রফিক সাহেব সব কিছু করেও শেষে রক্ত মেলাতে পারেনা। হঠাৎ ড্রাইভার বলে ওঠল…
ড্রাইভারঃস্যার আপনার রক্তও তো O+.
–তাহলে তো আমি দিতে পারব?

রফিক সাহেব নিজের দেহের রক্ত রবিকে দিল।দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা অপারেশন করার পর ডাক্তার মলিন চেহারায় অপারেশন রুম থেকে বের হলো।রফিক সাহেব দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গেল….

–ডাক্তার রোগীর কি অবস্থা এখন?
ডাক্তারঃআচ্ছা ছেলেটা কে আর আপনার কি হয়?
–আমার কিছু হয় না।আবার অনেক কিছু হয়।
ডাক্তারঃঠিক বুঝলাম না বুঝিয়ে বলুন।
–ওটা আমার ছেলের মতো।বলুন সে এখন কেমন আছে?
ডাক্তারঃদেখেন আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি।এখন আমরা কিছু বলতে পারব না যতক্ষণ জ্ঞান না ফিরে।
–তো জ্ঞান কখন ফিরবে?
ডাক্তারঃএখন তো রাত দুইটা বাজে।জ্ঞান ফিরতে কম করে হলেও সকাল দশটা বাজবে।
–তাহলে এখন কি আমি রোগীকে এখানে রেখে যেতে পারি?
ডাক্তারঃহুম পারেন।তবে আমার মনে হয় এখানে রোগীর পাশে আপনার একটা লোক থাকা দরকার।
–ওকে আমি আমার ড্রাইভার কে রেখে যাব।রোগীর খেয়াল রাখবেন। আর এটা আমার কার্ড দরকার পড়লে কিংবা রোগীর জ্ঞান ফিরলে আমাকে জানাবেন।

ডাক্তার কার্ড নিয়ে দেখে এটা সাধারণ কোনো লোক নয়।এই শহরের সবচেয়ে বড় বিজনেস ম্যান।ডাক্তার অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।উনাকে এভাবে দেখবে তা কল্পনা ছিল।রফিক সাহেবকে ডাক্তার বলল…
ডাক্তারঃআচ্ছা রোগীকে আমরা দেখে রাখব।আপনার কোনো লোক থাকতে হবে না।

রফিক সাহেব ডাক্তারের দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিল।নিজের গাড়ি আর ড্রাইভার কে নিয়ে বাসায় চলে গেল।ডাক্তার অবাক হয়ে আছে এখনো যেখানে সামান্য কিছু টাকার জন্য মানুষ খুনও করে ফেলে সেখানে রফিক সাহেব নিজের টাকা দিয়ে নিজের দেহের রক্ত দিয়ে রবিকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেছে।

ডাক্তার রবিকে নিয়ে একটা আলাদা রুমে নিয়ে গেল যেটা খুব স্পেশাল একটা রুম।রফিক সাহেব বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে গেল।অনেক রাত হয়েছে তাই আর কিছু করে নি।সকালে ঘুম থেকে ওঠে নাস্তা করে নিলো।নাস্তা শেষ করতে হসপিটালের ডাক্তার ফোন দিয়ে রোগীর জ্ঞান ফেরার কথা বললে রফিক সাহেব নিজের গাড়ি নিয়ে বের হয়ে হসপিটালে যায়।ডাক্তারের কাছে যেতে দেখে ডাক্তার চেহারা কালো করে আছে।রফিক সাহেব কিছু টা ভয় পেলো।

কিছু টা সাহস জুগিয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করল রোগীর কি অবস্থা?
ডাক্তারঃরোগীর অবস্থা এখন একটু ভালো কিন্তু একটা সমস্যা হয়েছে।
–কি সমস্যা?
ডাক্তারঃরোগী নিজের সব অতীত ভুলে গেছে মানে পুরো মেমোরি লস হয়ে গেছে।
–তাহলে তো নিজেকেও চেনবে না?
ডাক্তারঃকখনো চেনবে না।আর আমাদের মনে হচ্ছে তার মেমোরি কখনো ফিরবে না।যদি ভবিষ্যতে বড় কোনো আঘাত পাই তাহলে ফিরতে পারে কিন্তু তার সম্ভবনা খুবই কম।
–তাহলে তাঁকে আমাদের নতুন পরিচয়ে গড়ে তুলতে হবে।
ডাক্তারঃচলোন রুগীর সাথে দেখা করবেন।

রফিক সাহেব আর ডাক্তার এগিয়ে চললো রবির রুমে। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে রবি শুয়ে আছে আর একটা নার্স তার পাশে বসে আছে।ডাক্তার নার্সকে জিজ্ঞেস করল রোগীর কি অবস্থা…
নার্সঃএখন ঘুমিয়ে আছে। ডাকলে ওঠবে ঘুম থেকে।

ডাক্তার রবিকে ডাকতে বলল নার্স ডেকে তুলল।রবির পুরো শরীর ব্যথা করছি তাই ভালো করে নাড়াচাড়া করতে পারছে না।ডাক্তার রবিকে জিজ্ঞেস করল….
ডাক্তারঃতোমার শরীর এখন কেমন?
–ভালো না অসহ্য ব্যথা করছে।মাথা বেশি ব্যথা করছে।
ডাক্তারঃভয় পেয়ো না সব ঠিক হয়ে যাবে।তোমার কি কিছু মনে পড়ছে কি হয়েছিল?
–না আমার মনে পড়ছে না।

হঠাৎ রবি উত্তেজিত হয়ে গেল।সে নিজে থেকে কিছু মনে করতে পারছে না।বিষটা তার খুব খারাপ লাগতে শুরু করল।ডাক্তারকে প্রশ্ন করল…

–আমি কে?কি নাম আমার আমার কি হয়ছে কিছু মনে পড়ছে না কেন?
ডাক্তারঃতুমি শান্ত হও সব মনে পড়বে তোমার।
রবি কোনো ভাবে শান্ত হচ্ছে না।তাই রফিক সাহেব রবিকে নিজের ছেলে পরিচয় দিল।যাতে একটু শান্ত হয়।রবি নিজের নাম কি জিজ্ঞেস করল রফিক সাহেবকে।কিন্তু রফিক সাহেব রবির নাম জানে না।আর নিজের ছেলে পরিচয় যখন দিছে তখন একটা ভালো নাম দেওয়া দরকার। তাই রফিক সাহেব রবিকে আগুন চৌধুরী বলে সম্মোধন করল।

একটা দূর্ঘটনার কারণে রবি হয়ে গেল আগুন।নিজকে আজ রবি থেকে সরিয়ে আগুন হতে হলো।
ডাক্তার বললো আগুনকে বিকেলে বাসায় নিয়ে যেতে।কারণ বাসায় যত তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে হসপিটালে তত তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে না।

রফিক সাহেব চিন্তা করলো তার তো কোনো ছেলে নেই তাহলে আগুনকে নিজের ছেলের মতো করে রাখতে সমস্যা কোথায়?রফিক সাহেব আর তার ছেলে একটা দূর্ঘটনায় মারা যায়। তারপর থেকে রফিক সাহেব একা থাকে।বাসায় একটা কাজের মেয়ে আর ড্রাইভার থাকে।কাজের মেয়েকে তিনি খুব আদর করেন।কাজের মেয়েটা পড়াশোনাও করে।

বিকাল হতে রফিক সাহেব আগুন কে নিজের বাসায় নিয়ে গেল।বাসাটা অনেক বড়।মানুষ তেমন নেই।রফিক সাহেব আগুনকে একটা রুমে নিয়ে গেল।আর সেটা তার রুম বললো। আগুন ভালো করে দাড়াতে পারছে না।তাই তার সেবা করার জন্য তিনটা নার্স নিয়ে এলো।যারা সারাক্ষণ আগুনের সাথে থাকবে।তিন জনকে সময় ভাগ করে দেওয়া হলো।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আগুনকে তারা সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করবে।

প্রায় দশ দিন পর আগুন অনেকটা সুস্থ হয়েছে।একটু হাঁটতে চাচ্ছে পা গুলো যেন নাড়াচাড়া করতে পারছে না।তাও চেষ্টা করতে চলছে এক পা দু পা করে দরজার পাশে গেল।আরেক পা সামনে যেতে পড়ে যেতে লাগলো পেছন থেকে কেউ ধরে ফেলে। আগুন পেছনে তাকিয়ে দেখে একটা নার্স যে বর্তমান সময়ে ডিউটিতে আছে।আগুন নার্সকে ধন্যবাদ দিল।নার্স আগুন কে আরেকটু হাঁটতে বলল।নার্স জানে আগুন যত নাড়াচাড়া করছে তত বেশি ব্যথা করছে কিন্তু নাড়াচাড়া না করলে আরো সমস্যা হবে।আগুন আরেকটু হেটে নিজের রুমে চলে গেল।নার্স পুরো পথটা আগুনের হাত ধরে ছিল।

আগুন নিজের বেডরুমে বসে আছে।নার্স কে টেবিলে থাকা একটা সাহিত্যের বই দিতে বলল।বইটা নিয়ে আগুন পড়া শুরু করল।হঠাৎ চারপাশে মেঘ ঘনিয়ে এলো হালকা ঝিরিঝিরে বৃষ্টি শুরু হলো।আগুনের শীত করছে বুঝতে পেরে নার্স একটা চাদর আগুনকে ঝাপিয়ে দিলো।

হালকা ঠান্ডা সাথে সাহিত্য পাঠ যেন এক সুন্দর মূহুর্ত গড়ে তুলল।হঠাৎ আগুনের চোখ লেগে গেল।হারিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে।বুকের উপর সাহিত্যের বইটা রেখেই ঘুমিয়ে গেল।নার্স বইটা নিয়ে কত পৃষ্ঠা পড়েছে দেখে রাখে।বইটা ঠিক আগের মতো টেবিলে রেখে দিল।আগুন ঘুমিয়ে গেল তাই নার্স বের হয়ে কাজের মেয়ের সাথে বসে টিভি দেখছে।কাজের মেয়ের নাম তানজি,পড়াশোনার পাশাপাশি এই বাসায় কাজ করে।

আগুন বসে আছে একটা অচেনা জায়গায়।কেন আসছে এখানে তা জানে না। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে তার বুকে চুরি মেরে দিল……….

#এই পর্বটা ডিলেট হয়ে গেছিল তাই দ্বিতীয় বার লিখতে হলো।

#To_be_continue…….
#RK9023DXWC
#অনুমতি_ছাড়া_কপি_করা_নিষেধ।
#গল্পটা_কেমন_হল_জানাবেন।
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here