#তুমি_থেকে_যাও_আমার_হয়ে।
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ১০(শেষ)

অনেক রাত হয়েছে অহনা।ঘুমিয়ে যাও রবির থেকে ভালো কাউকে তুমি পাবে।ভুলে যাও রবিকে।সানির সাথে তোমাকে খুব ভালো মানাবে….

অহনাঃপ্লিজ আপু এমন করে বলবেন না।আমি রবিকে ছাড়া আর কাউকে কল্পনাও জরতে পারি না।আপনি একটু কিছু করুন না।

আপুঃআচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়। অনেক রাত হয়েছে তুমি এখন ঘুমাও।

অহনাকে কিছু বলতে না দিয়ে আপু ফোন কেটে দিল।অহনার মনে অনেক কথা জমে ছিল।কিন্তু বলা হয় নি সবটা।অহনা কেঁদে কেঁদে রাতটা পার করে দিল।আগের থেকে কয়েক গুন বেশি মুখটা ফোলে গেছে।সকালে অহনার বাবা অহনাকে খেতে ডাকতে আসলে অহনা ঘুমাচ্ছে আর মুখে যেন রক্ত জমে গেছে।চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে।সারারাত কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে রক্ত বের হওয়ার শুরু হলো।
অহনার বাবা অহনার এই অবস্থা দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে নি।নিজের রুমে চলে গেল।আর কাকে যেন ফোন দিল….

অহনাকে হসপিটালে নিয়ে গেল।কারণ সকালে অহনা ঘুম থেকে উঠতে না পেরে তার মা গিয়ে দেখল সে অজ্ঞান হয়ে আছে।

তাদের পারিবারিক ডাক্তার অহনার রুম থেকে বের হয়ে এসে বলল রোগীর অবস্থা খুব খারাপ বাসায় কিছু করা যাবে না। তারপর অহনাকে হসপিটাল নিয়ে গেল।

হসপিটালে অহনার বাবা মা বসে আছে।অহনার জন্য তারা খুব চিন্তা করছে।ডাক্তার রুম থেকে বের হয়ে আসতে অহনার বাবা ডাক্তারের সামনে গিয়ে দাড়লো অহনার কি অবস্থা জানতে চাইলে ডাক্তার বলে রোগী এখন কিছু টা ঠিক আছে কিন্তু মনে হয় না বেশি সময় ঠিক থাকবে।

-কেন ডাক্তার কি হয়েছে আমার মেয়ের?
ডাক্তারঃআপনার মেয়ে যে কারণটা নিয়ে শক খেয়েছে আমাদের মনে হয় না সে সুস্থ হবে এত সহজে। আপনার মেয়ে রবি নামের কাউকে খুঁজতেছে।খুব তাড়াতাড়ি রবির সাথে আপনার মেয়ের দেখা করার ব্যবস্থা করুন।নয়তো আমাদের পক্ষে রোগীকে বাঁচানো পসিবল হবে না।

অহনার মা অহনার বাবাকে বলল যে করে হোক রবিকে নিয়ে আসতে।অহনার বাবাও বলল আজকেই রবিকে নিয়ে আসবে যেভাবে হউক।

এইদিকে রাশেদ রবিকে ফোন দিয়ে কথা বলছিল হঠাৎ কত গুলো লোক রবির বাসায় ঢুকে কাউকে কিছু না বলে রবির রুমে চলে গেল।আর রবিকে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে কোথায় যেন নিয়ে গেল।রবির হাতে থাকা ফোন লোক গুলো নিয়ে নিলো।এমন অবস্থা দেখে রবির বাসায় সবাই ভয় পেয়ে গেল।
আপু সাথে সাথে রাশেদকে ফোন দিল।রবিকে তুলে নিয়ে যাওয়া কথা জানালে রাশেদ দেখছি বলে ফোন কেটে দেয়।রাশেদ একটা ছেলে ফোন দিয়ে জানতে পারে রবিকে এমপির লোক তুলে নিয়ে গেছে।রাশেদ কথাটি আবার আপুকে জানায়।আপু বুঝতে পারে রবির সাথে কি হতে চলেছে।সাথে সাথে আপু গাড়ি নিয়ে চলে আসে শহরে।

রবিকে তারা নিয়ে যায় হসপিটালে।রবি এমপিকে দেখে বুঝতে পারে তাকে কে তুলে নিয়ে আসছে।রবি এমপিকে বলল…
রবিঃআঙ্কেল আপনি আমাকে তুলে এনেছেন?
–মাফ করে দিও বাবা।তোমাকে তুলে না আনলে তুমি আসতে না আর আমার মেয়েকেও বাঁচানো আমার পক্ষে পসিবল হচ্ছে না।কিছু একটা কর তুমি।
রবিঃকি হয়েছে আঙ্কেল?
–অহনা কাল রাতে কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে গেছে আর চোখ দিয়ে জলের পরিবর্তে রক্ত বের হয়েছে।

রবি কথাটা শুনতে নিজের মধ্যে এক অজনা ভয় কাজ করতে লাগলো।নিজের অজান্তেই রবির চোখে পানি জমে গেল।অহনা পাষাণ হতে পারে রবিতো আর পাষাণ নয়।

রবিঃআঙ্কেল অহনা কোথায় এখন?
–ঐ রুমটাতে আছে।(হাতে দেখিয়ে দিয়ে)

রবি দৌড়ে সে রুমটার কাছে গেল।রুমের দরজা খুলতে একটা নার্স রবিকে যেতে বাঁধা দিল।
নার্সঃকে আপনি আর এভাবে দৌড়ে এসেছেন কেন?
রবিঃআমি রবি।অহনার কাছে আসছি।
নার্সঃওহ তাহলে আপনি সে।যার জন্য পেশেন্টের এই অবস্থা?
রবিঃহুম আমি সেই। অহনা এখন কেমন আছে?
নার্সঃহুম এখন একটু ভালো আছে।তবে আপনি ঠিক সময় এসেছেন। আর কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরবে।আগের মতো হয়তো আপনাকে খুঁজবে।
রবিঃআমাকে খুজবে মানে?
নার্সঃ এই পর্যন্ত তিনবার জ্ঞান হারিয়েছে।যতবার জ্ঞান ফিরে আসছে ততবার আপনাকে খুঁজছে। সে হিসেবে এখনও হয়তো আপনাকে খুজতে পারে।
রবিঃআচ্ছা আমি কি এখন ওর সাথে কথা বলতে পারি?
নার্সঃএখন তো ঘুমিয়ে আছে। একটু পর ওঠে যাবে তখন কথা বলিয়েন।আর হ্যাঁ কোনো ভাবে বিরক্ত করা যাবে না।
রবিঃওকে নার্স…

নার্স বের হয়ে গেল রবি গিয়ে অহনার কাছে দাঁড়ালো। সাথে সাথে রবি পেছনে চলে গেল।অহনা কেমন যেম হয়ে গেছে।শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।অহনার এমন অবস্থার জন্য রবি নিজেকে দায়ী করছে।

কিন্তু রবিরও ভুল ছিল না অহনা রবিকে ফিরিয়ে দিছিল।রবি কিছু না ভেবে পাশে থাকা চেয়ার নিয়ে অহনার পাশে বসে পড়ল।রবির সাহস হচ্ছে না অহনার হাত ধরার।হঠাৎ একটু পর অহনার হাতের আঙ্গুল নড়ে ওঠলে রবি বুঝতে পারে অহনার ঘুম ভাঙছে।রবি দৌড়ে বের হয়ে ডাক্তার কে ডাক দিলে ডাক্তার এসে অহনার রুমে সামনে দাঁড়ায়। আর ভেতরে কাউকে না যেতে বলে।ডাক্তার রুমে গিয়ে দেখে অহনা এখন একটু ভালো আছে তবে শুধু রবি বলে ডাকছে।ডাক্তার অহনাকে আরেকটা ইনজেকশন দিয়ে বের হয়ে এলো।অহনার বাবা ডাক্তারের সামনে গিয়ে অহনার অবস্থা জানতে চাইলে ডাক্তার বলে”তার অবস্থা এখন ভালো তবে রবিকে ডাকছে।”

যখন সবাই ভেতরে যেতে যাবে তখন নার্স বাঁধা দিয়ে বলে শুধু একজন ঢুকতে পারবে তাও আবার রবি।বাকিরা আসলে রোগী বিরক্ত বোধ করতে পারে এমনকি শক খেয়ে অন্য সমস্যাও হতে পারে।

রবি ভেতরে যাওয়া আগে একবার অহনার বাবার দিকে তাকাল দেখল ওনার চোখের কোনে পানি জমে আছে।রবির দিকে অনুরোধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।যেন মনে হচ্ছে অহনাকে একটু শান্ত কর করতে আর তাঁকে সুস্থ করতে।

রবি অহনার বাবার দিকে একটা শুকনো মলিন হাসি দিয়ে অহনার রুমে ঢুকে গেল।অহনা উপরের দিকে চেয়ে আছে তাই রবিকে খেয়াল করে নি।রবি গিয়ে অহনার পাশে বসতে অহনা কারো উপস্থিত বুঝতে পেরে সেদিকে তাকিয়ে রবিকে দেখতে পাই।সাথে সাথে চোখের জল আর মুখের হাসি এক হয়ে যায়।অহনা রবিকে বলল….

অহনাঃআই এম সরি সরি।প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি।প্লিজ…
–তুমি আমার কথা শুন।একদম চিন্তা করবে না এসব নিয়ে।আর আমি মনে করি তুমি যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছ তাহলে আর ক্ষমা করতে হবে না।ভালোবাসা দিয়ে সব ভুল ঠিক করে দিব।
অহনাঃরবি একবার ভালোবাসি বল না।

–ভালোবাসি বলতে হয় না পাগলি বুঝে নিতে হয়।
অহনাঃতাও একবার বল না ভালোবাসি।
–হুম ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।এবার খুশি তো?
অহনাঃহুম অনেক বেশি।(হাত টা উঁচু করে আছে)
–কি হল হাত এমন উঁচু করে রাখছ কেন?
অহনাঃকিছু বুঝ না তাই না…(দুষ্টামি মাখা হাসি দিয়ে)

–হুম বুঝছি তো।কিন্তু বিয়ের আগে এসব ঠিক না।
অহনাঃএখন জড়িয়ে ধরবে কি না তাই বলো(একটু মিষ্টি মাখা ঝাড়ি দিয়ে)
–ধরতেই হবে?
অহনাঃআবার জিগায়….

দুইজন একসাথে হেসে ওঠল।রবি অহনাকে জড়িয়ে ধরল।অহনা বেড়ে শুয়ে আছে তাই রবি খুব হালকা ভাবে অহনাকে জড়িয়ে ধরেছে।যাতে অহনার কোনো সমস্যা না হয়।কতক্ষণ যে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ছিল তা জানে না।কারো গলার আওয়াজ শুনে একে অপরকে ছেড়ে দিল।রবি ফিরে দেখল রাশেদ আর আপু দাড়িয়ে আছে।

রাশেদঃকি ব্যাপার কতক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকতে হয়?
রাশেদ কথা শুনে রবি লজ্জায় লাল হয়ে গেল।কিছু টা অহনার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে বসল।

রাশেদঃ তোরা দুজনেই তো ঠিক হয়ে গেছিস?এখন বিয়ে করবি তো?

রবি কিছু না বলে অহনার দিকে চেয়ে রইলো।
আপুঃআচ্ছা এখন এসব বাদ দেয়।অহনার বাবা মা ওর সাথে দেখা করবে।তুই যা এখান থেকে।(রবিকে বলল)

রবি লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।তারপর অহনার বাবা মা রুমে ঢুকল।রবি বাইরে যাওয়া মিনিট দু’এক পর রাশেদ আসলো।রবি রাশেদকে জিজ্ঞেস করলো….
—তোরা এখানে কেন?কিভাবে জানিস আমি এখানে?
রাশেদঃআপু ফোন দিয়ে তোকে কিডন্যাপ করার কথা আমাকে বললে আমি একজনকে ফোন দিয়ে জানতে পারি তুই হসপিটালে আছিস তাই চলে এলাম।সাথে আপুকে নিয়ে।
রবিঃমাকে বলছিস তো আমার কথা?
রাশেদঃঅনেক আগে বলে দিয়েছি।
রবিঃভালো করেছিস নয়তো আবার মা চিন্তা করবে।

রাশেদঃএসব নিয়ে একদম চিন্তা করিস না।সব ঠিক এখন।
তা বল অহনাকে ক্ষমা করেছিস তো?
রবিঃতুই তো জানিস আমি অহনাকে এখনো সে আগের মতো ভালোবাসি। ক্ষমার কোনো কথা এখানে আসছে না।আর প্রিয় মানুষের উপর রাগ করা যায় না কেবল কিছু সময়ের জন্য অভিমান করা যায়।

রাশেদঃতাহলে বিয়ের ব্যবস্থা করি?(হেঁসে)

রবিঃআরে কি বলিস?সে এখনো অসুস্থ।
রাশেদঃতাহলে কয়েক দিন পর হয়ে যাক…

হেসে হেসে কথা বলছিল দুই জন তখনই সেখানে আপু এলো।আপু দুই জনকে উদ্দেশ্য করে বলল…
আপুঃকি হলো তোরা এত হেসে কথা বলছিস কেন?
রাশেদঃনা মানে এমনি আপু।
আপুঃমনে রং লাগলে এমই হয় রে।

আপুর কথা শুনে রবি বেশ ভালোই লজ্জা পেল।রবির দিকে তাকিয়ে আপু বলল….
আপুঃকি ব্যাপার আমার লজ্জাবতী ভাই,এত লজ্জা পেলে হবে?
রাশেদঃলজ্জাবতী হবে না তো আপু?এটা তো মেয়েদের ক্ষেত্রে হয়।
আপুঃতাহলে ছেলেদের ক্ষেত্রে কি হয়?

(আমিও জানি না আপনি জানলে কমেন্টে বলিয়েন।আর হ্যাঁ চুপিচুপি গল্প পড়ে যাবেন কিছু বলবেন না গল্প নিয়ে তা কিন্তু ভালো না।)
সবাই কথা শেষ করে রবি আবারো অহনার রুমে এলো।রবি গিয়ে অহনার পাশে বসল।অহনা রবিকে বলল…
অহনাঃআমাকে কি আগের মতো ভালোবাসবে?
রবিঃসরি অহনা আমি আগের মতো ভালোবাসতে পারব না।(অহনাকে বাজিয়ে দেখার জন্য রবি কথাটি বলল)

রবির কথা শুনে অহনা খুব কষ্ট পেল মুখটা রবির বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে নিলো।রবি বুঝতে পারল অহনা কষ্ট পেয়েছে।তখন রবি অহনার মুখটাকে নিজের দিকে ঘুরালো কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলল আগের মতো নয় আগের থেকে বেশি ভালোবাসতে চাই।তুমি কি আমাকে সে সুযোগ টা দেবে?

অহনাঃহুম দেব।চলো না আমরা আবারো রিলেশনে যায়।
রবিঃনা অহনা আমি রিলেশনের প্রতি আর বিশ্বাস করতে পারছি না।আমি চাই বিয়ে করতে।কারণ আজকালের রিলেশন গুলো কেমন যেম অদ্ভুত। দেখা করতে গিয়ে দশ মিনিট দেরি হলেও নাকি ব্রেকআপ।

অহনাঃতাহলে এখন কি বিয়ে করব আমরা?
রবিঃহ্যাঁ তবে এখন না।আগে তুমি সুস্থ হয়ে ওঠ তারপর বিয়ে করব।

অহনাঃসত্যি তো?
রবিঃহুম সত্যি। আগে তুমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠ তারপর ধুমধামে বিয়ে করব আমরা।আর আমার ইচ্ছে কি জান?
অহনাঃনা,বল কি ইচ্ছে তোমার?
রবিঃআমি চাই আমাদের বিয়েতে অনেক বড় কোনো আয়োজন হবে না।ছোট্ট একটা আয়োজন হবে আর সেখানে কোনো বড় লোক থাকবে না থাকবে শুরু গরীব মানুষ গুলো যারা দু মুটো খেতে পারে না ঠিক মতো।যারা অসহায়,যারা দিনের খাবার দিনে এনে খাই।ওরাই থাকবে।
অহনাঃ সত্যি তুমি অসাধারণ। জান আমিও এরকম চিন্তা করতাম।
রবিঃতাহলে তো তুমিও গ্রেট হুম।

হাসতে হাসতে দুই জন দুই জনকে নিজেদের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে শেষে ভালোবাসার জয় হলো।এই ভালোবাসা কি তাদের কপালে আদৌ সইবে?নাকি কোনো ভয়ঙ্কর ঝড় এসে তাদের ছিন্নভিন্ন করে দেবে?

…………………..সমাপ্ত……………………..

#গল্পটা_কেমন_হল_জানাবেন।
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।
#আল্লাহ_হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here