#তুমি_থেকে_যাও_আমার_হয়ে।
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০৯
যে করেই হোক ছেলেটাকে অহনার জন্য যেখান থেকে পারে খুঁজে নিয়ে আসবে।অহনার কাছ থেকে ছেলেটার নাম আর এড্রেস নিল।সাথে তার বন্ধু রাশেদের এড্রেস নিলো।রাশেদের নাম্বার অহনার কাছে ছিল না তাই নেয় নি।তবে রবির নাম্বার নিয়েছে।
অহনার বাবা ভার্সিটিতে চলে গেলো হঠাৎ করে।চারপাশে গাড়ি ভার্সিটির সবাই অবাক।গিয়ে প্রিন্সিপালের রুমে বসল।চা দিল চা খেলো ভার্সিটিতে আসার কারণ জানতে চাইলে বলে…
–এখানে আমার মেয়ের সাথে পড়ে রবিউল হাসান নামের একটা ছেলে।চেনেন তাঁকে?
স্যারঃজ্বি স্যার খুব ভালো ছাত্র।
–হুম ওর গ্রামের বাসার ঠিকানাটা একটু দেবেন?
স্যারঃঅবশ্যই স্যার।আপনি বললে কি আর আমি না দিয়ে পারব?
–আরেকটা কথা ওর বন্ধু রাশেদকে একটু ডেকে দেন।
স্যারঃআচ্ছা আপনি বসুন।
স্যার সংকেত দিতে একজন এসে হাজির তাঁকে বলল রাশেদকে ডেকে আনতে সে চলে গেল।রাশেদকে সবাই এক নামে চেনে।
এমপি মানে অহনার বাবার স্যারকে আবার জিজ্ঞেস করল….
–স্যার রবি কত দিন হল ভার্সিটিতে আসছে না?
স্যারঃযে দিন আপনার মেয়ে অহনা তাঁকে চড় মেরেছে।
–আপনারাও জানেন বিষয় টা?
স্যারঃ সবাই জানে এটা।
রাশেদ এসে বাইরে দাঁড়িয়ে ভেতরে আসার পারমিশন চাইলে স্যার ওকে ভেতরে আসতে বলে।সে গিয়ে দাড়ায় আর স্যারকে জিজ্ঞেস করে তাঁকে ডাকার কারণ কি?
স্যারঃবস বলছি।
রাশেদ অহনার বাবার পাশের চেয়ারে বসে পড়ল।অহনার বাবাকে রাশেদ আগে থেকে চেনে, কয়েক দিন আগে খোঁজ নিয়েছিল।অহনার বাবাকে দেখেও না দেখার মতো করে বসে পড়ল।বসতে বসতে স্যারকে বলল…
রাশেদঃজ্বি স্যার বলুন।
স্যারঃএমপি সাহেব তোমার সাথে কথা বলতে চাই।
রাশেদঃআমি তো ভাবছি আপনি আমার সাথে কথা বলবেন তাই আসলাম।
স্যারঃআমি না।অহনার বাবা তোমার সাথে কথা বলবে।
রাশেদঃস্যার আপনি কথা বলবেন বলে আসছিলাম নয়তো কোনো এমপি মন্ত্রীর কারণে আমি আসতাম না।আমার ক্লাস রুমে পাঠিয়ে দিতে পারতেন এমপিকে।
রাশেদের কথা শুনে এমপির চোখ যেন কপালে ওঠে গেল।এই ছেলে বলে কি,এমপিকে তার সাথে কথা বলতে ক্লাস রুমে যেতে বলে।সাহস আছে বলতেই হয়।
স্যারঃআচ্ছা বাদ দাও দেখ ওনি কি বলে।
এবার রাশেদ হালকা এমপির দিকে ঘুরে বসলেন।ইশারায় বললে কি?
–তোমার সাহস তো কম না।
রাশেদঃএটা বলতে ডাকেন নি নিশ্চয়, যা বলতে ডেকেছেন তাই বলুন আমার ক্লাস আছে।
রাশেদের কথা শুনে এমপি আবার অবাক। এমপির মুখের উপর এভাবে কথা বলতে দম লাগে যা রাশেদের খুব ভালো আছে।এমপি নিজেকে কনট্রোল করে বলল…
–আমার মেয়ে অহনা রবিকে ভালোবাসে তা তো নিশ্চয় জানো!
রাশেদঃআপনার লজ্জা বলতে কিছু নেই?অহনাকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দিচ্ছেন আবার?সে কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারে না।ছলনাময়ী অহনা যার বাবা আপনি।
স্যারঃরাশেদ নিজেকে কনট্রোল কর।এভাবে বড়দের সাথে কথা বলতে নেই।
রাশেদঃজ্বি স্যার বড়দের সাথে আরেকটু ভালো করে কথা বলতে হয়।তা এমপি সাহেব বলেন এখন আমি কি করতে পারি?
–আমাকে নিয়ে রবিদের বাসায় যাবে।
রাশেদঃআমার সময় নেই।আর কেন যাবেন ওর বাসায়?
–তোমাকে সময় বের করতে হবে।অহনা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে আর সে রবিকে বিয়ে করতে চাই।
রাশেদঃরবি কাউকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেয় না।
–সেটা আমি বুঝে নেব।তুমি যাবে কি না তাই বল।
রাশেদঃআপনার সাথে আমি যেতে পারব না।আপনি আমার সাথে গেলে যেতে পারেন।
–ওকে আমি যাব তোমার সাথে।কালকে যাব চলো।
রাশেদঃএখনো আপনার সাথে যেতে বলছেন।আমি বলে দিব আপনাকে কখন যাব। পরশু সকাল ৯ টায় আপনার গাড়ি নিয়ে আমার বাসায় চলে যাবেন।দারোয়ান অবশ্য আপনাকে বাসায় ঢুকতে দেবে না। আমি আসা পর্যন্ত আপনি নিজের গাড়িতে বসে অপেক্ষা করবেন।আমি আমার গাড়ি করে বের হলে আপনিও আমার গাড়িতে করে ওঠে যাবেন।আজকে আসি ধন্যবাদ….
রাশেদ আর কিছু বলতে না দিয়ে স্যারের রুম থেকে বের হয়ে গেল।এমপি রাশেদের এমন অবস্থা দেখে নিজে অবাক।স্যার এমপিকে বলল…..
স্যারঃকিছু মনে করবেন না তার কথা….
–ছেলেটা এমন বেপরোয়া কেন?
স্যারঃস্যার বাবার টাকা নিজের ক্ষমতা আর ভার্সিটির সবার সাপোর্ট পাওয়ার পরে কোন ছেলেটা বেপরোয়া না হয়ে থাকে বলুন।
কিছু মনে করবেন না ভার্সিটির সবাই তাঁকে ভয় যেমন পাই তেমনি ভালোবাসে।সে এক সময়ে এক রূপের ধারক।
–যেমন?
স্যারঃসবার সাথে বন্ধুর মতো চলা।কেউ অপরাধ করলে বিচার করা।কেউ সাহায্য চাইলে তাঁকে সাহায্য করা। সবাকে সে নিজের পরিবারের একজন মনে করে।যে তার সাথে ভালো সে তার থেকে ভালো কিছু পাবে।আর যে ভালো কিছু পাবে না নিশ্চয় সে তার থেকে ভালো কিছু পাবে না।
অহনার বাবা বুঝতে পারলো প্রিন্সিপালের স্যার তাঁকে সুপরিকল্পিতভাবে অপমান করতেছে।এমপির স্যারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে গেল।রাশেদ ক্লাসে বসে আছে।
ক্লাস শেষ করে রবিকে ফোন দিয়ে অহনার বাবা আসার কথা জানালো।রবি না আসতে বললেও রাশেদ একটু জোর করে বলল, তাই রবি রাজি হয়ে গেল।
যাওয়ার দিন তিনি রশাদের বাসার সামনে চলে গেল দারোয়ান তাকে সত্যিই ঢুকতে দেয়নি বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল আসার জন্য। নয়টা বের হওয়ার কথা কিন্তু এমপি সাড়ে নয়টা পর্যন্ত বসে থাকার পর রাশেদ নিজের গাড়ি নিয়ে বের হলো।এমপিকে ইশারায় বলল রাশেদর গাড়িতে ওঠতে।এক প্রকার বাধ্য হয়ে এমপি রাশেদের গাড়িতে উঠে পড়ল।রাশেদ নিজে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো। কিছুদূর গাড়ি যেতে এমপি রাশেদকে বলল…
–তুমি আমাকে পুরো ত্রিশ মিনিট দাড় করিয়ে রাখলে।
রাশেদঃইচ্ছে করে আমি এমনটা করলাম।
–কেন?
রাশেদঃযখন আপনাদের কাছে কোনো কাজের জন্য সাধারণ মানুষ গিয়ে দিনের পর দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে তখন তাদের কষ্ট এর থেকে বেশি হয়।আপনি কখনো তাদের এই কষ্ট বুঝবেন না তাই একটু হলেও যাতে বুঝেন অপেক্ষা করতে কষ্ট খারাপ লাগে তাই দেরি করলাম।
–হয়েছে হয়েছে এবার চলো।
এমপি কিংবা রাশেদ কেউ আর কোন কথা বলেনি গাড়ি চলতে লাগল আপন গতিতে। বেশ কিছু সময় গাড়ি চলার পর তারা পৌঁছে গেল রবির গ্রামের বাসায়।গ্রামের চারপাশের পরিবেশ দেখে এমপি নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেল। আরো ২ থেকে ৫ মিনিট পর তারা রবির বাসার সামনে গিয়ে উপস্থিত হল। অহনার বাবা আসবে তা রবি আর তার আপু আগে থেকে জানতো।তাই তারা মেহমানদারী করার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু তৈরি করে রাখল।
তারা ঢুকে গেল রবিদের বাসায়। গ্রামের বাসা সুন্দর হলে বা আর কত হবে….
এমপি বাসায় ঢুকতেই আপু এমপিকে সালাম দিয়ে সোফায় বসতে বললো।রাশেদ আর এমপি বসে আছে।তারা দুই জনই আসছে রবির বাসায়।
রবি জানে তারা কেন আসছে তাই রবি নিজের রুমে গিয়ে বসে থাকল।একটু পর রাশেদ এমপির কাছ থেকে উঠিয়ে রবির রুমে চলে গেল। রবির বাসায় তার মা আর আপু আর কাজের মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই।একটু পর রবির মা এমপির সামনে এসে বসল। আপু আগে থেকে বসা ছিল।এমপিকে রবির মা সালাম দিল আর এমপিও সালাম দিল।
এমপি রবির মাকে বলা শুরু করল….
—আমি কেন আসছি তা আপনারা জানেনই তাই আমি নতুন করে কিছু বলতে চাই না।আমার মেয়েটা ছোট থেকে কখনো কাঁদে নি কিন্তু আপনার ছেলে চলে আসার পর আমার মেয়ে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে নি।ঠিক মতো ঘুমাই না।এমন কি পড়াশোনাও করে না।
আপুঃদেখেন আঙ্কেল আপনি হয়তো ভুলে গেছেন অহনা রবিকে ফিরিয়ে দিছে।
–হ্যাঁ মা আমি জানি।কিন্তু অহনা এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। সে এখন রবির কাছে ফিরে আসতে চাই।
আপুঃ কিন্তু রবি কাউকে দ্বিতীয় বার পাওয়ার আশা করে না।
মাঃআরে কি শুরু করলি তুই একটা মেহমান আসছে বসছে একটু ভালো ভাবে কথা বল। (আপুকে বলল)
সবার কথার মাঝখান দিয়ে রবি নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে এমপির সামনে দাঁড়ালো। আর এমপি কে বলল…
রবিঃদেখেন আঙ্কেল আমিও আপনার মেয়েকে…
আর কিছু না বলে আপুকে ইশারা করে মাকে ভেতরে নিতে বলল,কারণ রবি মায়ের সামনে কথা গুলো বলতে পারছে না।মা ভেতরে যাওয়া পর রবি এমপির সামনে বসল আর এমপিকে বলা শুরু করল…….
রবিঃআঙ্কেল আমি অহনাকে ভালোবাসি এটা যেমন সত্য তেমনি অহনাকে আমাকে অপমান করে ভার্সিটির সবার সামনে চড় মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে আর সে আমাকে ভালোবাসে নি এটাও তেমন সত্য। তাহলে কেন আসছেন আপনি আমার কাছে?
–অহনা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।সে তোমার কাছে ফিরে আসতে চাই।
রবিঃকিন্তু আঙ্কেল আমি কাউকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দিয় না।আর যদি সেটা ভালোবাসার ক্ষেত্রে হয় তাহলে তো কোনো ভাবেই না।ক্ষমা করবেন আঙ্কেল আপনার মেয়ের জন্য আমি ভার্সিটি ছেড়ে এসেছি।এমন কি ঐ শহরটাও ছেড়ে এসেছি।আমি আর আপনার কথা রাখতে পারলাম না।আপনি এখন আসতে পারেন।
এমপি অনেক অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয় নি ফেরাতে পারে নি রবিকে।রবি যে এখন অহনাকে ঘৃণা করে সেটা কিন্তু নয়।শুধু অহনার করা অপমানের কথা রবির চোখের সামনে ভেসে ওঠলে রবি কাউকে ভালোবাসতে পারে না।
রাশেদকে নিয়ে এমপি চলতে লাগলো শহরের দিকে।রাশেদও চেয়েছিল রবি আর আপু আবারো শহরে ফিরে আসুক।সেটা অহনাকে নিয়ে হউক কিংবা না নিয়ে।কিন্তু রাশেদ চেয়েও পারে নি।এমপি আর রাশেদ দুই জনের মন খারাপ।গাড়ি চলতে লাগলো আপন গতিতে দুই জন চলে গেল নিজের বাসায়।
এই দিকে সারা দিন ক্লান্তি শেষ করে রবি ঘুমাতে এসে, অহনার কথা ভেবে নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এলো।
এমপি বাসায় যেতেই অহনা দৌড়ে বাবার কাছে গেল।বাবার মুখ দেখে অহনা বুঝতে পারলো রবি অহনার বাবাকে ফিরিয়ে দিছে।অহনার বাবা কিছু বলার আগে অহনা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কান্না করতে লাগলো।তার একটু ভুলে রবি আজ অনেক দূরে।
আপুর ফোন বেজে ওঠতে নাম্বার দেখে আপু বুঝে গেল অহনা ফোন দিছে।অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপু ফোনটা ধরল,ওপাশে কান্নার আওয়াজ যেন কয়েক গুন বেড়ে গেল।
অহনা কিছু বলতে পারছে না শুধু কেঁদে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আপুও অহনাকে কিছু বলতে পারছে না।অহনার এমন কান্নার আওয়াজ শুনে আপুর খারাপ লাগতে শুরু করল।কারণ অহনাকে আপু খুব ভালোবাসে।হঠাৎ এমন কান্নায় যেন আপু বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।
আপুঃঅহনা কান্না থামাও কি হয়ছে ফোন দিছ কেন বল?
–আপু আমাকে ক্ষমা করা যেত না?আমি না হয় একটা ভুল করেছি। (কেঁদে কেঁদে)
আপুঃদেখ অহনা আমি জানি না সে সময় তুমি কেন রবির সাথে এমন করেছ, তোমার আচরণে রবি খুব কষ্ট পেয়েছে যা বলার মতো না।তুমি নিশ্চয় রিহির কথা জানো।সে যখন রবির সাথে প্রতারণা করেছিল তখনও রবি এতটা কষ্ট পাই নি।যতটা কষ্ট তোমার আচরণে পেয়েছে।তোমার এটা ভুল নয় শুধু এটা একটা গুরুতর অপরাধ।
–আপু আমি নিজের ভুল বা অপরাধের জন্য অনুতপ্ত। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেন।রবিকে একটু বুঝান আমি তাঁকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু সেটা প্রথমে আমি বুঝতে পারি নি।এখন আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি।প্লিজ আপু আমাকে ক্ষমা করে দিন।
আপুঃজান অহনা আমি তোমাকে দেখে অনেক মুগ্ধ হয়েছিলাম আমি মনে করেছি রবির কষ্ট গুলো তুমি ভুলিয়ে দেবে।প্রথম দিন তোমাকে দেখে আমি তোমাকে রবির জন্য উপযুক্ত মনে করেছিলাম।আর আমি এটাও খেয়াল করলাম তুমি রবিকে ভালোবাস।তাই আমিও রবিকে বুঝিয়েছি তুমি যে তাকে ভালোবাস।কিন্তু শেষে গিয়ে তুমি যা করলে রবি সেটা কখনো ভুলতে পারবে না।
অনেক রাত হয়েছে অহনা।ঘুমিয়ে যাও রবির থেকে ভালো কাউকে তুমি পাবে।ভুলে যাও রবিকে।সানির সাথে তোমাকে খুব ভালো মানাবে….
#To_be_continue…….
#গল্পটা_কেমন_হল_জানাবেন।
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।