#তুমি_থেকে_যাও_আমার_হয়ে।
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০৫
এইটুকু বলে রবি থেমে গেল। হয়তো এখানেই শেষ রিহির গল্প। অহনা আবারো রবিকে বলে উঠলো তারপর কি আর কিছু হয়েছিল….
— তারপর আর কি হবে রিহি গিয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাই কিন্তু আমার কাছে আসতে পারে নি।আমি চলে আসি এই শহরে। তারপর জানি না কি হয়েছিল এখন এখানে আছি বেশ আছি।
অহনাঃ তাহলে এই ছিল সেই অতীত?
–হুম। সত্যিকারে ভালোবাসা না পেয়ে এখন আর কাউকে ভালোবাসতে পারি না।জোর করে চাইলেও পারি না।
অহনাঃ আচ্ছা এসব নিয়ে এখন আর মন খারাপ করো না চলো বাসায় যাই।
তারপর রবি,অহনা ইশিতা তিন জন নিজেদের বাসায় চলে গেল। রবি গিয়ে কলিং বেল চাপ দিতেই রিফা দরজা খুলে দিল। রবির অনেক খিদে পেয়েছে তাই রিফা কিছু খেতে দিতে বলল।রিফা রবিকে খাবার দিল।
রাতে পড়া শেষ করে রবি খাবার খেতে গেল।টেবিলে খাবার সামনে রেখে বসে আছে আপু আসবে বলে….
কিছু সময় পর আপু এলো সবাই খাওয়া শুরু করল।সবাই বলতে এখানে শুধুমাত্র তারা তিনজনই আছে রবি তারা আপু আর রিফা। তিনজনের খাওয়া-দাওয়া শেষ হতেই আপু বলে উঠলো…
আপুঃ অহনা মেয়েটা খুবই সুন্দর।
কথাটা শুনে রবি আপুর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।যে আপু কখনো কারো প্রসংশা করে নি আজ সে আপু অহনার প্রসংশা করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে।রবির বুঝতে বাকি নেই অহনা আপুর মাথায় আবারো ভালোবাসা নামক বিষ ঢুকিয়ে দিছে।পর দিন ভার্সিটি বন্ধ তাই রবি আর না পড়ে ঘুমিয়ে গেল।সকালে ঘুম থেকে ওঠে নাস্তা করে নিলো।একটু পর হতেই অহনা ফোন দিল….
–হ্যাঁ অহনা বল?
অহনাঃ আচ্ছা কালকে রাতে তুমি কয়টায় ঘুমিয়েছো?
— হঠাৎ এই কথা কেন?
অহনাঃ না মানে কালকে রাতে তোমাকে অনেকক্ষণ ধরে অনলাইনে দেখা গেছে তাই বললাম।
— না বেশি রাগ করিনি মাত্র ১২ টায় ঘুমিয়ে গেছি।
অহনাঃ এত রাত জেগে কি করো অনলাইনে?
–না তেমন কিছু না আসলে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলি আর একটু অনলাইনে কাজ করি।
অহনাঃ তা ফ্রেন্ড গুলা কি মেয়ে নাকি ছেলে?
–তুমি একটু বেশি বলতেছ না?
অহনাঃ প্রয়োজনে আরো বেশি বলব এত রাত জেগে থাকবে না।
—মনে হয় একটু অধিকার দেখিয়ে ফেলতছ?
অহনাঃযদি তাই মনে করো তাহলে তাই।
—তা আমি তোমার কথা কেন শুনব?
অহনাঃকারণ আমি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড?
—তো বেস্টফ্রেন্ড হলে কি সব কথা শুনতে হবে ?
অহনাঃসব কথা শুনতে বলেনি শুধুমাত্র যেটা তোমার জন্য ক্ষতিকর সেটা শুনতে বললাম। সেটা না করতে বললাম।
—রাত জাগলে কি আবার কারো ক্ষতি হয় নাকি?
অহনাঃহ্যাঁ হয় যেটা তুমি জানো না।
—আচ্ছা ঠিক আছে দেখব কি করা যায়।
অহনাঃশুধু দেখলে হবে না আজ রাত থেকে সর্বোচ্চ এগারোটা পর্যন্ত জেগে থাকবে এর পরে ঘুমাবা।
–আচ্ছা ঠিক আছে তাই করবো।
অহনাঃএই তো গুড বয়।
—আচ্ছা এখন রাখি তাহলে!
অহনাঃআরেকটু কথা বলি?
—ওকে বল কি বলবা?
অহনাঃতুমি নাস্তা করছো?
–একটু আগে নাস্তা করলাম তুমি করছো?
অহনাঃহ্যাঁ আমিও করলাম একটু আগে। তা আপু কেমন আছে?
–এইতো ভালো আছো আপু। তোমার বাসার সবাই কেমন আছে?
অহনাঃউনারা সবাই ভালো-ই আছে। আচ্ছা শোনো…..
–হ্যাঁ বলো কি বলবে?
অহনাঃকেউ একজন বলেছিল প্রত্যেককে বিশ্বাস করা বিপদজনক কিন্তু কাউকে বিশ্বাস না করা আরো বেশী বিপদজনক।
—কেউ এজজন এটাও বলেছিল যে, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।
অহনাঃআরেক বার কি কোনো ভাবে বিশ্বাস করা যায় না?
—বিশ্বাস কেবল একবারই করা যায় বারবার নয়।
অহনাঃশেষবারের মতো বিশ্বাস না হয় আমাকে একবার করো।
—হ্যাঁ বিশ্বাস করিতো তোমায়, তাই তো বেস্ট ফ্রেন্ড হলাম।
অহনাঃরবি তুমি জানো আমি বেস্ট ফ্রেন্ড এর কথা বলছি না, আমি ভালোবাসার কথা বলছি।
—ক্ষমা করো অহনা আমি আসলে কাউকে ভালোবাসতে পারবো না।
অহনাঃএকবার চেষ্টা তো করতে পারো নাকি?
—চেষ্টা নয় ভালবেসে যাব তবে বিয়ের পরে।
অহনাঃআচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে রাখছি। আর হ্যাঁ নিজের খেয়াল রেখো।
অহনা বুঝতে পারলো রবির সাথে কথা বলে কোন লাভ হবে না এ ব্যাপারে। তাই ফোন কেটে দিল। রবি অহনার সাথে কথা শেষ করে বাজার যাওয়ার চিন্তা করল। ওখানে ফ্রেন্ডরা আছে একটু আড্ডাও হয়ে যাবে।রবি বাজারে গিয়ে রাশেদের সাথে আড্ডা দিতে লাগলো।দুপুরের খাবারটা ওরা ওখানে খেয়ে নিল। বিকালের দিকে অহনা আবার ফোন দিলো।তখন রবি বাসায় আসছিল।রিকশা থাকা অবস্থায় অহনার ফোন দিলে রবি ফোনটা ধরে কানে দেয়।
—হ্যাঁ অহনা বল….
অহনাঃকোথায় তুমি এখন?
—এইতো ফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছে এখন।
অহনাঃদুপুরে খেয়েছো?
–হ্যাঁ খেয়েছি তুমি খেয়েছ?
অহনাঃহ্যাঁ।আচ্ছা তুমি সাবধানে যেও আর বাসায় পৌঁছে ফোন দিও।
–কেন আবার বাসায় পৌঁছে ফোন দিতে হবে কেন এখন বল কি বলবে?
অহনাঃতোমার আপুর সাথে কথা বলব। একটু ফোন দিও প্লিজ।
—তো আপনার নাম্বারে ফোন দে তাহলে তো হয়ে যায়।
অহনাঃতুমি দিলে সমস্যা আছে?
–না কিন্তু ইম্পর্ট্যান্ট কথা হলে এখন-ই ফোন দিয়ে বলে দিতে পারো তাই বললাম।
অহনাঃআরে এত কথা বলে কেন যা বললাম তাই করবা বাসায় গিয়ে ফোন দিবে।
–আচ্ছা ঠিক আছে দিব।
কথা শেষ করে রবি ফোন কেটে দিল।আর রিকশা নিয়ে বাসায় চলে গেল।রিকশা ভাড়া দিয়ে বাসায় ঢুকে অহনাকে ফোন দিল। অহনা ফোন রিসিভ করতে ফোনটা আপুকে ধরিয়ে দিল। অহনা আর আপু হেঁসে হেঁসে কথা বলেই যাচ্ছে যা রবির একদম ভালো লাগছে না।
পর দিন ভার্সিটিতে যেতে হবে তাই সকালে রবি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলো।তারপর বের হলো বাসা থেকে সামনে একটা রিকশা দেখতে রবি সেটাকে ডাক দিল।কিন্তু রবি রিকশায় ওঠার আগে অহনা রিকশায় ওঠে গেল রবি অবাক হয়ে গেল অহনা এখানে কেন?রবি অহনাকে জিজ্ঞেস করে বসল….
–আরে অহনা তুমি এখানে?
অহনাঃএকটা কাজে আসছিলাম। তোমাকে পেয়ে ভালো হলো একসাথে ভার্সিটিতে যেতে পারব।
—কি কাজে আসছিলে?
অহনাঃপরে বলব চলো এখন ভার্সিটিতে যায়।
–না না তুমি এই রিকশা নিয়ে চলে যাও আমি পরে যাব।
অহনাঃতা কেমনে হয় চলো একসাথে যায়।
—একসাথে কেমনে যাব…
অহনাঃকেন পাশাপাশি বসে যায় আমার সমস্যা নেই।
—না না এটা কেমন যেন মানায় না, তুমি চলে যাও আমি আরেকটা রিকশা নিয়ে যাব।
রবি অহনার সাথে এক রিকশায় যেতে না চাইলেও অহনার জোরাজোরিতে না গিয়ে পারল না।রিকশায় ওঠে গেল দুই জন। পাশাপাশি বসল আর রিকশা চলতে লাগল আপন গতিতে। রবির একটু খারাপ লাগছিল এসবে কিন্তু কিছু করতে পারছে না সে।এই দিকে অহনা হালকা হেঁসে যাচ্ছে রবির অবস্থা বুঝে।রবি একদম অন্যরকম হয়ে বসছে।যেন কেউ কাউকে চেনে না।হঠাৎ রিকশার চাকা একটা ছোট্ট গর্তে পড়ে গেল, রিকশায় ঝাঁকুনি হল রবি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে অহনার গালে কিস করে বসল।যদি সেটা রবি ইচ্ছে করে করে নি রবি নিজেকে সামলাতে না পেরে এমনটা হয়ছে।
অহনা খুব ভালো করে বুঝতে পারল এখন রবিকে
ফাঁসানো যাবে কারণ রবি তাকে কিস করেছে।অহনা কিছু বলার আগে রবি বলে ওঠল….
—সরি সরি আসলে আমি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তোমাকে কিস করে বসলাম।
অহনাঃতুমি ইচ্ছে করে এটা করেছ রবি মিথ্যা বলবে না।
–না না কি বলছ এসব। আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি রিকশা গর্তে পড়ে গেলে আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে তোমাকে…..
অহনাঃকি আমাকে?
—সরি বললাম তো ভুলে তো এমনটা হলো।
অহনাঃএটার জন্য শাস্তি পেতে হবে।
—কি শাস্তি দেখ এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়ে গেছ বুঝতে চেষ্টা কর।আমি ইচ্ছে করে করি নি।
অহনাঃইচ্ছে করে হউক বা ইচ্ছে না করে হউক এখন তোমাকে শাস্তি পেতে হবে।
রবি বুঝতে পারল অহনা এত সহজে রবির ভুলটা মেনে নেবে না তাই রবির মন খারাপ হয়ে গেল। বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে তার ভুলটা ক্ষমা করাই যেতে পারে কিন্তু এভাবে তাঁকে না বললেও পারতো।রবি মাথা নিচু আর মন খারাপ করে বলল…
–ওকে বল কি শাস্তি পেতে হবে।
অহনাঃতোমার ফেসবুক পাসওয়ার্ড দাও।
–এটা কি ধরনের মজা?
অহনাঃযা বলছি তাই দাও।
–আমার ফেসবুক পাসওয়ার্ড নিয়ে তুমি কি করবে?
অহনাঃদেখব কার কার সাথে চ্যাটিং কর।
—আমার ফোন থেকে দেখ কোনো মেয়ের সাথে চ্যাটিং করি না।
অহনাঃনা না তোমার পাসওয়ার্ড দাও আমি দেখব।
–কতক্ষনের জন্য দিতে হবে?
অহনাঃচাইলে সারাজীবনের জন্য দিতে পার।
— ফাজলামো বাদ দিয়ে বল কতক্ষণ লাগবে পাসওয়ার্ড?
অহনাঃকাল সকাল ভার্সিটিতে আসা পর্যন্ত।
–ওকে নাও..6766..
অহনাঃওকে।
অহনা নিজের ফোনে রবির আইডি লগ ইন করলো।আর পুরো আইডি ঘুরে দেখল।রিকশা থেমে গেল কারণ ভার্সিটিতে চলে আসছে।রবি রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে ভার্সিটিতে ঢুকে গেল।অহনাকে কিছু বলল না।অহনাও রবির পেছন পেছন আসল।
রবি গিয়ে রাশেদের পাশে বসলো। আর অহনা বসলো ইশিতার পাশে।আজকে খুব বেশি সময় ছিলনা তাই তারা ক্লাসরুমে ঢুকে গেল।একটু পর স্যার ক্লাস করাতে আসলো, সবাই মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে কিন্তু একজন কোন মনোযোগ দিচ্ছে না। তাকিয়ে আছে অন্য কারো দিকে। সেটা আর কেউ নয় সেটা অহনা।তাকিয়ে আছে রবির দিকে।রবি বিষয়টা বুঝতে পারলেও কোন সিনক্রেট করল না।যেন সবকিছু আগের মতোই স্বাভাবিক আছে সেভাবেই ক্লাস করে যেতে লাগল।
প্রায় তিনটা ক্লাস শেষ করার পরেও যখন অহনা রবির দিকে তাকিয়ে থাকলো তখন রবি অহনার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। অহনা এবার নিজের দৃষ্টি নামিয়ে নিল আর ক্লাসে মনোযোগ দিল। এভাবে ভার্সিটির সব ক্লাস শেষ হয়ে গেল।
ক্লাস শেষ করে রবি কোন কথা না বলে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে গেল। যেটা অহনাও খেয়াল করে নি।রাতে পড়া শেষ করে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেল।সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে ঢুকে দেখে তার মেয়ে ফ্রেন্ড গুলো একটাও নেই। সবগুলো আনফ্রেন্ড করা হয়েছে রবির বুঝতে বাকি রইল না এটা অহনার কাজ। কারণ ফেসবুকের পাসওয়ার্ডটা একমাত্র অহনার কাছেই ছিল।
সাথে সাথে রবি অহনা কে ফোন দিল।অহনা ফোন রিসিভ করে বলে উঠলো কি ব্যাপার আজ সূর্য কোনদিকে উঠল তুমি নিজেই ফোন দিলে যে?
—তুমি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড গুলো আনফ্রেন্ড কেন করলে?
অহনাঃকোন মেয়েকে ফ্রেন্ড লিস্টে রাখতে আমার ভালো লাগেনি তাই আনফ্রেন্ড করলাম।
—ভালো কিংবা খারাপ সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার তুমি কেন আনফ্রেন্ড করতে যাবে?
অহনাঃআরে কয়েকটা মেয়েকে আনফ্রেন্ড করলাম তাতে রেগে যাচ্ছ কেন?
–কারন ওরা আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড নয় আমার স্কুল কলেজ ফ্রেন্ড ছিল।
অহনাঃসেটা যে হোক কোন মেয়েকে ফ্রেন্ড লিস্টে রাখা যাবে না শুধু আমি ছাড়া।
–কিসের উপর ভিত্তি করে এত অধিকার দেখাচ্ছ? (রেগে)
অহনাঃতুমি জানো আমি তোমাকে ভালবাসি সেই ভালবাসার অধিকার দিয়ে।
—কিন্তু তুমি জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি না।
অহনাঃশুধু একটা সুযোগ দাও তাহলেই হবে।
—আর কখনো ফ্রেন্ডের দাবি নিয়েও আমার সামনে আসবে না।
তারপর রবি রাগে ফোন কেটে দিল আর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে নিল। সেদিন আর ভার্সিটিতে যাওয়া হয়নি তার। সারাদিন টিভির সামনে বসে কাটিয়ে দিল। আর এদিকে অহনা ভার্সিটিতে গিয়ে দেখে রবি আসেনি। অহনা জানে রবি তার উপর অনেক রাগ করছে তাই ভার্সিটি আসেনি।
অহনা ভাবল রবি কে ফোন দিয়ে কথা বলে নেওয়া দরকার। সরি বলতে হবে। অহনা ফোন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু রবি ফোন রিসিভ করতেছে না।
#To_be_continue……
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।