এক_কাপ_ঠান্ডা_কফি
#পর্ব_৮
লেখা_সাইফুল_ইসলাম
সাজুর ছবিটি যিনি দিয়েছিল সে বলেছিল রামিশা নামের এক মেয়ের সঙ্গে সাজুর বেশ ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক আছে। এ কথা শুনেই রাব্বি রামিশার সব বিস্তারিত জেনে নেয়। বাসার ঠিকানা, কোথায় পড়াশোনা করে, কার সঙ্গে বেশি চলাফেরা সকল তথ্য যোগাড় করে।
রামিশা বাসা থেকে বের হবার পরই সে পিছনে পিছনে অনুসরণ করে। দামপাড়া কাউন্টারে এসে রামিশা তার টিকিট কনফার্ম করে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু রামিশা কাউন্টারে কথা বলার সময় যা যা বলে সবকিছু শুনে নেয় রাব্বি।
– রামিশা বলছিল, ভাইয়া পিছনে হলেও সমস্যা নেই কিন্তু একটা সিঙ্গেল সিট দিতে পারেন কিনা দেখুন না।
– আমি পারলে তো আপনার জন্য ব্যবস্থা করতাম আপু, আপনার আঙ্কেল যখন বলেছিল তখনই আমি চেষ্টা করছি। আপনি যদি খুলনার টিকিট পরিবর্তন না করতেন তাহলে তো সেটাই ভালো হতো। একই বাসে করে আপনি ঢাকায় নেমে যেতে পারতেন, সিটও সিঙ্গেল ছিল।
– সেটাই ভুল হয়ে গেছে, আসলে আমি যার কাছে যাবো সে হঠাৎ করে আজকে সকালে ঢাকায় আসবে। তাই আমিও ঢাকা যাবো।
– ওহ্ আচ্ছা বুঝতে পারছি। তবে আপনার পাশের সিটটা এখনো ফাঁকা আছে, আর দশ মিনিট পরে গাড়ি ছাড়বে। এরমধ্যে যদি কেউ না আসে তবে আপনি একাই ডাবল সিটে যেতে পারবেন।
রামিশা আর কাউন্টারের লোকটার কথা শুনে মুচকি হাসলো রাব্বি। তারমানে সাজু সাহেব ঢাকা আজকেই আসবে, আর তাই স্থান পরিবর্তন করতে বলে দিয়েছে।
রাব্বির মনে পড়ে গেল রামিশার পাশের সিট এখনো ফাঁকা। সে তখনই তাড়াতাড়ি করে ওই ফাঁকা সিটটা বুকিং দিল। তারপর টিকিট নিয়ে সেও রামিশার মতো অপেক্ষা করতে লাগলো।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা নাম্বারে ছোট্ট একটা মেসেজ লিখলো,
” সাজু আজকে সকালে ঢাকায় যাচ্ছে! ”
রাব্বি বসার সঙ্গে সঙ্গে রামিশা আবারও গিয়ে কাউন্টারে কথা বলে।
– আপু কিছু বলবেন?
– ভাইয়া আমি আমার পাশের সিটটাও বুকিং করতে চাই। ডাবল সিট নিয়ে যাবো, কারণ যদি কেউ উঠে যায়।
– আপু এইমাত্র তো ওই লোকটা আপনার পামের সিটটা বুকিং করে গেল।
রামিশা তখন হতাশ হয়ে রাব্বির দিকে বারবার আড় চোখে তাকিয়ে ছিল। বিশাল মাস্ক আর কালো চশমা দিয়ে আবৃত তার চেহারা রামিশা বুঝতে পারে নাই। রাব্বি চশমার আড়ালে চোখ দিয়ে রামিশার মুখ দেখে মুচকি হাসলো। কিন্তু তার সেই হাসিটা ও বাইরে থেকে দেখা গেল না।
বাস এখন এঁকে খান মোড় থেকে বিদায় নিয়ে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। ছোট্ট বক্সে ড্রাইভার ও সুপারভাইজারের নাম ঘোষণা করা হলো।
রামিশা তার মোবাইল বের করে অস্থিরতা দুর করার জন্য সাজুর নাম্বারে কল দিল। ঘড়িতে পৌনে নয়টা বেজে গেছে, সাজু এখন কি করছে সেটা জেনে নেওয়া যাক।
– সাজু ভাই।
– বলো।
– কি করছেন?
– তৈরি হচ্ছি, এখনই বের হবো। তুমি কি গাড়িতে উঠে গেছ?
– হ্যাঁ, সিটি গেট পার হলাম। কিন্তু আপনার এতো দেরি হচ্ছে কেন? আপনি নাকি ভোরবেলা রওনা দিয়ে বারোটার মধ্যে ঢাকা থাকবেন।
– অনেক ঝামেলা হয়েছে রামু। রাতে আমার উপর হামলা হয়েছিল, ভাগ্যের ছোঁয়ায় বেঁচে গেছি। তারপর রাতে এক অপরিচিত মানুষের বাড়িতে ছিলাম, সারারাত ঘুমাতে পারিনি।
– এখন আপনি কোন যায়গা?
– ঢাকা গিয়ে তোমাকে সবকিছু বলবো। আমি এখন এখান থেকে খুলনা শহরে যাবো তারপর সেখান থেকে টিকিট কেটে যশোর মাগুরার উপর দিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট পার হয়ে ঢাকা যাবো।
– খুলনা থেকে কেন? আপনাদের বাগেরহাট থেকে ঢাকার বাস পাওয়া যায় না?
– যায়, কিন্তু একটু সমস্যার জন্য এভাবে যেতে হবে। তোমাকে সব সামনাসামনি বলবো৷
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– সিঙ্গেল সিট নাকি ডাবল?
– সকাল বেলা হঠাৎ করে টিকিট পরিবর্তন করে সিঙ্গেল সিট পাইনি। তাই ডাবল সিট নিতে হচ্ছে, পাশে একটা ছেলে ঠিক আপনার মতোই। তবে কানে হেডফোন লাগিয়ে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
– ঠিক আছে তুমি সাবধানে আসো তাহলে।
– ওকে, বায়।
রাব্বি এখনো হাসছে, তার কানে হেডফোন গুঁজে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু সেখানে কিছু বাজছে না। রামিশা যেন মনে করে লোকটা তার নিজের মতো ব্যস্ত তাই এই বুদ্ধি করেছে সে৷ কিন্তু সাজুর কথা তাকে ভাবাচ্ছে। রামিশা বলছিল খুলনা থেকে কেন যেতে হবে? তারমানে কি সাজু ভাই খুলনা থেকে বাসে উঠবে? বাহহ চমৎকার।
মোবাইল বের করে আরেকটা মেসেজ লিখলো রাব্বি।
★★★
সাজু ভাই সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পরে গতকাল রাতের সেই লোকটা তাকে বললো,
– আপনার মনে হয় বাগেরহাট থেকে ঢাকার বাসে ওঠা ঠিক হবে না। আপনি বরং আরেকটা কাজ করতে পারেন।
– কি কাজ?
অবাক হয়ে তাকালো সাজু ভাই।
– আমার ছেলে আপনাকে তার বাইকে করে খুলনা শহরে পৌঁছে দেবে। আপনি সেখান থেকে নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারবেন। আমাদের বাড়ির পিছনে বাগানের মধ্য থেকে বের হয়ে মাঠ পেরিয়ে একটা রাস্তা আছে। সেই রাস্তা দিয়ে ভিতরে ভিতরে গিয়ে কাটাখালি থেকে বের হবেন। যদি আমার বাড়ির সামনে গতকাল রাতে আক্রমণ করা লোকগুলো থাকে তাহলে তারা বুঝতেই পারবে না আপনি চলে গেছেন।
সাজু রাজি হয়ে গেল। বিদায় নেবার সময় সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে লাগলো। বড় বাগান তারপর পানের বাগান পেরিয়ে সে পৌঁছে গেল রাস্তায়।
খুলনা এসে এসে সে টিকিট নিলো। বাস এখনো আধা ঘণ্টা পরে ছাড়বে, তাই কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে গেল। মাথা ঠান্ডা করার জন্য সেখানে বসে ” এক কাপ ঠান্ডা কফি ” পান করলো।
পুরো মামলা নিয়ে আবারও নতুন করে ভাবতে হবে তাকে। গতকাল রাতের আক্রমণ বিষয়টা নিয়ে সে বেশ চিন্তিত, রাব্বি নামের একটা ছেলে তার সঙ্গে কথা বলেছে। আব্দুল কাদের নামের লোকটার মোবাইলে কল না দিলে তাকে হয়তো পাওয়া যেত না। কিন্তু কে এই রাব্বি? তাকে দিয়ে কে করাচ্ছে এসব হত্যা, সেই ষড়যন্ত্রের শিকার সাজু নিজেও হতে যাচ্ছে। আশ্চর্য। কে?
সাজু দ্রুত বাসের দিকে এগিয়ে গেল। ভাবনার মধ্যে ডুবে গিয়ে সময় কখন পেরিয়ে গেছে তার মনেই ছিল না। রাস্তার পাশে হানিফ পরিবহনের ননএসি বাস দাঁড়িয়ে আছে। সাজু ভাই দ্রুত বাসে উঠে গেল, বাস ছেড়ে দিল।
সাজু পিছনে যাচ্ছিল হঠাৎ একটা মেয়ে কণ্ঠ শুনে চমকে গেল।
– সাজু ভাই আপনি?
কফি খেতে বসে মাস্ক খোলার পড়ে আর মুখে লাগানো হয়নি। বাড়ির ওই লোকটা পই পই করে বলে দিয়েছে মাস্ক পরে থাকবেন। কিন্তু সাজু এই মুহূর্তে অবাক হচ্ছে কারণ তাকে যে ডাক দিয়েছে সে হচ্ছে পুতুল। গতকালই যার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছে, আর কালকে রাতে আক্রমণে পড়ার সময় ঠিক যার সঙ্গে কথা হচ্ছিল।
– কোথায় যাচ্ছেন সাজু ভাই? ঢাকায়?
– হ্যাঁ আপনি?
– আমিও, মেডিকেল স্টুডেন্ট তো ঢাকায় একটা ভাইভা আছে আমার। কিন্তু আপনি…
– আমারও জরুরি কাজ আছে।
সাজু পিছনে চলে গেল। এখন সম্পুর্ন জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে তার মগজে। এই মেয়েটাকে কাল থেকে সে সন্দেহ করছে, আর আজকে সকালে সে এই পথে ঢাকা যাচ্ছে। সেটাও কি মেয়েটা জেনে তারপর তার পিছনে লেগেছে? কিন্তু কেন?
রাব্বির দলের কেউ?
কিন্তু সে যে এই পথে যাচ্ছে সেটা তো ওই বাড়ির মানুষ ছাড়া আর কেউ জানে না। তবে রামিশার সঙ্গে বলেছিল খুলনা থেকে যাচ্ছে, তারমানে কি রামিশা সবকিছু বলে দিচ্ছে? কিন্তু কেন?
সাজুর হঠাৎ মনে পড়ে গেল, ঢাকার উত্তর বাড্ডা লাশ পাওয়া গেছে সেখানে সাজুর একটা ছবি ও পাওয়া গেছে। আর সেই ছবিটি রামিশার কাছে ছাড়া আর কারো কাছে নেই। তারপর গতকাল ও তার দুদিন আগে থেকে রামিশা অস্বাভাবিক আচরণ করেছে। কিন্তু আব্দুল কাদের গ্রেফতার হওয়ার পরই রামিশা স্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে। তারমানে কি রামিশা সবকিছু করেছে, তাকে নতুন করে বোকা বানাতে। কি…..
না না।
এমনও হতে পারে তারা দুজনেই চক্রান্তের মধ্যে পড়ে গেছে। কোনো একটা নিখুঁত মাথার বুদ্ধি হয়তো এর পিছনে কাজ করে যাচ্ছে। আর তাই যদি হয় তাহলে তো রামিশার পিছনেও এমন কিছু হবার কথা। সাজু যেমন অস্বাভাবিক বিষয় নিয়ে ভাবতে পারে রামিশা তো সেটা নাও করতে পারে।
ঘড়ি দেখলো সাজু ভাই।
রামিশার সঙ্গে কথা হয়েছে প্রায় দুই ঘন্টা আগে। তারমানে বাস কুমিল্লা রেস্টুরেন্টে যাত্রাবিরতি করার সময় হয়ে গেছে। সাজু সেই বাড়িতে বসে রামিশার সঙ্গে কথা বলেছিল, তারপর বাড়ি থেকে বের হয়েছে। খুলনা এসে আরও আধা ঘণ্টা ধরে বসে ছিল তাই দুই ঘন্টা পেরিয়ে গেল।
সাজু রামিশার নাম্বারে কল দিল।
★★★
সাজুর কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে কলটা গেল। রামিশা কলব্যাক করতে গিয়েও করলো না কারণ সাজু ভাই আবার হয়তো কল দেবে। কিন্তু কল নয় মেসেজ এসেছে।
– মেসেজে কথা বলো! তুমি এখন কোন যায়গা?
– রামিশা রিপ্লাই করলো, কুমিল্লার ভিতরে।
– যাত্রাবিরতি শেষ?
– না এখনো হোটেলে আসেনি।
অনেকক্ষণ ধরে মেসেজ আসছে না। রামিশা তখন বারবার স্ক্রিনে তাকাচ্ছে। অবশেষে লম্বা একটা মেসেজ এসেছে।
– মনোযোগ দিয়ে শোনো। তুমি রেস্টুরেন্টে নামার পরে আর ওই বাসে উঠবে না। ওয়াশরুমে গিয়ে নিজেকে সম্পুর্ন পরিবর্তন করে ফেলবে। যেহেতু আমার কাছে আসবে তাই ব্যাগের ভেতর নিশ্চয়ই জামাকাপড় আছে। বোরকা খুলে ব্যাগে রাখবে আর সুন্দর করে হিজাব বাঁধবে। আসল কথা হচ্ছে এমনভাবে পোশাক পরিবর্তন করবে যেন বাসের মধ্যে যারা আছে তারা দেখেও চিনতে না পারে।
– কিন্তু কেন সাজু ভাই?
– সবকিছু এখন বলবো না, তুমি নিজেকে পাল্টে হিজাব দিয়ে মাথা ঢেকে রাখবে। তারপর মাস্ক পরে বের হবে, আর ওই বাসে না উঠে লোকাল কোন সিএনজি নিয়ে কুমিল্লা বিশ্বরোড আসবে। তারপর সেখান থেকে তিশা পরিবহনের গাড়িতে উঠবে।
রামিশা একটু ঘাবড়ে গেল। বাস এতক্ষণে হোটেলে পার্কিং করেছে। সবাই এক এক নেমে যাচ্ছে, তার পাশের লোকটাও নেমে সামনে চলে গেছে। রামিশা নিজের কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে নেমে গেল।
ওয়াশরুমে গিয়ে বোরকা খুলে ব্যাগে ঢোকালো। পরনের থ্রি-পিছ থাকলেই যথেষ্ট কিন্তু ওড়নাটা পরিবর্তন করতে হবে। হাতের মোবাইলের ব্যাক কভার খুলে ব্যাগে ভরে নিলো। ঠিক তখনই তার মনে হলো যে ব্যাগটা দেখে যদি কেউ চিনতে পারে তাহলে কি হবে?
রামিশা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখতে পেল এক মহিলা ফ্লোর ক্লিন করছে। রামিশা তার ব্যাগ একটা সাইডে রেখে দ্রুত বেরিয়ে গেল। নিজেকে এখন অন্যরকম লাগছে, কেউ বুঝতেই পারবে না এই মেয়ে একটু আগে গ্রীণলাইন বাসের মধ্যে ছিল। রেস্টুরেন্টের বাইরে সাইডে একটা কাপড়ের দোকান পাওয়া গেল। সেখানে এখ কর্নারে দুটো ব্যাগ দেখে সে হাফ ছাড়লো। দ্রুত একটা ব্যাগ কিনে সেটা নিয়ে ভিতরে গেল। তারপর পুরাতন ব্যাগটা থেকে সবকিছু বের করে নতুন ব্যাগে ভরে নিলো।
অবশেষে নতুন এক মেয়ে হয়ে বেরিয়ে এলো। ব্যাগ পরিবর্তন করার বুদ্ধি তার নিজের, সাজু ভাই এটা তাকে বলে নাই। কিন্তু সে নিজের বুদ্ধিতে এমন একটা কাজ করেছে। সাজু ভাইয়ের সঙ্গে এই কথাটা সে ঠিকই বলবে।
বাস থেকে নেমেই রাব্বির মনটা খারাপ হয়ে গেল। তার দলের একজন জানিয়েছে আব্দুল কাদেরকে নাকি খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে। সকাল দশটার দিকে তাকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনে গাড়ি হালকা স্লো করতেই কারা যেন বাইকে বসে গাড়ির মধ্যে গুলি করে। আব্দুল কাদের এখনো বেঁচে আছে কিন্তু তার অবস্থা বেশি ভালো নয়। আপাতত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
যিনি গতকাল রাতে রামিশার খুলনা যাবার মেসেজ দিয়েছিল সেই একই ব্যাক্তি আব্দুল কাদেরের আহতের ঘটনা জানিয়েছেন। রাব্বির সঙ্গে তার বেশ কিছু কথা কাটাকাটি হয়ে গেল,
– আমি জানি এটাও আপনি করিয়াছেন কারণ আপনি চান পুলিশের রিমান্ডে আব্দুল কাদের কারো কথা না বলুক। সেজন্য তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেছেন।
– সেই লোকটা বললো, তুমি আপাতত রামিশাকে নিজের হাতে নেবার কাজটা করো। এদিকে কি হচ্ছে সেটা আমি সামলে নেবো।
রামিশা। হঠাৎ করে রাব্বির মনে পড়ে গেল যে বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেছে অনেক আগেই। সে মোবাইল রেখে দৌড়ে বাসের কাছে গেল, সবাই অপেক্ষা করছে।
সুপারভাইজার বললো,
– আরেকজন কোথায়?
– রাব্বি বললো, কার কথা বলছেন?
– আরে আপনার পাশের সিটের মেয়েটা।
– সে আসেনি?
– না, আপনার কাছে তার মোবাইল নাম্বার আছে?
– আমার কাছে কেন থাকবে। আমি তাকে চিনি না তাই না? তাছাড়া আপনার কাছে তার টিকিটের কপি আছে তো, নাম্বারে কল দেন৷
– রিসিভ করছে না ভাই।
– দেখি নাম্বারটা আমাকে দেন তো।
লোকটা নাম্বার দিল। বিরক্ত হয়ে তারা আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। রেস্টুরেন্টের মধ্যে বক্সে গাড়ির নাম ও সবকিছু বলে বারবার ডাকা হলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না, অবশেষে রামিশাকে ছাড়াই রওনা দেবার প্রস্তুতি নিল।
– রাব্বি বললো, নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে। আপনারা চলে যান আমি একটু খোঁজ করে দেখি পাওয়া যায় কিনা।
২০ মিনিটের পরিবর্তে ৫৫ মিনিট পরে গ্রীণলাইন পরিবহন রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল।
রাব্বির চট্ করে মাথার মধ্যে এলো যে রামিশা বাস থেকে নামার কিছুক্ষণ আগে মোবাইল রিসিভ করেছিল।
রিসিভ করে সে বলেছিল ” হ্যালো সাজু ভাই? ”
তারপর মোবাইল কান থেকে নামিয়ে কার সঙ্গে যেন মেসেজ করছিল।
রাব্বি বিস্মিত হলো। তারমানে কি সাজু ভাই বুঝে গেছে রাব্বি বাসের মধ্যে আছে। কিন্তু সেটা বা কীভাবে সম্ভব? একমাত্র সে যার হয়ে কাজটা করে সে ছাড়া কেউ জানে না। তাহলে সাজু ভাই কীভাবে জানবে বাসের রাব্বি আছে। রাব্বি দুটো বাসের চিপায় চলে গেল, দ্রুত নিজের পোশাক পরিবর্তন করে ফেললো।
সত্যি সত্যি যদি সাজু ভাই রামিশাকে সাবধান করে থাকে তাহলে রামিশা এখানেই আছে। কিন্তু তাকে দেখতে পেলে মেয়েটা সন্দেহ করতে পারে তাই হালকা পরিবর্তন করতে চায়।
নিজেকে কিছুটা পরিবর্তন করে রাব্বি হাঁটতে লাগলো চারিদিকে। সবদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে রামিশাকে।
অনেকক্ষণ খুঁজে তারপর আফসোস করতে শুরু করে। সাজু ভাই দুরে থেকেও তার হাত থেকে ঠিকই রামিশাকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেল।
থমকে দাঁড়ালো রাব্বি। জুতা। তার সামনে থেকে একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে তার পায়ের জুতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দিল রাব্বি।
ওয়াও, এই ব্যাপার।
রামিশা তার সবকিছু পরিবর্তন করতে পারলেও জুতা পরিবর্তন করতে পারে নাই। হয়তো তার স্মরণ ছিল না, বা ওদিকে তাকিয়ে কেউ তাকে চিনতে পারবে সে ভাবেনি।
রাব্বি মনে মনে বললো, ” এতো চেষ্টা করেও তোমার জানেমানকে রক্ষা করতে পারলে না সাজু ভাই। রাব্বির চোখে ফাঁকি দেওয়া এতটা সহজ নয় সাজু ভাই। ”
রাব্বি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল রামিশার দিকে। কি করতে হবে সেটা দ্রুত ভেবে নিলো৷ এবার আর বেশ দেরি ঠিক হবে না।
চলবে….