গল্প :- কালো মেয়েটি
পর্ব :- ০২
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
.
-: মেসেজটি পড়ার পর আমি রিপ্লে দিতে যাব এমন সময় দেখি আইডি ডিয়েক্টিভ করে ফেলেছে।
ঐ নম্বরে কল দিলাম কিন্তু নম্বরটিও বন্ধ বলছে।
আমি অবাক হয়ে গেলাম আমি। কি ব্যপার, আমার এত খবর নিলো আবার আমার এই অবস্থার জন্য সব দায় নিজের উপরে নিয়ে ক্ষমাও চাইলো!
কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলাম আমি। কিন্তু কিছুই করার ছিলোনা। কোন সূত্র ছিলোনা আমার কাছে তাকে শনাক্ত করার জন্য। ভাবতে লাগলাম আমি।
–কে এটা?
আমি বিষয়টি নিয়ে যখন বেশ চিন্তিত তখন আমার মনে হওয়া ঘুমন্ত আম্মু বলে উঠলেন।
—ফোন রেখে এবার একটু ঘুমা বাবা! (আম্মু)
আমি বুঝতে পারলাম মা আমার চোখ বুজলেও নিদ্রায় যাননি। আমিও এবার বালিশের পাশে ফোনটি রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ভোর পাঁচটায় মুয়াজ্জিনের আজানে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। মসজিদটি হসপিটালের সামনেই অবস্থিত। আমাদের কেবিনে দুটি বেড। একটিতে মা শুয়েছিলেন। বাবা রাতে বাসায় চলে গিয়েছিলেন।
তখন আমি খেয়াল করলাম আম্মু বেডে নেই।
হয়তো অজু করতে গিয়েছেন। আমি আপাতদৃষ্টিতে খুব বাজে একটা ছেলে। নামাজ কালাম বলতে নেই আমার মাঝে। সপ্তাহের একদিন কেবল শুক্রবার আসলেই নামাজে যাওয়া হয়। মায়ের আসার জন্য অপেক্ষা করছি আমি। প্রায় পনেরো মিনিট পর মায়ের কণ্ঠ শুনতে পেলাম। হুম, কেবিনের দরজার সামনের করিডরেই মায়ের কথা শোনা যাচ্ছে।
শুধু মায়ের নয়, আরো একটি কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। কণ্ঠটা বেশ মিষ্টি। সুস্থ থাকলে এতক্ষণে নেমে গিয়ে দেখে আসতাম কে সেটা। কিন্তু আমার পক্ষে এখন বেড থেকে একা নামাটাও সম্ভব না।
কিছুক্ষণ পরই মা কেবিনে ঢুকলেন। সাথে একজন নার্স। চোখ আটকে গেল আমার নার্সটিকে দেখে। আমার দিকে এগিয়ে এলো নার্সটি। বেডের এপাশ-ওপাশে ঘুরেই মাকে বললো।
—আপনার ছেলেকে চাইলেই কাল নিয়ে যেতে পারবেন। এখানে থাকলে অনেকের কাজে ব্যঘাত ঘটতে পারে।(নার্স)
মা আমার সরল সোজা মানুষ। এসব প্যাচানো কথা বুঝেন না। আমি তো বুঝেছি আমি তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে কিছুক্ষণ আগে তাকিয়ে ছিলাম বলেই কথাগুলো বলেছে। ছেলে মানুষ। বয়সটা যখন কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘”আঠারো বছর বয়স'” কবিতার রসে টইটম্বুর তখন এমন ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে মেয়েদের দিকে এভাবে তাকালে গোনাহও হয়! সেটাও মাথায় রাখা উচিৎ।
নিজেকে এসব কথা বলি আবার পরক্ষণেই ভুলে যাই। ঐ যে, ওয়াজ মাহফিলে গেলে হুজুরদের মুখে শুনি তাঁরা এসব নিয়ে কথা বলেন।
বিশেষ করে যুবসমাজকে তারা জাহান্নামের আজাব সম্পর্কে কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে এসব বিষয়ে সতর্ক করলেও সেগুলো আমি এবং আমরা এক কান দিয়ে ঢুকাই আর অন্য কান দিয়ে বের করে দিই।
এইতো সেদিন খালাতো ভাই আতিকদের বাড়িতে গিয়েছিলাম ওয়াজ শুনতে।
আন্টি ফোন করে বলেছিলেন যেন, তাঁদের বাড়ির পাশে হওয়া ওয়াজ মাহফিল শুনতে যাই।
না গিয়ে পারিনি। বন্ধুরা সবাই মিলে গিয়েছিলাম সেদিন।
সেখানে জনৈক বক্তার আলোচনার বিষয় ছিলো পর্দার বিধান নিয়ে। আমরা পুরুষ মানুষরা সাধারণত পর্দা কথাটি শুনলেই মনে করি এটি কেবল নারীদের জন্যেই প্রযোজ্য। অথচ, আমাদের পুরুষের বেলায়ও যে এর সমান গুরুত্ব রয়েছে আমি সেদিনের ওয়াজে তা না শুনলে জানতেই পারতামনা। সেখানে আলোচনার একপর্যায়ে বক্তা বলতে থাকেন,
“দৃষ্টি অবনত রাখার উপায়ের ব্যপারে প্রখ্যাত আলেম শেইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ বলেনঃ
ইসলামী শরিয়ত এমন সমস্ত পথকে নিষিদ্ধ করে যা মানুষকে অনৈতিকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে:
তার মধ্যে একটি হল গায়ের মাহরাম বা বেগানা নারীর দিকে তাকানো। মাহরাম হল বিয়ের জন্য নিষিদ্ধ এমন আত্মীয়।
যেমন পুরুষদের জন্য মা, বোন, মেয়ে, আপন খালা, ফুফু, শাশুড়ি ইত্যাদি:
আর নারীদের জন্য বাবা, ভাই, ছেলে, আপন চাচা, মামা, শ্বশুর ইত্যাদি।
সুতরাং গায়ের মাহরাম হল এমন সমস্ত মানুষ যারা মাহরাম নন। মহান আল্লাহ বলেন: “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে (নিষিদ্ধ জিনিস দেখা হতে) এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে।
এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে।
নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।” [সূরা নুরঃ৩০]
এই আয়াত সম্পর্কে ইমাম ইবনে কাসীর বলেছেনঃ আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশ হল যেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করা হারাম করা হয়েছে বান্দা যেন সেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত না করে।
হারাম জিনিস হতে চক্ষু নিচু করে নেয়। যদি আকস্মিকভাবে দৃষ্টি পড়েই যায় তবে দ্বিতীয়বার যেন দৃষ্টি না ফেলে।
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ ‘সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে নেবে।’ [মুসলিম ৫৩৭২]
দৃষ্টি নিম্নমুখী করা, এদিক ওদিক দেখতে শুরু না করা, আল্লাহর হারামকৃত জিনিসগুলোকে না দেখা এই আয়াতের উদ্দেশ্য। হযরত বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে: রাসুল (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ) কে বলেন- ‘হে আলী! দৃষ্টির উপর দৃষ্টি ফেলো না।
হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার জন্য ক্ষমার্হ, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমার যোগ্য নয়।’ [আবু দাউদঃ২১৪৪]
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘হঠাৎ দৃষ্টি’ বলতে বোঝায় যখন কোন ব্যক্তির চোখ অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন বেগানা নারীর উপর পড়ে যায়।
এভাবে হঠাৎ করে চোখ পড়ে যাওয়াতে কোন গুনাহ নেই, তবে সাথে সাথে তার দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু যদি সে এর পরও দেখা বন্ধ না করে, তাহলে সে এই হাদিস মোতাবেক গুনাহগার হয়ে যাবে।
পুরুষরা তাদের দৃষ্টি অবনত রাখবে, সব অবস্থায় নিষিদ্ধ জিনিস দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখবে, যদি না একান্তই কোন বৈধ কারণ থাকে।
যেমন:-
কোন সাক্ষ্য দেওয়া, চিকিৎসা, বিয়ের প্রস্তাব, আর্থিক লেনদেন এর সাথে সম্পর্কিত কোন বিষয় ইত্যাদি।
এই সমস্ত ক্ষেত্রেও ঠিক ততটুকুই দেখা বৈধ ঠিক যতটুকু দরকার, এর বেশী নয়।
দৃষ্টি সংযত রাখার অনেক উপায় আছে। আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ আমাদের সাহায্য করেন।
১) সবসময় মনে রাখা যে আল্লাহ আপনাকে দেখছেন, আপনি যেখানেই যান আল্লাহ আপানার সঙ্গেই আছেন (তাঁর সর্বময় জ্ঞানের মাধ্যমে) হতে পারে আপনি লুকিয়ে আপনার পাশের জনকে দেখছেন যা সে জানে না, কিন্তু আল্লাহ তা জানছেন।
চোখের চুরি এবং অন্তরের গোপন বিষয় তিনি জানেন। [সূরা গাফিরঃ১৯]
২) আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া, মিনতি সহকারে তাঁকে ডাকা।
আল্লাহ বলেন: তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। [সূরা গাফিরঃ৬০]
৩) সবসময় মনে রাখবেন, আপনি যা যা নেয়ামত উপভোগ করছেন তার সবই আল্লাহর তরফ থেকে পেয়েছেন, আর এ জন্য আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। আল্লাহর দেওয়া দৃষ্টির নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জানাতে হলে আপানাকে আপনার চোখ দুটিকে সে সব জিনিস দেখা থেকে বিরত রাখতে হবে যা যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন।
ভালো কাজের প্রতিফল কি ভালো ছাড়া কিছু হতে পারে? তোমাদের কাছে যে সমস্ত নেয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে। [সূরা নামলঃ৫৩]
৪) নিজের সাথে সংগ্রাম করা, দৃষ্টি নত রাখার জন্য নিজে নিজে অভ্যাস করার চেষ্টা করা এবং এ কাজে ধৈর্যশীল হওয়া ও হাল ছেড়ে না দেওয়া।
আল্লাহ বলেন: যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন। [সূরা আনকাবুতঃ ৬৯]
৫) এমন সব স্থান এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা যেখানে নিষিদ্ধ দৃষ্টির প্রলোভনে পড়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে হয়। যেমন, মার্কেট, বিপনী বিতান, পর্দাহীন দাওয়াতের আসর, রাস্তা ঘাটে অলস আড্ডা, ইন্টারনেটে অহেতুক ঘাঁটাঘাঁটি ইত্যাদি।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন: তোমরা রাস্তার উপর বসা ছেড়ে দাও। লোকজন বলল, এ ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। কেননা, এটাই আমাদের উঠাবসার জায়গা আর এখানেই আমরা কথাবার্তা বলে থাকি।
জবাবে তিনি বললেন, “যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে।
“তখন তারা বলল, রাস্তার হক কি? তিনি (সাঃ) বললেন, ‘দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎকাজে নিষেধ করা।’[বুখারী ২৩০৩; ইফা]
ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এই হাদিসটি প্রযোজ্য। এখানেও নিজের দৃষ্টিকে (নিষিদ্ধ সাইট, অন্যের প্রোফাইল অকারণে দেখার মাধ্যমে) যত্রতত্র নিক্ষেপ করা, কাউকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করা, অর্থহীন আলোচনায় লিপ্ত হওয়া অনুমোদনযোগ্য নয়।
৬) সবসময় এটা মনে রাখা যে, পরিস্থিতি যেমনই হোক, নিষিদ্ধের প্রতি আকর্ষণ বা প্রলোভন যতই বড় হোক, আপনার মনের ভেতরে যতই আবেগের তাড়না আসুক, এই ব্যপারে আপনার আর কোন পথ খোলা নেই। আপনাকে সব জায়গায়, সব সময় নিষিদ্ধ জিনিস থেকে দৃষ্টি সংযত করতেই হবে। আশেপাশের কলুষিত পরিবেশের অজুহাত দিয়ে বা আপনি প্রলোভনের শিকার হয়েছেন এসব কথা বলে নিজের দোষের সপক্ষে যুক্তি দেখানোর কোন অবকাশ নেই।
৭) বেশী বেশী করে নফল ইবাদত করা, কারণ নিয়মিত ফরজ এবাদতের সাথে সাথে নফল ইবাদত করে নিজের শারীরিক কার্যাবলীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেছেন, “আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী শোনে) আমিই তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে সবকিছু দেখে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী দেখে) আমিই তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী হাত দিয়ে কাজ করে) আমিই তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলে (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী চলে) সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, তবে অবশ্যই আমি তাঁকে আশ্রয় দেই।” [সহীহ বুখারী ৬০৫৮]
৮) এটা মনে রাখা উচিৎ যে আমরা যে জমীনের উপর গুনাহ করি, সেই জমীন আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের গুনাহের সাক্ষী দেবে।
আল্লাহ বলেনঃ সেদিন সে (পৃথিবী) তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। [সূরা জিলজালঃ ৪]
৯) যে আয়াত দৃষ্টিকে এদিক সেদিক অযথা নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি নিক্ষেপ করতে নিষেধ করে তা মনে করা।
যেমনঃ “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে (নিষিদ্ধ জিনিস দেখা হতে) এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।” [সূরা নুরঃ৩০]
১০) অপ্রয়োজনীয় এদিক সেদিকে দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকা, শুধুমাত্র যা দেখা প্রয়োজন সেদিকে তাকানো:
বিশেষ করে এমন জায়গায় অযথা দৃষ্টি না ফেরানো যেখানে এমন প্রলোভনের আশঙ্কা থাকে যা থেকে সহজে মুক্ত হওয়া কঠিন। হতে পারে সেটা আপনার আশেপাশের দৃশ্যে, বা কোন ম্যাগাজিনে, টিভিতে, অথবা ইন্টারনেটে।
১১) বিয়ে হল একটি কার্যকরী প্রতিকার। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন: “হে যুব সম্প্রদায়!
তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিবাহ তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে:
এবং যাদের বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা পালন করে। কেননা, রোজা তার যৌনতাকে দমন করবে।” [সহীহ বুখারী ৪৬৯৬, ইফা]
১২) বেহেশতের হুরদের কথা মনে করা:
আল্লাহ আপনাকে যা নিষেধ করেছেন তা দেখা হতে নিজেকে বিরত রাখতে উৎসাহিত করবে, যাতে আল্লাহর এই নেয়ামতের পাওয়ার আশা করতে পারেন।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন: ‘জান্নাতের কোন নারী যদি দুনিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করে তবে সমস্ত দুনিয়া আলোকিত ও খুশবুতে মোহিত হয়ে যাবে। জান্নাতি নারীর নাসীফ (ওড়না) দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে উত্তম।’ [সহীহ বুখারী ৬১২১; ইফা]
১৩)যার প্রতি আকৃষ্ট বোধ করছেন তার ত্রুটি সম্পর্কে চিন্তা করা।
১৪)যত্রতত্র দৃষ্টি নিক্ষেপের কুফল, এর শাস্তি ও তার যন্ত্রণার কথা চিন্তা করা।
১৫) দৃষ্টি অবনত রাখার সুফল সম্পর্কে চিন্তা করা।
১৬) মানুষের সঙ্গে আলচনার আসরে, জনসমাবেশে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করা, এর কুফল সম্পর্কে ব্যখ্যা করা।
১৭) যেসব পোষাকে, চালচলনে, কথাবার্তায় সৌন্দর্য প্রদর্শিত হয় ও অন্যকে আকৃষ্ট করে এমন সব কিছু পরিহার করতে নিজের পরিবার ও আত্মীয়দেরকে উপদেশ দেওয়া।
১৮) যেসব কুচিন্তা ও শয়তানের ওয়াসওয়াসা মনে জাগে তা আপনাকে কাবু করে সেই অনুযায়ী কাজে পরিণত করার আগেই সাথে সাথে তা ঝেরে ফেলা। যে প্রথম দৃষ্টিতেই নিজেকে সংযত করে নেয় সে অনেক সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে; কিন্তু যে নিজেকে এই কাজেই লিপ্ত রাখে সে কখনও দৃঢ়তার সাথে মন থেকে এর কুপ্রভাব দূর করতে পারে না।
১৯) মৃত্যুর সময় নিজের কর্ম নিয়ে গভীর অনুশোচনার কথা জীবন থাকতেই চিন্তা করা ও এই করুন পরিনতির কথা চিন্তা করে ভীত হওয়া।
২০) সৎসঙ্গে থাকা। কারন মানুষ যাদের সাথে চলাফেরা করে তাদের বৈশিষ্ট্য দিয়েই প্রভাবিত হয়। আর তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচরের অনুসরণ করে; এবং সবচেয়ে কাছের বন্ধুই মানুষকে তার নিজের পথে টেনে নেয়। আপনি যদি এমন বন্ধুদের সঙ্গে থাকেন যাদের দৈনন্দিন অভ্যাসই হল অন্য নারীদের নিয়ে আলোচনা করা, হারাম দৃষ্টি নিক্ষেপ করা, তাহলে নিশ্চিত ভাবেই আপনার জন্য দৃষ্টি সংযত রাখা দুরূহ। অন্যদিকে আপনি যদি এমন মানুষের সঙ্গে থাকেন যিনি এই বিষয়ে সদা সতর্ক, স্বাভাবিকভাবেই তখন আপনি ইচ্ছা থাকেলও এই হারাম কাজ প্রকাশ্যে করতে সংকোচ বোধ করবেন। অতএব সঙ্গ নির্বাচনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন, নিজের স্বার্থেই।”
(তথ্যসূত্র- কোরআনের আলো ডট কম, ইসলামী ওয়েবসাইট)
সেদিন যখন ওয়াজ মাহফিলে বক্তার মুখে উপরোক্ত কথাগুলো শুনছিলাম এবং এর আরো পরে দোজখের আজাব আর বেহেশতের নাজ নেয়ামতের কথা শুনছিলাম তখন আমি সহ বন্ধুরা সবাই শপথ করেছিলাম যে, এখন থেকে কলেজে গিয়ে আর কোন মেয়ের দিকেই তাকাবো না। কাল থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো। আরো কত কি প্ল্যান করেছিলাম। অথচ, সেদিনের ফজরের নামাজটাই আমরা কেউ আর পড়িনি! এর পর দিনই বাড়িতে ফেরার পথে অটোরিকশায় (ব্যাটারি চালিত আট সিটের গাড়ি) মেয়েদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে আমরা বাড়ি ফিরি! ভাবতে পারছেন কি বিষয়গুলো? এই হলো আমাদের হালচাল!
ঘড়ির কাটা তখন ভোর পাঁচটা বেজে চল্লিশ মিনিট।
ঐ নম্বরটি থেকে কল আসলো আবার। আমিও হলাম আরেক সার্কাস। নম্বরটি সেভ করে রেখেছি ‘Tension’ লিখে। কারণ, এর সাথে কথা বলে আমি দুশ্চিন্তা ছাড়া আর কিছুই পাইনি। জানি পরিচয় দিবেনা তাই ফোনটা কেটে দিলাম। এভাবে পরপর দশটি কল দিলো। আমিও দশবারই ফোনটা কেটে দিলাম।
এগারোতম বার রিসিভ করলাম ফোনটা। রাতে তো আর ফোনে কথা হয়নি। তখন শুধু কথা হয়েছিল ফোনের মেসেজ আর মেসেঞ্জার চ্যাটে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেয়েলোকের কান্নার স্বর ভেসে আসলো আমার কানে!
আমি এবার বেডে উঠে বসে পড়লাম। আরে! মেয়েটি কাঁদছে কেন? এবার মেয়েটিকে প্রশ্ন করলাম,
–কে আপনি? আর এভাবে কাঁদছেন কেন?
মেয়েটি কান্নামাখা স্বরে বলতে লাগলো,,
—আপনি কি মানুষ? আপনি জানেন আমি সারারাত ঘুমোইনি পর্যন্ত। কাল রাতে খেতেও পারিনি। সারারাত বিছানায় পড়ে থেকে কেঁদেছি আমি।
শুধুমাত্র দূর থেকে আপনাকে ভালোবেসেছি বলে আমার কারণে আপনাকে ওদের হাতে মার খেতে হয়েছে। আমার কারণে আপনাকে হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকতে হচ্ছে। আমি আড়ালে থেকে আপনার একটু খোঁজখবর নিতে চাইলাম সেটাও করতে দিচ্ছেন না আপনি! আপনি মানুষ না পাষাণ!
কথাগুলো বলে আরো কাঁদতে লাগলো মেয়েটি। মেয়েরা রেগে গিয়ে বা অভিমান করে যখন কিছু বলতে থাকে তখন তাদের মুখের উপর পাল্টা কিছু বলতে নেই।
এতে করে ভয়াবহ বিস্ফোরণের সম্ভবনা বেড়ে যায়। এসময় চুপ করে থেকে শুধু শুনে যেতে হয়, সয়ে যেতে হয়, যা যা বলে আর দাবি করে ক্ষনিকের জন্যে হলেও সব মেনে নিতে হয়।
আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার আগমুহূর্ত অবদি এমনটি করতে হয়। আমিও সেটা করলাম। ফোনটি কানের সাথে লাগিয়ে চুপ করে রইলাম।
.
.
চলবে………………♥♥
.