#ফিরে_আসা_সিক্রেট_মাফিয়া (Politics_02)
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০৬

রাশেদ চুপচাপ করে বসে আছে আর রাধিকার বসা চেয়ার ভালো করে দেখছে।সেখানে রাধিকার ফোন রাখা।রাশেদ বুঝতে পারল।রাধিকা ফোনে রেকর্ড রেকর্ডিং নিশ্চয় চালু করে দিছে।

রাশেদ সবাইকে ইশারায় বসতে বলল।আর রাশেদ নিজে রাধিকার ফোনটা হাতে নিলো।দেখে লক করা।রাশেদ ভালো করে বুঝতে পারছে কি করছে রাধিকা।রাশেদ সবাইকে চুপ থাকতে বলে নিজের ল্যাপটপ বের করে।আর রাধিকার ফোন কানেক্ট করে।লক ভেঙে ফোনের ভেতরে গিয়ে দেখে সত্যি রেকর্ডিং চালু করা।

রাশেদও মুচকি হেঁসে। ফোনটা নিয়ে বাইরে গেল আর পেছন থেকে রাধিকাকে ডাক দিয়ে বলল…
তোমার ফোন ভুলে চেয়ারে ফেলে আসছ এই নাও।
রাশেদ ফোনটা দিয়ে একটু হাসি দিল।রাধিকা রাশেদের দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দিলো।রাশেদ কিছু না বলে আবারো মিটিং রুমে চলে এলো।রাশেদের সন্দেহ যত তত বেশি হচ্ছে।

একটা পেপারে বড় করে কি যেন লিখে রাশেদ সবার দিকে দেখালো।রাশেদের পাশেই বসা ছিল তুষার।তুষার লেখাটা দেখে বেশ অবাক। কারণ পেপারে লেখা আছে “আমরা যা বলছি তা সব এমপি এবং অন্য কেউ শুনতে পাচ্ছে। কেউ কথা বলবে না এখানে চিপ লাগানো আছে।”

এই লেখাটা দেখে সবাই বেশ ঘাবড়ে যায়।রাশেদ সবাইকে অবাক করে দিয়ে ব্যাগ থেকে কোথাও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস রাখা আছে কি না চেক করার মেশিম বের করে চেক করা শুরু করল।পুরো রুম থেকে তিনটা সিপ বের করলো।সেগুলো দিয়ে এমপি সব প্ল্যানিং জেনে যেত।রাশেদ একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে চিপ গুলো একটা বক্সে ভরে ফেললো।টেবিলে বক্সটা রেখে সবাইকে বলল আমরা এই পর্যন্ত যা প্ল্যানিং করছি সব এমপি জেনে গেছে।আর আমাদের টিমে যে নতুন কতগুলো চেলে নিছি তাদের মধ্যে এমপির ছেলে আছে।

রাশেদের কথা কেঁড়ে নিয়ে তুষার বলল তাহলে এখন তো আমাদের নতুন ভাবে প্ল্যান করতে হবে।
রাশেদঃহুম আমাদের প্ল্যান করতে হবে রবির মতো করে।
তুষারঃকিভাবে?
রাশেদঃযে কোনো কাজের জন্য রবি একসাথে দুইটা প্ল্যান করতো।আমাদের ও তাই করতে হবে।মানে আমদের প্ল্যান নতুনদের জন্য হবে একটা আর আমরা যারা পুরোনো আছি তাদের জন্য হবে একটা।

তারপর রাশেদ পুরোনোদের কি কি করতে হবে বলে দিল।মিটিং শেষ করে যে যার যার মতো করে চলে গেল।কয়েক দিন পর নতুন আরো একটা মিটিংয়ে কথা জানানো হলো সবাইকে।

এই দিকে রবি রাফসানের পুরো টিমটা আস্তে আস্তে ছোট করে নিচ্ছে। সেখানে থাকা সবাইকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এভাবে দুই মাস হতে না হতে পুরো টিমে মাত্র হাতে গনা কয়েক জন আছে।আরো প্রায় পনেরো দিন পর পুরো টিমে মাত্র ছয় জন আছে।তাও রবির লোক গুলো।এই দিকে এমপি রাফসানের সাথে হাত মিলানোর চেষ্টা করছে।
রবি যখন রাফসানের জায়গায় তখন চালাকি করে রবি এমপির সাথে হাত মিলিয়ে নিলো।দুই দিকে এমপির ক্ষতি এখন।রাফসান মানে রবি শেষে পল্টি দেবে যা এমপির জন্য বড় বিপদ। আর ঐ দিকে নির্বাচন নিয়ে রাশেদের কি প্ল্যান সেটা জানবে না।নতুনদের নিয়ে যা প্ল্যান করবে তা কোনো ভাবে জানবে না এমপি।

দেখতে দেখতে নির্বাচনের দিন চলে এলো।রাশেদ মাস্টার প্ল্যান করে রাখছে নির্বাচন নিয়ে।কোনো ভাবে নির্বাচনে এমপি কিছু করতে পারবে না।সময় যত তত ঘনিয়ে আসছে।এমপি রাফসান মানে ছদ্মবেশী রবির সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে।রবিও প্ল্যান করছে।

হঠাৎ এমপি ফোন দিয়ে রাফসানকে ডাকলো কোনো মিটিং করার উদ্দেশ্যে।ছদ্মবেশী রবি, ডিসি,মেয়র,এমপি সবার সাথে মিটিং করলো।মিটিংয়ের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো নির্বাচনের দিন এমপির লোক গুলো নিজেদের মধ্যে মারামারি করবে আর সেই মারামারি যের ধরে নির্বাচনের ফলাফল ঘুরিয়ে এমপির দিকে নিয়ে নিবে।মারামারি শুরু হলে ভিপি মানে রাশেদের লোক গুলোও বসে থাকবে না।তারাও মারামারি করবে আর সেই সুযোগে এমপি নিজের কাজ করে দিবে।

মিটিং শেষ করে ওঠতেই রবি জানালার পাশে একটা ক্যামরা ম্যান কে দেখতে পেলো।রবি তাকে না দেখার মতো করে চলে আসতে যাবে তখনই এমপি ক্যামরা ওয়ালাকে দেখে ফেললো।সাথে সাথে ক্যামরা ম্যান দৌড়াতে শুরু করল।এমপি তার পেছনে লোক লাগিয়ে দিল।কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় নি।সে বাসে চড়ে চলে গেল।এমপির লোক গুলো শূন্য হাতে ফিরে এলো।

মিটিংয়ের পুরো ভিডিও রবির কাছেও আছে।কারন রবির শার্টে ক্যামরা লাগানো ছিল যা দিয়ে সব কিছু ভিডিও হয়েছিল।

এমপি সব লোকদের বলে দিল ঐ ক্যামরা ম্যানকে ধরতে। কিন্তু তাঁকে আর খুঁজে পাই না।এই দিকে ক্যামরা ম্যান রাশেদকে ফোন দিয়ে এই ভিডিওর কথা বলে দিল।ক্যামরাটা বাসে রেখে দিয়ে মেমোরি কার্ড নিয়ে সে চলে যেতে লাগলো।পথেই এমপির লোক তাকে ধরে ফেললো।ধরতে না ধরতে রাহী আর সিকদার সেখানে হাজির।

রাহী ক্যামরা ম্যানকে চেক করলো কিন্তু সেখানে চিপ পেলো না।একটু পরই সেখানে রাশেদের লোক সেখানে এলো রাশেদ সহ আছে।রাশেদ রাহী আর সিকদারকে দেখে অবাক।রাশেদ দুই জনকে বলল…
–ওকে ছেড়ে দেয়।(ক্যামরা ম্যানকে দেখিয়ে)
রাহীঃতা কেমনে হয় এমপি আর আমাদের ভাইয়ের মিটিংয়ের ভিডিও করেছে সে তাই ধরতে আসছি।কেউ পথে আসলে তাঁকে সরিয়ে দেব।
–দেখ তোরা দুই জন আমাদের বন্ধু হয়ে কিভাবে এমপির হয়ে কাজ করতে পারিস?
রাহীঃটাকা মানুষকে সব করাতে পারে।আমাদের ভাই যা বলে আমরা তাই করি।
–তোদের রাফসান ভাই একটা অমানুষ।
রাহীঃনিয়ে যাচ্ছি এই বেটাকে। কেউ পথে আসলে তাঁকে মেরে শেষ করে দেব।

রাহী আর রাশেদ মধ্যে অনেক কথা কাটাকাটি হয়।হঠাৎ রাশেদের ফোনটা বেজে ওঠে।ফোনটা ধরতে ওপাশ থেকে ভিন্ন রকম একটা কন্ঠে বলা শুরু করল…
–ক্যামরা ম্যানকে রাহীর হাতে তুলে দাও।
রাশেদঃকে তুই?
–আমাকে চিনতে হবে না।তবে এটা জানি ওকে ছেড়ে দিলে তোদের ভালো হবে।ভয় পাস না আমি তোর শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি বলে দেব কিভাবে কি করবি।আর যে ভিডিওর জন্য তোরা সবাই ক্যামরা ম্যানকে খুজতেছিস সে ভিডিও টা তোর ফোনে পাঠিয়ে দিচ্ছি। লোকটাকে রাহীর সাথে কোনো ঝামেলা করিস না।

রাশেদঃলাগবে না ভিডিও। ভিডিও আমি পরে পেয়ে যাব।আর এমপিকে কিভাবে কি করতে হবে তা আমি ভালো করে জানি।লোকটাকে কোনো ভাবেই নিতে দিচ্ছি না।

–লোকটা আমার কাছে ভালো থাকবে।কোনো ক্ষতি হবে না ওর।তুই চাইলে পরে নিয়েও যেতে পারিস তবে এটা মাথায় রাখ এখন লোকটাকে নিয়ে ঝামেলা করলে তোকে।পুলিশ গ্রেফতার করবে।ফলে তোর প্ল্যান কোনো কাজে আসবে না।

রাশেদঃকে তুই বিশ্বাস করতে পারছি না তোকে।
–আমি সেই যে তোকে বলেছিল রাধিকা সুবিধার নয়।
রাশেদঃতার মানে…..
–হুম আমি সে।লোকটাকে আনতে দেয় আর তুইও সাবধানে থাকিস। এমপির লোক তোর উপর হামলা করতে পারে।
রাশেদঃঠিক আছে লোকটাকে নিতে দিচ্ছি যদি ওর ক্ষতি হয় তাহলে কোনো রাফসান বা এমপি বাঁচতে পারবে না মনে রাখিস।

তারপর রাশেদ লোকটার দিকে তাকিয়ে রাহীকে বলল….
–যদি ওর কিছু হয় তাহলে রাহী তুই আর সিকদার কেউ বাঁচতে পারবি না।
রাহীঃসেটা পরে দেখা যাবে।

তারপর রাহী লোকটাকে নিয়ে রবির কাছে চলে এলো।রবির সামনে লোকটাকে বসালো।রবি সোজা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল…
রবিঃমেমোরি কার্ড কোথায়?
–জীবনেও বলব না তবে যেখানে থাকুক সেটা এক সময় ভাইরাল হবে মনে রাখিস।আমি জানি তোরা আমাকে মেরে ফেলবি কিন্তু মেরোরি কার্ড তোরা কখনো পাবি না।

রবি ওর কথা শোনে হাসতে শুরু করল।রবির এই রহস্যময় হাসি দেখে বললো….
–কি আজব পাগল হয়ে গেলি নাকি?
রবিঃকি মনে করছিস তোকে মারার জন্য এখানে নিয়ে আসছি?নারে তোকে এমপির হাত থেকে বাঁচাতে এখানে নিয়ে আসছি।
–মানে?
রবিঃমানে হলো রাশেদ আমার বন্ধু তোর যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তাই নিয়ে আসছি।সমস্যা নেই রাতে তোকে রাশেদের কাছে পাঠিয়ে দেব।
–হা হা এসব বলে আমার থেকে ভিডিও পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে না?
রবিঃনা ভিডিও তোরটা লাগবে না আমার কাছে আছে ভিডিওটা। আমি ওটা রাশেদকে দিয়ে দিছি।আর ভিডিও তোর কাছে নেই কেন জানিস বাসে থাকার সময় তোর মানি ব্যাগ পকেট মেরে দিছে আর মেমোরি কার্ড সেখানে ছিল।চাইলে ওই কার্ডটা আমি আনতে পারি।কিন্তু ওটা আমার লাগবে না।
–তার মানে তুই এমপির লোক নয়?
রবিঃনারে আমি এমপির বিরাট শত্রু।
–তাহলে এমপির সাথে মিলে মারামারির প্ল্যান করাটা কি ছিল?
রবিঃওটা একটা চাল আমার।এত কিছু তোকে জানতে হবে না। রেডি থাকিস রাতে তোকে রাশেদের কাছে নিয়ে যাব।

লোকটা রবির কথা এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না।অপেক্ষা করতে লাগলো কখন রাত হবে তার জন্য। রাত নয়টা হতে রবি একটা মাস্ক পড়ে নিলো।লোকটার সাথে রাহী আর সিকদারকে পাঠালো।সাথে দুই জনকে গুলি নিতে বললো।রবিও একটা গুলি নিলো।
রাহী,সিকদার আর লোকটা একটা গাড়িতে বসে রাশেদর বাসার সামনে চলে গেলো।

লোকটাকে নিয়ে রাশেদের বাসার কলিং বেল চাপ দিতে রাশেদ দরজা খুলে দিল।লোকটাকে নিয়ে ভেতরে গেল।রাহী একটা সোফায় বসতে বসতে বলল কি অবাক হচ্ছিস লোকটাকে তোর কাছে নিয়ে আসছি বলে?

রাশেদ কিছু বলছে না চুপ করে বসে পড়লো।পাশে সিকদারও বসে পড়লো।তাদের কথার আওয়াজ শোনে কাজের মেয়েটা বাইরে আসলো।রাহী মেয়েটাকে বলল কফি দিতে।রাহীর কথা শোনে রাশেদ আরো অবাক।মেয়েটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রাশেদ ইশারা করতে সে কফি বানাতে চলে গেলো।

হঠাৎ রাশেদ আর রাহী বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ শোনতে পাই।রাহী চুপচাপ জানালার পাশে এসে বাইরে তাকিয়ে দেখে প্রায় পনেরো জন মতো মুখে কাপড় দিয়ে গুলি হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে ভেতরে আসছে।

#To_be_continue…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here