#ফিরে_আসা_সিক্রেট_মাফিয়া (Politics_02)
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০৩
এতটুকু বলে অজয় থেমে গেল।রবি মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে তার সাথে কি হয়েছিল।বার বার মাথায় চাপ দিতে লাগলো। একটু একটু মনে পড়ছে তার।
পাশ থেকে অজয় রবিকে পেশার দিচ্ছে অতীতে কি হয়েছিল তা মনে করার জন্য। রবি চেষ্টা করছে মনে করার হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল অতীতে কি হয়েছিল সব।
রবিঃআমার সব মনে পড়েছে…
অজয় এবার জিজ্ঞেস করল কি হয়েছিল আর গুলি কিভাবে লেগেছে আর নদীতে বা কিভাবে গেল।রবি এবার বলা শুরু করল…..
রবিঃ আমি এখন যা বলব তা কেউ বাইরে বলতে পারবে না।অনেকের কাছে আমি হয়তো মরে গেছি।তাই আমি এবার সবার অগোচরে কাজ করব।
অজয়ঃসমস্যা নাই ভাই আমরা আর চাচা ছাড়া কেউ জানবে না।
রবিঃমামা মানে কোন চাচা আর সে কেন জানবে?
–আমরা গ্রামের বাসায় গিয়ে আপনাকে নদীতে পাই আর সেখানকার চেয়ারম্যান আমার চাচা।চাচাকে আমি আপনার সব কথা বলেছি।তাই চাচা সব কিছু গোপন করে আপনাকে চিকিৎসা করতে এখানে পাঠিয়েছে। তাই চাচা সব জানে।আর উনি আমাকে বলেছে আপনি যতদিন সুস্থ না হন ততদিন যাতে কেউ আপনার আসল পরিচয় না জানে।জানলে আপনার জীবন আবারো বিপদে পড়তে পারে।
রবিঃওহ বুঝতে পারছি তোমার চাচা আমার শরীরের গুলি দেখে এমন করতে বলেছে।
–হ্যাঁ ভাই।বলেন কি হয়েছিল আপনার?
এবার রবি থেমে না থেকে বলা শুরু করল…
“তোমরা ভার্সিটির সবাই জান আমি রাধিকা নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসি।পরে জানতে পারি সে কন্ট্রাক্ট কিলার।আমাকে মেরে ফেলার জন্য সুপারি নিয়েছে এমপির থেকে।সময় আর সুযোগ বুঝে একদিন সন্ধ্যার সময় রাধিকা আমাকে নদীর পাড়ে ঘুরতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে আমি নরমাল ভেবেছিলাম।কিন্তু কিছু সময় বসার পর আমি বুঝতে পারি নদীর চারপাশে এমপির লোক আছে আর তারা আমাদের ঘিরে রেখেছে।আমি বুঝতে একটু দেরি করে ফেলি।ততক্ষণে এমপির লোক আমাদের খুব কাছে চলে আসে।চাইলে আমি সেখান থেকে বের হতে পারতাম। কিন্তু আমি তা না করে রাধিকার পুরো মতলব জানতে ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করি।তারা আমাকে একটা গোডাউনে নিয়ে গিয়ে টর্চার করে।কিছু সময় পর এমপি এসে টর্চার করে।শেষের দিকে দেখি আমার টিমের মানে ভিপির টিমের ছাদেক তাদের সাথে হাত মিলিয়েছে।আমার কাছে বেইমানি করলে ফল ভালো হয় না কখনো তাই সেখানেই থাকা গুলি নিয়ে ছাদেককে মেরে দিলাম।আর তাদের মধ্যে রাধিকা মেরে দিল আমাকে। তারপর নদীতে ফেলে দিল হয়তো। এরপর কিছু মনে হয়।
এর পরে কতদিন কি করছি জানি না।তবে আজ হসপিটালের কথা মনে আছে।”
এবার রবি থেমে গেল সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে।অজয় বলে ওঠল…
–তাহলে এখন কি করবেন ভাই?ফিরে যাবেন নাকি ক্যাম্পাসে?
রবিঃফিরে যাব না।আড়ালে রয়ে যাব তবে আমি যে আছি সেটা যাতে কেউ না জানে।
–ঠিক আছে ভাই কেউ জানবে না।কিন্তু ভাই একটু আগে কি হয়েছিে আপনার মনে আছে?
রবিঃনা হসপিটালে আসার আগে কি হয়েছিল মনে নেই।
–তাহলে বলি সেটা?
রবিঃহ্যাঁ বল কি হয়েছিল?
অজয় রবিকে কিছু বলবে কিন্তু থেমে গেল কারণ পাশে অজয়ের মা আর বোন বসে আছে। অজয় তাদের ভেতরে যেতে বলল।ওরা ভেতরে চলে গেলে অজয় বলে।
–ভাই আপনার মুখে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছি যাতে আপনার জীবনের কোনো ঝুঁকি না থাকে।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঝুঁকি আরো বেশি বেড়ে গেছে।
রবিঃকি বলছ আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।
–গ্রামের নদীতে আপনাকে পাওয়ার পর আমাদের মন হল আপনার আসল চেহারা কেউ দেখলে আবার আপনার উপর হামলা হতে পারে।আমি এটা শিওর ছিলাম আপনাকে কেু চক্রান্ত করে মেরে ফেলতে চেয়েছে।তাই ঝুঁকি এড়াতে আপনার মুখে সার্জারি করাই। কাল আজ বিকালে আমরা হাটতে বের হয়ছিলাম তখন কতগুলো লোক গাড়ি থেকে নেমে আসে আর আপনাকে ভাই বলে।আমার মনে হয় এরা সবাই মাফিয়া ছিল।
রবিঃতার মানে আমার মুখে যে চেহারা বসিয়েছ তা কোনো মাফিয়াদের লিডারের?
–এই ঘটনার পর আমারো তাই মনে হচ্ছে।
রবিঃতারপর কি হয়েছিল?
–ওরা আপনাকে নিতে চেয়েছিল আপনি বলেছেন কাল বিকালে যাবেন তাদের সাথে।
রবি ভাবলো নতুন মাফিয়া নাকি এরা।কারণ পুরোনো টিম গুলো তো মাহমুদ লিড করে।রবি ভাবলো তার মুখে যে চেহারা বসানো তা দেখলে হয়তো সে কিছু বুঝতে পারবে।রবি অজয়ের থেকে জিজ্ঞেস করল ওয়াশরুমে আয়না আছে নাকি?অহয় বলল আছে।রবি ওয়াশরুম কোনদিকে জিজ্ঞেস করে। অজয় দেখিয়ে দেয় ওয়াশরুম। রবি দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই তো তার মুখের চেহারা একটা মাফিয়ার রবি তাকে আগে থেকে চেনে।আয়নায় হাত দিকে রবি নিজের মুখটা ধরতে চাইলো।সেটা তো সম্ভব নয়।তাই আয়নায় হাত দিয়ে হাসতে লাগলো।
রবি কিছু সময় পর মুখে।পানি দিলো।সার্জারী খুব ভালো করে করিয়েছে কেউ বুঝতেই পারবে না এটা আসলে রবি।রবি আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল “রাফসান সাকিব”
পেছনে অজয় দাঁড়িয়ে ছিল।রবির মুখে রাফসান সাকিব নাম শুনে অজয় বলল…
–ভাই এটা আবার কে?
রবিঃএটা সেই মাফিয়া যে কিডন্যাপ করে বিভিন্ন দেশে।কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁকে আজ পর্যন্ত কেউ ধরতে পারে নি কিডন্যাপ করার সময়।আর তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণও নেই।সবার মধ্যে সাধারণ মানুষের মতো করে থাকে কিন্তু ভেতরে ভেতর তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়।
–তাহলে কি করবেন ভাই আর আপনি এসব কিভাবে জানেন?
রবিঃআমার কাছে খবর আছে এই আর কি।আর শুন আমি কাল বিকাল চারটায় যাব বলছি না?ঠিক ঐ সময় আমি ওখানে যাব।আর তাদের সাথে মিশে যাব।এই খবর শুধু তুমি জানবে আর কেউ যাতে না জানে ওকে?
–ভাই এতে অনেক রিস্ক যদি ওরা বুঝতে পারে আপনি ওদের বস নয় তাহলে তারা আপনাকে মেরে ফেলবে।
রবিঃভয় পেয়ো না আমি ওদের সব কিছু জানি আর সব কিছু লিড দিতেও পারব।
–রাশেদ ভাইকে আপনার কথা জানাবো?
রবিঃনা আমি চাই সে নিজে থেকে করুক আমাকে ছাড়া। আর আমার দিকটা আমি সামলাতে পারব।তাহলে কাল চলে যাচ্ছি।
–ভাই রিস্ক অনেক আরেকটু ভেবে দেখলে হতো না?
রবিঃআমি না ভেবে কিন্তু বলি না সেটা তুমি জান।
–তাও ভাই রাশেদ ভাইকে জানালে মনে হয় ভালো হতো।
রবিঃসেটা আমি পরে জানিয়ে দেব।এখন বল আমার রুম কোনটা মানে এত দিন আমি কোন রুমে ছিলাম?
অজয় রবিকে রুম দেখিয়ে দিল।রবি পুরো রুমটা ঘুরে দেখলো খুব ভালো করে গুছানো রুমটা।রবি রুমের বেলকনিতে গিয়ে দেখে খুব সুন্দর করে চারপাশে দেখা যায়।
অনেকক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রবি বাইরের দিকে তাকিয়ে রাধিকার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করতে থাকে।এমপি কি করেছে বিশ্বাস ঘাতক ছাদেক কি করেছে এসব ভাবতে থাকে।হঠাৎ পেছনে কারো উপস্থিতি বুঝতে পারে রবি।তারপর পিছনে ফিরে দেখে অজয়ের বোন দাঁড়িয়ে আছে।রবি সাইফাকে দেখে বুঝতে পারে সে হয়তো কিছু বলবে।তাই রবি তার কাছে জানতে চাই কিছু বলবে কি না।কিন্তু সে বলে বলবে না।কিন্তু রবির মনে হচ্ছে সে কিছু বলবে।
রবি বুঝতে পারে সাইফা ইতস্তত বোধ করছে বলতে।রবি সাইফাকে নির্ভয়ে বলতে বলে।কিন্তু তাও সাইফা ইতস্তত বোধ করে। সাইফার হাবভাব দেখে রবি বুঝতে পারে সাইফা তাঁকে পছন্দ করে।এইটুকু পিচ্চি একটা মেয়ে কিভাবে কি তাই রবি সাইফাকে বলে….
রবিঃদেখ তুমি কি বলতে চাও তা আমি বুঝতে পারছি।এসব তোমার ইমোশন আবেগ।কিছু দিন আমি সামনে না থাকলে ঠিক হয়ে যাবে।আর আমি অজয়ের কাছে শুনেছি তুমি আর তোমার পরিবার আমার অনেক সেবা করেছ।তার জন্য আমি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি এমন কিছু করতে পারব না যার কারণে আমাকে বা তোমাকে নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়।
ভালো করে পড়াশোনা করো লাইফে অনেক কিছু করা বাকি আছে বুঝলে! আর হ্যাঁ তুমি এখন আমার সামনে যা করছ সব ইমোশনাল হয়ে। কিছু দিন পর এমনিতে ঠিক হয়ে যাবে।
রবির কথা শেষ হতে সাইফা কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে গেল।রবি আরো কিছু সময় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রইল।রাতের খাবারের সময় হয়ে গেলে সবাই মিলে একসাথে খেয়ে নিলো।রবির মনে হচ্ছে আজ অনেক দিন পর সে খাচ্ছে। যে যার যার মতো করে খেয়ে নিলো।
রবি রাতের খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে গেল।সকালে ঘুম থেকে ওঠে অজয়ের সাথে ভার্সিটি ঘুরে দেখলো।রাশেদকে দেখেছে দূর থেকে।রবি না থাকায় বর্তমান ভার্সিটির ভিপি রাশেদ। পুরো ভার্সিটি আগের মতো আছে।রবি ভুল করেও রাশেদের সামনে যায় নি কারণ রবির গলার আওয়াজ বা হাঁটার স্টাইল দেখে রাশেদ বুঝে যেতে পারে।
বিকালের দিকে অজয়ের বাসায় সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিলো রবি।কারণ কালকে বলা কথা মতো মাফিয়া রাফসান সাকিবের জায়গায় রবি বসবে।যে কোনো সময় তার মৃত্যুও হতে পারে।
।