অনেক দিন পর গ্রামের বাসায় বেড়াতে আসলো অজয়।তাঁর খুব ইচ্ছে হলো গ্রামের নদীতে মাছ ধরার। সবাই মিলে একটা জাল আর ছোট্ট নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে চলে গেল।কিছু টা দূরে অজয় কিছু একটা দেখতে পেলো। দূর থেকে ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।তাই অজয় আর তার সঙ্গীরা মিলে সেটা কি দেখতে নৌকা নিয়ে সেখানে গেল।

কাছে গিয়ে বুঝতে পারে একটা মানুষ পড়ে আছে।মুখটা মাটির সাথে লেগে আছে তাই ভালো করে চেনা যাচ্ছে না।অজয় আর তার সঙ্গীরা মিলে পড়ে থাকা লোকটাকে ওল্টাতে অজয় ভয়ে কাদাময় জায়গায় পড়ে গেল।অজয়ের এমন ভয় পাওয়া দেখে সবাই অজয়কে জিজ্ঞেস করল ভয় পাওয়ার কারণ।

অজয় ভয়ে কিছু বলছে না।অজয় নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না এটা কিভাবে সম্ভব? অজয় আবারো পড়ে থাকা লোকটাকে ভালো করে দেখতে কাছে গেল।অজয় এবার সিওর হয়ে গেল এটা আর কেউ নয় তারই ভার্সিটির ভিপি রবিউল হাসান। যে কয়দিন আগে সায়েম নামের একটা এসিড কারবারিকে ধরে ছাত্রীদের দিয়ে পিটিয়ে মেরেছিল। যার কথায় পুরো ভার্সিটি কাপে।

অজয় রবির পালস পরীক্ষা করে দেখে এখনো পালস নড়ছে।মানে রবি বেঁচে আছে।সবাই ধরাধরি করে রবিকে নৌকায় তোলে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেল।পাশে থাকা একটা বিশ্বস্ত হসপিটালে রবিকে ভর্তি করা হলো।আর রবির কথা কাউকে না জানাতে নিষেধ করা হলো।

অজয় গ্রামের বাড়িতে চাচার কাছে আসছে সাথে তার ফ্রেন্ডও কাজিনরা আসছে।অজয় ছাড়া কেউ রবিকে চেনে না।অজয়ের চাচা বর্তমান চেয়ারম্যান সেই সুবাদে রবির সব খবর হসপিটালের ডাক্তার আর অজয়ের চাচা এবং তারা ছাড়া আর কেউ জানে না।অজয় তার চাচাকে রবির ব্যাপারে সব বলেছে।

তার চাচাই তাকে এই খবর গোপন রাখতে বলেছে।অজয়ের চাচা ভালো করে বুঝে গেছে রবিকে কোনো নেতা মারতে চেয়েছে।রবিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো।অজয় আর তার সঙ্গীরা বাইরে অপেক্ষা করছে।

অজয়ের চাচা ডাক্তারকে ফোন দিয়ে সব বলেছে তাই কাগজ পত্র রেডি করতে সময় লাগে নি।অজয় বাইরে বসে অপেক্ষা করছে আর সেদিনের কথা ভাবছে যেদিন তার বেস্ট ফ্রেন্ড বাসায় যাওয়ার জন্য একটা গাড়িও পাচ্ছিল না আবার তাড়াতাড়ি বাসায়ও পৌঁছাতে হবে কোনো উপায় না পেয়ে সেদিন অজয়ের ফ্রেন্ড রবির কাছে আসে আর রবি রাশেদকে দিয়ে অজয়ের ফ্রেন্ডকে বাসায় পৌঁছে দেয়।আর কোনো ভিপি এমন কাজ করবে না।অজয় বসে বসে এসব ভাবছে একটু পর ডাক্তার বের হলো।অজয় ডাক্তারের কাছে গিয়ে রবির অবস্থা জানতে চাইলো।
–দেখুন রুগীর অবস্থা খুবই খারাপ।বাঁচার আশা মাত্র ১%।আমরা রোগীর শরীর থেকে তিনটা বুলেট পেয়েছি।শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়ছে।আর উঁচু থেকে পড়ার সময় মাটিতে আঘাত পেয়েছে তাই মাথায়ও অনেক জখম হয়েছে।পুরো গাড় মুচড়ে গেছে।সব মিলিয়ে বাঁচার চান্স মাত্র ১%।

অজয়ঃতাহলে এখন আমরা কি করব?
–আমাদের গ্রামের হসপিটাল খুব ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থাও এখানে নেই।তাঁর থেকে ভালো রোগীকে আপনারা শহরের ভালো হসপিটালে ভর্তি করান।তাতে রোগী বেঁচেও যেতে পারে।এখানে থাকলে আমার ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে রোগী মারা যাবে।

অজয়ঃতাহলে আমরা ঢাকায় নিয়ে যাব। কিন্তু…..
–রোগীর হাতে খুব কম সময় আছে।৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভালো চিকিৎসা না পেলে ক্ষতি হতে পারে।

অজয় মাথায় হাত দিয়ে ভাবলো রবিকে হসপিটালে নিয়ে গেলে তো সবাই চিনে যাবে তার থেকে ভালো প্লাস্টিক সার্জারি করালে কেমন হয়।ডাক্তারকে বলল রবির প্লাস্টিক সার্জারি করাতে।ডাক্তার না করতে চাইলেও অজয় বুঝিয়ে বলে এই চেহারা নিয়ে রবিকে ঢাকায় নিয়ে গেলে মেরে ফেলবে।যদিও রবির হাতে সময় কম তাও ডাক্তার খুব তাড়াতাড়ি প্লাস্টিক সার্জারি করে দিল।রবিকে খুব তাড়াতাড়ি ঢাকায় নিয়ে আসা হলো।

অজয় আর তার কাজিনরাও ঢাকায় ফিরে এলো।অজয় সবাইকে বলে দিল রবি সাধারণ কোনো লোক নয় ভুলেও ওর কথা যেন বাইরে কেউ না জানে।সবাই অজয়ের কথায় সম্মতি জানালো।রবিকে হসপিটালে ভর্তি করানোর পর ডাক্তার ভালো করে দেখে বলল রোগীর অবস্থা খুব খারাপ অনেক রক্ত বের হয়ে গেছে শরীর থেকে এই মূহুর্তে চার ব্যাগ রক্ত লাগবে।অজয় রোগীর রক্তের গ্রুপ জানতে চাইলো।ডাক্তার বলল ও পজিটিভ।

অজয়ের রক্তও সেইম কিন্তু সে তো এক ব্যাগ দিতে পারবে।অজয় বলল হসপিটাল থেকে দিতে কিন্তু ডাক্তার সেখানে গোলক ধাঁধাঁ বাঁধিয়ে দিল। ডাক্তার অজয়কে বলল…
–দেখুন রোগীর অবস্থা খুব খারাপ আমাদের কাছে যে রক্ত আছে তা অনেক পুরোনে এবং সেগুলো ঠান্ডা হয়ে গেছে।এই সময় রুগীর একদম তাজা রক্ত দরকার যাতে রক্ত দেওয়ার পরে রোগীর কোনো সমস্যা না হয়।

অজয়ঃআচ্ছা আমি রক্তের ব্যবস্থা করছি। আমিও এক ব্যাগ দেব।আমার রক্তের গ্রুপও সেইম।
–তাহলে দেরি না করে এক্ষুনি দিয়ে দেন। যেত দেরি হচ্ছে রোগী তত মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে।
অজয়ঃতাহলে দশ মিনিট পরে দিয়?
–আপনার থেকে রক্ত বের করতেও দশ মিনিটের থেকে বেশি সময় লাগবে। কথা না বাড়িয়ে চলুন আর আপনার বাকি সঙ্গীদের রক্তের ব্যবস্থা করতে বলুন।

অজয়ঃঠিক আছে আপনি রক্ত নেওয়ার ব্যবস্থা করুন আমি আসছি।
ডাক্তার চলে গেল।অজয় এই সময় কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।রাতও হলো বটে।এই সময় রক্তের ব্যবস্থা করাটাও অনেক টাপ।এই সময় পাশে পাবে একমাত্র রাশেদকে। অজয় ফোন দিল রাশেদকে যে রাশেদ রবির ডানহাত বললে চলে।রবির অবর্তমানে সব কিছু দেখা শোনার দায়িত্ব রাশেদের।

প্রথম রিং হতেই রাশেদ ফোন ধরলো।
–কে বলছেন তাড়াতাড়ি বলুন।
অজয়ঃভাই আমি আপনাদের ভার্সিটির অজয় বলছি।
–হ্যাঁ বল কি সমস্যা?
অজয়ঃভাই অনেক বড় বিপদে আছি ভাই এই সমস্যা আপনি একটু আমাদের পাশে দাঁড়ান ভাই।
–কি হয়েছে বল আমাকে আর কি বিপদে আছ তুমি কোথায় তুমি বল আমি আসছি।
অজয়ঃভাই আমার ও পজিটিভ রক্ত লাগবে তিন ব্যাগ।কিন্তু কোনো ভাবে পাচ্ছি না।কারণ তাজা রক্ত লাগবে পুরোনো রক্ত দিয়ে হবে না।খুব তাড়াতাড়ি লাগবে ভাই।

–এক কাজ কর তুমি হসপিটালের ঠিকানা বল আমি রক্তের ব্যবস্থা করছি আর আমিও দিতে পারব।

অজয় হসপিটালের ঠিকানা দিয়ে দিলো।অজয় নিজে রক্ত দিতে চলে গেলো।এইদিকে রবির অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রাশেদ জানে না রবি কোথায় ভীষণ চিন্তা হচ্ছে তার।রাশেদ তিন জনকে ফোন দিয়ে হসপিটালে যেতে বললো।যাদের ব্লাড ও পজিটিভ। রাত প্রায় দুইটা সবাই গিয়ে রক্ত দিলো।রাশেদ কাকে রক্ত দিল সে নিজেও জানে না।রোগীকে দেখতে চাইলো রাশেদ কিন্তু অপারেশন চলছে আবারো তাই রাশেদ রোগীকে দেখতে পেলো না।রাশেদ চলে গেল।রাত অনেক তাই বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

অজয় ভাবছে রবির জ্ঞান ফিরলে কি হয়ছ তা শোনবে।দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও রবির জ্ঞান ফিরে না।অজয় রবিকে হসপিটালে রেখে বাসায় চলে যায়।আর ডাক্তারকে বলে যায় যে কোনো দরকার পড়লে অজয়কে ফোন দিতে।

সকাল দশটা হয়ে গেল ডাক্তার কোনো খবর বলে নি অজয়কে।অজয় নিজে হসপিটালে ফোন দিয়ে রবির অবস্থা জানতে চাইলো। কর্তব্যরত নার্স অজয়কে হসপিটালে আসতে বললো।অজয় নাস্তা করে হসপিটালে গেল।রবির রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভেতরে ডাক্তার কি যেন চেক করছে।

প্রায় দশ মিনিট পর ডাক্তার বের হলো।ডাক্তারের মুখ কালো দেখে অজয় বুঝতে পারল ভয়ঙ্কর কোনো খবর অপেক্ষা করছে তার জন্য। তাও অজয় উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারকে বলল…
অজয়ঃডাক্তার রোগী ঠিক আছে তো?
–রোগী আপনার কি হয়?

অজয়ঃভাই হয় সবার।আমারও ভাই।
–দেখুন নিজেকে সামলান। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।সরি রোগী…..

To_be_continue………

#ফিরে_আসা_সিক্রেট_মাফিয়া (Politics_02)
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here