#ফিরে_আসা
#ফারজানা
#পর্ব_৮

তোমার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করো কি করেছে ও

___কেনো কি করেছে?

___একটা গুন্ডা মাতাল বাজে লম্পট ছেলেকে পছন্দ করে

__কি বলছো কি রাদ তো ভালো ছেলে

___রাদ ভালো তাই না তাহলে যাও গিয়ে দেখো মাঝ রাস্তায় একটা মেয়ের সাথে ছিঃ আমার তো ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে। গতকাল তোমার মুখে রাদের কথা শোনার পর রাদের সম্পর্কে খুঁজ নেই আর তখন জানতে পারি ও একটা ভন্ড। ওর মা ছোটো কালে মারা যায় ওর বাবা আরেকটা বিয়ে করে বাট ও ওর নতুন মাকে পছন্দ করে না কারণে অকারণে গালাগালি করে তাই ওর বাবা অকে বাসা থেকে বের করে দেয় ও এখন ওর চাচার বাসায় থাকতো বাট কি নিয়ে যেনো ওইখানেই ঝগড়া করছে এখন ওদের বাগান বাড়িতে থাকে আর ওই ছেলে এর আগেও কত মেয়ে নিয়ে নাকি ওই বাগান বাড়িতে গেছে। আর তোমরা কি না ছিঃ। আমার তো লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে

____আব্বু তুমি কিসব বলছো রাদ তো ওমন ছেলেই না তুমি হয়তো ভুল জেনেছো বা শুনেছো

___আমি সব ভালো ভাবেই খুঁজ নিয়েছি যদি ট্রাস্ট না করিস তাহলে তো কিছুই করার নাই

___আব্বু আমার মনে হচ্ছে কেউ ষরযন্ত্র করছে। এইটা মনে হয় স্বপ্নের কোনো চাল

___কে স্বপ্ন তপ্ন আমি চিনি না বিশ্বাস না হলে এইটা তোর ইচ্ছা এখন অ্যাডাল্ট হয়েছিস নিজের ভালো বুঝতে শিখেছিস তাই বলছি ভালোভাবে দেখে শুনে পথ এগোবি
আর ওই ছেলের কাছ থেকে দূরে থাকবি আর তোর বিয়ে খুব শীগ্রই দিবো আমি

কথাটা বলে রুমে চলে যায় দীবার আব্বু আর দীবা ফ্লোরে বসে কান্না করতে থাকে

___যেভাবেই হোক আব্বুকে প্রমাণ দিতে হবে যে রাদ এমন কিছু করতে পারে না তাই সকালেই রাদের সাথে দেখা করতে হবে

দীবা পুরো রাত প্ল্যানিং করে সকালে কি কি করবে

সকালে….

দীবা সামান্য কিছু খেয়ে ভার্সিটিতে চলে গেলো বাট ওইখানে রাদ কে পেলো না তখন রাদের বন্ধু পিয়াসের কাছ থেকে ওর বাসার ঠিকানা নেয় আর ওইখানে যায় । ওইখানে গিয়ে দেখে রাদ একটা মেয়ের সাথে বেডে শুয়ে আছে আর খুব খারাপ ভাবে। দীবা এই দৃশ্যটা দেখে কিছুক্ষন মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকে

___ছিঃ ছিঃ রাদ তুমি এত খারাপ আজ আসছিলাম আব্বুর চোখ খুলে দিতে বাট এখন নিজের চোখেই খুলে গেছে। তোমাকে ভালোবেসে এত বড় অন্যায় আমি কিভাবে করেছি। তুমি তো একটা ছোটলোক। তোমাকে তো আমি মেরেই ফেলবো

দীবা ছারো বলছি শুনো যা দেখেছো ভূলে যাও

___কি ভুলবো আমি তোমার এই পশুর কথা। তোমার সাথে তো আজ থেকে আমার সব সম্পর্ক শেষ

বলেই দীবা চলে যায় ওইখান থেকে আর রাদ ওইখানে দাড়িয়ে থাকে….

এর কিছুদিন পরেই দীবার মা বাবা ও তার বোন কার অ্যাকসিডেন্ট এ মারা যায় আর তখন দীবার পাশে স্বপ্ন খুঁটির মতো এসে দাড়ায় আর ওইদিনের পর থেকে ওদের সম্পর্ক…..

বর্তমানে……

____এই ছিলো তোর সাহেবের সাথে আমার প্রেমের পর্ব পরিচয়

___আফা আগেই যদি সাহেবের ভালোবাসতেন তাহলে তো আরো ভালা হইতো। কিন্তু আপনে তো ওই লুইচ্ছা ব্যাটারে গিয়া পছন্দ করছেন। দেখছেন আমাগো সাহেব কত্ত ভালা মানুষ

___হুম বুঝতে পারছি। ওই সময় তো মানুষ চিনতাম না রে তাই এমন করছি আচ্ছা ওইসব বাদ এখন যা গিয়ে দেখ কি রান্না করতে হবে

___আইচ্ছা আফা

রাজিনা চলে গেলো দীবা চোখ বন্ধ করে বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে রইলো ঠিক তখন ওর কপালে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেলো আর দীবা চোখ মেলে তাকালো আর দেখলো রাদ বাঁকা হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে…….

তিন মাস পর….

দীবার অবস্থা খুব খারাপ। রাদ রাদ বলে আরো পাগল হয়ে গেছে। স্বপ্ন বুঝাচ্ছে যে রাদ বেঁচে নেই তাও দীবা রাদ রাদ করেই যাচ্ছে । তাই স্বপ্ন দীবাকে না জানিয়ে ডক্টর দেখায় তখন ডক্টর বলে কোথায় ঘুরে আসতে তাহলে হয়তো দীবার ভিতরের ভয়টা দুর হয়ে যাবে। তাই স্বপ্ন দীবাকে নিয়ে সাজেক ঘুরতে যায়। স্বপ্নের মতে সাজেকের মতো এত সুন্দর জায়গা আর কোথায় নেই। আর সাজেক হলো মন ভালো রাখার জন্য সুন্দর একটি জায়গা….

আকাশে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি দেখতে সবারই ভালো লাগে, আর অনেক সময়তো আমাদের ইচ্ছে করে মেঘকে ছুঁয়ে দেখতে। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক ভ্যালিতেমনি এক স্বপ্নময় স্থান। চারপাশে সাদা মেঘের ভেলা মনের ক্লান্তিকে যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সবুজে ঢাকা পাহাড়, সাদা মেঘ আর আলোআঁধারির খেলায় সবসময় মেতে থাকে এই সাজেক ভ্যালি। সকাল, দুপুর কিংবা রাত, সময়ে সময়ে নিজেকে ভিন্নরূপে সাজিয়ে সাজেক ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে। আর পর্যটকেরাও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অবলোকনের মোহে সাজেক ভ্যালিতে ছুটে আসেন। আমরা সাজেকে এসে রুংরাং রিসোর্ট এ এসেছি ।সাজেকের বেস্ট রিসোর্ট গুলোর একটি রিসোর্ট রুংরাং। রিসোর্টে বসেই দিগন্তজোড়া সারি সারি পাহাড় এবং মেঘের উড়োউড়ি দেখার জন্য আদর্শ। এইখানে এসে দেখি দীবাকে খুব হাসি খুশি দেখাচ্ছে। ওর এই হাসি মাখা মুখটি দেখতে সত্যই খুব ভালো লাগে কেনো যেনো বার বার ওর ওই হাসির প্রেমে পরে যাই আমি

এইসব আনমনে ভাবছে স্বপ্ন ঠিক তখনি দীবার ডাকে হুস আসে স্বপ্নের….

___ওই দেখো স্বপ্ন মেঘের উপরে পাহাড়। চলো না ওইখানে যাই

____সকালে যাবো লক্ষীটি। এখন খুব ক্লান্ত আমি

___ওকে তো চলো কিছু খাবার অর্ডার দেই

___তুমি দেও জান

দীবা অনেক কিছু অর্ডার দিলো । তখন দুইজন খাওয়া দাওয়া সেরে যার যার রুমে বিশ্রাম করার জন্য চলে গেলো……

স্বপ্ন ও দীবা সন্ধ্যায় আসে তাই ওরা আর রাতে কোথায় বের হলো না

পরেরদিন সকালে……

সকালের নাস্তা করেই দীবা বললো….

____স্বপ্ন নিয়ে যাবে না এখন

____হুম যাবো

___তো চলো জান…..

এই প্রথম স্বপ্ন দীবার মুখে জান শব্দটি শুনলো আর আনন্দের দৃষ্টিতে তাকালো দীবার দিকে

____আমি সত্যই শুনেছি

___হুম এখন চলো

___আবার বলো প্লিজ

___জান চলো তাড়াতাড়ি

স্বপ্ন কে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।।।

___আচ্ছি বাবা

অনেকদিন পর ঝিরি পথ দেখে মন খুশি হয়ে গেল। স্বপ্নকে জিজ্ঞাসা করলাম ঝিরি পথে যাওয়া যাবে না তখন ও জীপের হেল্পারকে জিজ্ঞাসা করলো ঝিরি পথ দিয়ে ঝর্নায় যাওয়া যাবে না কি ? বললো, যাবে কিন্তু সময় বেশি লাগবে। ঝিরিপথ না ধরে তাই শর্টকাটে যাচ্ছিলাম।

দূর থেকে পানি পড়ার শব্দ শুনে পায়ের গতি বেড়ে গেলো। গাছে ঢাকা একটা মোড় ঘুরে দেখি সামনে সুবিশাল ঝর্ণা। অনেক উঁচু থেকে পানি পড়ায়, অনেক দূর থেকেও শোনা যাচ্ছিলো। গতকাল রাতে বৃষ্টি হওয়ায় পানিও ছিলো অনেক বেশি। ঝর্নাটির আরেক নাম ‘শুকনাছড়া ঝর্ণা’ শীতকালে যার প্রমাণ মিলে
আমাদের ভাগ্য বেশ সুপ্রসন্ন ছিলো, রংধনুর দেখা পেলাম। পানি দেখে নিজেকে সংবরন করতে না পেরে নেমে পড়লাম আমি আর স্বপ্ন কেউ বাধ্য করলাম নামার জন্য।

পাহাড় বেয়ে ঝর্নার উপরে যাওয়া যায়। তবে যাওয়ার পথ বেশ দুর্গম। সহজে উঠা গেলেও নামার সময় ধরার কিছু থাকে না। বেশ কিছু দুর্ঘটনাও ঘটেছে।তবে স্বপ্ন ছিলো ভয়ে বেঁচে গেছি আর স্বপ্ন তো পারছে না আমার মেরে ফেলতে কেনো যে এত লাফাচ্ছি কিন্তু আমার তো এই দৃশ্য এই সুন্দর্য দেখে মন কে কিছুতেই বুঝাতে পারছি না। আমার তো নাচতে মন চাচ্ছে । আচ্ছা স্বপ্ন এই পাহাড়ের নাম কি একটু ডিটেলস বলো? আর এই পাহাড় কে কেনো ওই আজব নাম কিং কং ধ্যাত ভুলে গেছি ওই নাম কেনো দিছে?

স্বপ্ন দীবার দিকে তাকিয়ে পরে বলতে শুরু করলো….

____ এইটা কিং কং না এইটা হলো কংলাক পাড়া।আর কংলাক পাড়া সাজেকের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় সিপ্পু পাহাড়ে অবস্থিত। সিপ্পু পাহাড় সাজেক তো বটেই পুরো রাঙামাটি জেলার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়, উচ্চতা ২৮০০ ফুট। চূড়া থেকে পুরো সাজেকের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায়।

কংলাক পাড়ায় পাংখো আদিবাসিরা থাকে। পাড়ার অনেকে বাংলায় কথা বলতে না পারলেও ইংরেজিতে বেশ দক্ষ। আমাদের সাথেই একজন ইংরেজি বেশ স্বতর্ফূতভাবে কথা বলছিলো। ভারতের মিজোরাম রাজ্য এখান থেকে বেশ কাছে, হাঁটা পথে ২ ঘন্টার পথ। অনেকেই তাই ভারতের মিজোরাম রাজ্যে গিয়ে পড়াশুনা করে। অন্যান্য আদিবাসিদের থেকে পাংখোরা বেশ আধুনিক।

রক প্যারাডাইস কটেজ কংলাকের আরেক চূড়ায় অবস্থিত। কটেজে কেউ না থাকায় আমরা গেলাম। দীর্ঘক্ষন সেখানে বসে নাম না জানা পোকার ডাক শুনে একসময় রুইলুই পাড়ায় ফিরে আসলাম। পাহাড় আর পাহাড়ী মানুষদের সাথে কথা বলতে বলতে দুইদিন সময় যেন দ্রুতই শেষ হয়ে গেলো। আমরা রওনা হলাম রাঙ্গামাটি শহরের উদ্দ্যেশ্যে।

____বলছি নাম আর হালকা ডিটেলস বলতে আর তুমি উনিশ শতকের হিস্টরি বলা শুরু করছো। যাও আর কিছু আস্ক করবো না

____হাহাহা উত্তর দিলে তো এইভাবেই দিতে হয়। অ্যা টু জেড সব

____হুম বুঝছি এখন চলো কিছু খাওয়া যাক

____হুম চলো…..

দীবা যখন স্বপ্নের হাত ধরে সামনে এগুতে দেখলো…..

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here