সংসার।
পর্ব:৩
লেখা :রাইসা।
– হুম আমরা স্বামী-স্ত্রী তবে বাহিরের লোকেদের কাছে। কিন্তু ঘরের ভেতরে না। তুমি হয়তো চুক্তির কথা ভুলে যাচ্ছ। আমি বিয়েটা করেছি শুধু মায়ের খুশির জন্য। আর সুমাইয়ার বিদেশ থেকে আসতে দেরী হবে বলে। মা’কে এ অবস্থায় সুমাইয়ার কথা বললে কখনোই মেনে নিতো না।
আর তুমি তো টাকা নিয়েছ! তুমি এটাও বলতে পারবে না, আমি তোমাকে ঠকাচ্ছি। কারণ তুমি নিজে ইচ্ছায় রাজি হয়েছো সব শর্ত মানতে
– মৌ আর কিছু বলতে পারে না। ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। বাবা নিজের মেয়েকে সন্তান বলে পরিচয় দেয় না। আর স্বামি পেয়েছে তাও কন্টাকে। এসব ভেবে ঘুমিয়ে যায়। ফজরের নামাযের আযান শুনে মৌ এর ঘুম ভেঙে যায়। মৌ রাজের কাছে গিয়ে দেখে রাজ ঘুমাচ্ছে। রাজের ঘুমন্ত চেহারাটা মৌ এর কাছে খুব মায়াবী লাগছে। ছেলেদের চেহারা যে মায়াবী হয় তার জানা ছিল না। মৌ রাজের পাশে বসে মাথায় হা বুলাতে বুলাতে রাজের কপালের ঠিক মাঝখানটায় একটা ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দেয়। রাজ জেগে ওঠে।
– তুমি এখানে?
– আযান দিয়েছে নামায পড়বে না?
-রাজ মৌ এর গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বলে’ তোকে কতদিন বলছি আমাকে রাতে নামাযের জন্য ডাকবি না। অযথা আমার ঘুমটা নষ্ট করতে আসিস। সকালে আমার অফিস আছে। যা তোর মন চাই তুই গিয়ে পড়।
– মৌ কোন শব্দ না করে ওযু করতে চলে যায়।
– মৌ যখন নামায পড়ে মোনাজাতে তখন রাজের মনে হয় কাজটা কি সে ঠিক করল? নামায তো আমার ভালোর জন্য। ধূর মেয়েটাকে আরো মারলাম।
– রাজের কেন জানি ভীষণ খারাপ লাগছে। তাই সে ঘুম থেকে উঠে যখনি বেলকুণীতে গিয়ে দাঁড়াবে এমন সময় পাশের রুম থেকে কারো চাঁপা কান্নার আওয়াজ পেল। রাজ রুমে উঁকি দিতেই দেখে মৌ নামাযের মোনাজাতে কাঁদছে। আর কি যেন বলছে।
‘ রাজ একটু খেয়াল করে শুনতে পেল, যে মৌ বলছে ‘ হে পরওয়ারদেগার আমার স্বামীকে তুমি হেদায়াত দান করো। আমি যে ওর সাথে জান্নাতে থাকতে চাই। তুমি হেদায়াত না দিলে, কে হেদায়েত দিবে? এ পৃখিবীতে তো একটি গাছের পাতাও নড়ে না। তোমার হুকুম ছাড়া। তুমি আমার স্বামীকে কবুল করে না। ও আল্লাহ নামাযের কথা বলেছি বলে আমাকে চড় মেরেছে। তুমি কিছু মনে করো না। আমাকেই তো মারছে। স্বামী স্ত্রীকে মারতেই পারে। এতে করে তুমমি মন খারাপ করো না। আমার স্বামীকে তুমি কবুল ও মঞ্জুর করে নাও। আমি তাকে নিয়ে জান্নাতে থাকতে চাই। ও আল্লাহ জন্মের সাথে সাথেই মা’কে নিয়ে নিয়োছে। তোমার কাছে কোন অভিযোগ করিনি। বাবার ভালোবাসা থেকেও বঞ্চিত করেছ। তবুও তোমার কাছে অভিযোগ করিনি। তুমি আমার স্বামীকে হেদায়েত দান করো। তার সাথে যেন জীবনের বাকি দিনগুলো কাঁটাতে পারি। তার পায়ের নিচেই যেন থাকতে পারি।
– মোনাজাত শেষ করার আগেই রাজ রুমে এসে শুয়ে পড়ল। মৌ যখন নামায শেষ করে, রুমে ঢুকল এমন সময় রাজ স্পর্ষ্ট খেয়াল করল,ভোর রাতে তার থাপ্পরের দাগ গালে ভেসে আছে। পাঁচটা আঙুল স্পর্ষ্ট বুঝা যাচ্ছে। মৌ আজ শাড়ি পরেছে। শারি পরতে পারে না তাও। আজ লম্বা ঘোমটা টেনে চড়ের দাগটা আড়াল করে রেখেছে।
– রাজ সকালে ব্রেকফাস্ট করে অফিসে চলে যায়। অফিসের কাজ করছে, এমন সময় মৌ এর ফোন।
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুম সালাম। কিছু বলবে?
– খেয়েছো তুমি?
– না খাবো।
– আচ্ছা খেয়ে নাও। আর আমার আজ টাকা লাগবে এক লাখ।
– এতোটাকা দিয়ে কি করবে?
– আমি তো চুক্তির টাকাটাই চাচ্ছি।
– ও আচ্ছা লর্কারের চাবি বিছানায় নিচে ওখান থেকে চাবি নিয়ে আলমারি থেকে একলাখ টাকা নিবে।
– আচ্ছা।
– মৌ ফোন কেটে দিলে রাজ ভাবতে লাগে টাকার জন্য মেয়েরা কি না করতে পারে। রাতে যতটুকু ভালো মনে করেছিলাম দুপুরে তার পরিচয় দিল কতটা ভালো। সত্যি মেয়েরা ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টায়। ধূর কি সব ভাবছি।
– লাঞ্চের সময় রাজ ক্যান্টিনে যখন সকল কর্মচারীদের সাথে খেতে যায় ঠিক তখনি পকেটে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে। রাজ ফোনটা বের করে দেখে আননোন নাম্বার। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়ে বলে জান তুমি কোথায়?
– রাজ ফোনের নাম্বারটা আবার দেখেই বললো’ ও মাই সুইর্ট হার্ট তুমি দেশে এসেছো? আমাকে একটা ফোনতো দিতে পারতে?
– সারপ্রাইজ!
-তাই বুঝি?
-হ্যাঁ। তাই। তুমি বাহিরে বের হও।
-আচ্ছা।
– রাজ বাহিরে বের হতেই। সুমাইয়া রাজকে এসে জড়িয়ে ধরে। রাজ সুমাইয়াকে দেখে চমকে যায়। এই সুমাইয়া রাস্তা তো। এভাবে জড়িয়ে ধরে আছো। সবাই তো ফ্রিতে সিনেমা দেখছে।
– ধ্যাত তোমাকে ধরবো না কাকে ধরব বলো তো?
– হ্যাঁ আমাকেই ধরবে তবে এখানে না। আর এটা আমেরিকা না বুঝলে সুইর্ট হার্ট।
– হুম বুঝলাম। চলে আজ সারাদিন শহর চষে বেড়াবো। রাজ আর সুমাইয়া সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় ডেস্কোতে চলে যায়। এদিকে রাজ ডিস্কোতে গিয়ে ড্রিকস করে। সুমাইয়া রাজের সাথে ডেট করার জন্য, গোপনে ড্রিংকসে যৌন উত্তেজনার ওষধ মিশিয়ে দেয়। রাজ আর সুমাইয়া দু’জন যখন একটা রুমের ভেতর। সুমাইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ সুসাইয়ার ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বাজতে লাগে ।
– ফোনটা ধরতেও ওপাশ থেকে কে যেন বললো’ ম্যাডাম আঙ্কেল স্টোক করেছে।
আপনি হসপিটালে আসেন। সুমাইয়া ফোনটা পিক করেই। রাজকে নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে পড়ে। রাজকে বাসায় যেতে বলে সুমাইয়া গাড়ি করে হসপিটাল চলে যায়। এদিকে বাসায় আসতে আসতেই রাজের মাথাটা কেমন ঘুরতে লাগলো। বাসায় এসেই দরজা নর্ক করতেই মৌ দরজা খুলে দেয়। মৌ দরজা খুলে দিয়েই বলে কি ব্যাপার তুমি তো এতো রাত করো না? আজ এতো দেরী করলে কেন?
– রাজ দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বলল” পার্টিতে গিয়েছিলাম। অফিসের বায়াররা এসেছিল। ও আচ্ছা খাবে আসো।
– না আমি খেয়ে এসেছি। আচ্ছা ঠিকআছে। তাহলে শুয়ে পড়ো।
– রাজ যখন শুয়ে পড়বে এমন সময় মৌ গিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগল। মৌ এমনিতেই শাড়ি ঠিক রাখতে পারে না। আর কেন জানি শাড়িটা শরীরের স্পর্শ কাঁতর জায়গা থেকে সরে যায়। এদিকে রাজের শরীরটা কেমন যেন লাগছে। মৌকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। রাজ এবার আর সহ্য করতে পারলো না। মৌকে পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল।
– এই কি হচ্ছে রাজ?
– রাজ কিছু না বলে মৌকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
– মৌ অনেকটা ঘাবড়ে যায়। কি হচ্ছে রাজ? কি করছো তুমি?
– তুমি পাগল হলে?
– আমি তো তোমাকে দেখেই পাগল হয়েছি প্রিয়তমা। আর তুমি আমার স্ত্রী।
– তো তুমি তো বলেছিলে, মৌ এর কথা শেষ করার আগে রাজ মৌ এর ঠোঁট দু’টি বন্ধ করে দেয়। তারপর দু’জন ভালোবাসার সাগরে হারিয়ে যায়।
– পরের দিন সকালে মৌ ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে রাজ দাঁড়িয়ে আছে।
– কিছু বলবে?
– মৌ কাল রাতের জন্য সরি। আমি ইচ্ছাকৃত এ কাজটা করিনি। ড্রিংকস করেছিলাম তাই করেছি। ক্ষমা করে দাও আমায়। আর এই নাও পিল, খেলে কন্সসিভ হওয়ার চান্স থাকবে না। এই নাও পানি।
– মৌ কিছু বলতে পারছে না। দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
– কি হলো তুমি কাঁদছো কেন? সরি বলেছিতো। হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
চলবে”””””’