#অপরিচিত_প্রিয়জন
#পর্ব_৪
#এম_এ_নিশী
ইফাদের অট্টহাসি দেখে সকলের বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকা তার নজরে আসতেই সে থেমে যায়। মুহূর্তেই নিজের মুখে সেই চেনা পরিচিত গাম্ভীর্য টেনে এনে রূপসীর দিকে তাকিয়ে বলে,
–ঠিকাছে। চলো। আমিই তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবো তোমার বাড়িতে। সাদমান সাহেব, মেয়েটির ঠিকানা সংগ্রহ করেছেন?
–জি স্যার। এখুনি দিচ্ছি।
সাদমান রূপসীর ঠিকানা ইফাদকে দিতেই সে বলে,
–আরো একটু কষ্ট করে এদিক টা ম্যানেজ করুন সাদমান সাহেব। ইনশাআল্লাহ কাল সকালেই আমি উপস্থিত থাকব এখানে।
রূপসী খুশিতে হাততালি দেয়। ইফাদ সেদিকে এক নজর তাকিয়ে হনহন করে হাঁটা দেয়। সে ও পিছু পিছু হাঁটতে থাকে। গাড়ির কাছে আসতেই রূপসীকে গাড়িতে উঠতে বলে নিজে ড্রাইভিং সিটের দিকে এগিয়ে যায়। এদিকে রূপসী গাড়িটিকে মনোযোগ সহকারে দেখছে। কোনদিকে, কিভাবে ঢুকবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না সে। গাড়ির দরজার হাতল ধরে কিছুক্ষণ ঠুকাঠোকি করতে থাকে। তা দেখে ইফাদ ভ্রু কুঁচকে বলে,
–এমন কুটুরকুটুর করছো কেন? উঠে বসো।
–কোনদিক দিয়া ঢুকমু? উপর দিয়া নাকি তলা দিয়া?
রূপসীর কথা শুনে ইফাদ তাজ্জব বনে যায়। পরক্ষণেই ভাবে মেয়েটা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হওয়ায় হয়তো এই গাড়ি সম্পর্কে খুব একটা আইডিয়া নেই। তাই সে নিজেই এগিয়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে রূপসীকে বসিয়ে দেয়। রূপসী অবাক দৃষ্টিতে গাড়ির ভিতরটা পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। সে এরকম গাড়ি একবার দেখেছিল যখন তাদের স্কুলের একটা অনুষ্ঠানে উপজেলার এক অফিসার এসেছিলেন তখন। কিন্তু তাকে সে গাড়ি থেকে নামতেও দেখেনি উঠতেও দেখেনি তাই এসব গাড়ি থেকে উঠানামা করার ব্যপারে কোনো আইডিয়া তার নেই। তবে এসব গাড়ির বাইরের চেয়ে ভিতরটা যে আরো সুন্দর হয় তা সে ভাবতে পারেনি। হা করে দেখছে সবকিছু আর ভাবছে, শুধু উনার গাড়িই এতো সুন্দর নাকি সবার গাড়িই এমন হয়? রূপসীর ভাবনার ঘোর কাটলো যখন ইফাদকে তার ওপর ঝুঁকে আসতে দেখে। আচমকা ইফাদের এমন আচরণে রূপসী চমকে যায়। ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। ঠুকঠাস আওয়াজ শুনে এক চোখ হালকা খুলে তাকিয়ে দেখে ইফাদ কিছু একটা লাগাচ্ছে। লাগানো হলেই সে সরে যায়। ভালোভাবে চোখ খুলে দেখে একটা লম্বা ফিতা কোনাকুনি ভাবে বাঁধা আছে তার শরীরে। সে বুঝতে পারছে না এটা কি জিনিস? সে ভাবলো হয়তো এটা দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাই কৌতুহল নিয়ে সেটা টানাটানি শুরু করে দেয়। ইফাদ সামনের দিকে মনোযোগ রেখেই গাড়ি চালাচ্ছিল। রূপসীর অতিরিক্ত নড়াচড়া দেখে পাশ ফিরে তাকাতেই বিরক্তিতে ভরে ওঠে তার মুখ। তীক্ষ্ণ কন্ঠে ধমকে উঠে বলে,
–এই মেয়ে এটা টানাটানি করছো কেন?
–এইডা কি আগে কন? আমারে বাইন্ধা রাখছেন ক্যান? আপনে আবার আমারে পাচার কইরা দিবেন না তো? আপনে তো ম্যাজিস্ট্রেট। আপনারে তো ভালো মানুষ ভাবছিলাম। আপনেও কি ওগুলান খচ্চর বেডাগোর মতোন? আপনে কি ভালা না? ভালা মাইনষে কি এমন কইরা বাইন্ধা রাখে? আপনি কি করবার চান আমারে কন? আমারে নামাইয়া দেন আমি যামুনা আপনের লগে।
হুট করেই ব্রেক কষে ইফাদ গাড়ি থামায়। রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় রূপসীর দিকে। রূপসী ভড়কে যায়। ইফাদ নিজের সিট বেল্ট খুলে ফেলে। রূপসী তা লক্ষ্য করে বুঝতে পারে এটা হয়তো গাড়ির কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস। যা গাড়িতে উঠলে সবাইকেই এভাবে বাঁধতে হয়। কিন্তু তার বুঝতে খানিকটা দেরি হয়ে গেলো। ততক্ষণে ইফাদ আবার তার দিকে ঝুঁকে এলো। ভয়ে রূপসীর মুখটা আরো চুপসে গেলো। জীবনে প্রথম কোনো পুরুষকে সে এতোটা কাছাকাছি অনুভব করছে। তার ভিতরটা অস্থির অস্থির লাগছে। শ্বাস আটকে বসে থাকে। বিন্দু পরিমাণ নড়নচড়ন নেই। যেন নড়লেই মানুষটা তাকে কি না কি করে ফেলে। ইফাদের চোখে চোখ রাখতেই তার মনে হলো সে বুঝি এবার মারাই যাবে। ইফাদ আস্তে করে রূপসীর সিট বেল্ট খুলে দিয়ে ঠাস করে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। তারপর ঝড়ের গতিতে নিজের সিটে ফিরে বসে দৃষ্টি সামনে রেখে বলে,
–যাও নেমে পড়ো।
রূপসী গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকে। ইফাদের দৃষ্টি তখনো সম্মুখেই স্থির। ধীর কন্ঠে বলে,
–কি হলো? তুমি না বললে আমার সাথে যাবে না। তাহলে বসে আছো কেন? যাও।
রূপসী যেন বিপদেই পড়ে গেলো। এখন সে কি করবে? সে যে ইফাদকে বেশ রাগিয়ে দিয়েছে তা সে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু এই মুহুর্তে তার কি করণীয় তা ঠাওর করে উঠতে পারছে না সে। ইফাদ এবার রূপসীর দিকে ঘুরে তাকিয়ে কঠিনস্বরে ধমক দিয়ে বলে,
–কি সমস্যা তোমার? নামতে বলেছি না তোমাকে? নামোওও।
ইফাদের ধমকে রূপসী কেঁপে ওঠে। ধীর পায়ে নেমে পড়ে গাড়ি থেকে। ইফাদ ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ছুটে চলে যায় গাড়ি নিয়ে। রূপসী করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। এখন সে কি করবে? কোথায় যাবে? এই শহর তো তার অচেনা। এখানে সে কাওকে চেনেও না। এবার সে কিভাবে বাড়ি ফিরবে? ওদিকে কোয়ার্টার থেকেও বেশ খানিকটা দূরেই এসে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে তার। নইলে সেখানে ফিরে গিয়েও তো পুলিশগুলোর সাহায্য নেওয়া যেতো। রূপসী এদিকওদিক এলোমেলো দৃষ্টিতে তাকায়। একটু দূরেই দেখতে পায় তিনটে ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে। আর বাজে নজরে তার দিকে তাকাচ্ছে। রূপসীর ভয় হতে থাকে। আবার কোনো বাজে লোকের পাল্লায় না পড়ে যায় এই ভেবে সে যেদিকে ইফাদের গাড়ি গিয়েছে সেদিকে ছুট লাগায়। প্রথমে বেশ জোরে জোরে হাঁটছিলো কিন্তু যখনই পেছনে ফিরে ছেলেগুলোকেও তার পেছন পেছন আসতে দেখে সে এবার জোরেশোরে দৌড়াতে থাকে। ছুটতে ছুটতে ধাম করে বারি খেয়ে রাস্তায় উল্টে পড়ে গেলো।
–বাবাগো! হাড্ডিগুলান বুঝি ভাইঙ্গাই গেলো। উফফ!
রূপসী দু হাত ঝেড়ে ময়লা পরিষ্কার করতে করতে বারি খাওয়ার উৎস খুঁজতে সামনে তাকায়। খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকা ইফাদকে দেখে সে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে ওভাবেই। ইফাদ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রূপসীর দিকে। হঠাৎ করে মুখের সামনে হাত দেখতে পেয়ে মুখ তুলে তাকায় রূপসী। দেখতে পায় ইফাদ ওর দিকে হাত বাড়িয়ে আছে। কিন্তু কেন বাড়িয়ে আছে বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। ইফাদ কিছু না বলে নিজেই রূপসীর হাতটা ধরে হেঁচকা টানে উঠে দাঁড় করায়। রূপসী উঠে দাঁড়িয়ে নিজের জামা কাপড় ঝাড়তে থাকে। ইফাদ শান্ত ভাবেই চোখ তুলে তাকায় রূপসীর পিছনে থাকা ছেলে তিনটের দিকে। তার ওই শান্ত দৃষ্টিতেও যেন ভয়ংকর কিছু প্রতিফলিত হচ্ছিল যা ছেলে তিনটির অন্তর আত্মা কাঁপিয়ে দিতে সক্ষম হয়। তারা উল্টো ফিরে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। ইফাদ এবার রূপসীর দিকে তাকিয়ে বলে,
–তো কি সিদ্ধান্ত নিলে? একা একাই ফিরবে? নাকি আমার সাথে যাবে?
রূপসী মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে,
–আপনের লগেই যামু।
ইফাদ কিছু না বলে গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়ায়। রূপসী মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে ইফাদ এক হাতে গাড়ির দরজার হাতল ধরে আরেক হাত পকেটে গুঁজে দূরে দৃষ্টি রেখে দাঁড়িয়ে আছে। তার এই দাঁড়িয়ে থাকার তেজও যেন ভস্ম করে দিতে চায় সবকিছু। রূপসী গুটিগুটি পায়ে হেটে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।
__________
গাড়ি যেন ঝড়ের গতিতে ছুটছে। ইফাদ চাচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব মেয়েটিকে পৌঁছে দিতে। ফিরতে দেরি হলে তার কাজে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে এতো দ্রুত গাড়ি ছোটায় রূপসীর ভয় হয়। কিন্তু কিছু বলতে পারে না। মাঝে মাঝে এবড়োখেবড়ো রাস্তায় গাড়ির ঝাঁকুনিতে ভয়ে সে এটা ওটা চেপে ধরছে। ইফাদ সেটা লক্ষ্য করে। গাড়ির গতি কমিয়ে দেয়। আড়চোখে একবার তাকিয়ে থমথমে গলায় প্রশ্ন করে,
–নাম কী তোমার?
অনেকটা সময় একসাথে আছে। অথচ মেয়েটার নামটাই জানা হয়নি তার। রূপসী ঘুরে তাকায়। তার মনে পড়ে এই মানুষটাকে তো সে তার নাম বলেনি। তাই তার তো না জানারি কথা। সে মুখ ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
–রূপসী।
–পড়াশোনা করো?
–হ।
–কোন ক্লাস?
–মেট্রিক দিছি এইবার।
–বাড়িতে কে কে আছেন?
–আব্বা, আম্মা আর মৌটুসী।
–মৌটুসী কি ছোট বোন?
–হ।
পুনরায় দুজনের নিরবতায় ছেয়ে যায় চারপাশ। ইফাদ বুঝতে পারে রূপসী তাকে ভয় পাচ্ছে। নইলে ছুটন্ত রেলগাড়ি এতোটাও স্থবির হয়ে থাকার কথা নয়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে চললো। ইফাদ এখনো গ্রামের আশেপাশেও পৌঁছাতে পারলো না। তাই বারবার সময় দেখছে আর ভ্রু কুঁচকে যাচ্ছে তার। পথিমধ্যে গাড়িটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় বেশ অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই এতো দেরি হয়ে গেলো। হুট করেই রূপসী চিৎকার করে গাড়ি থামাতে বলে। ইফাদ দ্রুত ব্রেক কষে। রূপসীর দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
–কি হয়েছে? গাড়ি থামাতে বললে কেন? কোনো সমস্যা?
–ম্যাজিস্ট্রেট স্যার, ওই দেহেন কত্তো আলো। আমি জীবনেও এত্তো আলো দেহিনাই। আমারে বাইর করেন না আমি দেখমু।
–এখানে দেরি করলে তোমার গ্রামে পৌঁছাতে আরো দেরি হয়ে যাবে কিন্তু। অলরেডি সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।
–না না না আমি দেখমু দেখমু দেখমু।
–ওকেএএ ওকে। জাস্ট ৫ মিনিট দেখবে। তবে এখান থেকে নয়। সামনে একটা ফ্লাইওভার রয়েছে। ওখান থেকে দেখতে বেশ ভালো লাগবে।
–আইচ্ছা।
ইফাদ ফ্লাইওভারে উঠে এক কোনায় গাড়ি পার্ক করে নেমে এসে রূপসীকে নামায়। তীরের বেগে লাফিয়ে নেমে পড়ে সে। ছুটে গিয়ে ফুটপাতের ওপর দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখতে থাকে রাতের শহর৷ রাতের শহর যে এতো সুন্দর তা কখনো ধারণা করেনি রূপসী। চারপাশে উঁচু উঁচু দালান। সেসব দালানে কত রং বেরং এর আলোর ছড়াছড়ি। রাতের কালো আকাশের নিচে এই আলোর শহর রূপসীকে অন্য ভূবনে হারিয়ে নিয়ে গেলো। সে যেন চোখ ফেরাতে পারছে না। একবার লাফিয়ে উঠে বলে,
–আল্লাহ রে! এত্তো সুন্দওওওওওওররররর!
ইফাদ রূপসীর ছুটে যাওয়া দেখে দেখে মনে মনে বলে, সবসময় বাঁদরের মতো লাফিয়ে বেড়াবে। এই মেয়ে তো বাঁদরকেও হার মানাবে মনে হচ্ছে। ভাবতে ভাবতে গাড়ি লক করে রূপসীর পাশে এসে দাঁড়ায়। হেলান দিয়ে দু হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ রূপসীর সৌন্দর্য উপভোগ করা দেখে। মেয়েটি এমন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে যেন সৌরজগতের কোনো গ্রহ তার সামনে নেমে এসেছে। ইফাদের তা-ই ধারণা হলো। অবশ্য এসব রাতের শহর বা তার সৌন্দর্য কোনোটাই ওর ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। সে বরাবরই কাটখোট্টা টাইপ মানুষ। ছোটোবেলা থেকেই সবসময় পড়াশোনায় ডুবে থাকার জন্য ‘আঁতেল’ শব্দটি তার জন্য বরাদ্দ হয়ে গিয়েছিল। বড় হওয়ার পরও সে জগতের ধরাবাঁধা নিয়মনীতির মধ্যেই নিজেকে বেঁধে ফেলে। বাইরের প্রকৃতি কখনোই তাকে টানে নি। এমনকি টানেনি কখনো কোনো আবেগী অনুভূতিও। যেই অনুভূতিটি হয়ে থাকে বিশেষ কারো জন্য বিশেষ অনুভূতি। সে মনে করে এমন অনুভূতি তার জীবনে কখনোই আসবে না। কারণ সে আসতে দিবে না। নিজেকে শক্ত খোলসে আবদ্ধ রাখাটাই শ্রেয় মনে করে সে। গম্ভীর, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, অনুভূতিহীন এই শব্দগুলোই না হয় তার লাইফের ‘মেইন ওয়ার্ড’ হয়েই থাকুক। ২৮ টা বছর যখন পেরিয়েছে। আরো ২৮ টা বছরও নির্বিঘ্নে পেরিয়ে যাবে। নিজের ভাবনায় ইফাদ এতোটাই ডুবে ছিলো কখন যে পাশ থেকে রূপসী সরে গিয়েছে তা বুঝতেই পারেনি সে। ধ্যান ভাঙে তার রূপসীর ডাকে।
–ম্যাজিস্ট্রেট স্যাআআর! এইখান থেইকা শহর ম্যালাআআআ সুন্দর দেখোন যায়।
ইফাদ চমকে উঠে রূপসীর ডাক শুনে। এদিক সেদিক তাকিয়ে রূপসীর দিকে চোখ পড়তেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তার। ফ্লাইওভারের মাঝে রোড ডিভাইডারের উপর এলোমেলো পা ফেলে হাঁটছে। দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে যেন সে হাঁটছে না উড়ছে। ইফাদের বুকটা ধ্বক করে ওঠে। এটা ওর গ্রামের মাটির রাস্তার ওপর বানানো সেতু বা সাঁকো নয় যে ধার ধরে ছুটে বেড়াবে। দু পাশে যানবাহনের চলাচল। ব্যস্ত রাস্তা। কোনোভাবে পা পিছলে এপারে বা ওপারে যদি পড়ে যায় তবে গাড়ির চাপে পিষ্ট হয়ে নিঃশেষ হয়ে যেতে সময় লাগবে না মেয়েটার। ইফাদের হাত পা যেন স্থির হয়ে গিয়েছে। হৃদপিণ্ডের গতি হয়েছে দ্রুত। তার তো ছুটে মেয়েটার কাছে যাওয়া উচিত, ওকে টেনে রাস্তার একপাশে নিরাপদে নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু সে নড়তে পারছে না। গলার স্বরটাও যেন আটকে আছে। বারবার মনে হচ্ছে যদি মেয়েটার কিছু হয়ে যায় সে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। ইফাদের ভয়কে সত্যি করতেই কিনা কে জানে আচমকাই রূপসী পিছলে গেলো। উল্টো দিক থেকো তীব্র গতিতে ছুটে আসছে একটি বিশাল ট্রাক। নিজের সর্বশক্তি ব্যয় করে চিৎকার করে উঠে ইফাদ,
–রূপওওসীইইইই!
চলবে