অরুর_সংসার
পর্ব-২৩
নিশিকথা
_________________

-May i come in sir??
-yes come in
-রুম নং ২২ এর পেসেন্ট এর বিল প্রিপেয়ার করা হয়ে গেছে স্যার?
(অয়ন জয়ার কথায় নিজের ডেস্ক এর দিকে একবার তাকিয়ে দেখে নিল)
-না এখনো
-ওহ।করে ফেলেন স্যার। সিজার হয়েছে তাই ৩+লাখ টাকার মত বিল আসবে
-এত কেন?
-সিজার তাইই।আর সাথে প্রিমেচুয়ার বেবী হয়েছে………
-ওহ….. হুম বুঝেছি। একটু আগে মেবি উনার হাসবেন্ড কে ই দেখলাম।
আমি আধা ঘন্টার মধ্যে বিল প্রিপেয়ার করতে দিচ্ছি। আজই রিলিজ নাকি?
-হুম
-ওকে
-স্যার!!!
-হ্যা বলেন
-আর কতদিন স্যার?? আর কতদিন এমন অন্যায় চলবে বলতে পারেন??
ওই পেসেন্ট এর রিপোর্ট একদম নরমাল ই ছিল! একটু লো প্রেশারের প্রব্লেম ছিল মায়ের আর কিছু না।আমি নিজে উনার পাস্ট রিপোর্ট চেক করেছি……… বাবী সুস্থ সবল ভাবে আরো একমাস পরে জন্ম দেওয়া যেত……………
কিন্তু এ্যাপোলো হাসপাতাল তো গরীব বা মধ্যবিত্তদের জন্য অভিশাপ স্যার……..নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আর ওই পেসেন্ট কে আর তার পরিবার কে বলা হয়েছিল যে পেসেন্টের লাইফ রিস্ক… বাচ্চার অবস্থা ভুল জায়গায় এখন ই অপারেশন না করলে কাউকে বাঁচানো যাবে না….নিজেদের লাভের কারনে তাদের মিথ্যা ভয় দেখিয়ে ১মাস আগে সিজার করা হল…. এখন মা আর বাচ্চার অবস্থা সচনীয় …….. কেন স্যার?এমন কেন করলো….. এই দম্পতি তো আহামরি বড়লোক ও ছিল না…..
পেসেন্টের হাসবেন্ড টেনশনে পাগল হবার কায়দা… একদিকে হাসপাতাল এর মোটা অংকের বিল অন্য দিকে এতকিছুর পর ও যদি বাচ্চা আর মা সুস্থ থাকতো!! তাও নেই….
আর এটা কিন্তু নতুন হয়ে আসছে না স্যার…..এমন শত শত রেকর্ড আছে….
বলেন না স্যার আর কতদিন এভাবে চলবে??
আর কতদিন এ্যাপোলো হসপিটাল মানুষের শত কষ্টে উপার্জন করা অর্থ আত্বসাৎ করে নিজেদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বাড়াবে???

-ডঃ জয়া আপনি কথাগুলা ঠিক বলেছেন যে এটা নতুন না…. এর আগেও এমন অনেক রেকর্ড আছে……… তবে এটাও জেনে রাখেন যে আপনি নতুন নয় যে এই নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন…..!! তবে ফলাফল জিরো……. সিস্টেমের কাছে কেউ টিকতে পারে নি..
আচ্ছা বলুন তো বাংলাদেশে ভাল ডাক্তার, ভাল চিকিৎসারর অভাব কেন??
কেনই বা দেশের মানুষ রোগ হলেই বিদেশে পারি জমায়??
কারন হল আমাদের দেশের ৩০% ভাল ডাক্তার এম বি বি এস পাশ করে বিদেশে চলে যায়……. আর বাকি ৩০% আপনার মত সিস্টেমের সাথে না পেরে শেষ পর্যন্ত বিদেশে চলে যায়….যেমন কিছুদিন আগে ডঃফারহানা এসব নিয়ে প্রতিবাদ করে যুক্তু তর্কে টিকতে পেরেই সেস্টেমের চাপে পরে আজ বিদেশে…. আমার এত বছরের ক্যারিয়ারে অনেক এমন ডঃ দেখেছি যারা প্রতিবাদ করেও এই হাসপাতাল কে চেঞ্জ করতে পারে নি……
এ্যাপোলো শুধু ধনীদের যাবার জায়গা…. এখানের জেনারেল ওয়ার্ডর এক্সপেন্স ই সাধারন মানুষ বহন করতে পারে না..
এত কিছুরর পর ও কিন্তু এই হাসপাতালে রোগী কমে না। বাংলাদেশের মন্ত্রি মিনিস্টার,নায়ক নায়িকা, বড় বড় শিল্পপতির পরিবার এখানেই চিকিৎসা নিচ্ছে।
-কিন্তু স্যার এভাবে আর কত দিন?
-হয়তো এন্টায়ার লাইফ
-ওহ
-আমি তো আপনাদের মত ডাক্তার না ডঃজয়া….তনে হাসপাতাল এর ফাইন্যান্স যেহেতু আমার হাতে আমি যথাসাধ্য চেস্টা করবো বিল কমানোর।
আর আপনি এই অভিযোগ টা হাসপাতাল এর সি ই ও এর কাছে করেন….অন্ততপক্ষে কিছুটা হলেও এই ভিক্টিম এর হেল্প হবে….তবে সিস্টেম চেঞ্জ পসিবল না
-হুম। এক্সকিউজ মি স্যার
-হুম………..

জয়া চলে যাবার পর অয়ন জয়ার বলা কথা গুলা নিয়েই ভাবছে…… তার ও তো আর এখানে কাজ করতে ইচ্ছা করে না… যত দ্রুত সম্ভব নিজদের বিজনেস এ ফুল কন্সেনন্ট্রিয়েট করবে সে… এসব তার আর ভাল লাগছে না………
অয়ন জানে হাসপাতালে গোটাকয়েক অসৎ ডাক্ত্রার কাছে। তবে সবাই না। অসৎ ডাক্তার গুলো অনেকের টাকা মেরে খায় তারা। ভুলভাল বলে হাসপাতালে আটকে রাখে দিনের পর দিন পেসেন্টদের আর পাহাড়সমান বিল বাড়ায়।
অয়ন এসবের বিরুদ্ধে তবে কিছু করার নেই। তার…… ৬ বছরের কন্টাক্ট হাসপাতাল এর সাথে.
……..
………………
……..

♥♥……… ইদানিং অরুর শরীর টা তেমন একটা ভাল না।……..
খুব অস্থির অস্থির লাগে তার। মাথা টা মাঝেমাঝেই চক্কর দিয়ে ওঠে।
যে অরু আগে সারা বাড়ীর কাজ একা করলেও ক্লান্ত হত না সে এখন অল্পতে ক্লান্ত হয়ে যায় ….. কেমন এক অদ্ভুত অনূভুতি হয় অরুর…..
আর ইদানিং শুধু ঘুম পায় তার….. একটু শুলেই যেন রাজ্যের ঘুম ভর করে তার চোখে…….

এই তো একটু আগে আসরের নামায পরে একটু শুয়েছিল কখন সে ঘুমিয়ে পরেছে খেয়াল নেই তার…………..♥♥

সন্ধ্যা ৬ টা………
কলেজের পাশের ছোট্ট চায়ের দোকানটায় বসে আছে অহনা………….
এখন থেকে না সেই সকাল ৭ টা থেকে এখনো অবধি সে ওখানটায় বসে।
সব লোকেরা তাকে ফিরে ফিরে দেখছে…… চা ওয়ালা চাচাও ৫,৬ বার জিজ্ঞাসা করে গেছে কিছু লাগবে কি না………
অহনা কোন মতে নিজের চোখের পানি আটকে রেখেছে………..
কই???????? রাজ তো এলো না……….. সে না অহনাকে কথা দিয়েছিল যে ১বছর পর ঠিক এই দিনে, এই সময়, এই স্থানে সে অহনার সাথে দেখা করবে…. ফিরে আসবে পুরোপুরি তার কাছে??..
কই আসলো না তো রাজ??
তাহলে কি সব শেষ???
অহনা তো রাজ বলেছিল অহনাকে যে এই সময়ের মাঝে না ফিরলে সে আর কোন দিন ফিরবে না….
তাহলে কি …………..??
সেই সময় তো আরো ৬ঘন্টা আগে পার হয়ে গেছে…….১বছর আগে ঠিক দুপুর ১২ টার সময় ই তো রাজ তাকে কথা দিয়ে গেছলো যে সে ফিরবে….
ফিরলো না??????

তাহলে কি অহনা ভুল করলো ১টা বছর ধরে রাজের বলা কথায় আস্থা রেখে তার জন্য অপেক্ষা করে?……….. এই মুহুর্তে অহনার নিজেকে অনেক বোকা বলে মনে হচ্ছে…..
১টা বছর কোন যোগাযোগ করে নি রাজ তাও সে অপেক্ষা করেছে… এই আধুনিক যুগে কত মাধ্যমই তো আছে যোগাযোগ এর….. তাও রাজ যোগাযোগ করে নি!………! অহনা তো পারতো রাজের খোজ নিতে, তার সাথে যোগাযোগের চেস্টা করতে…. করে নি অহনা কেননা সে রাজের কথায় বিশ্বাস করে এতদিন রাজের অপেক্ষায় বসে ছিল…. তাহলে অহনা বোকা নয় তো কি?
……………………
অহনা আকাশ এর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিল…….. বলল…
♠♣একই আবহাওয়া… শুধু হাওয়ার গতিটা কেমন স্তিমিত হয়ে গেছে ……
একই স্থান… শুধু পথ ঘাট কেমন বদলে গেছে……
একই সময়… শুধু বছরের ব্যাবধান……
একই তুমি … তাও কেমন অচেনা লাগছে……
আর আমি???????
না কিছুনা… আমি এখনো সেখানেই আছি যেখানে তুমি আমায় ছেড়ে গিয়েছিলে।।। ♣♠

.

অয়ন বাসায় ফিরে দেখে অরু খাটে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে……
ঘড়ির দিকে তাকালো অয়ন…. এমন সময় অরু সহজে ঘুমায় না।
খাটের পাশের টেবিলে প্রতিদিনের মত আজ আর লেবুর শরবত টা নেই দেখে অয়নের মেজাজ টা একটু খারাপ ই হয়ে গেল…..
সে কোন কথা না বলে ওয়াশরুমে গিয়ে ঠাসস করে দরজা আটকে দিল..
সেই শব্দেই ঘুম ভেংগেছে অরুর…..
অরু বুঝলো যে অয়ন এসেছে।অরু দ্রুত নিচে গিয়ে ফ্রিজ থেকে শরবত টা নিয়ে উপরে গেল….. শরবত টা টেবিলে রেখে অরু ভাবলো…..
মৌ আপু কি চলে গেছে? কটা বাজে? এই সময় সে কেন ঘুমালো..?
কি হচ্ছে তার ইদানিং….
অরু আবার নিচে গেল। দেখে মৌ টিভি দেখছে…
-আহ আপু তুমি এখানে.. আমি একটু আগে তো দেখি ই নি তোমাকে। সরি আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম ….. বিকালে তোমার সাথে ছাদে হাটার কথা ছিল কিন্তু আমি যে কেন এতক্ষন ঘুমালাম
-আরে বেপার না।তুমি ঘুম দেখে আমিও অহনার রুমে ঘুমিয়ে গেছিলাম
-ওহ। আপু রুমে??
-না অহনা তো সকাল থেকে বাসায় নেই
-এখনো ফেরে নি!! কেন? এত দেরী তো করে না
-আমিও তাইই ভাবছি
(অরুর টেনশন হচ্ছে অহনাকে নিয়ে….. কি হল মেয়েটার? এমনি বিয়ের বিষয় নিয়ে মন খারাপ তার)
অরু মৌ কে নাসতা দিয়ে উপরে গেল… রুমে গিয়ে দেখে অয়ন স্কাউচ এর উপর আধশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে আছে…
-শুনছেন?
-বল (চোখ বন্ধ করেই বলল অয়ন)
-অহনা আপু সকালে বাইরে গেছে এখনো ফেরে নি
-কি? তুমি আমাকে আগে বল নি কেন?
(অয়ন মোবাইল হাতে নিয়ে অহনার নাম্বারে কল দিল…নাম্বার বন্ধ…….
অয়নের এবার টেনশন হচ্ছে অহনাকে নিয়ে।…. এমন তো কখনো করে না অহনা…. তাহলে কি অরুর কথাই ঠিক??? তার অহন এই বিয়েতে রাজি না?? রাজি না থাকলে বলতে তো পারতো….
অয়ন হুট করে দাড়িয়ে পরলো…… বলল
-সিট!!!!!!! অহন অল্পতেই কোন ভুল সিদ্ধান্ত না নিয়ে ফেলে………
-আপনি কথায় যাচ্ছেন??
-রাত ৮ টা বাজে…বাবার ফেরার সময় হয়ে এসেছে …আর অপেক্ষা করলে চলবে না…

(অয়ন গাড়ী নিয়ে বের হয়ে গেল অহনাকে খুঁজতে….. )

ওদিকে রাত ৯টা বাজে…
সাদ বাইক নিয়ে অহনার কলেজের পিছনের রাস্তা থেকেই রোজ অফিস থেকে ফেরে…..
আজ ও ফিরছিল। রাস্তার চায়ের দোকানের ওখানে চোখ পরতেই সাদ বাইক থামালো……. অহনা না মেয়েটা??? হ্যা!অহনাই তো………এত রাতে এখানে কি করছে সে?
সাদ বাইক রাস্তার এক সাইডে রেখে দ্রুত পায়ে অহনার সামনে গিয়ে দাড়ালো….
-অহন!!!!!!
(অহনা এখনো নিচের দিকে তাকানো)
-অহন!! (সাদ অহনার কাধে হাত রেখে ঝাকা দিল)
-হু????? হু(অহনা মাথা তুলে তাকালো)
-কি রে? এখানে এত রাতে কি করছিস তুই??
-ভাইয়া
-হু। কি করছিস? আচ্ছা বাদ দে আগে চল বাসায়।
– …….. (অহনা ঠায় বসা এখনো )
-কি হল চল (সাদ অহনার হাত টেনে নিয়ে নিজের বাইকে বসালো।অয়নকে ফোন করে সাদ জানালো অহনার কথা।। )
……
………….
……
বারান্দায় চুপচাপ দাড়িয়ে আকাশ দেখছে অহনা। রাত তখন ১১টা বাজে হয়তো….. অয়ন এক কৌটা স্প্রিঞ্জেল চিপ্স নিয়ে অহনার পাশে গিয়ে দাড়ালো….
অহনা বাসায় ফেরার পর অয়নের কথা মত কেউ তাকে কোন প্রশ্ন করে নি…
অয়ন ১টা চিপ্স খেয়ে বলল বাহ স্প্রিঞ্জেল এর নিউ ফ্লেভার…. যোস খেতে………
অহনা চুপচাপ আকাশের দিকে তাকানো……
অয়ন আবার বলল….
কেউ যদি শেয়ার করতে চায় আমি মানা করবো না… তবে সেটা ফাস্ট ফাস্ট ই কারন পরে আমার ভাল লেগে গেলে কিন্তু আমি চাইলেও দিব না….
অয়নের কথায় অহনা তার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।অয়নের হাত থেকে চিপ্স এর কৌটা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।
-অহন
-বল ভাইয়া
-আমি ছেলে পক্ষ কে বলে দিয়েছি আমাদের সময় চাই।ডেট পোস্টপন্ড করতে…
-ভাইয়া আমি রাজি
-নাহ অহন। টেক ইউর টাইম
-না ভাইয়া আমি রাজি। যেদিন ঠিক হয়েছিল সেদিন ই ফাইনাল কর
-সিওর??
-ইয়াহ
-অহন
-হু
-তুই খুশি তো???
-(অহনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল….) হুম ভাইয়া
-(অয়ন অহনার কানের কাছে এসে বলল…)খাটের পাশের ড্রয়ারে আরও ৩ ফ্রেভার এরা চিপ্স রেখেছি। তোর জন্য।

এই বলে অয়ন চলে গেল আর অহনা হাসছে। খুব করে হাসছে… হাসতে হাসতে কেঁদে দিল……..

♥ অরু সংসারের সব কাজ শেষ করে কোন মতে খেয়ে নিল। খেতে ইচ্ছা করে না!কেমন গন্ধ লাগে তার কাছে।
রুমে ঢুকতেই অরুর বমি চলে আসলো। আসবেই বা না কেন…..অয়ন বারান্দায় দাড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট টানছে।অরু কোন মতে নাকে হাত দিয়ে ওয়াশরুমে গেল। ফ্রেশ হয়ে খাটে শুয়ার কিছুক্ষন পর নিজের শরীরের কারো হাতের স্লাইড পেল অরু। অরুর বুঝতে বাকি রইলো না ছোঁয়া টা তার স্বামির…

অয়ন অরুর মুখের কাছে মুখ আনতেই অরু সিগারেট এর বাজে গন্ধ পেল।অরুর খুব বমি আসছে, সারা শরীর ঘামছে…… এর আগে তো কত বার অয়ন সিগারেট খেয়ে ওই পোড়া ঠোঁট
দিয়ে অরুকে কিস করেছে… লং লিপ কিস করেছে… তখন ও তো এমন সিগারেট এর স্মেল ই পেত অরু অয়নের থেকে। প্রথম প্রথম প্রব্লেম হলেও পরে অভ্যাস হয়ে গেছিলো অরুর…..
তবে আজ এত খারাপ লাগছে কেন জানা নেই অরুর…কিছুক্ষন সহ্য করলেও যেই না অয়ন অরুর ঠোঁটে ঠোঁট মিলালো অরুর যেন বমি ঠেলে এলো ..

অরু সাথেসাথে অয়নকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলে ওয়াশরুমে দৌড় দিল…….

অরুর এমন টাইপের ব্যবহার অয়ন আশা করেছিল না।মেজাজ টা বিগড়ে গেল অয়নের…♥

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here