অরুর_সংসার
পর্ব-২২
নিশিকথা
_________________
বগালেখ ঘুরে রাতে ওখানের এক স্থানীয় হোটেলে থেকে গেল সবাই.. তবে পরের দিন আর কেওক্রাডং ঘোরা হয় নি ……
কেননা রাতে মৌ খুব অসুস্থ হয়ে পরে…. 😭😭 খেতে পারছিল না মেয়েটা বমি হয়ে যাচ্ছিল…. সকালে উঠতেই পারছিল না বেচারি 😣😣 এজন্য সবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সকালের ফিরে যাবে তারা।
অরুর ও ইচ্ছা হচ্ছিলো না বের হতে…..
ঢাকায় ফিরবে নিজের সংসারে এটাই ভাল লাগছে এখন তার….
সকাল ৯টায় রওনা দেওয়ায় সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ী পৌছিয়েছে তারা….
সন্ধ্যা ৭;৩০ বাজে হয়তো..অয়ন লেপটপ নিয়ে বসেছে….
হটাৎ কিছু একটার বিকট শব্দে সামনে তাকালো অয়ন…
<অরু আয়রন স্ট্যান্ডের সাথে ধারাম দিয়ে বারি খেয়েছে কোমড়ে.... ব্যাথা পেয়ে কোমড় চেপে
-আরে কি হল? দেখে হাটতে পারো না
(অরু কেঁদে দিল, ব্যাথা পেয়েছে অনেক....
অয়ন অরুকে কোলে তুলে খাটে উপুর করে শুইয়ে দিল)
-দেখি কোথায় লেগেছে?
ওয়েট এভাবেই শুয়ে থাকো ভলিনি স্প্রে করে দিচ্ছি
(ভলিনি স্প্রে করার ১৫ মিনিট পর ব্যাথা কমলো অরুর)
-ধন্যবাদ
-রাখো তোমার ধন্যবাদ।কিভাবে বলদের মত বাড়ি টা খেলে। উফ
(অরু মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। অয়ন কিছু বলতে যাবে তখনি কল আসিলো তার...অয়ন ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে গেল রুমের )
♥অরু অয়নের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে...
অয়নের এটিটিউট, কথা বার্তা,হাটা চলা সব কিছুর প্রতি পাগল অরু... রোজ নতুন নতুন করে প্রেমে পরে সে তার স্বামীর...
যতই অয়নের ব্যবহারে অভিমান করুক কিছুক্ষন বাদে সকল মান অভিমান মিলিয়ে যায়..... এটাই হয়তো ভালবাসা ♥♥♥
এভাবেই ১০,১২দিন কেটে গেল......
ফেরার পর থেকে অয়ন আবার ব্যস্ত হয়ে পরেছে নিজের কাজে আর অরু নিজের সংসারে......
♥এদিকে মৌ প্রেগন্যান্ট...
বান্দরবন থেকে ফিরে পরদিনই টেস্ট করিয়েছিল.... রিপোর্ট পজেটিভ এসেছিল।।
দেড় মাসের অন্তঃসত্বা সে
♥সেদিন থেকে সাদের খুশির যেন ঠিকানাই পাওয়া যাচ্ছে না।বাবা হবে সে♥♥♥
মৌ এর প্রেগন্যান্সির খবর শুনে অরুও খুব খুশি. .....অরুও তো একটা সন্তান চায় এখন। অরুর ধারনা একটা সন্তান আসলে অয়ন আর তার মাঝে সব ঠিক হয়ে যাবে... সে অয়নের ভালবাসা পাবে। শুনেছে একজন পুরুষ এই পৃথিবী তে ২জন নারীকে সব থেকে বেশি ভালবাসে।
এক তার জন্মদাতা মা কে আর দ্বিতীয় তার সন্তানের মা কে।
যদিও অরুর জীবনে এই কথা ভিত্তিহীন কারন তার বাবা এই কথার মান রাখে নি আর অয়ন!!!
.... অয়নের ক্ষেত্র কি এই কথাটা আদোও সম্ভব?
সে তো তার জন্মদাতা মা কেই ঘৃণা করে......তাহলে সন্তানের মা কে কি ভালবাসতে পারবে?
না এসব কথা ভ্যালুলেস কেননা অয়ন তো সন্তান ই চায় না।। অয়নের বলে বাচ্চা পছন্দই না.....
মৌকে ইদানিং রোজ সকালে অয়নদের বাড়ী দিয়ে যায় সাদ আর ফেরার পথে বাসায় নিয়ে যায়।
কেননা বাসায় মৌ একাই থাকে....আর এই অবস্থায়য় একা থাকা মানে রিস্ক.. কখন কি লেগে বসে।।
এর থেকে অয়নের বাড়ী থাকলে অরুর সাথে সাথে সময় কেটে যাবে মৌ এর. ...
অরুর ও সময়টা ভালই কাটে মৌ এর সাথে....
রাতে মৌ আর অরু গল্প করছিল..
-আপু
-হু
-তোমার হাতের আংটি টা অনেক সুন্দর
-হুম সাদ দিয়েছিল... আমাদের বাসর রাতে।
(মৌ এর কথায় অরুর নিজের বাসর রাতের কথা মনে পরে গেল..... তাকেও তো অয়ন দিয়েছিল....... কোন গিফ্ট
নয় টাকা।
সেদিন অতশত না বুঝে টাকাটা নিয়ে ব্যাগে রাখলেও এটা এখন অরু ভালই বোঝে যে টাকা কোন বাসর রাতের গিফ্ট হতে পারে না।সেদিন টাকা টা দিয়ে অয়ন তাকে নিরবে অপমান করেছে যে অপমান অরুও নিরবে মেনে নিয়েছে....... মৌ এরা কথায় অরুর হুশ ফিরলো.........)
-তোমায় কি দিয়েছিল ভাইয়া?
(অরু কিছু বলতে যাবে তখনই অহনা হাজির....অহনার মুখে বিষন্নতার ছাপ..... )
-ভাবি
-জ্বি আপু
- নিচে বাবা ডাকছে।মৌ ভাবি তুমিও যাও।
-আচ্ছা যাচ্ছি আমরা
(অরু, মৌ নিচে নামতেই দেখে হল রুমে অয়ন, বাবা,সাদ,অনিক আর একজন বয়স্ক,আর মহিলা লোক বসা।
-এইতো অরু মা, মৌ মা।এদিকে এসো...
-জ্বি বাবা
-এই যে এনামুল ভাইয়া,রুনা ভাবি....এ অরু অয়নের স্ত্রি আর মৌ সাদের স্ত্রি ..। ইনারা অহনাকে দেখতে এসেছে
(কথাটা শুনে অরু সাথেসাথে অহনার দিকে তাকালো... অহনার মুখ লাল হয়ে আছে.......)
-আসসালামুআলাইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।বস বস (রুনা আহমেদ বলল....)
-না আন্টি আপনারা বসুন আমি আসছি।
(অরু দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে গেল সাথে মৌ ও....)
-আজিব হুট করে এমন দেখতে এলো। জানতে তুমি অরু?
-না আপু
-তাও রাত ৯ টায়! এমন সময় কেউ আসে নাকি...
(অরু কিছু বলতে যাবে আবার অহনা হাজির.. অহনা বলল... )
-অভদ্রতা এগুলা মৌ ভাবি!মেজাজ টা যা খারাপ হচ্ছে....
(অহনা অরুকে বলল...)
ভাবি তুমি কিন্তু ভাইয়া কে বলে দেও আমি এখন বিয়ে করবো না
-আপু মাথা ঠান্ডা কর
-না ভাবি তুমি না পারলে আমি নিজেই ভাইয়া কে বলবো
-আচ্ছা বল কিন্তু উনারা যাক তারপর
-হুম
.
সেদিন রাতে অহনা কিছু বলার আগেই পাকা কথা দিয়ে যায় ছেলে পক্ষ... ছেলের মা অহনাকে আংটি পরিয়ে চলে যায়..
অহনা কিছু বলবে কি সে এমন তড়িঘড়ি দেখে শকড.............
অহনার চোখ থেকে পানি পরছে.... এটা কিভাবে করলো তার পরিবার। এত বড় একটা সিদ্ধান্ত তাকে জিজ্ঞাস না করেই নিয়ে নিল তার বাবা! আর তার ভাইয়া?? সে কি করে পারলো এটা....??
রাত ২ টা.......
অহনার চোখে কোন ঘুম নাই।তার বিয়ে তার মতামত না জেনেই কিভাবে ঠিক করে ফেলল তার পরিবার.....? কিভাবে পারলো এটা? অহনা তো ছেলেকে চেনেও না....দেখেও নি..........
এই আধুনিক যুগে এসে অহনা যেন নিজেকে আদি যুগের মেয়ে মনে হচ্ছে...যে যুগে মেয়েরা না দেখেই পরিবারের কথা মত বিয়ে করে সংসার করতো.....
না অহনা এর বিয়ে করতে পারবে না....সে যে রাজকে ভালবাসে। নিজের থেকে বেশী ভালবাসে....... রাজ তো তাকে কথা দিয়েছিল যে বিদেশ থেকে ফিরে তাকে বিয়ে করবে......
রাত তো তাকে অপেক্ষা করতে বলেছিল........
♦♦♦♦♦♦♦♦♦
অহনা আর রাজ একই ক্লাশে পড়তো .......
দেখা হয়েছিল প্রথম তাদের কোচিং এ।সেখান থেকেই আলাপ.... তখন অহনা পড়তো ক্লাশ ৯ এ।
ক্লাশ ১০ থেকে তাদের প্রেম.....
একই কলেজ, একই ভার্সিটি তে পরে তারা।
রাজদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না।তাই সে প্রায় ই ফ্রাস্টেটেড থাকতো যে অহনার বাসা থেকে তাকে মেনে নিবে কি না.......
দেশে চাকুরীরর অবস্থাও ভাল ছিল না....তারপর সমবয়সী........ কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না।অহনার ও ভয় হত রাজকে হারিয়ে ফেলার.....
তবে রাজের বড় বোন রিমার বিয়ে হয়ে প্রবাসে... রিমা রাজকে নিয়ে যেতে চায় বাইরের দেশে কারন এই দেশে থাকলে রাজের ইস্টাব্লিস্ট হয়ে অনেক বছর লেগে যেত......
রাজ অহনাকে ছেড়ে যেত চায় নি.....অহনা ই রাজ
কে পাঠিয়েছিল তার বেটার ফিউচারের জন্য
....১ বছর আগে যখন রাজ বিদেশে যাবার আগে শেষ দেখা করতে এসেছিল অহনার সাথে সেদিন অহনার হাত ধরে বারবার বলেছে রাজ তার জন্য অপেক্ষা করতে।
রাজের শেষ কথা ছিল..
-অহনা যাচ্ছি......
-কতবার বলেছি তোমায় যাচ্ছি বলবে না।
-ওহ হুম। সরি।
-হু
-আচ্ছা অহনা তাহলে যেয়ে আসছি
-তাড়াতাড়ি ফিরে এসো রাজ...
-আসবো...একটা বছর সময় দেও প্লিজ। প্লিজ অপেক্ষা কর আমার জন্য প্লিজ। আমি ফিরে আসবো অহনা। এসে তোমায় বিয়ে করে আমাদের সুখের সংসার গড়বো...... ১টা বছর সময় চাচ্ছি তোমার চাচ্ছি তোমার কাছে... অপেক্ষা করো... এই ১বছরের আমি যোগাযোগ না করলেও অপেক্ষা করবে..... আর ১বছর পর যদি ঠিক এই দিনে এই সময় আমি তোমার সামনে না ফিরতে পারি তাহলে ভেবে নিয়ো আর কোনদিন ফিরবো না......
খেয়াল রেখো নিজের...
♦♦♦♦♦♦♦♦
কথাগুলা ভাবতে ভাবতে
হুহু করে কেঁদে দিল অহনা। কাল সেই দিন সেই তারিখ...... ১টা বছর অপেক্ষা করেছে এই দিনের।
কাল তার রাজ ফিরবে....
কলেকের পিছনের ছোট্ট চায়ের দোকানের সামনে দেখা করবে অহনার সাথে....... এ কথাই তো দিয়ে গেছিলো রাজ
তবে??
রাজ যদি না আসে কাল?????
তবে বিদেশে যাবার পর থেকে এই ১ বছর রাজ কোন যোগাযোগ ও তো করে নি অহনার সাথে....
তাহলে কি রাজ অহনাকে ভুলে গেল??? ভুলে গেল ৭ বছরের সম্পর্কটাকে??
....
.........
....
অরুর খারাপ লাগছে অহনার জন্য.... পাকা কথা হবার সময় সে অহনার চোখে পানি দেখেছে......... অহনা খুশি না এই বিয়েতে.... খুশি হওয়া তো বাদ অরু অহনার চোখে এক অদ্ভুত যন্ত্রনা অনুভব করেছে।
অরু অয়নের দিকে তাকালো.......... অয়ন কাজ করছে লেপটপে...
-কিছু বলবে??
-জ্বি!না মানে
-কি? হ্যা নাকি না কোনটা ?
-অহনা আপু এই বিয়েতে খুশি না
-কে বলেছে তোমায়???
-আমি বুঝেছি। আপুর চোখ দেখেই (অরুকে আর বলতে দিল না অয়ন.... নিজে বলল......
-ওহ তুমি মানুষ এর চোখ দেখে মনের কথা বুঝে ফেল নাকি?
-না
-তাহলে?
-আপু কাঁদছিল
-তো? তুমি তোমার বিয়ের কথা শুনে জোরে জোরে হেসেছিলে বুঝি?
- ..................
-ছেলে টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার.... দেখতে ভাল,বংশ ভাল........ এই বিয়েতে না খুশি হবার তো কিছুই নেই!
- .....................
-ঘুমাও
(রুমের বাইরে দাড়িয়ে কথাগুলা শুনলো অহনা.. ..
আর সে আগে থেকে কি বলবে এখন গিয়ে তার ভাইকে??
রাজের কথা বললে কি ভাই মেনে নিবে.... এদিকে তো ছেলেপক্ষ আংটি দিয়ে গেছে। আগামী মাসের ১ম সপ্তাহে বিয়ের ডেটও ফাইনাল করে দিয়েছে....
এত দ্রুত গতিতে সব কেন হচ্ছে অহনার জীবনে??
.
না এ বিয়ে অহনা করতে পারবে না। তবে কি এখনি অয়নকে বলবে রাজের কথা??
আর বললে যদি অয়ন মেনেও নেয় আর তারপর যদি কাল রাজ না আসে? তখন কি হবে???
তাহলে তো বাধ্যতামূলক ওই অচেনা অজানা মানুষটা কে বিয়ে করতে হবে....
এমন হাজার কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে অহনার....
একসময় মাথাটা ঘুড়ে পরে যেতে নিলে কোনভাবে কোনভাবে নিজেকে সামলিয়ে নিজের রুম পর্যন্ত গেল সে........
..
.....
..
সকালে অয়ন হাসপাতালে ঢোকার সাথেসাথে এক লোক কাঁপতে কাঁপতে রিসিপ্সন থেকে যাচ্ছে.....
-excuse me.R u ok??
-Yeah i am
-it doesn't seems like everything is ok
(লোক টা কিছু বলার আগে পিছন থেকে এক ডাক্তার ডাক দিল)
-আপনি এবার যেতে পারেন আপনার বেবীকে দেখতে
-ওকে
(লোকটা চলে গেল)
-কি হয়েছে ডাঃ উনার?
- স্যার একচুয়ালী উনার প্রিমেচুয়ার বেবী হয়েছে
-ওহ
(অয়ন কেবিনে যাবার সাথেসাথে জয়া নক করলো)
/
//
/
চলবে....