গল্প – আমার আমি যে তুমি
পর্ব – ১৮
লেখিকা – ইশানুর তাসমিয়া

“দেখো প্রিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি না,,,,প্লিজ আমার কাছে আসবে না,,, আমার বিরক্তি লাগে তোমাকে,,,,”

প্রিয়াঃ কেনো সায়ান,,,কেনো আপনি আমাকে পছন্দ করেন না,,,, কি কমতি আছে আমার,,,আপনার যা চাওয়া পাওয়া আছে সব পূরণ করেছি,,,তাও কেন আপনি আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন,,,,??

সায়ানঃ কারন আমি অন্যজনকে ভালোবাসি,,, তোমাকে না,,,,

প্রিয়াঃ রুহিকে তাই না,,,,??[ তাচ্ছিল্য ভরা কন্ঠে ]

প্রিয়ার কথায় সায়ান অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়,,,,তাতে প্রিয়া একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,

প্রিয়াঃ ভাবেন নি না,,,যে আমি রুহি আর আপনার কথা জানব,,,আসলে জানার কথা ছিল না,, যদি না আজকে আপনার আর রুহির কথা শুনতাম,,,আগে থেকেই আমার সন্দেহ হতো,,,,আপনার এতো রুহির পিছনে পিছনে ঘুরা নিয়ে,,,কিন্তু সবসময় নিজেকে শান্ত রাখতাম,,, বলতাম,,এমন কিছু হবে না,,আপনি যতই আমাকে মারেন,,বকেন,,অপমান করেন,,,, তাও তো আমাকেই ভালোবাসেন,,,কিন্তু আমি ভুল ছিলাম,,,আপনি তো আমাকে কখনও ভালোবাসেনই নি,,,যা একটু কাছে এসেছিলেন,,,তা সব নেশার ঘোরে,,,চিন্তা করবেন না,,, আমি আপনাদের মাঝে আসবো না,,, শুধু একবার চিন্তা করে দেখবেন আপনি চলে গেলে আমাদের সন্তানের কি হবে,,,আমি তো শুধু আপনাকেই ভালোবেসেছি,,,,অন্য কাউকে তো আর ভালোবাসতে বা বিয়ে করতে পারবো না,,,তাই আপনি না থাকায় আমাদের সন্তানের কতটা খারাপ অবস্থা হতে পারে তা নিয়ে একটু হলেও ভাববেন,,,,

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে ফেলে প্রিয়া,,,সায়ান খুব মনযোগ দিয়ে শুনেছে প্রিয়ার কথা গুলো,,,,

” আসলেই তো,,,আমি কি কোনো ভুল করছি,,,রুহিকে পাওয়ার নেশায় প্রিয়াকে কি এতই কষ্ট দিয়েছি,,,,নিজের সন্তানকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাচ্ছি,,,,এতটা খারাপ কিভাবে হলাম আমি,,,টাকার নেশা,, রুহিকে পাওয়ার নেশা এতটাই খারাপ করে দিয়েছে আমায়,,,,তাছাড়া রুহি তো সুখেই আছে,,,অনেক কষ্ট পেয়েছে জীবনে সে,,,এখন একটু সুখে থাকতে চাচ্ছে,,, তা কি আমি নিয়ে নিবো,,,তাছাড়া রুহি কি আমার কাছে আসতে চাইবে,,, হয়তো না,,,,সে তো এখন রুহানকে ভালোবাসে,,,তাই তো তাকেই বিয়ে করেছে,,,,,”

সায়ানকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রিয়া বলে,,,,

প্রিয়াঃ অনেক রাত হয়ে গেছে সায়ান,,,আসুন ঘুমিয়ে প…..!!

প্রিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই সায়ান রুম থেকে দ্রুত পায়ে বের হয়ে যায়,,,আর প্রিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সায়ানের যাওয়ার দিকে,,,,নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তার,,,,

.
.
.
.

সকালে,,,,,

এখন রুহিকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে,,,না,,না,,,জোড় করে বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে,,,,তাও রুহানের জন্যে,,,,কারন রুহানের মনে হয় রুহি হাসপাতালে কাম্ফট ফিল করছে না,,,,তাছাড়া রুহানের মতে হাসপাতালে অনেক সমস্যা,,,না আছে প্রাইভেসি,,, আর না আছে ভালো খাবার দাবার,,,,একটু মিষ্টি মিষ্টু কথা কিংবা দুষ্টামিও করতে পারছে না সে,,তাই বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রুহিকে,,,, সেখানেই বাকি চিকিৎসা চলবে রুহির,,,,,

গাড়ির ২ প্রান্তে বসে আছে রুহি আর রুহান,,,,রুহি মুখ ফুলিয়ে আর রুহান ৩২ টা দাঁত বের করে,,,, হঠাৎ -ই রুহান রুহির একেবারে গা ঘেষে বসে,,,এতে রুহি রেগে বলে উঠে,,,,

রুহিঃ কি হয়েছে,,, আপনি এভাবে আমার গা ঘেষে বসছেন কেন,,,,??দূরে যান,,,,

রুহির কথা শুনে রুহান আরও রুহির সাথে চেপে বসে,,,,এক পর্যায়ে রুহির কোলে মাথা রেখে তার ২ হাত দিয়ে রুহির কোমড় জড়িয়ে শুয়ে পড়ে,,,,

রুহিঃ আপনি জীবনেও সুধরাবেন না,,,,

রুহানঃ সুধরাতে কে চায়,,,,??

রুহিঃ আপনার মাথা,,,,

রুহানঃ ভালো কথা মনে করেছো তো,,,,আমার মাথায় না অনেক ব্যথা করছে,,,একটু হাত বুলিয়ে দেও না,,,,,,[ বাচ্চা বাচ্চা কন্ঠে ]

রুহি আর কিছু না বলে রুহানের মাথা হাত বুলাতে থাকে,,, আর রুহান,,, তার তো মনে হচ্ছে সে কোনো সুখের সাগরে ভাসছে,,,,অনেক আরাম লাগছে তার,,,,রুহান মনে মনে ভাবে,,,” এ মেয়ের কি হাতে জাদু আছে নাকি,, মাথায় হাত দিতেই মাথার সব যন্ত্রণা চলে গেছে,,,,”

আর এদিকে রুহি ভাবছে অন্য কথা,,,,,তার আসলে রুহানকে জ্বালাতে ভালো লাগে,,,,রুহানের সাথে দুষ্টমিষ্টি ঝগড়া করতে ভালো লাগে ,,,,রুহানের তার প্রতি কেয়ারিংগুলো অনুভব করতে ভালো লাগে,,,কিন্তু কেন এমন হয়,,,,??উত্তরটা হয়তো রুহির জানা,,,,,

কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা বাড়িতে পৌঁছে যায়,,,,গাড়ি বাড়ির সামনে থামতেই রুহান আগে গাড়ি থেকে নেমে রুহিকে কোলে করে হাঁটা শুরু করে বাড়ির ভেতরের দিকে,,,,,
.
বাড়িতে ঢুকতেই রুহি লজ্জা পেয়ে যায়,,,,কারন ড্রইং রুমে আগে থেকেই সবাই তাদের জন্য বসে অপেক্ষা করছে,,,,সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে,,,,তা দেখে রুহান রুহিকে কোলে নিয়েই বলে উঠে,,,,

রুহানঃ কি,,,,,?? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন সবাই,,,,??🤨🤨

রোদঃ ওমা তোরা সবার সামনে রোমেঞ্চ করতে পারবি আর আমরা তোদের দেখে হাসতে পারবো না,,,,,😁😁

রুহানঃ রোমেঞ্চ তো আমি শুরুই করি নি,,,,দেখবি আমার রোমেঞ্চ কেমন,,,,,[ চোখ টিপ মেরে ]

কথাটা শুনে রুহির চোখ বড় হয়ে যায়,,, আসতে করে রুহানকে বলে,,,,

“অসভ্য”

রুহি বলতে না বলতেই রোদ বলে ওঠে,,,,

রোদঃ তুই যে নির্লজ্জ এটা আমাদের আগে থেকেই জানা,,,কিন্তু আমরা নির্লজ্জ না,,,, এগুলো দেখার আমাদের শখ নেই,,,,,

রুহানঃ আমি কি দেখাতে চেয়েছিলাম,,,,তুই-ই তো দেখতে চেয়েছিলি,,,😒😒

রোদ একটা ভেংচি দিয়ে বলে,,,,

রোদঃ হইছে হইছে বুঝচ্ছি,,,এখন টাকা দেয়,,,

রুহানঃ কেন,,,??🤨🤨

সাহেলঃ কেন আবার,,,তোর আর রুহির বিয়ে হয়েছে দেখে,,,,কালকে তো টাকা নিতে পারিনি,,,তাই এখন নিবো,,,,

রুহানঃ পড়ে দিবো,,এখন অনেক ডায়াড আমরা,,,,রুমে যেতে দেয়,,,,

রোদঃ আচ্ছা ঠিকাছে,,,কিন্তু রুহি এখন আমাদের সাথে থা…..

রোদের কথা শেষ হওয়ার আগেই রুহান রুহিকে নিয়ে রুমের দিকে চলে যায়,,,,

রুমে ঢুকেই রুহান প্রথমে রুহির হাত মুখ খুব যত্ন সহকারে মুছে দেয়,,,,, তারপর নিজেও ফ্রেস হতে যায়,,,,,,,

.
.
.
.

রুহি বসে বসে মোবাইল টিপছে আর রুহান রুহিকে দেখছে তার তীক্ষ্ম চোখে,,,, এটা রুহি আড়চোখে একবার দেখে বলে,,,,

রুহিঃ আমাকে কি বেশি সুন্দর লাগছে,,,এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন,,,,??[মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থেকেই]

রুহানঃ ইউ নো ওয়াট রুহি,,,তোমাকে সত্যি অনেক সুন্দর লাগছে,,,,লাইক আ সেওড়া গাছের পেত্নি,,,,😏😏

রুহিঃ কি,,, আমি আর সেওড়া গাছের পেত্নি,,??লাইক সিরিয়াসলি,,,??

রুহানঃ নোপ বেইবি,,,,ইউর মাই শাকচুন্নি,,, খালি খালি আমার মন চুরি করো,,,ইউ চুন্নি,,,,

রুহি রুহানের কথা শুনে রাগে ফুঁসছে,,,, আর রুহান ৩২ দাঁত বাইর করে হাসছে,,,,

রুহিঃ আপনি খুব বড় ধরণের খারাপ,,,সেটা আপনি জানেন,,,, 😡😡

রুহানঃ ইয়া বেবি,,,আচ্ছা জান,,,তোমার তো মেবি ক্ষুধা লাগছে,,,ওয়েট তোমার জন্য স্যুপ বানিয়ে আনি,,

রুহিঃ আপনি বানাবেন,,,,??🤨🤨

রুহানঃ ইয়াপ,,,,

রুহিঃ তার মানে আজকে আর আমার খাবার খাওয়া লাগবে না,,,,😒😒

রুহানঃ এটা তোমার ভুল ধারণা,,, কারন আমি রান্না জানি,,,,😏😏

রুহিঃ দেখা যাবে,,,কত ধানে কত চাল,,,,,

রুহানঃ হুম দেখা যাবে,,,,,

বলেই রুহান চলে যেতে নেয়,,,কিন্তু আবার ফিরে এসে রুহির ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে চোখ টিপ মারে রুহিকে,,, তারপর চলে যায় নিচে,,,,আর রুহি আপনা আপনি হেসে দেয়,,,,

রুহান যাওয়ার পরপরই সায়ান রুমে ঢুকে,,,রুমে ঢুকেই রুহিকে হাসতে দেখে বলে উঠে,,,,

সায়ানঃ সুখে আছো তাই না রুহি,,,,,

রুহিঃ………

সায়ানঃ জানো রুহি কালকে তুমি যখন বিয়ে করেছিলে রুহানকে,,, অনেক কষ্ট লেগেছে আমার,,,আর সেটা ভালোবাসাই ছিল,,,কিন্তু প্রিয়ার জন্য যেটা আছে,,, সেটা শুধু মায়া,,,জানো কালকে রাতে ও আমাকে বলে ও নাকি আমাকে ছেড়ে যেতে রাজি,,, আর এটাও বলে আমি যেন একবার হলেও আমাদের সন্তানের কথা ভাবি,,,,আমি ভেবেছি অনেক ভেবেছি,,,সাথে তোমার সাথে আর প্রিয়ার সাথে কাটানো সব মুহূর্তগুলোও,,,,তোমাকে পাওয়ার আশায় অনেক কষ্ট দিয়েছি প্রিয়াকে,,আর ও,,, ও মুখ বুঝে সব সহ্য করেছে জানো,,,কালকে যখন ও বলেছিল,,, ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে,,,বিশ্বাস করো কেন জানিনা আমার একটু হলেও কষ্ট লেগেছে,,,তাছাড়া তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো না,,,তোমাকে আমি নিজের করে নিলেও তুমি আমি কেউ সুখে থাকতে পারবো না,,,,তাই আমি ভেবেছি আমি প্রিয়া আর আমাদের সন্তানকে নিয়েই খুশি থাকার চেষ্টা করব,,,আর তুমি রুহানকে নিয়ে,,,ভালো থেকো রুহি,,, আর আসবো না তোমার মাঝে আমি,,,,

সায়ানের চোখে পানি স্পষ্ট,,, চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই সে রুম থেকে বের হয়ে যায়,,,আর রুহি সেদিকে তাকিয়ে থেকে বলে,,,,,

“এটার-ই অপেক্ষা করছিলাম আমি সায়ান,,,ভালো তো আমি থাকবোই,,, কিন্তু এখন না,,,আগে তো আমাকে……[ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ]”
…………..
…………………
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে……….]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here