গল্প – আমার আমি যে তুমি
পর্ব – ০২
লেখিকা – ইশানুর তাসমিয়া
বকবক করে মাথা খেয়ে ফেলছে রুহি সাহেলের,,,কিন্তু সাহেলের বিরক্ত লাগছে না,,, বরং ভালোই লাগছে কথা বলতে,,,,
রুহিঃ আচ্ছা ভাইয়া,,, ও-ই খাটাশটা কি আমাকে সত্যি মেরে ফেলবে,,,?🥺🥺
সাহেলঃ আরে না,,, ও তো মজা করে বলেছে,,,
রুহিঃ সেটাই যেন হয়,,,,আচ্ছা উনি এমন কেন,,,??আর আপনারা কি গেংস্টার,,,,??
সাহেলঃ না,,, আমরা ভালো ফেমেলির বলতে পারো,,,,কিন্তু একটু গেংস্টার টাইপেরও,,,আর ও হলো আমাদের লিডার,,,প্লাস আমার বন্ধু,,,,ওর বাবা এ শহরের নেতা,,,,
রুহিঃ ও,,,তাই ও-ই খাটাশের এত দাপট,,,😒😒
সাহেলঃ হয়তো,,,🙄🙄কিন্তু ও এতও খারাপ না,,,,
রুহিঃ আচ্ছা উনি যে বলল,,উনি মানুষের জান নেয়,,,,এটা কি সত্যি,,,,??
সাহেলঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে,,,ওর সাথে যারা বিশ্বাস ঘাটকতা করে,,,ও তাদেরকে জানে মেরে ফেলে,,,,
রুহিঃ মানে কি,,আই কিয়া করসি,,আরে কিল্লায় আনছে,,😭😭
সাহেলঃ ওয়েট,, এটা কি ধরণের ভাষা,,,আই হেভ আ ডাউট,,,তুমি কি সত্যি ডাক্তার,,,??🤨🤨
রুহিঃ হো আমি ডাক্তার,,কিন্তু আগে এইডা কোও,,আমারে তোমারা এখানে কিল্লাই আনছো,,,??😭😭
সাহেলঃ আরে,,এটা আমাদের ভুল ছিল,,,,রুহানের সাথে তার বিজনেস পার্টান মিস্টার ইমরান বিশ্বাস ঘাটকতা করেছে,,,তাই রুহান তাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে,,,বাট,, কোনোভাবেই পারছে না,,, তাই তার বউ কে টারগেট করে,,,এবং তাজে কিডনেপ করার প্লেন করে,,,আর তার বদলে তুমি,,,
রুহিঃ ও-ই বাত্তামিস মেয়ে যদি একবার পাই,,,একেবারে টাক্কু করে দিতাম,,,😠😠তার জন্য আমার আজকে হাসপাতালেও যাওয়া হয় নি,,,,😭😭
সাহেলঃ হয়েছে,,এখন কিছু খেয়ে নাও,,,
রুহিঃ খেয়ে নাও মানে,,, আমাকে বাসায় নিয়ে যান,, আমি বাসায় যাবো,,,
সাহেলঃ সেটা তো হবে না,,, রুহান বলা ছাড়া আমি কিছু করতে পারব না,,,
রুহিঃ উফফ,,ও-ই খাটাসটা আসলেই একটা ইন্দুর🐭🐭,,,যত্তসব,,,কালা ইন্দুর,,,
সাহেলঃ তুমি খাবে নাকি আমি খাবার নিয়ে যাবো,,,
রুহিঃ না,,না,,দিন,,, খাচ্ছি,,,বাট আমার হাত আগে খুলে দিন,,,
সাহেলঃ আচ্ছা,,, দাঁড়াও,,,,
সাহেল রুহির হাতের বাঁধন আর পায়ের বাঁধন খুলে দেয়,,,তারপর তারা ২ জন মিলে খাবার খায়,,,খাবার খাওয়া শেষ হতেই রুহি সাহেলের সাথে আবার গল্প করা শুরু করে দেয়,,,
গল্প করতে করতে দুপুর থেকে বিকেল হয়ে যায়,,,রুহি আর সাহেল গল্প করছিল,,,হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠে,,,,
___সাহেল তুই মেয়েটার হাত পায়ের বাঁধন খুলেছিস কেন,,,??আর কি করছিস তোরা ২ জন,,,
রুহিঃ নাচতেসি,,,,
বলেই রুহি পিছনে ফিরতেই তার আত্তা শুকিয়ে যায়,,,কারন রুহান পিছনে দাঁড়িয়ে আছে,,,তার চোখ ভীষণ লালা হয়ে আছে,,,আর কপালে বেশ ভাবে আঘাত পেয়েছে,,,, ওখান থেকে রক্ত পড়ছে,,,তা দেখে রুহির কেন যানি খুব মায়া হচ্ছে,,,,, সে সাহেল কে বলে,,,,
রুহিঃ ভাইয়া,,, ফাস্ট এইড বক্স,,আনেন তো,,,
সাহেলঃ আচ্ছা দাড়াও,,,[ বলেই চলে যায় ]
রুহানঃ মানে কি,,, তুই কোথায় যাচ্ছিস,,,আর এ-ই মেয়ে,, কি সমস্যা তোমার,,,
রুহিঃ ইন্দুরদের সাথে আমি কথা কম বলি,,,
রুহানঃ ওয়াট,,,??😠😠
রুহিঃ আরে,, আপনি বলেছিলেন না,, যে আপনি কে সেটা আপনি জানেন না,,, তাই আমি আপনার নাম রেখেছি ইন্দুর,,,😁😁সুন্দর না নামটা,,,,
রুহানঃ তুমি যেমন থাড ক্লাস,,, তোমার চিন্তা ধারাও থাড ক্লাস,,,
রুহিঃ,,কি,,,??😠😠
রুহানঃ জ্বী,,,,
রুহি কিছু বলতে যাবে,, তার আগেই সাহেল চলে আসে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে,,,,তাই রুহি কথা না বাড়িয়ে প্রথমে রুহানের হাত ধরে তাকে চেয়ারে বসায়,,,তারপর ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে,,,তা থেকে ঔষধ বের করে রুহানের কপালে লাগানো শুরু করে দেয়,,,,তাতে রুহান অবাকের শেষ প্রান্তে,,,জীবনেও কেউ তার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস করে নি,,এভেন সাহেলও না,,আর এ মেয়ে কিনা তাকে,,,
রুহানঃ এ-ই মেয়ে,, সরো এখান থেকে,,,কি করছ তুমি,,আমার থেকে দূরে যাও বলছি,,,
বলেই রুহান উঠতে নিলে রুহি তার হাত ধরে ফেলে,,,তারপর জোড় করে বসিয়ে বলে,,,
রুহিঃ এ-ই সমস্যা কি আপনার,,,দেখছেন না আমি আপনার কপালে ঔষধ লাগাচ্ছি,,এমন করছেন কেন,,??আমার ঔষধ লাগানো শেষ হলে আমি সরে যাবো,,,বুঝেন,,??😤😤
রুহান কিছু বলতে নিলেই রুহি রুহানের কপালে ঔষধ লাগানো তুলা,, খুব জোড়ে চাপ দেয়,,,সাথে সাথে রুহান ” আহহ” বলে উঠে,,,কিন্তু তাতে রুহির বিন্দু মাত্র চিন্তা নেই,,সে নিজের মত করে ঔষধ লাগিয়ে রুহানের কাছ থেকে সরে আসে,,,
সরে আস্তেই খেয়াল করে,,,রুহান তার দিকে তাকিয়ে আছে,, তা দেখে রুহি বলে,,,
রুহিঃ মিস্টার ইন্দুর,,আমাকে কি বেশি সুন্দর লাগছে নাকি,,ভাবে হাবলার মতো তাকিয়ে আছেন কেন,,??😒😒
রুহির কথায় রুহানের হোস আসে,,,সে বিরক্তি মাখা চেহারা করে রুহিকে বলে,,,
রুহানঃ তোমার কাজ শেষ,,,,??[ অন্য দিকে তাকিয়ে ]
রুহিঃ জ্বী,,,
রুহানঃ নাও গেট লোস্ট,,,,[ বিরক্তি নিয়ে ]
রুহিঃ কোথায়,,,??বাসায়,,??😁😁
রুহান রুহির কথায় পাত্তা না দিয়ে সাহেলকে বলে,,,,
রুহানঃ সাহেল,,এ-ই ডাইনিকে নিয়ে যা তো গেস্ট রুমে,,,, আর খবরদার এর থেকে দূরে থাকবি,,,,
রুহিঃ কি বললেন,,,??আমি ডাইনি,,,??আমি ডাইনি হলে আপনি গোবর,,,বুঝছেন ” গোবর মিয়া ”
রুহানঃ ওয়াট,,,?? আমি গোবর মিয়া,,,??তুমি জানো কত মেয়ে আমার জন্য পাগল,,,,??😡😡
রুহিঃ আমি ও-ই মেয়েদের মতো পাগল না,,,,😒😒
রুহানঃ উফফফ,,সাহেল,,একে নিয়ে যা তো,,,
সাহেকঃ হুম যাচ্ছি,,চলো রুহি,,,
রুহি একটা ভেংচি কেটে সাহেলের সাথে চলে যায়,,,,
.
.
.
.
.
.
.
বিকাল প্রায় ৫টা,,,
বিরাট এক রুমে রুহি একা একা বসে আছে,,,কথার বলার কোনো সাথি নেই তার,,ও-ই ইন্দুর,,উরফ,,গোবর মিয়ার ভয়ে সাহেলও আসছে না তার সাথে গল্প করতে,,,কি একটা অসহ্য অবস্থা,,,,!!
হঠাৎ রুহি কিছু একটার খুব জোড়ে শব্দ পায়,,,পরপর ২ ৩ বার হয় শব্দটা,,, রুহি জানালার কাছে যেতেই দেখে রুহানের হাতে বন্দুক, আর সেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে,,,আর মাটিতে লুটিয়ে আছে ২- ৩ জন লোকের মৃত দেহ,,,সাথে সাথে চিল্লিয়ে উঠে সে,,,চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে তার,,,দেয়ালের সাথে ঠেকে সে ফ্লোরে বসে পরে,,,খুব ভয় হচ্ছে তার,,প্রতিবার অপেরেশন থিয়েটারে কারো রক্ত দেখলে রুহির চোখ থেকে এমন পানি বের হয়,,,কারো কষ্টে কষ্ট হয় তার,,,আর এখন তো সে মানুষের মৃত্যু দেখেছে,,,!!
এদিকে,, রুহান কারো চিল্লানোর শব্দ পায়,,আশেপাশে তাকাতেই দেখে তার থেকে একটু দূরে,,জানালা দিয়ে রুহি তার দিকে তাকিয়ে আছে,,,চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে তার,,,খুব কষ্ট হচ্ছে রুহানের,,রুহির চোখের পানি সহ্য হচ্ছে না তার,,,ভালোবাসার মানুষকে কষ্ট পেতে দেখে তারও কষ্ট হচ্ছে,,,,,
…………..
…………………