#আজও_তোমার_অপেক্ষায়
#পর্ব:০৪[শেষ পর্ব]
#shahriar_shoaib_ss
কাজের চাপ থাকার কারণে আর দেশে যাওয়া হচ্ছে না। আব্বু বলছিল কাজ ছেড়ে চলে আসতে কিন্তু ভবিষ্যতে সব কিছু তো আমাকেই দেখতে হবে। যে কারণে আর দেশে আসা হলো না।
দিন যত যাচ্ছে রিতুর ডেলিভারির সময় ও এগিয়ে আসতেছে। এভাবেই দেখতে দেখতে তিন মাস পার হয়ে গেল। আর একমাস বাদেই রিতুর বেবি হবে। আম্মু আব্বু বলতেছে তাড়াতাড়ি দেশে আসতে এই সময় টা তে নাকি আমাকে খুব দরকার রিতুর। নিজের স্বামী পাশে থাকলে মেয়ে রা ভরসা পায়। কিন্তু আমি কি ভাবে রিতুর সামনে গিয়ে দাড়াব এগুলো ভাবতেছি, এতোদিন ঠিক মতো কথা বলি নি, বিয়ের প্রথম দিন ই গায়ে হাত তুলছিলাম। যাইহোক তাও দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম কাওকে না জানিয়েই। পরের সকালের প্লেনেই রওনা হলাম। দির্ঘ পাচ ঘন্টা জার্নির পর প্লেন লেন্ড করল। সব কিছু কেমন অচেনা লাগতেছে। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আব্বু কে ফোন দিলাম,
আমি: আসসালামুয়ালাইকুম আব্বু।
আব্বু: ওয়ালাইকুমআসসালাম। বাবা কেমন আছো।
আমি: আলহামদুলিল্লাহ্। তুমি আব্বু?
আব্বু: আলহামদুলিল্লাহ্।
আমি: আব্বু গাড়ি টা একটু এয়ারপোর্ট এ পাঠায় দাও। আর আম্মু কে কিছু বইল না।
আব্বু ফোন রেখে দিছে কারণ আব্বু বুঝছে আমি আসছি। ওখানেই আসে পাশে একটু হাটাহাটি করতেছি। এর মধ্যে আব্বুই গাড়ি নিয়ে চলে আসছে। এতোদিন ওখানে থাকার কারণে ওদের মতোই জোব্বা আর মাথায় রুমাল দিয়ে আসছি। আব্বু এটা দেখে আরো বেশি খুশি হইছে। তারপর আব্বু আমাকে দেখেই তার বুকে জড়িয়ে ধরলেন অনেক দিন পর দেখা। আব্বু বল্লো, এয়ারপোর্ট এর পাশেই কি কাজে জানি আসছিল যে কারণে এতো তাড়াতাড়ি আসতে পারল।
আব্বুর সাথে বাসার উদ্দেশে রওনা হলাম। বাসায় পৌছাতে বেশিক্ষণ সময় লাগল না।
আম্মু আমাকে দেখেই কেদেঁ ফেলল। তারপর আম্মুর সাথে সালাম বিনিময় করে কিছুক্ষণ কথা বললাম। এখন রুমে কি ভাবে যাব বুঝতেছি না। রিতু কে কি বলব। আম্মু জোড় করে রুমে দিয়ে আসল, সব কিছুই আগের মতো আছে শুধু রিতু ছাড়া। মুখ টা কি রকম শুকিয়ে গেছে। ও জানে না আমি আসছি। অসুস্থ থাকার কারণে ঘুমিয়ে আছে। আমি ওর পাশে যেয়ে বসে ওর মাথায় হাত বুলায় দিচ্ছি। কিছুক্ষণ পর জেগে উঠলো রিতু। হয়তো এমন টা আশা করে নি। আমাকে দেখে একটু ভয় পেল মনে হয়। রিতু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে পানি দেখতে পাচ্ছি আমি।
আমি: রিতু কেমন আছো।
রিতু:…. [চুপ করে আছে]….
আমি: রিতু আমি মাফ পাওয়ার যোগ্য না, তা আমি জানি।
রিতু: কেন আসছ এখানে, আমার জন্য নাকি বাবুর জন্য। কতটা কষ্ট পাইছি আমি যখন কথা না বলেই চলে গেলা বাসা থেকে। এই আট মাস ঠিক মতো একটু কথাও বল নি। মা যখন কথা বলত তখন তোমার গলার আওয়াজ টা শুনতাম তাতেই ভালো লাগত আমার।
আমি চুপ করে আছি। চোখ দুটো ভিজে গেছে, চোখের পানি যেন বাধা মানছেই না।
আমি: রিতু বাচার অধিকার ও আমার নাই। তুমি মাফ করে দিও আমাকে। না হলে, মরেও শান্তি পাব না।
রিতু আমার মুখ চাপ দিয়ে ধরল।
রিতু: আমি তো অনেক আগেই মাফ করে দিছি তোমাকে। তুমি চলে গেলে বাবু টাকে কে দেখবে। তারপর বুকে জড়িয়ে নিলাম রিতু কে।

দিন গুলো খুব তাড়াতাড়ি চলে গেল। আজকে রিতুর ডেলিভারির দিন। এই কয়দিন রিতু কে খাওয়ানো থেকে শুরু করে সব করছি। তবুও স্বামী হিসেবে কত টুকু করতে পারছি যানি না। রিতু কে হসপিটাল নিয়ে আসছি। কিছুক্ষণ পরেই ডাক্তার নিয়ে যাবে। পাগলি টা আমার হাত ধরেই আছে তখন থেকে।
আমি: রিতু কেমন লাগতিছে এখন। কষ্ট হচ্ছে না তো। [আস্তে আস্তে বল্লাম]
রিতু: আমার বেবি টাকে খুব আদর করবা ঠিক আছে।
আমি: এরকম করে কেন বলতিছ।
রিতু: আমার খুব কষ্ট হচ্ছে যানো।
আমি: কিচ্ছু হবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
এর কিছুক্ষণ পরেই রিতু কে ডাক্তার রা ভিতরে নিয়ে গেল। রিতু আমার হাত ছাড়তেই চাচ্ছিল না।
যানি না ভিতরে কি হচ্ছে। পাগলিটার না যানি কত কষ্ট হচ্ছে।
অনেক্ষণ অপেক্ষার পর ডাক্তার বের হলো হাতে একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে কিন্তু ডাক্তার এর মুখে হাসি দেখতে পাচ্ছি না,
আমি: ডাক্তার রিতু কেমন আছে।
ডাক্তার কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর,
ডাক্তার: সরি, বাবুর মাকে বাচাতে পারলাম না। শরীর খুব দুর্বল ছিল ওনার। একটু হলে দুইজন ই…….
এ টুকুই শুনছি শুধু ডাক্তার এর মুখে। তারপর কি হইছে তা আর মনে নাই।

[তিন দিন পর]
তিন দিন পর জ্ঞান ফেরে আমার। রিতুর কথা খুব মনে পড়তেছে। কাদাঁর শক্তি টুকুও নেই আমার। আম্মু এসে বাবু টা কে কোলে দিয়ে গেল। আমার একটা মেয়ে হইছে, দেখতে একেবারে রিতুর মতো। মনে মনে নিয়ত করলাম মেয়ে টাকে কখনো ওর মা নাই এটা বুঝতে দিব না। আমি ভেঙ্গে পড়লে আমার মেয়ে টাকে কে দেখবে এই বলে, নিজেকে শান্ত না দিচ্ছিলাম।

☆[তিন বছর পর]☆
আমার মেয়ে টা অনেক বড় হয়ে গেছে। ওর নাম রাখছি নিতু। আজকে ওকে নিয়ে ওর আম্মুর কবর এর কাছে আসছি। আজকের দিন টাও অন্য রকম।
আমি দাঁড়িয়ে আছি। যানি না কেন যেন এখনো এখানে আসলেই চোখ দুটো ভিজে যায়।
আমি: রিতু দেখ কে আসছে, তোমার মেয়ে কত বড় হইছে। তুমি কত নিষ্ঠুর মেয়ে টাকে একবার ডাকও না।
নিতু: বাবাই তুমি কার সাথে কথা বল।
আমি: এখানে তোমার আম্মু ঘুমায় আছে মা। এটা বলেই বুকে জড়িয়ে নিলাম মেয়ে কে।
হঠাৎ মনে হলো কেও বলতেছে,
এই অন্তর কাদঁতিছ কেন হুম। একদম কাদঁবা না। আমি সবসময় তোমার সাথে আছি। আর আমার মেয়ে টা কে কিন্তু কখনো কষ্ট দিও না। তাহলে কিন্তু আমিও কষ্ট পাব।
#সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here