অতিথি
পর্ব:১৬
লেখা: মিশু মনি
.
মর্ম ও মিশু পাশাপাশি হাটছে।
মর্ম জিজ্ঞেস করলো, হুমায়ুন আহমেদ তোমার প্রিয় তাই না?
– হ্যা।
– কতগুলা লেখা পড়ছ ওনার?
– শতাধিক তো হবেই।
– শতাধিক!
– হুম।হুমায়ুনের সৃস্ট চরিত্র গুলো আমার মাঝে অনেক প্রভাব ফেলে।
– যেমন?
– হিমু,মিসির আলী, শুভ্র,ফিহা..
– মিশু,তুমি তো এমনিতেই পাগলী। এগুলা পড়ে আরও পাগলী হয়ে যাও তাই না?
– কি জানি,হয়ত বা হই।
– আচ্ছা মিশু,এখন যদি আমি তোমাকে এখানে রেখে চলে যাই,তাহলে বাসায় ফিরতে পারবা?
– পারবো কিন্তু ফিরবো না।
– কেন কেন?
– বাসায় ফিরবো না।লুকিয়ে থাকবো, তুমি বুঝবা মজা।
– ওরে বাবাহ! তাই নাকি?
– হ্যা।
মিশু মনে মনে ভাবল, আমাকে রেখে বাসায় যাবা তাই না? দাড়াও,মজা দেখাচ্ছি।
কিছুদূর এসেই মিশু মর্মকে রেখে সরে পড়ল। কিছুক্ষণ লুকিয়ে থেকে একা একা হাটতে হাটতে অন্যদিকে চলে গেলো।
মর্ম মিশুকে আশেপাশে দেখতে না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠল। কোথায় গেলো মেয়েটা? ওকে হারিয়ে ফেললে তো বাসায় ফিরতেই পারবো না।আর মিশু যদি বাসায় ফিরতে না পারে!
পরিণতি ভেবে মর্ম’র টেনশন হতে লাগলো। মিশুকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এত বিশাল এরিয়ায় কোথায় খুঁজে পাবে মিশুকে? আর সে যদি নিজে থেকে লুকিয়ে থাকে,তাহলে তো কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
ভাবতে ভাবতে মর্ম বেঞ্চের উপরে বসে পড়ল। মিশু টা একদম ছেলেমানুষ!
মিশুর নতুন মোবাইল টায় সিম ও নেই।এই অবস্থায় মর্ম কি করবে বুঝতে না পেরে ঠায় বসে রইলো।
.
মিশু একা একা হাটছে আর ঘুরে ঘুরে দেখছে।একা ঘুরতেই বেশি ভালো লাগছে মিশুর।
হঠাত এক টা গান ভেসে আসলো ,
তুমি চাইলে বৃস্টি,মেঘ ও ছিল রাজি…
অপেক্ষা শুধু বর্ষণের…
গানের লাইন দুটো শুনে চমকে উঠল মিশু।অনেক সুন্দর কণ্ঠ! এত সুন্দর করে কে গান গাইছে!
আশেপাশে তাকিয়ে দেখল,ঘাসের উপর শুয়ে একটা ছেলে গান গাইছে।
মিশু ছেলেটার কাছে এসে দাড়ালো।সে চোখ বন্ধ করে গান চাইছে।
গান শেষ করে চোখ খুলতেই ছেলেটি অবাক হয়ে গেল! এটা কি স্বপ্ন! এই মেয়েটা কে,কোমরে দুই হাত দিয়ে দারিয়ে আছে! সাদা জামায় মেয়েটাকে একদম পরির মত লাগছে!
ছেলেটি ঘাসের উপর বসে পড়ল। মিশু বলল,বাহ! খুব সুন্দর গাইতে পারেন তো!
বলেই মিশু ও ঘাসের উপর বসে পড়ল ।
ছেলেটি বলল,আরে কি করছ? সাদা জামায় ময়লা লেগে যাবে তো।
– যাক।বাসায় সার্ফ এক্সেল আছে।দাগ থেকে যদি নতুন কিছু হয় তাহলে তো দাগ ই ভালো।
– হা হা হা।খুব মজার কথা বললা তো!
– হ্যা।আমিতো জোকার,আমার কাজই হচ্ছে মানুষ কে মজা দেওয়া।
– তাই নাকি! কিন্তু তোমাকে দেখতে তো একদম পরির মত লাগছে।
– জ্বি।আমি জোকার পরি।
– হা হা।জোকার পরি আবার কি?
– যেসব পরিরা জোকারি করে তাদের কে জোকার পরি বলে।
– ওহ আচ্ছা।জোকার পরির নাম কি গো?
– সিরিয়াস কাঞ্চন,
– হা হা হা।খুব মজার মানুষ তো তুমি!
মিশু হেসে বলল,মজা লাগছে? তাহলে আরেক টা গান শুনান।আপনার গান শুনে আমি মুগ্ধ!
– আমি তো জানতাম না যে,আমি এত ভালো গাই।
– আপনি তো গাই নন,আপনি বলদ।
– হা হা হা।খুব ইন্টারেস্টিং!
মিশু বলল,গান শুনাবেন না?
– হ্যা।তোমার মাঝে আমি আমার প্রভুকে দেখতে পাচ্ছি।জানিনা এখন আমার কি করা উচিৎ?
মিশু অবাক হয়ে বলল,মানে!
ছেলেটি সুরে সুরে গেয়ে উঠল,
Tujh mein Raab dikhta hay..
yaara mein keya kaaruu….
.
মিশু মুগ্ধ হয়ে গান শুনছে! সত্যিই খুব সুন্দর কণ্ঠ!
গান শেষ হতেই মিশু হাত তালি দিয়ে বলল,আপনি অসাধারণ গাই!
– না,আমি অসাধারণ বলদ!
দুজনেই হেসে উঠল।
.
মিশু জিজ্ঞেস করলো, আপনার নাম কি?
– তীব্র,
– আহা! আপনার নাম শুনে আমার তীব্র জ্বর এসে যাচ্ছে তো!
তীব্র হেসে বলল,তোমার নাম কি?
– বলেছি তো জোকার পরি।
– তোমার নাম কি জোকার পরি?
– আমার নাম মিশু,মিশু এখনো শিশু,, ইউ লাইক দিছু?
তীব্র হেসে বলল,আই লাইক দিছু।তুমি খুব অদ্ভুত এক টা মেয়ে মিশু!
-আমি জানি।মিশুর মত আর একটাও খুঁজে পাবেন না।
– হুম।সেটা আমিও ভাবছি।এই দীর্ঘ জীবনে তোমার মত মেয়ে একটাও দেখিনি।
মিশু চুপ করে আছে।তীব্র জিজ্ঞেস করল,তুমি এই নির্জন এলাকায় কি করছিলে?
– আপনি এই নির্জন এলাকায় কি করছিলেন?
– আমিতো গান গাইছিলাম।
– আমিতো গান শুনছিলাম।
– আমার কথা রিপিট করছ কেন মিশু?
– কথা যদি একই হয় তাহলে তো রিপিট করতেই হবে।
– ওহ আচ্ছা।তুমি বেশ রিপিট করতে পারো তাই না?
– হুম।কেউ আমার সাথে পারেনা।
– তাই বুঝি? তাহলে তো চেষ্টা করে দেখতে হয়।
মিশু হেসে বলল,শুরু করে দেখুন। আমি যা যা বলবো, আপ্নিও তাই তাই বলবেন। আই থিংক আপনি হেরে যাবেন। দুই মিনিটের বেশি খেলতেই পারবেন না।
তীব্র অবাক হয়ে ভাবছে,স্বর্গ থেকে নেমে আসা পরি নয়ত! অচেনা কারও সাথে এভাবে কথা বলতে পারবে এমন মেয়ে খুব কম ই আছে! মেয়েটা অদ্ভুত!
মিশু বলল,খেলবেন?
– হ্যা।শুরু করো,
– আমার নাম জোকার পরি।
তীব্র বলল,আমার নাম জোকার পরি।
– আমি কুতকুত খেলতে পছন্দ করি,
– আমি কুতকুত খেলতে পছন্দ করি,
– আমি মিস্টার তীব্র ভয়ংকরী,
তীব্র হেসে বলল,আমি মিস্টার তীব্র ভয়ংকরী,
– আমার একমাত্র কাজ হচ্ছে চুরি,
– আমার একমাত্র কাজ হচ্ছে চুরি,
– আমি এখনো বিছানায় হিসু করি,
তীব্র হো হো করে হেসে বলল,আমি এখনো বিছানায় হিসু করি।
মিশু বলল,আমার নাম তীব্র হলে কি হবে? আমি এক টা বলদ।
তীব্র ও সাথে সাথে বলল, আমার নাম তীব্র হলে কি হবে? আমি একটা বলদ।
মিশুর হাসি আর দেখে কে!
ও হাসতে হাসতে বলল,আপনি বলদ?
– আপনি বলদ?
– ভালো ই তো রিপিট করতে পারেন।
তীব্র ও বলল,ভালো ই তো রিপিট করতে পারেন।
মিশু মনে মনে ভাবল,তীব্রকে কিছুতেই হারানো যাচ্ছে না।কিন্তু দুই মিনিট তো হতে চলল।ভাবামাত্রই মিশু বলল, I love you Mishu.
তীব্র চমকে উঠল। এই জীবনে সে কখনো কাউকে এই কথা টি বলেনি।বরং অনেক মেয়েই তাকে প্রপোজ করেছিল।সে কখনো উচ্চারণ করেনি।এই পরি টাকে কিভাবে বলবে! তাছাড়া এটা কিছুতেই গলা দিয়ে আসবে না।আর অনায়াসে ভালবাসার কথা বলাও যায় না।কেমন যেন অনুভুতি হচ্ছে তীব্র’র।
তীব্র চুপ করে আছে।মিশু হেসে উঠল, কি মজা কি মজা! তীব্র হেরে গেছে! মিশু জিতে গেছে! বলেছিলাম না,আমার সাথে খেলায় জিততে পারবেন না।
তীব্র মুচকি হেসে বলল,আমি হেরে গেছি। মানতেই হলো।
– হা হা হা।
– আচ্ছা মিশু,তোমার পরিচয় কি?বাসা কোথায়?
– রংপুর, আমি ইন্টারে পড়ছি।
– এখানে একা একা ঘুরছ কেন?
মিশুর হঠাত মনে পড়ে গেল মর্ম’র কথা।মিশু হাসল।
তীব্র বলল,হাসছ কেন?
– আমি এখানে মর্ম’র সাথে এসেছি।ওকে ফাকি দিয়ে এখানে এসে গল্প করছি।মর্ম নিশ্চয় ই খুব চিন্তা করছে,সেটা ভেবেই হাসি পাচ্ছে।
– মর্ম কে?
– আমার অতিথি, আবার আমি তার অতিথি।
– ওহ,কিন্তু কাউকে চিন্তায় ফেলে দেয়া তো ঠিক নয় মিশু। তুমি তার কাছে যাও।
– উহু।কাল ও আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে।সারারাত আমার খুব কষ্ট হয়েছে।এখন মজা বুঝুক।
– তোমার মত পরিকে কেউ কষ্ট দিতে পারে?
– মর্ম পারে।মর্ম কোনো কিছুর ই মর্ম বুঝেনা।
– তাই বুঝি? এবার তার কাছে যাও।সে দুশ্চিন্তা করছে।
– আমার আপনার সাথে গল্প করতেই ভালো লাগছে।আপনি এখানে একা কেন?
– ফ্রেন্ড ও সাথে এসেছিল।ও তার জিএফ এর সাথে ঘুরছে।তাই একা শুয়ে আছি।
– আপনার ফ্রেন্ড টা তো স্বার্থপর।আপনি ও জিএফ নিয়ে আসতেন।
– আমার জিএফ নেই।
– আহারে! কি অসহায়!
– হা হা হা।জিএফ থাকলেই মানুষ অসহায় হয় বুঝলা?
– আমার কাছে Gf মানে Garden flower.
তীব্র হেসে বলল,তাই নাকি? আর Bf মানে?
– Blue film.
তীব্র হেসে গড়াগড়ি দিতে লাগল।বিএফ আর জিএফ এর নতুন সংজ্ঞা।
মিশু বলল,আপনি কি করেন?
– ঢাকা মেডিকেলে পড়ছি।
মিশু অবাক হয়ে বলল,ওমা! আপনি ডাক্তার! আর আমি কি সব আজেবাজে কথা বলে ফেলেছি!
– আমার ভালো ই লেগেছে।জীবনে প্রথম এমন একজন মেয়ে দেখলাম। ভারি অদ্ভুত!
মিশু হেসে বলল,আপনি ও খুব ভালো। আমিও বড় হয়ে ঢাকা মেডিকেলে পড়ব। তখন আপনার সাথে দেখা হবে।
– হুম।অপেক্ষায় থাকবো অদ্ভুত মানবীর জন্য।
– দুয়া করবেন যেন মেডিকেলে পড়তে পারি।
– অবশ্যই।
– আমি এবার যাই।মর্ম বোধহয় মনে মনে গালি দিচ্ছে।আমার মোবাইল এ সিম নেই।আপনার মোবাইল থেকে একটা কল দেয়া যাবে?
তীব্র তার ফোনটা এগিয়ে দিলো। মর্ম’র নাম্বার মিশুর মুখস্থ ছিল।ও মর্মকে কল দিয়ে বলল,কোথায় তুমি?
– গাড়ি তে বসে আছি।
– আচ্ছা থাকো আমি আসছি।
বলেই কল কেটে দিলো।
তীব্র বলল,জোকার পরি চলে যাচ্ছ?
– হ্যা,বলদ ডাক্তার।চলে যাচ্ছি।
– আমি বলদ ডাক্তার? হা হা হা।
মিশু উঠে দারিয়ে বলল,আসছি।টা টা….
মিশু হেটে চলে যাচ্ছে।তীব্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আকাশ থেকে নেমে এসেছিল এই পরি টা! হৃদয়ে আলোড়ন তুলে দিয়ে চলে গেল!
.
মর্মকে দেখেই মিশুর ভয় লাগল।মর্ম ভয়ানক রেগে আছে।চোখ গুলো লাল!
মর্ম চেঁচিয়ে বলল,আবার তোমাকে গালি দিতে ইচ্ছে করছে।
– দাও।তাহলে গাড়ি থেকে নেমে তীব্র’র কাছে চলে যাবো। ওর সাথে খুব গল্প জমে গিয়েছিল।
– তীব্র কে?
– বলদ ডাক্তার।
– বলদ ডাক্তার মানে!
– শিল্পী। দারুণ গান গাইতে পারে।
– তার সাথে এতক্ষণ আডডা মারছিলা?
– হ্যা।দারুন একটা ছেলে।
– ক্রাশ খাইছ নাকি?
– মিশু কারও উপ্রে ক্রাশ খায়না।
– আমার উপরেও না?
– না।মিশুর ক্রাশ হতে চাইলে তোমাকে চৌদ্দ বার জন্ম নিতে হবে।
– হুহ।তাই নাকি?
– হ্যা।চেষ্টা করতে দেখতে পারো। মিশু সবার বন্ধু,কারও জন্য স্পেশাল মমতা আমার নাই।
মর্ম গাড়ি ছেরে দিলো। মিশু কে বুঝা বড় দায়!
– আচ্ছা মিশু,তুমি কখনো কারো প্রেমে পরবা না?
– প্রেমে পড়ার জন্য মন লাগে।আমি ছোট মানুষ, পিচ্চি একটা মন আমার।পিচ্চি মনে অত বড় জিনিসের জায়গা হবে না।
– সত্যিই হবে না? আমি আরও ভাবলাম তোমাকে পার্ট টাইম গার্ল ফ্রেন্ড বানাবো।
মিশু হেসে বলল,আমার সাথে কথা বলো, বন্ধুত্ব করো,আপত্তি নেই।কিন্তু অন্যকিছুতে জড়াতে চাইলে মিশুকে আর খুঁজে পাবা না।হারিয়ে যাবো,
মর্ম অবাক হয়ে বলল,তুমি বড় রহস্যময়ী মিশু!
( চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here