“#অদ্ভুত__মুগ্ধতা ”
পর্ব ১৩
মিশু মনি
.

পরপর তিন দিন কেটে গেছে।

বাড়িটাকে এখন বিয়ে বাড়ি বলে মনে হচ্ছে।এই কয়েক টা দিন মিশু খুব মনোযোগ দিয়ে বিয়েবাড়ি সাজানোর কাজ করেছে।পুরো বাড়িটাকেই হলুদ গাদা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।আরো বিভিন্ন রঙিন কাপড়, আলপনা, লাইট সবকিছু মিলিয়ে অনেক সুন্দর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

এই তিন দিন মৈত্রীর সাথে তেমন একটা কথা হয়নি মিশুর।মৈত্রী কেমন যেন দূরে দূরে থাকছে মিশুর কাছ থেকে।সেদিন গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার পর অনেক রাতে ফিরেছে।তারপর থেকেই মিশুর সাথে তেমন কথা বলেনি।মিশু নিজে কথা বলতে গেলেও শুধু মিশুর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।নিজে থেকে মিশুকে কোনো কথা বলেনি।মিশু বুঝতে পারছে না মৈত্রী কেন এমন করছে ওর সাথে! সেদিন ফোন রিসিভ না করাতেই কি ওর এত অভিমান? কিন্তু মৈত্রী তো অভিমান করার মত মানুষ নয়।তাহলে কেন এভাবে দূরে দূরে থাকছে?

একমনে কথাগুলো ভাবছে আর একটা ডিজাইন বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছে মিশু।এমন সময় মর্ম এসে বলল,মিশু কি ভাবছ?
– কিছুনা।আপনাকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছে
– দেখাবে না? মাত্র চারদিন হল শর্টফিল্মটা রিলিজ পেয়েছে।এর মধ্যেই 2k লাইক। উফফ ভাবতেই পারিনি ফিল্মটা এত জনপ্রিয় হবে।তানিনের অভিনয়ের গুণেই হয়ত এটা সম্ভব হয়েছে।
– হুম।আপু খুব ভালো অভিনয় করেছে।
– চলো এই খুশিতে আজ আমরা ঘুরতে যাই? গত তিন দিনে তো যাওয়া হয়নি।আজ ওই ক্যাফে থেকে ঘুরে আসি?
ওই জায়গাটা মিশুর খুব ভালো লেগেছে।তাই না করতে পারলো না।কিন্তু এখন যে অনেক রাত হয়ে গেছে।রাত এগারো টা।এত রাতে কি ঘুরতে যাওয়া ঠিক হবে?
– কি ভাবছ মিশু? যাবা না?
মিশু বই বন্ধ করে রেখে বলল,চলুন যাওয়া যাক।

এরপর দুজনে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।রাত এগারো টা ঢাকা শহরে খুব বেশি রাত নয়।তবুও মিশুর মনে হচ্ছিল অনেক রাত হয়ে গেছে।ও অনেক্ষণ থেকেই চুপচাপ। মর্ম কারণ জানতে চাইলে ও বলল,আমার কিছু হয়নি।
– তাহলে এমন আপসেট দেখাচ্ছে কেন?
– কই না তো।
মর্ম একটা বাজারের সামনে এসে বাইক ব্রেক কষল।মিশু বলল,এখানে আবার কি?
– আসো,তোমাকে চুড়ি কিনে দিবো।
চুড়ির কথা শুনে মিশুর মনটা নেচে উঠল।বিভিন্ন রঙ বেরঙের চুড়ি দেখে ওর মন খারাপ ভাবটা একদম ই চলে গেলো।দুহাত ভরে চুড়ি কিনে নিলো ও।একজোড়া কানের দুল ও নিলো।মর্ম হঠাৎ একটা ব্রেসলেট এনে ওর হাতে পড়িয়ে দিয়ে বলল,বাহ! দারুণ মানিয়েছে।মিশুও ব্রেসলেট দেখে খুশি হয়ে উঠল।এরপর একটা পায়েল নিয়ে পকেটে রাখলো মর্ম।এই সুযোগে মিশু একটা ব্রেসলেট নিলো মৈত্রির রাগ ভাঙানোর জন্য।আরেক টা ব্রেসলেট নিয়ে মর্ম’র হাতে পড়িয়ে দিলো।
মর্ম মিশুকে একটা টাকাও বের করতে দিলোনা।নিজেই সব শোধ করে দিয়ে আবার বাইক স্টার্ট দিলো।এগুলো সব মিশুর প্রিয় জিনিস।সব প্রিয় জিনিস একসাথে পেয়ে মিশুর মনটা খুব উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে। ও অনবরত বকবক করেই চলেছে আর মর্ম মন দিয়ে শুনছে ওর কথা।মর্ম’র বেশ আনন্দ হচ্ছে মিশুর আনন্দ দেখে।এই কদিনে মর্ম’র সাথে বেশ ভাব হয়েছে মিশুর।নিজের ক্যারিয়ারের জন্য মর্মকে কত কষ্ট করতে হয়,একটা ফিল্ম বানানোতে কত পরিশ্রম,একটা নাটকের জন্য কি কি লাগে সবকিছুই মিশু জানে এখন।তাই মর্ম’র প্রতি মিশুর শ্রদ্ধা আরেকটু বেড়ে গেছে।মর্মকে এখন খুবই ভালো লাগে ওর!

ক্যাফেটেরিয়ায় পৌছে মিশু খুশি হয়ে ভিতরে চলে গেলো।দুই মগ কফি নিয়ে এসে সেদিনের ওই টেবিল টাতে বসে পড়লো।তারপর কফিতে চুমুক দিতে দিতে মর্ম’র সাথে গল্প করতে লাগলো।মর্ম ওকে একটা নাটকের শুটিং এর গল্প শুনাচ্ছে।মিশু কফি খাচ্ছে আর অবাক হয়ে শুনছে মর্ম’র কথা।এসব শুনতে ওর বেশ ভালই লাগে।অর্ধেক মগ কফি খেয়ে নিজের মগটা মর্ম’র দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,এটা তুমি খাও।তারপর মর্ম’র অর্ধেক খাওয়া কফির মগ টা মর্ম’র হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে সেটায় চুমুক দিতে লাগলো। মর্ম প্রথমে বেশ অবাক হলেও পরে হাসল।মিশুর অর্ধেক খাওয়া কফির মগটা শেষ করতে ওর ভালোই লাগবে।

দুজনে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো।এই দোকান টা সারারাত খোলা থাকে।যারা নিস্তব্ধতা প্রিয় ব্যক্তি,তারা রাত্রিবেলা এখানে ঘুরতে আসেন।জায়গা টা অনেকেরই প্রিয় সেটা বোঝা গেলো।পাশের টেবিলে বসে একটা ছেলে গিটারে সুর তোলার চেষ্টা করছে।মিশু একবার সেদিকে তাকিয়ে আবারো মর্ম’র সাথে গল্প করতে লাগলো। এভাবে অনেক রাত হয়ে গেলো।মর্ম আর দেড়ি না করে চলে আসার জন্য প্রস্তুত হলো।


পরদিন সকালবেলা নাস্তা খাওয়া শেষ করে মিশু নিজের কাজে মন দিলো।এখনো কয়েক টা আলপনা আকা বাকি আছে,কিছু হাড়িতে নকশা করতে হবে,দু এক জায়গায় লাইট বসানো হয়নি।এছাড়াও আরো অনেক কাজ বাকি আছে।মিশু মনোযোগ দিয়ে সব কাজ করতে লাগলো।আজকে তানিন বাসাতেই আছে।ও মিশুর কাজে সাহায্য করতে লাগলো।খুজিন্তাও যোগ দিয়েছে ওদের সাথে।যদিও মিশু বারবার বলছে নতুন বউকে কাজ করতে হবেনা,তবুও ও শুনলো না।মিশুর কাজে সাহায্য করতে আর ওর সাথে গল্প করতে ভীষণ ভালো লাগে।খুজিন্তা মাঝেমাঝে ভাবে,আমার একজন ভাসুরের সাথে মিশুর বিয়ে হলে খুব মজা হবে।তাহলে সারাজীবন দুজনে একসাথে থাকতে পারবো।

তানিন খুব ভালো নকশা আঁকতে পারে।ও প্রায় সব গুলো হাড়িতেই রঙ দিয়ে সুন্দর করে নকশা করে ফেললো।এখন হাড়িগুলোকে শখের হাড়ি মনে হচ্ছে।এগুলো নাকি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হবে,শিকে বানিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হবে! খুজিন্তা কখনোই শোনেনি বিয়ে বাড়িতে হাড়ি দিয়ে সাজানো হয়।ও খুব অবাক হয়েছিল।কিন্তু হাড়িগুলো শখের হাড়ির মত নান্দনিক ডিজাইন করার পর খুজিন্তা নিজেই দুটো হাড়ি নিয়ে গিয়ে নিজের শোবার ঘরে ঝুলিয়ে রাখলো!

মৈত্রী বাইরে যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল।হিমু এসে তানিনকে বলল,আপা মৈত্রী ভাইয়ায় ডাকে।একটা কাগজ নাকি রাখতে দিছিলো সেইটা চাইতেছে।
তানিনের হাতে হাড়ি আর রঙ।ও খুজিন্তার দিকে তাকিয়ে দেখে খুজিন্তাও হাতে রঙ লাগিয়ে আলপনা আঁকতে যাচ্ছে।কাজ শুরু করার আগেই হাতে একগাদা রঙ লাগিয়ে ফেলেছে।মিশু কি যেন একটা লিস্ট দেখছিলো।তানিন বলল,মিশু একটা কাজ করতে পারবে?
– হ্যা আপু, বলো।
– আমার ঘরে নীল ড্রয়ারে একটা ফাইল আছে।উপরে লেখা আছে DSM-5.ওই ফাইল টা বড় ভাইয়াকে দিয়ে আসতে পারবে?

মিশু তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়াল। এই সুযোগ মৈত্রীর সাথে কথা বলা যাবে।ও দ্রুত তানিনের ঘরে গিয়ে ফাইলটা নিয়ে মৈত্রীর রুমে আসলো।
মৈত্রী মিশুকে দেখে কিছু বললো না।মিশু ফাইলটা রেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। মৈত্রী জিজ্ঞেস করলো, কিছু বলবে?

মিশু মাথা ঝাঁকিয়ে না বললো।মৈত্রী আয়নায় তাকিয়ে টাই বাধতে বাধতে বলল,তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

প্রশ্নটা শুনে মিশুর কান্না পেয়ে গেলো।মৈত্রী এরকম একটা প্রশ্ন ওকে করতে পারলো? ও কি জানেনা মিশু ওকে কতটা পছন্দ করে? ওর সাথে গল্প করতে খুবই ভালো লাগে মিশুর।আগে কত গল্প, ঝগড়া,যুক্তি তর্ক কতকিছুই হতো! মৈত্রী অনেক যত্ন নিতো মিশুর।সেদিন রাতেও তো রাত জেগে শিয়রে বসে থেকে মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে।তাহলে আজ এরকম ব্যবহার কেন করছে? কেউ নিষ্ঠুর আচরণ করলে মিশুর কান্না পায় সেটা কি ও বোঝেনা?

মিশুর চোখ ভিজে উঠছে।অন্য দিন হলে কতবার মিশুর দিকে তাকাতো।আজ একবার তাকাচ্ছে ও না।দিব্যি আয়নার দিকে তাকিয়ে টাই বাধতে লাগলো।মিশু অনেক কষ্টে চোখের জল আটকে বললো,একটা থ্যাঙ্ক ইউ আশা করেছিলাম।
একথা শুনে মৈত্রী অবজ্ঞার সুরে হেসে বললো,থ্যাঙ্ক ইউ শোনার মত কি করলে?
– কিছু করিনি? ফাইল টা এনে দিলাম বলে অন্তত একবার থ্যাংকস বলা যেতো?
– এটা তো হিমুকে বললেই এনে দিতো। হিমুকে কখনো তো থ্যাংকস বলিনি।

কথাটা শুনে মিশুর চোখ দিয়ে টপ করে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।এভাবে বলতে পারলো মৈত্রী? এত সুন্দর আচরণ যে মানুষ টা করতে পারে,যার চিকিৎসায় কত ডিসঅর্ডারের রোগী সুস্থ হয়ে গেছে।সেই মানুষ টা মিশুর সাথে এরকম নিষ্ঠুর ভাবে কথা বলতে পারলো? মিশু যথাসম্ভব স্বাভাবিক গলায় বলার চেষ্টা করলো,আমাকে আর হিমুকে এক ভাবছেন? হিমুর মাথায় কখনো হাত বুলিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলেন?
– ও আমার পেশেন্ট হলে ওকে ও দিতাম।

এ কথা শুনে মিশু আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।মৈত্রী একবার ওর দিকে তাকায় ও নি।আয়নার দিকেই তাকিয়ে টাই বাধছে।মিশু আয়নার কাছে এসে হাত মুঠো করে হাতের পিঠ দিয়ে খুব জোরে আয়নায় কষে আঘাত করলো।বেশ জোরেই মেরেছিলো ঘুষিটা।আয়নার মাঝখান থেকে শব্দ করে টুকরো টুকরো হয়ে কিছু কাচ ভেঙে পড়লো।কিন্তু মিশু কোনো সাড়াশব্দও করলো না।

ঘটনার আকস্মিকতায় একদম অবাক হয়ে গেছে মৈত্রী! মৈত্রী সাধারণত সহজে অবাক হয়না।কিন্তু এই কাজটা সত্যিই অবাক করার মতই ছিল! এমন শক্ত কাচ এক ঘুষিতেই ভেঙে ফেললো! ও চমকে মিশুর দিকে তাকালো।মিশুর চোখে পানি,রাগত চেহারা।রাগে,ক্ষোভে একেবারে ভয়ংকর মূর্তি ধারণ করেছে মেয়েটা! মৈত্রি তাকানো মাত্রই মিশু ছুটে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।মৈত্রী অবাক চোখে দেখল মেঝেতে কয়েক ফোটা রক্ত! তারমানে ওর হাত কেটেছে! যত জোরে আয়নায় ঘুষি মেরেছে,কেটে যাওয়াটাই স্বাভাবিক! দারুণ সাহস আছে মেয়েটার!

মিশুর ইচ্ছে করছিল এক ছুটে বাড়ি ফিরে যেতে।কিন্তু কাজের দায়িত্ব ফেলে কোথাও যাওয়া যায়না।তাই নিজেকে সামলে নিয়ে রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগলো।হাত কেটে গিয়ে জ্বালা করছে,অনেক রক্ত ঝরছে সেদিকে ওর কোনো খেয়ালই নেই।ও কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ফেলছে।কেন কাঁদছে নিজেও জানেনা! কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললো মিশু!

মৈত্রী ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে দ্রুত মিশুর রুমে চলে আসলো। এসে মিশুকে কি বলবে বুঝতে না পেরে ওর বিছানার কাছে হাটুগেরে বসে মিশুর হাতটা ধরল।হাতের পিছনে অনেক খানি কেটে গেছে! মেঝে আর বিছানা যেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে।ছোট ছোট কয়েক টা কাচের টুকরো মিশুর হাতে ঢুকে গেছে।মৈত্রীর নিজের চোখেও পানি এসে গেলো।এমন পাগলী কেউ হয়! নিশ্চয় ই খুব জোরে আঘাত করেছিলো আয়নায়।নয়ত এভাবে কাচের টুকরো হাতে ঢুকে যেতো না।এত সুন্দর একটা হাতে কতগুলো ক্ষত চিহ্ন হয়ে গেলো! তাও আবার হাতের পিঠে! মিশুর কি একটুও কষ্ট হচ্ছেনা!

মৈত্রী স্যাভলন লাগিয়ে হাতটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করলো।তবুও মিশুর কোনো সাড়াশব্দই নেই।একটু ও নড়ছে ও না মেয়েটা।এবারে মিশুর মুখের দিকে তাকালো মৈত্রী।বুঝতে পারলো ও অজ্ঞান হয়ে গেছে।খুবই মায়াবী আর বিষন্ন দেখাচ্ছে মুখটা।ফুটফুটে একটা মেয়ে,হাতে কাচের টুকরো ঢুকে ভয়ংকর অবস্থা,রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে,অথচ মেয়েটার মুখে যন্ত্রণার কোনো চিহ্নই নেই।মনে হচ্ছে মৈত্রীর আচরণের কাছে এই যন্ত্রণা কিছুই না।মিশুর কান্নাভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে মৈত্রীর বুকটা চিনচিন করে উঠল।এই প্রথম কারো জন্য এই চিনচিন ব্যথা অনুভব করলো মৈত্রী!

তারপর দ্রুত মিশুর হাতটা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো।মৈত্রীর নিজের ও খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে ও বাইরে গিয়ে তানিন ও খুজিন্তাকে মিশুর রুমে যেতে বললো।তারপর একজন পরিচিত ডাক্তারকে কল দিয়ে বলল দ্রুত তাদের বাসায় চলে আসতে।

তানিন ও খুজিন্তা মিশুকে দেখে একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো।ওর হাত কতটা কেটেছে সেটা ওরা ভাবছে না,মেঝেতে পড়ে থাকা রক্তগুলো দেখেই বুকটা কেমন যেন ছ্যাত করে উঠল।আর মিশুর বিষন্ন মায়াবী মুখটা দেখে যে কোনো মানুষেরই মায়া লাগবে।খুজিন্তার চোখে পানি এসে গেলো।হিমু একেবারে ডুকরে কেঁদে উঠল।ওরা ভেবেছে মিশুর বোধহয় বড় কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে!


মিশু জ্ঞান ফিরতেই দেখল ওর মুখের সামনে মৈত্রি! মৈত্রীর মুখ দেখেই ওর মনটা আবারো খারাপ হয়ে গেলো।ও বুঝতে পারলো কারো কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে।মাথা তুলে দেখল তানিন! এত বড় একজন আর্টিস্ট ওর মাথাটা কোলে নিয়ে বসে আছে,এটা ভাবতেও ওর অবাক লাগছে! তানিন বলল,কেমন লাগছে এখন তোমার?
– আমি কি ঘুমাচ্ছিলাম?
– না,সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে।
– কেন?
তানিন মৈত্রীর দিকে তাকালো।একমাত্র মিশু আর মৈত্রীই বলতে পারবে ও কেন অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলো।
মৈত্রী কিছু বলতে যাবে এমন সময়ে ডাক্তার চলে আসলেন।

মিশুকে ভালোভাবে দেখে উনি মৈত্রীকে বললেন,অবস্থা খুবই খারাপ।শরীরে জ্বর আছে।মনে হচ্ছে অনেক দিন ধরেই ভিতরে জ্বর বয়ে বেড়াচ্ছে।আর ভীষণ দূর্বল শরীর। মেয়েটা বোধহয় খাওয়াদাওয়া ও ঠিকমত করেনা তাইনা?
মৈত্রী মাথা নেড়ে বলল,হ্যা।
– কে ও?
মৈত্রী একবার মিশুর দিকে তাকালো,তারপর তানিনের দিকে।শান্ত গলায় বললো,আমাদের অনেক কাছের আত্মীয়।
ডাক্তার বললেন, ও আচ্ছা।ওর দিকে একটু খেয়াল রাখবে।শরীরে পানিশূন্যতাও আছে।কিছু মেডিসিন সাজেস্ট করছি,সেগুলো তাড়াতাড়ি এনে ওকে খাওয়ানো শুরু করো।আর হাতের জন্য একটা পাউডার আর মলম লিখে দিবো। ওগুলো হাতে ব্যবহার করবে।ফ্রুটস আর পুষ্টিকর খাবার খেতে দিবে।আচ্ছা মৈত্রী,তোমার কি মনে হয়না ওর কোনো মেন্টাল স্ট্রেস যাচ্ছে?

মৈত্রীর মিশুর সাথে চোখাচোখি হলো।খুবই ঠাণ্ডা মিশুর সে দৃষ্টি।মৈত্রী জবাব দিলো,ও আমার পেশেন্ট।বেশ কিছুদিন যাবত ফোভিয়ায় ভুগছে।

একথা শুনে তানিন ও খুজিন্তা একদম অবাক হয়ে গেল।এই মেয়েটা মৈত্রীর পেশেন্ট! এটা ওরা কেউই জানতো না।ওরা জানে মিশু খুবই ভালো একটা মেয়ে।আর মাত্রার বিয়ের ওয়েডিং প্লানার!
ডাক্তার বললেন, হুম সেটাই ভাবছিলাম।আমার ও মনে হচ্ছিল কিছু একটা সমস্যা ওকে সবসময় তাড়া করে বেড়ায় আর ও বিষণ্ণতায় ভোগে।নিশ্চয়ই অনেক দিন থেকে খাওয়াদাওয়া ঠিকমত করেনা।একদম দূর্বল শরীর।এভাবে চললে তো কঠিন অসুখ করে বসবে।

তানিন ও খুজিন্তা অবাক হয়ে মিশুর দিকে চেয়ে আছে।এমন চঞ্চল ফুটফুটে একটা মেয়ের ভিতরে এত অসুখ এটা কল্পনা করাই শক্ত!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here