“#অদ্ভুত_মুগ্ধতা ”
পর্ব ১১
মিশু মনি
.
বাড়িটা কিভাবে সাজানো হবে তার সম্পূর্ণ ডিজাইন করে ফেললো মিশু।হিমু ছুটাছুটি করে মিশুর সাথে কাজ করছিল।হিমুর বেশ ভালো লাগে মিশুকে।দুজনে মিলে গেট,স্টেজ,লাইট সবকিছু কিভাবে সাজানো হবে তার একটা নকশা তৈরী করে ফেললো।
দুপুরবেলা মৈত্রী বাসায় ফিরলো।একসাথে দুপুরের খাবার খাওয়ার পর মিশুর সাথে গল্প করতে বসল।মিশুকে এখন একদম স্বাভাবিক লাগছে।সকালে ওভাবে কান্নাকাটি করেছিল মনেই হচ্ছেনা।
মৈত্রী বলল,মিশু আমি তোমাকে একটা কথা বলবো। যেটা বলবো সেটা শোনার জন্য তোমার মানসিক প্রস্তুতি দরকার।
– আমি সবসময় ই প্রস্তুত, আপনি বলুন।
– মাঝেমাঝে কিছু কঠিন কথা শুনতে আমাদের খারাপ লাগে।
মিশু মৈত্রীর চোখে চোখ রেখে বলল,সত্য যত কঠিন ই হোক তা আমার কাছে সবসময় ই সুন্দর।
কথাটা শুনে মৈত্রী ভ্রু কুচাকালো।বেশ খাটি একটা কথা বলেছে মিশু।সত্য যত কঠিন হোক,তা ওর কাছে সুন্দর! বাহ!
মিশু জিজ্ঞেস করলো, এভাবে তাকিয়ে আছেন যে!
– আমি ইমপ্রেসড।
– আপনি ইমপ্রেসড নন,আপনি মৈত্রী।এবার বলুন আপনার কঠিন সত্য।
মৈত্রী একটু থেমে বলল,মিশু তোমার ভাইয়া তোমার চিকিৎসার জন্য আমাকে ধরেছিল।মূলত তোমার ট্রিটমেন্ট করার জন্যই তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম।
– বেশ ভালো। তা আমার চিকিৎসা করছেন ভালোভাবে?
– এখনো অসুখ টাই নির্ণয় করতে পারলাম না।
– একটা অসুখ বুঝতে একজন ডাক্তারের এত সময় লাগে?
– হ্যা লাগে।সেজন্যই তোমাকে বললাম। তোমার ভাইয়া আমাকে অনুরোধ করেছিল যাতে তোমাকে এই কথাটা জানতে না দেয়া হয়।কিন্তু আমি মনে করি, তোমার সাথে সরাসরি এটা নিয়ে কথা বললে তুমি সহজভাবেই নেবে,আর আমাকে হেল্প ও করবে।আমার মনে হয় তুমি সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষ।
– ডাক্তারের যা মনে হয়,সেটাই তো ঠিক।আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন? পাগল কখনো বুঝতে পারেনা সে পাগল।কাজেই আমি পাগল হলেও তা বুঝার সাধ্য আমার নেই।
মৈত্রী মিশুর হাত ধরে বলল,প্লিজ মিশু রাগ কোরো না।আমি তোমাকে মোটেও পাগল ভাবছি না।আমি বিশ্বাস করি তুমি সুস্থ।আজ আমি তোমার ভাইয়ার কাছে গিয়েছিলাম। ওর কাছে সবকিছু শুনে এসেছি। তুমি তের বছর বয়সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলে।চিকিৎসা করানোর পর সুস্থ হয়ে গেছো।এখন এত বছর পর তারা তোমার মাঝে অস্বাভাবিক কিছু আবারো দেখেছেন এবং এ কারণেই তোমার পরিবার ভয় পাচ্ছে।কিন্তু আমি একটা ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছি।আশাকরি এটা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫%.
মিশু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মৈত্রীর দিকে।লোকটা এত সুন্দর করে কথা বলে যে,ইচ্ছে করে তাকিয়েই থাকি আর শুনি।কথা বন্ধ করলেই ইচ্ছে হয় রিমোটের বোতামে চেপে আবারো কথা চালু করে দিই।মিশুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মৈত্রী বলল,কি হলো?
মিশু লজ্জা পেয়ে মুখ টিপে হেসে বলল,আপনার ব্যাখ্যাটা বলুন শুনি।
মৈত্রী বলল,তুমি ওই তের বছর বয়সে কোনো কারণে আঘাত পেয়েছিলে।যেটা গ্রহণ করার জন্য তোমার মানসিক প্রস্তুতি ছিলনা।ফলে তুমি একটু ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলে।তারপর চিকিৎসা করানোর পর সুস্থ হয়ে গেছো।কিন্তু সম্প্রতি আবারো সেরকম কিছু তোমার সাথে ঘটেছে আর তাই তুমি একটু অস্বাভাবিক আচরণ করছো।তুমি একদম স্বাভাবিক একজন মানুষ, কিন্তু ওই জিনিস টা ভুলার জন্য সর্বদা চেষ্টা করো বলে নিজে সবসময় চঞ্চল হয়ে ঘুরে বেড়াও।তবুও মাঝেমাঝে সেটা তোমাকে যন্ত্রণা দেয় আর তুমি একটু আপসেট হয়ে পড়ো।ঠিক ধরতে পেরেছি?
মিশু এতক্ষণ মেঝের দিকে তাকিয়ে ছিলো।এবার মৈত্রীর চোখে চোখ রাখলো।এই মানুষ টা তার সমস্যাটা কিভাবে বুঝে ফেললো! একজন মানুষ আরেকজন মানুষের মনের অবস্থা কখনোই জানেনা,কিন্তু কিছুটা বুঝতে পারে।সেই কঠিন কাজটা ইনি করে ফেলেছেন।মিশু চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল,হ্যা ধরতে পেরেছেন।
মৈত্রী মিশুর হাত দুটো আরেকটু শক্ত করে ধরে বলল,থ্যাংকস মিশু।আমি জানি তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ।তুমি একটু চেষ্টা করলেই এই সামান্য মানসিক যন্ত্রণা টুকু থেকেও মুক্তি পেতে পারো।আমি তোমাকে হেল্প করবো।এবার তুমি কি আমাকে বলবে তোমার সাথে তের বছর বয়সে ঠিক কি হয়েছিল?
মিশু করুণ দৃষ্টিতে মৈত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,আমি আজ সারাদিন বাসায় একা একা ছিলাম।আমার খুব মন খারাপ ছিল।আজকে কথাগুলা না বলি? আরেকদিন বলবো।
মৈত্রী একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,আচ্ছা।তোমার সমস্যা আর সমাধান টা যখন বের করতে পেরেছি তখন সমস্যার কারণ টা এখন না জানলেও চলবে।তুমি যে আমার পেশেন্টের তালিকার মধ্যে পড়ছো না,তাতেই আমি খুশি।তবে তোমার ভাইয়ার ধারণা তুমি এখন প্রেমঘটিত কোনো কারণে আঘাত পেয়েছো।
-আমার বুঝি প্রেম করার বয়স হয়েছে?
প্রশ্ন শুনে মৈত্রী ফিক করে হেসে বলল,প্রেম করতে আবার বয়স ও লাগে?
– লাগেনা বুঝি? সবকিছুর একটা সময় থাকে।
– এখন তো ছোট ছোট বাচ্চারাও প্রেম করে।
মিশু বলল, করতেই পারে।সময় বলতে আমি বুঝাতে চাচ্ছি একটা মানসিক পরিপক্কতা।সেই পরিপক্বতা না আসা অব্দি প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো ঠিক না।যারা ছোটবেলাতেই সেই পরিপক্বতা অর্জন করতে পারে,তারা ছোটবেলা থেকেই প্রেম করে।ম্যাচিউরিটি আর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা টা থাকতে হবে তো নাকি? অনেকের তো বাচ্চা বয়সেই ম্যাচিউরিটি চলে আসে।পচিশ বছর বয়সেও যে নিজের ভালো বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা,তার পঁচিশেও প্রেম করার বয়স হয়নি।
মিশুর জবাব শুনে মৈত্রী হেসে বলল,বাহ! দারুণ বাস্তবিক জ্ঞান অর্জন করে ফেলেছ।তোমার তো দেখছি সাইকোলজি তেও যেমন জ্ঞান,ফিলসফি তেও তেমন জ্ঞান আছে! দার্শনিক হওয়ার চিন্তা ভাবনা আছে নাকি?
মিশু মাথা দুপাশে নেড়ে বলল,উহু।আমার ইচ্ছে একজন খাটি পর্যটক হওয়ার।দেশ বিদেশ ঘুরবো আর ফটোগ্রাফি করবো।তারপর একদিন কালিকট বন্দরের মত কিছু একটা আবিষ্কার করে ফেলবো।
– ওরে বাবা! তাই নাকি? আমি শুনেছি ভাস্কো দা গামা ভারতের বহু ক্ষতি করেছেন, বহু লোককে মেরেছেন।তোমারও সেরকম কিছু ইচ্ছে আছে নাকি?
মিশু রেগে বলল,আমি কি বলেছি আমি ভাস্কো দা গামা হতে চাই? আমি শুধু বললাম ওরকম একটা বন্দর টন্দর, দ্বীপ টিপ আবিষ্কার করে ফেলবো।
মৈত্রী মিশুকে আরো ক্ষেপানোর জন্য বলল,তাহলে বলতে রবীনসন ক্রুশোর মত..
মৈত্রীকে থামিয়ে দিয়ে মিশু বলল,আমি জানতাম আপনি এটাই বলবেন।আসলে রবীনসন যে দ্বীপে গিয়ে উঠেছিল সেটার নাম আমার মনে নেই।তাছাড়া ওটা জাস্ট একটা গল্প।কিন্তু কালিকট বন্দরের ব্যাপার টা তো সত্যি তাইনা?
মৈত্রীর ইচ্ছে হলো মিশুকে আরো রাগিয়ে দেয়ার।ও হাসতে হাসতে বলল,এত রাগার কি আছে? সবাই চাইলেই রবীনসন কিংবা ভাস্কো দা গামা হতে পারেনা।অনেকের মাথাতেই আপেল পড়ে,কিন্তু সবাই কি আর নিউটন হতে পারে?
মিশু আরো রেগে বলল,দেখুন আমি মোটেও তাদের মত হতে চাইনি।আপনি জানতে চেয়েছেন বলেই বললাম।অযথা ঝগড়া লাগাচ্ছেন।
– আমি নই,তুমি ঝগড়া বাধাচ্ছো।
– দেখুন আমাদের এই কথোপকথন যদি ফেসবুকে পোস্ট করে জানতে চাওয়া হয়,এখানে ঝগড়াটা কে বাধিয়েছে? তাহলে সবাই কমেন্ট করবে,মৈত্রী।
মৈত্রী হেসে বলল,কথায় কথায় যুক্তি প্রদর্শন করাটা কি তোমার অভ্যাস?
– হ্যা।আমি লজিক নিয়ে খেলতে পছন্দ করি।আপনি যেটা বললেন সেটার কোনো যুক্তি আছে? বেগম রোকেয়া ছোটবেলায় পড়াশুনাই করার সুযোগ পাননি,কিন্তু কেউ কি ভেবেছিল তিনি একদিন মহীয়সী নারী হয়ে উঠবেন?
– বাব্বাহ! ভাস্কো দা গামা থেকে এখন আবার বেগম রোকেয়া হতে চাইছো?
মিশু এবার ভয়ংকর রাগত দৃষ্টিতে তাকাল মৈত্রীর দিকে।তারপর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল,আমি কিন্তু একবার ও এসব হতে চাইনি।আমি শুধুমাত্র একজন পর্যটক হওয়ার কথা বলেছি। আপনি নিজেই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ঝগড়া লাগাতে চাচ্ছেন।আপনার লজিকে ত্রুটি আছে,সেটা শুধরে দিতে চাইলাম অমনি আরেক টা কথা বলে বসলেন।
মৈত্রীর ভীষণ মজা লাগছে এমন রাগত মিশুকে দেখে।রাগলে মিশুকে আরো ভয়ংকর সুন্দর দেখায়! ও আরো একটু রাগানোর জন্য বলল,তুমি কি বিশুদ্ধ লজিক চর্চা করো নাকি?
– হ্যা করি।
– তাই! আচ্ছা গতরাতে তুমি মর্ম’র রুমে ঢুকে একটা সাপ আছাড় দিয়ে চটকানি মেরে তাকে তাড়িয়ে দিয়েছ।রুমের লাইট নেভানো ছিল।সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেই তুমি সাপ দেখলে আবার আছাড় ও মারলে।এখানে কোন লজিক টা খাটে মিশু? তুমি কি অন্ধকারেও দেখতে পাও?
মিশু কি জবাব দেবে বুঝতে পারলো না।শুরু থেকেই মৈত্রী ভুলভাল কথা বলে ঝগড়া বাধালো।আর শেষ টায় মিশুর ভুল ধরে মিশুকেই হারিয়ে দেবে? কিন্তু মিশু তো হেরে যাবার পাত্রী নয়।ও তৎক্ষণাৎ জবাব দিলো, আমিতো সেদিন গুল মেরেছিলাম।বাস্তবতা আর গুল মারার মাঝে একটা পার্থক্য থাকে।সবাই জানে ওটা আমি গুল মেরেছি।
মৈত্রী হো হো করে হেসে বলল,তুমি গুল ও মারো? নাকি নিজের লজিকে ত্রুটি আছে বলে একথা বলছো?
মিশু উঠে এসে দুহাতে মৈত্রীর গলা টিপে ধরে বলল,মেরে ফেলবো আপনাকে। কি শুরু করেছেন আমার সাথে? একদম খুন করে ফেলবো।
মৈত্রীর আরও হাসি পাচ্ছে।ও মিশুর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে মরে যাবো তো।মিশু আরো জোরে গলা টিপে ধরল আর বলল,মেরেই ফেলবো একদম।
এমন সময় সাফায়েত উল্লাহ সাহেব এসে হাজির! মিশু ও মৈত্রী বসার ঘরে সোফায় বসে এমন ঝগড়া করছিল।বাসায় ঢোকা মাত্রই এমন দৃশ্য দেখে ওনার ভ্রু কুচকে গেলো।মিশু মৈত্রিকে মেরে ফেলতে চাইছে নাকি?উনি বললেন, কি করছ মিশু? ওকে মেরে ফেলবে কেন?
মিশু মৈত্রিকে ছেড়ে দিয়ে এসে সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের সামনে দাঁড়াল।মৈত্রী মুখ টিপে হাসছে।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব একবার মিশুর দিকে তাকালেন আরেকবার মৈত্রীর দিকে।মিশু এত ক্ষেপে গেছে কেন?
মিশু বলল,ওরকম ছেলেকে মেরে ফেলাই উচিৎ।
– সেকি! আমার ছেলে আবার কি করলো?
মিশু একটু ঠাণ্ডা হয়ে বলল,কি করেনি তাই বলুন।উনি জানতে চেয়েছেন আমি দার্শনিক হতে চাই কিনা।আমি বলেছি, আমি কিচ্ছু হতে চাইনা।শুধু একজন খাটি পর্যটক হয়ে দেশ বিদেশ ভ্রমণ করবো আর কোনো একদিন একটা দ্বীপ আবিষ্কার করে ফেলবো। তখন থেকেই উনি আমার পিছনে লেগেছেন। আমি নাকি ভাস্কো দা গামা হতে চাই,নিউটন হতে চাই,বেগম রোকেয়া হতে চাই আরো কত কি বললেন। এমন গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে এলে রাগ হবেনা বলুন?
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, অবশ্যই হবে।আমি হলে তো রিভলভার দিয়ে শ্যুট করে দিতাম।
– রিভলভার পেলে তাইই করতাম।
– আচ্ছা এই ফ্রুটস গুলো ফ্রিজে রেখে আসো তো।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব একটা ব্যাগ ভর্তি ফল মিশুর দিকে এগিয়ে দিলেন। মিশু ব্যাগ হাতে নিয়ে চলে যাচ্ছিল।মৈত্রি বলল,ডিপ ফ্রিজে দশ মিনিট মাথা ঢুকিয়ে রেখো।
মিশু মুখ বাকা করে দ্রুত চলে গেলো।মৈত্রী ও সাফায়েত উল্লাহ সাহেব হো হো করে হেসে উঠলেন।
★
সকলে বাসায় ফেরার পর একসাথে বসে রাতের খাবার খাওয়া হলো।তারপর মর্ম’র দুদিন আগে বানানো শর্টফিল্ম টা একসাথে বসে দেখতে লাগলো।তানিন এই প্রথম কোনো ফিল্মে অভিনয় করেছে।তাই সকলেই দারুণ উত্তেজিত! অভিনয় বেশ ভালো হয়েছে।গল্পটাও অসাধারণ ছিল।সবমিলিয়ে ফিল্মটা সবার খুবই ভালো লাগলো।মিশু ও খুজিন্তা অবাক হয়ে একবার তানিনের দিকে তাকাচ্ছে,আরেকবার মনিটরের দিকে তাকাচ্ছে।তাদের এত কাছে বসে থাকা মেয়েটা, যে কিনা ওদের অনেক ভালোবাসে।সে মেয়েটা এত ভালো অভিনয় করেছে! ভাবতেই অবাক লাগছে ওদের!
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বললেন, অভিনয় পারফেক্ট। কিন্তু ড্রেস টা আরেকটু সাধারণ হওয়া উচিৎ ছিল।
মর্ম ও বাবার সাথে একমত পোষণ করলো। তারপর ফেস্টিভ্যালের জন্য একটা স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি বানানো হবে সেটার ব্যাপারে আলোচনা হলো।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব অনেক খুশি হয়েছেন মেয়ের এই সিদ্ধান্ত শুনে! আপরিচালনা করবে মর্ম নিজেই,অভিনয় করবে তানিন আর গল্পটা হবে সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের নিজের লেখা।ভাবতেই ওনার মনে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে!
সবার আড্ডা শেষ হলে মিশু নিজের রুমে চলে আসলো।বিকেলে ঝগড়া হওয়ার পর থেকে মৈত্রীর সাথে ও কোনো কথা বলেনি।খুব রেগে আছে ওর উপর।মর্ম সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরেছে।আজকে একবার ও মর্ম’র সাথে মিশুর কথা হয়নি!
মিশু খুব মনোযোগ দিয়ে একটা বই পড়ছিল।এমন সময় মর্ম এসে বলল,ম্যাডাম আসবো?
মিশু চমকে তাকাল।এতক্ষণে মর্ম’র তবে মিশুর কথা মনে পড়েছে! ও বলল,আসুন।
তারপর বইটা বন্ধ করে রেখে মর্ম’র দিকে তাকাল।মর্ম চেয়ারে বসতে বসতে বলল,সারাদিন কথা হয়নি তোমার সাথে।শুনলাম বাসায় একা ছিলে।সরি,
– একি! সরি বলছেন কেন? এত বড় একজন মানুষ আমাকে সরি বলছে ব্যাপার টা খারাপ লাগে।
– বড়রা বুঝি সরি বলতে পারেনা?
– আসলে আপনি কত বড় একজন ডিরেক্টর।আপনারা সবাই অনেক বড় মাপের মানুষ, অনেক গুণী।আমার মত একটা ছোট মানুষ কে এত ভালোবাসছেন,মিশছেন এটাই তো অনেক আমার কাছে।
– ধুর কি যে বলোনা।তুমি ভালোবাসার মতই একটা মানুষ।তাই সবাই তোমায় ভালোবাসে।এসব কখনো বলবে না তো।
– তাই!
– হ্যা,তুমি নিজেও জানোনা তুমি কত চমৎকার একটা মেয়ে!
মিশু মর্ম’র দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মর্ম বলল,তোমার নাকি রাত্রে ঘুরতে ভালো লাগে? চলো ঘুরতে যাবো।অনেক দূরে চা খেতে যাবো।
– চা?
– হ্যা।শুধু দুধ দিয়ে চা।কোনো পানি নেই,দুধে চাপাতি ফুটিয়ে চা বানায়।দারুণ লাগে খেতে! যাবে?
মিশু মুচকি হাসল।এমন একটা প্রস্তাবে না বলা যায় না।
চলবে..