#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-১১
রোদ্রিকে অজ্ঞান অবস্থায় কোলে নিয়ে দ্রুত নিজের ঘরে গেলো নীরাদ।যত্ন করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ডাক্তার কে কল করলো।মিরা আর মনিরা পাশে বসে কান্না করছে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রোদ্রির।
রান্নাঘরের আগুন ততক্ষনে নিভিয়ে দেয়া হয়েছে।খালি পাতিল চুলায় দিয়ে ভুলে গিয়েছিলেন মনিরা আহমেদ।পাতিল পুড়ে একপর্যায়ে ফেটে আগুন ধরে যায় আগুন বেশি না লাগলেও ধোঁয়া হয় বেশি।
নাকেমুখে ধোঁয়া ঢুকে যাওয়া আর অতিরিক্ত ভয় পেয়ে ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে রোদ্রি।
সোফায় বসে হাঁটুতে হাতের কুনুই ঠেস দিয়ে দুহাতে মুখ চেপে বসে আছে নীরাদ।একটু আগেই ডাক্তার এসে ইনজেকশন দিয়ে গেছে রোদ্রিকে,বলেছে কিছুক্ষন এর মধ্যই জ্ঞান ফিরবে।
মিরা ফোন করে বলাতে রিদানও তাড়াহুড়ো করে অফিস থেকে চলে এসেছে।সেও রোদ্রির পাশেই বসে আছে।কপালে চিন্তার ভাজ স্পষ্ট।
সবাই রোদ্রির প্রতি ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে পারলেও নীরাদ পারছেনা।পারছেনা সে রোদ্রিকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।
রান্নাঘর থেকে রোদ্রির চিৎকার শুনে তার আত্মাটা কি পরিমাণে কেঁপে উঠেছিলো সেটা কেবল সেই জানে।
ধীরে ধীরে চোখ খুলে রোদ্রি।আশেপাশে তাকিয়ে কিছুটা সময় লাগে তার ব্যাপারটা বুঝতে।
রিদান এগিয়ে এসে গালে হাত রাখে।নরম গলায় বলে,
-শরীর খারাপ লাগছে বোন?
-নাহ্।আমি ঠিক আছি ভাইয়া।
বলে রিদানের সাহায্য উঠে বসলো রোদ্রি।ক্লান্ত লাগছে।বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো সে।
-রোদ্রি মা,আমার জন্য তোমার আজকে এত বড় একটা বিপদ হতে গিয়েছিলো।আমাকে মাফ করে দিও।
-আরে আপনি কি সব বলছেন আন্টি।আপনার জন্য হবে কেনো?এটা জাস্ট একটা এক্সিড্যানট।
-জি চাচি।আপনাকে কতবার বললাম আপনি নিজেকে দোষারোপ করবেন না প্লিজ।
কথার মাঝেই রোদ্রির দিকে স্যালাইন মিশানো পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো নীরাদ।মৃদু কন্ঠে বললো,
-এটা খেয়ে নিন।পুরাটা শেষ করবেন।
এতক্ষনে নীরাদকে লক্ষ্য করে রোদ্রি।লোকটার চোখমুখ বিমর্ষ হয়ে আছে।উচ্চস্বরে কথা না বলেও কি সুন্দর শাসন করে নীরাদ ।
বিনাবাক্য পুরাটা শেষ করলো রোদ্রি।নীরাদ ঠায় দাড়িয়ে ছিলো এতক্ষন।খাওয়া শেষ হলে পানির গ্লাসটা নিয়ে পাশের টেবিলে রাখতে রাখতে বললো।”ওকে কিছু খাবার খাইয়ে দিন ভাবি,তারপর ওষুধ খেয়ে কিছুক্ষন ঘুমালেই দুর্বলতা কেটে যাবে।
মিরা বসে বসে রোদ্রিকে খাইয়ে দিচ্ছে।জরুরি মিটিং পড়ে যাওয়ায় রিদান কিছুক্ষন আগেই আবার অফিসে চলে গিয়েছে।বলেছে রাতে এসে রোদ্রি আর মিরাকে নিয়ে যাবে।
নীরাদ সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছে আর একটু পরপর আড়চোখে রোদ্রিকে দেখছে।
খাওয়া শেষ হলে মিরা প্লেট রাখতে নিচে চলে যায়।রুমে শুধু নীরাদ আর রোদ্রি।
উঠে যেয়ে পাতা থেকে ওষুধটা বের করে রোদ্রির মুখের সামনে ধরে নীরাদ।
-হা করেন।
একবার তাকিয়ে ছোট করে মুখ খুলে রোদ্রি।ওষুধটা দিয়ে পানিটাও নিজ হাত খাইয়ে দেয় নীরাদ।ঠোঁটের কোঁণে লেগে থাকা পানি আলতো করে মুছিয়ে দিয়ে বলে,
-এখন চুপ করে ঘুমান।রেস্ট নিলে ভালো লাগবে।
-মি.নীরাদ।
রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল নীরাদ রোদ্রির ডাকে পিছনে ফিরলো সে।
-কিছু লাগবে?
-উহু….আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানোর জন্য।
কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো নীরাদ।তারপর বেশ শান্ত স্বাভাবিক গলায় বললো,
-আমিতো আপনাকে বাচাইনি।বাচিয়েছি নিজেকে।আমার সম্পূর্ণটা জুড়েইতো আপনি।আমার অস্তিত্বের প্রতিটা কোণায় কোণায় আপনার বিচরণ।অন্তত নিজের অস্তিত্বটা টি কিয়ে রাখার জন্যে হলেও আপনাকে বাঁচানো খুব জরুরি ছিল।নিজের অস্তিত্ব না থাকলে তো মানুষ বাঁচেনা,তাইনা মিস.রোদ্রি?
রোদ্রি কিছু বললোনা।বললোনা বললে ভুল হবে সে আসলে বলার অবস্থায় নাই।
মুচকি হাসলো নীরাদ।
-আচ্ছা,বাদ দিন এসব কথা।আপনার এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে।আপনি ঘুমান।
বলে দরজা আটকে বের হয়ে গেল নীরাদ।রোদ্রি বুঝতে পারছেনা তার কেমন রিয়েকট করা উচিত।মাথাটা একেবারেই খালি খালি লাগছে।
নীরাদের একেবারেই স্বাভাবিকভাবে বলা কথাগুলো প্রচন্ড অস্বাভাবিক ভাবে ভাবিয়ে তুলছে রোদ্রিকে।
রাতের বেলা বেডে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো নীরাদ।হঠাৎ পাশে চোখ পরতেই খানিকটা হেসে উঠলো সে।এখানেই একটু আগে ঘুমিয়ে ছিল রোদ্রি।জায়গাটায় একহাত রাখলো সে।বিরবির করে বললো,
-আপনাকে এখানে পার্মানেনট ভাবে আনার ব্যবস্থা খুব শীঘ্রই করছি আমি মিস.রোদ্রি।
______________
কেটে গেছে বেশ কিছু সময়।আজকে রোদ্রির ফাইনাল সেমিস্টারের রেজাল্ট বেরিয়েছে।বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে রোদ্রি।
ভাই ভাবিকে রেজাল্ট জানিয়ে অনুমতি নিয়ে বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে বের হলো রোদ্রি।
বিকেলবেলা ক্লান্ত ভঙ্গিতে বাসায় ঢুকলো সে।ঢুকে মনিরা আহমেদ কে দেখে কিছুটা অবাক হলেও খুশি হলো।
রিদান আর মিরার সাথে কিছু একটা আলোচনা করছিলেন তিনি।রোদ্রি সালাম দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।অর্ধেক সিঁড়ি উঠতেই একটা কথা কানে আসলো তার।সেখানেই থমকে দাঁড়িয়ে গেলো সে।
-রোদ্রিকে আমি আমার ছেলের বউ করতে চাই রিদান…
চলবে..???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here