বাদামী সংসার
পর্ব ২৮
মিশু মনি

প্রফুল্ল বিড়বিড় করে বললো, ‘একটা মোমের দেয়াল অম্লানকে আমার হতে দেয় না!’

চোখের কোণা বেয়ে দুফোঁটা নরম অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। বিছানায় শুয়ে থাকতে কেমন ছটফট লাগছে প্রফুল্ল’র। ঘুম আসছে না কিছুতেই। অনুভূত হচ্ছে একটা সুক্ষ্ম যন্ত্রণা। মনে হচ্ছে কেউ গায়ের চামড়া ছিলে লবণ মরিচ ছিটিয়ে দিচ্ছে। এত কষ্ট কেন হয় অম্লানের কথা ভাবলে?

প্রফুল্ল উঠে বসলো। স্থির থাকতে না পেরে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। শিরশিরে হাওয়া বইছে। চারদিক ভীষণ নির্জন। এখানে বেড়াতে আসা লোকজন নিশ্চয় বেশিরভাগই আরামের ঘুমে ডুব দিয়েছে। এত রাতে কারও জেগে থাকার কথা নয়। প্রফুল্ল বারান্দার গ্রিলে হাত রেখে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে তাকিয়ে রইলো।

হঠাৎ শব্দ হলো কোথাও। খসখসে শব্দ। মনে হচ্ছে বিড়াল বা কুকুর কিছু একটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আবার মুহুর্তেই মিলিয়ে যাচ্ছে শব্দটা। প্রফুল্ল কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করে। এমন সময় জোরে চিৎকার করে ওঠে রোদেলা। প্রফুল্ল দৌড়ে এসে রুমে ঢোকে। রোদেলা বিছানার ওপর বসে হাঁফাচ্ছে। প্রফুল্ল ওর গায়ে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি হয়েছে?’
– ‘ভয় পেয়েছিলাম। কোথায় একটা শব্দ হচ্ছিলো না? শব্দটা আমার কানে আসছিলো। আধোঘুমে ছিলাম। কল্পনায় খারাপ কিছু আসছিল। ভয় পেয়েছি।’

প্রফুল্ল রোদেলাকে বুকে জাপটে ধরে। স্বান্তনা দিয়ে বলে, ‘ঘুমা। কিচ্ছু হয়নি। কিচ্ছু হয়নি।’

রোদেলা আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করে। ভয় ভয় শরীরে প্রফুল্লকে জড়িয়ে ধরে রাখে। এমন সময় দরজায় ঠকঠক শব্দ হয়। প্রফুল্ল ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করে, ‘কে?’

ওপাশে একটা ভরাট কণ্ঠস্বর শোনা গেলো, ‘আপনার ঘরে চিৎকারের শব্দ শুনে এলাম। কিছু হয়েছে?’

বুকের ভেতর ধক করে ওঠে প্রফুল্ল’র। ক্ষণিকের জন্য মনেহয় ভুল শুনেছে, কিন্তু ভুল তো হবার সুযোগ নেই আজ। সেই চিরচেনা কণ্ঠস্বর। তার শত জনমের প্রিয় মানুষ ,অম্লান!

ভেতরে বসে থাকতে পারে না প্রফুল্ল। মলিন মুখে দরজা খুলে তাকায়। অম্লান ভাবতেও পারেনি তার পাশের রুমেই প্রফুল্ল থাকতে পারে। গতকাল থেকেও এটা একদমই কল্পনার বাইরে ছিলো। দ্রুত হৃদস্পন্দিত হয় অম্লানের।

প্রফুল্ল ঢোক গিলে বললো, ‘তুমি!’

ঘনঘন শ্বাস পড়ছে প্রফুল্ল’র। বুক ধড়ফড় করছে। এই বুঝি নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। অম্লান এদিক সেদিক তাকিয়ে পিছু হটলো। একটি কথাও বললো না প্রফুল্ল’র সাথে। দ্রুত নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় অম্লান।

নীলাক্ষী জানতে চায়, ‘কি হয়েছিল?’
অম্লান জোরে শ্বাস নিচ্ছে। বাকরুদ্ধ সে। কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। মনে হচ্ছে পায়ের তলায় মাটি নেই, অকূল দরিয়ায় পতিত হচ্ছে। অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো। নীলাক্ষী কাছে এসে জানতে চাইলো, ‘বলো না কি হয়েছে?’

অম্লান স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। মাথা ঝেড়ে নিজেকে যথাসম্ভব সহজ করে উত্তর দেয়, ‘কিছু না। ওই একটু ভয় পেয়েছিলো আরকি।’
– ‘ওহ আচ্ছা।’

কিন্তু অম্লানের মাথা ক্রমশই এলোমেলো হয়ে যেতে লাগলো। মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে অপ্রয়োজনীয় কল্পনা। অম্লানের মনে হচ্ছে ওই ঘরের ভেতর প্রফুল্ল’র সাথে পাঞ্জাবী পরা ছেলেটাও রয়েছে। দুজনে নিশ্চয় গভীর প্রেমলীলায় মত্ত হয়ে ছিলো। প্রিয় প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে আরেকজন পুরুষের লীলাময় দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠতেই মাথা গরম হয়ে উঠলো অম্লানের। এখন বুঝতে পারছে কেন অম্লানের বিয়ের পর সেদিন প্রফুল্ল ফোন দিয়ে ওভাবে জানতে চেয়েছিলো! নিশ্চয়ই প্রফুল্ল’র একইরকম কষ্টবোধ হয়েছিলো। আপন, একদম আপনার একটা মানুষ কেমন করে যেন আরেকজনের হয়ে যায়। আরেকটা মানুষ তাকে স্পর্শ করে, আদর করে, রোমাঞ্চের শিহরণে ভরিয়ে দেয়।
অম্লান একটা সিগারেট ধরালো। নীলাক্ষী কাছে এসে অম্লানের হাত থেকে কেড়ে নেয় সিগারেট। তারপর ওটাকে ফেলে দিয়ে খপ করে অম্লানের মাথাটা ঠেস দিয়ে কাছে এনে গভীর আবেশে চুম্বন করে। অম্লানের এইমুহুর্তে ভয়াবহ যন্ত্রণা হচ্ছে। এই কষ্ট সীমাহীন। আকাশচুম্বি আঘাতের সমান। রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে অম্লানের গা থরথর করে কাঁপে। নীলাক্ষীর চুম্বনের আক্রমণে সে বিরক্ত হলেও শারীরিক ও মানসিক বেদনা মেটাতে প্রবল ইচ্ছে জাগে। নীলাক্ষীকে বিছানায় ফেলে ভালোবাসার অত্যাচারে রাঙিয়ে দেয়া আরম্ভ করলে একসময় মাথা থেকে দূর হয় কল্পনীয় প্রফুল্ল’র ভাবনা। তখন শারীরিক সুখটাই জোয়ারের মতো এসে সেই স্রোতে ক্ষোভকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

প্রফুল্ল বিছানায় শুয়ে আপনমনে ভাবে, ‘অম্লান আমার পাশের রুমে থাকে অথচ আমি জানতামই না। কোইন্সিডেন্ট! তবে আর যাই হোক, ওকে কিছুতেই জ্বালাতন করা যাবে না। হয় কালকেই চলে যাবো আর নয়তো রুম চেঞ্জ করবো। সে ভালো আছে, থাকুক।’

নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সকালবেলার ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছিল প্রফুল্ল। রোদেলা ওকে ডাকেনি। বেলা বেড়ে গেলে দশটার দিকে পাঞ্জাবীওয়ালা যুবক খোঁজ নিতে আসে। তারও মনে হচ্ছিল এইসময় প্রফুল্লকে বেশিক্ষণ একা রাখা যাবে না। গত রাতে গল্পটা স্মৃতিচারণ করার পর নিশ্চয় রাতে ছটফট করে কাটিয়েছে।

রোদেলা দরজা খুলে দিয়ে বললো, ‘প্রফুল্ল তো ওঠেনি এখনও।’
– ‘ইটস ওকে। আমি যদি ওনাকে জাগাই সমস্যা হবে?’

রোদেলা খানিকটা অবাক হলো। মিষ্টি হাসলো সে। গতরাতে অম্লানের সাথে আকস্মিক দেখা হওয়ার বিষয়টা রোদেলাও জানে। তাই প্রফুল্লকে এইমুহুর্তে পাঞ্জাবীওয়ালার সাথে ব্যস্ত রাখাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। ও হেসে বললো, ‘প্লিজ আসুন না। আমি একটু হেঁটে আসি।’

রোদেলা বাইরে বেরিয়ে যায়। পাঞ্জাবীওয়ালা প্রফুল্ল’র বিছানার পাশে রাখা সোফার ওপর বসে। ঘুমন্ত প্রফুল্ল’র মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে আপনমনে হাসলো। কয়েক মুহুর্ত পেরিয়ে গেলো এভাবেই। পাঞ্জাবীওয়ালা বললো, ‘মিস প্রফুল্ল, আপনি কি আজ উঠবেন না?’

বেশ কয়েকবার প্রফুল্ল’র নাম ধরে ডাকতেই ঘুম থেকে চমকে উঠলো সে। বালিশ বুকে জড়ানো অবস্থায় চোখ মেলে পাঞ্জাবীওয়ালাকে দেখতে পেয়ে ভুত দেখার মতো চমক পেলো। অবাক হয়ে হাই তুলতে তুলতে বললো, ‘আপনি!’

পাঞ্জাবীওয়ালা বললো, ‘চলে এলাম। আপনাকে জাগাতে। উঠবেন না?’
প্রফুল্ল বললো, ‘উঠিয়েই তো ফেললেন। আবার জিজ্ঞেস করছেন উঠবেন না?’

মিষ্টি হাসলো পাঞ্জাবীওয়ালা। পরনে এখন অবশ্য পাঞ্জাবী নেই। একটা মেরুন রঙা ফতুয়া। অকস্মাৎ প্রফুল্ল বললো, ‘আপনি কি মেরুন রংটাকে বিশেষ পছন্দ করেন?’

এবারও মিষ্টি হেসে যুবক বলল, ‘রংয়ের ব্যাপারগুলোতে আমি একেবারেই অজ্ঞ। এই প্রথম খেয়াল করলাম আমার পাঞ্জাবী আর ফতুয়ার রং একই। বিশ্বাস করুন আগে আমি জানতাম ও না এই রংয়ের অন্য কোনো পোষাক আমার আছে।

প্রফুল্ল হাই তুলতে তুলতে বললো, ‘বেশ ভালো। আর কি জানতেন না?’

যুবক ক্ষণিক ভেবে উত্তর দিলো, ‘এইযে আমার এই ফতুয়ার রংয়ের নাম মেরুল, সেটাও জানতাম না।’
‘মেরুল নয়, মেরুন।’
‘মেরুন? কি অদ্ভুত নাম!’
‘আমি যদি বলি আপনি যেটা বলেছেন সেটা বেশি অদ্ভুত?’
‘হতে পারে। আমরা সবাই অদ্ভুত জাতি। চোখেমুখে ঘুম লেপ্টে আছে আপনার। যান হাতমুখ ধুয়ে আসুন।’

প্রফুল্ল বিছানা থেকে নামতে চেয়েছিলো ঠিকই। এ কথা শোনার পর অকস্মাৎ নামার ইচ্ছেটা উধাও হয়ে গেলো। বললো, ‘ঘুম লেপ্টে থাকলে আমাকে কি দেখতে খারাপ দেখায়?’
‘তা নয়। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করবেন না?’
‘ওহ হো। ভুলেই গিয়েছিলাম। আমরা আজকেই চলে যাবো। আপনি কি আরও একটা রাত থাকতে চাচ্ছেন?’

যুবক অবাক হয়ে উত্তর দিলো, ‘সেকি। রুম বুকিং দিয়েছেন কালকের সহ। আপনার কথামত আমিও দুদিনের দিলাম। এখন বলছেন আপনি চলে যাবেন?’

প্রফুল্ল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ‘আচ্ছা যাবো না। একটু বসুন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।’

পাঞ্জাবীওয়ালা ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ালো। প্রফুল্লকে তৈরি হওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য। বেশি সময় নিলো না প্রফুল্ল। মিনিট পাঁচেক পরেই জামাকাপড় বদলে বেরিয়ে এলো বাইরে। কিন্তু নিয়তি হয়তো একেই বলে। ঘর থেকে বের হয়ে দরজা তালাবদ্ধ করে প্রফুল্ল মাত্র মুখ ঘুরিয়েছে, আচমকা অম্লানের সাথে মুখোমুখি সাক্ষাৎ। তারা বাইরে থেকে রুমে ফিরছে। অম্লানের মুখে রাজ্যের ক্ষোভ স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে। প্রফুল্ল চমকালো। ভয়ংকর রেগে গেলে অম্লানের চেহারা দেখতে এমন লাগে। বাঘের মতো হিংস্র। ওই দৃষ্টিতে অনেক আগ থেকেই ভালোমতো চেনে প্রফুল্ল। কিন্তু অম্লান তাকে গ্রাহ্যই করলো না। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দ্রুত কক্ষে প্রবেশ করলো। মনেমনে ক্ষুদ্ধ হলো প্রফুল্ল নিজেও।

অম্লান ঘরে ঢুকে শান্ত ভঙ্গিতে বিছানায় এসে বসলো। প্রফুল্ল’র কি বিয়ে হয়ে গেছে! ছেলেটাকে নিয়ে সে তো রুম থেকেই বের হলো। বিয়ে হয়ে গেলে তো কপালে রক্তিম সিঁদুরের ছোঁয়া লেগে থাকত। অবশ্য প্রফুল্ল সেসব রীতিনীতি নাও মানতে পারে। কিন্তু বিয়ে হলে প্রফুল্ল কি একবার জানাবে না? তার তো জানানো উচিৎ। যদিও এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থেকে যায়, অম্লান নিজেও তো তাকে বিয়ের কথা জানায়নি। প্রফুল্ল বিষয়টা জেনেছে অম্লানের এক নামমাত্র বন্ধুর ফেসবুকে আপলোডকৃত ছবির মাধ্যমে। বিষয়টাকে যতই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করছে, ততোই যেন আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরছে তাকে।

নীলাক্ষী পাশে এসে বসতেই অম্লান বললো, ‘ব্যাগ গুছিয়ে নাও, আমরা এখনই চলে যাবো।’

প্রফুল্ল লক্ষী মেয়ের মতো ব্যাগ গোছাতে চলে গেলো। বিছানার ওপর স্তম্ভিত ভঙ্গিতে বসে রইলো অম্লান।

সকালের নাস্তা করতে রেস্টুরেন্টে ভীড় জমিয়েছে অনেকেই। রিসোর্টের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট, খাবারের মানও মোটামুটি ভাল। সরগরম হয়ে উঠেছে ভেতরের পরিবেশ। চামচ, প্লেটের টুংটাং শব্দ আর লোকজনের বিভিন্ন কথার শব্দ কানে আসছিল। ভেতরে ঢুকে প্রফুল্ল একটা চেয়ার টেনে বসে। খাওয়ার ইচ্ছে ছিল না মোটেও। পাঞ্জাবীওয়ালা নিজেও নাকি না খেয়ে আছে। তাই প্রফুল্ল বাধ্য হয়েই খাবার খেতে বসে।

রোদ ঝলমলে একটা দিন। চারিদিক ঝকঝক করছে। নাস্তা সেরে একটা খোলা উদ্যানে এসে বসে দুজনে। কথায় কথায় পাঞ্জাবীওয়ালা জানতে চাইলো, আপনি কি শাক সবজি কম পছন্দ করেন?
‘হ্যাঁ। মাছ মাংস বেশি খাই। কেন?’
‘আমি অবশ্য শাক সবজি বেশি খাই।’
‘অম্লানও শাক সবজি বেশি খেতো।’
‘ওহ আচ্ছা। রাতের গল্পটা শেষ করবেন না?’

প্রফুল্ল আশেপাশে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে বললো, ‘হুম। শেষ না করলে আপনি ছাড়বেন নাকি?’

হেসে উঠলো দুজনেই হাসি থামিয়ে প্রফুল্ল বলতে শুরু করলো,
‘আমি ও অম্লান একজন আরেকজনের আত্মার অংশ হয়ে উঠেছি ততদিনে। আমাদের মধ্যে একটা দারুণ সম্পর্ক। একে অপরকে বোঝার ক্ষেত্রে বলুন কিংবা যেকোনো কিছু নিয়ে সিদ্ধান্ত বলুন। সব সময় আমার আর অম্লানের সবকিছু এক হয়ে যেত। হাসপাতালে ও আমাকে সরাসরি ভালবাসার কথা জানানোর পর আমিও হঠাৎ কথাটা শুনে কেমন যেন আবেগাপ্লুত হয়ে উঠি। ওকে জড়িয়ে ধরি। আমার মনে হতে থাকে জীবনে এরচেয়ে সুখের মুহুর্ত আর হয় না। অম্লানের ভালবাসাটা যেন মনেপ্রাণে আমিও এতদিন চেয়েছিলাম সেরকম মনে হল। কিন্তু সমস্যাটা হল এর পরেই। বাসায় ফিরে আচমকা একটা চিন্তা আমাকে গ্রাস করতে শুরু করলো। সেটা হচ্ছে, আমরা আলাদা ধর্মের। বন্ধুত্বের শুরুর দিকে আমি কল্পনাও করিনি একসময় এমন জোড়ালো প্রেম হবে আমাদের। আমি আগে পাত্তা দেইনি ব্যাপারটা। কিন্তু ও আমাকে প্রপোজ করার পরেই যেন চুপসে গেলাম। আমার বাবা কখনোই এ সম্পর্ক মেনে নিবে না। আমি যদি অম্লানকে ভালবাসি, ওকে পেতে চাইলে আমাকে ঘরবাড়ি, বাবা মা দুটোই ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। যেটা ছিল দুঃসাধ্য। প্রথম কারণ, বাবা আমাকে প্রচন্ড ভালবাসেন। আমি তাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমি হঠাৎ করেই খুব মনমরা হয়ে গেলাম। কিচ্ছু ভালো লাগত না। সারাক্ষণ কান্না পেত। অম্লান আমাকে বারবার কল দিয়ে যাচ্ছে, আমি ফোন সাইলেন্ট করে রাখতাম। রাত্রিবেলা যখন ও কলের পর কল দিয়েই যাচ্ছে আর আমি মোবাইল বালিশের পাশে রেখে শুয়ে আছি। খুব কষ্টকর ছিল আমার জন্য। এভাবে তিন চারদিন চলার পর একদিন আমার রুমমেট এসে খবর দিলো দাড়োয়ান নাকি বলেছে গেটে আমার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে। নাম অম্লান। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। ওকে মেসেজ পাঠালাম, তুমি চলে যাও প্লিজ। আমি তোমার সাথে সম্পর্ক গড়তে পারবো না। প্লিজ আমাকে আর ফোন দিও না। অম্লান রিপ্লাই দিলো, তুমি একটিবার নিচে আসো প্লিজ। তারপর যা বলবে আমি তাই শুনবো। অম্লানের মেসেজ দেখে ভাবলাম নিচে গিয়ে বলে আসি। কিন্তু আমি ভাবিও নি নিচে আসার পর ওকে দেখে আমার ভেতরে এমন ঝড় উঠবে। ওকে দেখার পর কেমন যেন হয়ে গেলাম। ইচ্ছে করছিল জড়িয়ে ধরে বলি, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। অম্লান বারবার জানতে চাইছিল, কি হইছে তোমার? আমি বাসার ভেতর যেমন শক্ত ছিলাম, ভেবেছিলাম ওকে ভুলেই যাবো। সেই আমি নিচে আসার পর কি করলাম জানেন?’

পাঞ্জাবীওয়ালা বেশ আগ্রহভরে জানতে চাইলো, ‘কি!’

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here