#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 58+59
.
.
ইফাজ আর ইয়াশকে বিদায় দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে সোজা রুমে এসে সবকিছু গুঁছিয়ে একটা বই নিয়ে পড়তে বসলাম!
.
দুপুরের দিকে তুলি সবকাজ কমপ্লিট করে বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো,আমি যেতে দিলাম না।একলা বাসায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে।দুই মগ কফি বানিয়ে তুলিকে নিয়ে বারান্দায় বসলাম।
– আপা,একখান কথা কমু?
আমি কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম,
– বলো।
– আপনে কি পোঁয়াতি?
আমি চঁমকে উঠে শাড়ি ঠিক করে বললাম,
– বোঝা যায় নাকি?
তুলি হেসে বললো,
– শাড়ি সইড়া গেছিলো তহন চোখ পড়লো।এমনিতে বোঝা যায় না।আলটাসোনো করছেন নি?পোলা নাকি মাইয়া?
তুলি হাসতে হাসতে কথাটা বললো।তুলির কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।ও যে মজা করে কথাটা বললো,সেটা ওর চোখ টিপ্পনিতেই বুঝতে পেরেছি!আমি হাসতে হাসতে বললাম,
– আমি ঠিক করেছি ওইসব পাপ-টাপ করবো না আমি!দেখো না,হসপিটালে সব ছেলে ডক্টর দিয়ে ভর্তি!
আমি পেটে হাত রেখে বললাম,
– অজানা বিষয়ে আমার কৌতুহল ছোটবেলা থেকেই একটু বেশি!ভেতরে ছেলে আছে নাকি মেয়ে?একটা আছে নাকি দুইটা?আমার কিচ্ছু জানার দরকার নেই!
তুলি কফির মগে এক চুমুকে প্রায় অর্ধেক শেষ করে বললো,
– ভাইও কি আপনের মতোন আধাপাগল?
তুলির কথা শুনে আমি ভ্রুঁ কুচঁকে তুলির দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আমাকে তোমার আধাপাগল মনে হয়?
– এহনকার যুগে আপনি যেই কথা কইতেছেন,তাতে তো আধাপাগলই মনে হয়তাছে!তয় একটা জিনিস ঠিক কইছেন পরপুরুষ পেট দেহে,কেমন গাঁ গুলায়!
আমি হেসে বললাম,
– এভাবে কেনো বলছো?এটা উনাদের প্রফেশান!ইচ্ছে করে তো আর করে না!খারাপ ইন্টেনশান নিয়ে তারা কখনোই কাজটা করে না!কাজ হয়ে গেলে ব্যস,টাকা দাও বিদায় হও!
তুলির সাথে আরো কিছুক্ষণ খেজুরে-আলাপ করে ও’কে বাসায় যাওয়ার পারমিশন দিলাম।তুলি চলে যেতেই আমার উপর একরাশ বিরক্তি ভর করলো!ড্রইংরুমের সোফা থেকে ফোনটা নিয়ে রুমে চলে এলাম!উনি একবারও কল দেননি!দিবেন কিভাবে?সিম-ই তো নেই!
.
আমি বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম!ভীষন ক্লান্ত লাগছে!কিছুই তো করলাম না,তারপরও এতো ক্লান্ত কেনো লাগছে?একটু হাঁটা দরকার!কিন্তু মন টানছে না….
আমি কম্বল মুড়ে চোখ বন্ধ করে শুঁয়ে পরলাম!আব্বু-আম্মুর কথা খুব মনে পরছে!দেখা করে আসা উচিৎ!অনেকদিন হলো দেখি না!আব্বু-আম্মুও তো একবার এসে দেখে যেতে পারে!মানুষের এতো কেনো ব্যস্ততা?
আমি উঠে টিভি অন করলাম।এ.টি.এন বাংলা চ্যানেল বের করে রিমোটটা ঘুরাতে লাগলাম।এইমুহূর্তে মাহফুজুর ভাইয়ার গান দিলে ভালোই হতো,মন্দ না!কিছুক্ষণ চ্যানেল পাল্টালাম না।মনে হচ্ছে উনার দর্শন আজ আমি পাবো না।চ্যানেল পাল্টে ডিসকোভারি চ্যানেল দিলাম।বেয়ারের পোঁকা খাওয়া দেখাচ্ছে।আচ্ছা,মানুষটা এতো নোংরা কেনো?উল্টা-পাল্টা জিনিস কিভাবে খায়!এতো এতো টাকার পাহাড় দিয়ে যেখানে কিনা রেস্টুরেন্টে বসে দামি দামি সব খাবার খাবে,সেখানে উনি জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে পোঁকা-মাকড় নিয়ে টানাটানি করে।ফ্যামিলি উনাকে এলাউ করে কিভাবে?গাঁ থেকে পোকা-মাকড়ের গন্ধ পায় না?নাকি লাইফ-বয় দিয়ে গোসল করে!হবে একটা!
.
আমি টিভি অফ করে শুঁয়ে পরলাম!ভালো লাগছে না।ইয়াশটাও আসছে না,এগারোটা তো বেঁজে গেলো।বেচারাকে তিনদিন পর নিয়ে যাবে আঙ্কেলের কোন-একটা ট্যুরের জন্য।এখনো জানানো হয়নি ইয়াশকে।ইয়াশ যাবে নাকি আমার কাছেই থাকবে?অবশ্যই যাবে,ও তো ঘুরতে ভীষন পছন্দ করে।হাহ্….
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।চারপাশ এতো কেনো নিরব হয়ে আছে?এইসময় তো আমার চারপাশে মানুষ গিঁজগিঁজ করার কথা!নিজে নিজেই দুইলাইন গুনঁগুনঁ করলাম,
একলা একা প্রজাপতি
ভুলে যায় ওড়ার কথা;
ডানায় তার ভর করেছে
বিষন্ন এক নিরবতা;
.
চোখ বন্ধ করলাম।সাথে সাথেই কলিংবেল বাঁজলো।ধড়ফড় করে উঠে মেইনডোরের কাছে যেতেই দেখলাম সেই পলক ভাইয়া!উনি এইসময় হঠাৎ?উনি কি জানে আমি বাসায় একা আছি?ইশ্….সিমটাও নেই যে উনাকে ফোন করে সিওর হবো!
আবার বেল বাঁজলো!আমি দো’আ দরূদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে মাথায় কাপড় দিয়ে দরজা খুললাম!আমাকে দেখেই পলক ভাইয়া মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ছোট একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– সিম….ইফাজ ভাই পাঠিয়েছেন!
আমি প্যাকেটটা নিয়ে দরজা হাট করে খুলে বললাম “ভেতরে আসুন!” হঠাৎ আমার সমস্ত ভয় উবে গেলো।ভাইয়াকে সন্দেহ করা একদম উচিৎ হয়নি আমার!ইশ্….বেচারা কত্ত উপকার করে!ইফাজ যে কেনো বারবার এই পলকটাকে দিয়েই কাজ করায়,বুঝি না!
পলক ভাইয়া ভেতরে আসলেন না।”অন্য একদিন বসবো ভাবি!” বলে সালাম দিয়ে চলে গেলেন!
.
আমি দরজা লক করে ঝড়ের গতিতে রুমের দিকে পা বাড়ালাম!বিপত্তিটা ঘটলো তখনই,কার্পেটের কোণার সাথে হোঁচট খেয়ে ধপাস করে গেলাম পড়ে!সাথে সাথেই চিৎকার দিয়ে উঠলাম!পায়ে হাত দেওয়ার আগে পেটেই আগে হাত চলে গেলো!দাতে দাত চেঁপে স্তব্ধ হয়ে গেলাম!কি করলাম এটা আমি!!!
কোনোরকমে সিমটা তুলে কিছু একটা ধরে আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করলাম!দেয়াল ধরে ধরে পেটে হাত দিয়ে রুমে ঢুকে বেডের উপর থেকে ফোন নিয়ে দ্রুত সিমটা ফোনে ঢুকালাম!বেডে গাঁ এলিয়ে দিলাম!আমার পা ছাড়া অন্য কোথাও তেমন একটা আঘাত লাগে নি!কিন্তু আমার টেনশন হচ্ছে ভেতরেরগুলোকে নিয়ে!ইফাজ জানতে পারলে শেষ করে ফেলবেন আমাকে!কয়েক সেকেন্ড পরই উনার কল এলো!আমি চোখের পানি মুঁঁছে যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে কথা বলার চেষ্টা করলাম!
– কি করছিলে?
– শুঁয়ে বসে আছি!আর তো কোনো কাজ নেই আমার!কেউ তো বাসায়ও নেই যে বসে বসে তার সাথে গল্প করবো!পুরো বাসা ফাঁকা!একা একা ভালো লাগে,বলুন?
– তুলি চলে গিয়েছে?আর ইয়াশ এখনো আসে নি?
– তুলি আর কতক্ষণ থাকবে?ওর কাজ শেষ ও চলে গিয়েছে,আবার সন্ধ্যের দিকে আসবে!আর ইয়াশ এখনো আসে নি!
আমার কথা শুনে উনি কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,
– তোমার সাথে গল্প করার জন্য কাউকে কি রাখবো?একদিকে গল্প করাও হবে,অন্যদিকে তোমার দেখাশুনাও!
.
আর দেখাশুনা!যে হাটতে গেলেই পড়ে যায়,তাকে আর কে দেখেশুনে রাখবে?কেয়ারলেস মা একটা!
আমি যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে উনার কথার প্রতিত্ত্যুরে চেঁচিয়ে বললাম,
– কিহ্!টাকা কি গাছ থেকে পড়ে?গল্প করার জন্যও এখন মানুষ রাখতে হবে?আমার ভাগ্যে যেটা ছিলো সেটাই হয়েছে!যেমন কর্ম,তেমন ফল!
– এভাবে চেঁচিয়ে বলার কি আছে?ভালোভাবে বললেই তো শুনতে পাই!শুনো,এখন কিন্তু তুমি একা নও!ওদের কথা মাথায় রেখে চেঁচাবে,বুঝলে?
উনার কথা শুনে আমি নিরব থাকলাম!কিছু বললাম না!
উনি বললেন,
– চুপ কেনো?কিক মেরেছে?
আমি চঁমকে উঠে বললাম,
– কিহ্!!!
– কিছু না!
– বলুন…
– আবার শুনতে চাও?
আমি থতমত খেয়ে বললাম,
– না থাক!অফিস আওয়ারে কথা বলছেন,কেউ কিছু বলছে না?
– কে কি বলবে?এটা আমার বাপের অফিস!সাহস আছে কিছু বলার?
– বাবা কিছু বলেন না?
– আব্বু!!!সে নিজেই তো বউয়ের সাথে কথায় ব্যস্ত!
বলেই উনি হো হো করে হেসে উঠলেন!আমি হা হয়ে গেলাম!কিছুই বললাম না!কি বলা উচিৎ?বাপ-ছেলে সব এক!
উনি বললেন,
– আমি আসি?
– কোথায়?
– বাসায়!
কথাটা শোনামাত্রই বুকের ভেতর ধুঁক করে উঠলো!আমি শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুঁছে স্বাভাবিকের মতো প্রশ্ন করলাম,
– কেনো?
– একা আছো যে…
– তো?একা তো প্রতিদিন-ই থাকবো,তাই বলে কি প্রতিদিন অফিস না করে আমার কাছে এসে বসে থাকবেন?
হঠাৎ কলিংবেল বেঁজে উঠলো!কে আসলো?ইয়াশ নাকি?এখন আমি যাবো কিভাবে?
উনার সাথে কথা বলতে বলতে কোনোরকমে দেয়াল ধরে ধরে মেইনডোরের কাছে এসে ম্যাজিক আই-এ চোখ রাখতেই দেখলাম পুরোটুকু কালো হয়ে আছে!এরকম কেনো?নষ্ট হয়ে গেলো নাকি?বাহিরে কে আছে কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না!ভয় লাগছে খুব!কেউ নিশ্চয় হাত দিয়ে আটকে রেখেছে!আমি উনাকে বললাম,
– কে যেনো ম্যাজিক আই-এ হাত রেখে কলিংবেল বাজাচ্ছে?
– মাই গড!!!সিরিয়াসলি?
– হুম!
আবার বাঁজালো!আমি ভীতকন্ঠে উনাকে বললাম,
– কি করবো?
– আবার তাকাও….দেখো হাত সরিয়েছে কিনা?
আমি চোখ রাখতেই দেখলাম ইফাজ বাহিরে দাড়িয়ে আছেন!একহাতে ফোন কানে ধরে আছেন,অন্যহাত প্যান্টের পকেটে!উনাকে দেখামাত্রই আমার বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো!
.
আমি পেট থেকে হাত সড়িয়ে দ্রুত দরজা খুলে উনাকে বললাম,
– আপনি এতক্ষণ……?
উনি হাসি হাসি মুখ নিয়ে আমার দিকে দুইহাত প্রসারিত করলেন।ইশ্!এখন যদি স্বাভাবিক থাকতাম,আমি একমুহূর্তও অপেক্ষা না করে দৌড়ে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরতাম!আমার হাত-পা রীতিমতো কাঁপছে!কি করা উচিৎ এখন আমার?উনার কাছে যেতে নিলে তো এখন আমাকে ল্যাংড়াতে হবে!
.
আমি নিজেই উল্টো দুইহাত উনার দিকে প্রসারিত করে উনাকে কাছে ডাকলাম!উনি কিউট একটা হাসি দিয়ে ঝট করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন!
– টিয়াপাখি!
– হুম…
– কান্না করছিলে?
হঠাৎ উনার কথাটা শুনে আমি চঁমকে উঠলাম!উনি বললেন,
– একা একা থাকতে বেশি কষ্ট হয়?
আমি কিছুই বললাম না!উনি আমাকে স্মুথলি কোলে তুলে নিলেন!এতক্ষণ এটাই তো চাচ্ছিলাম!কঁপালে চুঁমু দিয়ে ভেতরে এসে মেইনডোর লাগিয়ে দিলেন!উনার বুক থেকে মাথা না উঠিয়েই বললাম,
– ওভাবে ম্যাজিক আই-এ হাত রাখাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!
– সরি ইফায়া,ফাহিয়া,হিয়াজ,টুন-টুনির মা!
হঠাৎ উনার এরকম কথা শুনে আমি চোখ ছোট ছোট করে উনার দিকে তাকালাম!উনি আমার নাকের সাথে নাক ঘষে জিজ্ঞেস করলেন,
– এভাবে তাকাচ্ছো কেনো?ভুল বললাম নাকি?
– উহু!
.
উনি কিছুক্ষণ আমাকে নিয়ে পুরো বাসা রাউন্ড দিয়ে রুমে নিয়ে এলেন!বেডে বসানোর আগে ফিসফিস করে বললেন,
– সরি!
আমি ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
– কেনো?
– আমাকে যে আবার তোমাকে একা রেখে অফিস যেতে হবে!
বলেই আমাকে বেডে বসিয়ে উনি আমার পায়ের কাছে হাঁটুগেড়ে বসলেন!আমি ভয়ে চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম!বুঝে গেলেন নাকি?
হঠাৎ উনি পকেট থেকে একজোড়া নূপুর বের করে পরিয়ে দিলেন!আমি হাঁ হয়ে কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম!
হঠাৎ উনি আমার দুইপায়ে নুপূরের উপর চুঁমু খাওয়ার ভঙ্গিমা করে মুখ আগাঁতেই আমি দ্রুত পা সড়িয়ে নিয়ে বললাম,
– করছেন কি!!!
উনি সেদিকে ভ্রুঁক্ষেপ না করে আমার দুই’পা টেনে কাছে নিয়ে চুঁমু খেয়ে বললেন,
– এতো ঢং কোত্থেকে শিখেছো?
ডান পায়ের টাখনুর দিকটায় বেশি ব্যাথা পেয়েছি,সেই জায়গায়-ই উনি শক্ত করে চেঁপে ধরে আছেন!মনের গহীন থেকে ভীষন জোরে একটা চিৎকার বেরিয়ে এলো,যেটা গলা অব্দি এসে থেমে গেলো!
উনি হ্যান্ডওয়াচের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– আজ আর অফিসে যাওয়ার দরকার নেই!বাবুদের মা’কেই সময় দেই বরং!বাবুদের মা’কে আজ একটু বেশিই মন খারাপ দেখাচ্ছে।উদাসীন!উদাসীন!
– আজ একটু ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবেন!প্লিজজজ…..
হঠাৎ আমার এরকম কথা শুনে উনি ভ্রুঁ কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললেন,
– কেনো!!!এনিথিং রং?
.
.
#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 59
.
.
ইফাজের কথার প্রতিত্ত্যুরে আমি কিছুই বললাম না।ইফাজ বললেন,
– ওকে!কিছু বলতে হবে না।তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নাও।
– আমি এটা পরেই যাবো।শাড়িটা একেবারে নতুন।একদিন মাত্র পরেছি।
আমার এইমুহূর্তে খুড়িয়ে খুড়িয়ে উনার সামনে দিয়ে হেঁটে আলমারি থেকে শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে যেয়ে চেঞ্জ করে আসার কোনো ইচ্ছে নেই।উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন,
– নামো।
– উহু….আমাকে গাড়ি পর্যন্ত কোলে করে নিয়ে যেতে হবে।
আমার কথা শুনে উনার চেহারা ঝলমল করে উঠলো!মনে হলো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন!ঝট করে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে কিউট একটা হাসি দিয়ে বললেন,
– এতো মিষ্টি কেনো তুমি!!!
আমি উনার বুকে মুখ লুকিয়ে বললাম,
– বাবুদের বাবা মিষ্টি খেতে খুব পছন্দ করেন তো,তাই!
কথাটা বলেই আমি শক্ত করে চোখ বন্ধ করলাম!উনি প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলেন,
– ইয়া খোদা!!!এটা কি বললে টিয়াপাখি!
আমি লজ্জায় কিছু বললাম না।উনি আমাকে অনেকটা উপরে তুলে সকালের কামড়ের জায়গায় আরেকটা কামড় লাগিয়ে বললেন,
– আমার ডায়াবেটিকস কেনো হচ্ছে না!আমি তো নিয়ম করে প্রতিদিন খাটি মিষ্টি খাই!
উনার কথা শুনে আমি উনার ব্লেজারের কলার টেনে ধরে বললাম,
– দেরি হয়ে যাচ্ছে তো!একটু পর ইয়াশ চলে আসবে।
উনি আমার পুরো মুখ চুমোয় ভরিয়ে দিয়ে
বেরিয়ে পরলেন!
.
চেকআপ করিয়ে ডক্টর দেখাতে দেখাতে প্রায় তিনঘন্টার মতো লেগে গেলো।রিপোর্ট নরমাল!তেমন কিছুই হয়নি!ভীষন টেনশনে ছিলাম এই কয়েকঘন্টা!নিজের কেয়ারলেসের জন্য ওদের কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে সেইমুহূর্তেই শেষ করে ফেলতাম!বাসায় যেয়ে যোহরের সাথে কয়েক রাকায়াত নফল নামাযও পড়তে হবে!উফ্ এই টেনশনে মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে!
উনি আমাকে গাড়িতে বসিয়ে সিটবেল্ট লাগিয়ে দিয়ে নিজে যেয়ে সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।ইয়াশটা ফ্লাটের সামনে গাড়িতে বসে ওয়েট করছে আমাদের জন্য।একটু আগে ইয়াশের ড্রাইভার ফোন করে জানালেন ইফাজকে।
পনেরো মিনিটে ফ্লাটে পৌছে গেলাম।ইয়াশের গাড়ি ফ্লাটের সামনে রাখা ছিলো।আমি গাড়ি থেকে নেমে ইয়াশের সাইডের জানালার কাঁচে টোকা দিলাম।সাথে সাথেই ইয়াশ দরজা খুলে লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ভাবি!
– সরি সোনা!
– ফ্লাটে যেয়ে যখন মেইনডোর লক করা দেখলাম জানো কত ভয় পেয়েছিলাম?
ডক্টরের কাছে কেনো গিয়েছিলে?
আমি হেসে ইয়াশের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
– গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম,সেজন্য!
এই একই কথা উনাকে বলে এইযাত্রায় বেঁচে গিয়েছি!খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে দেখে যেভাবে জেরা শুরু করেছিলেন,উফ্!আর একটু হলে ধরা পড়ে যেতাম!আমি ইয়াশকে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
.
.
রাতে সবার ডিনার শেষে রাত সাড়ে নয়টার দিকে নাফিসার কল এলো।ইফাজ অফিসের কাজে ব্যস্ত আর ইয়াশ স্কুলের পড়ায়।আমি উঠে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রইংরুমে চলে এলাম।কল রিসিভ করে বললাম,
– কেমন আছিস?
– আছি ভালো।তোমার কি অবস্থা?
– ভালো।নাম্বার পেলি কোথায়?
– ভাইয়ার কাছ থেকে নিলাম।বাবু কেমন আছে?
– আর বলিস না বোন।আজ সকালের দিকে পড়ে গিয়েছিলাম।দুপুরের দিকে ডক্টর দেখিয়ে এলাম।পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছিলাম বাট মন মানছিলো না তাই ডক্টর দেখিয়ে শিওর হয়ে এলাম।
নাফিসা অবাক কন্ঠে বললো,
– মাই গড!!একটু তো দেখেশুনে হাটবে,নাকি?ভাইয়া কিছু বলেনি?
– ইফাজ জানে না।উনাকে যাস্ট চেকআপ করানোর কথা বলে নিয়ে গিয়েছি।
– কি বলো?টেরও পেলো না?
– হসপিটালে যাওয়ার সময় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে একবার জিজ্ঞেস করেছিলো এভাবে কেনো হাটছি,আমি কোনোরকমে বলে দিয়েছি গাড়ি থেকে নামতে নিয়ে একটু ব্যাথা পেয়েছি।আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি,আমাকে ধরে ধরে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো।
– তুই এমন চাঁপা স্বভাবের কেনো আপু?ভাইয়াকে বলে দেওয়াই কি বেটার ছিলো না?যা সত্যিটা বলে আয়।
– নো ওয়ে!আমাকে খতম করে দিবে।আর এইমুহূর্তে আমিও সুস্থ আছি,বাবুও সুস্থ।শুধু শুধু এখন কথা উঠিয়ে লাভ নেই।
– ফোন রাখ তুই।
– আরে রাগ করছিস কেনো?
– বাই।
নাফিসা কেটে দিলো।আমি কিছুক্ষণ হা হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
রুমে ঢুকতেই দেখলাম ইফাজ ফোনে কাউকে জিজ্ঞেস করছেন “তুমি কেমন আছো?”
আমাকে হাতের ইশারায় উনি কাছে ডাকলেন।আমি ইয়াশের পাশে গিয়ে বসলাম।ইফাজ হঠাৎ বলে উঠলো “আজ চেকআপ করাতে তোমার বোনকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম!দুজনই সুস্থ আছে!”
কথাটা শোনামাত্রই আমি উনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কে ফোন করেছে?উনি ঠোঁটের ইশারায় বললেন “নাফিসা”
সাথে সাথেই আমার গলা শুঁকিয়ে এলো!নাফিসা নিশ্চিত উনাকে বলে দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছে!
আমি আর একমুহূর্তও অপেক্ষা না করে ইয়াশের বই,খাতা,ব্যাগসহ ইয়াশকে নিয়ে অন্যরুমে এসে দরজা লক করে দিলাম।উনি আজ আমাকে শেষ করে ফেলবেন!ভয়ে হাত-পা কাঁপছে!ফাযিল মেয়ে একটা!
আমি ইয়াশকে পড়ানোতে মন দিলাম।ইয়াশ হোমওয়ার্ক শেষ করে সব পড়া কমপ্লিট করে শুঁয়ে পরলো।আমি ইয়াশের বই-খাতা গুঁছিয়ে রেখে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে শুঁতেই ইয়াশ বললো,
– ভাবি!
– ঘুমোয় নি এখনো?
– উহু।মাথায় বিলি কেটে দাও।
আমি ইয়াশের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে উনার কথা ভাবছি।উনি নিশ্চয় রেগে আছেন।কি করছেন কে জানে!
.
সাড়ে এগারোটায় দরজায় নক করার শব্দে লাফ দিয়ে উঠলাম!ইয়াশ অঘোরে ঘুমোচ্ছে!আমি বেড থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে পরলাম।উনি একের পর এক নক করেই যাচ্ছেন,কোনো ডাকাডাকি করছেন না!আমি বুকে হাত দিয়ে দরজার সাথে মাথা ঢেকিয়ে দাড়ালাম!এখন বকা খাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই!
– দরজা ভেঙ্গে ফেলবো নাকি খুলবে?
আমি কয়েক কদম পিছিয়ে বুকে থুঁথুঁ দিলাম!হঠাৎ কথা বলাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!
উনার কন্ঠ খুব গম্ভীর শোনালো!খুব রেগে আছেন মনে হচ্ছে!আমি পেটে হাত রেখে বললাম,
– তোদের বাবা-টা না বড্ড রাগী!
হঠাৎ দরজায় ভীষন জোরে আওয়াজ হলো!পা দিয়ে লাথি দিলেন মনে হলো!আমি আর একমুহূর্তও দাড়িয়ে না থেকে দরজা খুললাম!বেশি দেরি করলে সর্বনাশ!
দরজা খোলার সাথে সাথেই উনি একঝটকায় আমাকে কোলে তুলে অন্যরুমে নিয়ে গিয়ে বেডের উপর বসিয়ে হাতদুটো মুষ্টিবদ্ধ করে আমার সামনে দাড়ালেন!উনার হাতের রগ ফুঁলে উঠেছে!ভয়ে উনার দিকে তাকাচ্ছি না পর্যন্ত!আমার বুকের ভেতর ঢিঁপঢিঁপ শব্দ হচ্ছে!
আমি বুকে আনলিমিটেড সাহস এনে মাথানিচু করে উনার মুষ্টিবদ্ধ হাত শক্ত করে ধরে বললাম,
– সরি!
উনি চুপচাপ!কোনো কথা বলছেন না!এদিকে আমার আত্মার পানি শুঁকিয়ে যাচ্ছে!আমি গুঁটিশুঁটি মেরে হাটুর উপর মাথা ঠেকিয়ে বললাম,
– অ্যা’ম স্যরি!প্লিজজজ….
– ডক্টরের কাছে এইজন্য গিয়েছিলে?
আমি ভয়ে উত্তর দিলাম না!উনি ধঁমকে উঠলেন!সাথে সাথেই আমি মাথা নেড়ে “হ্যা” সূচক উত্তর দিলাম!উনি প্রায় চিৎকার দিয়ে বললেন,
– সমস্যা কি তোমার,হুম?
উনার চিৎকারে আমার হাত-পা ন্যানো-গতিতে কাঁপছে!আমি দাতে দাত চেঁপে শক্ত করে চোখ বন্ধ করে একপায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে অন্যপায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে খোঁচাচ্ছি!
.
অনেকক্ষণ হলো উনি কোনো কথা বলছেন না!আমি হাঁটু থেকে মাথা একবারও তুলি নি!উনি কি আদৌও রুমে আছেন?থাকলে চেঁচাচ্ছেন না কেনো?ইফাজের নিরবতা বড্ড ভয়ঙ্কর!বুকের ভেতর ধুঁকধুঁক করছে!আমি হালকা মাথা উপরে উঠিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম কি করছেন উনি?সেই একই অবস্থায় দাড়িয়ে আছে,হাতের রগ মনে হচ্ছে আরো ফুঁলে উঠেছে!আমি একসেকেন্ডও অপেক্ষা না করে দ্রুত বেড থেকে নেমে উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– স্যরি আমার একশো-সন্তানের জনক!প্লিজ মাফ করে দাও,প্লিজ!আর কখনো হবে না এরকম!প্লিজ….একটু জড়িয়ে ধরো,ভয় পাচ্ছি খুব!আমি এখন থেকে দেখেশুনে হাঁটবো!কোনো প্রবলেম হলে জানাবো!আমি ভয়ে-ই কিছু জানায়নি!সব তো ঠিকঠাক আছে,আমারও কিছু হয়নি তোমার সন্তানেরও কিছু হয়নি!তুমি দুপুরে বলছিলে না এতক্ষণ ধরে কিসের নামায পড়ছি আমি,ওদের জন্য নফল নামায পড়ছিলাম।প্লিজ…..জড়িয়ে ধরো নাহলে এখনই ভয়ের চঁটে অজ্ঞান হয়ে যাবো!
ইফাজ সাথে সাথেই জড়িয়ে ধরে বললেন,
– ধরেছি টিয়াপাখি!প্লিজ শান্ত হও!এভাবে কাঁপছো কেনো?রিলেক্স….প্রবলেম হবে তো!উফ্, তোমাকে দেখছি দোষ করলেও বকা দেওয়ার সাধ্য নেই আমার!এতো ভয় মানুষ পায়?তাও আবার হাজবেন্ডকে!
.
আমি ঘাঁমছি!হাত-পা কাঁপুনি আরো বেড়েছে!উনি আমাকে বেডে বসিয়ে পানির গ্লাস এনে আমাকে পানি খাঁইয়ে দিয়ে বললেন,
– এরকম ভয় আর কোনোদিন দেখাবো না,প্রমিজ!কাঁপাকাঁপি বন্ধ করো,প্লিজ!তোমার প্রবলেম হবে তো,রিলেক্স হও!দেখো আমি একদম নরমাল!
আমি কাঁপাকাঁপা ঠোঁটে ছলছল চোঁখে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুঁয়ে পরলেন!
.
.
(চলবে)