#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 50+51
.
.
আমার জীবন থেকে একটা একটা করে দিন হারিয়ে যেতে লাগলো!সাথে সাথে বড় হতে লাগলো আমার ভেতরের ছোট্ট একটা জীবন!
.
রাতে আন্টির রুমে সময় কাটানোর জন্য আন্টির সাথে টুকটাক কথা বলছিলাম!হঠাৎ রুম থেকে ইফাজের চিৎকার শুনতে পেলাম।চিৎকার করে হিয়া!হিয়া! বলে ডাকছিলেন!আন্টি অন্যকিছু ভেবে মিটমিট করে হেসে বললেন,
– যাও!ডাক পরেছে!
কিন্তু আমার মোটেও অন্যকিছু মনে হলো না।সিরিয়াস কিছু মনে হচ্ছে!আমি “আচ্ছা মা,আসছি!” বলে আন্টির কাছ থেকে চলে এলাম।রুমের দরজার কাছাকাছি আসতেই উনি একপ্রকার হাত টেনে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা লক করে দিলেন!আমি বেডে বসতে যাবো সেইমুহূর্ত বেডের মাঝখানের দিকে চোখ পরলো।নীল কাগজে মোড়ানো সেই প্যাকেট!আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার দুইবাহু ধরে দাড় করিয়ে প্যাকেটটা আমার সামনে ধরে বললেন,
– কি এটা?
আমার হাত-পাসহ পুরো শরীর কাঁপছে! কি জবাব দিবো এখন উনাকে আমি!উনি আমাকে ঝাঁকি দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন,
– চুপ করে থেকো না!বলো….এটা কি?
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
– স..সরি!
উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বেডের উপর ফেলে দিলেন!আমার গাল বেঁয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো!উনি বেডসাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে সজোরে ছুড়ে ফেললেন!পুরো রুমে টুকরো টুকরো কাঁচ ছড়িয়ে পরলো!দেয়ালে হাত দিয়ে কয়েকটা বাড়ি দিলেন!উনার কান্ড দেখে ভয়ে আমার কলিজার পানি শুঁকিয়ে যাচ্ছে!ভয়ে গলা কাঁপছে!কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাঁম!উনি প্যাকেটটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে পা দিয়ে পিষিয়ে ফেললেন!আমার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন!আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম!ওই চোখে চোখ রাখার মতো সাহস আজ আমার নেই!উনার নিশ্চয় এইমুহূর্তে আমাকে কয়েকটা চড় মারতে ইচ্ছে করছে!আমি প্রস্তুত উনার হাতের চড় খাওয়ার জন্য!অন্তত উনার এই কঠিন নিরবতা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে!উনি আমার দিকে এগিয়ে এলেন!আমি সাথে সাথেই চোখমুখ শক্ত করে বন্ধ করলাম উনার চড় খাওয়ার জন্য!উনি দাতে দাত চেঁপে কটমট করে বলে উঠলেন,
– এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার নিজের হাজবেন্ডকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না?
উনার কথা শুনে চোখ খুলে উনার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে নিচুস্বরে বললাম,
– সরি!
উনি রেগে গিয়ে বললেন,
– সরি মাই ফুট!!!এইমুহূর্তে তোমাকে কয়েকটা চড় মারতে ইচ্ছে করছে!
– তো মারুন না!
– কিহ্!!!
আমি পা’দুটো বেডের উপর তুলে গুঁটিশুটি হয়ে বসে পরলাম!উনি বেডের কোনায় পা দিয়ে প্রচন্ড জোরে একটা লাথি দিলেন!পুরো বেড কেঁপে উঠলো!এতো শক্তিশালী বেডও উনার ভয়ে কাঁপে?ওহ্ মাই গড!
.
উনি আমার সামনে বসে আমার মুখটা উপরে তুলে বললেন,
– এতোদিন আমি ভেবেছিলাম আমি বেশি বেশি খাওয়াচ্ছি বলে দিনদিন তোমার ভুড়ি বাড়ছে!আমার ধারনাটা যে এতোদিন ভুল ছিলো সেটা আমি টেরই পেলাম না!
উনার কথা শুনে আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করলেন!আমার সামনে থেকে উঠে গিয়ে দেয়ালের সাথে একহাত ঠেকিয়ে বললেন,
– আমি কতটা টেনশনে থাকি সেটা একমাত্র আমি জানি হিয়া!সেইরাতের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজটা এখনো আমার কানে বাঁজে!তোমার দেখা সেই স্বপ্নটা এখনো আমার মনে পড়ে!আজও ভুলিনি!আজ যখন তোমার কাপড়-চোপড়ের মধ্যে ওটা পেলাম ঠিক সেইমুহূর্তে আমার পুরো দুনিয়াটা ওলট-পালট হয়ে গেলো!আমি ভাবতেও পারছি না তুমি আমাকে না জানিয়ে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত একা একা নিয়েছো!
আমি কিছুই বললাম না!উনি আবার বলতে শুরু করলেন,
– কালই আমরা ফ্লাটে উঠবো!রেডি থেকো!আম্মু একবার টের পেলে আমাকে খুন করে ফেলবে!
কথাটা বলেই উনি মাথার চুল কিছুক্ষণ টেনে ধরে থাকলেন!ছেড়ে দিয়ে আবার বললেন,
– চারমাস পর ফ্লাটে উঠবো,একবছর স্টাডি থেকে দূরে থাকবো,একবছর পর হানিমুনে যাবো!এতোগুলো স্ট্রং হিনটস্ আমার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছিলো!তবুও টের পেলাম না?
আমি বেড ছেড়ে উঠে উনার কাধে হাত রাখার সাথে সাথেই উনি এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে দিলেন!কিন্তু আমার দিকে ঘুরলেন না!পেছন ফিরে আছেন!আমি বুকে অনেক সাহস এনে উনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম!উনি ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না!কিছুক্ষণ পর নিজেই আমার হাতের উপর হাত রেখে বললেন,
– তুমি আমাকে অনেক বড় একটা টেনশনে ফেললে টিয়াপাখি!অনেক বড়!আজকের পর থেকে আমি রাতে ঘুমাতে পারবো কিনা সন্দেহ!অফিসে গেলেও শান্তি পাবো না!কেনো করলে এটা?স্বপ্নটার কথাও তো একবার মনে করতে পারতে!
আমি উনার পিঠে মাথা রেখে বললাম,
– কিভাবে স্বপ্নটার কথা মনে করবো?সেটা দেখেছিলামই তো তিনদিন পর!তখন আমার কিচ্ছু করার ছিলো না!
– আমাকে একবার ইনফর্ম করতে পারতে?এটা কেনো করলে না?
– আমার ভয় হচ্ছিলো!আপনি যদি ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়ে অন্যকিছু করে বসেন!
– নিচের বাচ্চাকে নষ্ট করার মতো নোংরা ম্যান্টালিটি আমার না!এরকম চিন্তাভাবনা তুমি আমার সম্পর্কে করলে কিভাবে?স্পিচলেস…..
– সরি…আমি ওটা মিন করিনি তো…
– এটাই মিন করেছো তুমি!
– আপনি শুধু….
– আর একটা কথাও শুনতে চাচ্ছি না আমি!দেখি ছাড়ো আমায়!
আমি উনাকে আগের থেকেও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বললাম,
– ছাড়বো না!
– হিয়া!
– বললাম তো…ছাড়বো না!
– এখন কিন্তু মাইর লাগাবো!ছাড়ো বলছি…
– কালা কোথাকার!বারবার বলছি ছাড়বো না!শুনতে পাচ্ছেন না?
– কি বললে তুমি?
– বাধ্য হয়েছি বলতে!সরি…
– উফ্!এই সরি জিনিসটা আমার সামনে আর কোনোদিন উচ্চারন করবে না!আই হেইট দিজ ওয়ার্ড!
ছাড়ো এখন…
– উহু!
– এইমুহূর্তে আমার মাথা প্রচন্ড গরম!রাগের মাথায় যেকোনো কিছু করে বসতে পারি!আমি মোটেও চাচ্ছি না রাগটা তোমার উপর পরুক!
– আমি চাই!
উনি আমার দিকে ঘুরে বললেন,
– তুমি পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছো হিয়া!এরকম লো ম্যান্টালিটি কবে থেকে হলো তোমার?যাকে এতো ভালোবাসি তার গায়ে হাত তুলবো তারউপর সে প্রেগন্যান্ট!!!
আজ উনার কোনো কথাই আমার মাথায় ঢুকছে না।আমি নির্লিপ্ত চেহারা নিয়ে উনার বুকে মাথা রেখে বললাম,
– তোমার সেদিনের কান্নাজড়িত কন্ঠে বলা “আমি বেবি চাই টিয়াপাখি!যাস্ট একটা বেবি!” কথাটা শুনেই আমার বুক কেঁপে উঠেছিলো!নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি!সেজন্যই এতোবড় একটা সিদ্ধান্ত একা একা নিয়েছি!মাফ করে দাও না!
– এই মেয়ে আমাকে পাগল করে ছাড়বে!সিরিয়াস মুডে পানি ঢেলে দিলো!এইমুহূর্তে তুমি করে না বললেই কি চলছিলো না?
– বাসররাতে কথা দিয়েছিলাম তোমাকে!তুমি যেদিন আমার উপর রেগে থাকবে,আমি সেদিন এভাবে তোমার রাগ ভাঙ্গাবো!মনে নেই?
উনি আর কিছুই বলতে পারলেন না!আমাকে নিজের বাহুডোরে বন্দি করলেন!
অনেকক্ষণ ধরে পুরো রুমে নিরবতা বিরাজ করছে।কেউ কোনো কথা বলছি না!দুজনেই চুপচাপ!
.
উনি আমার মাথায় চুঁমু দিয়ে বললেন,
– পৃথিবীতে মনে হয় আমার মতো আর একটাও হতভাগা নেই,তাই না টিয়াপাখি?
– এটা কেনো বলছেন?
– আমার রাগ কিন্তু এখনো কমে নি!
– আমি জানি কমেছে!এখন বলুন..নিজেকে হতভাগা কেনো বললেন?
– এই যে,যেই মানুষটার বাবা হওয়ার এতো ইচ্ছা!সেই মানুষটাই বাবা হবে শুনেও ভয়ে আনন্দটুকুই উপভোগ করতে পারছে না!আনন্দের থেকে ভয় পাচ্ছে বেশি!
– আল্লাহ্কে ডাকুন!দেখবেন কিচ্ছু হবে না!
– সেটা তো প্রতিনিয়ত আমার হার্টবিটের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে!
– সব ঠিক হয়ে যাবে!বাদ দিন এসব!
– ভয় হয় যে খুব!
.
আমি পরিবেশটা ঠান্ডা করার জন্য উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– মিষ্টি মুখ করবেন না?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকিয়ে বললেন,
– ফ্রিজে মনে হয় মিষ্টি নেই!তুমি থাকো আমি একদৌড়ে…..
আমি উনাকে আর বলতে দিলাম না!হাত দিয়ে উনার মুখ চেঁপে ধরলাম!উনি চোখ বড় বড় করে ভ্রুঁ কপালে উঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন “কি?”
আমি উনার মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে উনার দু’পায়ের পাতার উপর দাড়িয়ে একটু উঁচু হয়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম!সাথে সাথেই উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন!আমি দুইহাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে উনার গালের খোঁচা খোঁচা দাড়িতে স্লাইড করে উনার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে ডিভলি একটা কিস করলাম!যেটার জন্য উনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না!ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথেই উনি কম্পিত কন্ঠে বলে উঠলেন,
– টিয়াপাখি!তুমি নিজে থেকে….ওহ্ মাই গড!!!
– রুমের মধ্যে মিষ্টি থাকতে পুরো দুনিয়া ঘুরে কেনো মিষ্টি আনতে হবে?
আমার কথা শুনে উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকাতেই আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললাম!
.
.#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 51
.
.
পরেরদিন সকালের দিকে আমি ইয়াশকে নিয়ে ইফাজের সাথে নতুন ফ্লাটে উঠলাম!ইয়াশের স্কুল এখান থেকে অনেক দূর!আন্টি ওকে আমার সাথে পাঠাতে চাচ্ছিলেন না কিন্তু আমি আগেরদিন রাতে ইয়াশকে সব বলেছি যারফলে ইয়াশের জেদের কারনে ওকে আমার সাথে আনতে সুবিধা হয়েছে!
.
ফ্লাটে ঢুকতেই আমি চমকে উঠলাম!আমার বার্থডের সেই সাজটা এখনো ওভাবেই আছে!বেলুনগুলো নিচে পড়ে আছে!তারমানে আমার বার্থডের পর উনি আর একবারও ফ্লাটে পায়ের ধূলো দেননি!অনেকগুলো বেলুন চুপসে আছে!ইয়াশ আমার হাত টেনে ভেতরে নিয়ে বেলুনগুলো আমার দিকে ছুড়তে লাগলো!আমি সেগুলো ধরার চেষ্টা করলাম!আনফরচুনেটলি সবগুলোই হাত ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে!ইয়াশ লাফিয়ে লাফিয়ে সবগুলো বেলুন ফাটালো!আমি হার্টশেপের লাল একটা বেলুন তুলে উনার সামনে ধরলাম!ঠোঁটের ইশারায় উনাকে বললাম “আই লাভ ইউ”
উনি আমার কান্ড দেখে চোখ ছোট ছোট করে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলেন!আমার হাত থেকে বেলুনটা নিয়ে ফাঁটিয়ে ফেললেন!আমি ঠোঁট উল্টিয়ে রাগ করার ভঙ্গিমা করতেই উনি নিচ থেকে সেইম আরেকটা বেলুন তুলে আমার সামনে ধরে আমার মতো ঠোঁটের ইশারায় বললেন “আই লাভ ইউ টু”
আমি হেসে উনার হাত থেকে বেলুনটা নিয়ে আমার পেটের উপর ধরে ইশারায় বললাম “ইওর লাভ!”
.
আমার কান্ড দেখে উনি কিউট একটা হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করতেই আমি উনার সামনে থেকে চলে আসলাম!ইয়াশ বেলুন ফাঁটাতে ব্যস্ত!আমি বেডরুমের দিকে পা বাড়ালাম!বেডরুমের দরজা খুলতেই দেখলাম ফুলের পাঁপড়িগুলো পঁচে চাদরের সাথে লেপ্টে আছে!ছিঃ!
আমি শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে বেডের কাছে গিয়ে একটানে চাঁদর ফ্লোরে ফেলে দিলাম!আলমারি খুলতেই দেখলাম আলমারির মধ্যে সব শাড়ি রাখা!না আছে কোনো শার্ট-প্যান্ট আর না আছে আদারস্ ক্লোথ!এটা নিশ্চয় উনার কাজ!আমি ড্রইংরুমে এসে উনাকে কয়েকটা চাদর আনতে বললাম!উনি বললেন,
– এখন আমি ক্লান্ত!পাশের রুমের চাদরটা আপাতত বিছিয়ে রাখো!
বাহ্!বুদ্ধিটাতো মন্দ নয়!আমি দ্রুত পাশের রুম থেকে চাদরটা নিয়ে আমাদের বেডরুমে পারলাম!
কিচেনে এসে দেখলাম কিচেনের উপর-নিচ পুরো ফাঁকা!একটা পিঁপড়াও নেই কিচেনে!জিনিসপত্র থাকলেই না পিঁপড়া থাকবে!খাবো কি তাহলে আজ?
.
আমি কিচেন থেকে সোজা ড্রইংরুমে এসে উনাকে কিচেনের যাবতীয় সবকিছু কিনে আনতে বললাম!উনি সোফায় শুয়ে বললেন,
– আমি বাইরে থেকে খাবার কিনে আনবো!কিচেনে ঢুকতে হবে না তোমার!
উনার কথা শুনে আমার নিজেকে কিছুক্ষণের জন্য মাথামোটা মনে হলো!আমি তো উনাকে বলতেও পারতাম বাহির থেকে খাবার কিনে আনুন!বাসায় খাওয়ার মতো কিছুই নেই!
সেটা না বলে আমি কিচেনের যাবতীয় জিনিসগুলো কেনো আনতে বললাম?
.
আমি চুপচাপ বেডরুমের দিকে পা বাড়ালাম!ইয়াশ পেছন পেছন আসলো!দুজন বেলকুনিতে চলে গেলাম!সুন্দর একটা দোলনা ঝুলানো!আমি ইয়াশকে নিয়ে দোলনায় বসে পরলাম!পা দিয়ে ফ্লোরে সামান্য ধাক্কা দিয়ে পা’দুটো উপরে তুলে ফেলছি!ইয়াশ দাড়িয়ে পরলো!একহাতে আমার কাধ অন্যহাতে দোলনা ধরে দাড়িয়ে আছে!ইয়াশ আমাকে বললো,
– কাল আমি স্কুলে যাবো কিভাবে?
– কেনো?গাড়িতে যাবে!তোমার ভাইয়ার সাথে!
– স্কুল তো এখান থেকে অনেকদূর!ভাইয়া জীবনেও নিয়ে যাবে না!
– তো সমস্যা কি?আমি নিয়ে যাবো!
আমার কথা শুনে ইয়াশ লাফ দিয়ে পাশে বসে পরলো!আমার একহাত জড়িয়ে ধরে বললো,
– সত্যিই?
– হুম!
.
উনি বেলকুনিতে এসে বললেন,
– কি হচ্ছে এখানে?
আমি ইয়াশ দু’জনই উনার দিকে তাকালাম!ইয়াশ বলে উঠলো,
– কাল ভাবী আমাকে স্কুলে দিয়ে আসবে।তুমি যাবে?
ইয়াশের কথা শুনে উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– একদম না টিয়াপাখি!এখন থেকে আমি যেটা যেটা করতে বলবো ঠিক সেটা সেটাই করবে!কথার এদিক সেদিক হলেই কপালে দুঃখ আছে…বলে দিলাম!
– তাহলে ইয়াশকে কাল স্কুলে নিয়ে যেতে হবে!পারবেন?
– সম্ভব না!
– তাহলে দেখছি আমাকেই নিয়ে যেতে হবে!
আমার কথা শুনে উনি রেগে গিয়ে বললেন,
– রাগ উঠাচ্ছো কিন্তু তুমি আমার!
– এখানে রেগে যাওয়ার কি হলো?আপনি ইয়াশকে নিয়ে যাবেন,আমাকেও নিতে দিবেন না!ও যাবে কিভাবে তাহলে?
– আমি কালই ইয়াশকে বাসায় দিয়ে আসবো!আম্মু নিয়ে যাবে!
উনার কথা শুনে আমি চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,
– খবরদার না!আমি বাসায় আবার ফেরত পাঠানোর জন্য কি ইয়াশকে নিয়ে এসেছি?সারাদিন নিজে থাকবে অফিসে পড়ে এদিকে আমাকে একা রেখে!এতো বড় ফ্লাটে একা একা আমি কি করবো?আমি যতদিন এই ফ্লাটে থাকবো ঠিক ততদিন ইয়াশও আমার সাথেই থাকবে!
– এভাবে চিল্লানোর কি হলো?জানোনা প্রেগন্যান্ট অবস্থায় এভাবে চিৎকার করতে নেই?ভালোভাবে বললেই তো বুঝে যাই!
উনার কথা শুনে আমি নিচুস্বরে নরমকণ্ঠে বললাম,
– কাল ইয়াশকে স্কুলে নিয়ে যাবেন!এবার ভালোভাবেই বলেছি…বুঝতে পেরেছেন?
উনি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,
– ঠিক আছে!ঠিক আছে!জ্বালিয়ে মারলো দুইজন!ইয়াশটাকে আমি দেখে নিবো…..বড় হোক আগে!
.
উনি দুপুর,বিকাল,রাত তিন ওয়াক্তের খাবারই বাহির থেকে নিয়ে এসেছেন!রাতে ডিনার করে আমি ইয়াশকে নিয়ে বেডরুমে শুঁয়ে পরলাম!ইয়াশ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– ভাবি,কতদিন পর আবার তোমার সাথে ঘুমাবো,তাইনা?
– হুম!এতোদিন আসোনি কেনো?
-আম্মু বলেছে আমাদের ওই বাড়িতে নাকি একটা জ্বীন আছে!প্রতিরাতে জ্বীনটা নাকি তোমার উপর ভর করে! সাথে সাথেই তুমি নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলো!তখন কাছে যাকে পাও তাকেই মেরে ফেলো!
কথাগুলো ইয়াশ ফিসফিস করে বললো!ইয়াশ ভয়ে আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আজ তো ও আর আসতে পারবে না তোমার কাছে,তাই না?
আমি কি উত্তর দিবো খুঁজে পাচ্ছিনা।এটা নিশ্চয় ইফাজের কাজ।বাঁজে লোক একটা!আমি ইয়াশের মাথায় চুঁমু দিয়ে বললাম,
– নাহ্!এই বাসায় ওই জ্বীন আর আসতে পারবে না!
.
উনি রুমে ঢুকে আমার পাশে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে টিভি অন করলেন।আমি উনার দিকে মাথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– এতোরাতে টিভি কেনো অন করলেন?সারারাত টিভি দেখার মতলব?
উনি আমার দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলেন,
– হুম!
– চলবে না!গেস্টরুমে গিয়ে দেখুন,যান!
– সাউন্ড বেশি জোরে দিবো না!
– তারপরও আমার কানে আসবে!ঘুমাতে পারবো না!তখন কিন্তু আমি অসুস্থ হ….
– হুশ!এগুলো কোন ধরনের কথা!যাচ্ছি তো আমি!আর কোনোদিন শুনলে হয়?
বলেই উনি পাশ থেকে উঠে চলে যাচ্ছিলেন!আমি উনাকে ডাকতেই উনি পেছন ফিরে তাকিয়ে বললেন,
– কিছু লাগবে?
– এতোদিন ইয়াশকে রাতে আমার থেকে দূরে রাখার টেকনিকটা আমি জেনে গিয়েছি!
আমার কথা শুনে উনি হেসে কাছে এসে আমার আর ইয়াশের কপালে একটা চুঁমু দিয়ে চলে গেলেন!
.
সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে তিনজন একসাথে আগে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম।লাগেজ থেকে ইয়াশের স্কুলড্রেস বের করে ইয়াশকে রেডি করিয়ে দিলাম।উনি শার্ট-প্যান্ট পরে মিররের সামনে দাড়িয়ে টাই ঠিক করছিলেন!আমি বেড থেকে ব্লেজার-টা নিয়ে উনার পেছনে দাড়ালাম!উনি মিররের ভেতর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কিউট একটা হাসি দিলেন!আমিও হেসে ব্লেজার-টা ধরতেই উনি হাত ঢুকিয়ে ব্লেজার-টা পরে নিলেন!হঠাৎ পেছন ফিরে আমার দুইগালে হাত রেখে কপালে একটা চুঁমু দিলেন!ইয়াশ বেডের উপর লাফাচ্ছিলো!উনি ইয়াশের হাত ধরে টেনে কাছে এনে ইয়াশের কপালেও একটা চুঁমু দিলেন!ইয়াশও ভাইয়ের কপালে চুঁমু দিলো!বেড থেকে লাফ দিয়ে নেমে ইয়াশ আমার হাত ধরে ড্রইংরুমে চলে এলো।উনি ইয়াশের ব্যাগটা পেছন পেছন এনে ইয়াশের হাত ধরে বললো,
– তাড়াতাড়ি চলো!লেইট হয়ে যাচ্ছে!
.
আমি ইয়াশকে ছেড়ে মেইনডোর খুলে দিলাম!ইয়াশ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আসি ভাবী!
আঁচমোকা উনিও আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– সাবধানে থাকবে কিন্তু!কোনো প্রবলেম হলে ফোন করবে!আর ওয়াশরুমে ঢুকতে সাবধানে ঢুকবে!এলোমেলো ঘোরাফেরা না করে চুপচাপ শুঁয়ে থাকবে!মেইড রাখা উচিৎ!আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি কি করা যায়!
আমি উনাকে ছেড়ে দিয়ে বললাম,
– হয়েছে হয়েছে!এতো টেনশন করার কিচ্ছু নেই!তাড়াতাড়ি আসুন লেইট হয়ে যাচ্ছে!
আমার কথা শুনে উনি হেসে কঁপালে আরেকটা চুঁমু দিয়ে বললেন,
– সাবধানে থাকবে কিন্তু!
বলেই বেরিয়ে গেলেন!ইয়াশ হাত নেড়ে টাটাহ্ দিলো!আমিও হাত নেড়ে ফ্লাইং কিস দিয়ে টাটাহ্ দিলাম!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here