#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 46+47
.
.
আমি দ্রুত একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলাম।উনি ওয়াশরুমে দরজায় নক করে আমাকে দরজা খুলতে বলছেন।আমি শুনছি না।উনি চিৎকার করে বলছেন,
– হিয়া!এভাবে কতক্ষণ দরজা লাগিয়ে রাখবে?দিনশেষে আমার কাছে জবাবদিহি করতেই হবে “একবছর আগে নয় কেনো?”
আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে!উনাকে সত্যিটা বলে দিবো নাকি আসল সময়টার অপেক্ষা করবো?
.
উনি সর্বশক্তি দিয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছেন।আমি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে দরজা খুললাম।উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনার চোখে ভয়ের ছাঁপ।আমার হাত ধরে টেনে বেডে বসিয়ে নিজে হাঁটুগেড়ে আমার সামনে বসে বললেন,
– ইদানিং তোমার কথাগুলো আমি নিতে পারছি না।কিরকম একটা ধোঁয়াশা লেগে থাকে তোমার কথায়।কি হয়েছে?আমাকে বলো…
আমি উনার দুইগালে হাত রেখে বললাম,
– শুধু শুধু চিন্তা করছেন আপনি।আমার কিচ্ছু হয়নি।এক বছর পর বলেছি দেখেই তো আপনার এতো টেনশন?ও’কে কালই চলুন।আমরা কালই হানিমুনে যাবো সবকিছু এরেঞ্জ করুন।
আমার কথা শুনে উনার ভয় যে কিছুটা কমেছে সেটা উনার চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।তারপরও পুরোপুরি কমাতে পারেন নি।
.
উনি আমার দুইহাত ধরে বললেন,
– কখনো কোনোকিছু লুকাবে না আমার কাছ থেকে।মনে থাকবে?
আমি ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে তুলে বললাম,
– ওকে।
– আমরা একবছর পরই যাবো হানিমুনে।রিমাইন্ডার দিয়ে রাখছি ফোনে।একদম ছাড় পাবে না আমার কাছ থেকে।
উনার কথা শুনে আমি লজ্জায় উনার কাছ থেকে চলে আসতে নিলেই উনি খোঁপ করে আমার হাত ধরে ফেলেন।উনি উঠে দাড়ালেন।আমাকে কাছে টেনে বললেন,
– কাল সকালে রেডি থেকো।অফিসে যাওয়ার আগে ডক্টরের কাছে যাবো।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– ডক্টরের কাছে কেনো?
– আমার কেনো যেনো খুব ভয় করছে।তোমাকে ডক্টর দেখিয়ে আনবো।
– আপনি শুধু শুধু টেনশন করছেন।আমার কিচ্ছু হয়নি।আমি একদম সুস্থ।
– আমি একবারও বলেছি তুমি অসুস্থ?
– উহু।
– তাহলে?
আমি আর কথা বাড়ালাম না।উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিচে চলে এলাম।খুব ঘুম পাচ্ছে।ডিনারটা এখনি করা উচিৎ।তারপর লম্বা একটা ঘুম দিতে হবে।
.
আন্টিকে বলে আমি একা একাই ডিনার করলাম।ইয়াশও আমার সাথে বসেছিলো খেতে।কয়েক লোকমা খেতেই উঠে চলে গেলো।নতুন খেলনা পেয়েছে।কয়েকদিন ওগুলোকেই বেশি সময় দিবে।আমি ডিনার কমপ্লিট করে রুমে চলে এলাম।উনি বেডে আধশোয়া অবস্থায় ফোন দেখছিলেন।আমি চুপচাপ উনার পাশে শুয়ে ব্লানকেট জড়িয়ে শুয়ে পরলাম।উনি পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– কি করছিলে এতক্ষণ?
– ডিনার করে এলাম।
– এতো জলদি?
– হুম।ভালো লাগছে না।ঘুম পাচ্ছে খুব।
– ওকে ঘুমাও।
বলেই উনি আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।আমি পাশফিরে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।উনি আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন,
– এখনো চোখ খোলা কেনো?
আমি সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করলাম।
.
.
.
আমি আর ইফাজ চাঁদনী রাতে ছোট্ট দুইটা পুঁচকি কোলে নিয়ে সমুদ্রের ধারে হাঁটছি।ইফাজ আমার একহাত ধরে রেখেছে।সমুদ্রের এক একটা ঢেউ এসে আমার আর ইফাজের পা ভিঁজিয়ে দিয়ে আবার সমুদ্রের মাঝে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।টুন-টুনি দুজনই ইফাজ আর আমার কোল থেকে নেমে হাত ধরে সমুদ্রের পানিতে পা ভিঁজিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।খুব আনন্দ নিয়ে দুজন লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে।ওদের কান্ড দেখে ইফাজ আর আমি ভূবন কাঁপিয়ে হাসছি।এইমুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে আমি আর ইফাজ-ই এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী মানুষ।টুন-টুনী লাঁফিয়ে লাঁফিয়ে হেঁটেই চলেছে।আমাদের থেকে বহুদূর চলে গিয়েছে।আর কিছুদূর গেলেই আমাদের চোখের আড়াল হয়ে যাবে। হাঁটতে হাটতেই হঠাৎ টুন পড়ে যাওয়াতে টুনিও টাল সামলাতে না পেরে টুনের উপর পরে গেলো।ইফাজ দ্রুত আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে টুন-টুনির কাছে দৌড়ে গেলো ওদের উঠাতে।ইফাজ দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় আমার চোখের আড়াল হয়ে গেলো।টুন-টুনিদেরও দেখতে পাচ্ছি না।রাতের অন্ধকারের সমুদ্র একসময় মরীচিকায় রূপ নিলো।বহুদূরে টুন-টুনিকে কোলে নিয়ে ইফাজকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম।দূর থেকেই তিনজন আমাকে হাত নেড়ে জানান দিচ্ছে আমাকে তাদের কাছে যেতে।আমার হাঁটছি তবুও ওদের থেকে আমার দূরত্ব কমছে না।আমার পা প্রতিমুহূর্তে মরীচিকার বালুর ভেতর আঁটকে যাচ্ছে।টুন-টুনি হাত নেড়ে চিৎকার করে বলছে তাড়াতাড়ি এসো মাম্মাম!ইফাজও চিৎকার করে বলছে,টিয়াপাখি! তাড়াতাড়ি আসো!আমরা অপেক্ষা করছি তোমার জন্য!ইফাজ ভুল শুধরে বললো,তুমি ওখানেই থাকো টিয়াপাখি! আমরা আসছি তোমার কাছে!
.
টুন-টুনি কাঁদছে!অঝোরে কাঁদছে!দুজন আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো “মাম্মাম!”
তাদের চিৎকার আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়ে আবার তাদের কাছেই ফিরে আসলো!দুজনের বুক ফেঁটে কান্না বেরিয়ে আসছে!পাঁচঘন্টা যাবৎ একাধারে কান্না করছে!গলায় অসম্ভব যন্ত্রনা হচ্ছে!গলা ব্যাথা করছে দুজনের!টুন-টুনি দুজনই এইমুহূর্তে একই কথা ভাবছে “এইমুহূর্তে তাদের-ই মরে যেতে ইচ্ছে করছে!সেই মরণব্যাথা বুঁকে চেঁপে ওই মানুষটা কিভাবে এতোগুলো বছর পার করলো!!!”দুজন-দুজনকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠলো!দুজনই ফোঁপাতে লাগলো!হেঁচকি উঠছে একাধারে!টুন টুনিকে ছেড়ে আকাশপানে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো “আম্মু,বাবাই এটা কি নাম রেখেছে!সত্যিই একদম পঁচা!তুমি আমার একটা ভালো নাম রেখে দিয়ে যাও না আম্মু,প্লিজ!”বলেই টুন ছাঁদের ফ্লোরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।বোনের এই অবস্থা দেখে টুনি দ্রুত পাশে রাখা পানির বোতল থেকে পানি টুনের চোঁখে মুখে ছিঁটিয়ে দিতেই টুন চোখ মেলে তাকালো!টুনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বোনকে বললো “আয়,পড়বি না?”টুন বোনের হাত ধরে উঠে দুজন মিলে আবার পড়তে শুরু করলো!
.
.
#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 47
.
.
হঠাৎ ইফাজের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।আমি ধড়ফড় করে উঠে চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম আমি উনার রুমে উনি আমার পাশেই আছেন!আমি দ্রুত ইফাজকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম!উনার কঁপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম!উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– ঘুমের মধ্যে ওভাবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছিলে কেনো?দুঃস্বপ্ন দেখছিলে নাকি?চুপ করে থেকো না!যেভাবে কাঁদছিলে ভয় করছে খুব আমার!
আমি কেঁদেই যাচ্ছি!কথা বলতে পারছি না!মনে হচ্ছে বাঁকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি!উনি বেডসাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলেন!আমি কাঁপা কাঁপা হাতে গ্লাসটা ধরে পুরোটুকু পানি শেষ করলাম!উনি গ্লাসটা রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে পিঠে স্লাইড করতে করতে শান্ত করার চেষ্টা করলেন!আমি তবুও ফুঁপিয়ে যাচ্ছি!উনি আয়াতুল কুরসী পড়ে আমার বুকে ফুঁ দিলেন!অনেকক্ষণ পর আমি কিছুটা নরমাল হলে উনি আমাকে নিজের বুকের উপর নিয়ে শুঁয়ে পরলেন!আমি উনার বুঁকে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিলাম!এইপ্রথম আমি এতগুলো চুমু একসাথে দিলাম!এইমুহূর্তে কেনো যেনো উনাকে খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে….খুব!হঠাৎ আমার চোখ দেয়ালের ঘড়িটার দিকে গেলো!তিনটা বাঁজে!এতো রাত কখন হলো?একটু আগেই না আমি ঘুমালাম!ইফাজ আমার মাথায় চুমু খেয়ে বললো,
– দেখো!আমার সারাশরীর কাঁপছে!কি এমন স্বপ্ন দেখলে যে ওভাবে কাঁদতে হলো?জানো কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!ইভেন এখনো ভয় পাচ্ছি!বাট এখন কিচ্ছু শুনবো না।ঘুমিয়ে পড়ো।যা শোনার সকালে শুনবো।
আমি ব্লানকেট-টা টেনে জড়োসড়ো হয়ে উনার বুকের উপরই চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরলাম।ঘুম আসছে না আমার।বারবার সপ্নটার কথা মনে পড়ছে!
.
সকাল নয়টায় ঘুম ভাঙ্গলো।উনি রেডি হচ্ছিলেন।আমাকে নড়তে দেখে উনি দ্রুত আমার পাশে বসে জিঙ্গেস করলেন,
– এখন কেমন লাগছে?
– হুম!ভালো!আপনি অফিসে যাচ্ছেন?
– হুম!তুমি উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও!
আমি উনার হাত ধরে বললাম,
– শুনবেন না,আজরাতে কাদঁছিলাম কেনো?
– না!কি না কি দেখেছো!বাদ দাও এসব…..তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নাও!
– শুনুন আগে….
উনার চেহারায় ভয়ের ছাঁপ!আমি উনার বুকে মাথা রেখে রাতের স্বপ্নটার কথা বললাম!সমুদ্রের ধারে ইফাজ আমি আর আমাদের টুন-টুনিকে নিয়ে হাঁটা থেকে শুরু করে মরীচিকায় ওদের তিনজনকে হারিয়ে ফেলা,এরপর ছাঁদের উপর বসে টুন-টুনি দুজনে একটা ডায়েরী পড়তে পড়তে অঝোরে কান্না করা,টুন-টুনি দুজনের ওই অদ্ভূত ভাবনা “এইমুহূর্তে আমাদেরই মরে যেতে ইচ্ছে করছে;সেই মরনব্যাথা বুকে চেঁপে ওই মানুষটা কিভাবে এতগুলো বছর পাড় করলো!”একে একে সব ইফাজকে বললাম!আমার কান্নার চোঁটে ইফাজের পরনের শার্ট ভিঁজে গিয়েছে।আমি দ্রুত উনাকে ছেঁড়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে শার্টের ভেঁজা অংশটা মুছতে লাগলাম।উনি আমার হাত চেপেঁ ধরলেন!আমি উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনার চোখমুখে ভয়ের ছাঁপ!কিন্তু সেটা উনি আমার সামনে প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না!নিজেকে স্বাভাবিক রেখে আমার দুইগালে হাত রেখে বললেন,
– স্বপ্ন তো স্বপ্নই!স্বপ্ন কখনো সত্যি হয়না!দেখলে না স্বপ্নটা কেমন এলোমেলো ছিলো!মাত্রই আমরা সমুদ্রে ঘুরছিলাম সাথে সাথেই মরুভূমিতে চলে গেলাম,সেখান থেকে হুট করে আবার ছাদে টুন-টুনিকে ডায়েরী পড়তে দেখতে পেলে!এটা কখনো সত্যি হওয়া সম্ভবই না!এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলো!দেখি….আগে বেড থেকে নামো!লেইট হয়ে যাচ্ছে আমার!তোমাকে ডক্টর দেখিয়ে তারপর অফিসে যাবো!
বলেই উনি আমাকে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলেন!ওয়াশরুমের আয়নার সামনে আমাকে দাড় করালেন!উনি আমার পেছনে দাড়িয়ে!আমি আমার পুরো শরীরের ভার উনার দেহের উপর ছেড়ে দিলাম!আয়নার ভেতর দিয়ে আমি উনাকে দেখছি!উনার চোখ ছলছল করছে!নিশ্চয় আমার স্বপ্নের সারাংশ উনি ধরতে পেরেছেন!ইফাজ ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে নিজেই আমার দাঁত ব্রাশ করিয়ে দিলেন!সামনে ঝুকতেই উনি আমার মুখ ধুইয়ে দিলেন।পুরো মুখে পানি ছিঁটিয়ে দিলেন।
.
রুমে এনে টাওয়াল দিয়ে আমার মুখটা যত্ন করে মুঁছে দিয়ে বললেন,
– আমি নিচে যাচ্ছি ব্রেকফাস্ট করতে।তুমি রেডি হয়ে নিচে চলে আসো।
বলেই আমার কঁপালে একটা চুঁমু দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
.
উনি রুম থেকে বেরুতেই আমি দ্রুত আলমারির লক দেওয়া ড্রয়ারের লক খুলে ভেতরে রাখা ডায়েরীটা বের করলাম!ডায়েরীটার ভেতর উনার সাথে দেখা হওয়া থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কাটানো প্রতিটা মুহূর্তের কথা খুব আবেগ দিয়ে লিখে রেখেছি!ডায়েরীটা খুব যত্ন করে এতোগুলো মাস নিজের কাছে আগলে রেখেছি।খুব ভয় করছে আমার….খুব!ওদের চিৎকার এখনো আমার কানে বাজঁছে!
.
আমি কি উনাকে না জানিয়ে কাজটা ঠিক করছি?
.
ডায়েরীটা আবার আলমারির ড্রয়ারে রেখে ড্রয়ারটা লক করলাম!আলমারি থেকে উনার পছন্দের ব্লাক জামদানিটা বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে শাড়িটা পরে নিলাম!দশ মিনিটে রেডি হয়ে নিচে চলে গেলাম!উনি অন্যমনস্ক হয়ে ব্রেকফাস্ট করছিলেন।আমাকে দেখতে পেয়ে পাশের চেয়ারটা টেনে বললেন,
– নাও!তাড়াতাড়ি শুরু করো!
আমি চেয়ারে বসে খেতে শুরু করলাম।
.
উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে কিচেনে চলে গেলেন।কিছুক্ষণ পর একটা ডিম নিয়ে কিচেন থেকে বের হলেন।আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি বলে উঠলেন,
– কোনো মানা শুনবো না।তাড়াতাড়ি শেষ করবে।
আমি নিচুস্বরে বললাম,
– সিদ্ধ ডিম খাই না আমি!
– এখন থেকে ব্রেকফাস্টে প্রতিদিন ডিম আর রাতে একগ্লাস দুধ মাষ্ট খেতে হবে!কোনো কথা শুনবো না!খাওয়ার অভ্যাস করো।মনি ফ্রুটস্ কেটে নিয়ে আসছে।সেগুলোও খাবে।
আমি উঠে আসার চেষ্টা করলাম।উনি আমার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে গাল চেঁপে ধরে বললেন,
– দেখি…হা করো!
আমি হা করলাম না।উনি গালে জোরে চাঁপ দিতেই আমি হা করলাম।সাথে সাথেই উনি ডিম একটু একটু করে খাওয়াতে শুরু করলেন।এভাবে পুরো ডিমটা খাঁইয়ে ছাড়লেন।
মনি ফ্রুটস্ টেবিলে রেখে কিচেনে চলে গেলো।উনি সময় নষ্ট না করে কয়েকমিনিটের মধ্যে সেগুলোও আমার পেঁটে ঢুকিয়ে ছাড়লেন।
.
উনি খুব তাড়াহুড়ো করছেন।দ্রুত আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পরলেন।গাড়িতে আমাকে বসিয়ে নিজে সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
– সিটবেল্ট লাগিয়ে দিলেন না যে আজ?
সাথে সাথেই উনি গাড়ি ব্রেক করলেন।আমি উনার দিকে তাকালাম।উনার চোখেমুখে রাজ্যের ভয়!একটানে আমাকে জড়িয়ে ধরে মুহূর্তেই ছেড়ে দিয়ে সিটবেল্ট লাগিয়ে দিলেন!
.
.
গাড়ির মধ্যে নিরবতা বিরাজ করছে।দুজনেই চুপচাপ।আমি উনার দিকে আড়চোখে তাকালেও উনি তাকাচ্ছেন না।ভালো লাগছে না উনার এরকম নিরবতা।আমি উনার কাঁধে হাত রেখে বললাম,
– মৌসুমীর একটা গান প্লে করুন তো!
কথাটা শোনামাত্রই উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালেন!তারপর কম্পিত কন্ঠে বললেন,
– আজ হঠাৎ মৌসুমীর গান শুনতে চাচ্ছো যে?
– এমনি!আপনার মুড অফ!তাই ভাবলাম মৌসুমীর গান….
শেষ করার আগেই উনি বলে উঠলেন,
– জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমার পাশে তুমি থাকলেই হবে!আর কিচ্ছুর প্রয়োজন নেই আমার!আমার মুড ভালো করার ঔষুধ একমাত্র তুমি!
হঠাৎ উনার এরকম কথা শুনে বুকের ভেতর ধুঁক করে উঠলো!উনার কথাগুলো জড়িয়ে আসছিলো!আমি অন্যদিকে তাকালাম!চোখের কোণায় জমে থাকা পানি মুছলাম!
.
.
উনি উনার ফ্রেন্ডের বাবার হসপিটালে আমাকে নিয়ে এলেন।প্রায় একঘন্টার মতো সেখানেই ছিলাম।আমাকে হাজারটা প্রশ্ন করলেন।রক্ত পরীক্ষা করলেন!ওজন মাপালেন!ওয়েট এককেজি কমে গিয়েছে!টেনশনের কারন জিজ্ঞেস করলেন!কেনো এতো টেনশন করি?এইটুকু বয়সে এতো কিসের টেনশন!এরকম আরো অনেক কথা শুনিয়ে দিলেন!
হসপিটাল থেকে বেরিয়ে উনি আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেলেন!দুপুরে ফেরার সময় রিপোর্টগুলো নিয়ে আসবেন!
.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে,সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হলো!রাতে উনি রিপোর্টগুলো নিয়ে এলেন।আমি শুঁয়ে ছিলাম।আমার পাশে বসে বললেন,
– রিপোর্ট নরমাল আসছে!আঙ্কেল শুধু টেনশন নিতে মানা করলেন আর বেশি বেশি খেতে বললেন।
উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললেন,
– টিয়াপাখি!বেবিদের নিয়ে বেশি টেনশন করো না!চারবছরের আগে প্লিজ এইসব ভাবা বন্ধ করে দাও!সারাক্ষণ এসব ভাবো দেখেই তো রাতে এলোমেলো স্বপ্ন দেখো!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here