#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 44+45
.
.
সকাল দশটার দিকে ভাইয়া এসে আপুকে নিয়ে গেলেন!মাহিনকে কোলে নিয়ে সবার আড়ালে অনেকক্ষণ আদর করেছি!মাহিনও আমার গলা জড়িয়ে ধরে গালে কপালে তুলতুলে নরম ঠোঁটদুটো দিয়ে কিউট করে অনেকগুলো চুমু খেয়েছে!
.
আঙ্কেল আর ইফাজ আপুদের সাথেই বেরিয়ে গেলেন।আন্টি উপরে চলে গেলেন।আমি ইয়াশকে নিয়ে কিঁচেনে ঢুকলাম।ইয়াশ নাঁচতে নাঁচতে আমার সাথে আসলো!আমি ইয়াশের গালে একটা চুমু দিয়ে বললাম,
– বলো তো সোনা!আমরা কেনো কিচেনে আসলাম?
ইয়াশ অনেক ভেবেও যখন কোনোকিছু খুঁজে না পেলো তখন ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,
– কেনো?
– আমরা এখন চিনির পানি দিয়ে মুড়ি খাবো!তোমার ভাইয়া বাসায় নেই!
আমার কথা শুনে ইয়াশ লাফ দিয়ে উঠে বললো,
– সত্যিই!!
– হুম!বাট মুড়ি কোথায় রেখেছে?
– মনি জানে!
– মনি টিভির রুমে জিজ্ঞেস করে আসো তো!
আমার কথা শুনে ইয়াশ দৌড়ে মনির কাছ থেকে জেনে নিয়ে একদৌড়ে আমার কাছে এসে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো,
– ওই যে উপরে রাখা!
.
আমি পানির ভেতর চিনি মিক্সড করে তার ভেতর মুড়ি ঢেলে চামচ দিয়ে নাড়তে লাগলাম!বাটি-টা নিয়ে সোজা ইয়াশের রুমে চলে এলাম!ইয়াশ দরজা লাগিয়ে দিয়ে বললো,
– ভাবি, এতো সহজ বানানো?
– হুম!
দুজন বেডের উপর বসে আমি ইয়াশকে খাওয়াতে লাগলাম আর ইয়াশ আমাকে!ইয়াশ খুব মজা করে খাচ্ছিলো!মনে হচ্ছিলো কোনো একটা দামী রেস্টুরেন্টের খাবার!ইয়াশ হেসে হেসে কথা বলতে বলতে খাচ্ছিলো!যারজন্য ঠোঁটের কোনা দিয়ে পানি পরছিলো!আমি খুব যত্ন করে শাড়ির আঁচল দিয়ে সেই পানি মুঁছে দিচ্ছিলাম!
খাওয়া শেষে ইয়াশ আমার কোলে চুঁপটি মেরে শুঁয়ে পরলো!আমি ইয়াশের কপালে চুমু দিয়ে বললাম,
– ঘুমানোর প্লান হচ্ছে নাকি?
– একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও!অনেক ভালো লাগে তোমার হাত বুলানোটা!
ইয়াশের কথা শুনে আমি হেসে মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম!দুইভাই একদম একরকম!সেইম সবকিছু!বড় হলে একদম উনার মতো হবে!ইয়াশ চোখ বন্ধ করতেই আমি বললাম,
– একদম ঘুমানো চলবে না! এই যে হাত সড়িয়ে নিচ্ছি!
ইয়াশ আমার হাত টেনে ধরে বললো,
– সরি…সরি!দেখো চোখ খুলেছি!
– গুড!একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছো আবার ঘুমিয়ে পরলে শরীর খারাপ করবে!
ইয়াশ আর চোখ বন্ধ করলো না!ঘুম যাতে না আসে তার জন্য আমার সাথে গল্প জুড়ে দিলো!
.
একটার দিকে ইয়াশকে গোসল করিয়ে দিয়ে আমরা একদম লাঞ্চের টাইমে রুম থেকে বের হলাম!ইয়াশের ইচ্ছা ছিলো আজ যেনো আমি ও’কে গোসল করিয়ে দেই!ডাইনিং-এ সবাইকে দেখতে পেয়ে ভ্যাঁবাচ্যাঁকা খেয়ে খেলাম!আমি দ্রুত বাটিটা শাড়ির আঁচলের নিচে লুকিয়ে ফেললাম!চারজন-ই হা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে!আমি আর ইয়াশ কারোর দিকে নজর না দিয়ে চুপচাপ দুজন পাশাপাশি দু’টো চেয়ার টেনে বসে পরলাম!আমি বাটিটা কোলের উপর রেখে দিলাম!ইফাজ আমাদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– কি করছিলে দু’জন এতক্ষণ?
ইয়াশ বললো,
– খেলছিলাম!
– আর কিছু করো নি?
– নাহ্!
– মুড়িও খাও নি?
উনার কথা শুনে ইয়াশ চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো!সাথে সাথেই আমার হেঁচকি উঠলো!উনি জানলো কিভাবে আমরা মুড়ি খাচ্ছিলাম!মনি বলে দিলো নাকি!আমি মনির দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাতেই মনি বলে উঠলো,
– আমি কিছু করি নাই কা!কিচেনে মুড়ি দেইখা খালা চিল্লায়া কইলো এইসময় মুড়ি খাইসে কেডা?বড়ভাইজান তহন কিচেনে ঢুইকা কইলো আপনি আর ইয়াশ নাকি খাইতেসেন!
আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন,
– বাটিটা টেবিলে উঠিয়ে রাখো!
আমি বাটিটা টেবিলে রেখে আন্টি-আঙ্কেলের দিকে তাকাতেই দেখলাম উনারা মুখটিঁপে হাসছেন।ইশ্!উনারা কি ভাবছেন!তাদের পুত্রবধূ মুড়ি খায়!ছিঃ!
.
.
আমি রুমে ঢুকে উনার ভয়ে সরাসরি ওয়াশরুমে ঢুকে পরলাম!দরজা লাগানোর আগেই উনি ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে আমাকে ওয়াশরুম থেকে বের করে এনে বললেন,
– লজ্জা নিবারন করতে যাচ্ছিলে নাকি ভয়?
– …..
– এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে মুড়ি না খেয়ে প্লেটভর্তি ভাত খেলেও তো পারো!
– একটু মুড়ি খেলে কি হয়?
উনি হাসতে হাসতে বললেন,
– গ্যাস বের হয়!প্রচুর গ্যাস….
– ছিঃ!অসভ্য কোথাকার!
বলেই আমি উনার বুকে কয়েকটা কিল-ঘুষি মেরে রুমের বাহিরে বের হওয়ার জন্য দরজা খোলার আগেই উনি দরজা বরাবর দাড়িয়ে দরজা লক করে দিলেন!আমি সামনে থেকে উনাকে সরানোর চেষ্টা করতেই উনি আমার দু’হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে বললেন,
– বাহিরে বের হওয়া নিষেধ!
– আমি ইয়াশের কাছে যাবো!
– আম্মু ইয়াশের কাছে আছে!ইয়াশকে এখন ঘুম পাড়াবে!
– ইয়াশ আমাকে ছাড়া ঘুমাবে না!সরুন…
– আম্মুকে একটা টেকনিক শিখিয়ে দিয়ে এসেছি!আম্মু এখন থেকে সেই টেকনিক-ই ইউজ করবে!
আমি ভ্রু কুচঁকে জিজ্ঞেস করলাম,
– কি টেকনিক?
– নো…বলা যাবে না!চলো….আগে আমার সাথে রোম্যান্স করবে!
– কিহ্!এই ভর-দুপুর বেলা রোম্যান্স!!
– এ্যাহ্ আসছে!রোম্যান্স কেউ টাইম দেখে করে নাকি!
বলেই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে স্টাডি-রুম থেকে একটা বই এনে আমাকে বেডের মাঝখানে বসিয়ে নিজে এসে আমার কোলে মাথা রেখে শুঁয়ে পরলেন!বইটা খুলতে খুলতে বললেন,
– টিয়াপাখি!ফ্লাটে উঠবে কবে?
– চারমাস পর!
– এমনভাবে উত্তর দিলে মনে হলো আগে থেকেই উত্তরটা ঠিক করে রেখেছিলে!
– ওরকমই!
– এতো লেইট করার রিজন-টা কি জানতে পারি?
– উহুম!আগে সময় আসুক!পরে এমনিতেই জানতে পারবেন!
আমার উত্তরটা শুনে উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালেন!দেখে মনে হচ্ছে উত্তরটা হঁজম করতে পারেন নি!হয়তোবা ভেবেছিলেন আমি বলবো “এমনি,এখন যাবো না।আর কয়েকদিন পর যাবো।এখন যেতে ইচ্ছে করছে না।একা একা ফ্লাটে ভালো লাগবে না।”
.
আমি টপিক চেঞ্জ করে বললাম,
– আচ্ছা, আমি মরে গেলে কি আপনি অন্য কাউকে বিয়ে করবেন?
আমার কথাটা শুনে উনি ধঁড়ফঁড় করে উঠে একটানে আমাকে বুকে চেঁপে ধরে বললেন,
– থাপ্পড় দিয়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দেবো!ফাযিল মেয়ে কোথাকার!
– আরে….আমি তো জাস্ট কথার….
– এখন কিন্তু সত্যিই আমার হাতের থাপ্পড় খাবে!থাপ্পড় খেতে না চাইলে চুপ থাকো!নেক্সট টাইম যদি এই টাইপের কোনো কথা শুনি আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না!বলে দিলাম…
বলেই উনি আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে আমাকে নিয়ে শুয়ে পরলেন!উনার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম চোখ বন্ধ করে আছেন!আমি উনার পিঠে কিছুক্ষণ স্লাইড করে আঙ্গুল দিয়ে একজনের নাম লিখে বললাম,
– বলুন তো কার নাম লিখেছি?
উনি চোখ বন্ধ করেই বললেন,
– খেয়াল করি নি!
আমি আবার লিখলাম!উনি বললেন,
– ইফায়া!!
আমি হেসে বললাম,
– কারেক্ট!
উনি আমার মুখ উপরে তুলে ভ্রু কুচঁকে জিজ্ঞেস করলেন,
– ইফায়া-টা কে?
– আমাদের ফার্স্ট বাবুর নাম!আমাদের মিলনে যেমন আমাদের বাবু হবে,তেমনি আমাদের নামের মিলনে আমাদের বাবুর নাম হবে!ফার্স্ট আমাদের ছেলে হোক আর মেয়ে!নাম রাখবো ইফায়া!
আমার কথা শুনে উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকাতেই আমি উনার বুকে মুখ লুকিয়ে ফেললাম!কিছুক্ষণ পর আমি আবার আঙ্গুল দিয়ে উনার পিঠে আরেকটা নাম লিখলাম,
– বলুন!
– হিয়াজ!!
বলেই উনি আমাকে আগের থেকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন!উনি এমনভাবে বললেন মনে হলো ডিভলি মনোযোগ দিয়েছিলেন লেখার সময়!উনি বললেন,
– এটা কার নাম,শুনি?
– এটা হচ্ছে আমাদের ছেলে বাবুর নাম!এই নামটাতেও কিন্তু আপনার আমার নামের অংশ আছে!
উনি আমার কঁপালে গভীরভাবে একটা চুমু খেয়ে বললেন,
– মেঘ না চাইতেই জল!বেবিদের নিয়ে কথা বলছে আমার টিয়াপাখি!
– এই যে….এইসব কথা বলে একদম লজ্জায় ফেলবেন না আমায়!
আমার কথা শুনে উনি শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন!হাসতে হাসতে বললেন,
– ওকে…ওকে…সরি!আর বলবো না এসব কথা!
উনার কথায় আমি মিষ্টি হেসে একইভাবে আরেকটা নাম লিখলাম!আমি বলার আগেই উনি উচ্ছ্বোসিত কন্ঠে বলে উঠলেন,
– ফাহিয়া!!!
উনি ভ্রু নাঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– এটা কার নাম?
– এটা আমাদের মেয়েবাবুর নাম!
– আই লাভ ইউ টিয়াপাখি!
আমি উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উনার বুঁকে চুমু খেয়ে বললাম,
– আমিও আপনাকে ভালোবাসি! আপনার থেকে অনেক অনেক বেশি!
– হুম,সেটা তো প্রমান করেই দিলে আজ!বাট আমাদের যে এখনো আরো দু’টো বাবুর নাম বাকি!
– ওদের নাম আপনি রাখবেন!
উনি আমার থুঁতনী ধরে উপরে তুলে আমার চোখে চোখ রেখে বললেন,
– আমার টুন-টুনি বাবুদের মা!
আমি ভ্রু কুচঁকে জিজ্ঞেস করলাম,
– টুন-টুনি?
– হুম!আমার টুইন্স বেবির নাম!মনে নেই তোমার?একদিন বলেছিলাম,আমার টুইন্স বেবি ভীষন পছন্দ!টুন-টুনি ওদেরই নাম!একটার নাম টুন,আরেকটার নাম টুনি!
– এটা আবার কেমন নাম!টুনি নামটা নাহয় মানলাম!কিন্তু টুন?আমি ফিউচারে যখন টুন বলে ডাকবো তখন টুন তো রাগ করে বলবে “আম্মু,বাবাই এটা কি নাম রেখেছে?একদম পঁচা!”
আমার কান্ড দেখে উনি হাসতে হাসতে বললেন,
– টিয়াপাখি!তুমি তো খুব ভালো এক্টিং পারো!
– কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই!অন্য নাম রাখুন!
– উহুম!হবে না!এই দুটো নামই রাখবো!টুন একটুও রাগ করবে না!দেখে নিও….
.
.
(চলবে)
#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
part: 45
.
.
বিকালের দিকে ইফাজ ইয়াশ আর আমাকে নিয়ে শপিংমলে ঘুরতে গেলো!শপিং করতে না,জাস্ট শপিংমলে ঘুরতে!আমাদের দুজনের হাতে দু’টো আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে আমাদের নিয়ে পুরো শপিংমল ঘুরতে লাগলো!উনি ঢং করে আমাদের বিভিন্ন শো-রুম দেখিয়ে বলছেন- এটা শাড়ির শো-রুম!এটা ডায়পার এর শো-রুম!এটা আন্ডারওয়ারের শো-রুম!অনেক কিউট আন্ডারওয়ারগুলো,তাই না?
উনার প্রতিটা কথার প্রতিত্ত্যুরে আমরা দু’জন শুধু “হুম!ওহ্!আচ্ছা!ওয়াও!”এগুলো বলছি!আসলে ওখানে না ছিলো কেনো ডায়পারের শো-রুম আর না ছিলো কেনো আন্ডারওয়ারের শো-রুম!জাস্ট মজা করার জন্য কথাগুলো বলছিলেন!
.
হঠাৎ উনি আমাদের দু’জনকে বললেন,
– তোমরা আগাও!আমি আসছি!
উনার কথামতো আমরা সামনে হাঁটতে লাগলাম!কিছুক্ষণ পর ফোন রিং হওয়াতে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম ইফাজ ফোন দিয়েছেন!আমি আশেপাশে তাকিয়ে উনাকে খুঁজতেই একটা শো-রুমের সামনে দেখতে পেলাম!উনি হাতের ইশারায় আমাকে অন্যদিকে তাকাতে বলছেন আর ফোনটা রিসিভ করতে বলছেন!আমি অন্যদিকে তাকিয়ে ফোনে জিজ্ঞেস করলাম,
– কি হয়েছে?এরকম কেনো করছেন?
– অনেকক্ষণ ধরে তোমাকে একটা ছেলে আর একটা আন্টি ফলো করছিলো!তোমার পেছনে উনারা দাড়িয়ে আছে!আমার সন্দেহ হচ্ছে মা-ছেলে শপিংমলে শপিং করতে আসে নি!পাত্রী দেখতে এসেছে!
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে পেছনে তাকাতেই দেখলাম একটা আধবয়সী আন্টি সাথে 26/27 বছরের একটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!আমার তাকানোতে উনারা মনে হলো একটু সাহস পেলেন যারজন্য আমার দিকে এগিয়ে আসছেন!আমি ইয়াশের হাত শক্ত করে ধরে উনাকে বললাম,
– উনারা এদিকেই আসছেন!কি করবো এখন?
– কিচ্ছু করতে হবে না!চুপচাপ থাকবে!আর কিছু জিজ্ঞেস করলে নরমালি আন্সার দিবে!ইয়াশের পরিচয় দিবে ও তোমার ছোট ভাই!ওকে?
– মানে?কি করতে চাচ্ছেন আপনি?
– টিয়াপাখি!বেশি কথা না বলে যেটা বললাম সেটা করো!দেখতে চাই কতদূর যায়!
বলেই ফোন কেটে দিলেন।
.
উনারা একহাত দুরত্ব বজায় রেখে আমার সামনে দাড়ালেন!ইয়াশ আমার হাত ধরে টানতে টানতে বললো,
– চলো ভা…
আমি সাথে সাথেই ইয়াশের মুখ চেঁপে ধরে বললাম,
– ভাত এখানে পাওয়া যায় না তো!আমরা বাসায় যেয়ে খাবো!
আঁচমোকা সামনে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটা কাছে এসে ইয়াশকে কোলে তুলে নিলো!আন্টি-টা ইয়াশকে ইশারা করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– কে হয় তোমার?
আমি হেসে বললাম,
– আমার ছোট ভাই!
সাথে সাথেই ইয়াশ বলে উঠলো,
– ছাড়ো!আমি ভাবির কাছে যাবো!
ইয়াশের কথা শুনে আন্টি-টা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,
– ভাবি কে?
– আমি!আমার নাম ভাবি!
আমি দ্রুত উত্তর দিলাম!আমার নামটা শুনে দুজনের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো!নিশ্চয় ভাবছেন “এরকম নামও মানুষের হয় নাকি!”
.
আমি ছেলেটার কোল থেকে ইয়াশকে নামিয়ে বললাম,
– আপনারা কি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছেন?
আন্টি-টা আমার একদম কাছে এসে বললেন,
– তোমার বাবার নাম কি?
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– কেনো আন্টি?
– বলতে কোনো প্রবলেম?
– না আন্টি!প্রবলেম কেনো হবে?আব্বুর নাম এনামুল হক!
আমি আসল নামটা বললাম না!আন্টি পার্স থেকে ফোন বের করে বললেন,
– তোমার বাবার নাম্বারটা দাও তো!
আন্টি-টার সাহস দেখে আমি রীতিমতো অবাক হয়ে যাচ্ছি!আমি জিজ্ঞেস করলাম,
– আব্বুর নাম্বার দিয়ে কি করবেন?
– একটু কথা বলতাম!ছেলে আমার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে এদিকে মেয়ে পছন্দ করতে পারছে না!শোপিং করতেই এসেছিলাম!হুট করে তনয়ের নজর তোমার দিকে পরলো!পছন্দ….
আমি আন্টিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে “এক্সকিউজ মি” বলে উনাদের থেকে একটু দূরে এসে ইফাজকে ফোন দিলাম!উনি সাথে সাথেই রিসিভ করলেন!আমি রাগান্বিত স্বরে বললাম,
– আপনি আসবেন নাকি আমি কান্না করে দিবো?
– ওহ্ নো!ওয়েট এ মিনিট….আমি আসছি!
আমি চোখ রাঙ্গিয়ে ইফাজের দিকে তাকাতেই উনি মাফ চাওয়ার ভঙ্গি করে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন!
.
ইফাজ আমাদের কাছে এসে আমার পাশে দাড়িয়ে ব্লেজার-টা টান দিয়ে বললেন,
– এখনো এখানে দাড়িয়ে কেনো?চলো….
এতক্ষণ আন্টির পাশে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটা চুপচাপ ছিলো!উনাকে দেখে মুখ খুললেন!আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– ইনি কে?
ইফাজ চোখের পলকে আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– সী ইজ মাই ওয়াইফ!মিসেস ইফাজ চৌধূরী!
উনার কথা শুনে সামনের দুজনের চেহারা বিস্ফোরিত হয়ে গেলো!চারটা চোখ মনে হচ্ছে এইমুহূর্তে বেরিয়ে আসবে!আন্টি ফোনটা পার্স-এ ঢুকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– আর ইউ মেরিড?
আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম!আমার উত্তর শুনে মা-ছেলে দুজন দুজনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন!আমি নিচুস্বরে আন্টিকে সালাম দিয়ে দুইভাইকে টেনে উনাদের সামনে থেকে নিয়ে আসলাম!
.
.
অনেক শপিং করে ছয়টার দিকে আমরা বাসায় ব্যাক করলাম!আমি ভেবেছিলাম সত্যি সত্যিই উনি শপিংমলে ঘুরতে গিয়েছেন!
.
আন্টি-আঙ্কেল ড্রইংরুমেই বসে ছিলেন!আমাদের দেখে মনি এগিয়ে এসে শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে সেন্টার টেবিলে রাখলো!উনি আঙ্কেলের পাশে বসতে বসতে শপিংমলের ঘটনাটা বলে দিলেন!ঘটনাটা শুনে আন্টি কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলেন,
– সাহস কতবড় বেয়াদব মহিলার?এইসব মহিলাদের উল্টো ঝুলিয়ে পিটানো উচিৎ!যত্তসব ফালতু পাবলিক!!!
আন্টির কান্ড দেখে আমি উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম!মনি শপিং-ব্যাগ থেকে সবকিছু বের করে দেখা শুরু করে দিয়েছে।ইয়াশকে অনেকগুলো খেলনা কিনে দিয়েছেন।ইয়াশ ফ্লোরে বসে খেলনাগুলো নিয়ে খেলছে।আন্টি-আঙ্কেল দুজনের জন্য শাড়ি-পাঞ্জাবি কিনেছি।শাড়ি-পাঞ্জাবি দুটোই আমি নিজে পছন্দ করে কিনেছি।মনির জন্যও সুন্দর দেখে একটা শাড়ি কিনেছি।মনির শাড়িটা ভীষন পছন্দ হয়েছে।ড্রইংরুমে সবার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করে উপরে চলে এলাম।রুমে ঢুকেই আমি বেডের উপর ধপাস করে শুয়ে পরলাম।প্রচুর টায়ার্ড লাগছে।
.
উনি একহাতে তিনটা শপিংব্যাগ নিয়ে রুমে ঢুকে ব্যাগগুলো সোফার উপর রেখে দরজা লক করে দিলেন।আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম।উনি ব্লেজার খুলতে খুলতে বললেন,
– তখন আমি না গেলে সত্যি কান্না করে দিতে?
আমি রাগান্বিত স্বরে বললাম,
– আর কোনোদিন যদি এরকম করতে দেখি,সেদিন আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।বলে দিলাম।
– কি করবে সেদিন?
আমি কোনো উত্তর দিলাম না।
.
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি আমার একদম গা ঘেঁষে বসে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।আমার কাধে থুঁতনী রেখে বললেন,
– আমি তো জাস্ট একটু মজা নিতে চেয়েছিলাম।
– এটাকে মোটেও মজা বলে না।
– এই রে…..আর হবে এমন!সরি!
– ….
– রাগ করেছো?
– উহুম!
– সত্যি তো?
– হুম!
উনি আমার ঘাঁড়ে চুমু খেয়ে বললেন,
– ওকে…একটা ইম্পরট্যান্ট কথা ছিলো,বলি?
– পারমিশন নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন কবে থেকে?
– বিয়ে হওয়ার পর থেকে।তোমার কাছ থেকে শিখেছি।
আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার গালে একটা চুমু খেয়ে বললেন,
– বলবো?
– বলুন….
উনি একটু কেঁশে বললেন,
– আমরা হানিমুন যাচ্ছি কবে?
হঠাৎ উনার এরকম কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।উনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বললেন,
– তুমি যেদিন বলবে,আমরা সেদিন-ই যাবো।
আমি না বোঝার ভাব ধরে বললাম,
– হানিমুন কি?
আমার কথা শুনে উনি ভ্রু কুচঁকে আমার দিকে তাকাতেই আমি অন্যদিকে তাকালাম।হঠাৎ উনি কোমড়ে চাঁপ দিয়ে বললেন,
– বুঝিয়ে বলবো নাকি প্র্যাকটিকেলি এখনই দেখিয়ে দিবো?
– এই না……
বলেই আমি লাফ দিয়ে বেডের অন্যসাইডে চলে আসলাম।উনি কিছু একটা বলতে যাবেন আমি সেই সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বলে উঠলাম,
– এক…এক বছর পর।
.
.
(চলবে)