#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part:25+26
.
.
ইফাজ ওদের বাড়ীর সামনে গাড়ি থামাতেই দেখলাম আন্টি, আপু,আপুর হাজবেন্ড,আঙ্কেল সবাই দুইটা গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে!আমাদের জন্যই হয়তোবা অপেক্ষা করছে!
মাহিন ভাইয়ার কোলে ছিলো!
.
ইফাজ গাড়ির দরজা খোলার সাথে সাথেই ইয়াশ লাফ দিয়ে নেমে আমার হাত ধরে আমাকে নামালো!এইবার ইফাজকে সুযোগ দিলো না।
.
আন্টি আর আপু আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলেন।তিনজনের মধ্যে কোনটা কে একটু ভেবে চিন্তে না বললে পারা যাবে না।তিনজনের চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না!
.
আমি নেকাপটা খুলে আঙ্কেলকে সালাম দিতেই আঙ্কেল আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– এইতো আমার আরেকটা মা এসে গেছে!এটাই বোধহয় আমাদের বাপ মেয়ের প্রথম দেখা!তাই না রে মা?
– জ্বী আঙ্কেল!
– নো আঙ্কেল!বাপ বলবি…বাপ!মনে থাকবে?
– জ্বী আ….সরি বাবা!
আমার কান্ড দেখে আঙ্কেল হাসলেন!আঙ্কেলের পাশেই ভাইয়া দাড়িয়ে ছিলেন।ভাইয়াকে সালাম দিয়ে ভাইয়ার কোল থেকে মাহিনকে কোলে নিয়ে ভাইয়ার সাথে টুকটাক কথা বললাম!
মাহিন এখন অনেকটাই বড় হয়ে গেছে!
.
আঙ্কেল সবাইকে তাড়া দিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠতে বললেন!আঙ্কেল আর আন্টি এক গাড়িতে উঠলো!ইয়াশ আমার সাথে যাবে!ইফাজ ইয়াশকে আন্টি আঙ্কেলের গাড়িতে পাঠানোর অনেক চেষ্টা করেও পারলো না।আমিই চোখ রাঙ্গিয়ে নিষেধ করেছি আর ইয়াশের জেদ তো সাথে আছেই!আপু আর ভাইয়া অন্য গাড়িতে!
.
ইয়াশ আমার হাত ধরেই গাড়ি পর্যন্ত আসলো!ইফাজকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমার আর ইয়াশের উপর সে খুব রেগে আছে!আমি আর ইয়াশ চুপচাপ সিটে বসলাম।ইফাজও যেয়ে সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।আমি আড়চোখে উনার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
.
ইয়াশ ইফাজের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ভাইয়া তোমার ফোনটা দাও।
ইফাজ ইয়াশের দিকে না তাকিয়েই বললেন,
– কেনো!
– দাও না!
– গাড়িতে কোনো গেইম খেলা চলবে না।
– একটু দাও না!বেশি খেলবো না!প্রমিজ!
– বেশি না খেললেও উর্ধ্বে একঘন্টা লাগে তোমার!
ইয়াশ আগে থেকেই আমার হাত ধরে ছিলো!হাতটা আরো শক্ত করে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় উনাকে কিছু বলতে বললো!
.
আমি উনার দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে বললাম,
– একটু দিলে কি হয়?
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– বিয়ের পর তোমাদের দুজনকে তো একসাথে ওই বাড়িতে রাখা ইম্পসিবল!সারাদিন তো পাবোই না সিওর!রাতেও পাবো কিনা সন্দেহ!
.
উনার কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে উনার হাতে একটা চিমটি দিয়ে বললাম,
– সবসময়ই উল্টাপাল্টা কথা,না?আমি আপনাকে যাস্ট ফোনটা দিতে বলেছি!ওইটার সাথে এইকথাটা না বললেই কি চলছিলো না?ফোন দিন!
ইফাজ পকেট থেকে ফোনটা বের করে আমার হাতে দিলো!ইয়াশ আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ওপেন করতেই আমার পিক স্ক্রিনে ভেসে উঠলো!সাথে সাথেই ইয়াশ একটা কিস করলো স্ক্রিনে!
.
ইয়াশের কান্ড দেখে আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– কি হলো এটা!
– ও এইকাজটা সবসময়ই করে!ফোনটা নিবে!ওপেন করবে!তোমার পিকটা ভেসে উঠবে!পিকে একটা কিস করবে!then গেইম খেলা শুরু করবে!
পাশ থেকে কথাগুলো ইফাজ বলে উঠলেন!
.
আমি দুইহাত পেঁচিয়ে ইয়াশের কোমড় জড়িয়ে ধরে সিটের সাথে হেলান দিলাম।ইয়াশ একটু নিচু হয়ে আমার ঘাড়ে মাথার পেছনের সাইড রেখে শুয়ে পরলো।ফোনটা উপরের দিকে উঠিয়ে গেইম খেলছে।
.
হঠাৎ ইফাজ খুব সাবধানে আমার ডানহাতটা টান দিয়ে কিছুক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রেখে একটা চুমো দিয়ে ছেড়ে দিলো।আমি উনার কান্ড দেখে ভয়ে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ইয়াশ গেইম খেলায় ব্যস্ত!
.
প্রায় আধাঘন্টা পর আমরা মাদ্রাসায় পৌছালাম!ইয়াশ ইফাজকে ফোনটা দিয়ে আমাকে নিয়ে নেমে পরলো।আন্টি আঙ্কেলকে দেখতে পেলাম!আপুদের গাড়ি এখনো আসে নি।
.
আমি আর আন্টি টুকটাক কথা বলছিলাম!আপুদের গাড়ি পৌছাতেই ইফাজ গাড়ির কাছে যেয়ে আপুর সাইডের দরজাটা খুলে মাহিনকে কোলে নিয়ে আপুর হাত ধরে আপুকে নামালো!আপু আমাদের কাছে এসে আমার হাত ধরে বললো,
– চলো!
– হুম!
ভাইয়া গাড়ি লক করে চলে আসলো!
.
ভবনটা তিনতলার!নিচতলায় বিশাল মসজিদ!আমরা দ্বিতীয়তলায় উঠে দেখলাম বিশাল বড় একটা রুমের চারপাশে সারিবদ্ধভাবে ছোট ছোট বাচ্চারা বসে জোরে জোরে শব্দ করে কোরআন তেলাওয়াত করছে!বড় বড় ছেলেও ছিলো!পুরো রুমটাতে কেমন একটা শান্তি বিরাজ করছে!যেখানে কোনো দুঃখ-কষ্ট,লোভ-ল
ালসা কিছুই নেই!সেখানে শুধু আল্লাহ তা’আলার রহমতের ই একমাত্র জায়গা আছে!
.
একজন হুজুর আমাদের দিকে এগিয়ে এসে আঙ্কেলের সাথে কোলাকুলি করলেন!তারপর কিছু কথা বলে তিনতালায় যাওয়ার কথা বললেন!
উনার সাথে আমাদের সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেন!
.
উপরের তালায় উঠে দেখলাম বিশাল রুম বাট কোনো কক্ষ নেই।কয়েকজন বিশাল দাড়িওয়ালা হুজুর নিচে মাদুরের উপর বসে সামনে থাকা ছোট পায়াওয়ালা টেবিলের উপর রাখা কাগজপত্র নেড়ে চেড়ে দেখছেন!আর টুকটাক কথা বলছেন।আমরা তিনজন নেকাপ খুলে ফেললাম!সবাই জুতো খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই সবার নজর আমাদের দিকে পড়লো!
আমাদেরকে দেখতে পেয়েই সবাই উঠে এসে আঙ্কেলের সাথে হাতমিলিয়ে কোলাকুলি করলেন!আন্টিকে ভালোমন্দ জিঙ্গেস করছেন!ইয়াশ আমার হাত ধরেছিলো।একজন ইয়াশের কাছে এসে ইয়াশকে কোলে তুলে নিলেন।ইফাজের কোল থেকে অন্য একজন হুজুর মাহিনকে কোলে নিয়ে কপালে চুমো দিয়ে বললেন “মাশাআল্লাহ্!মাশাআল্লাহ্!খুব সুন্দর হয়েছে দেখতে!”
.
ইফাজ আমার পাশে এসে আঙ্গুল দিয়ে একটা হুজুরকে দেখিয়ে আস্তে করে বললেন “উনিই আজ চলে যাচ্ছেন!”
.
আঙ্কেল হুজুরটাকে আমাদের দিকে এগিয়ে এনে সব হুজুরকে উদ্দেশ্য করে আমাকে দেখিয়ে বললেন,
– এই যে!আমার বড় ছেলে ইফাজের বউ!খুব লক্ষী একটা মেয়ে!
আমি আর ইফাজ হুজুরকে সালাম দিলাম।উনি সালামের উত্তর নিয়ে আমার আর ইফাজের মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন!
.
প্রায় একঘন্টার মতো সবাই ফ্লোরে মাদুরের উপর বসে বসে গল্প করলেন!ইফাজ আমার পাশেই বসেছিলো!ইয়াশকে হাজীহুজুরটা কোলে নিয়ে বসে বসে গল্প করছিলেন!ইয়াশ হুজুরের বড় বড় দাড়িতে আঙ্গুল দিয়ে আচঁড়িয়ে দিচ্ছিলো!হুজুরের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।চুপচাপ বসে বসে গল্প করছিলেন!
.
পুরো মাদ্রাসা মসজিদ সব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হুজুরদেরকে সাথে নিয়ে আঙ্কেল আমাদের দেখাচ্ছিলেন!আমি আপুর কাছ থেকে মাহিনকে কিছুক্ষণের জন্য কোলে নিলাম!ইয়াশ ইফাজের হাত ধরে হাটছে!
কিছুক্ষণ পর ইয়াশ ইফাজকে বলে উঠলো,
– ভাইয়া!হাটতে ইচ্ছে করছে না।কোলে নাও!
ইফাজ সাথে সাথেই কোলে তুলে নিলো!ইয়াশ ইফাজের কাধে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে পরলো!
.
.
সবকিছু দেখে ফেরার সময় আঙ্কেল গাড়ি থেকে অনেকগুলো উপহার বের করে মাদ্রাসার সব পিচ্চিদের দিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যে যার গাড়িতে উঠলো।ইয়াশ ইফাজের কাধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরেছে!
আন্টি আঙ্কেলের কাছে ইয়াশকে রেখে এসে ইফাজ আমাকে নিয়ে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।
.
আমরা যেই রাস্তা দিয়ে এসেছিলাম সেই রাস্তা দিয়ে উনি না যেয়ে অন্য একটা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন!আমি উনার দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– এই রাস্তা দিয়ে কেনো?
আমার কথা শুনে ইফাজ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– এমনি!
– কোথায় যাচ্ছি আমরা?
– গেলেই দেখতে পাবে!
আমি আর কিছু জিঙ্গেস না করে সিটের সাথে হেলান দিয়ে বাহিরে তাকালাম!
.
পনেরো মিনিট পর উনি একটা ফাস্টফুড দোকানের সামনে গাড়ি থামালেন।গাড়ি থেকে নেমে দোকানে ঢুকে খাবার কিনে আনলেন!আমার সাইডের দরজা খুলে খাবারগুলো আমার কোলের মধ্যে রেখে দরজা লাগিয়ে দিলেন।নিজে সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– এগুলো কার জন্য?
– তোমার জন্য!
– মানে?আমি খাবো না!
কথাটা বলেই আমি খাবারগুলো সামনে রাখতেই উনি আমার হাত খোপ করে ধরে বললেন,
– লজ্জা পাওয়ার কি আছে?আমিই তো!
– আমি লজ্জা পাচ্ছি না!আমার এখন ক্ষিধে নেই তাই রেখে দিচ্ছিলাম!
– কাল সেহরী খেয়েছিলে?
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
– নাহ্!
– তাহলে?সকালে নিশ্চয় একটু কিছু মুখে দিয়ে চলে এসেছো!বেশি কথা না বলে শেষ করো!
– প্লিজ!খাবো না আমি!
– হিয়া….. মাইর দিবো কিন্তু এখন!
আমি আর কিছু বললাম না!রোজাদারের সামনে খেতে হয় না,পাপ হয়!উনার সামনে এভাবে খেতে নিজের মধ্যে একটা জড়তা কাজ করছিলো! তবুও বাধ্য হয়ে খাওয়া শুরু করলাম!
.
.
(চলবে)
#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 26
.
.
ঈদের দিনের জমজমাট আয়োজন যাকে বলে।ঘুম থেকে উঠেই মনের ভেতর একরাশ আনন্দ বয়ে গেলো।আজ ঈদ!ইফাজের সাথে প্রথম ঈদ!কাল রাতেই প্লান করে রেখেছিলাম আজ কিচেনে ঢুকবো শুধুমাত্র ইফাজের জন্য!
এই দুদিনে ইফাজের সাথে অনেক কথা হয়েছে!কলেজ ও নেই! সকাল সকাল ওঠারও তাড়া নেই!ইচ্ছামতো রাত জেগে ইফাজের সাথে কথা বলেছি!কাল সন্ধ্যেয় মেহেদীও ঠিকমতো দিতে পারি নি উনার জন্য!জেদ ধরে বসে ছিলো “আমার সাথে কথা বলা অবস্থায় মেহেদী দিতে পারলে দাও নয়তো দরকার নেই।কাল আমি নিজে এসে দিয়ে দিবো!”
.
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাত্র বাজে সাড়ে পাচঁটা!এখন নিশ্চয় ইফাজ ঘুমোচ্ছে। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে কল না দিয়ে ছোট্ট করে “ঈদ মোবারাক ইয়াং ম্যান” লিখে ইফাজের নাম্বারে সেন্ড করলাম!
পাশেই নাফিসা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলো! আমি কম্বলটা একটানে সড়িয়ে কানের কাছে আস্তে করে বললাম,
– ঈদ মোবারাক বোনু!
নাফিসা মিটমিট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– ঈ…ঈদ মো…মোবারাক……. ঘুম ঘুম কন্ঠে কথাটা বলে কম্বলটা একটানে নিয়ে আগের ন্যায় মাথা ঢেকে শুয়ে পরলো!
আমি দ্রুত বেড ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে নিলাম!ফোনের স্ক্রিন জ্বলে ওঠাতে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ইফাজ কল করেছেন!
আমি দ্রুত রিসিভ করে হ্যালো বলতেই উনি বললেন,
– ধরছিলে না কেনো?
– কল দিয়েছিলেন নাকি?
– অলরেডি তিনবার হয়ে গেছে!
– ওহ্ সরি!ওয়াশরুমে ছিলাম একটু!
– হুম!আমি ভেবেছিলাম তুমি এখনও ঘুমোচ্ছো,তাই ডিস্টার্ব করি নি!বাট ম্যাসেজ পেয়ে কল দিলাম!বাই দ্য ওয়ে….ঈদ মোবারাক মাই বেবি’স মাদার!
উনার কথাটা শুনে বুকের ভেতর কেঁপে উঠলো!উফ্…আমার কেনো এমন হয়?বেবিদের কথা উঠলেও সবকিছু ওলটপালট লাগে!
.
– কি হলো?
– হুম?
– চুপ কেনো?
– কিছু না…এমনি!
– ইয়াশ একটু কথা বলবে তোমার সাথে….ওয়েট ভিডিও কল দিচ্ছি।
– এতো সকালে ও উঠেছে?
– হুম!আজ আমার কাছেই ঘুমিয়েছিলো!তোমা
র সাথে কথা বলছিলাম টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পরেছে।
– ওহ্….
– হুম!
ইফাজ কল কেটে ভিডিও কল দিলো!ইয়াশ আমাকে দেখেই ফ্লাইং কিস দিয়ে বললো,
– ঈদ মোবারাক ভাবী!
আমি তো দুইভাইকে দেখে হা হয়ে গেলাম!দুইজনই খালি গায়ে বেডের সাথে আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে লেপটপটা ইফাজের পায়ের উপর রেখে কথা বলছে!ইয়াশ ইফাজের বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে!ইয়াশ হাই তুলছে!এখনও ঘুমের রেশটা কাটিয়ে উঠতে পারে নি।
আমি একটা কিস দিয়ে বললাম,
– ঈদ মোবারাক সোনা!আহারে এখনও তো তোমার চোখে ঘুম লেগে আছে!
– হুম!
ইয়াশ আরেকটা হাই তুললো!চোখদুটো বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু ইয়াশ জোর করে খুলে রেখে বললো,
– ভাবী….আজ কখন আসবে?
– কোথায়?
– আমাদের বাসায়!
– আমি তো আজ যাচ্ছি না।আজ তুমি আন্টি আঙ্কেলকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে!
– আচ্ছা……ইয়াশ চোখ আর খুলে রাখতে পারলো না!ইফাজের বুকেই ঘুমিয়ে পরলো!
ইয়াশের কান্ড দেখে আমার হাসি পেলো!ইফাজ ইয়াশকে আস্তে করে বালিশে শুয়ে দিলো!
লেপটপটা একটু কাছে নিয়ে বললেন,
– দেখো,একটু পর আবার উঠে পরবে!
– তখন আপনি একটু দূরে গিয়ে কথা বললেই ওর কাঁচা ঘুমটা নষ্ট হতো না!
– যত দূরেই যাই না কেনো ও ঠিক টের পেয়ে যায়!এখনই এই অবস্থা,বিয়ের পর কতরাত আমাকে একা কাটাতে হবে সেটা ভেবে তো আমার সুইসাইড করতে ইচ্ছে করে!
– উফ্!আবার ওসব কথা!যখন বিয়ে হবে সেটা তখন দেখা যাবে!এখন রাখলাম!
আমার কথা শুনে উনি হাসলেন!
– এভাবে হাসছেন কেনো?
– তুমি এতোটা ভীতু কেনো?তুমি তো রীতিমতো বিয়ে,বেবি এই নামগুলোই শুনতে পারো না!এতো লজ্জা পেলে চলবে,টিয়াপাখি?
উনার কথাগুলো শুনে লজ্জায় আমার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে!উনার দিকে ভালোভাবে তাকাতে পর্যন্ত পারছি না!কিন্তু উনি দিব্যি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন!
আমি কোনোরকমে বলে উঠলাম,
– আম্মু ডাকছে!এখন রাখছি।পরে কথা হবে!
– হিয়া….খবরদার কাটবে না!
– আম্মু ডাকছে তো!
– ডাকুক!
আমি চোখ বন্ধ করে কোনোকিছু না ভেবে কেটে দিলাম।ফোনটা টেবিলের উপর রেখে আলমারি থেকে ছোট তালাটা বের করে কিচেনে চলে এলাম!আম্মু কি যেনো রান্না করছিলো।আমি আম্মুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– ঈদ মোবারাক আম্মু!
– বাব্বাহ্!এতো সকালে?
– হুম!ঈদ না আজ….তাই!
– এর আগেও তো কত ঈদ এলো গেলো তখন তো ডেকেও উঠাতে পারিনি….
আমি আম্মুকে থামিয়ে বললাম,
– তখন তো ছোট ছিলাম! এখন তো বড় হয়েছি!
আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– ইফাজের সাথে কথা হয়েছে?
– হুম!একটু আগেই হলো!পায়েশ রান্না করছো?
– হুম!
আমি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে আম্মুর পায়েশ রান্না দেখলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আম্মুর পায়েশ রান্না কমপ্লিট হলো!আম্মু একটা বাটিতে পায়েশ ঢেলে ডাইনিং এ রেখে আসতে গেলো আর আব্বুকে ডাকতে গেলো!এইফাঁকে আমি পায়েশ রাধার যাবতীয় জিনিশপত্র নিয়ে দাদুর বাসায় চলে এলাম!মেইনডোর লাগিয়ে দিয়ে কিচেনে চলে এলাম!
হঠাৎ মনে পড়লো দুধ আনতে ভুলে গেছি!দ্রুত বাসায় যেয়ে কিচেন থেকে দুধ নিয়ে একদৌড়ে দাদুর বাসায় চলে এলাম!
আম্মু যেভাবে যেভাবে পায়েশটা রান্না করেছিলো ঠিক সেভাবে সেভাবে আমিও রান্না করলাম।শুধু চিনিটা একটু কম দিলাম!প্রায় ঘন্টাখানেকের মতো লেগে গেলো!রান্নায় হাতকাঁচা যাকে বলে!যেখানে আম্মুর লাগে পনেরো মিনিট সেখানে আমার লাগে একঘন্টা!
.
আমি পায়েশটা একটা বাটিতে ঢেলে কিচেনেই ঢেকে রেখে সেই ছোট তালাটা দিয়ে কিচেনে তালা দিলাম!যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে!
.
তিনচাচ্চুর বাসায় গিয়ে সবার সাথে দেখা করে আসলাম!
.
সকাল থেকেই আম্মুর ইনট্রাকশন অনুযায়ী সব কাজ আমিই করলাম।নাফিজা ছোট চাচীর বাসায় যেয়ে আড্ডা দিচ্ছে! দুই দুইবার ওকে ডাকতে গিয়েছিলাম বাট এখনও আসার নাম নেই।
নয়টার দিকে একটু ফ্রি হলাম!আমি রুমে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম!চোখ বন্ধ করতেই কেমন ঘুম চলে এলো।সেই সাড়ে পাঁচটায় উঠেছিলাম।ঘুম আসাটা স্বাভাবিক।আমি এক ঝটকায় চোখ খুলে ওয়াশরুমে যেয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে আসলাম।ফোনটা চেক করার জন্য টেবিলের উপর থেকে নিয়ে দেখলাম নো ম্যাসেজ, নো কল’স!মুহূর্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো!পাশেই ফোনটা রেখে আলমারি থেকে ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে পনেরো মিনিটে শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম।
টাওয়াল দিয়ে চুল মুচ্ছিলাম তখনই কিচেন থেকে আম্মুর ডাক পড়লো।দ্রুত আম্মুর কাছে এসে দেখলাম আম্মু তাড়াহুড়ো করে সব করছে।
– কি ব্যাপার?এতো তাড়াহুড়ো করছো কেনো?
– তোর আব্বু ইফাজের বাবাকে নিয়ে আসছে!একটু হেল্প কর আমাকে!
আম্মু আমার হাতে একটা বাটি দিয়ে ডাইনিং এ রেখে আসতে বললো!আমি দ্রুত ডাইনিং এ বাটিটা রেখে এসে আম্মুর সামনে দাড়াতেই আম্মু একসাথে একশটা কাজ করতে বললো।ওখান থেকে ওটা আনো!ফ্রিজ থেকে এই আনো,সেই আনো!যাও স্পুন বের করো।গ্লাসগুলো ঠিকভাবে রেখেছো তো!না রাখলে যাও ঠিক করে আসো!
.
আমি প্রায় ক্লান্ত হয়ে গেলাম!আমি আম্মুর কাছ থেকে চলে এলাম।আম্মুর কাছে আর যাওয়া যাবে না।চুপচাপ রুমে বসে থাকাই বেটার।বেডের উপর শুয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে একবার ভাবলাম ইফাজকে কল দেই পরমুহূর্তেই ভাবলাম থাক!বিজি আছে হয়তোবা!আমি চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলাম।
.
হঠাৎ নাফিসা আমাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো,
– আপু!তাড়াতাড়ি উঠো!আঙ্কেল এসেছেন! সাথে ইফাজ ভাইয়াও এসেছেন!
ইফাজ এসেছে শুনে বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো।আমি দ্রুত বেড ছেড়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুলগুলো আচঁরিয়ে নিলাম!মাথায় ওড়নাটা দিয়ে ড্রইংরুমে এসেই দেখলাম আঙ্কেলের পাশেই ইফাজ বসে আছে!একটা নেভী ব্লু কালার পাঞ্জাবী পরেছেন!আব্বু উনাদের সামনে সোফায় বসে আঙ্কেলের সাথে কথা বলছেন!
আমাকে দেখেই ইফাজ কিউট করে একটা হাসি দিলো!আমিও ছোট করে হাসলাম।আঙ্কেলের কাছে গিয়ে আঙ্কেলকে সালাম দিয়ে ঈদ মোবারাক বললাম!ভালোমন্দ জিঙ্গেস করলাম!ইয়াশকে আনে নি দেখে একটু খারাপ লাগলো!
আব্বু আমাকে আব্বুর পাশে হাত ধরে বসিয়ে দিলেন!আমার এখানে বসার মোটেও ইচ্ছা ছিলো না!কেমন একটা আনইজিফিল লাগছে!ইফাজের দিকে তাকাতেই দেখলাম আঙ্কেল আর আব্বুর কথা শুনছে আর মাঝে মাঝে আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে!যখনই তাকাচ্ছেন তখনই মিষ্টি একটা হাসি ফ্রি দিচ্ছেন।প্রতিত্ত্যুরে আমিও ছোট করে হাসছি!
আমি কোনোকিছু না ভেবে আস্তে করে সেখান থেকে উঠে চলে আসলাম!রুমে এসে নাফিসাকে বললাম,
– একটা কাজ করতে পারবি?
– কি কাজ?
– কোনোভাবে ইফাজকে মেইনডোরের বাহিরে নিতে পারবি?
আমার কথা শুনে নাফিসা অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলো,
– কেনো আপু?
– এমনি!একটা কাজ আছে!
– ওকে!
নাফিসা হাত থেকে ফোনটা রেখে ড্রইংরুমের দিকে চলে গেলো!আমি বেডের উপর বসে বসে পা দুলাতে লাগলাম!
কিছুক্ষণ পর ইফাজের নাম্বার থেকে কল আসতেই আমি রিসিভ করে হ্যালো বললাম,
– আপু!ভাইয়াকে বাহিরে এনেছি!চলে আসো!
– ওকে!
আমি দ্রুত ফোনটা রেখে মেইনডোর ভেদ করে বাহিরে এলাম।নাফিসা আমাকে দেখে বাসায় চলে গেলো!
ইফাজ আমাকে দেখে কিছু একটা বলার আগেই আমি দ্রুত ইফাজের হাত ধরে দাদুর বাসায় চলে এলাম।মেইনডোর ভালোভাবে লাগিয়ে দিয়ে উনাকে সোফায় বসিয়ে আমি কিচেনে আসার উদ্দেশ্যে এক পা বাড়াতেই উনি আমার হাত খোপ করে ধরে ফেললেন!
আমাকে টান দিয়ে পাশে বসিয়ে বললেন,
– ব্যাপার কি?হুম?
– পরে বলি?এখন একটু ছাড়ুন!আমি যাস্ট যাবো আর আসবো!
– উহুম!আগে বলো….then ছাড়বো!
– প্লিজ!একটু ছাড়ুন!
– ওকে!
ইফাজ আমার হাত ছেড়ে দিতেই আমি দ্রুত কিচেনে এসে একটা ট্রেতে পায়েশ আর পানির গ্লাস নিয়ে উনার সামনে আসলাম।উনি ভূত দেখার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন!আমি ট্রে টা উনার সামনে রেখে পায়েশ উনার হাতে দিয়ে বললাম,
– খেয়ে বলুন তো কেমন হয়েছে?
উনি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলেন,
– হিয়া….তুমি করেছো পায়েশটা?
আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে বললাম,
– হুম!
হঠাৎ উনি আমার হাত ধরে টান দিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমো দিয়ে বললেন,
– আই লাভ ইউ সো মাচ মাই লাভলি ওয়াইফ!ওহ্ মাই গড ইট’স এ বিগ সারপ্রাইজ!
উনি দ্রুত স্পুন দিয়ে খেতে শুরু করলেন!
আমি পা’দুটো সোফার উপর উঠিয়ে উনার দিকে ঘুরে সোফার সাথে হেলান দিয়ে উনার খাওয়া দেখছি!আমি একবারও টেস্ট করি নি।কেমন হয়েছে আল্লাহই জানেন!খারাপ হলে হোক!উনি যে তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছেন এটাই অনেক!আমি জানি আমি যত বাঁজে রান্নাই করিনা কেনো উনি সেটা তৃপ্তি নিয়ে খাবেন!
উনি খাচ্ছেন আর বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন পায়েশটা ভীষন ভালো হয়েছে!
উনার কান্ড দেখে আমার মুখ থেকে হাসি যাচ্ছে না!আমি শব্দহীনভাবে হাসছি!ইফাজ আমার দিকে তাকিয়ে স্পুনটা আমার মুখের সামনে ধরে বললো,
– দেখি,হা করো!
আমি হেসে হা করলাম!উনি আমাকে একচামচ খাইয়ে দিয়ে নিজে আবার খেতে শুরু করলেন!
বাহ্!পায়েশটা তো সত্যি ভালো হয়েছে!আমার কাছেই এতো ভালো লাগছে নিশ্চয় উনার কাছে আরো বেশি ভালো লাগছে!
.
– ইয়াশকে আনেন নি কেনো?
– ঈদের দিন ইয়াশ অনেক বিজি থাকে!ওর প্রায় বিশ পচিঁশটার মতো ফ্রেন্ড!সবার বাসায় নিজে যাবে,ওদেরকে আবার নিজের বাসায় নিয়ে আসবে!সারাদিন ঘুরবে,খেলবে,মজা করবে!রাত দশটার সময় বাসায় আসবে!
– বাব্বাহ্!এই পিচ্চি বয়সেও দেখি বড়দের থেকে কম যায় না!ভয় লাগে না এতো রাত করে বাসায় ফিরে?
– উহুম!ড্রাইভার তো সাথে থাকেই!পানি দাও!
আমি দ্রুত পানির গ্লাসটা উনার সামনে ধরলাম!উনি গ্লাসটা না ধরে আমার হাত থেকেই খেতে শুরু করলেন!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here