# Real_Love♥
# Oniya_Chowdhury
Part: 21+22
.
.
ইফাজ ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথেই কোনোরকমে আমি বেড থেকে উনার ফোনসহ চলে আসি।সরাসরি আম্মুর কাছে এসে ফোনটা আম্মুর হাতে ধরিয়ে দিয়েই আমি ওখান থেকে রুমে চলে আসি।নাফিসাকে রুমে দেখলাম না।হয়তোবা স্কুলে চলে গিয়েছে।ভালোই হলো।
.
আমি রুমের দরজা লাগিয়ে আলমারি থেকে কম্বল বের করে বিছানায় যেয়ে সরাসরি কম্বলের নিচে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পরলাম।এখনও আমার হাত পা কাপঁছে!শরীরও কাপঁছে!বুকের ভেতর ধুকধুক করছে!কেনো এমন করেন উনি!এক এক সময় এক এক স্টেপে আমার সাথে হার্টবিট কাঁপানো রোম্যান্স না করে কি উনি থাকতে পারেন না?ঘড়ির টাইম ধরে পাক্কা পাচঁমিনিট উনি আমাকে আটকে রেখেছিলেন!একমিনিট আগেও ছাড়েন নি!বজ্জাত একটা!আন্টির কথা খুব মনে পড়ছে!আন্টি তুমি তোমার ছেলেকে ঠিক চিনেছো!আসলেই তোমার ছেলে একটা বজ্জাত!বজ্জাত না বজ্জাতের ওস্তাদ!পাচঁমিনিটে উনি ত্রিশবারের মতো আমার পেটে আঙ্গুল দিয়ে উনার নাম লিখেছেন!সাথে তো চুমো ফ্রি!এখনো যে আমি বেচেঁ আছি এটা আমার ভাগ্য!
.
চুপচাপ কম্বলের নিচে শুয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি।আর হাতের সাথে হাত ঘষে নিজেকে নরমাল করার চেষ্টা করছি!
.
হঠাৎ দরজায় নক করার শব্দে কম্বলের ভেতর থেকেই জিঙ্গেস করলাম,
– কে?
– কে যেনো কল দিয়েছে!ইফাজকে ফোনটা দিয়ে আয়!
উফ্!যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়!
এবার উনার কাছে গেলে উনি নির্ঘাত একঘন্টার কথা বলে একঘন্টা ই আমাকে আটকে রেখে উনার সেই বিশ্ববিখ্যাত রোম্যান্স শুরু করবেন!
.
আমি কম্বলের নিচ থেকেই আম্মুকে বললাম,
– তুমি দিয়ে আসো!আমি পারবো না!
আম্মুর আর কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না!হয়তোবা চলে গেছে!
.
আমি কম্বলটা সড়িয়ে উঠে বসলাম।নাফিসার ফোনটা টেবিলের উপর রাখা ছিলো।উঠে ফোনটা নিয়ে বালিশের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পরলাম।নাফিসার আইডি আগে থেকেই লগইন করা ছিলো।ওর আইডিতে ঢুকে নটিফিকেশন ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম!
.
হঠাৎ ম্যাসেঞ্জারে একজনের ম্যাসেজ আসায় টুং করে শব্দ হলো!ম্যাসেজ ওপেন করেই দেখলাম “কি করো,বউ?”
ম্যাসেজটা দেখার সাথে সাথেই লাফ দিয়ে উঠে বসলাম!নিক নেইম জিজু দেওয়া!চোখ বড় বড় করে ম্যাসেজটা কয়েকবার দেখে নিলাম!ঠিক দেখছি তো!হ্যা,এইটা ইফাজ!উনি পাঠিয়েছেন ম্যাসেজটা!কিন্তু উনি জানলো কিভাবে এটা নাফিসা না আমি!
.
আমি কাঁপাকাঁপা হাতে ম্যাসেজটা ডিলেট করে ফোনের পাওয়ার অফ করে টেবিলে রেখে দিলাম!ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আটটা পনেরো বাজে!
.
হঠাৎ দরজার কে যেনো নক করলো!আমি দরজা খুলে দেখলাম আম্মু দাড়িয়ে আছে!আমাকে দেখেই আম্মু হাত ধরে টেনে রুম থেকে বের করলো!আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– কি হয়েছে?এভাবে টানছো কেনো?
– ইফাজকে ডেকে আন!ডাইনিং এ সব রেডি!
কথাটা শুনেই মনের মধ্যে ভয় চলে আসলো।কিন্তু আম্মুকে বুঝতে দিলাম না।চেহারায় কিছুটা বিরক্ত ভাব ফুটিয়ে তুলে বললাম,
– একটু আগেই তো গিয়েছিলে ফোনটা ফেরত দিতে।তখন খেতে আসার কথা বলো নি কেনো?
– বলেছিলাম তো!কিন্তু বললো একটু পর আসছে!খাবার তো এদিকে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।তুই একটু জোর করে নিয়ে আয়!
আম্মুর লাস্ট কথাটা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মনে মনে বললাম”হাহ্!আমি করবো জোর!তাও আবার উনাকে!”
.
– কি হলো যা!
– হুম!
– তাড়াতাড়ি!
আম্মু কিচেনে চলে গেলো!আমি পাচঁমিনিট ওখানেই দাড়িয়ে ছিলাম!বুকে থুথু দিয়ে এক কদম দুই কদম করে উনার রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম!দরজা একটু খোলা!আমি হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে পুরোটুকু খুলে ফেললাম!উনি ফোনটা চার্জে দিচ্ছিলেন।দরজা খোলার শব্দে উনি দরজার দিকে তাকাতেই আমার উপর চোখ পরলো!ফোনটা রেখে উনি আমার কাছে আসতেই আমি বলে উঠলাম,
– ব্রেকফাস্ট করবেন,চলুন!আম্মু ওয়েট করছে!আপনাকে নিয়ে যেতে বললো।
ইফাজ প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বললেন,
– হুম!
– কি হুম?আম্মু এখনই যেতে বললো!চলুন!কাজ থাকলে পরে করবেন!এখন চলুন!
আমার কথা শুনে উনি যেই একহাত দূরে দাড়িয়ে ছিলেন সেটা একইঞ্চিতে কমিয়ে আনলেন!সাথে সাথে আমার শরীরের সেই অদৃশ্য কাঁপুনি বৃদ্ধি পেলো!আমি নিচের দিকে তাকিয়ে শক্ত করে দুইহাত দিয়ে ওড়না চেপে ধরলাম!
.
হঠাৎ উনি উনার একপা দিয়ে আমার একপা স্পর্শ করতেই মনে হলো আমি পায়ে কিছু একটার সাথে শক খেলাম!আমি পা টা সড়ানোর চেষ্টা করতেই উনি শক্ত করে চেপে ধরলেন!
.
উনি ডানপকেট থেকে ডানহাতটা বের করতেই আমি ভয়ে উনার পকেটে রাখা বামহাতসহ ডানহাতটা চেপে ধরলাম!আমি জানি উনার হাতদুটো একসেকেন্ড ও ধরে রাখার ক্ষমতা আমার নেই!তারপরও চেষ্টা করলাম!
উনি হাতদুটো ছাড়ানোর কোনো চেষ্টাই করছেন না!আমি তো উনার এরকম নিরবতা দেখে ভয়ে শেষ!নিশ্চয় অন্যকোনো মতলব আছে!
.
আমি ভয়ে চোখ তুলে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি হাসছেন!উনার মুখে হাসিটা দেখে কিছুটা হলেও বুকে সাহস পেলাম!এখন উনাকে জোর করলেও জোর করা যায় উনি কিছু করবেন না!আমি উনার পায়ের নিচ থেকে আমার পা টা সড়িয়ে উনার বামহাত ছেড়ে দিয়ে ডানহাত ধরে ডাইনিং এ নিয়ে আসলাম!চেয়ার টেনে উনাকে বসিয়ে আমি রুমে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই উনি আমার হাত খোঁপ করে ধরে ফেললেন!উনার পাশের চেয়ার টেনে বললেন,
– তুমি আবার কোথায় যাচ্ছো?বসো!
– আপনি খেয়ে উঠুন!আমি পরে খাবো!
– উহুম!পরে না!এখনই খাবে,বসো!
– ওকে!হাতটা ছাড়ুন!আম্মু চলে আসবে!
– আগে বসো!
আমি চুপচাপ চেয়ারটা অন্যহাত দিয়ে আর একটু টেনে বসে পরলাম!
.
– কি হলো!বসলাম তো!আম্মু চলে আসবে,ছাড়ুন!
হঠাৎ উনি আমার হাতটা টেনে হাতের উল্টোপিঠে একটা চুমো দিয়ে ছেড়ে দিলেন!আমি চোখ বড় বড় করে একবার উনাকে দেখছি একবার আম্মু দেখে ফেললো কিনা সেটা দেখছি!
.
কিছুক্ষন পরই আম্মু হাত মুছতে মুছতে কিচেন থেকে বের হলো।আম্মুকে দেখামাত্রই আমি খাবার বাড়তে শুরু করলাম!উনার প্লেটে ভাত দিলাম!আম্মু তরকারি দিলো!ভাতের থেকে তরকারি বেশি হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে!আমি আরো একচামচ ভাত উঠিয়ে উনার প্লেটে দেওয়ার আগেই উনি আমার হাত চেপে ধরে বললেন,
– কি করছো?অলরেডি অনেক দিয়ে ফেলেছো!আমাকে এতো না দিয়ে নিজে একটু বেশি বেশি করে খাও!
উফ্!আম্মুর সামনে কথাটা না বললেই কি চলতো না উনার?
উনার কথা শুনে আম্মুও উনার সাথে তালমিলিয়ে বলতে শুরু করলেন,
– এভাবে বলে কোনো কাজ হবে না,ইফাজ!ওকে বেত দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে খাওয়াতে হবে!
– হুম,আন্টি!এখন থেকে সেটাই করতে হবে।আমি অর্ডার দিয়ে একটা বেত বানানোর ব্যবস্থা করছি!
উনার কথা শুনে আমি হা হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি!আমার জন্য বেত অর্ডার দিবেন?বেত দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে খাওয়াবেন?
হুহ্!আমার প্রতি এতোটা নির্মম উনি জীবনেও হবেন না!
আমি খেতে শুরু করলাম।
.
উনি খেতে খেতে বললেন,
– আন্টি, আঙ্কেল কোথায়?
– বাসায় নেই।সকালেই ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে গেছে।
– ওহ্!
.
আম্মু গ্লাসে পানি ঢেলে ইফাজের দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে কিচেনে চলে গেলো।আমি খাওয়া বাদ দিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আপনি সত্যি সত্যি বেত অর্ডার দিবেন নাকি?
– কেনো?ভয় পাচ্ছো?
– ভয় পাওয়ার কি আছে?
– তাহলে এভাবে ভীতুস্বরে কথা বলছো কেনো?
উনার কথা শুনে আমি গলার স্বর স্বাভাবিক করে বললাম,
– মোটেও আমি ভীতুস্বরে কথা বলছি না।আমি ওতোটাও ভীতু না!
– হুম!জানি!
– কি জানেন?
– তুমি যে ভীতু না সেটা জানি!
উনার কথা শুনে আমি কাদো কাদো স্বরে চোখ নামিয়ে বললাম,
– আপনি জানেন আমি ঠিক কতটা ভীতু!শুধু শুধু না জানার ভান করছেন কেনো?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– টিয়াপাখি!তোমাকে না মেরে কিভাবে খাওয়াতে হয় সেটা আমি খুব ভালোভাবেই জানি!টেনশন নিয়ো না!নিজের বউকে টর্চার করার মতো হাজবেন্ড আমি না!
আমি উনার কথা শুনে দৃঢ়চিত্তে বলে উঠলাম,
– শুনুন,আপনি যত যাই করেন না কেনো,আমার খাওয়া বাড়বে না!
– ওহ্,রিয়েলি?
– হুম!
– ওকে!
– কি ওকে?
– পরে বলি!আগে খাওয়া শেষ করো!
.
আমি আর খেলাম না।সরাসরি হাত ধুয়ে রুমে চলে আসলাম।কম্বলটা ভাজঁ করে আলমারিতে রেখে শুয়ে পরলাম।রাতে মাত্র তিনঘন্টা ঘুমিয়ে ছিলাম।একটু শুয়ে থাকলে চোখে ঘুম আপনাআপনিই চলে আসবে।আমি বালিশে মুখ গুজেঁ উপুড় হয়ে শুয়ে পরলাম।
.
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ আমার মনে হলো আমার পায়ে কেউ সুড়সুড়ি দিচ্ছে!কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলাম!সুড়সুড়ি দেওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে!আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না!এই কাজ উনার ছাড়া আর কারোরই নয়!
.
ভয়ে আমি তড়িঘড়ি করে উঠে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি খাবার প্লেট সামনে নিয়ে বসে আছেন!উনি প্লেটটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– শুরু করো!
আমি প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্লেটপুরো ভর্তি করে খাবার এনেছেন!উনি যেহেতু এনেছেন আমাকে আজ সব পেটের ভেতর ঢুকিয়েই ছাড়বেন!আজ নির্ঘাত আমাকে বমি করতেই হবে!আমি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– কার জন্য?
– তোমার জন্য!
– মাত্রই তো খেয়ে আসলাম!
– তুমি নিজেও জানো তুমি কি খেয়েছো!বেশি কথা না বলে চুপচাপ শুরু করো!
– আমার ক্ষুধা নে…..ওকে ওকে খাচ্ছি!
“নেই” বলার আগেই উনি চোখ রাঙ্গিয়ে কাছে চলে আসলেন!উফ্…..খাবার দেখেই বমি বমি ভাব শুরু হয়েছে!
.
আমি ঠিক পাচঁ লোকমা মুখে দিয়েই আর দেওয়া সম্ভব হলো না!আমি এক নিশ্বাসে বলে দিলাম,
– আর সম্ভব না!
– ….
– প্লিজ!
– নাও হা করো!
– আমার বমি বমি লাগছে!বমি করে দিবো এখন!
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার কোমড় ধরে টান দিয়ে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বললেন,
– আমি তো এখনও শুরুই করলাম না টিয়াপাখি!তার আগেই তোমার এরকম খাওয়ার প্রতি অনীহা আর বমি বমি ভাব আমার কিন্তু সুবিধার মনে হচ্ছে না।আশেপাশে কোনো হসপিটাল আছে নাকি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।চেকআপ করাতে নিয়ে যাবো!
– কিহ্!
.
.
#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 22
.
.
ইফাজ আমাকে প্লেটের অর্ধেক ভাত খাইয়ে ছেড়েছেন।কোনোমতে পেটের মধ্যে ঢুকিয়েছি।
.
আমি উঠতে যাবো সেই মুহূর্তে উনি আমার হাত টেনে উনার সামনে বসিয়ে বললেন,
– কোথায় যাচ্ছো?
– ডাইনিং এ।পানি খেতে।
– ওহ্!আমার জন্য একগ্লাস নিয়ে আসো।
.
আমি পানি খেয়ে উনার জন্য একগ্লাস পানি নিয়ে রুমে ঢুকে গ্লাসটা সামনে ধরে বললাম,
– নিন।
– হুম,রাখো।
আমি পানির গ্লাসটা রেখে চলে আসতে নিলেই উনি আমার হাত টেনে উনার সামনে বসিয়ে প্লেটটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
– নাও,শুরু করো!
– মানে?আমি আর খাবো না।
– উফ্!তোমাকে কে খেতে বলেছে।আমাকে খাইয়ে দাও।
– কিহ্!
– হুম,নাও তাড়াতাড়ি শুরু করো।
– আমি পারি না কাউকে নিজের হাতে খাওয়াতে!
– এ্যাহ্ আসছে!ইয়াশকে তো খুব সুন্দর করে খাইয়ে দিয়েছিলে।ইয়াশ কিন্তু আমাকে সব বলেছে।সো মুখ বন্ধ রেখে হাত চালাও।
উনার কথা শুনে আমি অসহায়ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– ও তো পিচ্চি।আমি বড়দের খাইয়ে দিতে পারি না।
– আমিও তো পিচ্চি!নাও নাও তাড়াতাড়ি করো।
– আপনি পিচ্চি?
– হুম!
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে প্লেটের দিকে তাকালাম।উনার ঠোটেঁ রাজ্যজয়ের হাসি!
.
আমি ভাত মাখিয়ে এক লোকমা তুলে উনার মুখের সামনে নিতেই উনি আমার হাতের কব্জি ধরে মুখে নিলেন।তারপর আস্তে করে হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললেন,
– বাহ্!ঝাল তরকারি হঠাৎ মিষ্টি হয়ে গেলো কি করে!
কথাটা বলেই উনি দুষ্টু হাসি দিলেন।আমি চোখ সড়িয়ে দ্বিতীয় লোকমা তুলে উনার মুখে দিতেই উনি একটা কামড় দিলেন!আমি “আহ্” বলে শব্দ করলাম!উনি সাথে সাথেই আমার হাতটা ধরে কামড় দেওয়া জায়গায় একটা চুমো দিয়ে বললেন”সরি,বউ!আর হবে না!”
– ইচ্ছে করে কামড় দিয়ে এখন সরি বলা হচ্ছে!
আমার কথা শুনে উনি দুষ্টু হাসি দিলেন!
.
– কি হলো?দাও!
আমি আরেক লোকমা তুলে উনার মুখের কাছে নিয়েও আবার ফিরিয়ে আনলাম।আমার এরকম কান্ড দেখে উনি অবাক হয়ে বললেন,
– কি হলো এটা?
– আগে বলুন আর ওরকম করবেন না!
– ওকে!
আমি হাত বাড়াতেই উনি আবার কামড় দিলেন!এবার অনেকক্ষণ কামড় দিয়ে ধরে রাখলেন!কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলেন!
.
আমি রেগে গিয়ে বললাম,
– আপনি আসলেই খারাপ!
– এতো মিষ্টি কেনো তোমার হাতের স্বাদ!উম্মম…ছাড়তে ইচ্ছে করছিলো না!
উনার কথাটা শুনেই আমি প্লেটটা উনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিছানা ছেড়ে নামতেই উনি প্লেটটা সাইডে রেখে আমাকে উল্টোপাশ হয়ে উনার সাথে লাগিয়ে বসালেন!আমি পেছন ফিরে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার ডানহাতটা টেনে উনার ঠোটেঁর সামনে নিয়ে সবগুলো আঙ্গুল চেটেপুটে খেয়ে ছেড়ে দিলেন!
আমি হা হয়ে উনার সব উদ্ভট কান্ডগুলো দেখলাম!
.
উনি পানি খেয়ে আমার ওড়না দিয়ে মুখ মুছে চলে গেলেন!আমি উনার চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম!এইরকম কিছু দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
.
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে প্লেট আর গ্লাসটা নিয়ে ডাইনিং এ রেখে হাত ধুয়ে রুমে এসে চুপচাপ শুয়ে পরলাম।চোখদুটো বন্ধ করতেই উনার একটু আগের করা দুষ্টুমিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো!আমি চোখ খুলে ডানহাতের আঙ্গুলের দিকে তাকালাম।এখনো আঙ্গুলে উনার কামড়ের দাগগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে!আমি হাতটা বুকের ভেতর চেপে ধরে চোখ বন্ধ করলাম।
.
দুপুর দুটোর দিকে ঘুম ভাঙ্গতেই পাশে তাকিয়ে নাফিসাকে দেখতে পেলাম।ও ফোন চালাচ্ছিলো।আমাকে দেখেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো।আমি আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলাম।মনে হচ্ছে কতকাল পর ঘুম থেকে উঠলাম!
.
– আপু।
নাফিসার ডাক শুনে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– হুম।
– কিছু না!
– মানে?
– সরি,ভুলে ডেকে ফেলেছি।
– কিছু একটা লুকাচ্ছিস আমার কাছে!বল।
– নাথিং।
– ওকে!না বললি।
.
আমি বিছানা ছেড়ে মাত্রই নামতে যাবো সেই মুহূর্তে নাফিসা আমার হাত টেনে ধরে বললো,
– আপু,ভাইয়া কিন্তু চলে গেছে।
– কিহ্!
– হুম,একটু আগেই চলে গেছে।তুই ঘুমাচ্ছিলি দেখে আর ডাকে নি।
নাফিসার কথা শুনে মনে হলো আমার মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরলো!আমি কাদো কাদো স্বরে বললাম,
– উনার না কাল সকালের দিকে যাওয়ার কথা ছিলো!আর এভাবে আমাকে না বলে……..
আমি আর বলতে পারলাম না!গলা ভারী হয়ে আসছে!চোখ দিয়ে পানি পরছে!
.
নাফিসা হঠাৎ আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বললো,
– ভাইয়া দিতে বলেছে!
আমি চিরকুটটা নিয়ে তাড়াতাড়ি খুলে দেখলাম কি লেখা আছে!
“ভালো থেকো!আর কখনো হয়তোবা আমাদের দেখা হবে না!যত দূরেই থাকি না কেনো মনেপ্রানে সবসময় তোমাকে সুখী দেখতে চাই!আমি দোয়া করি তোমার লাইফে আমার থেকেও বেস্ট কেউ আসুক!চলে যাচ্ছি!আমাকে আর খোজার চেষ্টা করো না!বিদায়!”
লেখাটা শেষ হতেই আমার পুরো পৃথিবীটা ওলট পালট হয়ে গেলো!হাত পা কাপঁছে!অঝর ধারায় চোখ দিয়ে পানি পরছে!হঠাৎ কি হলো উনার?কেনো এমন করলেন আমার সাথে?উফ্!আমার ভাবনাশক্তিগুলোও লোপ পাচ্ছে!ভাবতে পারছি না কিছু!চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে”কেনো করলেন এমন?”
নাফিসার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও চুপচাপ ফোন চালাচ্ছে!উনি যে এভাবে চলে গেলেন!তারজন্য সামান্যতম খারাপ লাগাও ওর চেহারার মধ্যে নেই!
ওর কেনো খারাপ লাগবে?ওতো ভালোবাসে নি উনাকে!আমি বেসেছি!খুব খুব ভালোবাসি আপনাকে!খুব!
.
আমি কাঁপা কাঁপা পায়ে রুম থেকে বের হয়ে আম্মুর কাছে আসলাম!ফ্লোরে পা রাখতেই পারছি না!মনে হচ্ছে এই বুঝি পড়ে যাবো!
আম্মু আমাকে দেখার সাথে সাথেই টিভি অফ্ করে আমার কাছে এসে বললো,
– হিয়া!এই অবস্থা কেনো তোর?কি হয়েছে?মা আমার,বল!
– উ…..উ…..উনি চ…
– আপু!ভাইয়া তোর জন্য মূল্যবান একটা গিফ্ট রুমে রেখে গেছেন!তাড়াতাড়ি যেয়ে দেখে আয়!
পেছন থেকে নাফিসা কথাটা বলে উঠলো।কথাটা শোনার সাথে সাথেই আমি আর একমুহূর্তও সেখানে না দাড়িয়ে দৌড়ে আমার রুমে এসে ঠাস্ করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম।
বেডের উপর চোখ পরতেই মনে হলো আমি আমার জীবন ফিরে পেয়েছি!দরজা খোলার শব্দে উনি শোয়া থেকে উঠে বসলেন!আমাকে এই অবস্থায় দেখার সাথে সাথেই উনি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলেন,
– টিয়াপাখি!কাদছো কেনো? কি হয়েছে?
আমি উনার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে দৌড়ে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম!হঠাৎ আমার এরকম জড়িয়ে ধরা উনি সামলাতে না পেরে আমাকে সহ শুয়ে পরলেন!উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছেন!আমি উনার পিঠের শার্ট শক্ত করে আকড়ে ধরলাম!জীবন গেলেও ছাড়বো না উনাকে!কেউ নিতে পারবে না আমার কাছ থেকে!
.
প্রায় দশমিনিট আমি উনাকে ওভাবেই ধরে রেখেছি!উনিও কিছুই বলছেন না!শুধু চুপচাপ আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন!
.
– টিয়াপাখি!
– হুম!
– কি হয়েছে?
– কখনো ছেড়ে যাবেন নাতো?
– মানে?আমি কেনো তোমাকে ছেড়ে যাবো?
– প্রমিজ করুন!
– আই লাভ ইউ!
উনার কথাটা শুনে আমি আমার সর্বস্ব শক্তি দিয়ে এমনভাবে জড়িয়ে ধরলাম মনে হলো এই বুঝি আমি উনার বুকের ভেতর ঢুকে যাবো!
আমার চোখ দিয়ে এখনও পানি পরছে!আমি উনার শার্টের সাথে চোখের পানি মুছে বললাম,
– আই লাভ ইউ টু!
আমার কথা শুনে উনি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলেন,
– কি বললে?আরেকবার বলো!
– আই লাভ ইউ টু!
– সত্যিই!!!
আমি মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়ে আবার উনার বুকে মাথা রেখে বুকে একটা চুমো দিলাম!
আমার কান্ড দেখে উনি আমার দুইগাল ধরে উনার বুক থেকে আমার মাথাটা তুলে অবাক হয়ে বললেন,
– আই কান্ট বিলিভ,টিয়াপাখি!!! তুমি নিজে থেকে…….এ্যাই তুমি ঠিক আছো তো?
– হুম!
– আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না!
– ……
– নেশা করো নি তো আবার?
– ছিঃ!
.
প্রায় অনেকক্ষণ ধরে দুজনই চুপচাপ আছি!
উনি আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
– তখন ওভাবে কান্না করলে কেনো?
– নাফিসা ভয় দেখিয়েছিলো!তার জন্য!
আমার কথা শুনে উনি হো হো করে হেসে উঠে বললেন,
– কিসের ভয়?তেলাপোকার নাকি টিকটিকির?
– উফ্!ওসব না!
আমি চিরকুটটা উনার হাতে দিয়ে বললাম,
– এটা পড়ুন!
উনি আমার হাত থেকে চিরকুটটা নিয়ে শুয়ে থেকেই পড়তে লাগলো।পড়া শেষে বলে উঠলেন,
– সামান্য এইটার জন্য তুমি কান্না করেছো!বিশ্বাস নেই আমার উপর?
– অনেক!কিন্তু তখন ও এমনভাবে বললো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!
– পাগলি……..বলেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন!সাথে সাথেই নাফিসা রুমে ঢুকেই বলে উঠলো,
– আপু!সারপ্রা….oppss…sorry…sorry
নাফিসাকে দেখেই আমি উনাকে ছেড়ে দিলাম,উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দুজনেই উঠে ঠিকঠাক হয়ে বসলাম!
.
নাফিসা চোখে হাত দিয়ে উল্টো ঘুরে দাড়িয়ে ছিলো!
– সরি আপু!নক করে আসা উচিৎ ছিলো!
কথাটা বলেই ও আমাদের দিকে ঘুরলো!
ইফাজ বলে উঠলেন,
– দেখেই তো ফেলেছো!এখন সরি বলে লাভ কি!
– আপু যে এতোটা ইমোশোনাল হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি!
.
– তোকে আমি মেরে ফেলবো!
কথাটা বলেই আমি বিছানা ছেড়ে উঠতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে বসিয়ে দিলেন!
তারপর নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– কাজটা করে কিন্তু তুমি আমার সবচেয়ে বড় উপকার করেছো!
– সিরিয়াসলি?
– হুম!
– কি উপকার করেছি?
আমি উনার হাটুতে একটা চিমটি দিয়ে ইশারায় চুপ থাকতে অনুরোধ করলাম।কিন্তু উনি চুপ না থেকে বললেন,
– এই যে তোমার বোন যে আমাকে এতো ভালোবাসে লাইভে সেটা দেখতে পেলাম!
নাফিসা বেডে বসে উৎসুক কন্ঠে বললো,
– কি কি দেখলেন লাইভে?
– এই যে নিজে থেকে আমাকে জ…..
আমি উনাকে আর বলতে দিলাম না।সোজা মুখ চেপে ধরলাম।
উনি ছাড়ানোর চেষ্টা পর্যন্তও করছেন না!উল্টো নাফিসার অগোচরে আমার হাতের তালুতে চুমো দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছেন!মাঝে মাঝে কামড়ও দিচ্ছেন! আমি না পারছি চিৎকার করতে আর না পারছি ছাড়তে!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here