# Real_Love♥
# Oniya_Chowdhury
Part:19+20
.
.
ইফাজ উপর থেকে ব্যাগটা নামিয়ে একটা টিশার্ট বের করলো।আমার সামনেই পান্জাবি খুলে পান্জাবিটা ভাঁজ করে ব্যাগে রেখে দিলো।কিছুক্ষণ হাত উপর নিচ করে এ্যাক্সারসাইজ করে টিশার্ট পরে নিলো।আমি এতক্ষণ গভীরভাবে উনাকে পর্যবেক্ষণ করছিলাম!উনার শরীরের প্রতিটা অংশেই নিখুঁতভাবে চোখ বুলিয়ে দেখছিলাম হঠাৎ উনি আমার দিকে তাকাতেই আমি চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম।
.
উনি আমার কাছে এসে আমার পা দুটো সিটের উপর তুলে দিয়ে আমাকে এমনভাবে বসালেন মনে হচ্ছে এখন আমি সাধনা শুরু করবো।ব্যাগ থেকে ল্যাপটপটা বের করে ব্যাগটা উপরে রেখে আমার কোলে শুয়ে পরলেন।ল্যাপটপটা বুকের উপর রেখে ল্যাপটপ চালাচ্ছেন আর চোখ উল্টো করে আমার দিকে তাকাচ্ছেন!উনি যতবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন আমি ততবার উনার থেকে চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকাচ্ছি!
.
– টিয়াপাখি!
উনি ল্যাপটপে কাজ করতে করতে হঠাৎ করে ডাকলেন!আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– হুম!
– কয়টা বেবি নিতে চাও?
– কিহ্!
হঠাৎ উনার এরকম প্রশ্নে মুখ ফসকে”কিহ্” বের হয়েছে!কোনোরকমে নিজেকে সামলিয়ে বললাম,
– কি বললেন?শুনতে পাই নি!
– বলো!
– প্রশ্নটা কি ছিলো?
– আজ কত তারিখ?
প্রশ্নটা করেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন!
আমি রেগে অন্যদিকে তাকালাম।
.
– তোমার সব লুকের পিক ই সুন্দর আসে!আই লাইক ইট!
উনি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বললেন!আমি উনার দিকে তাকিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি আমার পিক তোলায় ব্যস্ত!আমি রেগে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম সেই পিকটাও তুলেছেন!পিকটা দেখামাত্রই আমি ল্যাপটপটা দ্রুত বন্ধ করলাম!উনিও খুললেন না!নিচে নামিয়ে রাখলেন।
.
ইফাজ আমার একহাত টেনে উনার বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন,
– বললে নাতো!বেবি নিবে কয়টা?তখন তো পাচঁ ছয়টার কথা বললে!পাচঁ ছয়টাই নিবে নাকি তারও বেশি?
.
ইশ্!ভাবলাম উনি কথাটা ভুলে গেছেন!
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে মনে নেই টাইপের ভাব নিয়ে বললাম,
– কখন পাচঁ ছয়টার কথা বললাম?
– টিয়াপাখি!দিজ ইজ নট ফেয়ার!নো চালাকি!
– আমার সত্যি মনে নেই!
উনি আমার হাতের পাচঁটা আঙ্গুল সোজা করে উনার বামহাতের পাচঁটা আঙ্গুল আমার আঙ্গুলের পাশে রেখে বললেন,
– দেখো তো!এখানে কয়টা আঙ্গুল?
– দশটা।
– কি বুঝলা?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
– কিছুই না।
– সিরিয়াসলি বুঝো নি!
– না!
– বুঝিয়ে বলি?
– নাহ্!
– ইশ্!বুঝেও না বোঝার এক্টিং করা হচ্ছে, হুম!
কথাটা বলেই উনি উঠে আমার কপালে চুমো খেয়ে আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন!
.
আমি উনার বুকে মাথা রেখে লজ্জায় হাসলাম!উনি আমাকে উনার কোলে শুইয়ে দিয়ে বললেন,
– কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নাও।
– উহুম!
আমি উনার কোল থেকে উঠে বসে হাতের ইশারায় উনাকে আমার কোলে শুতে বললাম।তারপর আস্তে করে বললাম,
– পাচঁমিনিট আপনি ঘুমিয়ে নেন!অনেক রাস্তা!আমি এখন শুয়ে পড়লে পুরো ঘুমিয়ে যাবো!আপনার আর রেস্ট নেওয়া হবে না!
– আগেই বলেছি বিয়ের আগে নো চান্স!……..কথাটা বলেই উনি আমার হাত টেনে নিজের কোলে শুইয়ে দিলেন।আমার গলা থেকে ওড়নাটা ছাড়িয়ে আমার পুরো শরীরের উপর ছড়িয়ে দিলেন।আমি উনার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম।উনি বামহাত দিয়ে আমার চুলের মধ্যে হাত বুলাতে লাগলেন আর ডানহাতে ফোন নিয়ে কাকে যেনো কল করছেন!
.
কিছুক্ষণ পরই উনি আমাকে ডেকে দিলেন!আমি ঘুম ঘুম চোখে উঠে যখন উনার হাতের ঘড়ির দিকে তাকালাম আমার চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেলো!রাত সাড়ে তিনটা বাজে!তিনঘন্টার বেশি সময় ধরে ঘুমিয়ে ছিলাম!আর আমার মনে হচ্ছে একটু আগেই তো চোখ বন্ধ করলাম!একটাবার ও ডাকেন নি!সবসময় কেনো উনি এরকম করেন?
.
আমি অসহায়ত্ব নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– ডাকেন নি কেনো এতক্ষণ?
– ডেকেছি তো!
– কই?শুনতে তো পেলাম না!
– আস্তে আস্তে ডেকেছিলাম!তাই শুনতে পাও নি।
আমি ওড়নাটা ঠিক করে গায়ে জড়িয়ে সামনে তাকাতেই দেখলাম মুরুব্বি দুজন বসে বসে খাচ্ছেন!আমাকে দেখে দাদুটা হেসে হেসে”গুড মর্নিং”বললেন!ইফাজ সাথে সাথেই হেসে দিলো!
.
ইফাজ খাবার আমার সামনে দিয়ে বললো,
– খেয়ে নাও!উনারা তোমার সাথে খাবেন বলে এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন।বাট অনেক ডাকার পরও তুমি উঠছিলে না দেখে আমি উনাদের শুরু করতে বললাম!আমারও কিন্তু খুব ক্ষুধা লেগেছে!
.
উনার কথাগুলো শুনে আমি কিছুক্ষণ উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে খাবারের প্যাকেট থেকে খাবারগুলো বের করে উনার সামনে ধরে বললাম,
– নিন!
– আমার খাবার আমার হাতেই আছে!ওটা তোমার!
– ওহ্!সরি!
আমি খেতে শুরু করলাম।উনিও খাচ্ছেন।সামনের দুজনের খাওয়া কমপ্লিট।একজন খাওয়া শেষ করেই আবার আগের মতো শুয়ে পরলেন।এইবার উনি দাদুটার কোলের মধ্যে শুয়েছেন।আরেকজন সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন।দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যাবেন!
.
প্রায় অনেক্ষণ পর আমার খাওয়া শেষ হলো।ইফাজের অনেক আগেই শেষ হয়েছে!ও বসে বসে এতক্ষণ ফোন দেখছিলো।
টাওয়াল দিয়ে হাত মুছে জানালার সাথে হেলান দিয়ে বাহিরে তাকালাম।
রেললাইনের দুইধারের বাড়িগুলো সব অন্ধকার!সবাই হয়তোবা নিরালায় ঘুমাচ্ছে!
.
ইফাজ একদম আমার গা ঘেষে বসে দুইহাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে থুতনিটা আমার ঘাড়ে রেখে বললেন,
– কি দেখো?
– কিছু না!বাড়িগুলো দেখছিলাম!
– ওগুলো বাড়ি না।ওগুলো বস্তি!
– এক ই!
– তোমার কাছে সবই এক!
আমি উনার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে বাহিরে তাকালাম।উনি এতক্ষণ হালকাভাবে জড়িয়ে ধরে ছিলেন।এখন একেবারে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন!
.
.
ছয়টা চল্লিশের দিকে আমরা ট্রেন থেকে নামলাম।প্লাটফর্ম পেরুতেই দেখলাম আব্বু গাড়ি নিয়ে হাজির।ইফাজ দাদুদের একটা বাসে তুলে দিয়ে আমাকে নিয়ে গাড়িতে বসলেন।আব্বু ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছে।আমি আর ইফাজ পেছনের সিটে।আব্বু সামনের দিকে তাকিয়েই ইফাজের সাথে টুকটাক কথা বলছেন।ড্রাইভার আঙ্কেল আর আমি শ্রোতা হয়ে বসে বসে শুনছি।উনি গাড়িতে উঠেই সেই যে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেছেন ছাড়ার নাম নেই।
.
বাসায় এসেই প্রথমে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ ওভাবেই দাড়িয়ে ছিলাম।আম্মু আমার রুমটা উনার জন্য ঠিকঠাক করে গুছিয়ে রেখেছিলেন।আমি আমার রুমে শুধু পড়ার জন্যই ঢুকি।বাকি সময়ে আমার বোনটার সাথেই ওর রুমে থাকি।
.
উনি আম্মুকে সালাম দিলেন।আম্মু সালামের উত্তর নিয়ে এক সেকেন্ড ও অপেক্ষা না করে উনাকে রুমে নিয়ে গেলেন।আমি আমাদের রুমে মানে নাফিসার রুমে চলে এলাম।নাফিসাকে দেখলাম ও এখনো ঘুমোচ্ছে। আমি আস্তে করে ওর কাছে যেয়ে ওর কানের কাছে বিকট জোরে একটা চিৎকার দিলাম।নাফিসা ভয়ে ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে লাফ দিয়ে নিচে নামলো।ওর কান্ড দেখে আমি হাসতে হাসতে পুরো রুম মাথায় তুললাম!
“উফ্!আপু ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি!” কথাটা বলেই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আব্বুর সাথে যেতে চেয়েছিলাম!কিন্তু দেখ আব্বু আমাকে ঘুম থেকে ডাকলোই না।ভাইয়া কই?
– রুমে!
– ওহ্!দেখা করে আসি!
– এই না!এখন না!ফ্রেশ হচ্ছে মনে হয়।পরে যেয়ে দেখা করিস!
– ওকে!তো এখন বল কি কি করলি!এইদুইদিন কত্ত মিস করছি তোকে!
– আগে বল বার্থডে উইশ করিস নি কেনো?
– ভাইয়া ই তো আমাকে মানা করলো ফোন দিয়ে।তোকে সারপ্রাইজ দিবে তারজন্য।
– কিহ্!
– হুম!আচ্ছা বাদ দে!ভাইয়ার গিফ্ট দেখা!
– ওটা তো ঢাকায় রেখে এসেছি!আনতে পারলে আনতাম!
– মানে?
– পুরো একটা ফ্লাট গিফ্ট করেছে!
কথাটা বলেই আলমারি থেকে ড্রেস বের করে আমি হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে ঢুকে পরলাম।
.
প্রায় পনেরো মিনিট পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি নাফিসা সেই আগের জায়গায়ই বসে আছে।আমি ওর কাছে যেয়ে সামান্য ধাক্কা দিয়ে বললাম,
– কিরে?এখনো এভাবে বসে আছিস কেনো?
– কথাটা নিতে পারি নি!
– উফ্!যা ফ্রেশ হয়ে আয়!
নাফিসা চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে গেলো।আমি কিচেনে আম্মুর কাছে চলে আসলাম।আম্মু আমাকে দেখেই কিচেন থেকে বের করে দিলো আর বলে দিলো একটু রেস্ট করতে!আমি কিচেন থেকে চুপচাপ রুমে চলে আসলাম।নাফিসা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ পর আবার রুমে ঢুকে বললো,
– গেস্টরুমে তো ভাইয়াকে দেখলাম না!কই উনি?
– আমার রুমে!
– ওহ্!
বলেই নাফিসা চলে গেলো ।
.
কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে উঠে পরলাম।বিশমিনিটের মতো হয়ে গেলো কিন্তু নাফিসার রুমে আসার কোনো নাম নেই।সে নিশ্চয় তার রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে ইফাজের সাথে।কাল থেকে এমনিই এক ফোটাও ঘুমায় নি!
আমি বিছানা ছেড়ে উঠে আমার রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
.
রুমের ভেতর ঢুকে দেখলাম ইফাজ আর নাফিসা ল্যাপটপ সামনে রেখে কি যেনো দেখছে।আমি কাছে যেতেই ইফাজ আমার হাত টেনে ওর পাশে বসিয়ে বললো,
– তুমি তো দেখো নি এই পিকগুলো!এসো একসাথে দেখি!
আমি ল্যাপটপটা ঠাস্ করে বন্ধ করে নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– পিকগুলো পরেও তো দেখতে পারতিস!আজ সারারাত উনি জেগে ছিলেন!কমনসেন্স বলে তো একটা কথা আছে,নাকি!
– আপু আমি তো দেখতে চাই নি!ভাইয়া নিজে আমাকে বের করে দেখাচ্ছেন!
আমি উনার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকাতেই উনি নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– শালি!তুমি ই তো দেখতে চেয়েছিলে তখন!সত্যি টা বলো!
ইফাজের কথা শুনে নাফিসা অসহায়ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে বললো,
– ভাইয়া!আপনিও?
– কি আমি?যাও যাও!আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে!আমি ঘুমাবো।
.
.
(চলবে)
# Real_Love♥
# Oniya_Chowdhury
Part:20
.
.
নাফিসা ল্যাপটপটা নিয়ে রুমে চলে গেলো।আমি মাত্রই বেড থেকে উঠতে যাবো সেই মুহূর্তে হাত ধরে টান দিলো!আমি ভয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– কি?
– বসো!
– প্লিজ!
– কি প্লিজ?
– ঘুমিয়ে নেন একটু!
– একটা কনডিশনে ঘুমোবো!
– কি কনডিশন?
– চুল টেনে দিতে হবে!
– কিহ্!পারবো না!
– প্লিজ?
– অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!
– সেটাই তো চাই!
বলেই উনি আমার হাত টেনে উনার পাশে বসিয়ে আমার কোমড় ধরে শুয়ে পরলেন।হঠাৎ এভাবে কোমড় জড়িয়ে ধরাতে ভয় পেয়ে এক নিশ্বাসে কয়েক সেকেন্ড ওভাবেই ছিলাম!
.
আমি চুপচাপ উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম!কিছু করছিলাম না দেখে উনি চোখ খুলে আমার দিকে তাকাতেই আমি অন্যদিকে তাকালাম। উনি আস্তে করে বললেন,
– সুযোগ দিয়েছি কিন্তু!কাজে লাগাও!বিয়ের আগে কিন্তু আর পাবা না এভাবে!
.
আমি একবার দরজার দিকে উকিঁ দিলাম!আম্মু যেকোনো সময় উপস্থিত হতে পারে!এই অবস্থায় একবার আম্মু দেখে ফেললে আমি ওখানেই শেষ!
.
আমি কোমড় থেকে উনার হাতটা যতবার ছাড়ানোর চেষ্টা করছি ততবারই উনি শক্ত করে ধরছেন!
.
– ছাড়ুন!আম্মু আসছে!
কথাটা বলে উনাকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করলাম!কিন্তু উনি ভয় না পেয়ে উল্টো আমার কোলে মাথা রেখে দুইহাত দিয়ে দুইদিক থেকে কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– টিয়াপাখি!যেটা বলেছি সেটা করো!আন্টি তোমার মতো বোকা না!তিনি অযথা এই রুমে ঢুকে তার মেয়েজামাইকে লজ্জায় ফেলবেন না!সো ভয় না দেখিয়ে চুল টেনে দাও!
.
এই প্রথম উনি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছেন!উনার এরকম স্পর্শে পুরো শরীর কাপছেঁ!উনি যে আমাকে ছাড়বেন না সেটা আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি!
কোনোকিছু না ভেবে আমি একহাত দিয়ে উনার চুল আস্তে আস্তে টানতে লাগলাম!
.
কিছুক্ষণ পর উনার কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না।আমি মৃদু গলায় ঘুমিয়েছেন কিনা সেটা পরীক্ষা করার জন্য ডাকলাম!কিন্তু কোনো সাড়া পেলাম না!এতো তাড়াতাড়ি ঘুমানোর মানুষ তো উনি নয়!আমি আবার ডাকলাম,
– ঘুমিয়ে পরেছেন?
-……
– একদম ঢং করবেন না কিন্তু বলে দিলাম!
কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিলাম না দেখে আলতো করে উনার গালে হাত রাখলাম!তবুও উঠলেন না!সত্যি সত্যিই মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে পরেছেন!
কেনো যেনো খুব উনার নাম ধরে ডাকতে ইচ্ছে করছে!ঘুমিয়েই তো আছেন!ডাকলে টেরই পাবেন না!আমি উনার গালে হাত দিয়ে আলতোভাবে কিছুক্ষণ স্লাইড করলাম!
গভীরভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি!ঘুমোলে উনাকে কত্ত সুন্দর লাগে!আমি উনার একদম কাছে যেয়ে চোখের উপর একটা চুমো দিলাম!উনি একটুও নড়লেন না!তারমানে একেবারে ঘুমিয়ে পরেছেন!আমি কোনোকিছু না ভেবে আস্তে করে”ইফাজ”বলে ডাকলাম!
.
সাথে সাথেই উনি বলে উঠলেন,
– ভয়েসটা মনে হলো আমার বউয়ের!ঠিক শুনলাম তো?
ওহ্ মাই গড!উনি জেগে আছেন!হঠাৎ উনার কন্ঠ শুনে প্রচন্ড ভয় পেলাম!সাথে সাথেই বুকে থুথু দিয়ে উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একদৌড়ে রুমে এসে নাফিসার পাশে বসে পরলাম!হঠাৎ আমাকে এভাবে রুমে আসতে দেখে নাফিসা ভয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে বললো,
– আপু!কি হয়েছে?এরকম করছো কেনো?
আমি একটা ঢোক গিলে নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– বোন রে!আমি নাম ধরে ডেকেছি!
– মানে?কার নাম?কিসের নাম?
– ই ই ইফ…..
– ওকে ওকে…..স্টপ!আগে রিলেক্স হও তারপর বল!
আমি উল্টোপাশ হয়ে শুয়ে পরলাম!কিন্তু মনের ভেতর হার্টবিট প্রচন্ড দ্রুত গতিতে ওঠানামা করছে!শোয়া থেকে উঠে বসলাম।নাফিসা ভয় আর উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– কি হয়েছে?
– হুম?
– কার নাম ধরে ডেকেছো?
– উনার!
– ভাইয়ার?
আমি মাথা উপর নিচ করে”হুম” বললাম!
– উফ্!আপু সত্যিই তুমি পারো ও!
কথাটা বলেই নাফিসা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আবার সেই আমার আর ইফাজের বার্থডে পিক দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো!
আমি আস্তে করে উল্টোপাশ হয়ে শুয়ে পড়লাম।বুকের ভেতরটা কাপছেঁ!উনি শুনে ফেলেছেন!হ্যা,উনি শুনে ফেলেছেন!
– নাফিসা!উনি শুনে ফেলেছেন!
আনমোনেই কথাটা মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো!
নাফিসা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,
– প্লিজ!অফ যাও!ডিজগাস্টিং!হাজবেন্ডের নাম ধরে ডাকতেই পারো,এতো ভয় পাওয়ার কি আছে, আজব!
.
নাফিসা কখনোই আমার অবস্থাটা বুঝবে না।আমি রুম থেকে বের হয়ে কিচেনে চলে এলাম!আম্মু নেই!হয়তোবা রুমে!
.
কিচেন থেকে ড্রইংরুমে চলে এলাম!টিভি অন করলাম!
আমার চোখগুলো টিভির দিকে তাকিয়ে আছে!কিন্তু মনটা কারোর ভয়ে বুকের ভেতরেই এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে!
টিভিটা একেবারে অফ্ করে দিলাম!
.
আম্মুর রুমে চলে এলাম!আম্মু ইউটিউবে রান্নার রেসিপি দেখছিলো।আমাকে দেখামাত্রই আম্মু টেনে আম্মুর পাশে বসিয়ে বললো,
– দেখতো,এই রেসিপিটা কেমন?
আমি না দেখেই বললাম,
– হুম,ভালো!
– ইফাজকে রান্না করে খাওয়াবো!তিনটা দেখা অলরেডি শেষ!
– আম্মু!জানো আমি…..
আম্মু ফোন থেকে চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– হুম!
– কি?
– কি যেনো বললি?
– কই?
আমি তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হলাম!বলা যাবে না!কাউকেই বলা যাবে না এই কথা!আমি রুমের বাহিরেই হাটাহাটি করছি।আর নিজের আঙ্গুল নিজেই টানছি!
“ইফাজ” আহ্!নামটা কি অদ্ভুত সুন্দর! কিন্তু নামটার ভেতর এতো ভয় কেনো!সামান্য তো ডেকেছি আর তো কিছু করি নি!
.
আমি নিঃশব্দে পা টিপেটিপে আমার রুমের ভেতর উঁকি দিলাম!উনি ঘুমোচ্ছেন!চিৎ হয়ে বালিশের উপর মাথা রেখে একহাত মাথার নিচে দিয়ে অন্যহাত বুকের উপর রেখে পা লম্বা করে একপায়ের পাতার উপর অন্য পা রেখে নিরালায় ঘুমোচ্ছেন!দেখে মনে হচ্ছে সবচেয়ে সুখী মানুষ!চেহারায় না আছে কোনো চিন্তার ছাঁপ আর না আছে কোনো ভয়!
এদিকে আমি!ভয়ে কোথাও না পারছি বসতে আর না পারছি শুতে!
.
উনাকে দেখে কেনো যেনো মনে হচ্ছে উনি এখনও জেগে আছেন!শুধু চোখটাই বন্ধ করে আছেন!উনি কি আমার উপস্থিত বুঝতে পারেন?
রিক্স নেওয়া যাবে না!দ্রুত ওখান থেকে চলে আসলাম!
.
রুমে চলে আসলাম।নাফিসা ল্যাপটপ নিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছিলো।আমাকে দেখেই নাফিসা বলে উঠলো,
– পিকগুলো কে তুলেছিলো আপু?
– প্রান্ত ভাইয়া আর রনিক ভাইয়া!কেনো?
– ভীষন সুন্দর হয়েছে পিকগুলো!বিশেষ করে তোমার আর ভাইয়ার কেক খাওয়ানোর পিকটা!
আমি ভ্রু
কুচঁকে জিঙ্গেস করলাম,
– কোনটা?
– ওই যে তোমার হাত ধরে তোমার হাতে ভাইয়ার কেক খাওয়াটা!
– ওহ্!
.
নাফিসা ল্যাপটপটা নিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।রেখে আসতে যাচ্ছে মনে হয়।আমি চুপচাপ যেয়ে বিছানায় বসে পরলাম।
কিছুক্ষণ পরই নাফিসা ল্যাপটপটা রেখে এসে রুমে ঢুকেই বললো,
– আপু!ভাইয়া ডাকছে তোমাকে।
কথাটা শুনেই আমি চোখ বড় বড় করে নাফিজার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– উনি এখনো ঘুমান নি?
– নাতো!ফোন চালাচ্ছিলেন দেখলাম।
আমি অসহায়ভাবে নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– উনি এমন কেনো রে?
আমার কথা শুনে নাফিসা চোখদুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,
– কেমন?
– এই যে কাল সারাদিন এতো পরিশ্রম,তার উপর জার্নি করে এতোদূর আসা,তারপরেও কোনো উইকনেস নেই উনার মধ্যে!
– ওহ্!ঘুম না আসলে তো আর জোড় করে ঘুমোতে পারবে না!না ঘুমিয়েও শুয়ে শুয়ে রেস্ট নেওয়া যায়।যেই কাজটা এখন ভাইয়া করছে!বেশি কথা না বাড়িয়ে ভাইয়া ডাকছে ওখানে যাও!
.
আমি নাফিসাকে দেখিয়ে দেখিয়ে রুম থেকে বের হলাম ঠিকই!কিন্তু উনার কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না!বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম সেই মুহূর্তে আম্মুকে এদিকে আসতে দেখলাম!
আমাকে দেখেই আম্মু এগিয়ে এসে বললো,
– ইফাজ কি ঘুমিয়ে পরেছে?
– কেনো?
– দরকার ছিলো।
আম্মুর কথা শুনে আমি চালাকি করে বললাম,
– যেয়ে দেখে আসো!
– নাহ্!এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না।তুই একটু তোর শ্বাশুরির নাম্বারটা দে!
– আমার ফোন তো আনি নি।ভুলে রেখে এসেছি!তোমাকে না সেদিন ফোন করে ইয়াশের সাথে আমার দেখা হওয়ার ঘটনাটা জানালো তখন সেভ করে রাখো নি?
– ওইটা তো তোর আব্বুর ফোনে কল দিয়েছিলো।
– তো আব্বুর কাছ থেকে নাও।
– বাসায় নেই!ইফাজের কাছ থেকে এনে দে!
– তুমি চলো আমার সাথে!
– আমার কিচেনে একটু কাজ আছে।তুই তাড়াতাড়ি নাম্বারটা এনে দে।
কথাটা বলেই আম্মু চলে গেলো।কথাটা এমনভাবে বলে গেলো মনে হলো আমার সাথে উনার কাছে যাওয়াটাকে এভয়েড করলো।
.
আমি ওড়নাটা ঠিকঠাক করে সরাসরি রুমে ঢুকে উনার দিকে না তাকিয়ে বলে ফেললাম,
– আন্টির নাম্বারটা একটু দিন।আম্মু চেয়েছে!
– আসতে এতো লেট হলো কেনো?এদিকে এসো!
উনার কথাটা শুনেই হাতপা রীতিমতো দ্বিগুন জোরে কাপঁতে শুরু করলো।আমি আমার ওড়নার কোনা ধরে টানাটানি করতে করতে বললাম,
– সময় নেই!নাম্বারটা একটু তাড়াতাড়ি দিন!আর্জেন্ট!আমাকে এখনই আম্মুর কাছে যেতে হবে কাজ আছে!
কোনোরকমে মিথ্যা কথা বলে উনাকে তাড়া দিচ্ছিলাম।যাতে উনি তাড়াতাড়ি নাম্বারটা দিয়ে দেন।
.
কিন্তু উনি আমার কথার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দিলেন!উনার কান্ড দেখে ভয়ে আমার জান বের হয়ে যায় যায় অবস্থা!ভয়ে আমি পেছনেও তাকাতে পারছি না!
.
অনেকক্ষণ উনার কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না।উনার এরকম নিরবতা আমার হার্টবিটের কম্পন আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে!
হঠাৎ আমার ডানপাশের কোমড়ে কারোর হাতের স্পর্শ পেতেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসলো!নিতে পারছি না আমি এই অদ্ভুত স্পর্শ!বাম কোমড়েও হাত রাখলেন!আস্তে আস্তে দুইহাত পেচিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন উনি!
উনার এরকম স্পর্শে আমার পুরো শরীর আবেশে ছেয়ে গেলো!শরীরের সম্পূর্ণ ভার আমি উনার উপর ছেড়ে দিলাম!উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার কাধে একটা চুমো দিলেন!
উফ্!আমি শেষ!
.
আমি ছাড়ানোর চেষ্টা না করলে উনি কখনোই নিজে থেকে আমাকে ছাড়বেন না!
আমি কোনোরকমে উনাকে বললাম,
– আম্মু ওয়েট করছে!ছাড়ুন!
আমার কথা শুনে উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,
– পাচঁমিনিট!
.
.
(চলবে)