মেয়ে_তো_হবে_এমনই
শেষ_পর্ব
স্মিতার বাসার সামনে এসে অভি গাড়ি থামালো।গাড়ি থেকে নামার পূর্বে অভি স্মিতাকে বলল,
– খুব শীঘ্রই তোমার বাসার লোককে আমি ইনভাইট করবো।
কথাটি শুনে মাধু চকিতে ফিরে তাকালো অভির দিকে।এইটুকু সময়ের মধ্যে বিয়ের কথাবার্তাও ফাইনাল হয়ে গেলো নাকি?
স্মিতা মুচকি হেসে গাড়ি থেকে নামলে মাধুও নেমে দাঁড়ালো। অভি বলল,
– আমি যতদূর জানি আপনার বাসা এখানে নয়।
মাধু বলল,
– আমি এখান থেকে নিজেই চলে যেতে পারবো।
স্মিতার দিকে আড়চোখে তাকালো অভি।স্মিতা মাধুকে বলল,
– আরে তুই এতখানি পথ একা যাবি কেনো?ও পৌঁছে দেবে তোকে।
মাধু অবাক চোখে তাকালো স্মিতার দিকে।এইটুকু সময়ের মধ্যে ‘ও’ তে পরিণত হয়ে গেছে দুজনের সম্পর্ক! মাধু ভদ্রতার খাতিরে অভির গাড়িতে গিয়ে বসলো আবার।তবে অভি এবার মাধুকে পেছনে বসতে দিলোনা।তার পাশের সিটে এসে বসলো মাধু।রাস্তার মাঝে এসে ওরা দেখলো কয়েকজন মিলে গাড়ি ভাংচুর করছে।আর তাদের স্ল্যাং দিচ্ছে।ওদের গাড়ি ভাংচুর করার সাংঘাতিক অবস্থা দেখে মাধু ভয়ে অভির বাহু চেপে ধরে বলল,
– আপনি গাড়ি ঘুরান প্লিজ।নিশ্চয় কোনো কারণে জনগণ ক্ষেপেছে।আপনার গাড়িও রক্ষা পাবেনা আর আমরাও না।
অভি হালকা হেসে মাধুর মাথাটা টেনে নিজের কাঁধে শুইয়ে দিলো।মাধু অভির এই কাজটা নেগেটিভলি নিয়ে ওর কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে বলল,
– এটা কী ধরনের অসভ্যতামি করছেন আপনি?
– অসভ্যতামি এটাকে বলেনা।আমি এখন পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টায় আছি।
তাই বলেই অভি আবার ওর মাথাটা নিজের কাঁধে টেনে নিলো।আর বলল,
– চুপচাপ আমার হাত জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে থাকুন।
অভি গাড়িটা ধীর গতিতে যখন সামনে এগিয়ে নিয়ে গেল তখন চারটা ছেলে হাতে স্টিক নিয়ে এগিয়ে এলো।অভি জানালা দিয়ে মাথা বের করে ওদের কাছে অনুরোধের সুরে বলল,
– বউ খুবই অসুস্থ, প্রেগন্যান্ট। একটু কন্সিডার করুন ভাই।
ছেলেগুলো অভির কথা বিশ্বাস করে নিলো যখন দেখল মাধু অভির কাঁধে মাথা দিয়ে পড়ে আছে।ওকে ছেড়ে দিলো তারা। খানিকটা দূরে গিয়ে মাধু মাথা তুলে রাগ করে বলল,
– কী বললেন আপনি ওদের?
– বললাম গার্লফ্রেন্ড প্রেগন্যান্ট।
কথাটা বলে দুষ্টু হাসি দিলো অভি।গাড়িতে বসে আর কোনো কথা বলল না ওরা।মাধু ইচ্ছাকৃতভাবে অভির কথার কোনো প্রতিবাদ জানালোনা কারণ ও বুঝে গেছে অভির মুখ হলো বেসামাল।কথা বাড়িয়ে লজ্জা নেওয়ার কোনো মানেই হয়না। যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি থেকে নামতে পারলে বাঁচে।
মাধুকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে অভি বাড়ি চলে এলো।সিঁড়ি থেকে তাকে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে উঠতে দেখে আমেনা বেগম এগিয়ে এলো।
– কিরে তুই কী রাস্তা থেকে টাই, বোতাম খুলতে খুলতে এলি?
– না টাই তো রেস্টুরেন্টে স্মিতার পাশে বসেই খুলেছি।
ছেলে অতি স্বাভাবিকতা দেখে আমেনা বেগম ধরেই নিলো সকালে তার ছেলে যা বলে বেরিয়েছিল নির্ঘাত সে তাই করেই ফিরেছে।আমেনা বেগম রাগান্বিত গলায় বলল,
– স্মিতা মাধুর বান্ধবী না?তুই ওর পাশে কেন বসেছিলি?
সোফায় বসে পায়ের জুতা খুলতে খুলতে বলল,
– কথা বলবো তাই।
– তার মানে তুই স্মিতাকেই পছন্দ করে এসেছিস?
– বিয়ের তারিখ ঠিক করো।একবারে বিয়ের দিন বলবো।
কথাটা বলেই অভি জুতা মুজা, শার্ট আর টাই ড্রয়িংরুমে রেখেই নিজের রুমে চলে গেলো।
–
–
–
বাসরঘরে মাধু এসেছে দশ মিনিটও হয়নি। অভি এসে বাসরঘরে ঢুকলো হাফ প্যান্ট পড়ে খালি গায়ে।মাধুর মাথার অবস্থা এমনিতেই খারাপ।তারউপর অভির এত দ্রুত রুমে আসা আর ওর লুকআপ দেখে মাধুর ভীমড়ি খাওয়ার উপক্রম।অভি মাধুর সাথে কোনো কথা না বলে ইনফ্যাক্ট ওকে না দেখার ভান করে জলদি ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।দশ মিনিটের শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পড়ে বেরিয়ে এলো।এসে দেখল মাধু বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে মুখটা অন্ধকার করে।অভি বলল,
– কী ব্যাপার তুমি এখনো চেইঞ্জ করোনি?নাকি আমি এসে খুলবো বলে আমার অপেক্ষাতে আছো?
কথাটা বলে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বডি স্প্রে গায়ে মাখতে মাখতে আবার বলল,
– দেখো ওসব ভারী জিনিস আমি খুলতে গেলে ছিড়ে টিড়ে যাবে।তার থেকে তোমার খোলাটায় বেটার।আর হ্যাঁ নর্মাল কিছু পরো যাতে আমার সুবিধা হয়।
মাধু চিল্লিয়ে বলে উঠলো,
– কী বললেন আপনি?আমি আপনার মত এত লুচ্চা ছেলে আমার জীবনে দেখি নি।
অভি মাধুর কাছে এগিয়ে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
– যে ছেলের মাঝে লুচ্চামি নেই তাকে ছেলে বলেনা।
মাধু দূরে সরে এসে বলল,
– আপনি থামুন, আপনি মিথ্যা কেন বললেন?
– কখন বললাম?
– আপনি বলেননি আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না?
– বলেছিলাম নাকি?না না, আমি এ কথা কখনোই বলি নি যে আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা।আমি বলেছিলাম আমাকে নিয়ে তুমি একদম ভাববে না।তার অর্থ কী এটা যে আমি বিয়ে করবোনা?
– আপনি তো স্মিতাকে পছন্দ করেছিলেন।
– করেছিলাম, শ্যালিকা বলে কথা।আর শোনো এত প্যাচপ্যাচ করোনা।পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মুখ দেখেছি, বুঝলে।টাকা দিয়ে মুখ দেখবো আমি আর বিয়ে করবে ওই সাদা গরু? ওহ্ ভালো কথা, তুমি একবার তোমার আইডিতে ঢুকো তো।
– কেনো?
– আরে ঢুকো আগে।ওহহো, তোমার আইডি তো হ্যাক হয়েছে না?
– আপনি কী করে জানলেন?তাহলে আপনিই…
– হ্যাঁ রে ভাই আমিই।
অভি মাধু্র আইডি লগ ইন করে ফোনটা ওর হাতে দিলো। মাধু দেখলো ওর বয়ফ্রেন্ড গত তিন দিন আগে বিয়ে করে ওয়েডিং ফটো এড করেছে ফেসবুকে।অভি ওর কাছে এসে এগিয়ে বলল,
– এসব বাল ছালদের জন্য আবেগ ক্ষয় না করে আমাকে সন্তুষ্ট করার কাজ করো জলদি।
দু মিনিটের মধ্যেই মাধু মাথা ঘুরে অভির গায়ের ওপর পড়লো।
পনেরো মিনিট পর____
মাধু শুয়ে আছে অভির কোলের ওপর।জ্ঞান ফিরে তাকিয়ে দেখল অভি পা মেলে বসে ডায়েরীতে কী যেন লেখালেখি করছে।অভির কোল থেকে দ্রুত উঠে বসলো।নিজের নগ্ন সাদা পা দেখে মাধুর চোখ ছানাবড়া।ও অভির মত একটা হাফ প্যান্ট আর একটা টি শার্ট পরে আছে সে।অভি ডায়েরীর লেখাটা শেষ করে মাধুর দিকে তাকালো।মাধু মুখ একদম পেঁচার মত করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।তারপর চিৎকার করে অভিকে বলল,
– আপনি এটা কীভাবে করতে পারলেন?
অভি বলল,
– ডিটেইলসে বলবো?আচ্ছা বলি, প্রথমে তোমাকে বিছানায় শোয়ালাম তারপর শাড়িটাতে আটকানো পিন, ব্রুজ, সেফটিপিন এগুলো খোলার অত ধৈর্য ছিলনা আমার।তাই টান দিয়ে ছিড়েই ফেললাম শাড়িটা।ছিড়তে অবশ্য ভালোই লেগেছে, কুচিগুলো খুলতে বেশি ভালো লেগেছে।এরপর…
– ব্যাস!
– ধন্যবাদ দিতে হবেনা।ইটস মাই প্লেজার।
মাধু কেঁদে ফেলল।কাঁদতে কাঁদতে বলল,
– আমাকে কোথায় ফেলে গেলে আম্মু!
অভি মুখটা অসহায়দের মত করে মাধুকে টেনে নিলো বুকে। মাধু কান্নাতে ব্যস্ত থাকায় কোনো রিয়্যাক্ট ছাড়াই অভির বুকে মাথা রাখলো।অভি আহ্লাদ করে বলল,
– কাঁদেনা বাবুটা।আমি তো শাড়িটা খুলে শুধু তোমার শরীরের তিলগুলো গুণে ডায়রীতে নোট করেছি।আর তো কিছুই করি নি।
মাধু কথাটা শুনে কান্না থামিয়ে পুতুলের মত পুরো স্তব্ধ হয়ে রইলো ওর বুকে। আর কোনো কথা বের হলোনা ওর মুখ থেকে।
অভি মাধুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
– মেয়ে তো হবে এমনই।শান্ত, চুপচাপ, ভদ্র। এভাবেই স্বামীকে সন্তুষ্ট করতে হয়।
সমাপ্ত___