#শিশির_কণা
শামসুল ইসলাম
(পর্বঃ- ১৫)
আমার পরিক্ষা শেষ হয়েগেছে, গত সপ্তাহে আমার শাশুড়ি আম্মু নিজে যেয়ে আমাকে নিয়ে এসেছেন।
মনের ভিতরে একটা প্রশ্ন উকি দিচ্ছে! এতদিন হলো, শিশির শাকিলের কি আর কেউ নেই!
থাকলে তো তাঁরা এবাড়িতে আসতেন। আম্মুর কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম–
-” আচ্ছা আম্মু! আমার তো এতদিন বিয়ে হলো, গ্রাম থেকে তো কাউকে আসতে দেখিনা। বিয়েতে তো তেমন কেউ ছিলেননা! কারন কি?”
-” আর বলিসনে মা! আমি পড়েছি ফাঁপরে, তোর শশুর যখন মারা যায়! তখন গ্রামে দাফনকাফন করানো হয়।
তোর শুশুরেরা চার ভাই, তিনি সবার বড়ো ছিলেন। গ্রামের কিছু রীতিনীতি আছে সেগুলো শিশির আর শাকিল বলেছিল বিদআত, যেমন কবরের উপরে খেজুরের ডাল পুতে রাখা। তারপরে মাইয়েতের পাসে আগরবাতি জ্বালান, কোরআন খতম, দোয়া ইউনুছ খতম, কালেমা খতম, তারপরে ফয়তা চল্লিশে।
এসব বিষয়ে তাঁদের মাঝে বাকবিতণ্ডা হয়।
তোর চাচা শশুরেরা বলেছিলেন এসব করতে হবে, কারন বাপদাদার আমাল থেকে এটা চলে আসছে, তাই এটা পরিত্যাগ করতে রাজি নই তাঁরা।
কিন্তু শিশির বলে! না বিদআতি কর্মকাণ্ড আমার মৃত বাবাকে নিয়ে করতে পারবোনা।
তখন তাঁরা বলেছিল দুপাতা কোরআন হাদিস পড়ে বড়ো হাদিস শিখছে!
এভাবে শিশির শাকিল তাঁদের সিদ্ধান্তের ওপরে অটল ছিলো, কোনো গর্হিত সুন্নাতে খেলাফ ও বিদআতি কর্মকাণ্ড করতে দিইনি। এইসব কথা নিয়ে তাঁদের মাঝে মনমালিন্য হয়, আমাদের সমাজ থেকে ছাঁটায় করে দিয়েছন। কোনো অনুষ্ঠান হলে আর বলাবলি হয় না, তবে তোদের বিয়েতে তাঁদের সকলের দাওয়াত করেছিল। কিন্তু কেউ আসেননি।”
-” কি বলেন আম্মু! চাচারা তো ঠিকি বলেছেন, আমাদের পূর্বপুরুষগন করে আসছেন আমরা পরিত্যাগ করবো কেন?
তাছাড়া হাদিসে আছে নাকি মানুষ খাওয়া অনেক বড়ো সওয়াবের কাজ।”
-“কি জানি বাপু! এতো হাদিস কোরআন বুঝিনা, শিশির বাসায় আসলে জেনে নিস!”
আমি এব্যাপারে আর কথা না বাড়িয়ে আমার রুমের দিকে রওনা করলাম।
★★★
শিশির রাতে বাসায় ফিরলেন, রাতের খাবারদাবার পরিসমাপ্তি করে এশার সালাত পড়লাম দুজনে।
আজ বিশেষ কারনে শিশিরের এশার জামাতে সালাত আদায়ে বিলম্বিত হওয়ার কারনে একসাথে দুজনে বাসায় সালাত আদায় করলাম।
টুকিটাকি কথাবার্তার পর শুয়ে পড়লাম, শিশিরের দিকে তাকাতেই জিজ্ঞেস করলেন-
-” কি বলবা বলো?”
-” মানে! কি বলবো আপনাকে?”
-” আমাকে বলনি! কিন্তু তোমার চোখ বলে কিছু একটা বলতে চাও।”
-” হাহাহা ঠিক ধরেছেন! বলছিলাম কি!
আম্মুর সাথে কথা হলো আপনাদের গ্রামের চাচাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ হবার বিষয়ে।
তাই সেসব ব্যাপারে কিছু জানতে চাচ্ছি।”
-“আম্মু তো সব বলে দিয়েছেন! নতুন করে কি বলবো!
-” সেসব না! মানে আব্বুকে নিয়ে যে ঝামেলা হয়েছিল, সেসব বিদাআত বলেছেন তাই জানতে চাচ্ছি।”
-” আচ্ছা তাহলে আর আধাঘণ্টা পরে বলি?”
-” ঠিকআছে!
শিশিরের সাথে অন্যান্য সাংসারিক বিষয়ে খুঁটিনাটি কথাবার্তা হলো।
রাত ১১টার দিকে বললেন- ” অপেক্ষা করো এখনি আসছি।”
-” আচ্ছা!”
কিছুক্ষণ পর দুই কাপ কফি নিয়ে হাজির!
-” কি ব্যাপার! আমাকে না বলে আপনি কষ্ট করতে গেলেন কেন?”
-” সমস্যা নেই খাও! এটাও ইবাদত।”
-” তাইনা! এবার আসল কথা বলুন?”
-” অনেক কথা!
আব্বু যখন মারা যায়, তখন আমাদের বাড়িতে চাচারা সবাই আসলেন। মেজো চাচা পাসের মাদরাসা থেকে কয়েকজন কোরআনের হাফেজ আনেন লাশের পাশে কোরআন তেলায়ত করার জন্য।
আমি তা করতে দিইনি তারজন্য বড়োচাচা অনেক রাগবাগ করলেন, বললেন কোথায় পেয়েছিস এসব! সারাজীবন করে আসছি আমরা, আর তুই কোথাথেকে কি পড়ে এসে বিদাআত বলছিস?
আমি বলেছিলাম-
– চাচা! রাসুল সাঃ ও সাহাবীগন কখনোই কোরআন খতম করেননি, এছাড়া কারো জন্য কুরআন খতম করলে তিনি সওয়াব পাবেন এরূপ কোন সহিহ বা গ্রহনযোগ্য হাদিসে বর্ণিত হয় নি।
মৃত্যুর পর মাইয়েতের জন্য দো’আ করার নির্দেশ আছে। তাছাড়া সন্তানগণকে মৃত পিতামাতার জন্য দান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এছাড়া মৃত ব্যক্তির পক্ষথেকে ঋণ পরিশোধ, সিয়াম পালন, হজ্জ ও উমরা পালনের কথাও হাদীসে বলা হয়েছে।
কিন্তু মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন তেলায়ত, কুরআন খতম, তাসবিহ তাহলীল পাঠ ইত্যাদি ইবাদতের কোনো নির্দেশনা হাদীসে বর্ণিত হয়নি।
তবে এব্যাপারে অনেক আলিম মত দিয়েছেন, তবে এইজন্য যে আনুষ্ঠানিকতা, খতম ইত্যাদি সবই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
এভাবে বলার পর চাচারা থামলেন, আব্বুকে গোসল করিয়ে কাফনে মুড়িয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।
গ্রামের মসজিদ মাঠে বাবার জানাজা অনুষ্ঠিত হলো, তারপূর্বে আরেক ঝামেলা শুরু হলো!”
-” কিরকম ঝামেলা?”
-” বাবাকে জানাজা পড়ানোর পূর্বে মেজো চাচা জনতার উদ্দেশ্যে বললেন?
– আমার ভাই মারা গেছেন সবাি ক্ষমা করে দিবেন। এবার বলেন, আমার বড়োভাই কেমন ছিলো? ভালো না খারাপ?
সবাই বললো ভালো। আমি চাচার কানেকানে বললাম- চাচা এটা বলতে নেই বানোয়াট কথা, বরং হাদীসে আসছে কোনো মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে যদি মানুষেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রসংশা করেন তবে তা সেই ব্যক্তির জন্য কল্যাণকর বলে গন্য হবে।
চাচা জনসম্মুখে কিছুই বললেন না, বুঝতে পারলাম রাগবাগ করেছেন মনেমনে।
আব্বুর জানাজা সমাপ্তীর পর লাশ কবরের উদ্দেশ্যে সবাই খাটিয়া ঘাড়ে নিলেন। মেজ চাচা বললেন-
-সবাই সশব্দে কালিমা, দো’আ বা কুরআন পাঠ করো?
আমার ভাই শাকিল বললো- চাচাজান! এটা সুন্নাতের বিপরীত কর্ম। লাশ বহনের সময় পরিপুর্ন নীরবতাই সুন্নাত।
আমার উচিৎ বাবার গভীর শোক ও মৃত্যু চিন্তা নিয়ে নীরবে পথে চলতে হবে।
পরস্পরে কথাবার্তা বলাও সুন্নাত বিরোধী।
কারন সাহাবীগন বলেছেন- রাসুল ( সাঃ) তিন সময়ে শব্দ করতে অপছন্দ করতেন।যুদ্ধ, জানাযা এবং যিকর। এছাড়া লাশ বহনের সময় সশব্দে যিকর করা ইহুদী -নাসারাগণের অনুকরণ, এইজন্য তা মাকরূহ। (কাসানী, বাদাইউস সানাই’ ১/৩১০)
যাইহোক, এসব বলার পর কবরস্থানে বাবাকে নিয়ে যেয়ে দাফন করা হলো।
খেয়াল করলাম! মুরব্বি এক চাচা বাবার কবরের ওপর খেজুরের একটা ডাল চিরে পুতে দিচ্ছেন।
তাকে বাঁধা দিয়ে বললাম-
– চাচা ওটা উপড়ে ফেলুন, দেওয়া যাবেনা।
চাচা বললেন- কি বলো বাবা! এটা সেই ছোটবেলা থেকে করে আসছি আর তোমরা নতুন নতুন হাদীস তৈরি করছো?
বরং এটা পুতার হাদীস আছে।
-না চাচা তা নেই, সে হাদীস আমিও জানি সেটা হচ্ছে — ইবনু ‘আববাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তিনি বললেনঃ এদের ‘আযাব দেয়া হচ্ছে, কোন গুরুতর অপরাধের জন্য তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব হতে সতর্ক থাকত না। আর অপরজন চোগলখোরী করে বেড়াত। তারপর তিনি একখানি কাঁচা খেজুরের ডাল নিয়ে ভেঙ্গে দু’ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক কবরের উপর একখানি গেড়ে দিলেন। সহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কেন এমন করলেন? তিনি বললেনঃ আশা করা যেতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত এ দু’টি শুকিয়ে না যায় তাদের আযাব কিছুটা হালকা করা হবে। ইবনুল মুসান্না (রহ.) আ‘মাশ (রহ.) বলেনঃ আমি মুজাহিদ (রহ.) হতে অনুরূপ শুনেছি। সে তার পেশাব হতে সতর্ক থাকত। (বোখারী,২১৮)
সুদীর্ঘ নবী-জীবনের একটি ঘটনা। একদিন তাঁর জীবনের অগণিত ঘটনা অপরদিকে একটি ঘটনা। দাঁড়িয়ে পেশাবের নিয়মে ক্ষেত্রে যা বলেছি এখানেও তাই বলতে হয়।
এব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখা “এহ্ইয়াউস সুনান” ৪০২ পৃঃ পাওয়া যাবে।
যাইহোক কবরের ওপর খেজুরের ডাল পুতাটা এ হাদীস কেন্দ্র করেই উদ্ভাবিত।
তাছাড়া তাঁর দীর্ঘজীবনে আর এমন নজীর নেই।”
শিশিরকে বললাম- ” কপি শেষ করে নিন, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
-” না আর খাবোনা।”
আমি খেয়ে নিলাম, শিশির আমার এমন কাণ্ড দেখে মুচকি হাসলেন।
তাঁর পর শিশির আবার বললেন-
-” বাবার দাফনের পর মেজচাচা ঘোষনা করলেন আগামী ৭ দিন পর ফয়তা।”
-” আমি সবাইকে অনুরোধ করলাম! এখন মোনাজাত করুন। মোনাজাত শেষে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বললাম-
– প্রিয় আপনজনেরা, কেউ আমার কথায় কষ্ট পাবেননা।
আমাদের মাঝে কিছু বিদআতি কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করবো।
কারন বিদাআত দ্বিনে একটা প্রবেশ করে এবং আরেকটা সুন্নাত বিদায় করে
তেমনিভাবে আমাদের প্রিয়জনেরা মারা গেলে নানান রকম সুন্নাত বিরোধী কর্মকান্ড করি, যা কঠিন গর্হিত কাজ।
যেমন কিছু কর্মের নাম বলবো যা আমরা অহরহ করে যাচ্ছি, তা হচ্ছেঃ-
» মৃত লাশকে সামনে রেখে বিভিন্ন কথাবার্তা রাজনৈতিক আলাপচারীতা।
» মৃতকে কবরে রাখার সময় বা পরে আযান দেওয়া।
» মৃত্যুর পর কুরআন তেলায়ত করা।
» লাশ বহনের সময় সশব্দে কালিমা, দো’আ বা কুরআন পাঠ করা।
» কবরের কাছে দান সদকা করা।
» মৃতের জন্য জীবিতের কাছে হাদিয়া তহফা দেওয়া, যেমন ভন্ড পীর বা বাবার দরবারে।
» মৃতের জন্য ঘটাকরে খানাপিনা, দান বা দোয়ার অনুষ্ঠান করা।
» অসুস্থ ও মৃতের জন্য বিভিন্ন প্রকারের খতম দেওয়া।
যেমনঃ-
* খতমে তাহলীল
* খতমে তাসমিয়া
* খতমে জালালী
* খতমে খাজেগান
* খতমে ইউনুস ইত্যাদি
এগুলো সব বানোয়াট জাল হাদিস।
আবার মৃতের জন্য ইসালে সওয়াব, কুলখানি, ওরস সব বিদাআত কর্ম।
এভাবে আমরা দো’আকে অবহেলা করছি, ও আনুষ্ঠানিকতা উত্তম মনে করছি যা সুন্নাতে খেলাফ।
মৃতের জন্য দানের কথা বলা হয়েছে, সেটা আমরা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে সুন্নাতে খেলাফ করছি।
সব থেকে বড়ো ভ্রান্তি হচ্ছে মৃতের জন্য মৃত্যুবার্ষিকী এসব নির্ধারণ করে প্রতিবছর লক্ষলক্ষ টাকা ব্যয় করছি।
আমরা এইটা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য হাদীসের ভাস্য ব্যাবহার করছি, তা হচ্ছে! রাসুল (সাঃ) মানুষকে খাওয়াতেন তাই আমরা খাওয়াই এটা অনেক সওয়াবের কাজ।
আসলে আমরা বুঝিনা, এভাবে কখনোই রাসুল (সাঃ) সাহাবীগন তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ীগন কখনোই এমন করেননি। তাহলে কি আমরা তাঁদের থেকে বেশি সুন্নাত দরদী?
কখনোই না! আমরা তাঁদের ছিটেফোঁটা পরিমান সমান হবার যোগ্যতা আমাদের নেই।
তাই আসুন এসব কুলখানিসহ যত বিদাআত কর্ম আছে সব পরিত্যাগ করি সুন্নাতকে আগলে ধরি।”
(বিস্তারিত জানতে, হাদীসের নামে জালিয়াতি ও এহ্ইয়াউস সুনান পড়ুন)
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শিশিরের কথা শুনলাম, মনে একটা প্রশ্ন উদয় হলো, জিজ্ঞেস করলাম-
-” আচ্ছা ওইযে ইয়াছিন খতম দেই শুনি, সেটা তো কিছু বললেন না?”
-” ভুলে গেছি, ইয়াছিন অসুস্থ বা মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে পড়ার ব্যাপারে হাদীস আছে, কিন্তু মৃত ব্যক্তির পাশে পড়া বিদাআত।
আর এই সব অপ্রিয় সত্য কথার জন্য সেদিনের পর থেকে আমাদের সাথে তেমন যোগাযোগ রাখেননা, তাঁদের নাকি মানসম্মানে বাঁধে ও বাবাদাদার ঐতিহ্য ভুলতে পারবেননা।
আমি শিশিরের দিকে তাকিয়ে বললাম- -“আ-মা-র ঘু-ম আসে!”
আচ্ছা ঘুমায় চলো।
দো’আ কালাম পড়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম।
★★★
অনেকদিন হলো সংসারে শিশিরের সাথে একদিনও মনমালিন্য হয়নি, খুব ইচ্ছা করে একটু ঝগড়া করতে, কিন্তু শিশিরের ভালোবাসায় ওসব কুবুদ্ধি উবে যায়।
গতকাল আম্মু শাকিলের সাথে তাঁর এক বোনের বাড়িতে কুষ্টিয়া গেছেন। বাসায় আমি আর শিশির।
সারাদিন বাসার সমস্ত কাজকাম করলাম, রান্নাবাড়া শেষ করার পূর্বেই শিশির আজ সকালসকাল বাসায় চলে আসলেন।
দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়া পর্ব পরিসমাপ্তি করে দুজনে শুয়ে টুকিটাকি গল্প ধরলাম।
একপর্যায়ে বললাম-
-” আচ্ছা আমি যদি আপনাবকে রেখে যশোর চলে যায়, আপনি একাএকা থাকতে পারবেন?”
-” হ্যাঁ অবশ্যই! আমি বাচ্চা নাকি আম্মু আম্মু করে কাঁদবো!
-” ধুর! কি বলেন? বলছি যদি আর কখনোই না ফিরি আপনার কাছে?”
-” তাহলে তো ভালো! বউ ছাড়া আমার ভালোই চলবে জীবন। এই জ্বালা আর প্রাণে শইনা!! হা হা হা।”
আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো! যদিও বুঝতে পারছি শিশির আমাকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আর না ক্ষেপে পারলাম না, কারন সবাই জানেন আমার মাথার স্ত্রু একটু ঢিলা আছে, যারজন্য এতো রাগবাগ আমার।
শিশির আমাকে অনেক রাগালো, সিদ্ধান্ত নিলাম শিশিরকে একটা শিক্ষা দিব।
সেদিন সন্ধার পূর্বে সিদ্ধান্ত নিলাম খালি বাসা এই সুযোগে একটা শিক্ষা দিই!
অমনি কুবুদ্ধি মাথায় ভর করলো।
ফ্রিজের সমস্তরকম খাবার সব নষ্ট করলাম, ফ্রিজে বেশি কিছু নেই অল্প সামান্য কিছু খাবার।
সমস্ত বাসার জিনিসপত্র উলটপালট করলাম, সাথে শিশিরের সবগুলো পাঞ্জাবী টিশার্ট পানিতে চুবিয়ে রাখলাম।
ফোনে একটা মেসেজ দিলাম-
-” আমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবেন দেখি! ভালো থাকুন চলে গেলাম।”
ফিরতি মেসেজ- ” গুডবাই, ভালোথাকো। ”
রাগে আমার গা জ্বলে আবার অনেক কান্নাপাচ্ছে! এভাবে আমাকে চলে যেতে বললো!
নাহ!! আর থাকতাম না!! এঘর এবাড়িতে।
সন্ধার পূর্বেই খালামণির বাসায় হাজির, খালামণি বললেন-
-” শিশির কোথায়, একাএকা কেন?
-” কেন! সে কি সব! আমি কি একাএকা আসতে পারিনা?”
-” পারিস তো জামায় না আসলে হয়!”
-” হয়! হয়! আমি শিশিরের ঘর করবোনা আর! ”
-” ওমা!! কি বলিস এ!! তো কি তালাক নিবি?”
-” হু্!
-” আচ্ছা আজ থাক সকালে তালাক নিয়ে দিব।”
-“রাত গভীর হচ্ছে! আমার দুশ্চিন্তার অন্ত নেই, রাত দশটা পর্যন্ত টিভি দেখলাম। খালামণি খেতে ডাকলো কিন্তু খেলাম না।
কারন শিশিরকে ছাড়া আমার অনেক কান্নাপাচ্ছে, একাএকা পুড়েপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু শিশির একটি বার আমাকে নিতে আসলো না বা ফোন করলোনা।
আমি ফোন দিতে যেয়েও দিলাম না।
না খেয়েই শুয়ে পড়লাম, ঘুম আর আসেনা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১১টা বাজে, তখন খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে না জানি শিশির না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে।
শিশিরের এখনো কিডনির সমস্যা আছে, যারজন্য ঔষধ খেতে হয়, না জানি খেয়েছে কি না। আর ভাত কিভাবে খাবে! আমিতো নষ্টকরে পানি ঢেলে রেখে আসছি।
এসব দুশ্চিন্তায় মাথাব্যথা করছে, এভাবে বিছানাই গড়াগড়ি করতে করতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ৩ টা বাজে।
না জানি আজ কিয়ামুল্লাইল আদায় করতে পারলো কি না!
আজ মনেহচ্ছে শিশিরকে জব্দ করতে যেয়ে নিজে জব্দ হয়ে গেলাম।
রাতে দুচোখের পাতা এক জায়গা করতে পারিনি।
সকালে ভোরে উঠে খালামণিকে বললাম-
-” আমি বাসায় যাবো!”
-” কেন তালাক নিবিনে!”
-” না সখ মিটে গেছে! ভালো থাকুন খালামণি।”
আমার কাছে বাসার চাবি আছে, বাসায় পৌঁছে পরিবেশ দেখে মাথা নষ্ট!!!
সব কিছু উলটপালট করে রাখা, সাথে টয়লেটে যেয়ে দেখি শিশিরের যে পাঞ্জাবী ভিজিয়েছিলাম তাঁর সাথে আমার কাপড়চোপড় ভিজানো।
রুমে যেয়ে সব উলটপালট দেখে মাথায় চক্কোর দিয়ে উঠলো, কিভাবে করবো এতো কাজ!!!
হঠাৎ খেয়াল করলাম টেবিলের ওপর একটা চিঠি, সেখানে লেখা-
-” প্রেয়সী আমার জানি তুমি বাসায় চলে এসেছ, কারন আমাকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবেনা। তেমনি আমিও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছিনা, তাঁর ভালোবাসার প্রমান হিসাবে সকালে তিন কেজি পুঁটিমাছ কিনে রাখছি ফ্রিজের ভিতর। দয়াকরে মাছগুলো কাটো, আমি জানি তুমি একাএকা সামলাতে পারবেনা কাজকাম তাই যতো রাতেই হোক বেলাই বেলাই বাসায় আসবো!
ইতি
তারছেড়ার বর
পুঁটিমাছের কথা শুনে সত্যিই কান্নাপাচ্ছে, আমার অসহ্য লাগে কুটতে।…………( চলবে)