#শিশির_কণা
শামসুল ইসলাম
(পর্বঃ- ১৩)

মাগরিবের সালাত আদায়ের পর শিশির আর নানুভাই বাড়িতে পৌঁছালেন, আমিও সালাত আদায় করে রুমে বসলাম।
নানুভাই বাইরে থেকেই ডাক দিলেন-
-” বোইন, কণা তুই কুথায়? এদিকে আই দেখে যা! সাথে করে তোর বর আনিছি।”
আমি লজ্জাই মরে যাচ্ছি, আমার সীমাহীন পাগলামিতে বাড়ির সবাই অনেক মজা নিয়েছেন।
আমি আর রুম থেকে বের হলাম না, নানুভাই শিশিরকে সাথে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন।
শিশির সালাম দিয়ে প্রবেশ করলেন, এদিকে মণি বের হয়ে গেলো। নানুভাই বললেন-
-” নে বোইন,তোর সম্পদ তোর বুজিয়ে দিলাম, এখন তুরা কতা ক আমি ইট্টু আসচি।”
নানুভাই কথা শেষ করে বের হয়ে গেলেন, শিশির আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উচু করে আমার চোখে চোখ রেখে বললেন-
-” এতো ভালোবাস তো সরাসরি যাওয়ার সময়ে আটকালে না কেন?”
-” আগে বলুন! নানুভাই আপনি কি যুক্তি করেছিলেন?”
-” হাহাহা সেটা একটা মজার কাহিনী! শুনবে?”
-” জ্বি বলুন?”
-” প্রথম দিন সকালে যখন ফজরের সালাত পড়তে গেছিলাম, নানুভাই আমার মুখ দেখে বুঝে ফেলেছিলেন যে কোনো কারনে আমার মনখারাপ। নানুভাই অনেক অনুরোধ করার পর তোমার বলা বাসরঘরের সমস্তকিছু নানুভাইয়ের কাছে বললাম। তিনি বললেন-‘ নানাভাই মটেই টেনশন নিওনা, আমার বোইন একটু আবেগী, দেখবি ভালোবাসায় সে কাবু হয়ে যাবে। তারসাথে সময় কাটাও, আর তাঁকে ভালোবাসা দিয়ে অর্জন করে নেও। কখনোই বাদদিয়ার চিন্তা করনা ! ইনশাআল্লাহ্‌ কণা ঠিক হয়ে যাবে। একটা সময়ে শুধুই তুমাকে ছাড়া অন্যকোন স্বপ্ন সে দেখবেনা। হতাশ হয়োনা আল্লাহপাক কণার সঠিক বুঝ ও তুমার জন্যি মহব্বত সৃষ্টি করে দিবেন ইনশাআল্লাহ্‌। ”
– তারমানে আমার সাথে মহা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে! আমার মানসম্মান সব চলে গেছে আজ।”
মনখারাপ করে শিশিরকে বললাম, তিনি বললেন-
-” তো কি হয়েছে সবাই জানুক তারছেড়া মেয়েটি তার বরকে অসম্ভব ভালোবাসে।”
তারছেড়া শব্দটি শুনে খুব লজ্জা পেলাম।
শিশির মুচকি হাসি দিয়ে বললেন-
-” বউ বলে কি ডাকতে পারি?”
বউ কথা শুনে আমি আরো লজ্জা পেলাম, নিরুপায় হয়ে বললাম- ” জ্বি যা মনচাই ডাকুন।”
-” তাহলে কি আমি আমার বউয়ের হাতটি ধরতে পারি?”

আমার ভিতরে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়েগেছে, না জানি আর কতো কি আবদার করে সে!
আমি মৃদুস্বরে বললাম- ” জ্বি পারেন।” কথাটি বলে আর মাথা উচু করিনি।
শিশির আরেকটু কাছে এসে হাতটি ধরে বললেন-
-” এতদিন কোথায় ছিলে! আরো কয়বছর পূর্বে বিয়ে করলে আমরা চুটিয়ে প্রেম করতে পারতাম।”
আমার খুব হাসি পাচ্ছে তাঁর কথায়, আমি বললাম-
-” হুজুর সাহেব! আপনার এতো প্রেম আসে কোথা থেকে?”
-“রহস্য আছে! এ প্রেমের উৎস একমাত্র আল্লাহর হাতে। আর তোমাকে ভালোবাসি এর পিছনে কারন আছে তাই!
-” কি কারনে?”
-” আচ্ছা কারন বলছি! তার পূর্বে বলো, আমি যে তারছেড়া কণাকে অনেক বেশি ভালোবাসি তার কি কারন তোমার কাছে মনে হয়?”
-” কারন তারছেড়া কণা জনাব দোকানদারের একমাত্র প্রেয়সী ও বউ তাই!
-” না তারজন্য ভালোবাসিনা।”
-” তাহলে!”
-” বাংলাই বউ অর্থ স্ত্রী , স্ত্রী অর্থ গৃহিণী ,গৃহিণী অর্থ ঘরনী, ঘরনী অর্থ ঘরের দাসী। আবার ইংলিশে এমনটাই বলা হয়।
এইজন্য আমি তোমাকে দাসী হিসাবে ভালোবাসিনা।”
আমি রীতিমত অবাক হচ্ছি, বাহারে এই হুজুর তাহলে আমাকে কেন ভালোবাসছে তাহলে!
আমি আশ্চর্য হয়ে মনেমনে ভাবলাম! তাহলে দুষ্টু হুজুর মনেহচ্ছে আমার রুপে পাগল হয়ে ভালোবাসে। কারন আমার চেহারাচাট্টা খারাপ নই, রীতিমত প্রসংশার যোগ্য ছিলো।
আমি একটু রাগান্বিত স্বরে বললাম-
-” তাহলে আপনি আমার রুপ দেখে ভালোবাসেন?”
-” হাহাহা, তোমরা মেয়েরা একটু কম বুঝো, কথা শেষ না করার পূর্বেই মন্তব্য করো যা বেঠিক।”
মনেহচ্ছে আবার বেকুব হয়ে যাচ্ছি, বিষয়টা শিশির লক্ষ্যকরে বললেন-
-” এদিকে দাকাও বউ?”
মুচকি একটা হাসি দিয়ে শিশিরের চোখে চোখ রাখলাম। তিনি বললেন-
-” তুমি আমার “রাব্বাতুল বাইত” তাই তোমায় মনেপ্রাণে অনেক বেশিই ভালোবাসি।”
-” ও-মা! এ আবার কি?”
-” মানে তুমি আমার “রাব্বাতুল বাইত” অর্থ ঘরের রাণী, দাসী না।”
এবার আমার হৃদয় পুলকিত হয়ে গেলো। আমি নড়েচড়ে বসলাম। শিশির এতক্ষণ হাত ধরেই আছেন, এবার দুইহাত ধরলো। আমার মনের সমস্তরকম ভয়ভীতি উন্মীলিত হয়ে গেলো। আমি ইয়ার্কি করে বললাম- ” কি ব্যাপার দোকানদার সাহেব কোনো ধান্দাবাজির ইচ্ছা আছে নাকি? প্রথমে একহাত ধরে এখন দুইহাত ধরলেন? হাহাহা।”
শিশির মনেহচ্ছে অনেক লজ্জা পেলেন, হাত ছেড়ে দিলেন। আমি বললাম-
-” দোকানদারের দেখি আবার লজ্জাও আছে?”
আমার কথায় সত্যিই শিশির লজ্জা পেলেন, আমি শিশিরের দিকে দুহাত বাড়িয়ে বললাম-
-” হাত ধরুন, আমি মজা করেছি।”
শিশির সাথেসাথে দুইহাত শক্তকরে ধরলো, আমি বললাম-‘ উহু ব্যাথা পাচ্ছি তো!”
শিশির স্বাভাবিকভাবে হাত ধরে বললেন-
-“রাব্বাতুল বাইত কি কাকে বলে ও কেমন হওয়া উচিৎ তা জানো?”
-” না জানিনা, এ শব্দটি আজ প্রথম শুনলাম আপনার মুখে।”
-” ওহ্, তাহলে কানখাড়া করে শুনে রাখো,

আরবিতে প্রিয়তমা স্ত্রীকে বলা হয়, ‘রাব্বাতুল বাইত – ঘরের রাণী’।

প্রেম করার জন্য মেয়ের অভাব না হলেও সংসার করার জন্য মেয়ের অভাব রয়েছে। প্রেম করা যায় এমন সকল মেয়েই সংসারী হতে পারেনা, কিন্তু সংসারী প্রত্যেকটা মেয়েই প্রেমময়। সংসারী বলতে কী বুঝায়?
সিনেমা নাটকে সম্পর্ক যেভাবে উপস্থাপন করে যেমন,
একসাথে প্রতিদিন ঘুড়ে বেড়ানো, ঘাড়ে চড়িয়ে নিয়ে ঘুরা্, রেস্টুরেন্ট চেকইন, সবুজ মাঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাতে হাত রেখে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখা, রোমান্স ইত্যাদি- আসলে বাস্তবতা এমন না।
অনেকে শুধু এই থিওরী তে বিয়ে করতে আগ্রহী যে বিয়ের পর দুইজন একসাথে রোমান্স করব, ঘুরব, রেস্টুরেন্ট এ যাবো আর চেক ইন দিব, আর ফিজিক্যাল ব্যাপারটা তো আছেই, সেটা বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য না হলেও বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য এবং গুরুত্বপূর্ণও।
কিন্তু জীবন এত সহজ না। এখানে অনেক গুলো ঝামেলার ব্যাপার আছে। সংসারে অভাব আসবে, ঝামেলা আসবে, মনোমালিন্য কথা ধরা ধরি দেখা দিবে, সদস্য গুলোর মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে, চিন্তা বিষন্নতা আসবে, এক সময় মনেও হবে বিয়ে করে ভুল করেছি, হয়ত কঠিন কোন বিপদ আসবে, অসুখ বিসুখ হবে কারোর ইত্যাদি। তারপর আল্লাহ যখন নেয়ামত হিসেবে সন্তান দান করবেন, সেই সন্তান একই সাথে নেয়ামত আবার পরীক্ষা, কাউকে সন্তান দিয়ে পরীক্ষা করা হয়, কাউকে না দিয়ে। মুলত সংসার জীবনটাই পরীক্ষা।
কিন্তু এই সব কিছুকে ম্যানেজ করা যায় যে একজনকে সাথে নিয়ে এমন কাউকে বিয়ে করা যায়, এমন কারোর সাথেই সম্পর্ক টা হওয়া উচিত।
যৌবনের পুরোটা জুড়েই একজন মানুষ ফ্যান্টাসী তে ভুগে। ঠোটে ঠোট ডুবাতে সবারই ভালো লাগে, কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে যখন সেই ঠোট দিয়ে লালা ঝরবে তখন সেটা পরিষ্কার করে দেওয়ার মানসিকতা কয়জনের আছে?
যার সাথে বিছানায় প্রতিনিয়ত যৌবন উপভোগ করা হয় সেই মানুষটিই বৃদ্ধকালে যখন বার্ধক্যজনিত কারণে বিছানায় পড়ে থাকবে, বিছানা নষ্ট করবে সেই সময়গুলিতে প্রতিনিয়ত তার সেবা করা সেভাবেই উপভোগ করতে প্রস্তুত তো ? এইগুলো কি কেউ চিন্তা করে দেখি?
আধুনিক কালের বেশিরভাগ সম্পর্ক গুলো ফ্যান্টাসী দিয়ে শুরু হয়, তাই ফ্যান্টাসী শেষে আবার ভেঙ্গেও যায়, এমনকি বিয়ে হলেও ভেংগে যায়। যেই চামড়া দেখে আকৃষ্ট হচ্ছি, সন্তান হবার পর যখন সেই চামড়া গুলোতে টান পড়বে, ফিগার মুটিয়ে যাবে তখনও আমরা আকৃষ্ট হবো তো?
আসলে সম্পর্ক গড়ার সময় এইসবের খেয়াল আসে না। কারন শুধুমাত্র তাতক্ষনিক কে নিয়ে ভাবা হয় সেই সম্পর্কে। শারীরিক সৌন্দর্য, ক্ষনিকের আনন্দ ডেটিং গুলোই সেখানে মুখ্য থাকে।
বিয়ে করার জন্য খুব সাবধানে পাত্রী পছন্দ করা উচিত। আপনার সংগী আপনার পোষাক, পোষাক এর কাজ ইজ্জত আব্রু রক্ষা করা, সে আপনার দ্বীন কে পূর্নাংগকারী, দ্বীনের অর্ধেক, আপনার ইহকাল পরকাল জড়িয়ে আছে তার সাথে। কেবল ফ্যান্টাসীতে ভুগে ফ্যান্টাসী ভালো জমবে কে প্রাধান্য দিয়েই জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়া উচিত না।
একজন সচ্চরিত্রবান মেয়ে কে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলে, যদি কোন কারনে তার স্বামীর শারীরিক গঠন, চেহারা তার অপছন্দও হয় তবুও সারাজীবন সে তার স্বামীকে ভালোবেসে সেবা করে যাবে শুধু আল্লাহ এর সন্তুষ্টির জন্য। স্বামীর সন্তুষ্টিতে আল্লাহ এর সন্তুষ্টি, স্বামী কারোর উপর সন্তুষ্ট থাকলে সে খুব সহজেই জান্নাতের যেকোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। জান্নাতে তার কোন চাওয়া পাওয়া অপূর্ণ থাকবেনা ভেবে এই দুনিয়াটা সে শোকর বা সবর করেই কাটিয়ে দিবে।
অনুরূপ ভাবে একজন সচ্চরিত্রবান ছেলে কে স্বামী হিসেবে গ্রহন করলে কোন কারনে তার স্ত্রীর শারীরিক গঠন, সৌন্দর্য ইত্যাদি তাকে সন্তুষ্ট না করলেও সেও আল্লাহ এর সন্তুষ্টির জন্য সারা জীবন স্ত্রীকে ভালোবেসে যাবে, তার সেবা করবে কারন রাসূল ﷺ এর ভাষ্যমতে সেই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।
তাই বিয়েতে কেবল এবং কেবলই একজন আল্লাহ ভীরু, আল্লাহ লাভার কে প্রাইওরিটি দেওয়া উচিত। সাথে আল্লাহ সৌন্দর্য, বংশমর্যাদা এবং শিক্ষা মেলালে আলহামদুলিল্লাহ, আর না মেলালেও আলহামদুলিল্লাহ,আল্লাহ অন্যদিক দিয়ে পুষিয়ে দিবেন।
অনেকেরই দেখা যায় স্বামী স্ত্রী দুইজনের চেহারাই হয়ত মোটামুটি কিন্তু সন্তানরা যেন একেকজন রাজপুত্র হয়েছে। আর এই দুনিয়ার সামান্য প্রাপ্যতাকে বিশাল সুদে পুষিয়ে রাখার জন্য তো আল্লাহ পরের দুনিইয়া প্রস্তুত রেখেছেন। এই সুদ হারাম বা, জীবনের একমাত্র হালাল সুদ।
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে বুঝার তৌফিক দিক।”
-” আমীন” উচ্চারণ করলাম, আহা! কি চমৎকার কথা,অনিন্দ্য উপস্থাপন। মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেলো।
হঠাৎ বাইরে থেকে মণির কণ্ঠ ভেষে এলো,বললো-
-” কি ব্যাপার! গল্পকি শেষ হবেনা? রাতের খাওয়াদাওয়া না করে শুধু গল্পগুজবে পেট ভরবে?”
এখন আমার কাছে মনেহচ্ছে লজ্জাশরমের মাথা খেয়েছি, মণিকে ভিতরে আসতে বললাম।
মণি ভিতরে এসে বললো-
-” আপু আপাততঃ ভাইয়াকে রাতের খাবারটা খেতে দাও, তারপরে সারারাত দুজনে গল্পগুজব করবে”
শিশির ভীষণ লজ্জা পেলো,মুখটা লজ্জাই লাল হয়ে গেলো।
শিশির নানুভাইয়ের সাথে এশার সালাত আদায় করে আসলেন।আমরা রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।

★★★
সকালে শিশির সকলের কাছে বিদায় নিলো, রুমে এসে আমার চেহারা দেখে মুচকি হেসে বললেন-
-” ভালোকরে পড়াশোনা করে পরিক্ষা দাও, অতিদ্রুত আম্মু এসে তোমাকে নিয়ে যাবেন। মটেই মনখারাপ করবেনা।”
কিন্তু শিশির কি বুঝতে পারছেন না! আমি শিশিরের বিরহে পুড়েপুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যাবো।
খুব কান্নাপাচ্ছে! শিশিরকে ছাড়া থাকতে অনেক কষ্ট হবে আমার।
শিশির কাছে এসে কপালে একটা চুমু দিয়ে বাহুডোরে আঁকড়িয়ে ধরে বললেন-
-” আম্মু বাসায় একাএকা অনেক কষ্ট পাচ্ছেন, এদিকে তোমার পরিক্ষা। অনেক পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে গত এক সপ্তাহে! ভালোকরে পড়াশোনা না করলে পরিক্ষার রেজাল্ট অনেক খারাপ হবে, তাই মন দিয়ে পড়াশোনা করো। আমি পরিক্ষার আগের দিন আসবো আবার ইনশাআল্লাহ্‌।”
আমি শিশিরের বুকে মুখ লুকিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলাম।
শিশির আবার বললেন-
-” তোমার দোকানদার সাহেব যদি তোমার কাছেই সারাক্ষণ ঘুরঘুর করে তাহলে তো আমার দোকানের ব্যবসা লাটে উঠবে। আর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অর্থকড়ি সঞ্চয় করতে হবে। তাঁদের অনেক বড়োবড়ো আলীম বানাতে হবে, যেন আমরা কবরে শুয়েই আমোল নামায় নেকি পাই।”
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা শুনে অনেক লজ্জা পেলাম। চুপচাপ কথা শুনলাম, আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শিশির ঝিনাইদহ চলে গেলেন।

এভাবে আমার পরিক্ষার সময় ঘনিয়ে এলো,আমরা ফোনে অনেক কথা বলি। দিনে কতবার কথা হয় তা আমার হিসাবে আসেনা। মণি মাঝেমধ্যে আমাদের কথাবলা শুনে বলতো, কি প্রেমরে বাবা! ফোন কম্পানি দোকানদারের ফতুর করে দিবে। ভাইয়ার ব্যবসার সব উপার্জন তোমাদের ফোনে ব্যয় হবে এতো কথা বললে।
আগামীকাল পরিক্ষা, শিশির সন্ধার পূর্বে নানুবাড়িতে চলে আসলেন।
রাত অতিবাহিত হলো, দুপুর ১টার সময়ে আমরা পরিক্ষার উদ্দেশ্যে যশোরে রওনা করলাম।
পরিক্ষার হলে দ্রুতবেগে প্রবেশ করলাম, কারন সময় কম ২ টা থেকে পরিক্ষা শুরু। পরিক্ষা আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো হলো, পরিক্ষা শেষ করে দ্রুতবেগে বের হয়ে শিশিরকে খুঁজতে লাগলাম। অনেক মানুষের ভিড়ে শিশিরকে খুঁজে পেতে একটু কষ্টকর হলো, অবশেষে শিশির আমাকে খুঁজে বের করে নিলো।
দুজনে এক পাশে দাড়িয়ে পরিক্ষা সংক্রান্ত কথাবার্তা বলছি এমন সময় বান্ধবি রত্নার আগমন।
রত্না শিশিরকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে বললো-
-” ভাইয়া আপনি কণান সাথে কেন! কি হয় আপনার?”
-” কণা আমার স্ত্রী, দুসপ্তাহ মতো বিয়ে করেছি আমরা।”
রত্না আমাকে বললো-
-” কণা একটু একপাশে চলতো, কিছু কথা আছে?”
আমি শিশিরের হাতে ফাইল দিয়ে বললাম-‘ আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমি আসছি।”
একপাশে রত্নার সাথে যেয়ে দাড়ালাম, রত্না বললো-
-” কালো মানুষের সাথে এমন হুতুমপেচার মতো কালো বোরখায় ভালোই তো আবৃত করে নিয়েছিস, বেশ লাগছে হুজুরের সাথে”
-” হুতুমপেচা! আমি আল্লাহর বিধান মান্যকরি, তাতে তোর অসুবিধে হবার কথা নই, আর আমার বরের সম্মন্ধে বাজে কথা বলবিনা। সে আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত, সুতরাং এনিয়ে তোর এমন কথা আশা করিনা।”
-” ভালোই তো ভক্ত হয়ে গেছিস হুজুরের! শিশিরকে তোর থেকে আমি ভালো চিনি, তুই কি জানিস শিশিরের প্রকৃত পরিচয়?”……………(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here