#শিশির_কণা
শামসুল ইসলাম
(পর্বঃ-১১)
।
-” আপনি ইসলামের প্রয়োজনীয় নিয়ম কানুন পালন করুন, কিন্তু খবরদার অন্যকোন মতলব নিয়ে কাছে ঘেঁষবার চেষ্টা করবেন না।”
-” ইনশাআল্লাহ্, তাই হবে।”
-” আর শুনুন! আপনি একটা বয়স্ক মানুষ হয়ে বারবার আপনাআপনি করছেন, যা আমি নিজের কাছে লজ্জা পাচ্ছি। আমি পিচ্ছি একটা মেয়ে, আপনার অনেক ছোট। দয়াকরে তুমি করে বলবেন।”
শিশির মুচকি একটা হাসি দিয়ে-
-” জ্বি হ্যাঁ, আপনি মানে তুমি পিচ্ছি একটা মেয়ে, যে সদ্য ফিডার মুখ থেকে ছাড়িয়ে আমার ঘাড়ে চাপছে।”
লোকটির কথায় হাসি পেলো, যা মুখে প্রকাশ না করে মনেমনে হাসলাম।
শিশির আমাকে বললো-
-” ইসলামের বিধিবিধান পালন করতে হলে তোমার ললাটে হাত রাখা লাগবে, তো হাত রাখতে পারি?”
আমি কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলাম, তবুও সাহসীর মতো বললাম-
-” থাক এতো ঢং করার কিছু নেই, আপনি হাত রাখতে পারেন।”
বেচারা শিশির হাতটা কাঁপাকাঁপা অবস্থায় আমার কপালে হাত রেখে পড়লো-
-“
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
হে আল্লাহ, আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব-চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।
উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি।”
দো’আটি পড়ে শোকেসের ভিতরে থেকে চুড়িগুলো আমার হাতে দিয়ে বললো-
-” আপনার জন্য কিনেছিলাম, তাই আপনাকে দিলাম। এখন হাতে দিতেও পারেন আবার রেখে দিতেও পারেন, একান্ত আপনার ইচ্ছে।”
চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো হাত থেকে চুড়িগুলো গ্রহন করলাম।
শিশির আমাকে বললো-
-” ওযু আছে তোমার?”
-” না, নেই।”
-” যাও ওযু করে এসো, আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে হবে।”
আমি ওযু করে আসলাম, কিছুই বলছিনা। এসব ধর্মের কর্মগুলো আমাকে পুর্বেই মণি শিখিয়েছিল, যারকারনে যা যা বলছে বিনাবাক্যে গ্রহন করছি।
দুইজনে দুই রাকা’আত সালাত আদায় করলাম।
শিশির বললো-
বেডের ওপর উঠে বসো, আমি আসছি।
আলমারি খুলে একটা শপিং ব্যগ আমার দিকে বাড়িয়ে বললো-
-” এটা তোমার জন্য, আমার পক্ষ থেকে হাদিয়া, আর মোহরানা বিয়ের আসরে আদায় করে নিয়েছি এখন তুমি আমার শরিয়ত সম্মত বৈধ বউ।”
-” ইশ!! কি আমার বউ গো!! এতো বউ বউ করবেন না। আপনি কিন্তু কোনো কুমতলবের ফন্দি আঁটছেন তো খবর খারাপ করে ছাড়বো!”
-” না, তেমন কোনো চিন্তাচেতনা আমার মস্তিষ্কে নেই। তোমাকে আমার বুঝতে জানতে পর্যাপ্ত সময় দিলাম, তুমি তা কাজে লাগাইও। আর প্রকৃত কথা হচ্ছে তুমি ইচ্ছা করলে তালাক নিতে পারো। ইসলাম কঠিন কিছু চাপিয়ে দেননি মানুষের ওপরে।”
-” জ্বি, একদম মনের কথাটি বলেছেন, এমুহূর্তে তালাক নেওয়াটা কঠিন হবে। চারিদিকে কেলেঙ্কারি রটে যাবে, সাথে আম্মুও কষ্ট পাবেন। সময় নিচ্ছি, দয়াকরে আমাকে সার্বিক সাহায্য করবেন।”
-” হ্যাঁ, অবশ্যই! আমাকে তোমার পাশে সবসময় পাবে।”
-” ধন্যবাদ, তবে পরিক্ষাটা শেষ হোক তখন দেখা যাবে কি করা যাইনা যাই!!
বেচারা শিশির মুখটা গোমরা করে বললো-
-” ঠিকআছে, তুমি যেহেতু আমাকে স্বামী হিসাবে গ্রহন করতে পারছোনা, তাহলে আজ থেকে তুমি আমার মেহমান। তোমার জন্য বেড বরাদ্দ, আর আমি ফ্লোর।”
-” আচ্ছা, তাহলে ঘুমায়।”
একটা বালিশ আর কাথা দিলাম, সেটা নিয়েই ঠান্ডা ফ্লোরে শুয়ে পড়লো। আমিও বেডে শরির এলিয়ে দেওয়ার সাথেসাথে গভীর ঘুমে ডুবে যায়।
★★★
সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি আমি ফ্লোরে শুয়েআছি, আবার নিচে সুন্দর পরিপাটি করে বিছনা পাড়া। আমি তাড়াহুড়া করে উঠে পড়লাম, আড়মোড়া ছেড়ে শিশিরকে খুঁজতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি পাঞ্জাবী টুপে পরিহিত অবস্থায় রুমে প্রবেশ করে আমাকে সালাত প্রদান করলেন।
সালামের জবাব দিয়ে গভীর দৃষ্টিনিক্ষেপ করে প্রশ্ন করলাম-
-” আমি ফ্লোরে কিভাবে আসলাম?”
-” সেটা বলবো ইনশাআল্লাহ্, তারপূর্বে তুমি মণিকে ফোন করে জেনে নাও তাঁর সাথে কিভাবে ঘুমাতে?”
-” মানে!!
-” মানেটানে পরে বুঝাবো, যা বলি তাই করো।”
আমি ফোনটা হাতে নিয়েই মণিকে ফোন করলাম।
সালাম আদানপ্রদানের পর মণি আমাকে বললো-
-” আপু এতো সকালে?”
-” ওমা কি বলিস! আমাকে কি বিয়ে দিয়ে পর করে দিয়েছিস?”
-” আরে নাপু! কি বলিস যা তা?”
-” থাক সকাল করে শশুরবাড়ি থেকে ঝগড়াফসাদ করছি না, এক জায়গা হলে মারামারি করবো কেমন?”
-! হাহাহা, ঠিক আছে আপু।”
-” মণি! একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো?”
-” বলো কি কথা?”
-” আচ্ছা বল! আমার সাথে তোর ঘুমোতে কেমন লাগে?”
-” হঠাৎ এ প্রশ্ন! কি হয়েছে আপু?”
-” আরে কিছু না, বল?”
-“সত্যি না মিথ্যা বলবো?”
-” একদম হাচা কইবি!”
-” হাহাহা তোমার ঘুমানো অনেক খারাপ, অনেক বিরক্তি হতাম তবুও কিছু বলিনি কখনো।”
-” মানে! কি বলিসরে মণি! কেমন খারাপ বল?”
-” কি আর বলবো আপু! তুমি ঘুমালে কিছুই ঠিক পাওনা। মাঝেমধ্যে ঘুমের ভিতরে আমার গার ওপর পা তুলে দাও, আবার কখনো জোরেশোরে জড়িয়ে ধরো যা অসহ্য, তবুও ছোটবেলা থেকে একসাথে ঘুমাতে ঘুমাতে অভ্যাস হয়েগেছে তাই কিছু মনে হয়না আমার।”
-” কি বলিশ! তাহলে আমি শিশিরকে……?
-” হাহাহা, তো কি হয়েছে? সে তো তোমার বর সমস্যা নেই।”
-” রাখ পরে কথা হবে।”
ফোন কেটে দিয়েই শিশিরের দিকে তাকালাম, দেখি মিটিমিটি হাসছে।
আমাকে বললো-
-” তুমি ঘুমানোর ঘন্টা দেড়েক পর হঠাৎ দেখি অন্ধকারে আমাকে ডাকছো, তারপরে আমাকে বললে তুমি একাএকা ঘুমাতে ভয় পাচ্ছো।তারপরে বললে তুমি আমার সাথে ফ্লোরে ঘুমাতে চাও, তাই মানা করিনি। বিছনা পেড়ে দেওয়ার পর তুমি আমার সাথে ঘুমিয়েছ।”
-” অসম্ভব! আমি কখনোই এমন করিনি! আপনি আমাকে ঘুমের মাঝে কাছে নিয়ে শুয়েছেন অন্যকোন ধান্দাবাজি লুফে নেওয়ার জন্য।”
-” দেখো! আমি মিথ্যা বলছি না, তুমি তো প্রমান পেলে মণির মাধ্যমে।”
আমি আর অবিশ্বাস করতে পারলাম না, মেনে নিলাম সাথে লজ্জাও পেলাম।
বিষয়টা লক্ষ করে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো-
-” একটি গল্প শুনবে?”
রাগ হচ্ছে সাথে লজ্জাবোধ করছি না জানি ঘুমের ভিতরে কি না কি হয়েছে!
তবুও বললাম – জ্বি বলুন?
-” গল্পটি হচ্ছে এক গ্রাম্য মহিলাকে নিয়ে, তিনি পাশের বাড়ি থেকে গভীর রাত্রে তালিম শুনে বাড়িতে আসেন। তো সেদিন প্রচণ্ড গরমের কারনে তাঁর স্বামী বারান্দায় ঘুমান। বিদ্যুৎ না থাকার কারনে বাতিও বন্ধ, মহিলা ঘরে প্রবেশ করার সময় অন্ধকারে স্বামীর মাথায় ভুলবশত পদাঘাত করলো।
স্বামী ব্যথায় কুকড়িয়ে উঠে বললেন-
-ইশ! পদাঘাতে আমাকে ব্যাথা দিতে পারলে?
– আহারে কি বলো! কোথাই লাথি লাগছে?
– মাথায় লাগছে!
– যাগগা! বাঁচা গেলো, কপাল ভালো পায়ে লাগিনি।
স্বামী বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করলেন-
– পা রেখে মাথায় লাথি মেরে এখন বলছো কপাল ভালো পায়ে লাগিনি?
অসহ্য কোথাকার!
– ওগো মণির বাবা রাগ করোনা! আজ তালিমে বলেছে, স্বামী পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত। তাই আমার ভাগ্য ভালো জান্নাতে লাথি লাগেনি অল্পের জন্য, মাথায় লেগেছে তাতে সমস্যা নেই।”
আমার আর বুঝতে বাকি নেই, সে কি বুঝাতে চাচ্ছে! তারমানে আমি তারসাথে মণির মতোই আচরণ করেছি।
লজ্জাই মাথা হেঁড হয়ে যাচ্ছে, কি বলা উচিৎ ভেবে পাচ্ছি না। তবুও মানবতার খাতিরে বললাম-
-” দুঃখিত! আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন, আর এমন হবে না সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।”
-” হাহাহা আরে সমস্যা নেই! স্বাভাবিক হতেই পারে তারজন্য মন খারাপ করোনা।”
আমি শুনেছি সন্তানের জন্য বাবা মা জান্নাত, স্বামী জান্নাত হয় শুনিনি কখনো।
শিশিরকে জিজ্ঞেস করলাম-
-” স্বামীর পায়ের নিছে কি সত্যিই জান্নাত?”
-” না জান্নাত নই, বরং ভুল কথাটা অপপ্রচার ও জাল হাদীস। স্বামী স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের জান্নাত।
স্বামী স্ত্রী যদি পরস্পর পরস্পরের প্রতি তাঁর পরিপুর্ন হক আদায় করতে পারেন, তাহলেই জান্নাত।”
আমি একটু হাস্যকরভাবে বললাম-
-” দোকানদার সাহেব আ-মা-র আবার ঘুম আসে, আরেকটু ঘুমায়?”
-” হাহাহা, আচ্ছা ঘুমাও।”
আমি আবার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম।
★★★
ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমার চোখ কপালে উঠলো! এখন প্রায় ১১ টা বাজে!
দ্রুতবেগে উঠে টয়লেটে প্রবেশ করলাম, বের হয়ে সোজা শাশুড়ি আম্মুর কাছে যাই। আমাকে দেখে বললেন -” আই মা, ঘুম তাহলে ভাঙ্গলো অবশেষে!
-” জ্বি আম্মু, অনেক রাত করে ঘুমানো হয়েছিল, তাই এতো বেশি ঘুম। নানুভাইকে দেখছি না যে?”
-” উনি সকালে নাস্তা করে তোর আম্মুর সাথে দেখা করতে গেছেন, চলে আসবে কিছুক্ষণের ভিতরে।”
-” ওহ আচ্ছা।”
-” যা! হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নে? আমি শিশিরকে ফোনে করে বাসাই আসতে বলি।”
-” কোথায় তিনি!”
-” দোকানে গেছে, না খেয়ে বের হয়েগেছে। যাওয়ার সময়ে বলেছিল, কণা জাগলে আমাকে ফোন দিও, একসাথে নাস্তা করবো ইনশাআল্লাহ্।”
একটু মায়া হলো, এতো বেলা অবধি একটা মানুষ আমার জন্য না খেয়ে রয়েছে।
শাশুড়ি তাঁকে ফোন করলেন, আমার ফ্রেশ হতেহতে তিনি চলে আসলেন।
ডাইনিং এ সবাই খেতে বসলাম, শাশুড়ি প্লেটে একটা ডিমভাজি ও কয়েকটি রুটি দিলেন।
আমার একপিচ খাওয়া শেষ হওয়ার পুর্বেই সবার প্রায় খাওয়া শেষ, আম্মু বললেন-
-” মা তুই খা, আমার একটু কাজ আছে আমি আসছি।”
তিনি চলে যাবার পর আমি কচ্ছপ গতিতে রুটি আর ডিম গলাধঃকরণ করছি, শিশির অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি লজ্জাই ঠিকমত খেতে পারছিনা, বাধ্যহয়ে বললাম- ” এভাবে আমাকে দেখার কি আছে? মনেহচ্ছে জীবনে মেয়ে দেখেননি। হুজুরেরা আসলেই খারাপ।”
-” এই যে মহারানী, তোমার কথা ভুল! হুজুরেরা কখনোই পরের জিনিসের প্রতি হাত বাড়ায় না, কারন নিজ স্ত্রী ব্যতীত অন্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করা ব্যভিচার, যা চরম গোনাহের কাজ।”
-” হুঁহ্! পাইছেন তো কথায় কথায় ধর্মের বুলি!”
-” হ্যাঁ, আমি ধর্মকে খুব ভালোবাসি, কারন আমি একজন প্রাকটিসিং মুসলিম।”
-” আচ্ছা দোকানদার সাহেব! একটা প্রশ্ন করি?”
-” একটা কেনো হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য এবান্দা সর্বদা হাজির!”
-” হাহাহা, সর্বদা নই, এখন দিলেই হবে। তো যা বলতে চাচ্ছি! বলছিলাম কি! এই নাস্তা কি হোটেল থেকে কিনে আনছেন?”
-” না কেনো! কি দেখে হোটেলের কথা মনে হলো?”
-” না তেমন কিছু না! অনেক মজা লাগছে খেতে, তাই ভাবলাম হোটেলের।”
-” নাহ্!! এবাড়িতে তৈরি করা, তবে তোমার জন্য স্পেশাল একজন হোটেলের বাবুর্চিকে বেতন দিয়ে রেখেছি, যে প্রত্যহ নাস্তাসহ অন্যান্য রান্নাবাড়া করে খাওয়াবে।”
খুব উৎসুকের মতো বললাম-
-” বাবুর্চিকে তো আমার দেখা লাগবে, যে এতো সুন্দর নাস্তা বানাতে পারে।”
-” হ্যাঁ তা তো অবশ্যই! তাঁকে দেখে এসো যাও? রান্নাঘরে আম্মুর কাছে শুনে দেখো চিনিয়ে দিবেন”
আমি রান্নাঘরে যেয়ে বললাম-
-” আম্মু যে বাবুর্চি নাস্তা তৈরি করেছেন, সে কোথায়? তাঁকে একটু দেখতে চাই।”
আম্মু বললো-
-” এই বাবুর্চির খবর তোকে কে দিয়েছে?”
-” আপনার ছেলে বললেন যে আম্মুর কাছে যেয়ে শুনো, তিনি বাবুর্চির খোঁজ দিবেন।”
আমার দিকে তাকিয়ে আম্মু অনেকক্ষণ হাসলেন। আমি বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে সব তামাশা দেখছি।
আম্মু হাসি থামিয়ে বললেন-
-” হাহাহা, শিশির তোরসাথে মজা করেছে মা, আমি ডায়াবেটিকসের রুগী, ঠিকমত রান্নাবাড়া করতে পারতাম না, টুকটাক করে শিশির রান্নাবাড়া করতে করতে এখন সে বড়ো মাপের রাঁধুনি হয়েগেছ। আজকের নাস্তাসহ সকালের সমস্তরকম রান্নাবাড়া শিশির করেছে।”
আমি আল্লাহ!! বলে জিহ্বায় কামড় দিলাম, লজ্জাই আমার নাক কাঁটা যাচ্ছে।মনেহচ্ছে শিশিরকে আস্তো গিলে খাই।
আম্মুকে বলে চলে আসলাম, নিয়েত করলাম আজ আমাকে বেকুপ বানানোর ফল সুদেআসলে উসুল করবো।
ডাইনিং এ এসে দেখি সে নেই!
যাগগা !! বেচারা দোকানদারের কপাল ভালো আগেআগে ফুটছে।
লজ্জাই আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি, আমাকে এতোবড় বেকুপ বানালো! এসব ভেবে রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
ভাবছি আম্মুর সাথে কথা বলবো, হঠাৎ দেখি অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসছে!
-” কি কেমন লাগলো! আমিও এমন লজ্জা পেয়েছিলাম, যেদিন আমার দোকানে তোমরা দুইবোন এসেছিলে। তুমি রীতিমতো আমাকে মুরগী বানিয়ে ছাড়িলে, আজ সুযোগে আমিও একটু প্রতিশোধ নিলাম।”
আমার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে, দাঁতের সাথে দাঁত শক্তকরে বললাম-
দাড়া হুজুর! তুই আজ বাড়িতে আই, তোর বারটা বাজাচ্ছি।
মেসেজ আসা নাম্বারে ফোন করলাম-
শিশির সালাম দিয়ে বললো-
-” হাহাহা কেমন লাগলো?”
-” আজ বাড়িতে আসুন, দেখাচ্ছি মজা?”
-” সাথে করে কি আনবো মিষ্টি গজা!
যা খেয়ে তুমি দিবে আমায় সাজা?”
আমি হেসে ফেললাম, তাঁর মুখের কথায়।
শিশির বললো-
-” মাসআল্লাহ বউ দেখি হেসে কুটিকুটি।”
মুখ ভেংচি দিয়ে-
-” বয়ে গেছে আমার ! আপনার বউ হতে।”
-” থাক হতে হবেনা, তো আমি কি সাজা নেওয়ার জন্য এখুনি বাসাই আসবো?”
-” জ্বি না! আমি বুঝে গেছি, আপনার মতলব শুধুই আমার কাছে ঘেঁষা।”
-” হাহাহা, আমার বৈধ বউ থাকতে অন্যদিকে যাবো কেনো বলো?”
-” ইশ! সখ কতো! খুব ঢং করতে পারেন আপনি।”
-” হ্যাঁ, সত্যিই আসছি তোমার প্রিয় জিনিস নিয়ে।”
-” না না! আসতে হবে না।”
-” তাহলে, আইসক্রিম?”
আইসক্রিমের কথা শুনলে আমার মাথায় হুশ থাকেনা, নরম স্বরিত কণ্ঠে নিজের দাম রেখে বললাম-
-” আসতে যেহেতু চাচ্ছেন, তাহলে আসুন!”
-” আচ্ছা এখুনি আসছি! ………(চলবে)