#_মায়ার_বাধঁন
২০তম পর্ব
লেখনিতে-জান্নাত_রুবি

২০. ★★★★
ঘর ভর্তি মানুষ আজ।
ড্রয়িংরুমে সোফায় নির্বাক বসে আছি আমি।সায়ান আমার হাত ধরে বসে আছেন।একটু আগে কলিংবেলের শব্দ শুনে আমি যখন দরজা খুলি তখন সায়ান আর মাকে দেখে আমি অবাক হয়ে যাই।হঠাৎ করে মনে হচ্ছিলো আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে!উনারা এখানে কি করছেন।আর আমার ঠিকানাই বা পেলেন কী করে!নিশ্চয়ই এটা ভাবির কাজ!উনি ছাড়া ফুপির এই নতুন বাড়ির ঠিকানা কেউ জানে না।সবেমাত্র সবকিছু গুছিয়ে একটু সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম!এরিমধ্যে উনি কেন এখানে সবকিছু এলোমেলো করতে এসেছেন।
আমি নিজের আবেগকে কনট্রোল করে উনাদেরকে সালাম করে ড্রয়িংরুমে চলে আসি।
সায়ান আমার সামনে এসে আমার হাত ধরতে চাইলে আমি হাত সরিয়ে নেই।উনি কিছু মনে করলেন কী না জানি না!উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছেন।মনে হচ্ছে উনি আমাকে দেখে কত দিনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন।
উনার এমন চাহনীতে আমি বিব্রতবোধ করলাম।
ঘরভর্তি মানুষের সামনে উনি এভাবে আমার দিকে নির্লজ্জের মত তাকিয়ে আছেন দেখে নিরবতা ভেঙে আমি কথা বললাম,
– কেন এসেছেন এখানে?দেখতে এসেছেন নাকি আমি কেমন আছি?দেখুন আমি ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ!
আমার কথা শুনে উনি বললেন,
-হ্যা দেখতেও এসেছি আর তোমাকে সাথে করে নিতেও এসেছি।প্লিজ সাফা ফিরে এসো!আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
উনার কথা শুনে আমি রেগে উঠে বললাম,
-আজ কেনো আমাকে প্রয়োজন! আমার মত সেকেলে আনস্মার্ট পরনির্ভরশীল একটা মেয়েকে কেন চান আপনি।আমার তো আপনার সাথে থাকার কোন যোগ্যতাই নেই!ওহ হো সানা তো নেই!এজন্য এখন আমাকে প্রয়োজন তাই না!আবার যখন আমার থেকে ভালো অন্য কাউকে পাবেন তখন আবার আমাকে এভাবে ছেড়ে দেবেন?
উনি আমার কথা শুনে আমার হাত ধরে আকুতি-মিনতি করছেন।
ফুপি এতক্ষণ উপরে উনার রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন।হয়তো আমাদের কথাবার্তায় উনার ঘুম ভেঙে যায়।
উনি পূর্ণ পর্দার সহিত নিচে নেমে এলেন।সায়ানের আমার সাথে এভাবে কথা বলা দেখে উনি রেগে যান!উনি সায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-কোন সাহসে তুমি আমার বাড়ি এসে আমার মেয়েকে হ্যনাস্তা করছো।আর কি মনে করেছো তুমি! এত কিছু হওয়ার পরেও আমি সাফাকে তোমাদের সাথে যেতে দেবো।তা কখনো সম্ভব নয়!তোমার কারনে আমার ভাই মেয়ের চিন্তা করতে করতে হার্ট এটাক করেন!তোমার কারনে আমার ভাইঝি সন্তানসম্ভবা হয়েও সংসারহারা!
উনি ফুপির কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে তাকিঁয়ে বলেন,
-তুমি প্রেগনেন্ট
সাফা! আর আমি জানি না!আর আমাকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করো নি।আমার কী এই বাচ্চার প্রতি কোন অধিকার নেই!
আমি একটু লম্বা আর স্বাস্থ্য একটু ভালো হওয়ার কারনে কারো বুঝা মুশকিল যে আমি প্রেগনেন্ট!তবে মেয়েরা ভালো করে দৃস্টিপাত করলে কিছুটা অনুমান করতে পারবে।
সায়ানের কথাগুলো শুনে ফুপি বললেন,
-এখন অধিকার ফলাতে আসছো!এত দিন খোঁজ-খবর নিয়েছো ওর!ও কেমন আছে একবার জানতে চেয়েছো!
ফুপির কথা শুনে উনি বললেন,
-আমি অনেক চেষ্টা করেছি ফুপি! কিন্ত ওর সাথে দেখা করতে পারি নি!
ফোনেও ওকে পাই নি!
ও সীমও চেন্জ করে ফেলেছে!
আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি ফুপি!প্লিজ ফুপি ওকে আমার কাছ থেকে দূরে রাখবেন না আর আমার বাচ্চাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করবেন না।
কথাগুলো বলতে বলতে উনি কেঁদে ফেললেন।
ফুপি উনার কান্না দেখে কিছুটা দমে গিয়ে বললেন,
-শুনো বাবা!সবেমাত্র সবকিছু থেকে বের করতে পেরেছি মেয়েটাকে।তুমি এসেছো,তোমার মা এসেছেন দেখা করতে!এতে আমার কোন সমস্যা নেই।এসেছো যখন দেখা করো কথা বলো কিন্ত ওকে সাথে করে নেবার কথা বলো না!আমি চাই না মেয়েটা আবার আগের মত কষ্ট পাক।
ফুপির কথা শুনে আমার শাশুরী মা বলে উঠলেন,
-প্লিজ আপা এমন করবেন না। আমার ছেলেকে একটা সুযোগ দিন।ও এবার আর কোন অভিযোগের সুযোগ দেবে না।
উনি এখনো আমার হাত আঁকড়ে ধরে আছেন!মনে হচ্ছে উনি হাত ছেড়ে দিলেই আমি দূরে কোথাও চলে যাবো।
উনাদের কথাবার্তার একপর্যায়ে নিরবতা ভেঙে আমি বলে উঠলাম,
-মা আপনি মনে কষ্ট নেবেন না!আমি যাবো না আপনাদের সাথে।বহু কষ্টে,বহু হোচট খেয়ে আমি ঘুরে দাড়িয়েছি!আমি আবার ভেঙে পড়তে চাই না মা!
সায়ান আমার কথা শুনে আমার দিকে করুন চোখে চাইলেন!আমি জোর করে আমার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বসা থেকে উঠে আর এক মুহূর্তও দাড়াই নি!
কান্না করতে করতে আমার রুমে চলে আসি।আমার এভাবে চলে আসা দেখে উনি আমাকে ডাকতে শুরু করেন।কিন্তু আমি ফিরে তাকাই নি!খুব অস্থির লাগছে আমার! দীর্ঘ সময় পর কেঁদেকেটে চোখমুখ লাল করে রুম থেকে যখন বের হই তখন দেখি উনারা চলে গেছেন।
কিচুক্ষন আগের কথা মনে করে আবারও চোখে পানি চলে আসে!সায়ান কেন এসেছেন এখানে?এতগুলো মাস পর হঠাৎ কিসের জন্য আমাকে মনে পড়লো তার?বুকের ভিতর হাহাকার করে ওঠে।আমি অবশ্যই উনার কথা শুনতাম।কিন্তু আমার আত্মসম্মানটা খুব বেশি।আমি সায়ানের ঐ কথাগুলো এখনো ভুলি নি!তাই চাইলেও আমি উনাকে মাফ করতে পারছি না!
আমি চাই সায়ানের অপমানের কড়া জবাব দিতে।উনাকে জানিয়ে দিতে যে ভালো থাকার জন্য কোন সঙ্গীর প্রয়োজন নেই।আমি একবার বিশ্বাস করে ঠকেছি কিন্ত আর না।একবার তো সামলে নিয়েছে পরের বার হয়ত মরেই যাবে।
মানুষের জীবনটা ঋতুর মতো।
ঋতু বদলে কখনো চৈত্র আসে তো কখনো শ্রাবন। মানুষের জীবন পরিক্রমাও ঠিক তেমনই।কখনো আসে দুঃখ আবার কখনো বা সুখ। সুখ দুঃখ দুটোই জীবনের অনিবার্য সত্য। দুঃখ ছাড়া সুখের মধুরতা কোথায়?দুঃখের চোরাবালিতে পড়লেই তো বোঝা যায় সুখ আহরিত করার প্রয়োজনীয়তা৷
ফজরের আজানের সুমধুর প্রতিধ্বনিতে চারদিকে বিরাজ করছে অন্যরকম এক পবিত্রতা।আকাশের দিকে তাকিঁয়ে ভাবছি আকাশ এতো শূন্য তবুও সে কত বিশাল! আর আমার ভিতরে নেই কোনো বিশালতা!আছে শুধু শূন্যতার হাহাকার।কুয়াশা কেটে গেলে আকাশটা নীলাকাশ হয়ে উঠবে! আকাশের সর্বত্র নীলের ছড়াছড়িতে রঙে রাঙিয়ে উঠবে তার বুক।আর আমার জীবনটা শুধুই শূন্যতার বেড়াজালে আবদ্ধ!এই আকাশকে সাক্ষী রেখে আরো একটি নির্ঘুম রাত কাটলো আমার। দ্রীর্গশ্বাস ফেলে মনে মনে এই কথাটি ভাবি,
“যে ব্যাক্তি আল্লাহ্‌র উপর প্রবল ভাবে বিশ্বাস রাখেন।আল্লাহ্‌ কখনো তার ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেন না।(ওমর ইবনুল খাত্তাব)”।
ফজরের নামাযের উদ্দেশ্য বারান্দা ছেড়ে রুমে ফিরে আসি।ফজরের নামাযের ফযীলত সম্পর্কে যদি আমরা সবাই জানতাম তাহলে আমরা কেউই এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাতাম না।
“ফজরের দু-রাকায়াত সুন্নত সালাত, দুনিয়া ও তার মাঝে যা কিছু আছে তারচেয়ে উত্তম। (জামে তিরমিজি: ৪১৬),,
ফজরের নামায আদায় করে কিছুক্ষণ তেলাওয়াত করা আমার প্রতিদিনের অভ্যাস।তবে ইদানীং শরীরটা একটু বেশীই খারাপ যাচ্ছে! তাই বেশীক্ষণ পড়তে পারি না।কষ্ট করে হলেও সামান্যও পড়ার চেষ্টা করি।
পরেরদিন বিকেলবেলা রাফার সাথে বসে ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলাম।রাফার বয়স চৌদ্দ বছর।ও এখনো ইসলাম সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নয়!আমরা সবাই তো জন্মসূত্রে মুসলমান কিন্ত ইসলাম সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান আমাদের কয়জনের আছে?
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে সমগ্র মাখলুকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা নারী ও পুরুষ হিসেবে মানবজাতির শ্রেণী বিন্যাস করেছেন। মানুষকে একই আত্মা থেকে সৃষ্টি করলেও তিনি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ وَخَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَبَثَّ مِنۡهُمَا رِجَالٗا كَثِيرٗا وَنِسَآءٗۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلۡأَرۡحَامَۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبٗا ١ ﴾ [النساء : ١]
“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক”।[1]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব সৃষ্টি করার পর নারী ও পুরুষ উভয়কে কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। নারী যেমন কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী অনুরূপভাবে পুরুষেরও রয়েছে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। নারী ও পুরুষের বৈশিষ্টগত পার্থক্যটা অনেকটাই সৃষ্টিগত; যা আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না। আর কিছু পার্থক্য আছে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। নারীদের দায়িত্ব ও পুরুষের দায়িত্ব কখনো এক নয়। একজন পুরুষ যে দায়িত্ব পালন করতে পারে নারীরা তা পারে না। আবার একজন নারী যে কাজ করতে পারে একজন পরুষ তা করতে পারে না। নারীর জন্য সন্তান লালন-পালন, স্বামীর খেদমত, বাড়ীর ঘরের রান্না-বান্না ইত্যাদি কর্মই হল শোভনীয়। আর পুরুষের জন্য খেত-খামার, চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি শোভনীয়।
নারী ও পুরুষের কর্ম ক্ষেত্র ও দায়িত্ব ভিন্ন হলেও আল্লাহ তা‘আলার নিকট মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনা হলো তাকওয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহকে যত বেশি ভয় করবে, চাই সে নারী হোক বা পুরুষ হোক আল্লাহর নিকট তার মূল্যায়নটা তত বেশি হবে। আল্লাহ তা‘আলা কোনো নারী বা পুরুষকে তার নেক আমলের প্রতিদান দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য প্রদর্শন করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَرٖ وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ شُعُوبٗا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓاْۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٞ ١٣ ﴾ [الحجرات: ١٣]
“হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।”[2]
যদি কোনো নারী বা পুরুষ মুমিন থাকা অবস্থায় নেক আমল করে আল্লাহ তা‘আলা তাদের উভয়কে জান্নাত দান করবেন তাদের প্রতি কোনো প্রকার জুলুম করা হবে না এবং বৈষম্য করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَن يَعۡمَلۡ مِنَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ وَلَا يُظۡلَمُونَ نَقِيرٗا ١٢٤ ﴾ [النساء : ١٢٤]
“আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেক কাজ করবে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুর-বীচির আবরণ পরিমাণ জুলুমও করা হবে না”।[3]
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٧ ﴾ [النحل: ٩٧]
“যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী হোক, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব”।[4]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ مَنۡ عَمِلَ سَيِّئَةٗ فَلَا يُجۡزَىٰٓ إِلَّا مِثۡلَهَاۖ وَمَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ يُرۡزَقُونَ فِيهَا بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٤٠ ﴾ [غافر: ٤٠]
কেউ পাপ কাজ করলে তাকে শুধু পাপের সমান প্রতিদান দেওয়া হবে, আর যে পুরুষ অথবা নারী মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে, তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে তাদেরকে অগণিত রিজিক দেওয়া হবে।[5]
আল্লাহ তা‘আলা নারী ও পুরুষের মাঝে পর্দার বিধান রেখেছেন। নারীদের উপর পর পুরুষ থেকে পর্দা করা ফরয করেছেন। পর্দার বিধান নারীর কল্যাণের জন্যই রাখা হয়েছে। যদি পর্দার বিধান না রাখা হতো তাহলে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলা-মেশার কারণে সমাজে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটত। যেমনটি বর্তমানে যে দেশ বা সমাজে পর্দা নাই সে সমাজের অবস্থার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই। সেখানে প্রতিনিয়তই নারীরা জলুম নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী ও পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা মানব সমাজকে কলুষিত করে এবং সমাজে ফেতনা-ফ্যাসাদ বৃদ্ধি করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِي النَّاسِ فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ»: «هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ»
“আমার পর আমি পুরুষের জন্য নারীর ফেতনার চেয়ে অধিক ক্ষতিকারক কোনো ফিতনা রেখে যাইনি”[6]। নারীর ফেতনাই হল বড় ফেতনা। এ জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে নারীদের বিষয়ে অধিক সতর্ক করেছেন। যাতে এ ফিতনা থেকে বেঁচে থাকা যায় এবং পর্দার বিধান রেখেছেন। মাহরাম অর্থাৎ যাদের সাথে চিরতরে বিবাহ অবৈধ, তারা ব্যতীত বেগানা অর্থাৎ, যাদের সাথে বিবাহ হারাম নয়, এমন লোকদের সাথে পর্দা করতে হয়।
[1] সূরা নিসা, আয়াত: ১ [2] সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩ [3] সূরা নিসা, আয়াত: ১২৪ [4] সূরা নাহল, আয়াত: ৯৭ [5] সূরা গাফের, আয়াত: ৪০ [6] বুখারী, ৫০৯৬ ; মুসলিম, ২৭৪০,,,,
আমি নোট বুকে কিছু লিখছিলাম এমন সময় ফুপি আমার রুমে ঢুকেন।আমি স্বাভাবিক হয়ে বসে বললাম,
-চলে এসেছেন ফুপি।
ফুপি হেসে বললেন,
-হ্যা রে মা!চলে এসেছি।তোর ডেলিবারির ডেট তো ঘনিয়ে এসেছে!আমার সেই চিন্তায় দিন যাচ্ছে আর ওখানে গিয়ে থাকবো নাকি আমি।আমি ফুপির কথা শুনে মুচকি হাসলাম।
সত্যি এই মানুষটার ছায়া যদি আমার মাথার উপরে না থাকতো তাহলে এই অবস্থায় আমি এ সমাজে একা টিকে থাকতাম কী করে!
ফুপিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম।ফুপি আমাকে আলতো করে ধরে চোখের পানি মুছে দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আর কাঁদতে বারন করলেন।
কিছুক্ষন ফুপি আমার সাথে কথা বলে চলে গেলেন।আমি আর রাফা ডিনারটা আগেই সেরে নিয়েছি তাই আমিও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম।


চলবে ইনশাআল্লাহ,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here