#_মায়ার_বাধঁন
১৩তম পর্ব
লেখনিতে-জান্নাত_রুবিো

১৩. ★★★★
পৃথিবী কতটা বিচিত্র!এই বৈচিত্রময় পৃথিবীর মানুষ কত সহজে নিজের প্রিয়জনকে ভুলে যেতে পারে।একসময় আমাকে ছাড়া সায়ানের চলতই না!এখন উনি আমাকে ছাড়া চলতে শিখে গেছেন।এখন আমি উনার না প্রিয়জন না প্রয়োজন!সানাই এখন উনার সব।সানা যে উনার সন্তানের মা হতে চলেছে!পুরো পরিবারের সবাই অনেক খুশী হলেও সানা এ সংবাদ পেয়ে মোটেও খুশী নয়!ও এত তাড়াতাড়ি মা হতে রাজি নয়।ও আগে লাইফটাকে এনজয় করতে চায়।ও মনে করে সন্তান হলেই ও বাঁধা পড়ে যাবে এই সংসারে।ওর জায়গায় যদি আমি হতাম তাহলে আমার মত খুশী মনে হয় আর কেউ হতো না।আমি ওকে বুঝাতে চেষ্টা করি!একটি সন্তানই পারে একজন মেয়েকে পরিপূর্ণ করে তুলতে!এ পরিবারে আমার অবস্থানও ওকে দেখিয়ে দেই।
ও আমার কথাগুলোকে পাত্তা না দিয়ে বাইরে চলে যায়।
বারান্দায় বসে পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করছি!
একটি সন্তানকে নিয়ে কতকিছুই না প্ল্যান করেছিলাম আমি আর সায়ান! সন্তান আসার পরের জীবন নিয়ে কতশত স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম!
কিন্তু মনে হয় একটা দমকা হাওয়া এসে সব কিছু কেমন উলট-পালট করে দিয়েছে!
ভাবনার মাঝখানে আচমকা একটা মুখ বার বার আমার চোখের সম্মুখে ভেসে উঠছে।হ্যা মুখটা সায়ানেরই।
আমি বার বার ডিসিশন নিয়েও এ মানুষটার মায়া কাটিয়ে উঠতে পারি না।
মানুষের জীবনে জড়িয়ে আছে দুঃখ কষ্টের অধ্যায়।সবার জীবনেই কিছু বিশেষ দিক রয়েছে।জীবনে চলার পথে অনেক অতীতকে জোগার করতে করতে মানুষ এগিয়ে চলে ভবিষ্যতের দিকে। এই অতীত গুলোর মাঝের কিছু অংশ খুবই অপ্রিয় হয়। যা মানুষ দুঃস্বপ্নের মত ভুলে যেতে চায়।কিন্ত চাইলেই কী ভুলা যায়! জীবনের পাতা যদি পেন্সিলের লেখা হতো তাহলে মানুষ রাবারের সাহায্যে কষ্টকে মুছে শুধু সুখ সঞ্চয় করে যেত। মুছতে না পারার ব্যর্থতা স্বরূপ কিছু বিষাক্ত অতীত বহন করতে হয় আজীবন।আমার জীবনটাও তেমন।

রান্নাঘরে যাচ্ছিলাম!হঠাৎ সিয়ামকে দেখলাম কিয়ামের রুম থেকে খুব রেগে বেরিয়ে আসছে!
আমি ওর পেছন পেছন ওর রুমে
গেলাম!গিয়ে দেখি ও খুব রেগে আছে।আমি ওর পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
-আমার সিয়াম সোনার কী হয়েছে!এত মুড অফ কেনো?
আমার কথা শুনে ও রেগে বললো,
-ভাল লাগছেনা ছোট মা!
আমি ওর কথা শুনে বললাম,
-কেনো বাবা!তোমাকে কী কেউ কিছু বলেছে?
আমার কথা শুনে ও কিছুটা নরম স্বরে বললো,
-হুম!কিয়ামের সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে।
আমি ওর কথা শুনে মুচকি হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-ও এইজন্য আমার বাবাটার মন খারাপ।কিয়াম তো না বুঝেই তোমার…..
আমার কথার মাঝখানেই ও বললো
-আমি ওর নেগেটিভ দিকগুলো বের করবো!তারপর এই নেগেটিভ তথ্যগুলো দিয়েই ওকে জব্দ করবো!
আমি ওর কথা শুনে কিছুটা রাগ নিয়ে বললাম,
-সিয়াম!
“গোপন তথ্য অনুসন্ধান করো না এবং পরনিন্দা করো না।(বাকারা-২৮৩)।
আমার কথা শুনে ও বলল,
—কিন্ত ছোট মা!ও যে আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে?মাকে দিয়ে আমাকে মার খাইয়েছে?
আমি ওর কথা শুনে বললাম,
-শুনো বাবা!ও খারাপ করেছে বলে তুমিও খারাপ করবে?ওর বয়সই বা আর কত!তোমার বারো বছর হলে ওর দশ বছর।তোমার দু-বছরে ছোট ও।ওকে তুমি ভালো-মন্দ বুঝাও।মনে রেখো ভাল দিয়েই খারাপ কে জয় করা যায়।
“”পৃথিবীতে বিবাদ -বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না।(বাকারা-৬০)””
সিয়াম মুখখানা ঝুলিয়ে বলল,
-ঠিক আছে ছোট মা আমি আর গোপন তথ্য বের করবো না ওর সাথে ঝগড়াও করবো না।
আমি ওর কথা শুনে ওর কপালে চুমু দিয়ে বললাম,
-এই না হলে গুড বয়।
আমার কথা শুনে সিয়াম আমাক জড়িয়ে ধরে বললো,
-ছোট মা তুমি কত ভালো।কত সুন্দর করে কথাগুলো বুঝিয়ে দাও।আর মা তো শুধু বকা দিতেই জানে।
আমি ওর কথা শুনে বললাম,
-বাবা!মায়ের বদনাম করতে নেই।পুরো পৃথিবীর সবার ভালোবাসা একদিকে আর তোমার জন্মদাত্রী মায়ের ভালোবাসা একদিকে।আজ তোমাকে আরো কিছু কথা বলি!আর কখনো তোমাদের দেখতে পারবো কী না!শোনো বাবা সব সময় শুধু নিজের সুখের জন্য ব্যস্ত না হয়ে অন্যের মুখেও হাসি ফোটাতে চেষ্টা করো।এটা হলো প্রকৃত মনুষ্যত্ব বা পরোপকারীতার লক্ষণ।
পরোপকার মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের অলংকার।
আর এখন থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলো।
সব সময় সৎ পথে চলতে,সৎকর্ম করতে চেষ্টা করবে!
সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।(সূরা আল বাকারা: ১৭৭)””
আমার কথাগুলো ও নিরবে শুনে বললো,
-ছোট মা! আমি সব সময় তোমার কথামত চলতে চেষ্টা করি।
তারপর কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর বললো,
-আচ্ছা ছোট মা!তুমি কী কোথাও চলে যাচ্ছো?
আমি সিয়ামের কথা শুনে বললাম,
-কেনো বাবা হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?
আমার কথা শুনে ও বললো,
-এই একটু আগেই না বললে তুমি আমাদের আর দেখতে পারবে কীনা!তাছাড়া মা আর নতুন ছোট মা তো সব সময়ই বলে তুমি নাকি একদিন এ বাড়ি থেকে চলে যাবে!
আমি ওর কথা শুনে কী বলবো বুঝতে পারছি না!আমি তো মিথ্যাও বলতে পারবো না। আমি সত্যিই চলে যাবো এ পরিবার ছেড়ে।আমি ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি।মাকে যে করে হোক বুঝানো যাবে।হঠাৎ চিৎকার-চেচামেচির শব্দ শুনে আমি সিয়ামের রুম থেকে বেরিয়ে এলাম!বাইরে এসে দেখি সানা বাইরে থেকে এসেছে।
সায়ান তার কাছে জিজ্ঞেস করছিলেন,
-কোথায় ছিলে তোমার জন্য কখন থেকে অপেক্ষা করছি।
সানা চোখ লুকিয়ে জবাব দিলো,
-এইতো সামনে একটা আর্জেন্ট কাজে গিয়েছিলাম।
সায়ান ওর কথা শুনে বললো,
-কি এমন কাজ ছিলো কাউকে বলে যেতে পারলে না? আমাকে বললে আমি হেল্প করতাম। একসাথে লাঞ্চ করবো বলে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছিলাম!এসে দেখি তুমি নাই!কেউ জানে না তুমি কোথায় গিয়েছো!
সায়ানের কথা শুনে সানা বললো,
-তুমি কি আমাকে জেরা করছো সায়ান!এখন আমি কোথায় যাবো না যাবো সেটাও তোমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে যেতে হবে?
সায়ান ওর কথা শুনে কিছুটা নরম স্বরে বললো,
-আমি সে কথা বলিনি সানা। আমি এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম আচ্ছা বাদ দাও লাঞ্চ করেছো?
সানা মুখ কালো করে বললো,
-না।
সায়ান সানার হাত ধরে বললো,
-তাহলে চলো একসাথেই লাঞ্চটা সেরে নেই!
আমি ওদের থেকে কিছুট দুরে দাড়িয়ে সবকিছু দেখছিলাম।
রাতে বিছানায় বসে ডায়েরী টা হাতে নিলাম।
আমি আলতোভাবে হাত ভুলিয়ে পাতা উল্টিয়ে কিছু লিখলাম।এই ডায়েরীর প্রতিটা পৃষ্ঠায় আমার সুখ-দুঃখের গল্প আমি লিখে রেখেছি।আমি চলে যাওয়ার পর যদি কোনদিন সায়ান এই ডায়েরিটা পড়েন তাহলে হয়তো উনি আমার শূন্যতা ভালোভাবেই অনুভব করবেন!হয়তো আমাকে খুজবেনও।কিন্ত আমাকে খুঁজে পেলে তো।কেউ নিজ থেকে হারালে তাকে এত সোজা খুঁজে পাওয়া যায় না।


চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here